গোধূলি লগ্নের সেই তুমি বোনাস পর্ব 

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি বোনাস পর্ব 
লেখনীতে জেনিফা চৌধুরী 

ফাইজার মুখের উপর ফারদিনের গরম নিশ্বাস পড়ছে। অনুভূতি’তে বুকের ধুকপুকানি বেড়ে চলেছে। ফারদিনের থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য মুচড়া-মুচড়ি করে যাচ্ছে ফাইজা। আর ফারদিন সে এক ধ্যানে তাঁকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর দিকে। হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সাথে সাথে ফারদিন’ ও’কে টেনে নিয়ে আসে। সেই থেকে এক নজরে তাঁকিয়ে আছে ওর দিকে। এতে ফাইজা’র অস্বস্তি যেনো বেড়ে চলেছে। ফাইজা এইবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে প্রশ্ন করে বসলো…….
–কি সমস্যা আপনার? যখন তখন টানাটানি শুরু করেন। এখন কিছু বলেন না। খালি হা করে তাঁকিয়ে আছেন…..
ফারদিন উওর না দিয়ে ফাইজা’র নাকে নাক ঘষলো। অনুভূতি’তে এইবার ফাইজা ফারদিনের পাঞ্জাবি খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো। ফাইজা’র চোখের পাতা কাঁপছে। ঠোঁট গুলো তিরতির করছে। এতে ফারদিনের নেশা যেনো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। কপালে হলুদ লাগানো দেখে মুখ’টা হলদে হয়ে আছে দেখতে বেশ মায়াবী লাগছে। ফারদিন ঘোর লাগা কন্ঠে বললো……

–আমার বউ’টাকে যদি আমি হলুদ না লাগাতে পারি তাহলে পুরো হলুদ অনুষ্ঠান অসম্পন্ন রয়ে যাবে তো…….
ফাইজা এখনো চোখ বন্ধ করে রয়েছে। ফারদিন পাশের টেবিল থেকে হলুদের বাটি নিয়ে ফাইজা’র দুই গালে, নাকের মাথায় লাগালো। তারপর নিজেই ফাইজা’র গালে গাল ঘষলো। ফারদিনের হালকা দাড়ির খোচা ফাইজার গালে লাগতে’ই আরো বেশি খামচে ধরলো ফারদিনের বাহু। ফাইজা’র অবস্থা দেখে ফারদিন মুখ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। ফাইজা হালকা কাঁপছে। তা দেখে ফারদিন ফাইজা’র দিকে ঘনিষ্ঠ হয়ে বলে উঠলো…..
–আজকে এত বেশি কাঁপা-কাঁপি করো না জান। কিছু’টা না হয় আমাদের ফুলশ….
বলতে পারলো না তার আগে’ই ফাইজা ফারদিনের মুখ চে’পে ধরলো। ফারদিন না থেমে ফাইজা’র হাতে চু’মু খেলো। ফাইজা রাগী চাহনী দিয়ে বললো…….
—মুখ সামলা’তে শিখুন। আর কেউ যদি এখন এসে আমাদের দেখে কি হবে ভাবুন তো?
ফারদিন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো……

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–এখন থেকে মুখ সামলানো শিখব কেনো? বরং বেশি বলব কারন এখন থেকে তুমি আমার বউ। আর কেউ দেখলে দেখবে তাতে আই ডোন্ট কেয়ার। আমার বউ, আমার মুড, আমি রোমান্স করব তাতে কার বাবার কি বলো তো? আমি পারলে তো এক্ষুনি…….
বলে থেমে গেলো। সশব্দে হেসে ফাইজা’র নাকে নাক ঘষলো পূর্নরায়। ফাইজা’র গাল দুটো দুই হাতে আকড়ে ধরে ফাইজা’র কপালে কপাল ঠেকালো। নেশাময় কন্ঠে বললো……
–আর মাত্র কয়েক ঘন্টা তারপর তুমি সারাজীবনের জন্য আমার। শুধু আর শুধুমাত্র আমার জান। উপর ওয়ালা ছাড়া কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবেনা জান।
ফাইজা এইবার আদুরে হয়ে উঠলো। ভালো লাগা এক আবেশে ছেয়ে গেলো অঙ্গ-প্রতঙ্গ। “ভালোবাসি” বলে আকড়ে ধরলো ফারদিন’কে। ফারদিন ও মিষ্টি হেসে জড়িয়ে নিলো নিজের প্রিয়তমা’কে।

আরজা চারদিকে ফাইজা’কে খুঁজতে ছিলো। খুঁজতে খুঁজতে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে’ই কারোর হেচকা টানে বিশাল দেহী কারোর বুকে ধাক্কা খেলো। আরজা চোখ মুখ কুচকে রেখেছে ভয়ে। ভেবেছিলো সিড়ি দিয়ে পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু নাকের মধ্যে চেনা পারফিউমের ঘ্রান যেতে’ই আরজা’র বুক’টা কেঁপে উঠলো। শরীরে কম্পন সৃষ্টি হলো। ভয়ে ভয়ে মাথা উঠাতে’ই সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি’কে দেখে আরজা কয়েকপা পিছিয়ে যেতে নিয়েও পারলো না। জেহের ও’কে শক্ত করে ধরে সামনের দেয়ালের সাথে চে’পে ধরলো। আরজা ভয়ে বার বার ঢোঁক গিলছে। কাঁপা-কাঁপি স্বরে বললো……
-দূরে সরে দাড়ান জেহের ভাইয়া। আমার অস্বস্তি হচ্ছে…..

জেহের ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে আঙ্গুল দিয়ে আরজার গালে স্লাইড করতে’ই আরজা চোখ বন্ধ করে নিলো। জেহের কিছু’টা আরজা’র দিকে ঝুঁকতে’ই আরজা’র হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো। চোখ খুলতে’ই জেহের’কে নিজের এত কাছে দেখে কিছু’টা অবাক হলো। এক নজরে জেহের দিকে তাঁকিয়ে রইলো। জেহের আরজা’র দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হেসে আরজার গালের সাথে গাল ঘষে ওর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে নিমিশেই আরজা’র থেকে দূরে চলে গেলো। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে আরজা’র দিকে পেছন ফিরে তাঁকিয়ে দুষ্টুমি হাসি দিয়ে নিচে নেমে গেলো। আর আরজা ঠান্ডা বরফ হয়ে দাড়িয়ে আছে। ওর শরীর নিমিশেই বরফে পরিনত হলো। হঠাৎ এহেতুক ঘটনায় আরজা থরথর করে কাঁপতে লাগলো। নিজের লেহেঙ্গা’ জোরে খামচে ধরলো। কল্পনাও করতে পারছেনা জেহের এমন কাজ করতে পারতে। মনের মধ্যে প্রশান্তি বয়ে চললো। খুশিতে মুখে হাসি ফুটলো আরজা’র। চোখ দিয়ে টুপটাপ করে পানি পড়তে লাগলো। আজকের এই নোনাজল খুশির। কষ্টের না। চোখ বন্ধ করে গাল হাত দিয়ে জেহের ছোয়া অনুভব করতে লাগলো।

রাতে অনুষ্ঠান শেষে সবাই সব কিছু গুঁছিয়ে সুয়ে পড়লো। কিন্তু সবার চোখের আড়ালে ফারদিন জেগে আছে। তার প্রিয়তমা’কে এক নজর দেখার জন্য। আজকের রাত’টা প্রিয়তমা’র সাথে কাটাবে বলে। কিন্তু ফাইজা কোথায় ঘুমিয়েছে ফারদিন নিজেও জানেনা। তাই সবাই সুয়ে পড়তে অন্ধকারে ফারদিন পা টিপে টিপে সবার আগে গেস্ট রুমে ঢুকলো। কারন, ওর জানা মতে ফাইজা আর আরজা দুজনের এই রুমে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রুমের দরজায় হাত রাখতে’ই দেখলো দরজা খোলা। মনে মনে একটু খুশি হলো। মোবাইলের আপসা আলোয় রুমের মধ্যে ঢুকলো। খাটের সামনে যেতে তিন জোড়া পা দেখে ফারদিন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। জানা মতে দুই জোড়া পা থাকা’র কথা। সবাই পাতলা কম্বল দিয়ে মুড়ি দিয়ে সুয়ে আছে। গরমের মধ্যে কেউ কম্বল গায়ে সুয়ে থাকতে পারে। ভাবতে পারছেনা ফারদিন। এখন কি করে ফাইজা’কে খুঁজে বের করবে? খুব চিন্তায় পড়ে গেলো এইবার। মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে লাগলো একটা উপায় খুঁজে পাওয়ার জন্য। মাথা’র মধ্যে তৎক্ষনাৎ একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসলো। ওদের পায়ের সামনে বসে আস্তে আস্তে তিনজনের পায়ে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো। পাশের দুইজনের মধ্যে তেমন একটা ভাবান্তর হলো না। মাঝের’টার পায়ে সুড়সুড়ি দিতে’ই আচমকা ফারদিনের মুখে এসে এক লা/থি উড়ে এসে পড়তে’ই ফারদিন হঠাৎ ব্যাথায় “আহ” করে মৃদ শব্দ করে পড়ে গেলো। নাক বরাবর লা’থি’টা এসে পড়েছে। ফারদিন নাক ডলতে ডলতে মিনমিনিয়ে বলে উঠলো……

—ও খোদা এ কার পা’টা উড়ে এসে আমার কপালে ঠেকলো কে জানে? তারে যদি একবার পাই ওর নাক’ আমি ঘু’ষি মে’রে থেতলে দিব। ঠিক করে ঘুমাতে পারেনা নাকি। ঘুমের মধ্যে হাত-পা ছড়ানোর অভ্যাস যদি আমার বউ’টার থাকে আমার কি হবে?
ফারদিনের মুখ’টা এই মুহূর্তে খুব অসহায় লাগছে। এমন সময় পাশের একজন নড়ে উঠতে’ই তার হাত কম্বলের নিচ থেকে বেড়িয়ে এলো। কিন্তু হাত’টা সম্পূর্ণ ঢাকা ওড়না দিয়ে। ওড়না’টা চিনতে পেরে ফারদিনের মুখে হাসি ফুটলো। খুশি মনে উঠে গিয়ে মানুষ’টার মুখ না দেখে’ই জড়িয়ে ধরলো। ফারদিন কম্বলের উপর দিয়ে মুখ অনুমান করে চুমু খেয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো…..
–জান একটু উঠো না প্লিজ। আজকের রাত’টা তুমি আর আমি নির্ঘুম কাটাব। কালকে তো আর সুযোগ পাবোনা। তাই উঠোনা প্লিজ……
ফারদিন বলতে’ই জবাবে কেউ চিকন স্বরে মিনমিনিয়ে বললো….

–নাহ জান আমি উঠতে পারব না….
গলার স্বর’টা অচেনা লাগলো ফারদিনের। পরক্ষনেই মনে করলো হয়তো ঘুমের কন্ঠ তাই অন্যরকম লাগছে। তাই আরো একবার চুমু খেয়ে বললো……
–উঠোনা জান প্লিজ। সবাই জেগে গেলে খুব সমস্যা হয়ে যাবে………
কথা’টা শেষ হতে না হতে’ই রুমে আলো জ্বলে উঠলো। আলো দেখে ফারদিন ধড়ফড়িয়ে উঠে দাড়াতে’ই বিস্ফোরিত কন্ঠে ভেসে আসলো……
–বাহঃ বাহ আপনি আমাকে শেষ অব্দি ঠকালেন। এই রাতের আধারে আপনি মেয়েদের সাথে এইসব করেন। ছিঃ…….
চেনা কন্ঠস্বর শুনে ফারদিন চোখ বড় বড় করে পেছনে তাঁকাতে’ই ফাইজা’কে দেখে ওর হার্ট অ্যাটাক করার অবস্থা। চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গেলো। একবার খাটের দিকে তো আরেকবার ফাইজা’র দিকে তাঁকিয়ে তোতলানো স্বরে বলে উঠলো……

–তুতুমি এখানে?
ফাইজা এইবার রাগী ফেস করে ফারদিনের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো…..
–হ্যা আমি এখানে। আর আমি এখানে বলেই দেখতে পারলাম আপনার আসল রুপ। কাল আমাদের বিয়ে আর আজ আপনি এইসব করছেন।
বলেই ন্যাকা কান্না শুরু করলো। মুখে ওড়না দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো…..
–এখন আমি সবাইকে মুখ দেখাব কি করে?
বলে কান্নার বেগ বাড়িয়ে নিচে বসে হাত পা ছড়িয়ে বিলাপ করতে করতে কপাল চাপড়ে বলতে লাগলো……
— এ আমার কি সর্বনাশ হলো গো? এখন আমার কি হবে গো? ও খোদা তুমি আমার কপালে এমন একটা স্বামী লিখেছিলে? আমার কি হবে গো?? এখন আমাকে কে বিয়ে করবে গো?
ফারদিন বেচারার কান্না করে দেওয়ার উপক্রম। মুখ দিয়ে শব্দ’ই বের হচ্ছেনা। ফাইজার চিৎকার শুনে জেহের আর দৌড়ে এলো পাশের রুম থেকে। আরজা আর তনুজা দুজনেই ধড়ফড়িয়ে উঠলো। কিন্তু কম্বলের নিচে কে আছে এখনো ফারদিন জানেনা। তনুজা খাটে বসে বসে মিটমিটিয়ে হাসচ্ছে। ফারদিন তাঁকাতেই এমন একটা ভান ধরলো যেনো এখানে কি হচ্ছে সে কিছুনা। তনুজাও ফারদিন’কে দেখাতে বিস্ময় ভরা চোখে তাঁকিয়ে রইলো। আরজা তাড়াতাড়ি ফাইজা’র কাছে এসে বসে প্রশ্ন করে বসলো……

–কি হয়েছে ফাইজু? এত রাতে এভাবে কান্না করছিস কেনো?
জেহের ও এগিয়েও সেম প্রশ্ন করলো। ফাইজা আরজা’কে জড়িয়ে ধরে বিলাপের স্বরে পূর্নরায় বলতে লাগলো…..
–আমার সব শেষ হয়ে গেছে রে আরজু। আমি এখন এই মুখ কি করে দেখাব। আমার স্বামী কিনা……
এইটুকু বলেই কান্নার বেগ আরো বাড়িয়ে দিলো। ফারদিন অসহায় হয়ে দাড়িয়ে ফাইজা’র দিকে চেয়ে আছে। ওর সাথে কি হচ্ছে ও এখনো বুঝতে পারছেনা। মাথার দশ হাত উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। ফারদিন সব কিছু মাথায় রেখেও অবাক স্বরে বলে উঠলো…..
–ফাইজা যদি এখানে থাকে তাহলে কম্বলের নিচে কে?
এইটুকু প্রশ্ন করে কম্বল’টা টান দিয়ে সরাতে’ই কম্বলের নিচের ব্যাক্তি’টাকে দেখে ফারদিন জোরে চিৎকার করে বলে উঠলো……
–লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতুম মিনায-যোয়ালিমিন…..

এইটুকু বলে বুকে হাত দিয়ে ধড়াম করে খাটের উপর পড়ে গেলো। ফারদিন’কে এমন করে পড়তে দেখে উপস্থিত সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। সায়মা খানম ভয় পেয়ে গেলো। ফাইজা আর আরজা দুজনে’ই দৌড়ে গেলো ফারদিনের দিকে। ফাইজা ফারদিনের সামনে গিয়ে ফারদিনের গালে সপাটে একটা থা’প্প’ড় মা/রতে’ই ফারদিন লাফিয়ে উঠে ফাইজা’র হাত ধরে বলতে লাগলো…..
–বিশ্বাস করো জান৷ আমি ভেবেছিলাম ওইটা তুমি। আমি অন্য মেয়ের জন্য এখানে আসি’নি…..
ফাইজা নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ন্যাকা স্বরে বললো…….
—আপনাকে আর মিথ্যা বলতে হবেনা। আমি আপনার পাপি মুখ দেখতে চাইনা। চললাম আমি বাপের বাড়ি…..
বলে মুখে ওড়না গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে বাইরে চলে এলো। আরজা ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো……
–জিজু আপনার যে এই মুদ্রাদোষ ছিলো আগে জানতাম না। ছিঃ জিজু ছিঃ আপনি আমার প্রানের টুকরো বান্ধবী’কে ঠকালেন। এমন আশা করি’নি আপনার কাছে থেকে ছিঃ…..

বলে আরজা ও বেড়িয়ে গেলো। তনুজা ফারদিন’কে এসব বলে বেড়িয়ে গেলো। আর সায়মা খানম মিটমিটিয়ে হাসচ্ছে। তা দেখে ফারদিন এইবার কাঁদো কাঁদো স্বর করে বলে উঠলো…..
–এই বুড়ো কালে তোমার আমার চুমু খেতে ইচ্ছে করল দীদা। কি দরকার ছিলো আমার বউ এর ওড়না’টা হাতে প্যাচানোর। এখন আমার কি হবে গো দীদা। এখন আমার কি হবে….
এইবার ফারদিন ও হাত পা ছড়িয়ে বিলাপ করতে লাগলো। আর সায়মা খানম মিছে মিছে স্বান্তনা দিতে লাগলো। জেহের হাবুলের মতো চেয়েই আছে ফারদিনের দিকে। বেচারার মুখ দেখে জেহের পেট ফেটে হাসি হাসচ্ছে। কিন্তু হাসতে পারছেনা।

ফাইজা আর আরজা রুমের বাড়িয়ে সিড়ির সামনে দুজনে থেমে গেলো। ফাইজা মুখ ঘুরিয়ে আরজা’র দিকে মুখের ভঙ্গিমা চেঞ্জ করে লাজুক স্বরে বললো……
—আমিও তোমার থেকে কম অভিনয় জানিনা বান্ধবী। কেমন হলো আমার অভিনয় বলো তো…..
ফাইজার কথা শুনে ওরা আর নিজেদের কন্ট্রোল করতে পারলো না। দুজনে এক সাথে হা হা করে হেসে দিলো। পেট ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে ফাইজা’র তাও হাসি থামছে। ফারদিন’কে ঘোল খাওয়ালো প্লান করে। বেচারার মুখ’টা মনে পড়তে’ই ফাইজা হাসি থামাতে পারছেনা। দুজনে একসাথে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর ওইদিকে ফারদিন কেঁদে কেটে একাকার অবস্থা…….
প্রায় বিশ মিনিট ধরে কান ধরে উঠবস করছে ফারদিন। ওর সামনে’ই বুকে হাত গুঁজে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে ফাইজা।

টিচা’র হয়ে স্টুডেন্টের সামনে কান ধরে উঠবস করার মতো বিরল দৃশ্য এই প্রথম ঘটলো মনে হচ্ছে ফাইজা’র কাছে। ফারদিনের অবস্থা এখন “ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি”। আরজা, তনুজা, আর সায়মা খানম পাশেই সোফায় বসে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে৷ সেই তখন থেকে ফাইজা’ রাগ করে ছিলো। কিছুতে’ই বিয়ে করবে না আজ বলে’ই দিয়েছে। ঘড়ির কাটা চার’টা ছুঁইছুঁই। ফারদিন বেচারা ফাইজা’র হাতে পায়ে ধরার মতো অবস্থা হয়েছিলো। শেষ অব্দি ফাইজা শাস্তি হিসেবে একশো বার কান ধরে উঠবস করতে বলেছে। নিজের বিয়ে বাঁচানোর জন্য এখন ফারদিন’কে কান ধরে উঠবস করতে হচ্ছে। ফারদিনের চেহারা’টা এখন এত’টা অসহায় লাগছে যা দেখে’ই ফাইজা কিছু’তে হাসি থামিয়ে রাখতে পারছেনা। তাও, অনেক কষ্ট হাসি দমিয়ে রেখে মুখে গম্ভীর্য ধরে রেখেছে। আরজা’র হাসি দেখে ফারদিন ওর দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁতে দাত চে’পে বলে উঠলো…..

–আজ আমার মতো অসহায় একটা ছেলে পেয়ে তোমরা দুই হিটলার অত্যাচার করছো। কিন্তু, কলেজে। ভুলে যেও না আমি তোমাদের টির্চার। সেখানে আমি যেইটা বলব সেইটাই করতে হবে। মাইন্ড ইট শা’লিকা……
বলে চোখ টিপ মা’রলো আরজা’কে। ফারদিনের কথা শুনে আরজা’র হাসি মুখ’টা চুপসে গেলো। সত্যি, তো কলেজে গিয়ে না জানি এইসবের শোধ কিভাবে তুলবে ফারদিন? এইসব ভেবে’ই আরজা’র মুখ’টা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো। ফাইজা’ আরজার অবস্থা দেখে ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাঁকিয়ে বললো…..
–লিস্টেন, মিস্টার ফারদিন আবসার বাড়িতে আপনি সম্পর্কে আমার হবু বর আর আমার বেস্টুর একমাত্র জিজু। তাই বাড়িতে আমরা যা খুশি করতে পারব। বাড়ির সম্পর্ক আর কলেজের সম্পর্ক গুলিয়ে জগা-খিচুড়ি বানাবেন না……
বলে মুখ বাঁকালো। ফাইজা’র কথা শুনে আরজা এইবার একটু মনে জোর পেলো। জেহের অনেক ক্ষন আগেই এদের মাঝ থেকে উঠে চলে গিয়েছিলো। মনের মধ্যে শান্তি নেই ওর। তাই ঘুমাতে চলে গেছে। ফারদিন কান ছেড়ে দিতে’ই আরজা জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

–এই চিটিং চিটিং। মাত্র ৩০ বার হয়েছে। আরো ৭০ বার বাকি হ্যা মেরি জিজু……
আরজা ও এইবার এইটুকু বলে ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে চোখ টিপ মা’রলো। ফারদিন কোমরে হাত দিয়ে ন্যাকা স্বরে বলে উঠলো…..
–বিয়ের আগে’ই যদি বুড়ো বানিয়ে দিতে চাও তাহলে আমি আরো ৭০ বার কান ধরে উঠবস করতে রাজি।
আরজা ফারদিনের কথা শুনে কিছু একটা ভাবলো তারপর ভাবুক স্বরেই বললো……
–থাক থাক আপনার শাস্তি মাফ। আমার এই স্মার্ট জিজু’টাকে আমি বুড়ো বানাতে চাইনা….
বলে লাজুক হাসলো। ফারদিন যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ফাইজাও আরজা’র তালে তাল মিলিয়ে ফারদিন’কে মাফ করে দিলো। ফারদিন খুশিতে লাফিয়ে উঠে দৌড়ে গিয়ে আরজা’কে জড়িয়ে ধরে ওর গালে চু’মু খাওয়ার জন্য কাছে যেতে’ই আরজা গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো……

–ফাইজু রে বাঁচা…….
আরজা’র চিৎকারে ফারদিন থতমত খেয়ে থেমে গেলো। খুশির চোটে বউ’কে রেখে শা’লি’কে চুমু খেয়ে ফেলছিলো ভেবে জিভে কামড় দিয়ে কান ধরে নিঁচু স্বরে বললো……
–স্যারি স্যারি শা’লিকা। বউ’কে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে হাত ফস্কে শা’লিকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। ক্ষমা করে দাও প্লিজ প্লিজ……
সরে এলো আরজা’র কাছ থেকে। পেছনে ঘুরে দেখলো ফাইজা’র রাগী ফেস করে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে৷ তা দেখে ফারদিন ঢোঁক গিলে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠলো…..

–বিশ্বাস করো বউ হাত ফস্কে হতে গেছিলো সর্বনাশ’টা। আমার কোনো দোষ নেই….
ফারদিনের মুখের রিয়েকশন দেখে এইবার উপস্থিত সবাই উচ্চোস্বরে হেসে দিলো। পুরো ঘর জুড়ে হাসির রোল পড়ে গেলো। আর ফারদিন লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো। তনুজা আর সায়মা খানম সবাই’কে তাড়া দিতে লাগলো ঘুমানোর জন্য। আর ফারদিন চোখের ইশারায় ফাইজা’কে ঘুমাতে বারন করছে। তাই ফাইজা’ আমতা আমতা করতে’ই আরজা বুঝতে পারলো। দুষ্টুমি ভঙ্গি’তে ফারদিনের সামনে দাড়িয়ে বলে উঠলো…..
–জিজু তখন উড়ে আসা লা’থি’ খাওয়ার সাধ কেমন ছিলো……
এইটুকু বলে’ই ফারদিন’কে ভেংচি কেটে আরজা দিলো দৌড়। ব্যাপার’টা বুঝতে ফারদিনের কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো। যখ’নি বুঝতে পারলো তখনি জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

—“তবে’রে আজ দেখাচ্ছি মজা দাড়াও”
সেও আরজা পেছন পেছন ছুটলো। ফাইজা’ও ওদের পেছন ছুটলো। তনুজা আর সায়মা খামন দুজনে ওদের কান্ডে হাসতে লাগলো।

ছাদে এসে তিন’টায় মিলে এক সাথে হাসতে লাগলো। ফারদিন হাটু’তে ভর দিয়ে ঝুঁকে হাঁপাচ্ছে। ফাইজা’র যেনো কিছুতে’ই হাসি থামছেনা। পুরো বাড়ি রঙিন বাতি’তে ঝলমল করছে। আরজা হাসি থামিয়ে বলে উঠলো…..
–এইবার আপনারা দুজন প্রেম করুন আমি আসচ্ছি….
বলে নাচতে নাচতে চলে গেলো। আরজা চলে যেতে’ই ফারদিন দুষ্টু’মি ভঙ্গিতে ফাইজা’র দিকে তাঁকিয়ে ভ্রু নাঁচিয়ে বলে উঠলো….
–এইবার তুমি কোথায় যাবে জান….
ফারদিনের মুখের ভঙ্গি’মা দেখে’ই ফাইজা’র এতক্ষনের সব হাসি উড়ে গেলো৷ ঢোঁক গিলতে লাগলো একের পর এক। হৃদ যন্ত্রনা লাফাতে শুরু করলো। আমতা আমতা করে পেছনে যেতে গিয়ে দোলনার সাথে লেগে দোলনায় বসে পড়লো।।ফারদিন এগিয়ে এসে ফাইজা’র দুই পাশে হাত রেখে ফাইজা’র দিকে ঝুঁকলো। এতটাই কাছে ঝুঁকে আছে ফারদিন এক্ষুনি কথা বললে ঠোঁট ফাইজা’র ঠোঁট স্পর্শ করবে। ফাইজা ফারদিনের কলা’র চে’পে ধরে বলে উঠলো….
–কি ভেবেছেন শুধু আপনি’ই পারেন সব কিছু করতে। আর আমি শুধু ভয় পেয়ে যাব। কাবি নেহি…….
বলে এই প্রথম ফাইজা ফারদিনের ঠোঁট ঠোঁট রাখার প্রস্তুতি নিতে’ই ফারদিন সরে আসলো ফাইজা’র কাছ থেকে। এতে ফাইজা মুখ টিপে হাসলো। ফারদিন ফাইজা’র থেকে দূরে গিয়ে আমতা আমতা করে বললো….

–ইয়ে মানে আজকে’ই যদি সব রোমান্স করে ফেলি তাহলে কালকের জন্য কি রাখব জান……
ফারদিনের কথা শুনে ফাইজা নিঃশব্দে হাসলো। ফারদিন ও একটু হেসে মাথা চুলকে ফাইজা’র পাশে এসে বসে পড়লো। এক হাতে ফাইজা’কে টেনে বুকে জড়িয়ে নিলো। ফাইজা ও দুই হাতে আকড়ে ধরলো ফারদিন’কে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো…..
–আপনি আমার এক টুকরো সুখের রাজ্য। এই রাজ্য ছেড়ে আমি কখনো দূরে যেতে চাইনা…..
ফারদিন ফাইজা’র থুতনি তুলে ধরলো নিজের দিকে। ফাইজা’র গালে হালকা কামড় দিয়ে বললো…..
–এতক্ষন ইচ্ছে করে আমাকে হেনস্তা করার শাস্তি এটা…..
ফাইজা একটু দুষ্টু হেসে ফারদিনের কলা’র ধরে নিজের কাছে নিয়ে ফারদিনের গালে জোরে কামড় দিয়ে উঠলো। ব্যাথায় ফারদিন “মা’গো” বলে জোরে জোরে গাল ডলতে ডলতে বলে উঠলো…..

–হোয়াট ইজ দিস জান?
ফাইজা আঙ্গুল দিয়ে নিজের চুল প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে ডোন্ট কেয়ার ভাবে বললো…..
–অন্য মেয়ে’কে চু’মু খাওয়ার শাস্তি এটা…..
অন্য মেয়ে কাকে আবার চু’মু খেলাম। এই প্রশ্ন’টা করতে গিয়েও ফারদিন থেমে গেলো। কিছুক্ষন আগের ঘটনা মনে করে হেসে দিলো। ফাইজাও তালে তাল মিলিয়ে হেসে দিলো। তারপর দুজনে’ই দুজন’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ভোরের আলো ফুটতে আর বেশিক্ষন নেই। এই কয়েক মুহূর্ত দুজন নিরবে কাটাবে। এই সময়’টা হবে ওদের দুজনের। দোলনা বাতাসের তালে তালে দুলে যাচ্ছে। কয়েক মুহূত কেটে গেলো এভাবেই নিরব। উপভোগ করতে লাগলো সময়’টা। ফাইজা ফারদিনের বুকে চুপটি করে মাথা রেখে আছে। ফারদিন নিঁচু স্বরে বলতে লাগলো……

–তোমাকে পেয়ে আমি নতুন করে বাঁচতে শিখেছি। তুমি আমার হাসির উৎস। আমি জানি তোমার মনের কোথাও না কোথাও একটা দুঃখ রয়ে গেছে যে, তুমি কোনোদিন মা হতে পারবে না। কিন্তু, বিশ্বাস করো আমার এটা নিয়ে এক বিন্দু আফসোস নেই। কোনো মেয়ে মা হতে পারবেনা এটা জেনে বাইরের লোক যেই আচরণ’টা করে এটা আদৌ কোনো মনুষ্য জাতির কাজ হতে পারেনা। মেয়ে’রা হলো মায়ের জাত। ওদের সম্মানের জায়গা’টা সবার উপরে। ওরা কত সুন্দর দুই হাতে সংসার সামলে রাখে। তাও দিন শেষে সব দোষ মেয়েদের হয়। কত মেয়ে’কে এইজন্য শুশুড় বাড়ি ছাড়া হতে হয়। কিন্তু, কেউ একবার ও ভাবেনা যে, এই মেয়ে’টা নিজে কত’টা কষ্ট পাচ্ছে। সবার যার যার দিক চিন্তা করে স্বার্থপরের মতো। মা হতে হলে কি গর্ভধারণ করতে’ই হবে এমন নয়। মা হতে হলে মায়ের মতো স্নেহ,ভালোবাসা থাকা’টাই যথেষ্ট। আচ্ছা সংসার করতে হলে, কাউকে ভালোবাসতে হলে কি রুপ, সৌন্দর্য, আর মা হওয়ার ক্ষমতা থাকতে’ই হবে এমন কি কোথাও লেখা আছে। দুটো মনের মিল হয় কোনো মানুষের রুপ আর সৌন্দর্যের তো মিল হয়না। আমাদের সমাজ’টা এখনো উন্নত হতে পারলো না। এইসব কথা কেনো বললাম জানো? তুমি প্লিজ কষ্ট পেও না। আমি তোমাকে মাতৃত্বের সুখ হতে বঞ্চিত হতে দিব না। ফুটফুটে একটা সদ্য জন্মানো বাচ্চা তোমাকে গিফট করব দেখো…….

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৩৭

ফাইজা’র চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়ছে। নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে ভাগ্যবতী মেয়ে মনে হচ্ছে। কোনো ছেলে একটা মেয়ে’কে এমন করে বুঝতে পেরে। এটা ফারদিন’কে না দেখে বুঝতে পারতোনা ফাইজা। কোনো উওর না দিয়ে পূর্বের মতো চুপ’টি করে রইলো ফারদিনের বুকে। ফারদিন ও প্রেয়সীর মাথায় পরম আবেশে হাত বুলাতে লাগলো।

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৩৮