কৃষ্ণবেণী পর্ব ১৮

কৃষ্ণবেণী পর্ব ১৮
নন্দিনী নীলা

বকুল এবারেও কিছুই বলতে পারল না তৃষ্ণাকে যেই মুহূর্তে বকুল বলতে যাবে সবকিছু সাহস করে। তখনি জায়ান আসে আর দুই বোনের সামনে দাঁড়িয়ে আদেশ করে দুজনকেই রেডি হয়ে নিতে কোথাও নিয়ে যাবে বেড়াতে।
তৃষ্ণা তো অবাক সুরে জায়ানকে প্রশ্ন করে,”রেডি হবো কেন কোথায় যাব?”

“বললেই কি তুমি চিনবে? তোমাদের একটা জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাব। আমার একমাত্র শালিকা বলে কথা। সে চলে যাবে কাল দিন পরেই। আসার পরে রুমে চার দেয়ালেই তো বন্দী হয়ে রইল। এজন্যই তোমাদের দুজনকে ঘুরতে নিয়ে যাব এবার রেডি হও।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বকুল খুশিতে লাফিয়ে উঠল‌। খুশির খবরে পেয়ে‌। তৃষ্ণাকে জানানোর কথা বেমালুম ভুলে গেল। তৃষ্ণা নিজেও এসব একপাশে ফেলে বোন কে রেডি হতে বলে নিজেও শাড়ি বের করতে আলমারির কাছে গেল। খুব খুশি লাগছে ওর। প্রথম জায়ানের সাথে ঘুরতে বের হবে। খুশিতে মনটা বাকবাকুম করছে। তৃষ্ণা কোন শাড়ি পরে যাবে সেসব পছন্দ করছে।
জায়ান আবার ফিরে এলো হাতে দুইটা শপিং ব্যাগ নিয়ে।

“তৃষ্ণা এখানে বকুলের জন্য ড্রেস আছে। আর এইটায় তোমার জন্য শাড়ি আছে। এটাই পরিও।”
তৃষ্ণা জায়ান কে দেখে আলমারির সামনে থেকে সরে জায়ানের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বিছানার উপর জায়ান ব্যাগ দুটো রেখেছে তৃষ্ণা শপিং ব্যাগ খুলে ড্রেস বের করল।

বকুলের জন্য দুইটা কামিজ আনছে। বকুল উঁকি মেরে দূর থেকে দেখছে। খুশিতে ওর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে আছে। জড়িয়ে ধরার কান্ডের পর থেকে বকুল জায়ানের সাথে কথা বলতেও লজ্জা পেতো কিন্তু আজ তো বুঝতে পেরেছি দুলাভাই ছিল না লোকটা তাই ও জায়ানের উপর থেকে সমস্ত লজ্জা চলে গেছে। ও খুশি হয়ে এগিয়ে একটা কামিজ সেট হাতে নিয়ে বলল,” দুলাভাই কি সুন্দর জামা আনছেন। আপনেরে অনেক ধন্যবাদ।”

তৃষ্ণা জায়ানের আনা কালো শাড়িটার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে খুব সুন্দর শাড়ি। ঝিকিমিকি করছে। তৃষ্ণা কাঁধে ধরে জায়ানকে বলল,,”এটা নতুন কিনেছেন?”
“হ্যাঁ বকুলের জন্য কেনাকাটা করতে গিয়েছিলাম তখন শাড়িটা একপলক দেখেই মনে হয়েছে এটা আমার বউকে পরলে খুবই সুন্দর লাগবে।”
তৃষ্ণা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল।

” শাড়িটা ঝটপট পরে ফেলো। আর চুলটা অবশ্যই বাঁধবে। খোলা রাখবে না। আমি চাইনা আমার বউয়ের চুল অন্য মানুষ দেখুক। এই চুল দেখার এবং ছোঁয়ার অধিকার শুধু আমার।”

জায়ান একটু থেমে আবার বলল,,” তোমরা রেডি হ‌ও দ্রুত। আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।”
বকুলের জন্য একটা সবুজ কামিজ ও একটা গোলাপি কামিজ আনা হয়েছে। বকুল গোলাপি কামিজ পরে এলো‌। তৃষ্ণার সামনে এসে বলল,” বুবু দেখ তো আমারে কেমন লাগতেছে!”
” খুব সুন্দর লাগছে। আয় তো আমার কুচি ধর।”

বকুল বোনের সামনে বসে পরল কুচি ধরার জন্য। ” “বুবু কালো শাড়িতে তোমারে পরীর মতো দেখা যাইতাছে।”
তৃষ্ণা মিষ্টি করে হাসলো।
কসমেটিকস এর অভাব নাই তৃষ্ণার সামনে কিন্তু ও এতো সাজতে পারে নাকি? জীবনে এতো মেকাপ দেখেছে নাকি। ও কিছুই বুঝতে না পেরে লিয়াকে ডেকে আনল। লিয়া এসে তৃষ্ণাকে বলল,” ম্যাম আপনাকে অনেক কিউট লাগছে। কালো শাড়িতে অপূর্ব লাগছে। আসেন আমি সাজিয়ে দেই আপনাকে।”

” আচ্ছা।”
লিয়া খুব যত্ন করে সাজিয়ে দিলো তৃষ্ণা কে‌। তৃষ্ণা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,” আমি তো নিজেরে চিনতেই পারছি না। বকুল রেও একটু সাজাই দেন!”

” আচ্ছা দেব আপনি একটু কাছে আসেন ম্যাচিং করে নেকলেস পরিয়ে দেই।”
তৃষ্ণা হাতে কালো চুড়ি পরেছিল শুধু এবার লিয়া গলায় কালো পাথরের নেকলেস পরিয়ে দিল‌।
চুল বেণী করে নিচে থেকে পেঁচিয়ে পিঠ পর্যন্ত এনে রাবার দিলো। এখন চুল ছোট লাগছে।
দুই বোন এক‌ই স্টাইলে চুল বেঁধেছে। লিয়া বলল চুল খোলা রাখলে তৃষ্ণা কে অনেক সুন্দর লাগত। কিন্তু তৃষ্ণা জায়ানের বারণ শুনে আর রাজি হয়নি‌।

মাঝখানে তৃষ্ণা বসেছে। এক পাশে জায়ান এক পাশে বকুল। দুই বোন বড়ো বড়ো চোখ করে বাইরে তাকিয়ে আছে‌। জানালা খোলা এজন্য হুড়মুড় করে বাতাস ঢুকছে। আর দুই বোন শহরের বড়ো বড়ো দালান কোঠা শহরের মানুষ জনের চলাচল দেখছে ঢাকা শহরের বিখ্যাত জ্যাম এ বসে। জায়ান চোখে কালো সানগ্লাস পরা। গায়ে কালো সুট বুড পরে সাহেবি স্টাইলে একপাশে বসে আছে নিরব হয়ে।

“বুবু সব গাড়ি একলগে থাইমা আছে কেমন করে?”
তৃষ্ণা নিজেও বোকার মতো গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে ভিন্ন ধরনের গাড়ির মেলা বসেছে যেন। সব গাড়ি সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করেই গাড়ি একই সঙ্গে ছুট লাগালো চলতে শুরু করলো দুই বোন চোখ ভরা বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।

তৃষ্ণা জায়ানের দিকে ঘুরে বলল,”এটা কি হলো? সব গাড়ি একসঙ্গে থেমে রইল আবার একসাথে চলতে শুরু করল ক্যান?”
“এটা হচ্ছে ট্র্যাফিক জ্যাম। শহরে নিত্যদিনের সঙ্গী‌।”
” আমি কিছু বুঝি নাই‌।”

মুখটা ভোঁতা করে বলল তৃষ্ণা। জায়ান তৃষ্ণার নাক টেনে দিয়ে বলল,”ওরে আমার অবুঝ বউরে।”
ঢাকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় পার্কে নিয়ে এসেছে জায়ান তৃষ্ণা আর বকুলকে। দুইবোন প্রথম ঢাকা শহরের কোথাও বেড়াতে এসেছে খুশিতে দুই বোনই আত্মহারা। গাড়ি থেকে নেমে পার্কের ভেতরে ঢুকলো তিনজন। তিনজন ঢুকে চারজন হয়ে গেল কারণ পার্কের ভেতরেই ছিল জোভান‌। জায়ান জোভানকে বলল বকুল কে নিয়ে পার্কটা ঘুরতে।
“ওকে ভাই। নো টেনশন বকুলের সাথে আমি আছি। তুমি ভাবির সাথে সময় কাটাও‌।”

দুজনের কথোপকথন শুনে বকুল বুঝে গেছে ওকে এখন বাকি সময়টা এই জোভানের সাথে কাটাতে হবে। রাগে ও জোভানের দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে র‌ইল।
জায়ান তৃষ্ণার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে এগিয়ে গেল।
” বকুল আমাদের সাথে আসতো।”

“আমার ভাই ওকে দেখেই রাখবে। প্রথমবার বউকে নিয়ে ঘুরতে আসলাম সেখানে শালি থেকে নষ্ট করবে সেটা তো হতে পারে না। আমি একটু আমার বউয়ের সাথে একা টাইম পাস করতে চাই।”
তৃষ্ণা ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখল বকুল সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। জোভান সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলছে।
“তোমার যদি বোনকে ছাড়া শুধু আমার সাথে যেতে খারাপ লাগে যাও নিয়ে আসো বোনকে।”

জায়ান তৃষ্ণার হাত ছেড়ে দিল। তৃষ্ণা হতভম্ব হয়ে জায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কালো সানগ্লাসের আড়ালে ঢাকা পরে আছে জায়ানের চোখ। তৃষ্ণা ঢোক গিলে নিজেই জায়ানের হাত ধরে বলল,” আমার আপনার সাথেই খুব ভালো লাগছে। চলুন।”

জায়ানের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো।
“মন রাখতে ভালোই কথা বলতে পারো।”
জায়ান জোভান কে কল করে ওদের সাথেই আসতে বলল।
বকুল জোভানের সাথে কোথাও যাবে না তাই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আর জোভান বকুলের রাগ কমানোর জন্য অনেক কথাই বলছিল আর সাথে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছিল। তখনই জায়ান কল করে তাদের সাথে যেতে বলে এটা শুনে বকুল আগে আগেই সেদিকে হাঁটতে লাগে।

জোভান একটা ফুল বিক্রেতা কে দেখে তার কাছ থেকে একটা গোলাপ কিনে বকুলের পেছনে দৌড় লাগাল। জায়ান আর তৃষ্ণা এগিয়ে আছে‌। জোভান বকুলের সামনে গিয়ে ফুলটা ওকে দিল। বকুল ফুল নিয়ে ফেলে দিল।
জোভান অবাক হয়ে ফুলের দিকে তাকিয়ে বলল,” এটা কি করলে বকুল? এতো সুন্দর ফুলটা ফেলে দিলে?”
” একটুও সুন্দর না। গোলাপ ফুল আমার অপছন্দ।”

” এ্যা বলো কি? এতো সুন্দর ফুল তোমার পছন্দ নয়। সবার তো গোলাপ ফুল পছন্দ তুমি দেখি উল্টো।”
” হ আমি উল্টো। এবার আমারে জ্বালানো বাদ দেন।”
” আমি তোমাকে জ্বালাচ্ছি কোথায়?”
” আপনে আমারে জ্বালাচ্ছেন না?”

” না তো।”
বকুল চোখ ছোটো ছোটো করে বলল,” আপনে দেহি ভারি মিছা কথা কন।”
” বকুল আই এ্যাম রিয়েলি ভেরি সরি।”
” বুবু রা ক‌ই?”
” আগে আমাকে ক্ষমা করো তারপর নিয়ে যাব।”

” আপনে সুযোগ নিতাছেন আবার!”
জোভান আর কিছু বলল না। বকুল কে নিয়ে তৃষ্ণা দের কাছে নিয়ে এলো।
তৃষ্ণা আর জায়ান দাঁড়িয়ে আছে। বকুল তৃষ্ণার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তৃষ্ণার হাতে লাল গোলাপের একটা তোড়া। তৃষ্ণা বকুল কে উজ্জ্বল মুখ করে বলল,” বকুল দেখ কত সুন্দর গোলাপের তোড়া তোর দুলাভাই আমাকে দিছে। তোর তো প্রিয় ফুল গোলাপ ধর এটা তুই নে।”

কৃষ্ণবেণী পর্ব ১৭

বলেই ফুলের তোড়া বকুলের হাতে দিয়ে দিল। বকুল হাসি মুখে তা হাতে নিল। জোভান বিষ্ময় ধরে রাখতে পারছে না। কত মিথ্যে বলল বকুল ওকে।
মেয়েটা কত ফাজিল। জোভান কটমট চোখে তাকিয়ে আছে বকুলের দিকে বকুল জ্বালা ময়ি হাসি দিয়ে দেখাচ্ছে ওকে।

কৃষ্ণবেণী পর্ব ১৯