খড়কুটোর বাসা পর্ব ৮

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৮
Jhorna Islam

ইরহানের এক ধাক্কায় ইশান দূরে গিয়ে ছিটকে পরে।
আ’কস্মিক এ’হে’ন ঘটনায় সকলেই বিষ্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছু সময়ের জন্য প্রতিক্রিয়া দেখাতে ভুলে গেছে। ইরহানের কাছ থেকে কেউই এমন কিছু আশা করেনি।
শান্ত প্রিয় চুপচাপ স্বভাবের ছেলেটা এমন,কিছু করতে পারে সকলের ধারণার ও বাইরে। ইরহান কখনোই তাছলিমা বানু, ইমন,ইশানের সাথে জোর গলায় কথা বলতো না।ওদের সাথে তেমন কোন কথাই হতো না।
ওদের হয়তো জানা নেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য একটা শেষ চেষ্টা হলেও করে।ইরহান তার ব্যতিক্রম নয়।

ইরহান বুঝে গেছে মানুষ কে যতো ছাড় দিবে সে ঘাড়ে চড়ে বসবে।
ইরহানের ধাক্কায় ইশান হাতের কুনুই তে ব্যাথা পায়।এমনিতেই হাত মুচড়ে ধরায় ব্যাথা পেয়েছিল তার উপর আবার কুনুই তে ব্যাথা পেয়েছে।
তাছলিমা বানু,, আর ইশানের বউ দিনা গিয়ে দৌড়ে ইশানের কাছে যায়।হাতে ধরে তুলে বসায়।
তাছলিমা বানু এবার গ’র্জে উঠে ইরহান তুই আমার ছেলের গায়ে হাত তোলার সাহস পেলি কোথা থেকে?
ইরহান নির্বিকার ভাবে জবাব দেয় যেইভাবে তোমার ছেলে আমার বউয়ের গায়ে হাত তোলার সাহস পেয়েছে ঠিক সেইভাবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমার বউকে কেউ চোখ রাঙালেও ব’র’দা’স্ত করবো না আমি। সেই জায়গায় ও তার গায়ে হাত তোলার সাহস দেখিয়েছে একটু শাস্তি তো পাওনাই।যদিও এটা কমই ছিলো।প্রথম বার বলে ছেড়ে দিলাম।
বাহ্ এই ফ’কি’ন্নি একদিনে এসে পুরো তোকেই পাল্টে দিলো।বেশ জা’দু জানে মনে হচ্ছে।
আমার বউ আগে কোথায় ছিলো কেমন ভাবে ছিলো সেটা ভুলে যাও।সে এখন ইরহানের বউ সেটা মাথায় ঢুকাও।তাই বারবার তাকে ফ’কি’ন্নি বলে সম্বধন করবে না।
তুই আমার ছেলেকে আঘাত করে একদম ঠিক কাজ করিস নি। চে’ক এ সাইন করাতো দূর তুই একটা কানাকড়ি ও পাবি না।

ব্যাংকের টাকা পয়সা,,জায়গা জমি সব আমার নামে। আর আমার নামে যেহেতু সব পেলে আমার পেটের সন্তান পাবে।তুই আমার কেউ না তাই তুই কিছু পাবি না। আমি তোকে কিছু দিবো না।
এই বাড়িটা দেখছিস? এটা কিন্তু তোর বাবার জায়গা নয়।অবশ্য তোর টাকা দিয়েই তোর বাপের বাড়ির পাশের রমিজ ভাইয়ের জায়গা কিনে তারপর সেখানে করা হয়েছে তোর নিশ্চয়ই জানা আছে। আর এই জায়গা টা ও আমার নামে।তোর কোনো অধিকার নেই।এই বাড়ির একটা ইটের প্রতি ও তোর কোনো অধিকার নেই।
তাই আমি তোকে এই বাড়িতে থাকতে দিবো না। নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরা করে নে।না করেছিলাম বেশি বাড়াবাড়ি করিস না শুনিস নি আমার কথা।

আমার কথা মতো চললে সব ঠিক থাকতো।অন্তত এই বাড়িতে মাথা গুজার ঠাই পেতি।এখন সেটা ও পাবি না।নিজের রাস্তা নিজে দেখ।আজ রাতের মধ্যে বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে।
তোদের মুখটা ও আমি দেখতে চাই না। বিয়ের পর থেকে অনিচ্ছা সততে ও তোকে স’হ্য করে গেছি। ঐ বুড়োর জন্য কিছু বলতে পারতামনা। চুপ থাকতে হতো আমায়। তারপর বুড়োটা মরেছে আমার জ্বা”লা জুড়িয়েছে। তোকে আমার চোখের সামনে থেকে দূরে পাঠানোর জন্য বিদেশ পাঠিয়ে দিলাম।

চেয়েছিলাম তুই সারাজীবন ই ঐখানে থেকে যা।কিন্তু তুই তো আমার সব পরিকল্পনা শেষ করে দিলি। আমার সব চেয়ে বড় ভুল ছিলো তোকে বিয়ে করানো টা। তাও করিয়েছি করিয়েছি নিজের ভালোর জন্য এই মেয়ে টা কে পছন্দ করে ছিলাম কিন্তু না এই মেয়েটাই আমার সব শেষ করে দিলো।
আজকের ভিতর চলে যাবি।তোর বাবার সম্পত্তিতে ভা’গ পেলেও তোর নিজের টাকা দিয়ে কিনা কোনো কিছুতে তুই এক বিন্দু পরিমাণ ও ভাগ পাবি না। চলে যা।

ম’গে’র’মু’ল্লু’ক নাকি শ্বাশুড়ি আম্মা,? আপনি বললেই আমরা চলে যাবো?
এতো সোজা যার বাড়ি যার ঘর তাকেই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইছেন?
আপনার কথা আমরা এতো সহজে মেনে নিবো? একদম না। আমরা কেন যাবো? গেলে নিজেরা চলে যান। কেমন নি’র্ল’জ্জ’দের মতো কথা।
যুথির কথায় তাছলিমা বানু চিললিয়ে বলে উঠে,,,, এই মেয়ে একদম আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলবেনা।নয়তো আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।

— এমনিতেও আপনার থেকে খারাপ আর কেউ নাই এই দেশে কেনো পুরো পৃথিবীতে।
— এতো চে”টাং চে”টাং কথা না বলে বের হও আমার বাড়ি থেকে। রাস্তায় গিয়ে কু’কু’র বি’ড়ালের মতো সংসার পাতো।তাহলে দুইদিনের ভিতর সব তে’জ শেষ হবে।
— আমিতো আমার তে’জ শেষ করার জন্য আসিনি নকল শ্বাশুড়ি আম্মা। আপনার তে’জ কমানোর জন্য এসেছি।
ইরহান এই মেয়ে কে নিয়ে বিদেয় হ তুই।আমার আর তোদের স’হ্য হচ্ছে না। তোদের দেখলেই শরীরে যেমন আগুন জ্ব’লছে। তোদের মুখ ও আমি দেখতে চাই না।

আমরা যাবো না নকল শ্বাশুড়ি আম্মা। দেশে আইন কানুন আছে ভুলে যাবেন না। আপনি সব নিজের নামে করে নিলেই তো হলো না।আর গ্রামে মেম্বার চে’য়া’র’ম্যান ও রয়েছে। ওদের কাছে গেলেই আমরা আমাদের সব ফিরে পাবো।
যুথির কথা শুনে সকলেই উচ্চ স্বরে হেঁসে দেয়।
মে’ম্বার চে’য়া’র’ম্যান কি করবে? এখন মুখের কথায় কিছুই হবে না। এখন কাগজ পত্র কথা বলে।
আর এখন মে’ম্বার চে’য়া’রম্যা’ন টাকা বুঝে। টাকা দিলে প’ল্টি মারতে দুই সেকেন্ড ও নিবেনা। যার টাকা আছে তারা তার কথাই বলবে। বলেই ইমন হাসতে থাকে।

পৃথিবী টা টাকার গো’লাম। টাকা আছে সব আছে।তোমাদের কথার মূল্য কেউ দিবে না।হয়তো কয়েকজন এসে হা হুতাশ করে সা’ন্তনা দিবে এই ব্যতীত কিছুই করতে পারবে না।
যুথির শরীর জ্বা’লা করছে এদের কথা শুনে। এতটুকু জীবনে অনেক মানুষ দেখেছে কিন্তু এদের মতো খারাপ আর কাউকে দেখেনি।
এরা সব সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। যুথির ইচ্ছে করছে সব ভেঙে গুড়িয়ে দিতে। নিজের রা’গ কে সামলে ইরহানের দিকে চোখ তুলে তাকায়।

ইরহান এদের কথা শুনতে পেরেছে কিনা জানেনা যুথি।কি যেনো একমনে ভাবছে।
যুথি এবার ইরহানের হাত ঝাকিয়ে বলে,,,আপনি চুপ করে আছেন যে? কিছু বলছেন না কেন এদের?
যুথির ধাক্কা তে ইরহানের হুশ আসে।
যুথি রুমে গিয়ে আমার সব কিছু গুছিয়ে নাও!
— মানে কি বলছেন এসব? আপনার মাথা ঠিক আছে? আপনি সত্যি নিজের সব কিছু ছেড়ে এদের কথায় এদের সব দিয়ে চলে যাবেন?

— তোমাকে যা বলছি তুমি গিয়ে তা করো।
— কিছু করবোনা।কোথাও যাবো না। আমরা কেন যাবো? গেলে ওরা যাবে। আপনিও কোথাও যাবেন না আমিও কোথাও যাবো না।
— যুথি আমি কি বলেছি কানে যায় নি তোমার? কথাটা বেশ তীব্র ভাবে বলে ইরহান। যুথি আর কিছুই বলতে পারেনি।ছলছল চোখে একবার ইরহানের মুখে তাকিয়ে চলে যায়।
ইরহানের কথায় সকলের মুখে হাসি ফোটে।

তাছলিমা বানু বলে উঠে,,, যাক এইবার একটা কাজের কাজ করেছিস। মাথায় দেখা যায় বুদ্ধি আছে একটু শুধু শুধু শুধু ঝামেলা করে কিছু লাভ হতো না তর বুঝে গেছিস।
চাইলে আজকের রাতটা থেকে যেতে পারিস।আমি আবার এতোটা ও নি’র্দ’য় নই বুঝলি মা ডেকেছিস এইটুকু করতেই পারি তোর জন্য।

আপনাকে আমি মা নামক পবিত্র স্থান দিয়েছি ভাবতেও আমার ল’জ্জা লাগছে। ছিঃ মা শব্দ টাকে আমি এতোদিন অ’পমান করে এসেছি। তাছলিমা বানু মা হওয়ার কোনো যোগ্যতাই রাখে না।
আজ আমি ইরহান একটা কথা বলে যাচ্ছি তাছলিমা বানু,, যাদের জন্য আজ আমার সব কিছু কেড়ে নিয়ে আমাকে নি’স্ব করলেন সেই তারাই একদিন আপনাকে তাদের জীবন থেকে ভি’খারির মতো তাড়াবে।
এই ইরহান কেই আপনার একদিন কাজে লাগবে। সেইদিন কিন্তু আপনাকে আমি ফিরিয়ে দিবো না।কারণ আমার মন টা আমার জ’ন্ম’দা’ত্রী মায়ের মতো উ’দার। উদাহরণ দেওয়ার নিশ্চয়ই দরকার নেই? এই যে যেমন আজ সব আপনাদের দা’ন করে দিলাম।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৭

এতোদিন ঘুড়ির লা’টাই নিজের হাতে শক্ত করে ধরে সুতো নিজের হাতে রেখে উড়ালাম।সেই ঘুড়িই যখন বে’সামাল হয়ে সুতো দিয়ে আমার হাত কাটায় তাহলে সেটা ধরে রাখার আর আমার কোনো দায় নেই।কেটে দিলাম সুতো এখন যতো উড়তে পারে উড়ুক।
কথাটা বলেই ইরহান চলে যায়,,,,,,,

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৯