চৈত্রিকা পর্ব ৩৯

চৈত্রিকা পর্ব ৩৯
বোরহানা আক্তার রেশমী

জুম্মার পরেই চিত্র আর অর্পিতার বিয়ে সম্পন্ন হবে। জমিদার বাড়ি গমগম করছে মানুষজনের আনাগোনায়। এই আত্মীয় নয়তো ওই আত্মীয়কে আপ্যায়ন করতে করতেই চৈত্রিকা, নীরা, সাথী, পল্লবী, শায়লার দিন চলে যাচ্ছে। নাসিমার মন চাইলে কাজ করছে নয়তো করছে নাহ। বলা বাহুল্য চৈত্রিকার থেকে এখনো সে দূরত্ব বজায় রেখেই চলে। বাড়ির পুরুষরা সব অন্যান্য কাজে ব্যস্ত।

যত কাজ সব জুম্মার আগে শেষ করতে হবে। প্রহরের টিকিটাও আজ চৈত্রিকার চোখে পড়েনি। সেই ভোর থেকে কোথায় কোথায় কি কি করে বেড়াচ্ছে আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। অর্পিতার যদিও কোনো কাজ নেই। হাতের মেহেন্দি, আলতা সব হলুদের সাথে সাথে কালই সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। অর্থির কোনো কাজ না থাকায় সে অর্পিতার সাথে সাথে আছে। পল্লবীর কড়া নির্দেশ কোনো বাচ্চা ছেলে মেয়েকে বিরক্ত করা যাবে না। অর্থি চারপাশে বাচ্চাদের দেখছে আর ঠোঁট উল্টাচ্ছে। অর্পিতা অর্থির কান্ড দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ওমন করছিস কেনো?’
অর্থি চোখ ছোট করে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, ‘দেখো বাচ্চা গুলো কি সুন্দর ছুটে বেড়াচ্ছে!’
‘তাতে কি হয়ছে? তোরও ছুটতে ইচ্ছা করছে?’
অর্থি দু দিকে মাথা নাড়িয়ে দাঁত বের করে বলে, ‘ওদের একটু চি’মটি কা’টতে ইচ্ছে করছে। আমার হাত বার বার বলছে গিয়ে একটু লাড়া দিয়ে আয়!’

অর্পিতা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে, ‘তোর বাচ্চাদের কান্না করাতে মন চাচ্ছে?’
অর্থি মুখটা ফের কাঁদো কাঁদো করে মাথা নাড়ায়। অর্পিতা ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ অর্থির মুখের দিকে তাকিয়ে মাথায় গাট্টা মা’রে। হাসতে হাসতে বলে, ‘জেঠি শুনলে এক্ষুণি তোর পিঠে লা’ঠি ভা’ঙবে।’
অর্থি গাল ফুলিয়ে বলে, ‘এজন্যই তে পারছি নাহ।’

অর্পিতা অর্থির মুখভঙ্গি দেখে হাসতে থাকে। অর্থি গাল ফুলিয়েই বসে বসে বাচ্চাদের দেখতে থাকে। বাচ্চাদের আদর করতে তার যতটা ভালো লাগে তার চেয়েও বেশি ভালো লাগে বাচ্চাদের চি’ম’টি কে’টে কাঁদাতে! বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কা’মড়ে হাসতে থাকে। সাথে সাথেই তার হাতে জোড়ে সোড়ে একটা চি’মটি পড়ে। অর্থি আর্তনাদ করে লাফিয়ে ওঠে। হাত ডলতে ডলতে পাশে তাকিয়ে দেখে অনিম দাঁত বের করে তাকিয়ে আছে। অর্থি ফোঁস করে উঠে তেড়ে যায়। কটমট করতে করতে বলে,

‘এই পেট মো’টা কি সমস্যা আপনার? আমাকে চি’মটি কা’টলেন কেনো?’
অনিমের কোনো ভাবান্তর হলো নাহ। অর্পিতার পাশে বসতে বসতে হাই তুলে বলে, ‘তোমার যেমন বাচ্চাদের চি’মটি কে’টে কান্না করাতে ভালো লাগে আমারও ভালো লাগে।’
‘তো বাচ্চাদের চি’মটি কা’টেন! আমারে কেন কা’টলেন?’
‘কারণ তুমি নিজেই বড় বাচ্চা।’

অর্থি ফোঁস করে ওঠে। অনিম দাঁত বের করে হাসতে থাকে। সে হাসিতে অর্থির গা জ্বালা করে। অর্থি তেড়ে গিয়ে অনিমের চুল টেনে ধরে। আকস্মিক হামলায় অর্পিতা আর অনিম দুজনেই চমকে ওঠে। অনিম ব্যাথায় আর্তনাদ করতে থাকে। অর্পিতা দ্রুত অর্থিকে দ্রুত ছাড়িয়ে দুরে সরিয়ে ধমক দেয়। অর্থি গাল ফুলিয়ে তাকায় অর্পিতার দিকে। অর্পিতা রাগী গলায় জিজ্ঞেস করে,

‘এগুলো কি ধরনের অভদ্রতা অর্থি? অনিম ভাইয়া তোর বড় না!’
‘উনি আমাকে বাচ্চা বললো কেনো? আমি বাচ্চা! আমাকে যে চি’মটি কা’টলো ওটা দেখলে না তুমি!’
অর্থি হাত বগলদাবা করে রাগে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখে। অনিম পরিস্থিতি খারাপ দেখে প্যান্টের পকেট থেকে দুটো চকলেট বের করে অর্থির সামনে দাড়ায়। ছোট্ট করে বলে,

‘আচ্ছা তোমাকে আর বাচ্চা বলবো নাহ। তুমি বড় হয়ে গেছো। সরি!’
অর্থি তাকায়ই না অনিমের দিকে। অনিম ঠোঁট চেপে হেঁসে চকলেট দুটো এগিয়ে দেয় অর্থির দিকে। অর্থি আড়চোখে চকলেট দেখেই লাফিয়ে ওঠে। ব্যস্ত ভাবে নিতে গেলেও নেয় নাহ। হাত গুটিয়ে বলে,
‘চকলেট নিলে আবার বাচ্চা বলবেন না তো!’

অনিম শব্দ করে হেঁসে দেয়। দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বোঝায় ‘সে আর অর্থিকে বাচ্চা বলবে না।’ অর্থি খুশিতে গদগদ হয়ে চকলেট নিয়ে ছুট লাগাায়। ছুটতে ছুটতে ‘সরি আর থ্যাঙ্কস’ দুটোই বলে। অনিম হাসে। অর্পিতা সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুচকি হাসে। অনিমের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ওকে এতো আশকারা দেন কেনো?’

অনিম ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘না দেওয়ার কি আছে আপু? ছোট মানুষ। তাছাড়া ‘ও’ একটু বেশিই অবুঝ।’
‘তবুও ওকে আশকারা না দিয়ে ওর ভুলটা ধরিয়ে দিবেন। ও অবুঝ হলেও ওর বয়সটা অবুঝ নয়।’
অনিম মাথা নাড়ায়। চুপচাপ ঘর থেকে বের হয়ে যায়৷ অর্পিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের ঘরের জানালায় গিয়ে দাঁড়ায়। নিচে তাকিয়ে দেখে রাধুনীর সাথে কথা বলতে ব্যস্ত প্রহর আর নিবিড়। এক পলক নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আবার নিজের ঘরের দরজার দিকে তাকায়। আনমনেই বলে,
‘ত্রিকোণমিতিক হয়ে যাচ্ছে না প্রেম টা! এই প্রেমের পরিণতিতে দুদিকের একদিকও সুখী হবে তো?’

যোহরের আযান হয়ে গেছে। ছোট বড় সবাই মসজিদের দিকে যাচ্ছে নামাজের উদ্দেশ্যে। সব কাজ সামলাতে সামলাতে প্রহরের দেড়ি হয়ে গেছে। কোনো রকমে দৌড়ে নিজের ঘরে এসে আগে গোসলখানায় ঢুকে পড়ে গোসলের জন্য। একটু বাদেই চৈত্রিকাও আসে গোসলের জন্য। যেহেতু সকাল থেকে প্রহরকে দেখেনি তাই ধরেই নেয় প্রহর নামাজে চলে গেছে। ঘামে ভেজা গায়ে বসে থাকার চেয়ে আগে গোসল করে নিয়ে বিশ্রাম করার আশায় আলমারি থেকে কাপড় বের করে নিজেও ছোটে গোসলখানার দিকে। গোসলখানার দরজা বন্ধ দেখে ভ্রু কুঁচকে নক করে দরজায়। জোড়ে ডেকে বলে,
‘ভেতরে কে? জমিদার সাহেব!’

‘হ্যা। কিছু বলবে?’
‘আপনি এখনো নামাজে যাননি! সবাই তো চলে গেছে। কখন যাবেন?’
‘গোসল করেই যাবো।’
চৈত্রিকা গোসলখানার দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। প্রহরকে জ্বালানোর জন্য বলে, ‘গোসল তো আমিও করবো। আসবো নাকি জমিদার সাহেব?’

প্রহর হতভম্ব হয়ে দরজার দিকে তাকায়। চৈত্রিকার হয়েছে টা কি এটা ভাবতেই তার মাথার তার কয়েকটা ছি’ড়ে গেলো। ব্যস্ত গলায় জবাব দেয়, ‘যদি সত্যি সত্যি দরজা খুলে দেই তখন ভাল্লাগবে তো!’
চৈত্রিকা মুখ চেপে হাসে৷ জানে তার জমিদার সাহেব এ দরজা গোসল শেষের আগে খুলবে নাহ। চৈত্রিকার জবাবের আগেই প্রহর ফের বলে, ‘আমাকে না জ্বালিয়ে চুপচাপ গিয়ে বিশ্রাম নাও মেয়ে!’

চৈত্রিকা যায় নাহ। কোনো শব্দও করে নাহ। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে নিজ জায়গায়। প্রহরের গোসল শেষে হুট করেই যখন দরজা খুলে দেয় তখন চৈত্রিকা উল্টে পড়ে যেতে নিয়েও কোনো রকমে নিজেকে সামলায়। প্রহর ভ্রু কুঁচকে বলে,
‘তুমি যাওনি! এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিলে!’
‘কচু করছিলাম। একটু শব্দ করে দরজা খোলা যায়নি! এখনই তো আমার কো’মড় ভেঙে যেতো।’

‘ঠিকই হতো।’
‘জমিদার সাহেব!’
‘কি?’
‘কিছু না৷ নামাজে যান!’
চৈত্রিকা ধাক্কা দিয়ে প্রহরকে বের করে দেয়। ঠা’স করে দরজা আটকে দেয় প্রহরের মুখের ওপর। প্রহর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে, ‘বে’য়া’দ’ব বউ!’

চৈত্রিকা গোসল সেড়ে এসে প্রহরকে আর খুঁজে পায় নাহ। নিজেই আনমনে হাসে। চুল আচড়ে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে মুখ দিয়ে ‘চ’ এর মতো শব্দ করে। আফসোসের সুরে বলে,
‘চৈত্রিকার এতো তেজ, কাঠিন্যতা জমিদার সাহেবের কাছে ফিকে পড়ে যায়! ওহ জমিদার সাহেব আপনার মাঝে এতো কিসের অনুভূতি!’

নিজেই হাসে। খোলা চুলেই মাথায় আঁচল টেনে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। পুরো বাড়িতে মেহমানরা যে যার ঘরে আছে আপাতত। নিচে, ছাঁদে, বাগানে, পুকুর পাড় সব জায়গাতেই মানুষ গিজগিজ করছে। চৈত্রিকা চারদিকে একবার নজর বুলিয়ে পল্লবীর ঘরের দিকে হাঁটা লাগায়৷ আশে পাশে তেমন কেউ নেই। ঘরের সামনে এসে নক করার আগেই কানে আসে পল্লবী আর অন্য একজন মহিলার কন্ঠ। চৈত্রিকা ঘরের মাঝে না গিয়েই কান খাড়া করে দরজা ঘেঁষে দাঁড়ায়। স্পষ্ট শুনতে পায় অপরিচিত মহিলাটি বলছে,

‘এতো গুলো বছর হয়ে গেলো অথচ তোর তো প্র’তিশো’ধের কিছুই হলো না পল্লবী। তুই স্বামীর মায়ায় পড়ে গেছিস! চয়ন কতকিছু করেছে সব ভুলে গেছিস! চয়ন যে আমাদের বাবা মা কেও মে’রে ফেলতে দুবার ভাবেনি এটাও কি ভুলে গেছিস!’
চৈত্রিকার শিরা উপশিরা কেঁপে ওঠে। পল্লবীর বাবা মা কে চয়ন মে’রেছে! কি থেকে কি হয়েছে! কিভাবে কি হয়েছে সবটা ভাবতেই মাথা ঘুরিয়ে ওঠে। তার ভাবনার মাঝেই পল্লবীর শান্ত কন্ঠ ভেসে আসে,

‘ভুলেও যাইনি, প্র’তিশো’ধের নেশাও ছাড়িনি। কতদিন তো গিয়েছিলাম চয়নকে মা’রতে কিন্তু বরাবরই ধরা পড়ে গেছি সাথে ভ’য়ং’কর শা’স্তিও পেয়েছি। ওকে কতবার বলেছি আমাকেই মে’রে ফেলতে কিন্তু ‘ও’ না মে’রে আমাকে দিনের পর দিন শুধু মৃ’ত্যুতুল্য শা’স্তিই দিয়ে গেছে। ভেবেছিলাম আমি বোধহয় ওকে শা’স্তি দেওয়ার আ’ক্ষেপ নিয়েই ম’রবো কিন্তু এই সময় এসে এভাবে সবটা পাল্টে যাবে ভাবিনি বুবু! চয়ন ভাবে আমি সব ভুলে গেছি কিন্তু আমার মনের আ’গুন এখনো প্রথমদিনের মতোই দাউ দাউ করে জ্ব’লছে।’

‘এতোদিনে কি করবি তুই?’
‘আমি কিছুই করবো নাহ। যা করার চৈত্রিকা করবে। আমি শুধু দেখবো আর চৈত্রিকা নামক আ’গুনে একটু ঘি ঢেলে পাশে থাকবো।’
চৈত্রিকা এলোমেলো হয়ে যায়৷ মাথার মধ্যে প্রশ্নেরা জট পেকে যায়৷ হাজার হাজারটা প্রশ্নের ভীড়ে কিছুটা সন্দেহ জেগে ওঠে মনে। সেই জায়গায় না দাঁড়িয়ে দ্রুত সরে যায়। মনে মনে ঠিক করে এবার পল্লবীর সাথে সামনাসামনি হবে! অনেক কিছু এবার পরিষ্কার ভাবে জানতে হবে!

মেয়েরা সবাই নামাজ পড়েই অর্পিতাকে তৈরী করতে বসে পড়ে। লাল শাড়ি পড়িয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে পুতুলের মতো বসিয়ে রাখে। হাত ভর্তি চুড়ির শব্দে পরিবেশ আরো আনন্দময় হয়ে উঠছে। অর্পিতার সৌন্দর্যও কোনো দিক থেকে কম না। জমিদার বাড়ির মেয়ে সেও। সৌন্দর্যের কমতি তারও নেই। বউ সাজে সেই সৌন্দর্যটা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। চৈত্রিকা অর্পিতাকে সাজিয়ে দিয়ে সবার মাঝে বসিয়ে রেখে নিজেও গিয়ে সেজে আসে।

তার আর প্রহরের ম্যাচিং ড্রেস। দুজনেই খয়েরী রঙের শাড়ি আর পাঞ্জাবি পড়েছে। প্রহর আগেই তৈরী হয়ে চলে গেছে নিচের সবকিছু সামলাতে। বিয়ের কাজ শুরু হওয়ার আগেই অর্পিতার ডাক পড়ে নিচে। চৈত্রিকা, নীরা, সাথী আর অর্পিতার এক কাজিন মিলে অর্পিতার মাথার ওপরে বড় একটা ঘোমটা ধরে। অর্পিতার মাথার ঘোমটা টা বড় করে টেনে দিয়ে সবাই নিচে নামতে শুরু করে। অন্যরকম খুশিতে পুরো বাড়ি মেতে থাকে।

বেচারা চিত্র ছটফট করতে থাকে অর্পিতাকে দেখার জন্য। কিন্তু অর্পিতার ঘোমটায় আড়ালে মুখ দেখে হতাশ হয়। বেশ জমিদারী পদ্ধতিতেই পুরো বিয়ে সম্পন্ন হয়৷ ৩ কবুল বলার সময় চিত্র আর অর্পিতা সবার অগোচরেই একে অন্যের হাত শক্ত করে ধরে ছিলো৷ যেনো এই হাত ধরা থেকেই নতুন জীবনের সূচনা আর এই হাত ধরেই আজীবন কাটিয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা। একে অন্যকে নিঃশব্দে সবসময় পাশে থাকার কথা দেওয়া। চৈত্রিকা দুজনের এই সমঝোতা চোখ ভরে দেখে নিলো। মিনিট কয়েক বাদেই প্রহর তার পাশাপাশি দাঁড়ায়। চৈত্রিকা চমৎকার হেঁসে প্রহরের দিকে তাকায়। প্রহর ভ্রু কুঁচকে নিচু স্বরে বলে,

‘হাসছো কেনো?’
চৈত্রিকা জবাব না দিয়ে এক হাতে শক্ত করে প্রহরের হাত ধরে। মাথা এলিয়ে দেয় প্রহরের বাহুতে। ঠোঁটের হাসি ধরে রেখেই চিত্র আর অর্পিতার দিকে তাকায়। প্রহর বেশ অবাক হলেও নিজেকে সামলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। বিয়ে শেষে চিত্র আর অর্পিতার সামনে আয়না ধরা হয়। অর্পিতার ঘোমটা তুলে দিতেই অর্পিতার মুখ ভেসে ওঠে আয়নার সামনে। চিত্র হা করে তাকিয়ে দেখে আনমনেই ‘মাশাল্লাহ’ বলে ওঠে। সবাই হৈ হৈ করে ওঠে। অর্পিতার আর চিত্রর কাজিনরা সবাই এক সাথে জিজ্ঞেস করে,

‘আয়নায় কি দেখো চিত্র ভাই!’
চিত্র হেঁসে বলে, ‘আমার প্রিয়তমা, আমার চাঁদ।’
সবাই হৈ হুল্লোড় শুরু করে। বিয়ের সব কাজ শেষে প্রহর যখন চলে যেতে নেয় তখন চৈত্রিকা টেনে ধরে প্রহরকে। প্রহর পিছু তাকাতেই চৈত্রিকা ঠোঁট চেপে হেঁসে বলে,
‘আরো একবার বিয়ে করবেন না জমিদার সাহেব?’
প্রহর মুখের গম্ভীর ভাব সরিয়ে দু কদম এগিয়ে আসে। গলা পরিষ্কার করে বলে, ‘সত্যিই করবো বিয়ে?’
চৈত্রিকা দুষ্টুমি করে বলে, ‘হ্যাঁ।’

সাথে সাথেই প্রহর কাজী সাহেবকে ডাকতে নেয়। চৈত্রিকা হুড়মুড় করে কোনো রকমে প্রহরের মুখ চেপে ধরে। চোখ বড় বড় তাকিয়ে থাকে প্রহরের মুখপানে। আশে পাশে নজর বুলিয়ে চাপা স্বরে বলে,
‘পা’গল নাকি! আপনি নিজের কাজে যান জলদি!’

প্রহর চৈত্রিকার হাত সরিয়ে দেয় মুখ থেকে। ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বলে, ‘ওমা! তুমিই না বললে আরেকবার বিয়ে করবো।’
চৈত্রিকা কটমট করে তাকায়। কিছু নাা বলেই গটগট করে চলে যায় প্রহরের সামনে থেকে। প্রহর চৈত্রিকার রেগে যাওয়া দেখে ফিক করে হেঁসে দেয়। চৈত্রিকা দুরে গিয়ে ঠিকই পিছু ফিরে সবটা দেখে। নিজেও আনমনে হাসে।

সবার খাওয়া দাওয়া শেষে চৈত্রিকা নিজের ঘরে এসে শরীর এলিয়ে দেয়। চৈত্রিকার পিছু পিছু সাথীও আসে। চৈত্রিকার পাশে নিজেও শুয়ে পড়ে। দুজনে অনেকক্ষণ চুপ করে শুয়ে থাকে। সাথী চৈত্রিকার মুখের দিকে তাকায়। চৈত্রিকা এভাবে তাকাতে দেখে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কি?’
সাথী অদ্ভুত কন্ঠে বলে, ‘তোর চোখ মুখের পরিবর্তন দেখছি। ভালোবাসা আসলে মানুষের মাঝে সত্যিই অনেক পরিবর্তন আসে। তাই না চৈত্র?’

চৈত্রিকা বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকায়। সাথী হেঁসে শুয়ে থাকা অবস্থাতেই এক হাত চৈত্রিকার গালের ওপর রেখে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, ‘ভালোবেসে ফেলেছিস দুলাভাইকে!’
চৈত্রিকা কোনো জবাব দেয় নাহ। সাথী হাত সরিয়ে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে। উপরে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘এরকমটা কথা ছিলো নাহ চৈত্র।

চৈত্রিকা পর্ব ৩৮

তুই বলেছিলি তুই জমিদারকে ভালোবাসবি না কখনোই। অথচ নিজেই নিজের কথা ভেঙে নিজের মন ভাঙার দায়িত্ব কেনো নিলি! দুলাভাই তোকে ভালোবাসে নাহ। নিজের স্বা’র্থে তোকে ব্যবহার করছে শুধু। তোর প্রতিশোধ সম্পর্কে সে অবগত। সে জানে সবকিছুই। তুই বোকাার মতো ভালোবেসে ফেললি!’

চৈত্রিকা পর্ব ৪০