চৈত্রিকা পর্ব ৩২

চৈত্রিকা পর্ব ৩২
বোরহানা আক্তার রেশমী

প্রহরের কথার পিঠে আর কেউ কথা বলে না। চুপ থাকে। ভেতরে ভেতরে ফুসলেও প্রহরের মুখের ওপর কেউ কিছুই বলতে পারে না। প্রহর শান্ত দৃষ্টিতে সবার মুখ দেখে নিঃশব্দে হাসে। তারপর গম্ভীর গলায় বলে,
‘যেহেতু বাড়ির বড় বউকে আপনারা অ’ন্যায় ভাবে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ছেন তাই ফিরিয়ে আনার দায়িত্বও আপনাদের।’
‘প্রহর!’

চয়নের চোখ রাঙানিতে বিন্দু পরিমাণ ধ্যান না দিয়ে প্রহর নিজ জায়গা থেকে উঠতে উঠতে বলে, ‘ভুল কিছু বলিনি আব্বাজান। চৈত্রিকা কোনো ভুল না করেও এ বাড়ি থেকে মাথায় মিথ্যা অ’পবাদ নিয়ে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে তাই তাকে দেওয়া সকল অ’পবাদ সরিয়ে আপনারা নিজ দায়িত্বে ওকে এ বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ছেলের কথায় চয়ন ফুঁসে উঠলেও নিজেকে শান্ত রাখে। তার নিজের ছেলে তাকে কথা শোনাচ্ছে এটা সে মানতে পারছে না। অথচ সে জানে তার বড় ছেলে এমনই। রক্তের টানের চেয়েও তার কাছে ন্যায় অ’ন্যায়টা বড় বেশি। তার বড় ছেলের হৃদয় যে পাথরে পরিণত হয়েছে এটা কি সে আগে থেকে জানতো না!

জানতো। নিজের চোখের সামনেই তো দেখেছিলো ছেলেকে পাথর তৈরী হতে। তখন ভেবেছিলো ‘জমিদারের বংশের ছেলেদের এমনই হতে হবে। প্রহর যেহেতু পরবর্তীতে জমিদার হবে তাই তাকে থাকতে হবে শক্ত। জমিদারদের দয়া মায়া থাকতে নেই। হতে হবে পা’ষাণ। একদম পা’ষাণ।’ সেই পা’ষাণতার কবলে যে তারাও পড়তে পারে হয়তো তা ভেবে দেখেনি। প্রহর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ উঠে সিড়ির দিকে গিয়ে আরো একবার ফিরে তাকায় পেছনে। পল্লবীকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘আম্মাজান! আপনি বাড়িতে থাকেন। চিত্র, অর্থি একা আছে! আর যে যে যাবে তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে আসো।’
সবাই মাথা নাড়ায়। দুরে কোণায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সাথীকে দেখে প্রহর ভ্রু কুঁচকায়। শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি যাবে সাথী? মামী তো মনে হয় না তোমাদের বিয়েটা মেনে নিয়েছে!’
সাথী মাথা নিচু করেই থাকে। প্রহর বুঝতে পেরে ছোট্ট করে বলে, ‘আচ্ছা তাহলে তুমি, মেজো কাকিমা আর আম্মাজান বাড়িতে থাকো। অর্পি, নীরা যাবে তো?’

দুজনেই মাথা নাড়ায়। প্রহর উল্টো ঘুরে চলে যেতে যেতে জোড়েই বলে, ‘আব্বাজান, ছোট কাকা, ছোট কাকি আর পিয়াস সবাই কিন্তু অবশ্যই যাবেন। তাই দেড়ী না করে তৈরী হয়ে আসেন। আর হ্যাঁ! আব্বাজান, ছোট কাকা, ছোট কাকি অবশ্যই কিন্তু নিজেদের অ’ন্যায়ের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিবেন। আশা করি এতে কারোর সমস্যা হবে না। আব্বাজানই তো শিক্ষা দিয়েছেন! ভুল ভুলই হয়। অ’ন্যায় অ’ন্যায়ই হয়! আর ক্ষমা ক্ষমা ই হয়! অ’ন্যায় ছোট বড় যার সাথেই করা হোক ক্ষমা চাওয়াটা আবশ্যক! আর পিয়াসের তো বড় ভাবীজান হয় তাই তার ক্ষমা চাইতে নিশ্চয় কোনো ক্ষ’তি নাই।’

প্রহর চলে যায়। চয়ন, সাদিক, নাসিমা, পিয়াস ক্ষে’পে যায়। এখন চৈত্রিকার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে ভেবেই সবার রাগ হচ্ছে। তারা জমিদার বংশের হয়ে একটা সাধারণ মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইবে বিষয়টা তাদের ইগোতে লাগে। এই ইগো থেকে তৈরী হয় রাগ, ক্ষো’ভ, হিং’সা। নিজ মনে চেপেই যে যার ঘরে চলে যায়। কারণ সবাই জানে প্রহর যা বলেছে তা করিয়েই ছাড়বে। সবাই চলে গেলে পল্লবী হল রুমে দাঁড়িয়ে প্রশান্তির হাসি হাসে। বিড়বিড় করে বলে,

‘চয়ন রেনওয়াজ! যে জমিদারী বংশ নিয়ে আপনার এতো দম্ভ সেই জমিদার পুত্রই আপনাকে ধ্বং’স করবে। আপনার ধ্বং’স আমি নিজ চোখে এখনই দেখতে পারছি। আপনাকে শেষ হতে দেখে আমি আরো একবার বুক ভরে নিঃশ্বাস নিবো আর ওইদিনই হবে আপনার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার দিন।’

চৈত্রিকা বিকেলের দিকে নিজেদের বাড়ির সামনের দীঘির পাড়ে বসে ছিলো। রোদ তেমন না থাকায় তার বসে থাকতে সমস্যা হয় না। তবে মুখ দেখে বোঝা যায় না মনে কি চলছে! দুদিন থেকে সে এই বাড়িতে থাকলেও মন, মস্তিষ্ক পড়ে আছে জমিদার বাড়িতে। সেখানে এখন শুধু তার শ’ত্রুরা না তার প্রাণপ্রিয় ছোট্ট বোন, বান্ধবীও রয়েছে। দুদিন থেকেই সনিয়া বেগমের মুখের দিকেও তাকানো যাচ্ছে না৷ মাঝে মাঝে এতো সব কিছুর জন্য নিজেকে ভীষণ দো’ষী মনে হয়।

সে না আসতো প্র’তিশো’ধ নিতে আর না এসব কিছুর মাঝে সাথী ফেঁ’সে যেতো! দীঘির টুইটুম্বর পানিতে চোখ রেখেই আপনমনে কিছু ভাবতে থাকে চৈত্রিকা। সে মুহুর্তে হুট করেই কারো ‘ভাউ’ শব্দে চমকে ওঠে। অন্যমনষ্ক হওয়ায় সহজেই বিষয়টা বুঝতে পারেনি। পড়ে যেতে নিলে নিজেই নিজেকে সামলে পেছনে তাকায়। থমকে যায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য। বিড়বিড় করে দুটি শব্দই উচ্চারণ করে, ‘অনিম ভাই!’

সামনে দাঁড়ানো অনিম চৈত্রিকার চমকে যাওয়া মুখ দেখে হেঁসে ফেলে৷ বরাবরের মতো চৈত্রিকার চুল টেনে দিয়ে বলে, ‘ওমন চমকালি কেনো? মনে হচ্ছে আজ আমাকে প্রথম দেখলি!’
চৈত্রিকা নিজেকে সামলে হাসার চেষ্টা করে জবাব দেয়, ‘তেমন কিছু না অনিম ভাই। তোমাকে অনেক দিন পর দেখলাম তো তাই! এতোদিন পর হঠাৎ এখানে!’

‘তোকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই দেখতে চলে আসলাম। ভালো করেছি না বল!’
‘হ্যাঁ। অনেক ভালো করেছো। একা এসেছো নাকি ফুপিরা এসেছে?’
‘একাই এসেছি। সেই দু’র্ঘ’টনার পর তোকে কতগুলো দিন পর দেখছি! অনেক বড় হয়ে গেছিস। আর আগের চেয়েও সুন্দর হয়ে গেছিস।’

বলেই ঠোঁট চেপে হাসে অনিম। চৈত্রিকাও মুচকি হাসে। অনিম সুবাদে চৈত্রিকার ফুপাতো ভাই হয়। চৈত্রিকাদের বাড়িতে আ’গুন লাগার পর অনিম আর তার বাবা মা ধরেই নেয় চৈত্রিকারও জীবন সংকটে। তাই তারা কৌশলে, গোপনে তাকে এই গ্রামে পাঠিয়ে দেয়। সনিয়া বেগম এবং আজম আলীর সাথে তার রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই। চৈত্রিকা দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই অনিম তার হাত টেনে ধরে। চৈত্রিকা চমকে হাতের দিকে তাকায়।

ছোট থেকে এই অনিম ভাই অজস্র বার তার হাত ধরেছে কখনো কোনো রকম অস্বস্তির সামনে না পড়লেও আজ ১ম বারের মতো তার ভীষণ অস্বস্তি হলো। দৃষ্টি এদিক ওদিক করে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করতে থাকে। হঠাৎ এমন অস্বস্তি অনুভূতির কারণ বুঝলো না। হয়তো এটাই বিয়ের আগের আর বিয়ের পরের আরেকটা তফাৎ। অনিম চৈত্রিকার হাত টেনে সরাসরি সনিয়া বেগমদের বাড়ির মাঝে চলে আসে। উঠোনে দাঁড়িয়ে সনিয়া বেগমকে ডাকে। সনিয়া বেগম ঘর থেকে বিষন্ন মন নিয়ে বের হলেও এতোদিন পর অনিমকে দেখে খুশি হয়ে যায়। হাসিমুখেই ছুটে আসে অনিমের কাছে। বলে,

‘এতোদিন পর আমার কথা মনে পড়লো?’
‘তোমার কথা তো প্রতিদিনই মনে পড়ে মামীমা। শুধু সময়ের অভাবে আর আসা হয় না।’
‘থাক থাক আর অজুহাত দেখিও না। সত্যটাই বলে দাও! আচ্ছা বাহিরে না দাঁড়িয়ে থেকে ঘরে চলো!’

অনিম মাথা নাড়িয়ে চৈত্রিকার হাত ধরেই ঘরে ঢুকতে নেয়৷ সে সময় হাজির হয় জমিদার বাড়ির লোকজন। এতোজনকে বাড়িতে ঢুকতে দেখে চৈত্রিকার হাত ধরা অবস্থাতেই অনিম পেছনে ফিরে তাকায়। প্রহর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রথমেই তাকায় সেই ধরে থাকা হাতের দিকে। মাথার রক্ত টগবগ করে ওঠে। চৈত্রিকা হাত ছাড়িয়ে নেয়। অনিম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
‘মামী কারা এরা? এতোজন একসাথে তোমাদের বাড়িতে!’

সনিয়া বেগম অনিমের প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই প্রহরকে বলে, ‘তোমরা এই অসময়ে! বাড়ির ভেতর আসো বাবা!’
সবাই এক এক করে বাড়িতে ঢুকতে থাকে। অনিম চৈত্রিকার দিকে মাথা এগিয়ে ফিসফিস করে বলে, ‘এরা কারা রে চৈত্রিকা?’
চৈত্রিকাও তার মতো ফিসফিস করে উত্তর দেয়, ‘আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন এরা। আর সামনেরটা আমার স্বামী প্রহর রেনওয়াজ।’

অনিমের মাথায় রীতিমতো আকাশ ভেঙে পড়ে। জোড়ে বলে ওঠে, ‘হোয়াট! তুই বিয়ে…’
আর কিছু বলার আগেই জলদি মুখ চেপে ধরে চৈত্রিকা। কন্ঠস্বর নিচু করে বলে, ‘আস্তে বলো! আমি তোমাকে সবটা বুঝিয়ে বলবো। আপাতত চুপ থাকো!’

অনিম চুপ করে গেলেও বিষয়টা হজম করতে পারে না। আজম আলীর বাড়ির উঠোনে চেয়ার পেতে সবাইকে বসতে দেওয়া হয়। নাসিমা অনিমকে দেখার পর থেকেই উসখুস উসখুস করছে। সাদিক খেয়াল করে বলে, ‘কি হয়েছে তোমার?’
‘এখান থেকে দ্রুত চলো সাদিক।’
‘চৈত্রিকাকে না নিয়ে কেমন করে যাবো? কি হয়েছে বলবে তো!’

নাসিমা কিছু বলতে পারে না। শুধু হাসফাস করতে থাকে। চৈত্রিকা আর অনিমকে দুরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রহর সেদিকেই তাকিয়ে থাকে কড়া দৃষ্টিতে। চৈত্রিকা তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে যায়। হঠাৎ করে প্রহরের এমন তাকানোতে চৈত্রিকার আত্মা কেঁপে ওঠে। অর্পিতা এগিয়ে যায় চৈত্রিকা আর অনিমের কাছে। চৈত্রিকার হাত টেনে খুশি মনে বলে,
‘বড় ভাবীজান এদিকে আসেন!’

অর্পিতা আর চৈত্রিকা যেদিকে যায় পিছু পিছু অনিমও সেখানেই গিয়ে দাঁড়ায়। চৈত্রিকার পাশাপাশি। সবাই একসাথে হওয়ার পর চয়ন অনিচ্ছা স্বত্বেও বলে,
‘দেখো বড় বউ! একটা ভুল বোঝাবোঝি হয়ে গেছে এবং তাতে তোমাকে আমাদের বাড়ি থেকে চলেও আসতে হয়েছে এজন্য আমরা দুঃখিত। বাড়ি ফিরে চলো!’

অনিম চয়নের কথা শুনছিলো আর আশে পাশে সবাই কে ভালো করে দেখছিলো। নাসিমা বার বার তার থেকে মুখ লুকিয়ে রাখছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই চোখে চোখ পড়ে যাওয়ায় নাসিমাকে চিনতে তার কষ্ট হয় না। হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকে। চয়নের কথা শেষ হতে না হতেই সে চেঁচিয়ে চৈত্রিকাকে বলতে নেয়,
‘চৈত্রিকা ওটা মামী…’

সাথে সাথে হাত চেপে ধরে চৈত্রিকা। অনিমের দিকে সবাই চেয়ে থাকে। অনিম কথা সম্পূর্ণ করতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। চৈত্রিকা ছোট্ট করে বলে, ‘এইসব কথা তোমাকে আমি পরে বুঝিয়ে বলবো অনিম ভাই। এখন কিচ্ছুটি বলো না।”
অনিম মনের মাঝে হাজারটা প্রশ্ন চেপে রেখে চুপ করে যায়। নাসিমা বড় বড় শ্বাস নেয়। চয়ন তীক্ষ্ণ চোখে অনিমের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘এই ছেলেটা কে? আর কথার মাঝে এমন চেঁচিয়ে ওঠে কেন?’
উত্তরটা চৈত্রিকাই দেয়, ‘এটা আমার ফুপাতো ভাই। অনিম আহসান। আর উনি কথার মাঝে ওমন চেচিয়েই ওঠে। যায় হোক! আপনি যেনো কি বলতেছিলেন আব্বাজান? একটা ভুল বোঝাবোঝি হয়েছে! এটা কি সত্যই ভুল বোঝাবোঝি? আপনারা সত্যটা জানা স্বত্বেও ইচ্ছে করে আমাকে যা তা শুনিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন! এটা ভুল বোঝাবোঝি না অ’ন্যায়। তাই ভালো ভাবে বলেন ‘আমাদের অ’ন্যায় হয়ে গেছে তার জন্য আমরা লজ্জিত।

বাড়ির বউ বাড়িতে ফিরে চলো!’
চৈত্রিকার সুযোগের সদ্ব্যবহার দেখে চয়নরা ক্ষে’পে ওঠে। প্রহর নিজমনে বসে আছে। যেনো সে কিছুই জানেও না বোঝেও নাহ। অনিম চৈত্রিকার কন্ঠের তেজ দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে মুখের দিকে। চৈত্রিকা মুখের ওপর এমন করে কথা বলতে জানে তা যে তার জানা ছিলো না এটারই বহিঃপ্রকাশ করছে তার মুখের এমন হাল। চৈত্রিকা হাত বগলদাবা করে চয়নের দিকে তাকিয়ে ফের বলে,

‘কি আব্বাজান বলবেন নাকি?’
চয়ন কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘আমাদের অ’ন্যায় হয়ে গেছে এবং সেই অ’ন্যায়ের জন্য আমরা লজ্জিত। তুমি বাড়ির বড় বউ! বাড়িতে ফিরে চলো।’
চৈত্রিকা বিশ্বজয়ের হাসি হাসে। প্রহর আড়চোখে একবার চৈত্রিকার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ গম্ভীর করে নেয়। সনিয়া বেগম বলে,
‘চৈত্রিকা যা তৈরী হয়ে আয়!’

চৈত্রিকা মাথা নাড়িয়ে ঘরের দিকে চলে যায়। অনিম কিছু না বুঝে যেতে নিলে সনিয়া বেগম আটকে দেয়। প্রহর তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজেই চেয়ার ছেড়ে উঠে চৈত্রিকার পিছু পিছু যায়। চৈত্রিকা তখন ঘরের দরজা আটকাতে নেয়। প্রহরের হাত চলে আসায় চমকে তার দিকে তাকায়। প্রহর চোখের ঈশারায় সরতে বললে চৈত্রিকা একটু সরে দাঁড়ায়। প্রহর ঘরে ঢুকে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। চৈত্রিকা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বলে,

‘আপনি ঘরে আসছেন কেনো জমিদার সাহেব? আমি তৈরী হবো তো!’
প্রহর হুট করেই কোনো কথা ছাড়াই চৈত্রিকার বাহু চেপে ধরে। একটানে নিজের দিকে টেনে দূরত্ব মিটিয়ে নেয়। চৈত্রিকা ঘাবড়ে গিয়ে সরাসরি প্রহরের চোখের দিকে তাকায়। প্রহরের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার মুখশ্রীতেই নিবদ্ধ। কাঁপা কাঁপা হাতে চৈত্রিকা প্রহরের থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলে,
‘কি করছেন? ছাড়ুন!’

‘তোমাকে বিশ্বাস করি, ভরসা করি মানে তোমাকে অন্য কেউ স্পর্শ করবে এটা কিন্তু আমি একদম সহ্য করবো না চৈত্র। তুমি আমার জন্য হালাল। স্পর্শ করার হলে আমি তোমাকে স্পর্শ করবো না করলে নাই। তোমার প্রতি সব রকম অধিকার আমার। তুমি পুরোটাই আমার। তোমার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও আমি সহ্য করবো না।’
প্রহর নিজেই চৈত্রিকাকে ছিটকে সরিয়ে দেয়। তারপর কোনো কথা ছাড়াই গটগট করে দরজার সামনে যায়। পেছনে না ফিরেই বলে, ‘আমার রাগের সময় খবরদার ‘জমিদার সাহেব’ উচ্চারণও করবে না।’

এরপর দরজা খুলে বের হতে হতে বিড়বিড় করে বলে, ‘তোমার ‘জমিদার সাহেব’ শব্দটা আমাকে বরফের মতো শীতল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট চৈত্র।’
প্রহর বের হয়ে গেলেও চৈত্রিকা হতভম্বের মতো দাড়িয়ে রয়। প্রহরের একেকটা বাক্য সে ২য় বারের মতো নিজ মনেই আওড়ায়। অজানা অনুভূতিতে হৃদপিণ্ডের গতি বাড়ে। শ্বাস ঘন হয়। প্রহরের বলা ‘তুমি পুরোটাই আমার’ বিড়বিড় করে আওড়াতে থাকে। পেছনে ঘুরে তাকাতেই নজর যায় সরাসরি আয়নার দিকে। ছোট্ট আয়নাতে তার লজ্জায় লাল হওয়া গাল স্পষ্ট।

(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্প আগের পরিচ্ছেদের মতোই একদিন পর পর পাবেন। দুপুর ২ টার মধ্যে পেয়ে যাবেন। এবার কিছু কথা বলি! কিছুদিন আগে থেকেই অনেকের মন্তব্য দেখলাম। গল্পটা ভাইরাল বলে আমি নাকি ভাব নিয়ে গল্প লেট এ দেই। আবার অসুস্থতার না’টক করি। অনেক কথা! আগে কতটা ব্যস্ততার মধ্যে পার করতাম এটা কমবেশি অনেকেই জানেন। তো ঈদের পর আমার হাফ ইয়ারলি এক্সাম। রোজা রেখে কোচিং করে, নিজের পরীক্ষার পড়া এগিয়ে রেখে, টিউশনি করার পর কি কারোর ইচ্ছে করে লিখতে? তবুও লিখতে হয়। সারাদিনের লেখার মতো মন থাকে না তাই বাধ্য হয়ে রাতে নিজের পড়া কমপ্লিট করে তারপর লিখতে বসি।

তাও পুরোটা লিখা সম্ভব হয় না। কোচিং যাওয়ার সময় গাড়িতে বসে বসে লিখি। এতো কষ্ট করে লিখা কমপ্লিট করার পর আপনারা কি বলেন? আমরা ঢঙ করে এসব করি। থ্রিলার স্টোরিতে যা লিখতে হয় ভেবে লিখতে হয়। যা তা লিখা যায় না। আর আমি এতো কষ্ট করে লিখার পর আপনাদের বাজে কথা কেনো শুনবো? অনেকে বলে লেখিকাদের ধৈর্য থাকতে হয় অনেক। সরি ভাই! আমারে কেউ আজাইরা কথা বলবে আর ওইটা আমি চুপচাপ বসে বসে হজম করবো অতোটা ধৈর্যও নাই, অতোটা ভদ্রতাও নাই আমার মধ্যে।

চৈত্রিকা পর্ব ৩১

আমার কাছে সঠিকটা সঠিক, ভুলটা ভুল। তাই আমারে যা তা বললে নিজেদেরও উল্টো যা তা শুনতে হবে। এতে আমারে কে অহং’কারী ভাবছে, কে বে’য়াদব ভাবতেছে এটা আমি দেখতে যাইওনি আর যাবোও না। আমি জানি আমি কেমন! চৈত্রিকা আমার আবেগ। এটা একদিন লিখতে না পারলে আমি নিজেই হাসফাস করি। কখন লিখবো আর কখন পোষ্ট করবো! তার মানে এই না আপনারা আমারে খো’চা মা’রলে আমি খো’চার উত্তর দেবো না! এতে আমারে যা ভাবার ইচ্ছে হয় ভেবে নেন। আই ডোন্ট মাইন্ড।)

চৈত্রিকা পর্ব ৩৩