খড়কুটোর বাসা পর্ব ১২

খড়কুটোর বাসা পর্ব ১২
Jhorna Islam

রুমের ভিতর আশেপাশের কয়েকজন মানুষ রয়েছে। সাথে একটা হুজুর ও রয়েছে।
যুথি সবার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রয়। তারপর দাদির দিকে তাকিয়ে কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দাদি এসব কি?

উনারা সকলে এখানে যে হঠাৎ? তুমি তো ভেঙে কিছুই বলছো না কিছু কি হয়েছে?
তোকে সব পরে বলছি।তুই আগে নাত জামাইরে নিয়া তোর রুমে একটু বসা। ইরহান যুথির পিছনে দাড়িয়ে আছে। যুথি ইরহান কে বলে,,আসুন আমার সাথে একটু বসে জিরিয়ে নিন। ইরহান ও যুথির পিছনে পিছনে যুথির ছোট্ট রুমের ভিতর গিয়ে বসে পরে।
যুথি নিজের বোরখা টা খুলে রেখে ইরহান কে একটু বসতে বলে নিজের দাদির কাছে চলে যায় জানার জন্য কি হবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দাদি এই দাদি কি করবে তুমি বলোতে? আর এতো মানুষ জন কেনো ঘরে?
আমায় তো ঠিক করে বলতেছো ও না হয়েছে টা কি।
–তোর বিয়ে দিবো আবার!
— মানে মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার? কি বলছো এগুলো তুমি। পা’গলের মতো একটা বললেই হলো? আমার বিয়ে হয়ে গেছে আবার কিসের বিয়ে?

— তো বিয়ে হয়ে গেছে দেখে কি আর করা যাবে না?
— শুনো দাদি মজা করে থাকলে এসব মজা বাদ দাও।আমার এসব একদম ভালো লাগছে না। তোমার নাত জামাই কিন্তু এই বাড়িতে ভুলে যেও না।আমার কিন্তু রা’গ উঠতেছে।
— এতো রে’গে যাচ্ছিস কেন বু? আগে আমার কথা শোন।
— যুথি ইতিমধ্যে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে রা’গ প্রায় উঠে গেছে তার দাদির কথা শুনে। নিজেকে শান্ত করে বলে,, ঠিক আছে বলো শুনছি।

— আমি কি অন্য কাউকে বিয়ে করতে বলছি নাকি তোরে? আমার নাত জামাইরে ই আবার বিয়ে করবি এখন।
— এসবের মানে কি দাদি?
— আসলে তোদের তো ফোনে বিয়ে হয়েছে। সামনাসামনি হয়নি।আমার যেনো মনটা কেমন করছে বিয়ে টা নিয়ে। কয়েকজন বলতেছে ঐ ভাবে বিয়ে হলেও আবার পরানো লাগে। তাই আমি চাইনা আমার বু এর সংসারের দিকে তাকিয়ে কেউ কিছু বলুক।
কে বলছে এসব কথা তোমায় দাদি? এসবের কোনো মানে হয়?

এটাতো বড় কোনো ব্যাপার না বু।তোদের তো আগে বিয়ে হয়েছেই।এখন করে নিলে কিছু হবে না। কয়েক মিনিটের ব্যাপার শুধু। রাজি হয়ে যা বু।
কিন্তু দাদি,,,, উনি কি ভাববেন বলেন তো? কেমন কেমন না বিষয় টা?
তুই একটু নাত জামাইকে বল। নিশ্চয় রাজি হবে কিছু বলবে না।
যুথির দাদির কথাই ঠিক হলো।ইরহান কোনো অসম্মতি জানায় নি। যুথির মুখে শুনে রাজি হয়ে গেছে।

বলেছে দাদির যা মনে হয় করুক আমার এতে কোনো আপত্তি নেই। মুরুব্বি মানুষ ভেবে চিন্তেই বলেছে।
যুথি ইরহানের কথায় অবাক হয়। অন্য কেউ হলে এতোক্ষন রাগারাগি করে চলে যেতো।শ্বশুর বাড়ি প্রথম দিন এলো তাও আপ্যায়ন না করে এসব বলছে।
সকলের সামনে ইরহান আর যুথি পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।সকলেই বিয়ে পরিয়ে বিদায় নেয়।

যুথির দাদি এবার নাত জামাইর আপ্যায়ন করতে লেগে পরে। গরিব হতে পারে মনটা তো আর গরিব না। নিজের নাত জামাইকে যথাসাধ্য আপ্যায়ন করে।
ইরহান শত বলেও যুথির দাদি কে থামাতে পারে নি। কিছু সময় পর পর এটা ওটা এনে দিচ্ছে।

যুথি ইরহানের জন্য নিজের হাতে রান্না করে। যুথির দাদি রান্না করে নি যদি খারাপ হয়।নাত জামাই তাহলে খেতে পারবে না।
যুথি বলেছে রান্না করতে. দাদি বলে,,চুপচাপ তুই রান্না কর।আমার চান্দের লাহান নাত জামাই খাইবো।আমার এসব রান্না যদি না খেতে পারে। তখনতো উপোস থাকতে হবে। আমার বয়স হয়েছে এখনতো আর আমি আগের মতো কিছু রান্না করতে পারি না।

বিকেলে তাছলিমা বানু উঠোনে মোড়া পেতে বসেছিলো।
এমন সময় পাশের বাড়ির এক মহিলা আসে।৷ নাম আছমা।তাছলিমা বানুর সাথে তার খুবই ভাব গলায় গলায় সম্পর্ক।
কিন্তু একজন আরেকজন কে এটা ওটা নিয়ে নিচু করতে ছাড়ে না।দুই জনের কেউই এই বিষয়ে কম যায় না। এমন সম্পর্ক আজ কাল দেখা যায় না।এতো খোঁচাখোঁচি করার পর ও আবার দুইজনের মিল।

আজ খালি হাতে আসেনি।হাতে একটা মিষ্টির পেকেট। তারাতাড়ি করে এসেই তাছলিমা বানুর পাশে রাখা আরেকটা মোড়ায় বসে পরে। তারপর বলে উঠে,,, ও ভাবি গো।
কেমন আছেন ভাবি? তাছলিমা বানু জিজ্ঞেস করে আছমা কে।
— কি আর বলবো ভাবি আপনারে,,আমার মতো সুখি কেউ আছেনি? এমনিতেই আমি অনেক সুখী।এখন আরো সুখী হয়ে গেলাম।
— কি নিয়ে এতো খুশি ভাবি?

— আমি দাদি হতে চলেছি গো ভাবি।তারপর তাছলিমা বানুর দিকে মিষ্টির পেকেট টা এগিয়ে দিয়ে বলে,, এই যে এই নেন আপনার জন্য মিষ্টি আনছি।আপনি তো আমার কতো আপন! তাই আপনার জন্যই প্রথম মিষ্টি নিয়ে আসলাম।আর সবার আগে খবর টা আপনাকেই জানাতে আসলাম।

— ওহ ভালো তো ভাবি।
— ভালো তো হতেই হবে।আজকাল যা দিন পরলো এখন ছেলে মেয়েরা বাচ্চা নিতেই চায় না।পরে কতো সমস্যা হয় জানেন ভাবি? মাঝে মাঝে তো হয়ই না। তাইতো বিয়ের এক বছর না ঘুরতেই আমার বউমারে বলে দিছি সুখবর যেনো পাই।
আমার বউ মা আবার আমার কথায় উঠে বসে। দেখলেন কেমন করে আমার কথার মান রাখলো?

আপনার বড় ছেলে তো অনেক দিন হলো বিয়ে করছে ভাবি।আপনার ছোটো ছেলেও আমার ছেলের আগে বিয়ে করেছে।এখনো তো আপনাকে একটা সুখবর দিতে পারলো না।

কোনো সমস্যা আছেনি ভাবি?
তাছলিমা বানু আছমার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ফুঁসছে। ঠিক জানতো এই কথাটা শুনাবে তাকে। কিন্তু কথাটা তো ঠিকই বলছে। আজকেই দুই ছেলের বউ কে কড়া করে কয়েকটা কথা শুনাতে হবে। এদের জন্য সে কেন কথা শুনবে?
এসব ভাবতে ভাবতেই তাছলিমা বানু ঘরের দিকে হাটা দেয় আছমা কে বিদায় দিয়ে।

ইরহান বিকেলে যুথি কে নিয়ে চলে যেতে চেয়েছিলো যুথির দাদি দেয়নি।যুথিও চায় থেকে যেতে।নিজের বাপের বাড়ি আসলে প্রতিটা মেয়েরই মন চায় থাকতে।আবার কবে না কবে আসতে পারে।যদিও যুথি গেছে মাত্র একদিন হয়েছে। তাও এটাই এক বছর মনে হচ্ছে যুথির কাছে।

ইরহান যখন থেকে যেতে রাজি না হয় তখন যুথি ইরহানের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলে,,, এইই বোকা পুরুষ থেকে যাইনা।শুধু তো একটা দিন।এমন করেন কেন?
ইরহান দুষ্টু হেসে যুথির কোমড় ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তারপর কানের পিছনে চুল গুলো গুজে দিতে দিতে বলে উঠে,, তুমি এখনো বুঝনি কেনো চলে যেতে চাচ্ছি?

— না তো কেন? বাজার না হয় কাল দুইজনে একসাথে করে নিয়ে বাড়িতে ফিরবো সমস্যা নেই তো।
— আমি তো তোমায় অনেক চা’লাক ভেবে ছিলাম যুথি।তুমি আমাকে বোকা বলো? আসল বোকা তো তুমি নিজে।

“বোকা পুরুষের বোকা বউ।”
মোটেও আমি বোকা নই।
ইশশ তুমি বললেই হলো?
হুম।

এতোদিন হয়ে গেলো এখনো বাসর টাই করা হলো না। দ্বিতীয় বারের মতো আবার বিয়ে করলাম।এই সুযোগ টা কে হাত ছাড়া করে? আমিতো একদম হাত ছাড়া করছি না।
যুথি ইরহানের কথায় কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়। হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। ইরহানের দিকে চোখ তুলে তাকাতেও পারছে না।
ইরহান যুথির লজ্জা রাঙা মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,, হায় হায় আমার বা’ঘিনী বউ দেখি লজ্জা ও পায়।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ১১

ধ্যা’ত ছাড়েন না।
কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।
বোকা পুরুষ কি শুরু করলেন বলেন তো?
আমার বউকে দেখাচ্ছি,,,,,
“তার বোকা পুরুষ শুধু ধো’কা খেতে না ভালোবাসতে ও জানে!”

খড়কুটোর বাসা পর্ব ১৩