কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩৭ (২)

কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩৭ (২)
নন্দিনী নীলা

তৃষ্ণার ভাই সুলাইমান চিন্তিত মুখে বসে আছে। বিথী স্বামীর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,” হঠাৎ তৃষ্ণা ওর জামাই নিয়ে এখানে কেন এসেছিল?”
সুলাইমান বলল,,” একটা ঝামেলা করে ফেলেছি!”
” মানে কি করেছ?”
” গত মাসে একজায়গায় চুরি করতে গেছিলাম। সেটা নাকি তৃষ্ণার জামাইয়ের পরিচিত কারো বাসা।

তাদের বাসায় সিসি ক্যামেরা ছিল আমাদের সবার মুখ নাকি স্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছে। সেটা দেখেছে জায়ান।”
বিথী মুখে হাত দিয়ে আতঙ্কিত গলায় বলল,,” কি সর্বনাশ করলে! এজন্য বলেছিলাম কাজ ক‌ইরা খাও‌ । না তোমার তো কাজ করলে পোষায় না এখন মানসম্মান সব তো গেলো জেলে যাবার জন্য অপেক্ষা করো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” এমনিতেই চিন্তায় আছি আর চিন্তা বাড়ায় ও না।”
” আমার কথা শোন জায়ানের পায়ে পড়ে ক্ষমা চাও‌। আর চুরি ডাকাতির কাজ বাদ দাও।”
দরজায় ঠাস ঠাস শব্দ শুনে বিথী বিরক্তি হয়ে উঠে দরজা খোলে দিল।
ভেতরে থেকে সুজন চিৎকার করতে করতে বেরিয়ে এল।

” এতোক্ষণ কেউ বন্দি করে রাখে। উফ ওই ঘরে এতো গন্ধ ক্যান আর একটু হলে দম আটকে মরতাম।”
সুলাইমান বলল,,” আজ যদি তৃষ্ণা দেখত তুই আমাদের লগে থাকিস কি হতো ভাবতো। তোর ব‌উ মরার সব দোষ তর ঘাড়ে পড়ছে। সেটা ভুলে গেছিস?”
” কিন্তু তোমরা তো জানো আমি খুন করি নাই।”
” পলাই না আসলে হয়ত এটা বিশ্বাস করত কিন্তু এখন আর কেউ করবে না।”
” মালতি ক্যান আত্নহত্যা করল আজ ও বুঝলাম না‌ মাঝখানে থেকে দোষী হয়ে রইলাম সবার চোখে।”
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সুজন।

” কি হয়েছে? গাড়ি মাথায় নিলে কেন থামানোর জন্য!”
তৃষ্ণা হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,,” ওটা মিহির ভাই না?”
জায়ান তাকাল হ্যা মিহির হেঁটে যাচ্ছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে‌। সুস্থ হ‌ওয়ার পর ওর পা আর ঠিক হয়নি এক পা খুড়িয়ে হাঁটতে হয়।
জায়ান গম্ভীর গলায় বলল,,” হ্যা। ওর জন্য থামাতে বললে?”
” হ্যা দেখুন কি অবস্থা হয়েছে। অন্যায় করে কখনো কেউ সুখী হতে পারে না। উনার অবস্থা দেখে সত্যি খারাপ লাগছে। শুকিয়ে কেমন হয়ে গেছে আবার পা ও ঠিক নাই হাঁটতে পারছে না ঠিকমতো।”

” দেখা হলে এবার যাওয়া যাক নাকি কথা বলবে!”
” আরে না। উনার সাথে কি কথা বলব।”
বাসায় এসে দেখল উর্মি আর আরিফ এসেছে।
দুজনে হানিমুনে যাবে সেটাই জানতে এসেছে। জায়ান আর তৃষ্ণা কে ও টেনে সোফায় বসাল উর্মি।
” ভাইয়া তোমাদের বিয়ের বছর হয়ে গেল এখনো হানিমুন করতে পারলে না। এদিকে আমরা চলে যাচ্ছি।”
আরিফ বলল,,” ভাইয়া আমাদের তরফ থেকে একটা অফার আছে প্লিজ না করবেন না।”
জায়ান প্রশ্নতোক চোখে তাকিয়ে বলল,” কিসের অফার?”

” আমাদের সাথে আপনাদের হানিমুন যাওয়ার প্লান করে ফেলেছি।”
উর্মি কানে কানে তৃষ্ণার কিছু বলল তৃষ্ণা লজ্জায় লাল হয়ে উঠল।
জায়ান বলল,” এখন আমরা কোথাও যেতে পারব না‌। অনেক কাজ সামনে পড়ে যাব।”
উর্মি বলল,,” উফ ভাইয়া তোমার পড়ে মানে যাবাই না। আমাদের সাথেই যাবে। এটাই ফাইনাল কি বলো ভাবি তুমি কিছু অন্তত বলো তোমার কথা আর যাইহোক ভাইয়া ফেলতে পারবে না।”

তৃষ্ণা বোকা চোখে তাকিয়ে আছে উর্মির দিকে ও কি বলবে আবার।
টিকিট জোর করে জায়ানের হাতে দিয়ে উর্মি আর আরিফ চলে এল। জায়ান রাতে তৃষ্ণা কে জিজ্ঞেস করল,,” তুমি কি যেতে চাও?”
তৃষ্ণা বলল,,” কোথায়?”
” হানিমুন!”
” না আমি প্লেন দেখলে অনেক ভয় পাই আমি ওসবে উঠতে পারব না।”

তৃষ্ণার কথা শুনে জায়ান না হেসে পারল না।
” তোমার কি আমার সাথে একাকী কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করে না?”
তৃষ্ণা লাজুক গলায় বলল,,” করে করবে না কেন?”
” তাহলে ভয় পাচ্ছ কেন আমি তো আছিই। আমি থাকতে আমার ব‌উয়ের কিছু কি হতে পারবে?”
তৃষ্ণা মাথা নাড়িয়ে না বুঝল।
জায়ান বলল,,” তুমি কি যেতে চাও? তুমি যেতে চাইলে সব কাজ ফেলে চলে যাব।”

” উর্মি আপু যেহেতু এতো করে বলেছে তাই যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বকুল কে আপনারা ভাইয়ের সাথে রেখে আমার যেতে ভয় করে। যদি আমার বোনের কোন ক্ষতি করে দেয়। উষসী ভাবির মতো কিছু করে যদি।”
” বকুলের কোন ক্ষতি করবে না আয়ান। ওকে জাস্ট টোপ হিসেবে রেখেছে।”
” সত্যি?”
” আমাকে বিশ্বাস করো তো?”
” অনেক।”
” তাহলে নিশ্চিন্তে থাকো।”

পরদিন জায়ান তৃষ্ণাকে নিয়ে মার্কেটে গেল। জায়ান নিজ পছন্দে তৃষ্ণা কে কিছু লেডিস, টপস, প্যান্ট, কোর্ট কিনে দিল। তৃষ্ণা তো চোখ কপালে তুলে ছিল এসব ও জীবনে পড়ে নাই। এসব পড়বে কি করে। কিন্তু জায়ান বলেছে সেখানে গিয়ে এসব পড়তে হবে।
তৃষ্ণা বিছানায় বসে ব্যাগ প্যাক করছে। হঠাৎ উঠে রুম ছেড়ে বেরিয়ে এল।
বকুল রান্না করে খাবার বাড়ছিল। তৃষ্ণা বকুলের হাত ধরে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,, কিরে কেমন আছিস?”
বকুল অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

” কি হলো বল!”
” ভালো। তুমি কেমন আছ?”
” আমি তো খুব ভালো আছি রে। আগামীকাল আমি আর তোর দুলাভাই হানিমুন যাচ্ছি। কোথায় জানিস?”
” কোথায় বুবু?”
” মালদ্বীপ বিদেশ যাব। আমি প্লেনে উঠব আমার তো খুব ভয় করছে রে কিন্তু তোর দুলাভাই আছে তাই সাহস পাচ্ছি।”
” সাবধানে যেও বুবু।”

” হুম ভালো থাকিস। আর চোখ কান খোলা রাখিস।”
বকুল আচমকাই জড়িয়ে ধরল তৃষ্ণা কে। তৃষ্ণা বকুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
” আমি জানি এখন তুই আর আমাকে আপন ভাবিস না তোর আপন ওই আয়ান দেবর। যাইহোক স্বামী নিয়ে সুখে থাক।”
তৃষ্ণা চলে এল। বকুল তৃষ্ণার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল অনেক দিন পর বুবু ওর সাথে একটু ভাল করে কথা বলল।

আয়ান জায়ানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে বাগানে।
আয়ানের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠছে।
জায়ান বলল,,” বল কি জরুরী কথা?”
আয়ান রাগান্বিত গলায় বলল,,” পায়েল কোথায়?”
জায়ান কপালে কুঁচকে বলল,,” পায়েল কে?”

” মিথ্যা বলবি না। আমি জানি তোর কাছেই আছে পায়েল‌। ওকে দিয়ে তুই আমাকে ফাঁসাতে চাইছিস তাই তো?”
” তোকে ফাঁসাতে কোন মেয়ে দরকার হবে না। তুই এমনিতেই ফেঁসে আছিস।”
” দেখ জায়ান আমার মাথা গরম করবি না। ভালো মতো জিজ্ঞেস করছি পায়েল কোথায় বল।”
” তোর মাথা গরমের ধার আমি ধারি না। আর শোন আমি কোন পায়েল কে চিনি না।”
” উষসীর নার্সকে চিনিস তো?” রাগে ফেটে পড়ে বলল।

” হ্যা ওকে আমি এখনো খুঁজছি পাইনি। পেয়ে গেলে তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না মনে রাখিস।”
আঙুল উঠিয়ে বলল জায়ান। আয়ান হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে আছে জায়ান ভেতরে চলে গেল।
আয়ান বাগানেই লাথি মেরে বলল,,” পায়েল জায়ানের কাছে না থাকলে আছে কার কাছে। কে ওকে উঠিয়ে নিল। কেন যে ওটাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল আমার সব না ঘেটে দেয়।”
ভয়ে আয়ান ঘামতে লাগে।

কয়েকজন কে কল‌ করে পায়েল এর খোঁজ নিতে বলে রুমে আসে। বকুল ফ্লোরে বিছানা করে শুতে নিচ্ছিল। আয়ান এসে রাগান্বিত গলায় বলল,,,” বের হ আমার রুম থেকে। অন্য রুমে যা আমার রুমে তোকে যেন না দেখি।”
ভয়ে বকুল রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসে। আয়ান একটা কাজের মহিলাকে ডেকে অন্য রুমে নিয়ে যেতে বলে বকুল কে।
পায়েল কোথায় আছে সেই টেনশনে আয়ানের দিশেহারা অবস্থা। আর কিছুই ও ভাবতে পারছে না।

“তুমি পাগলটা কে দেখতে গিয়েছিলে?” জেসমিন জহুরি নজরে চেয়ে বললেন।
সাদিকুর বললেন,,” হ্যা খুব কান্না করল। ওখানে নাকি অনেক কষ্ট দেয়।”
” পাগল ভাল হলে তুমি আমায় তালাক দিবে?”
” মানে কি?”
” দুই ব‌উ নিয়ে সংসার করবে?”
” দেখ মেজাজ খারাপ করো না।”

” দেখো আমি জানি তুমি তারে ভালবাসেন। কিন্তু তুমি ভুলে যাবে না আমি তোমার
সন্তানের মা। আমি জায়ান আর আয়ান কে মানুষ করছি। ওরা আমার সন্তান না হলেও আমি ওদের নিজের সন্তানের থেকে বেশি আদর স্নেহ দিয়ে বড় করেছি‌। সে ফিরে আসলে তুমি আমার প্রতি অন্যায় করতে পারো না। আমার অধিকার আমি ছাড়ব না একটু ও না।”
সাদিকুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,” দয়া করে থামো‌। তোমার অধিকার কেউ কেড়ে নিবে না। আর মৌমিতার প্রতি নিজের হিংসা জমা রেখো না।”

” কি বললে আমি হিংসা করি। ওই পাগলকে আমি হিংসা করতে যাব কোন দুঃখে। কি আছে ওর?”রাগে চেঁচিয়ে উঠল জেসমিন‌। সাদিকুর ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে রুম থেকেই বেরিয়ে এল। তার নজরে পড়ল বকুল বালিশ নিয়ে অন্য রুমে যাচ্ছে। তিনি কিছু একটা চিন্তা করে আয়ানের কাছে গেল।

” আসব।”
” বাবা আসো। কিছু বলবে?”
” সত্যি করে বলতো তুই বড় ব‌উমার বোনকে বিয়ে কেন করছিস?”
আয়ান বলল,,” ভালবেসে বাবা। আমি বকুল কে ভালবাসি তাই বিয়ে করছি।”
” একা একা করলি কেন আমাদের জানালে কি হতো।”
” জায়ান ও তো একাই করেছিল!”

কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩৭ (১)

” সব কিছুতে জায়ান কে ফলো করিস লজ্জা করে না। নিজের বলতে কিছু কি নাই?” আয়ান লাল চোখে তাকাল সাদিকুর এর দিকে। বাপকেও এখন অসহ্য লাগছে ওর।

কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩৮