চৈত্রিকা পর্ব ৩০

চৈত্রিকা পর্ব ৩০
বোরহানা আক্তার রেশমী

আকাশের অবস্থা খুব একটা ভালো না। কালো মেঘে ছেয়ে আছে পরিবেশ। সূর্য মামার দেখা নেই তবে মেঘেরা জানান দিচ্ছে খানিক বাদেই হয়তো পৃথিবী কাঁপিয়ে তারা বর্ষণ করবে। কালো মেঘ আর বাতাসে পরিবেশ থমথমে হয়ে আছে। বাহিরের এই পরিবেশের মতোই জমিদার বাড়ির পরিবেশও থমথমে। পিয়াস আর সাথী পাশাপাশি বসে আছে হলরুমে। তাদের ভিড় করে বাদ বাকি সবাই বসে আছে নয়তো দাড়িয়ে আছে।

চৈত্রিকা আর নীরা একসাথে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। চৈত্রিকার অপলক দৃষ্টি সাথীর দিকে। ভেতরটা তার অস্থির হয়ে আছে এই সাথীর সাথে কথা বলার জন্য। সাথীর এমন পদক্ষেপের কারণ জানার জন্য তার মন, মস্তিষ্ক ছুটে বেড়াচ্ছে। নীরা পাশে দাঁড়িয়েই তাকিয়ে আছে পিয়াসের মুখপানে। অদ্ভুত ভাবে এই মানুষটা নতুন বউ আনাতে তার যতটা না কষ্ট হচ্ছে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি কষ্ট এটা ভেবে হচ্ছে যে এই নির্দোষ সাথীকে পিয়াস বিয়ে করেছে। চয়ন, সাদিক গম্ভীর হয়ে বসে আছে। পল্লবী, শায়লা, অর্পিতা নির্বাক। অর্থি দুর থেকে বসেই তাকিয়ে আছে চৈত্রিকার দিকে। সকলেই যে কিছু না কিছু ভাবছে তা বুঝতে বাকি নেই৷ সবার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে চয়ন রেনওয়াজ গম্ভীর স্বরে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘পিয়াস জমিদার বংশের ছেলে। আরেকটা বিয়ে করেছে এতে তো কিছু বলার নেই।’
নীরা তাচ্ছিল্য করে হাসে। তবে মুখে কিছু বলে না। পাশ থেকে সাদিক রেনওয়াজ বলে, ‘কিন্তু ভাইজান আপনার বড় ছেলের বউকে কিছু বলবেন না! সে যে আমাদের জমিদার বাড়ির মান সম্মান ডুবিয়ে আসলো এতে কি সে কোনো শা’স্তি পাবে না?’
চৈত্রিকা একটুও চমকায় না। তবে শায়লা, নীরা, অর্পিতা, অর্থি আর সাথী চমকে তাকায়। চৈত্রিকার দৃষ্টি তখনো ঠায় সাথীর দিকেই রয়েছে। সাথীর চমকে যাওয়া মুখ দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয় চৈত্রিকা। নীরা ভয়ে হাত জাপ্টে ধরে চৈত্রিকার। চৈত্রিকা ঘাড় ফিরিয়ে হাতের দিকে তাকাতেই চয়ন বলে,

‘এই যে বড় বউ! সারা রাত প’র’পু’রু’ষের সাথে থেকে সকাল বেলা কোন মুখ নিয়ে বাড়িতে এসেছো হ্যাঁ? লাজ লজ্জা কি কিছুই নেই? একজনের বউ হয়ে অন্যজনের সাথে এসব কি!’
চৈত্রিকা ছোট্ট করে বলে, ‘আমি কোনো রকম অ’ন্যায় করিনি যে লজ্জা পাবো! আর যার বউ আমি তার সাথে ছিলাম। স্বামীর বাড়িতে মানুষ কোন মুখ নিয়ে আসে আব্বাজান?’

চয়ন ক্ষে’পে ওঠে। চৈত্রিকার এই তেজ তার পছন্দ নয়। মেয়ে মানুষ হবে নরম কাঁদার মতো কিন্তু এই মেয়ে শক্ত পাথরের মতো। এতোকিছুর পরও গলা উচিয়ে কথা বলছে! চয়ন রাগী স্বরে বলে,
‘একে তো অন্যায় করেছো তারওপর আবার মুখে মুখে কথা বলছো!’
চৈত্রিকা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। চয়নের চোখে চোখ রেখে কন্ঠস্বর কঠিন করে বলে, ‘আমি মোটেও কোনো অন্যায় করিনি। নিবিড় ভাইয়ের সাথে আমি হসপিটালে আপনার ছেলের কাছেই গেছিলাম এবং সারা রাত সেখানেই ছিলাম। আপনার ছেলেকে খবর পাঠান। আসতে বলুন! সে নিজে মুখেই বলবে কোনটা সত্য!’

পাশ থেকে সাদিক ধমক লাগিয়ে দেয়। কড়া কন্ঠে বলে, ‘বাড়ির বউ হয়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলো কোন সাহসে? ভাইজান তোমার গুরুজন।’
চৈত্রিকা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সাদিক নিজের মতো যা তা বলতে থাকে। চৈত্রিকা কোনো উত্তর না দিয়ে সাথীর মুখের দিকে তাকায়। সাথী কাচুমাচু করছে বসে বসে। সাথীকে নতুন বউয়ের বেশে দেখে চৈত্রিকার মনের যে ঝড়, যে ভয়, যে আতঙ্ক কাজ করছিলো তা এখন কমে গেছে।

সে জানে সাথীর ভবিষ্যৎ কি হবে! কিন্তু চৈত্রিকা দমে গেলে এ বাড়িতে তাদের দুজনেরই টিকে যাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে। পিয়াস তাকে দমিয়ে দেওয়ার জন্যই হয়তো সাথীকে বউ করে এনেছে! সে দমে গেলে যে এবার পিয়াস জিতে যাবে! যে হাতে নীরার হাত ধরা ছিলো সে হাত আরো শক্ত করে ধরে অন্য হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। পিয়াস সাথীকে বিয়ে করেছে এ বিষয়টা মস্তিষ্ক পর্যন্ত যেতেই মাথার শিরা উপশিরা টগবগ করে ওঠে। চোখ তুলে পুরো জমিদার বাড়ি পর্যবেক্ষণ করে। সাদিকের কথার বিপরীতে এতক্ষণ সবাই চুপ থাকলেও পল্লবী মুখ খোলে৷ গম্ভীর স্বরে বলে,

‘সাদিক চুপ থাকো! যত যায় হোক তুমি কিন্তু আমার বাড়ির বউকে নিয়েই যা তা বলতেছো!’
সাদিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘সত্যিটাই তো বলতেছি ভাবীজান। আপনার বাড়ির বউয়ের চরিত্র দেখেছেন! ছিঃ ছিঃ। পুরো গ্রাম ছড়িয়ে গেছে ঘটনাটা। কত লোক তো স্বচক্ষে দেখেছে ওদের দুজনকে ঢ’লাঢ’লি করতে!’
‘ছোট কাকা! কত লোকের কথাগুলো কি নিজেদের নামে বসাচ্ছেন? তাছাড়া তো আপনাদের মতো নিচু মানসিকতার মানুষ ছাড়া এসব ভাবার মতো লোকজন থাকার কথা না।’

চৈত্রিকার শান্ত গলার অ’পমানে সাদিক তেলে বেগুনে জ্ব’লে ওঠে। কয়েকটা অ’কথ্য ভাষা ছুড়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘নিজে তো ন*ষ্টামি করে বেড়াও আবার আমাদের মানসিকতার দিকে আঙুল তোলো!’
চৈত্রিকার বা হাতের কাছেই ফুলদানি ছিলো৷ রাগে তা ছুড়ে মা’রে সাদিকের দিকে৷ ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতভম্ব। ফুলদানিটা গিয়ে সরাসরি সাদিকের হাতের লাগে। চোখে মুখে ক্ষো’ভ ফুটিয়ে চৈত্রিকা চোয়াল শক্ত করে বলে,
‘নিজের ভাষা সংযত রাখুন! আমাকে যা তা বললে আমি সহ্য করবো না। আমি কোনো অ’ন্যায় করিনি মানে করিনি৷ আমার যদি নিবিড় ভাইজানের সাথে চলে যাওয়ার হতো তবে আমি এখানে আবার ফিরে আসতাম না। সবাইকে নিজেদের মতো চ’রিত্র’হীন মনে করেন কেনো?’

এতক্ষণ সবাই নিজেদের মতো বসে থাকলেও এই ঘটনায় সবাই দাড়িয়ে যায়। সাদিককে নাসিমা ধরে। পল্লবী দ্রুত এগিয়ে যায় চৈত্রিকার কাছে৷ পিয়াস এতক্ষণ বসে বসে মজা নিলেও এ পর্যায়ে উঠে দাঁড়িয়ে রেগে বলে,
‘বড় ভাবীজান! কাকা আপনার গুরুজন হয়। আপনি কোন সাহসে উনাকে আ’ঘাত করলেন?’
‘আওয়াজ নিচে! সম্পর্কে আমিও আপনার গুরুজনই হই দেবর ভাই। আমি যদি কাকাকে আ’ঘাত করার সাহস না রাখি তাহলে আপনিও আমার ওপর চেঁচানোর অধিকার রাখেন না।’

পাশ থেকে পল্লবী ধমক দিয়ে বলে, ‘চুপ করো বড় বউ।’
অর্পিতা, অর্থি, শায়লা, সাথী সবাই এসে চৈত্রিকার পাশে দাঁড়ায়। অর্পিতা চৈত্রিকার হাত ধরে টেনে চাপা স্বরে বলে, ‘বড় ভাবীজান কি করছেন এগুলো!’

চৈত্রিকা জবাব দেয় না। সাদিক রেনওয়াজ রাগী স্বরে বলে, ‘যেটা করলে সেইটা ভালো করোনি বড় বউ। আর তুমি যখন এতোই সতী সাবিত্রি তা ডাকো নিবিড়কে। তুমি যে তার সাথে সারারাাত ছিলে না এটা প্রমাণ করো!’
‘আমার নিজেকে প্রমাণ কেনো করতে হবে? কে আপনারা? আমি এবং আমার স্বামী দুজনেই জানি আমি ক’লঙ্ক’হীনা নারী। আমার গায়ে ক’লঙ্কের ছিটেও নেই৷ বরং ভয় পান! প্রহর রেনওয়াজ এসব কিছু জানলে এতো সহজে আপনাদের ছেড়ে কথা বলবে না।’

‘তুমি এতো বড় বড় কথা না বলে নিবিড়কে আসতে বলো! তুমি যখন কোনো দো’ষই করোনি তাহলে ওকে ডাকতে সমস্যা কোথায়?’
চৈত্রিকা জিদ করে না। একজন মেইডকে ডেকে পাঠিয়ে দেয় নিবিড়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে। তবে মনে মনে বেশ অবাকই হয়। এরা নিবিড়কে কেনো ডেকে পাঠালো তা বুঝে আসে না। নিবিড় আসলে তো সব সত্য ঠিকই সামনে এসে যাবে আর পরে নিজেরাই ফেসে যাবে! তাহলে? কি চলছে এদের মনে! এর মাঝেই পিয়াস আর সাথীর বিয়ের খবর পেয়ে ছুটে আসে সনিয়া বেগম আর আজম আলী। সনিয়া বেগম বিচলিত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে জমিদার বাড়ির হলরুমে আসে।

চোখের সামনে নিজের মেয়েকে বউ সাজে দেখে পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। তিক্ত অনুভূতিতে ভেতরটা তিতকুটে হয়ে আসে। সাথী সনিয়া বেগমকে দেখে ভয় পায়। সনিয়া বেগমকে দেখে বাড়ির সবাই আপাতত চুপ হয়ে যায়। পরিবেশ শান্ত হয়ে যায়। চৈত্রিকা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নিজের মামীর দিকে। এতো বড় ধাক্কাটা যে তার সহ্য হবে না তা সে খুব ভালো করেই জানে। সনিয়া বেগম ধীর পায়ে এগিয়ে আসে সাথীর সামনে। সাথী ভয়ে চৈত্রিকার পিছনে মুখ লুকিয়ে দাঁড়ায়। সনিয়া বেগমের চোখে তখনো অশ্রু। সে অশ্রুর দিকে দৃষ্টিপাত করেই চৈত্রিকা শক্ত হাতে সাথীর হাত টেনে সামনে আনে। সাথী কাচুমাচু করে মেঝের দিকে তাকিয়ে রয়। সনিয়া বেগম শক্ত কন্ঠে বলে,

‘তোর গায়ে বিয়ের শাড়ি কেন? যা রটেছে তা কি সত্যিই সাথী?’
সাথী ভয়ে রীতিমতো কাঁপতে শুরু করে। নিজের মা’কে সে ভালো করেই চেনে। সাথীর উত্তর না পেয়ে সনিয়া বেগম ফের শুধায়, ‘কি হলো বল! সত্যি এগুলো?’
সাথী এবারও চুপ থাকে। পল্লবী পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য বলে, ‘আপা বসেন! বসে কথা বলা যাবে।’
‘বসার জন্য আসিনি জমিদার গিন্নি। আমি আমার মেয়ের সাথে কথা বলতে এসেছি!’

পল্লবী দমে যায়। সাথীর চুপ থাকায় রেগে যায় সনিয়া বেগম। সাথীর হাতের কব্জি চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘কথা বলিস না কেন? বল এগুলো সত্যি? তুই আর পিয়াস রেনওয়াজ বিয়ে করেছিস?’
সাথী কোনো উপায় না পেয়ে ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ায়। সাথে সাথে ক’ষিয়ে থা’প্প’ড় বসায় সনিয়া বেগম। সাথী পড়ে যেতে নিলে চৈত্রিকাকে ধরে নিজের ভার সামলে নেয়। কিন্তু চৈত্রিকা ধরেও না সাথীকে। সনিয়া বেগমের থা’প্প’ড় দেওয়াতেও কোনোরুপ প্রতিক্রিয়া দেখায় না। শান্ত চোখে একবার সাথী আর একবার সনিয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ সনিয়া বেগমের এহেন কান্ডে ছুটে আসে পিয়াস। সাথীর পাশে দাঁড়িয়ে রাগী গলায় বলে,

‘আপনার এতো বড় সাহস হয় কি করে? আপনি আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছেন কোন সাহসে? ‘ও’ এখন জমিদার বাড়ির বউ।’
সনিয়া বেগম তেতে ওঠে। রাগে এক হাতে পিয়াসের কলার টেনে ধরে বলে, ‘ও এই বাড়ির বউ হওয়ার আগে আমার মেয়ে। আমার মেয়েকে আমি মা’রি, কা’টি সেইটা একমাত্র আমার বিষয়। আপনি নাক গলাবেন না একদম।’
পিয়াসের কলার টেনে ধরায় পিয়াস ক্ষে’পে যায়। চোয়াল শক্ত করে সনিয়া বেগমের হাত থেকে কলারের হাত সরিয়ে বলে, ‘এতো বড় কলিজা তোর! পিয়াস রেনওয়াজের গায়ে হাত দিলি!’

পিয়াস কোনো কিছু না ভেবেই রেগে নিজের কাছে থাকা একটা ছোট্ট ছু’রি সনিয়া বেগমের গলায় চেপে ধরে। সবাই আঁতকে ওঠে। ঘটনাগুলো এতো দ্রুত ঘটে গেছে যে কি থেকে কি হলো কেউ বুঝতেই পারলো না। পল্লবী ব্যস্ত কন্ঠে বলে,
‘কি করছিস পিয়াস? ছাড় উনাকে!’

সাথী ভয়ে পিয়াসের পা ধরে বসে পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আম্মাকে ছেড়ে দেন প্লিজ। আমার আম্মাকে মা’রবেন না।’
সনিয়া বেগম তাচ্ছিল্যের সুরে হাসে। মুখের থু পিয়াসের দিকে ছু’ড়ে মে’রে বলে, ‘তোর মতো জা’নো’য়া’রকে মেয়ের জামাই হিসেবে দেখার চেয়ে নিজেই ম’রে যাওয়া ভালো। আমার মেয়েটা না বুঝে নিজের জীবনটা নিজে ন’ষ্ট করেছে! কিন্তু তুই পাপ থেকে বাঁচতে পারবি না।’

পিয়াস রাগে ফুঁসতে থাকে। দাঁতে দাঁত চেপে বড় বড় শ্বাস নিয়ে ছোট্ট করে বলে, ‘তাহলে ম’র!’
পল্লবী দ্রুত এগোতে নেয়। সবার আতঙ্কের মাঝেই ঘটে যায় আরেক কান্ড। পিয়াস সনিয়া বেগমের গলায় আ’ঘাত করার আগেই চৈত্রিকা তার গলায় তলোয়ার চেপে ধরে। একদিনে পর পর এতোগুলো ঘটনাার সম্মুখীন হয়ে জমিদার বাড়ির লোকজন আতঙ্কিত। অর্থি ভয়ে জাপ্টে ধরে আছে অর্পিতাকে। চৈত্রিকার হঠাৎ এমন কান্ডে সবাই অবাক হয়। পিয়াস চমকায়। চৈত্রিকা শান্ত গলায় বলে,

‘আমার মামীর গলা থেকে ছু’রিটা সরান! নয়তো এই তলোয়ার আপনার গলার ভেতর এফোঁড়ওফোঁড় করতে দেড়ি হবে না।’
হলরুমে জট পেকে যায়। চারপাশ থেকে একবার পিয়াসকে তো একবার চৈত্রিকাকে ছু’রি নয়তো তলোয়ার সরাতে বলছে। কিন্তু দুজনের কেউই কিছু না করে দাঁড়িয়ে আছে। সবার মন যখন পিয়াস আর সনিয়া বেগমের দিকে ছিলো তখন চৈত্রিকা সরে যায়। কেউ খেয়ালই করেনি বিষয়টা। আর এটাই পিয়াসের কাল হলো। পিয়াস সনিয়া বেগমের গলাা থেকে ছু’রি না সরালে চৈত্রিকা নিজের হাতের তলোয়ার আরো জোড়ে চেপে ধরে। চোখে চোখ রেখে শান্ত গলায় বলে,

‘চৈত্রিকা যে শুধু মুখে নয় করেও দেখাতে পারে তার ছোট্ট একটা উদাহরণ আপনি পেয়েছেন দেবর ভাই। তাই ভালো মতো আমার মামীর গলা থেকে ছু’রি সরান নয়তো আমার হাত কাঁপবে না তলোয়ার আপনার গলার ভেতর ঢু’কিয়ে দিতে! আমার মামীর শরীর থেকে এক ফোঁটা রক্তবিন্দু বের হলেও তা আপনার জন্য চরম শা’স্তিযোগ্য হবে।’

পিয়াস হুট করেই চমকে ওঠে। মনে পড়ে যায় সেদিন রাতের কথা যেদিন রাতে চৈত্রিকা তার হাতে সত্যি সত্যিই ব’টির কো’প দিয়েছিলো! অজান্তেই হাত আলগা হয়ে যায় পিয়াসের। চৈত্রিকা বুঝতে পেরে সনিয়া বেগমকে সরিয়ে দিয়ে ছু’রিটা কেড়ে নেয়। পিয়াস কিছুক্ষণের জন্য অন্যমনষ্ক হয়ে গেছিলো বলেই চৈত্রিকা কাজটা করতে পেরেছে। নিজের তলোয়ার পিয়াসের গলা থেকে সরিয়ে বলে,

‘একটু আগেই না বলছিলেন কাকা আমার গুরুজন! তাকে আ’ঘাত করতে পারি না আমি! তাহলে আমার মামীও তো আপনার গুরুজন। আপনার শ্বাশুড়ি। তাহলে আপনি তাকে আ’ঘাত করার অধিকার রাখেন কেমন করে? আপনি যদি পুরুষ হয়ে গুরুজনকে আ’ঘাত করতে পারেন তবে আমি নারী হয়েও তা পারি। আপনি সাথীকে বিয়ে করেছেন খুবই ভালো কথা কিন্তু এর মানে এই না যে আপনি ওকে সামান্যও কষ্ট দিলে আমি চুপচাপ দেখে যাবো! চৈত্রিকা কাউকে ভয় করে না৷ না পাপকে আর না পাপের বাপকে!’

শেষের লাইনটুকু বলার সময় ঘাড় বাকিয়ে চয়নের দিকে তাকায়। তার শান্ত গলার বাক্যের মানে সবাই ঠিকই বুঝেছে। চয়ন, পিয়াস, সাদিক, নাসিমা সবাই ক্ষে’পে ওঠে। চৈত্রিকা নিজের হাতে তলোয়ার ধরে রেখেই সনিয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘বাড়ি যাও মামী। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখানে আর আসবে না। তোমার ছোট মেয়েকে তোমার বড় মেয়ে আগলে রাখবে।’

সনিয়া বেগম কিছু বলার মতো পায় না৷ এর মাঝেই সেই মেইড আসে যাকে নিবিড়কে ডাকার জন্য পাঠানো হয়েছিলো। সে আসতেই চয়ন জিজ্ঞেস করে,
‘তুমি একা কেনো? নিবিড় কোথায়?’
‘তার বাড়িতে তালা দেওয়া হুজুর। আশে পাশের কেউ তার খোঁজ জানে না।’

কথাটা যেনো বিস্ফোরণের মতো ফুটলো চৈত্রিকার কানে। নিবিড় তো তার সাথেই এসেছিলো তাহলে হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলো! ছোট্ট অর্থি ভাসা ভাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে চৈত্রিকার দিকে। বড় ভাবীজানকে সে ভীষণ ভালোবাসে কিন্তু তার বড় ভাবীজানই তার মাষ্টারমশাইয়ের সাথে এমন করলো! মাথার মধ্যে চিনচিন করে ওঠে।

ব্যাথায় মাথাটা খুলে যেতে চায় যেনো। এতক্ষণ চৈত্রিকার ওপর বিশ্বাস রাখলেও এ খবরের পর আর অর্থি পারে না বিশ্বাস রাখতে। মুখে হাত চেপে দু পা পিছিয়ে গিয়ে ডুকরে ওঠে। মুখে হাত থাকায় শব্দ বোঝা যায় না। তার ভাবনার মাঝেই সাদিক রেগে বলে,
‘এখন বলো কিছু! ভাইজান এইরকম চ’রি’ত্র’হী’ন মেয়েকে আমরা বাড়িতে রাখতে পারি না। এক্ষুণি বের করে দিন ওকে!’

চৈত্রিকা পর্ব ২৯

(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। বেশ অনেকগুলো দিন পর ফিরে আসলাম চৈত্রিকার ২য় পরিচ্ছেদ নিয়ে। এতোদিন অপেক্ষা করার জন্য সবাইকে অনেক ভালোবাসাা এবং ধন্যবাদ❤️)

চৈত্রিকা পর্ব ৩১