হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২২

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২২
সাইয়ারা মম

গ্রামের নাম হলো শান্তি নগর। আমরা সবাই শান্তিতেই থাকতাম।তবে কে জানতো শান্তির নামে আমাদের গ্রামে অশান্তি চলত? আমার বাবা রউফ কাজী ছিলেন গ্রামের মাতব্বর।সবাই তাকে অনেক গণ্যমান্য করতেন।সেই সময় তার প্রচুর টাকা পয়সা ছিল।তার কাগজের মিল ছিল,ছাপাখানা ছিল,গাছের ব্যবসা ছিল ,কাপড়ের ব্যবসা ছিল এক কথায় তার সব কিছুই ছিল।

এগুলো তিনি পূর্বসূত্র অনুযায়ী পেয়েছিলেন।সেই সময় এ এত কিছু থাকা মানে রাজার মতো অবস্থা।আমরা সব সময় রাজার মতোই থেকেছি।আমার বাবা ছিলেন তার ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড়।তিনি তার পিতৃপুরুষের সম্পত্তির হাল ধরতে গিয়ে লেখাপড়ার প্রতি অতোটা মনোযোগ দিতে পারেন নি।তবে তিনি তার ভাই বোনদের অশিক্ষিত তৈরি করেন নি।তাদের প্রয়োজনে পিটিয়ে মানুষ করেছেন।তিনি লেখাপড়ার বিষয়ে অত কিছুই বুঝতেন না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তবে তিনি ছিলেন সহজ সরল সত্যবাদি একজন মানুষ।তাকে গ্রামের সব লোকে মান্য করত। আমরা সবাই মিলে জয়েন ফেমিলিতে থাকতাম। আমরা সবাই গ্রামে থাকলেও আমার ছোট চাচা থাকতেন শহরে পড়াশোনা করার জন্য।তিনি মাঝে মাঝে এখানে আসতেন। আবার কয়েকদিন থেকে চলে যেতেন। আমি ছোট বেলাই ই দেখেছি যে তাকে প্রচুর পরিমানে টাকা পাঠানো হতো।

ছোট চাচা বলতেন যে তিনি নাকি পড়াশোনার পাশাপাশি একটা ব্যবসা করবেন।বাবা তার ছোট ভাইকে খুব বেশি ভরসা করতেন আর ভালোবাসতেন।কারণ হিসেবে তিনি বলতেন ছোট চাচাই নাকি একা বেশি লেখাপড়া করেছেন।তিনি নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই সময়ে প্রথম হয়েছিলেন। এতে আমাদের সুনাম বেড়ে গিয়েছিল। আর বাকি চাচারা দুই জনে কলেজ পর্যন্ত পড়াশোনা করে বাবার ব্যবসায় হাল ধরেছে।আমার ফুফু ছিল তিন জন যার একজন প্রায় আমার সমবয়সী আর দুই জনেই বিবাহিত। আমার সেই ফুফুকে দেখতে একদম আমার মতো।

এই ফুফু ছিল ছোট চাচার থেকে বিশ বছরের ছোট। আমার দাদি এই মেয়েকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। আমাদের দুই ফুফু ভাইজিকে দেখে কেউ ই বলতে পারত না কে কোনজন। আমরা দুজনেই ছিলাম দুরন্ত।পুরো গ্রাম মাতিয়ে বেড়াতাম। আমার বাবা বড়ো হলেও আমার বাকি চাচাতো ভাই বোনেরা ছিল আমার থেকে বয়সে বড় কারণ বাবা ব্যাবসা সামলাতে গিয়ে বিয়ের দিকে মন দিতে পারেন নি।

পরে দাদির ইচ্ছা তে বিয়ে করেন।তবে দাদির পেটে যে আমার ফুফু হয়েছেন ঐ সময় গ্রামের লোকের কাছে এটা ছিল একটা বিস্ময়কর ব্যাপার।কিন্তু ছোট চাচা শহর থেকে এসে সবাইকে বিজ্ঞানের অনেক কথা বলে বুঝিয়েছিলেন এটা হড়ওয়া সম্ভব।তারপর একদিন আমি আর ছোট ফুফু স্কুলে যাচ্ছিলাম তখন আমাদের গ্রামে স্কুল বলতো না বলা হতো খোলা মাঠ।কারণ স্কুলটা ছিল একটা খোলা মাঠের এক কর্ণারে।সেখানে একটা টিনের বেড়া দেওয়া জায়গায় বসে একজন শিক্ষক আমাদের পড়াতেন।

আমাদের গ্রামে ঐ একটাই মাধ্যমিক ছিল আর সেটাও বাবার উদ্যোগে তৈরি করা বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। আর দুই একটা ছিল যেগুলো শহরে। খোলা মাঠে যেতে হলে অনেক রাস্তা পারি দিয়ে যেতে হতো।আমরা নৌকায় করে যেতাম।আমি সব সময় চুল খোপা করে রাখতাম কারণ আমার চুল ছিল অনেক লম্বা আর ফুফু বেণী করতেন।নৌকা ভিড়িয়ে যখন কূলে উঠলাম তখন আমাদের বাড়িতে সিদ্দিক নামে একটা ছেলে কাজ করত ও এসে বলে

-পিউ আপা,রেণু ফুফু তালেব মাস্টার আপনাগো নদীর গাটে যাইতে কইছে
তখন রেণু ফুফু ওকে বলে-কেনরে সিদ্দিক? আমাদের যেতে বলেছে কেন?
-মোরে হেয়া কয় নাই।কইছে তোমাগো নদীর গাটে যাইতে আর এহনি যাইতে কইছে।

আমরা মেয়ে মানুষ বলে আমাদের দেখাশোনার জন্য রুবেল ভাইকে রেখেছেন।তিনি হলেন আমার বড় ফুফুর ছেলে যে কিনা কোনো কাজই করেন না।তাই বড় ফুফু বাবাকে বলছিল যে রুবেল ভাইকে যেন একটা কাজ দেওয়া হয়।রুবেল ভাই ছিলেন একটু গম্ভীর প্রকৃতির। আমাদের সব সময় নৌকায় দিয়ে আসত আর নিয়ে যেতো আর বাকি সময় নৌকায় বসে সিগারেট খেতো।আমরা কোথায় গেলাম না গেলাম তার খবর তিনি রাখতেন না।সব সময় পানির দিকে তাকিয়ে থাকতেন আর সিগারেট খেতেন। আমি রুবেল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলি

-রুবেল ভাই আমরা স্কুলে যাই।আপনি ঘাটে নৌকা নিয়ে বসে থাকেন। আমাদের আজকে আসতে দেরী হতে পারে।আমরা একটু দেরি করে আসব।
রুবেল ভাই আমাদের দিকে একবার তাকিয়ে আবার পানির দিকে তাকিয়ে বসলেন। আমি রেণু ফুফুকে বললাম
-রেণু ফুফু চলো আমরা নদীর ঘাট থেকে ঘুরে আসি।দেখি তালেব মাস্টারে কি বলে

-পিউ আমরা যদি ঐ পাড়ে যাই তাহলে যদি আমাদের বড় দাদা দেখে ফেলেন। বড় দাদা নাকি আজকে ছোট দাদাকে শহর থেকে নিয়ে আসতে যাবে।
-আরে বাবায় কি নদীর পাড়ে তাকিয়ে থাকবে?আর তাছাড়াও আমরা তো গিয়েই চলে আসবো।কেউ খেয়াল করবে না
(আমার দরজায় কেউ নক করছে এখন আমার লেখা থামাতে হবে।আর যতই হোক আমার পেটে আমার মেয়ে আছে ওর জন্য হলেও আমাকে চুপ থাকতে হবে।)

আরফান এই পর্যন্ত পড়ে থামলো তারপর আবার পড়তে বসবে এই সময়ে নীলুর ফোন এলো বাসা থেকে।আরফান ডায়েরীটা বন্ধ করে নীলুর ফোন রিসিভ করল।হ্যালো বলতে না বলতেই নীলু তাড়াহুড়ো করে বলতে লাগল
-ভাইয়া তুমি কোথায়? তাড়াতাড়ি বাসায় আসো
-কোনো সমস্যা হয়েছে নীলু?

-ভাইয়া ভাবি পাগলেয মতো কান্না করছে আর সারা ঘর তছনছ করে ফেলছে।কিছু জিজ্ঞেস করলে কোনো কথাই বলছে না।আর কতক্ষণ এভাবে থাকলে কিন্তু অজ্ঞান হয়ে পড়বে।তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় আসো
আরফান দ্রুত ডায়েরীটা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।মিহু কিসের জন্য কান্না করছে?এই ডায়েরীর জন্য? এই ডায়েরীটাতে তো কিছুই লেখা ছিল না।মাত্র দুই পৃষ্ঠা লেখা ছিল বাকি পেইজ গুলো খালি ছিল যেটা ইনভিজিবল কিছু দিয়ে লেখা ছিল।কেমিক্যাল পড়তেই সেটা ভিজিবল হলো।মিহু তো এ সম্পর্কে কিছুই জানে না।

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২১

পিয়াস নত মুখ করে দাড়িয়ে আছে ওর বাবা মায়ের সামনে।ওর বাবা কাজের জন্য কুমিল্লা গিয়েছিলেন।তিনি বাড়ি এসে ছেলের কীর্তি কালাপ শুনে পিয়াসের ওপর বেজায় রেগে গেলেন।

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২৩+২৪