চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ১৩

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ১৩
লেখনীতে- নন্দিনী নীলা

এই বাসায় আসার পর দেখলাম সত্যি ছোট খাটো আয়োজন করা হয়েছে। ভাবির কাছে গিয়ে কথা বলতে লাগলাম। স্পর্শ আমাকে রেখে চলে গেছে নিজের রুমে। আমি ডয়িং রুমে বসে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছি। শাশুড়ি মা পায়েশ এনে দিল‌। আমি বরাবরই মিষ্টি জাতীয় খাবার পছন্দ করি না। খাই না ধরতে গেলে কিন্তু শাশুড়ি মাকে তো তা বলতে পারবো না। তাই চেকে দেখার মতো একটুখানি মুখে দিলাম। কিন্তু এই এক পিরিজ পায়েস শেষ করা আমার পক্ষে অসম্ভব। আমার এমন খাওয়ার ভঙ্গি দেখে ভাবি বলল,
‘ মিষ্টি জিনিস পছন্দ না তাই না।’
আমি বললাম, ‘ না মানে আসলে কম খাই‌!’

‘ যতবার এসেছ কখনো তোমাকে মিষ্টি জিনিস খেতে দেখি নি। আমি তখন‌ই বুঝে গেছি এসব পছন্দ না তোমার কিন্তু মা বুঝল না।’
‘ ভাবি তুমি যেহেতু জানো আমি খেতে পারবো না
তাহলে আমাকে হেল্প করো। সত্যি আমি খেতে পারছি না।’ অসহায় মুখ করে বললাম।
ভাবি হেসে উঠলো, ‘ দাঁড়াও দেখছি।’
ভাবি কিচেনের দিকে চলে গেল। আমি একাই বসে রইলাম সোফায়। আসার পর থেকে সীফা কে দেখিনি‌। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে সীফাকে খুঁজছি।ভাবি গেল যে আর এলো না আমি পায়েসের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছি। খেতে খারাপ হয়নি। কিন্তু আমি তো খেতে পারছি না।
এদিকে স্পর্শ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আমি পায়েসের বাটির দিকে মুখ কালো করে তাকিয়ে আছি। স্পর্শ এসে আমার ডান পাশে বসে পরলো শব্দহীন। আমি তার উপস্থিতি টের পেলাম না। স্পর্শ আমার হাত থেকে টেনে বাটি কেড়ে নিল। কারো হাতের টান পরায় আমি সেদিক পানে চেয়ে দেখি স্পর্শ। আমার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ কি হয়েছে না খেয়ে তাকিয়ে থেকে কি গুনছো?’
আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ ক‌ই খাচ্ছি তো। কিন্তু আপনি বাটি কেড়ে নিলেন কেন?’
স্পর্শকে আমি সত্যি বললাম না। যদি কিছু মনে করে তাই। স্পর্শ আমার কথা শুনে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,
‘ আমি খাব তাই। জানো পায়েস আমার খুব ফেভারিট তাই তো দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না।’
‘ কিন্তু তাই বলে এটা কেন খাবেন? এটা তো আমি খেয়েছি এঁটো হয়ে গেছে!’
স্পর্শ আমার কথার গুরুত্ব দিল না। পায়েস মুখে দিয়ে খেতে লাগলো। আর চোখ বন্ধ করে বলল,
‘ আম্মুর হাতের পায়েস ওসাম তাই না ব‌উ!’
আমি হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে আছি স্পর্শের দিকে। স্পর্শের মুখে হুট করে ব‌উ ডাক শুনে আমার মেরুদন্ড বেয়ে শিতল হাওয়া ব‌ইতে লাগলো।

স্পর্শ আমার দিকে চেয়ে আছে উওর এর আশায় আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। স্পর্শ আমার স্বীকারোক্তি থেকে খুশি মনে বাটি হাতেই চলে গেল। আমি উনার যাওয়ার পানে চেয়ে আছি অপলক দৃষ্টিতে। উনি আমার খাওয়া খাবার খাচ্ছেন। হায় কি ভালোবাসা। উনার পায়েস এতো পছন্দ।
স্পর্শ যাওয়ার পর মুহূর্তেই ভাবির আগমন ঘটলো।তিনি এসেই আমাকে বলল,
‘ মারিয়া দাও তো বাটিটা রেখে আসি। মা কে ম্যানেজ করে আসলাম। তোমার মাথা ব্যাথা তাই এখন কিছু খেতে পারছো না বলে। মা মেনেছে।’
আমি আতকে উঠলাম ভাবির কথা শুনে। ভাবিও অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,
‘ পায়েসের বাটি ক‌ই?’
আমি ঢোক গিললাম। এখন ভাবিকে কি বলবো। পায়েস সহ বাটি তো স্পর্শ নিয়ে গেছে। এটা ভাবিকে কি করে বলবো। ভাবি তো দেখেছে আমি খেয়েছি ওই বাটিতে থেকে পায়েস ওইটা স্পর্শ খেয়েছে জানলে তো খুব লজ্জা পাবো। এখন কি করবো আমি।
চিন্তিত মুখে ভাবির দিকে তাকিয়ে আছি। ভাবি একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে। আমি নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি।
স্পর্শ বাটি হাতে এগিয়ে এসে ভাবিকে দিয়ে বলল,

‘ এই নাও বাটি‌। এটা তো আমার কাছে ছিল।’
ভাবি একবার আমার দিকে তো একবার স্পর্শের দিকে তাকাতে লাগলো। তারপর স্পর্শের দিকে প্রশ্ন ছুড়লো,
‘ পায়েস শেষ করলো কে তুমি?’
‘ হুম। খুব টেস্টি ছিল পায়েস টা ভাবি।’
ভাবি বললো, ‘ বলো কি তুমি পায়েস খেয়েছ? তোমার তো পায়েস পছন্দ না। মা তো জোর করেও কখনো তোমাকে পায়েস খাওয়াতে পারে না। আর আজ চেটে পুটে খেলে।’
ভাবির কথা গুলো আমি চোখ কপালে তুলে শুনছি।এসব কি বলছে ভাবি। স্পর্শ এর পায়েস পছন্দ না। আর কিন্তু এই মাত্র না স্পর্শ পায়েসের বাটি নেওয়ার সময় কতো কি বললো। তার পায়েস ফেভারিট। তারমানে আমাকে মিথ্যা বলেছে কিন্তু কেন?
স্পর্শ আবার কাছে এসে ফিসফিস করে কি যেন বলছে, ‘ ভাবি আগে কি ব‌উয়ের স্পর্শ করা পায়েস পেয়েছি নাকি যে খাব। ‘
‘ ওরে দুষ্ট আমার ভাই দেখি খুব ব‌উ পাগল।’
আমি শুনতে পাচ্ছি না কিন্তু কান খাড়া করে শুনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। দুজনে ফিসফিস করেই যাচ্ছে।
ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ দুজনের মিল আছে দেখছি।’
আমি বোকা চোখে তাকিয়েই ছিলাম। ভাবি বাটি হাতে চলে গেল।
স্পর্শ আমাকে বলল,

‘ বাসায় যাবে কখন?’
‘ মা বললেই চলে যাব। সীফা কোথায় ও কি এখনো বাসায় আসেনি!’
‘ না ও নাকি ফ্রেন্ড এর বাসায় গেছে।’
‘ আচ্ছা।’ বলেই চুপ করে র‌ইলাম। স্পর্শ কে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে মিথ্যা বলল কেন? কিন্তু করতে মন চাইছে না।
স্পর্শ আবার জিজ্ঞেস করল,
‘ আমাকে কিছু বলতে চাও?’
আমি বললাম, ‘ আপনি জানেন আমি কি জিজ্ঞেস করতে চাই। তাই নিজের ইচ্ছা হলে বলেন না হলে দরকার নাই।’
‘ ওকে আমার এখন ইচ্ছে করছে না।’
‘ ওকে।
আমি চুপ থেকে বললাম,
‘ আমি কি আপনার রুমে একবার যেতে পারি ?’
‘ হ্যা চলো।’
স্পর্শ রাজি হয়ে গেল।

আমি বিস্মিত হলাম স্পর্শের রাজি হ‌ওয়া দেখে। আমার আগের কথা মনে পরে গেল। স্পর্শের ছবি দেখার পর আমার ওনাকে পছন্দ হয়। তারপর প্রথম যেদিন এই বাসায় আসি আমি সম্পূর্ণ বাসা ঘুরে দেখি‌। সব রুমে গিয়েছিলাম শুধু স্পর্শের রুমটা লক করা ছিল। আর স্পর্শ রুমের ভেতরে ছিল। সবাই কতো ডাকলো তাকে আমি রুম দেখতে চাই তাই খুলার জন্য কিন্তু স্পর্শ দরজা খুললো না। তারপর যতবার এসেছি স্পর্শ হয় দরজা আটকে রুমে বসে থেকেছে‌। না হলে রুম লক করে বাসার বাইরে চলে যেতো। এইভাবে আমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারি উনি আমাকে উনার রুমে দেখতে দিতে চায় না। আমিও আর দেখতে চাইতাম না‌। আজ অনেক দিন পর সেসব কথা মনে পরলো তাই ভেবেছি আজ সরাসরি আমি স্পর্শ কেই বলবো তার রুমে যেতে চাই আমি। আগে কখনো এই কথাটা তাকে বলা হয় নি। আজ দেখবো তিনি আমাকে যেতে দেয় কিনা।
স্পর্শ আমাকে আকাশ কুসুম ভাবতে দেখে বলল,

‘ কি ভাবছো চলো।’
আমি হতভম্ব চোখে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ আপনি রাজি হচ্ছেন আমার তো বিলিভ হচ্ছে না। এতো সহজে রাজি কেন হলেন? আগে তো কখনো যেতে দেননি।‌’
‘ আগের কথা বাদ। আমি সব সময়ই যেতে দিতে চেয়েছি কিন্তু তুমি যেতে চাও নি।’
‘ আমি যেতে চাইনি?’ অবাক হয়ে বললাম। আমি যাওয়ার জন্য পাগল ছিলাম আর উনি কি বলছে আমি যেতে চাইনি!!
স্পর্শ আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘ আমার কাছে তো কখনো যাওয়ার কথা বলো নি। বলেছো কি?’
আমি মুখের আগায় আনা কথাটাও গিলে ফেললাম বলতে গিয়ে ও থেমে গেলাম। সত্যি তো বলছে আমি তো কখনো স্পর্শ কে বলি নি। আর বলতাম‌ই কি করে তিনি কি কখনো আমার সামনে আসতো? আসতো না।

স্পর্শের রুমে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম কিন্তু আর যাওয়া হলো না। রুমে যাওয়ার আগে মুহূর্তে শাশুড়ি মা এসে টেনে ডায়নিং টেবিলে বসিয়ে দিল‌। একে একে পরিবারের সবাই এসে খেতে বসলো আমার আর স্পর্শের রুমে যাওয়া হলো না। আমি অসহায় মুখ করে বসে খাবারের দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। সবার শেষে স্পর্শ ও এলো হাসিমুখে আর আমার পাশেই চেয়ার টেনে বসলো। আমি এক নজর তার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। স্পর্শ সেই ক্ষণে আমার দিকে মৃদু ঝুঁকে নিচু স্বরে বলল,
‘ মন খারাপ করো না মায়ারানী। তোমাকে আজ আমার রুম দেখিয়েই বিদায় করবো ডোন্ট ওয়ারি।’
আমি বিহ্বল দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম স্পর্শের পানে। স্পর্শের শ্যামবর্ণ মুখে তখন নজর কাড়া হাসি। আমিও সেই সুন্দর হাসি দেখে নিজের ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটিয়ে তুললাম।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমার যাওয়ার পালা এলো। সন্ধ্যার আগে যেতে হবে। শাশুড়ি মা স্পর্শ কে ডেকে বলল আমাকে পৌঁছে দিতে। আমি মুখটা কালো করে বসে আছি স্পর্শ যে তখন বলল রুম না দেখিয়ে বিদায় করবে না এখন এসব কি?
স্পর্শ রেডি হয়ে এসেছে তিনি কি ভুলে গেছে। এখন তো আমি উনার ব‌উ। তার রুম দেখার কি একটু অধিকার ও নাই আমার। অভিমান শুরু হতে লাগলো। আমার কিশোরী মনে ক্ষণে ক্ষণে অভিমান হতে লাগে।
স্পর্শ হঠাৎ নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আম্মু আমি একটু মারিয়াকে আমার রুমে নিয়ে যাই!’
আমি ফ্যালফ্যাল করে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আছি। নিজের মাকে এই কথা কি বলছে উনার দেখি লজ্জা ও নাই। মা কি মনে করবে। আমি লজ্জা পেলাম এবার। এই মাত্র স্পর্শের উপর আমার অভিমান হচ্ছিল তিনি আমাকে রুম দেখানোর কথা বলে ভুলে গেছেন বোধহয়। কিন্তু এখন আবার স্পর্শের এমন ব্যবহার দেখে আমি লজ্জা পাচ্ছি নিজের এমন কর্মকাণ্ডে নিজেই লজ্জিত হচ্ছে মনে মনে। নিজের মন তো নিজেই বুঝে উঠতে পারছে না স্পর্শ কিভাবে এই মন বুঝবে আমি আসলে একটা পাগলি।আমি নিজে চিন্তা ভাবনায় মশগুল ছিলাম তখন মা ছেলের মধ্যে কি কথা হলো আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। শুধু সম্মতি ফিরে ফেলাম স্পর্শের হাতের স্পর্শে। তিনি তার বাম হাত দিয়ে আমার ডান হাত আলতো স্পর্শে ধরেছে তারপর নিয়ে যাচ্ছে দুতালায়।

সবার সামনে এভাবে সরাসরি স্পর্শের হাত ধরে হাঁটতে আমার অস্বস্তি হচ্ছিল। আমি মাথা নিচু করে গুটিসুটি পায়ে স্পর্শের পেছনে পেছনে এলাম।
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই আমার কানে মৃদু স্বরে একটা কথাই ভেসে এলো।
স্পর্শ বলছে, ‘ ওয়েলকাম টু মাই রুম মায়ারানী।’
এই প্রথম স্পর্শ আমার কানের কাছে একদম মুখ ঠেকিয়ে কথাটা বলেছে। স্পর্শের প্রতিটি গরম নিঃশ্বাস আমার ঘাড়ে এসে পড়েছে। আমি চোখ বন্ধ করে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়েছি। কেমন যেন অদ্ভুত ফিলিংস হলো আমার শরীর কাটা দিয়ে উঠল যেন। বুকের ধুকপুকানি জোরে জোরে বিট হচ্ছে।
রুমটা আহামরি খুব সুন্দর না আসলে আমার কেন জানি পছন্দ হলো না। খুব সাধারন একটা রুম। ইয়া বড় রুমে একটা ইয়া বড় খাট। একটা ড্রেসিং টেবিল। ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে আমার চোখ কপালে উঠে গেল। ড্রেসিং টেবিল ভর্তি মেয়েদের জিনিসে ভরপুর। একপাশে বইয়ের সমাহার। অসংখ্য বই আছে। আমি ঘুরতে ঘুরতে খাটের সোজা উপরের দেয়ালে তাকালাম দেয়ালে পেন্ডিং করা কিছু ফটো আছে সেখানে স্পর্শের একটা স্টাইল করা ফটো মনে হল এটা ভার্সিটিতে তুলা হবে। ঘুরতে ঘুরতে একটা আর্ট করা ছবি পেলাম ছবিটার মধ্যে চোখ আর্ট করা শুধু। চোখটা দেখে আমার চেনা চেনা লাগলো কিন্তু আমি চিনতে পারলাম না। চোখটা এতো সুন্দর করে একেছে যে চোখ দেখে আমি ও ক্রাশ খাইলাম। চোখ টা খুব নজর কাড়া না হলেও আট করাটা অসম্ভব সুন্দর হয়েছে।যে কেউই এক দেখায় চোখের ওপর বড়োসড়ো ক্রাশ খাবে‌। শুধু চোখ আর্ট করে বড় করে বাঁধিয়ে রেখেছে। খুব যত্ন সহকারে তার নিচে আবার লেখা ‘মাই লাভ’। মাই লাভ দেখে আমি চোখ বড় বড় করে স্পর্শ দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘ এটা কার চোখ আর কে আর্ট করেছে। আপনি নিজের রুমে এটা এতো যত্ন সহকারে রেখেছেন কেন? নিচে আবার লেখা ‘মাই লাভ’। এসবের মানে কি এই চোখের মেয়েটা কে কি আপনি ভালোবাসেন?’
স্পর্শ প্রিন্টিং করা ছবিটার দিকে তাকিয়ে অনুভূতিমাখা গলায় বলল,
‘ হ্যাঁ। খুব বেশি ভালোবাসি এই মেয়েটাকে। যার চোখের মায়ায় পড়ে আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।‌ প্রতিটা মুহূর্তে প্রতিটা ক্ষণে শুধু মন চায় তাকে সামনে বসিয়ে চোখের দিকে অনন্তকাল চেয়ে থেকে চোখের তৃষ্ণা মিটাই। কিন্তু সেই খুব অভিমানী।’
আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে স্পর্শের মুখে অন্য একজনের জন্য অসীম ভালোবাসা দেখে ডুকরে উঠলাম। এই জন্য উনি আমাকে এরুমে আসতে দিত না খালি বাহানা দেখাতো। এই মেয়ের জন্য। কে এই মেয়ে! কোথায় তার বাড়ি! আমাকে না বলে কতো ভালোবাসে তাহলে সেসব কি? আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমি বিছানায় থপ করে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম মুখ ডেকে।
আগে তো উনি আমার শুধু হবু বর ছিল। এই সব আগে জানতে পারলে আমি নিজের অনুভূতি কন্ট্রোল করতে পারতাম। কিন্তু এখন তো উনি আমার স্বামী। এখন আমি কি করবো। কি সুন্দর অবলিলায় আমার সামনে আরেকজনকে নিয়ে ভালোবাসার বাক্য বর্ণনা করলো। কেঁদে কেটে চোখ মুখ লাল করে দিলাম।

স্পর্শ আমার দুহাত টেনে মুখ থেকে সরিয়ে ব্যস্ত কন্ঠে বলল, ‘ কি হলো তোমার? কাঁদছো কেন?’
আমি কিছু বললাম না। স্পর্শ আবার বলল,
‘ আরে চুপ করে আছো কেন? কথা বলো। হুট করে কাঁদা শুরু করলে কেন?’
আমি কান্না থামিয়ে স্পর্শ কে বললাম, ‘ অসভ্য। আপনি চরম অসভ্য লোক। খুব খারাপ। ব‌উ থাকতে অন্য মেয়েকে ভালোবাসি বললেন। এই যে এতো বছর ধরে আমার বাবার পেছনে পরে ছিলেন আমাকে ভালোবাসি বলে এখন বিয়েও করে নিয়েছেন। এখন বলছেন আপনি আরেকটা মেয়েকে ভালোবাসেন। এইভাবে আমাকে ধোঁকা দিলেন।’
স্পর্শ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ এই চোখে জল খুব মানায়। কাঁদতে মানা করবো না। কাঁদো ইচ্ছে মতো। আমি তোমার ভেজা চোখের প্রেমে পরতে চাই মায়ারানী।’
বলেই স্পর্শ আমাকে বলল,’ পাগলী! প্রিন্ডিং এই অপরুপ সুন্দর অক্ষি দুটি চিনতে পারলে না। তোমার কি এই চোখ পরিচিত লাগে নি?’

‘ লেগেছে। আপনি আমার কোন পরিচিত কাউকে ভালোবাসেন!’
‘ গাধা। আসো আমার সাথে!’
স্পর্শ আমার হাত ধরে টেনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিয়ে দাড় করিয়ে বলল, ‘ দেখতো চোখটা কোথাও খোঁজে পাও নাকি?’
আমি বোকা চোখে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছি। স্পর্শ আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বলল,
‘ পাগলী। নিজেকে যে কেউ চিনতে পারে না এটা তোমাকে না দেখলে জানতাম না। তুমি জানো আমি এই তোমার চোখের প্রেমে পরেছিলাম প্রথম।’
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, ‘ এটা আমার চোখ।’
আমি আয়নার সামনে থেকে সরে আবার প্রিন্ডিং টার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আমার চোখ এতো সুন্দর!’

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ১২

আমি মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছি। নিজের চোখ নিজেই চিনতে পারিনি। ছিহ কি লজ্জা!
‘ চলো এবার‌। সবাই নাহলে ভাববে আমরা কি না কি করছি। কিন্তু তারা তো আর জানবে না আমার যে ব‌উ তিনি মিনিট এ মিনিট এ অভিমান করে কিছু করার সময়‌ই নাই।’
আমি লজ্জায় চুপ করে বেরিয়ে এলাম। মনে মনে দারুন হ্যাপি আমি।

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ১৪