হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২৩+২৪

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২৩+২৪
সাইয়ারা মম

-দুই দুই বার ইন্টারভিউ দিতে যাস নি।কি করবি সামনে?কাজ তো কিছু করে খেতে হবে?
-বাবা আমি ফটোগ্রাফার,,,
-ফটোগ্রাফারের নিকুচি করি।রাস্তায় রাস্তায় যেভাবে মানুষ ভিক্ষা করে সেভাবে ঘুরবি?হ্যাঁ? মানুষজনের বিয়েতে গিয়ে ছবি তুলে দিবি?কত টাকা আয় করবি তাতে?মাসে হাজার টাকা কামাই করতে পারবি?

-বাবা দেখো ফটোগ্রাফার তো কোনো খারাপ কাজ না।অনেকেই এটা করে সফল হয়েছে।আর আমি ও এটা করতে চাই
-ছাতার সফলতা।আরফান আর নেহালকে দেখে শেখ সফলতা কাকে বলে।আর এই দুই টাকার কামাই দিয়ে কি করবি?সমাজে আমি মুখ দেখাবো কি করে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তোকে আমি এই লাস্টবার বলছি পিয়াস ব্যবসা ভালো না লাগলে একটা চাকরি কর কিন্তু এই সব দুই টাকার কাজ আমি পছন্দ করি না।শুনে রাখো দিবার মা আমি কিন্তু ওকে এই লাস্ট বার বলে দিচ্ছি ও যদি সামনের বার ইন্টারভিউ দিতে না যায় তাহলে আমি ওকে ঘর থেকে বের করে দেবো
বলে পিয়াসের বাবা চলে গেলেন।পিয়াসের মা ওনাকে থামতে বললেও উনি থামেন না।পিয়াসের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন

-কি দরকার এসবের বল? এমন কেন করিস?মা বাবার কথা একটু ভাবতে পারিস না?সমাজে তোর বাবার কত চেনা জানা লোক আছে।তারা যখন জিজ্ঞেস করে ছেলে কি করে তখন তিনি কি বলবেন?যে ছবি তোলে?দেখ পিয়াস আবেগ ভালোবাসা দিয়ে দুনিয়া চলে না। ও গুলো শুধু গল্প বা সিনেমাতেই দেখায়।নিজের স্বার্থ না থাকলে কেউ কোনো কাজ করে না।

পিয়াস শুধু মায়ের কথা শুনল কোনো প্রতিউত্তর করল না।ধীর পায়ে এগিয়ে গেল নিজের রুমের দিকে।ওর মাথায় একটা কথাই ঘুরতে লাগল সেটা হলো ওকে যে করেই হোক ওর বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে হবে।সবাই শুধু সাফল্য চায়।সবাই টাকাই কামাই করতে চায়।কেউ তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চায় না।যে যেকাজ ই করুক না কেন সবটার পেছনে টাকাই মূল।টাকা না থাকলে অনেক সময় নিজের আপনজন ও বোঝা মনে করে

আরফানের বুকে মিশে আছে মিহু।কান্নার ফলে চোখ মুখ ফুলে গেছে।ডায়েরি টা ওর মায়ের একমাত্র স্মৃতি যেটা ওর কাছে আছে।শক্ত হাতে ডায়েরিটা ধরে আরফানের বুকে মাথা গুজে আছে।আরফান একহাত দিয়ে মিহুকে জড়িয়ে আছে অন্য হাত দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
-এত ছোট একটা ঘটনার জন্য কান্না করতে হয়?
-এটা ছোট কোনো বিষয় না।এটা আমার কাছে জীবনের চেয়েও দামী।

-আচ্ছা মানলাম। এখন তো ডায়েরি টা হাতে পেয়েছো।এখন তো আর কোনো সমস্যা নেই।তাহলে এবার একটু বাইরে বা বাগানে হাটাহাটি করে আসো তাহলে ভালো লাগবে।
-হুম বলেও মিহু বসে রইল।কারণ এত দিন এই ছায়ার হাতটা মিহুর কাছে ছিল না।যে হাতটা মিহুকে অভয় দেবে,সান্ত্বনার বাণী শুনাবে।এখন এই ছায়ার স্পর্শতল থেকে মিহুর যেতে ইচ্ছা করছে না।এই হাতটাকে নিজের আপন মনে হচ্ছে।একদম ব্যক্তিগত সম্পদ

মিহুর কোনো রেসপন্স না দেখে আরফান মিহুর কানে ফিসফিসিয়ে বলল
-বাগানে যাবে না নাকি আমার বুক থেকে যেতে ইচ্ছে করছে না?কোনটা?
আরফানের কথায় মিহু লজ্জা পেল।লোকটা এমন কেন? আগে তো এরকম বলতো না।তাহলে এখন এমন করছে কেন?মিহুর লজ্জারত মুখখানা দেখে আরফান নিঃশব্দে হাসল।তারপর বলল
-অবশ্য তোমার ইচ্ছা করলে আমি তোমাকে এরকম সারাজীবন রেখে দিতে পারি।যাই হোক আমার সাথে তাহলে বৌ ফ্রি তো হতে পারবে।জড়তা নিয়ে তো আর কথা বলা লাগবে না

আরফানের কথায় মিহু উঠে গেল।তারপর ডায়েরি টা টেবিলের ওপর রেখে ওয়াশরুমে গেল।সেই ফাকে আরফান ডায়েরিটার কয়েকটা ছবি তুলে নিল।তারপর আবার আগের জায়গায় রেখে দিল।ছবি গুলো একজনের ফোনে পাঠিয়ে দিয়ে ফোন দিয়ে বলল
-আমার ইমিডিয়েট এইরকম একটা ডায়েরি চাই।তাও আজকে সন্ধ্যার মধ্যে।একদম সব সেম টু সেম হতে হবে।আর ডায়েরিটা সন্ধ্যার মধ্যেই দিতে হবে।
-আপনি কার সাথে কথা বলছেন?

মিহুকে দেখে আরফানের হৃদয় টা ধ্বক করে উঠল।মিহু সব শুনে ফেলল না তো?মিহু এখন পর্যন্ত ডায়েরি টা খুলে নি তাই ও লেখা গুলো দেখেনি।কিন্তু এখন যদি সব শুনে যায় আর দেখে ফেলে তাহলে তো সব তালগোল পাকিয়ে যাবে।আরফানকে কোনো কথা না বলতে দেখে আরফানকে মিহু আবার জিজ্ঞেস করল
-কি হলো বললেন না তো কার সাথে কথা বললেন?
মিহুকে দেখে আরফানের মনে হলো ও তেমন কিছুই শুনে নি।তাই একটু ট্রিক খাটিয়ে বলল
-তোমার কি মনে হয় কার সাথে কথা বলেছি?

-আমি জানবো কিভাবে?শুনলাম সন্ধ্যায় কারো সাথে দেখা করবেন না কি যেন বললেন তাই জিজ্ঞেস করলাম
-আমার বউয়ের সুবোধ হয়েছি দেখি।আমার সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়ছে।কাহিনী টা কি বলো তো?
আরফানের এমন কথায় মিহু বেজার হলো।কি জিজ্ঞেস করছে আর কি উত্তর দিচ্ছে।তাই ও কথা ঘুরিয়ে বলল
-বাদ দেন।বলুন তো আপনি ডায়েরি টা কোথায় পেলেন? আমি সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পেলাম না।কিন্তু আপনি এসেই পেয়ে গেলেন

-ম্যাডাম যার দায়িত্ব নিয়েছি তার সব কিছু জেনে রাখা কর্তব্য।তাই এগুলো আমাকে জানতে হবে
মিহু এবার আর না বলে পারল না।বলেই ফেলল
-আপনি তো মহা পল্টিবাজ লোক যে কথাটা এক সেকেন্ডের মধ্যে ঘুরিয়ে ফেলেন।
আরফান এবার মুখটা একটু গম্ভীর করে মিহুর দিকে এগিয়ে আসলো।মিহু একটু পিছালো।মিহুর সামনে মুখ এনে বলল
-বউ এর কাছে যেমন খুশি তেমন হওয়া যায়।তাতে পল্টিবাজ হই আর যাই হই।
বলে ডায়েরিটা নিয়ে আরফান চলে যেতে চাইলে মিহু আরফানকে থামিয়ে বলে-আরে আরে ডায়েরি কোথায় নিচ্ছেন?

-যেটা নিয়ে এতো ঘটনা সেটা একটু স্পেশাল না করে রাখলে হয়?সন্ধ্যার মধ্যে পেয়ে যাবে
-কিন্তু
-আমাকে কি বিশ্বাস করা যায় না?
মিহু একটু থমকালো।যে মানুষ টা ওর কান্নার কথা শুনে দৌড়ে চলে এসেছে যেখানে অন্য কেউ হলে বলা তো দূরে থাক উল্টো রেগে যেতো এই সামান্য ডায়েরির জন্য এতো ঘটনা ঘটেছে সেখানে সেই মানুষটা ওকে আরো থামিয়েছে,বুঝিয়েছে।তাহলে সেই মানুষটাকে তো নিমিষেই বিশ্বাস করা যায়।মিহু মুচকি হেসে বলল

-বিশ্বাস করি নিশ্চয়ই কিন্তু ডায়েরি টা না থাকলে আমার কাছে এক প্রকারের শূণ্যতা কাজ করে।তবে যেহেতু সন্ধ্যার মধ্যে দিয়ে দেবেন তাই এইটুকু অপেক্ষা করতেই পারি।
-আচ্ছা ঠিক আছে।তাহলে সন্ধ্যার পনেরো মিনিট আগে রেডি হয়ে থেকো।একদিকে যেতে হবে।রেডি হয়ে আমাকে ফোন দিও।আমি তোমাকে নিতে আসবো

মিহু আরফানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। আরফানকে দেখে মিহুর মনে হচ্ছে আরফান ওর জীবনের সব দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে দেবে।আরফানের প্রতি মিহুর এক প্রকারের আবেগ কাজ করে।তবে কি মিহুও আরফানকে ভালোবেসে ফেললো।মিহু জানে না, কিছু জানে না।এসব ভাবলে ওর গাল লাল হয়ে যায় ।
আরফান ওদের বাড়ির ছাদে এলো।ও সচারচার এই ছাদে তেমন আসে না কারণ ওর রুমের সাথেই ছাদের মতো জায়গা রয়েছে তাই এখানে আসার কোনো প্রয়োজন পড়ে না।তবে এবার এসেছে,এই ছাদে তেমন কোনো গাছ নেই শুধু একটা বসার জায়গা রয়েছে।সেখানে বসেই ডায়েরি টা আবার খুলল

নদীর পাড়ে গিয়ে আমরা একটা সমস্যার সম্মুখীন হই।তালেব মাস্টার রেণু ফুফুর হাতে একটা চিঠি গুঁজে দিলেন।বলেছিলেন
-তোমরা দুজনে একটু তাড়াতাড়ি পড়ো আর এখান থেকে এখনই চলে যাও তবে চিঠিটা যেন কেউ না দেখে।
আমরা তখন যুবতী।আমাদের মনে তখন অন্য কিছুর সুবাস বইছে তাই ভাবলাম তালেব মাস্টার হয়তো রেণু ফুফুকে পছন্দ করেন। এই জন্য চিঠি দিয়েছিলেন কিন্তু এটা ভেবে পেলাম না যে আমাকেও কেন পড়তে বললেন।ভাবলাম চিঠি যখন আছে তাহলে পড়েই নিশ্চিত হওয়া যাবে কিন্তু চিঠি পড়ার সৌভাগ্য আমাদের হয় নি।কারণ ঐ দিন বিকেল বেলা ঘটে একটা ঘটনা।

বাবা ছোট চাচাকে নিয়ে আসতে গিয়েছিলেন কিন্তু তাদের যেতে দেরি হওয়ার জন্য ছোট চাচা নিজেই চলে এসেছিলেন। আর তিনি আসার পথে দেখতে পান তালেব মাস্টার রেণু ফুফুকে চিঠি দেয়।বাড়ি এসেই তিনি কোথায় যেন বেরিয়ে গেলেন।বিকেলে আমাদের ‘কাজী’ বাড়ির সামনে অনেক হইচই শুনতে পাই।ছোট চাচা বড় গলায় ডাকছেন
-রেণু রেণু বাইরে আয়

আমি আর ফুফু দৌড়ে চলে গেলাম। বাইরের লোকেরা না চিনলেও আমাদের বাড়ির লোক সবাই চিনতো কে রেণু আর কে প্রিয়ন্তি।রেণু ফুফুকে দেখে ছোট চাচা তার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন ভীড়ের মাঝে। আমিও পেছনে পেছনে গেলাম।গিয়ে দেখলাম সবাই মিলে তালেব মাস্টারকে অর্ধমৃত বানিয়ে ফেলেছে।বাবা রেণু ফুফুকে জিজ্ঞেস করলেন
-রেণু তোরে কি মাস্টারে চিডি দিছে?

রেণু ফুফু তার বড় দাদা আর ছোট দাদাকে খুব ভয় পেতেন।তিনি চুপ করে থাকলেন।তাকে চুপ করে থাকতে দেখে ছোট চাচা ধমক দিয়ে বললেন
-ঐ বল তোকে ও চিডি দিছে কি না?
ধমক শুনে রেণু ফুফু ভয় পেলেন।বললেন-হুম দিছে
তার স্বীকারোক্তিতে বাবা ঠাস করে একটা চড় দিলেন রেণু ফুফুর গালে।হাতের পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গিয়েছে।রেণু ফুফুর চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করল।বাবা বললেন

-এই থাপ্পর ডা দিলাম অসচেতন হওয়ার জইন্যে।তুই জানোনা তালেবের উপরে মামলা আছে ওর খালাতো বইনেরে মাইরা ফালাবার লাইগা?আর তুই কোন হিসাবে ওর কাছ দিয়া চিডি আনো।সরোয়ার তোরে না দেখলেই তো বিপদ হইতো।
ছোট চাচা বললেন-চিঠিটা দে আমার কাছে

রেণু ফুফু দৌড়ে চলে গেলেন ঘরে তারপর খাটের পাটির নিচ থেকে একটা পৃষ্ঠা নিয়ে এসে ছোট চাচাকে দিলেন।ছোট চাচা তা নিমিষেই চিড়ে ছোট ছোট টুকরা করলেন তারপর তা আগুণ দিয়ে পুড়ে ফেললেন।বাবাকে বললেন
-বড় দাদা আর কোনো টেনশন নাই।কোনো প্রমাণ নেই যে রেণুর সাথে তালেবের যোগাযোগ ছিল।
-তা নায় বুজলাম কিন্তু এহন এইডার করবি কি?আর মারোন যাইবো না।তাইলে আবার মইরা গেলে পুলিশ আমাগো কাছে আইসা ধরবো।

-এটা তুমি আমার উপরে ছেড়ে দাও।আমি ওরে গ্রামের বাইরে দিয়ে আসবো আর পুলিশকে খবর দেবো। হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসবো যাতে ওখান থেকে ওরে নিয়ে যেতে পারে।
ঐদিন রাতে ফুফু অনেক কান্না করেছে কারণ তাকে কোনোদিন তার ভাইয়েরা কিছু বলতো না।বিশেষ করে বাবা ফুফুকে অনেক আদর করতো।আর বাবাই আজকে তাকে চড় দিয়েছে।আমার দাদা প্যারালাইজড ছিল কোনো কথা বলতে পারতেন না।

শুধু অনুভব করতেন।রেণু ফুফু তার ঘরে গিয়ে দরজা আটকে বসে ছিলেন আমি যতই তাকে বুঝাতে যেতাম সে ততই রাগ করে বসত।খাবার খেতেও আসলো না।রেণু ফুফুকে ছাড়া আমার দিন চলত না তাই আমিও খেতে পারলাম না।বাবা রেণু ফুফুর মন খারাপের কথা শুনে তাকে নিয়ে আসলেন।বাবার এক কথায় তিনি দরজা খুলে বেরিয়ে আসলেন।বাবা তাকে এবার অনেক ভালোভাবে বুঝালেন।

-দ্যাখ রেণু আমি কিন্তু অত সুদ্দ ভাবে কতা কইতে পারি না।গ্রামের বাষাই কতা কই।কিন্তু হেতেও গ্রামের মানুষ আমারে পছন্দ করে।এহন আমি যদি তোরে থাপ্পর ডা না দিতাম হেতে কি হইতো ক দিহি।এ জায়গায় কিন্তু তোর ও দোষ আছিলো। আমারে তো সবাই মাতবার মানে আমি যদি আমার বোইনেরে শাসন করতে না পারি তাইলে মানুষ জন কি আর আমারে বিশ্বাস করবো?

আর তালেব মাস্টার ডা বালো না বেশি।ওর বোইনের ও মাইরা ফেলাইছে হেইডা নিয়া শহরে নাকি মামলা চলে।তোর ছোড দাদায় যদি না জানতো বিষয় ডা তাইলে কত বর একটা সমস্যা হইতো।
আর এসব কতা বাদ দে।রাগ হইলেও খাওনের লগে রাগ হইতে আছে?রাগ হইলে কি অইবে?দেখবি রাগ এক সোমায় চলে গেছে কিন্তু রাগের সোমায় যে খাওন ডা খাও নাই হেডা কি ফির্রা পাবি?

এহন বালো মানুষের মতো খাইতে যা।তোর লাইগা পিউ ও না খাইয়া আছে।যা ওরে ডাইকা এক সাতে খাইতে ব।তোর লাইগা একটু আগে নদী দিয়ে ধইরা মাছ আনছি।গরম গরম রানতে কইছি।এহন যাইয়া গরম গরম মাছ দিয়া গরম গরম বাত খা সেই দিনের মতো আমাদের ওখানের ঘটনা শেষ। আসলে শেষ বুঝেছিলাম আমরা কিন্তু ঘটনাটা ঐখান থেকেই শুরু।

আমাদের মাধ্যমিকের পরীক্ষা দিতে তখন শহরে যাওয়া লাগতো।ছোট চাচা যেহেতু শহরে ছিলেন তাই আমাদের থাকার জায়গা নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হয় নি।সমস্যা হয়েছে ছোট চাচার বন্ধুর ছেলেকে নিয়ে।তার বন্ধুর ছেলে আমাদের থেকে কয়েক বছরের বড়।তখন তিনি কলেজের পরীক্ষা দিয়ে বসে রয়েছেন তার বাবার ব্যবসার হাল ধরতে ।আমরা যে কয়েকদিন শহরে থেকেছি তার প্রত্যেক দিন তিনি আসতেন।

আমাদের দুজনকে তিনি আলাদা করতে পারতেন না। আমাকে এক দিন রেণু ফুফু ভাবতেন আবার ফুফুকে ভাবতেন আমি।আমরা দুজনেও তাকে ধরা দিতাম না।তিনি যাকে যেটা ভাবতেন আমরাও সেটাই তাকে বুঝাতাম।আমরা যেদিন বাড়ি ফিরে আসবো সেদিন তিনি রেণু ফুফুকে আমি বুঝে একটা চিঠি দিয়েছিলেন।আর বলছিলেন

-প্রিয়ন্তি তুমি শুধু উত্তর টা জানিও আমি বাকি সব দেখে নেবো।
আমরা এবার আর আগের বারের মতো ভুল করলাম না।তিনি চিঠি দেওয়ার সাথে সাথেই আমরা তা ছোট চাচাকে দিয়ে দিলাম।ছোট চাচা চিঠিটা পড়ে রেগে গেলেন।তিনি তার বন্ধুর ছেলেকে ডেকে বললেন

-তুমি এটা ভালো করো নাই।তোমাকে আমি কথা গুলো বলতে নিষেধ করেছিলাম কিন্তু তুমি মানলে না।তোমার মাকে সাবধান করে ছিলাম অতি বাড় বেড়ো না ঝরে পড়ে যাবে করিম।তোমাকে এর ফল ভোগ করতে হবে। আমি শুধু ওদের একটু গ্রামে দিয়ে আসি
বেরিয়ে যাওয়ার আগে করিম ভাই আমাদের উদ্দেশ্য করে বলে গেলেন- অন্ধবিশ্বাস করতে নেই হোক সেটা রক্তের।সব সময় লজিক দিয়ে কাজ করতে হয় তাতে কে বাবা তা দেখতে হয় না।

-ভাইয়া তুমি ভাবিকে রেডি হতে বলেছিলে?
ডায়েরীটা বন্ধ করে আরফান সামনে তাকালো।দেখলো নীলু দাঁড়িয়ে আছে।ওকে দেখে বলল
-আসলি কখন?
-এইতো মাত্র আসলাম। এসে দেখলাম ভাবির মায়ের ডায়েরি দেখছো।আচ্ছা আজকে কি কোথাও যাওয়ার কথা ভাবছিলে?
-ও হ্যাঁ।তোর ভাবির মাইন্ড ফ্রেশ করার জন্য ভাবলাম আজকে তাকে নিয়ে বাইরে ইফতার করে আসি।তুই ও যাবি?গেলে রেডি হয়ে আয়।

-না ভাইয়া।আমি তোমাদের মাঝে যেতে চাই না,তোমরা দুজনে একান্তে কিছু সময় কাটাও
-আচ্ছা।তোর ভাবি রেডি হয়েছে?
-হুম কিন্তু তোমার ফোন বন্ধ তাই ফোনে পাচ্ছে না।
-ঠিক আছে যাই তাহলে।এখন না গেলে আজান দিয়ে দিবে

আরফানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবে তার ভাই কত পরিবর্তন হয়েছে।এমনটাই তো চেয়েছিল নীলু।কিন্তু এই পরিবর্তন টা ও মানতে পারছে না কেন? আগে কোথাও যাওয়ার হলে নীলুকে বলতো কিন্তু এখন নীলু মনে করিয়ে দেওয়ার পরে ওকে জিজ্ঞেস করেছে যাবে কিনা।তবে কি লোকে ঠিকই বলে যে বিয়ের পরে ছেলেরা পরিবর্তন হয়ে যায়। আরফান কি তার প্রাণের বোনকে ভুলে যাবে।

না না নীলু এগুলো কি ভাবছে?সে এরকম মনের মানুষ না।সে তো চায় তার ভাই বাচুক তার মনের মতো করে। এরকম ভাবনা নীলুর মাথায় এসেছে ভেবেই ওর নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে।নীলু জানে ওর ভাইয়ের কাছে ও কি!মনের খটকা টাকে দূর করার জন্য নীলুর মনে হলো তার কিছু করার প্রয়োজন।তাই সে নিচে চলে গেল। আর নিজের ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করল। একটা সময় পরে ওর ফোনে নোটিফিকেশন বেজে উঠল।

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২২

মেসেজ রিকোয়েস্টে কোনো আইডি থেকে একটা ভিডিও পাঠানো হয়েছে যেখানে দেখা গেছে আরফান মিহুর জন্য কত গুলো শাড়ি কিনেছে।আর নিচে লেখা
-বিয়ের পরে মেয়েরা এমনি হয়।তারা তাদের বরের বোনকে বেশি সহ্য করতে পারে না।যেমন তুমিই দেখো তোমাকে কতগুলো শাড়ি দিয়েছে আর তোমার ভাবিকে কত গুলো দিয়েছে

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২৫

1 COMMENT

Comments are closed.