চৈত্রিকা পর্ব ৪০

চৈত্রিকা পর্ব ৪০
বোরহানা আক্তার রেশমী

সাথীর কথার পিঠে কোনো কথা বলে না চৈত্রিকা। তবে হুট করেই যেনো মনে অশান্তির ঝড় বয়তে থাকে। পরপর কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলে নিজেও সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রহর তাকে নিজ স্বা’র্থে ব্যবহার করছে বিষয়টা মানতে পারে না সে। নিজেকে প্রথমে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে সাথীর দিকে তাকায়। শান্ত গলায় বলে,

‘তোকে কে বললো উনি আমাকে নিজ স্বা’র্থে ব্যবহার করছে শুধু? উনার কি লাভ এতে?’
সাথী হেঁসে ওঠে। শোয়া থেকে উঠে বসে চৈত্রিকার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। যেনো সাথীর হাসি তাকে তাচ্ছিল্য করছে। চৈত্রিকা শুধু তাকিয়ে থাকে। কিছু বলে নাহ। সাথী হাসি থামিয়ে বলে,
‘তুই এতো বোকা কবে হলি? ভালোবেসে বোকা হয়ে গেলি নাকি আগে থেকেই বোকা ছিলি?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চৈত্রিকা এবারও কিছু বলে নাহ। শান্ত দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়েই থাকে। সাথী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘তুই এ বাড়িতে কেনো এসেছিলি এটা কি ভুলে গেছিস চৈত্র? প্রহর রেনওয়াজ যদি দো’ষী হয় তাহলে তোকে ভালোবাসায় জড়িয়ে তার কোন স্বা’র্থ হাসিল হবে এটাও কি বুঝতেছিস না! তুই তো এতোটাও অবুঝ না!’

চৈত্রিকা থম মে’রে থাকে। তার মস্তিষ্ক ঠিকই ধরতে পেরেছে বিষয়টা কিন্তু মানতে পারছে না। সাথী চুপ করে যায়। চৈত্রিকা কোনোমতে বলে, ‘জমিদার সাহেব ওমন না সাথী। উনি নিজেও বি’শ্বাস’ঘা’তকতা ঘৃ’ণা করে সেখানে আমার সাথে বি’শ্বাস”ঘা’তকতা কেনো করবে? তোর কোথাও ভুল হচ্ছে!’
‘ভালোবাসায় অ’ন্ধ হয়ে গেছিস। তোকে কিছু বলেও লাভ নেই। যেদিন মন ভা’ঙবে ওইদিনই তুই সবটা বুঝতে পারবি।’
‘তুই কিভাবে জানলি উনি আমাকে ঠ’কাচ্ছে!’

সাথী অদ্ভুত ভাবে হাসে। অদ্ভুত কন্ঠেই বলে, ‘বিয়ের দিন পিয়াস রেনওয়াজ বলেছিলো সবটাই৷ ওরা ওপরে ওপরে যা দেখায় ভেতরে ভেতরে তেমন না। আমরা যতটুকু জানি ওরা তার চেয়েও বেশি রহস্যময়। ওরা বাহিরে যতটা অমিল দেখায় ভেতরে ভেতরে ভাই ভাইয়ে ততটাই মিল। ওরা সব একসাথে মিলে আছে চৈত্র।’
চৈত্রিকা চট করে উঠে বসে। ক্ষ্রি’প্ত গলায় বলে, ‘তুই ওই জা’নো’য়া’রটাকে বিশ্বাস করছিস কেমন করে? তোর কান ভা’ঙিয়েছে আমাদের মাঝে ঝা’মেলা বাধানোর জন্য।’

‘এটা আমিও ভেবেছিলাম। কিন্তু! সময় এলে হয়তো তুই নিজেও সবটা বুঝে যাবি।’
চৈত্রিকা বুঝে ওঠে না কিছু। কে সত্যি আর কে মি’থ্যা এটাই মাথাার মধ্যে জট পাকিয়ে দেয়। সাথী বিছানা ছেড়ে উঠে নিজের শাড়ি ঠিক করে বের হয়ে যায় ঘর থেকে। চৈত্রিকা যেভাবে ছিলো সেভাবেই বসে থাকে। বেশ অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। প্রহর আসে ঘরে। ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গেছে। চৈত্রিকাকে বিছানার ওপর এভাবে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েই বলে,

‘এভাবে বসে আছো কেনো? গরম লাগছে না! শাড়ি বদলাবে না!’
চৈত্রিকা জবাব দেয় না। অন্য সময় হলে ঘামে ভেজা গা নিয়ে শোয়ার জন্য চৈত্রিকা নাক ফুলিয়ে গোসলখানায় পাঠিয়ে দিতো প্রহরকে। কিন্তু এই সময় কিছুই বললো না। থম মে’রে তাকিয়ে থাকলো শুধু। চৈত্রিকার হঠাৎ এমন ব্যবহারের কারণ সহজেই ধরতে পারে না প্রহর। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘কি হয়েছে?’
চৈত্রিকা নিঃশব্দে হুট করেই প্রহরের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। আকস্মিক ঘটনায় প্রহর হতভম্ব হয়ে যায়। হঠাৎ কি হলো চৈত্রিকার! প্রহর কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলো নাহ। এক হাত চৈত্রিকার চুলের ভাজে দিয়ে নরম গলায় জিজ্ঞেস করে,
‘কিছু হয়েছে চৈত্র? কেউ কিছু বলেছে? তোমার মন খারাপ? বাবাকে মিস করছো?’
চৈত্রিকা এবারও জবাব দেয় না। চুপচাপ নাক মুখ গুজে রাখে প্রহরের বুকে। শুষে নেয় প্রহরের গায়ের গন্ধ। অদ্ভুত টান অনুভব করে। প্রহরের বুকে মুখ গুজেই রেখেই বলে,

‘আপনাকে ভালোবাসার আগে কখনোই ভাবিনি আমি আপনাকে ভালোবাসবো! এটা কেমন করে, কখন, কিভাবে হয়ে গেলো আমি জানি নাহ। আমি শুধু জানি আমি আপনাকে ভালোবাসি। মানুষ বলে না বিয়েতে আল্লাহর একটা রহমত থাকে! ভালোবাসাটা আপনা আপনিই চলে আসে! এখন এটা আমি মানি। যে আপনাকে আমি ঘৃ’ণা করে গেছি সবসময় সেই আমিই আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।

আমি জানি না আপনি আমাকে এই মায়ায় জড়িয়েছেন কেমন করে! আদৌও আমাকে ভালোবাসেন কি না আমার সত্যিই জানা নেই। আমি শুধু জানি আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনি কখনো কোনোরকম ভাবে আমার সাথে একটুও বি’শ্বাস’ঘা’তকতা করলে এই ভালোবাসা হয়তো ফের ঘৃ’ণায় রুপ নেবে। আবার আমাদের মাঝে আকাশ পাতাল দূরত্ব হবে। যা কখনোই আপনি মিটাতে পারবেন না৷ হারিয়ে ফেলবেন একটা আস্ত ভালোবাসার চৈত্রিকা। চৈত্রিকা কঠোর মনে ভালোবাসার জন্ম দিতে পারলে সেই ভালোবাসকে মাটি চাপা দিয়ে আবার কঠোর হতেও পারবে।’

প্রহর ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রয়। চৈত্রিকার চোখ বন্ধ। শেষের লাইন গুলো বলার সময় চৈত্রিকার কন্ঠের তেজ বোঝা যায়। প্রহর অবাক হলেও পরক্ষণেই হাসে। নিঃশব্দে জাপ্টে ধরে চৈত্রিকাকে। চৈত্রিকার মাথায় চুমু একে ছোট্ট করে বলে,
‘প্রহর রেনওয়াজ প্রয়োজনে বি’শ্বাস’ঘা’তকতা করতে পারে তবে চৈত্রিকার জমিদার সাহেব কখনোই তার চৈত্রিকার সাথে প্র’তা’রণা কিংবা বি’শ্বাস’ঘা’তকতা করতে পারে না।’

চিত্রর ঘর সাজানো হয়েছে সুন্দর করে। অর্পিতাকে সে ঘরে বসিয়ে দিলেও কাজিনমহল চিত্রকে ঘরে ঢুকতে দিতে নারাজ। তারা চিত্রর থেকে প্রথমে টাকা নিবে তারপর ঘরে ঢুকতে দেবে। রাত প্রায় ১২ টার ওপরে বাজে অথচ চিত্রকে ছাড়ার নাম গন্ধ নেই। চিত্র বেচারা বউ পেয়েও বউহীন থেকে কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে। চিত্র গলা ঝেড়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে,
‘দেখ আমার কাছে টাকা নাই। আটকে রেখে লাভও নাই।’

পাশ থেকে চিত্রর এক কাজিন বলে, ‘জমিদারের ছোট পুত্র হইয়াও তুমি টাকা নাই বলো! আমাদের সাথে ফাজলামি না!’
পাশ থেকে অপরজন বলে, ‘ভাই একে তো তুই আমাদের ছোট। তারওপর আমাদের আগেই বিয়ে করে নিলি। এখন টাকা না নিয়ে তোরে ঘরে কেমনে পাঠাই বল!’

চিত্র চোখ মুখ কুঁচকে বলে, ‘ছোট ভাইয়ের থেকে টাকা চাচ্ছো তোমাদের লজ্জা লাগে না?’
‘তুই যে আমাদের আগে বিয়ে করে নিলি তোর কি লজ্জা লাগছে?’
‘নাহ লাগে নাই। তোমরাও বিয়ে করো। কে নিষেধ করছে!’
‘হাহ আমরা কি আর তোর মতো রাজ কপাল নিয়া জন্মাইছি ভাই! এতো কথা বাদ দিয়া টাকা বের কর!’

বেচারা চিত্র সবার চাপাচাপিতে নিজের পার্স বের করে দিয়েই দৌড় লাগায়। এক দৌড়ে ঘরে এসে দরজা আটকে বড় করে শ্বাস নেয়। মনে মনে বিশাল বকা দেয় সবাইকে। দম নিয়ে পিছে ঘুরে দেখে অর্পিতা ঘুমিয়ে পড়েছে। চিত্র অর্পিতার ঘুমন্ত মুখ দেখে হেঁসে দেয়। কাছে গিয়ে ঘুমন্ত মুখেই আলতো করে হাত ছুঁয়ে দেয়। নড়ে চড়ে উঠে আবার ঘুমিয়ে পড়ে অর্পিতা। চিত্র কয়েক পল অর্পিতার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কপালে চুম্বন করে।

পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। যেনো কতদিন পর তার মনে প্রশান্তিরা হানা দিয়েছে। যেনো কত যুগ পর মেয়েটি শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। কত যুগ পরই তো! এতো গুলো দিনে কি তাদের ওপর কম ঝড় ঝাপ্টা গেছে! উহু নাহ। দুজন দুজনকে পাওয়ার ০% চান্স থেকেও আজ তারা বিবাহিত দম্পতি। সুখটা এতো কিছুর পরই এসেছে। তবুও শুকরিয়া যে সবকিছুর পর দুজন দুজনকে পেয়েছে। চিত্র দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজের শেরওয়ানি বদলায়। হাত মুখ ধুয়ে এসে আলগোছে ডাকে অর্পিতাকে। দু একটা ডাকেই অর্পিতা লাফিয়ে ওঠে। মস্তিষ্কের চলাচল হুট করেই বন্ধ হয়ে যায়। চিত্র ব্যস্ত কন্ঠে বলে,

‘আস্তে আস্তে! কি করছিস!’
অর্পিতা কিছুক্ষণ থম মে’রে বসে থেকে ছোট করে বলে, ‘তুমি কখন এসেছো? সরি আসলে আমি বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’
চিত্র হেঁসে বলে, ‘ভালো করেছিস! এতো ভারী শাড়ি গহণা নিয়ে ঘুমানোর চেয়ে আগে এগুলো পাল্টে নিতি!’
‘উহু নাহ। সবাই বলেছে বিয়ের সাজ বর ভালো মতো দেখার পরই যেনো তুলি তার আগে না। কিন্তু আমি কি আর জানতাম যে তুমি আসার আগেই আমি ঘুমিয়ে পড়বো!’

‘হয়েছে! বর সাজ দেখেছে মন মতো। এবার এগুলো চেঞ্জ করে আয়!’
অর্পিতা ঠোঁট কামড়ে বলে, ‘তুমি সত্যিই দেখেছো?’
চিত্র ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘মি’থ্যা বলছি নাকি আমি! জলদি এগুলো চেঞ্জ করে এসে নামাজ পড়ে ঘুমা।’
অর্পিতা মাথা নাড়ায়। ভদ্র মেয়ের মতো সব কিছু চেঞ্জ করে বাসন্তী রঙের একটা শাড়ি পড়ে। তারপর দুজনে মিলে নামাজ পড়ে নেয়। চিত্র অর্পিতাকে ঘুমাতে বলে নিজে বারান্দায় যায়। বাহিরে বাতাস বয়ছে। সেই বাতাস শুষে নিয়ে চেয়ে থাকে দুর পানে। খানিক বাদেই অর্পিতাও পাশে এসে দাঁড়ায়। চিত্র গম্ভীর স্বরে বলে,

‘তুই ঘুমাসনি!’
অর্পিতা বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে নেয়। চিত্রর হাত রেলিং থেকে সরিয়ে নিজে চিত্রর সামনে দাঁড়ায়। দু হাতে চিত্রর গলা জড়িয়ে বলে, ‘প্রথমত আমার সাথে একদম গম্ভীর হয়ে কথা বলবে না আর দ্বিতীয়ত আজকে ঘুমাবো না।’
‘ঘুমাবি না কেনো?’
‘দুজনে চন্দ্রবিলাস করবো।’

চিত্র কিছু বলে না। অর্পিতা চিত্র গলা ছেড়ে দিয়ে সামনে ফিরে দাঁড়ায়। নিজের মাথা চিত্রর বুকে ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে সময়টা অনুভব করতে থাকে। চিত্র নিজেও থুতনী অর্পিতার কাঁধে রেখে দু’হাতে জাপ্টে ধরে থাকে। দুজনেই দুরে তাকিয়ে থাকে নিঃশব্দে। নীরবতাকে কাটিয়ে অর্পিতা জিজ্ঞেস করে,
‘আচ্ছা চিত্র ভাই! তুমি সেদিন হারিয়ে গেছিলে কেনো? আর এভাবে ফিরে এসেছিলে কোথা থেকে?’

চিত্র শান্ত গলায় জবাব দেয়, ‘তোর ওপর অভিমান করে সরে আসলেও আমি নিজে থেকে হারাইনি। আমাদের দেখার পিঠেও অনেক দেখা থাকে। সেদিন আমি বাড়ি থেকে বের হতেই কেউ আমার মাথায় আ’ঘাত করেছিলো। তারপর কোথায় ছিলাম জানি নাহ। একটা তালাবদ্ধ অন্ধকার ঘর। কিভাবে ছিলাম নিজেও জানি নাহ! আর সেদিন এখানে কিভাবে বা কেনো এসেছিলাম তাও জানি না আমি।’

অর্পিতাকে ধরে রাখা হাত দুটো আরো শক্ত হয়। অতীতের কালো একটা অধ্যায় যে চিত্রকে কাঁপিয়ে তুলেছে তা টের পেতে খুব একটা দেড়ি হলো না অর্পিতার। চট করেই চিত্রর হাত নিজেও শক্ত করে ধরে রাখলো। যেনো বলছে ‘ভয় পেও নাহ। অতীত অতীতেই থাকুক। আমি আছি তোমার পাশে।’ কিছুটা সময় এভাবেই একে অপরের ভরসা হয়ে কেটে গেলো৷ চিত্র খানিকটা স্বাভাবিক হতেই অর্পিতা চিত্রর দিকে ঘুরে তাকিয়ে পা উঁচু করে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। একে অন্যের সাথে খুনশুটিতে মেতে ওঠে। এই খুনশুটি থেকেই ফের শুরু হয় নতুন সকাল হওয়ার অপেক্ষা। একে অপরে মিশে রয় রাত সাক্ষী করে।

চিত্র আর অর্পিতার বউ ভাতের অনুষ্ঠান আজ। সকাল সকাল গোসল করে চৈত্রিকা চুল এলোমেলো করেই বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলো। নিচের সব কাজ পর্যবেক্ষণ করছিলো। হালকা রোদের ছিটে এসে লাগছিলো সরাসরি মুখের ওপর। নিচ থেকে সেই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েছিলো চিত্রর কাজিন তামিম। পাশেই তার আরেকটা কাজিন সবুজ দাঁড়িয়ে। চৈত্রিকার দিকে তাকিয়েই তামিম আফসোসের সুরে বলে,

‘এবারের বড় ভাবীজান একটু বেশিই সুন্দর না সবুজ? হায়! আমি যদি পাইতাম রে ভাই!’
সবুজ ঠা’স করে গা’ট্টা বসিয়ে দেয় তামিমের মাথায়। সতর্কিত কন্ঠে বলে, ‘জীবনে মেয়ের অভাব নাকি যে বড় ভাবীজানের দিকে তাকাচ্ছিস!’
‘ভাই মেয়ের অভাব তো নেই তবে এই ‘চৈত্রিকা’ নামক বড় ভাবীজানের অভাব।’

সবুজ শব্দ করে হেঁসে ওঠে। পরক্ষণেই বলে, ‘যত যায় হোক! পৃথিবীর সব মেয়ের দিকে নজর দিয়ে বসে থাক কিন্তু প্রহর ভাইজানের বউয়ের দিকে ভুল করেও নজর দিস না ভাই। উনি জানলে তোর মাথা থেকে দে’হ আ’লাদা করতে দুবারও ভাববে নাহ।’

তামিম পাত্তা দেয় না সে কথায়। যেনো তার কিছু যায় আসে না এমন একটা ভাব নিয়ে বলে, ‘প্রহর ভাই কিছুই করতে পারবে না। সে জমিদারের বড় ছেলে হলেও আমার বাবার ক্ষমতাও কোনো দিকে কম না। মন চাইলে হাজার বার তার বউয়ের দিকে তাকাবো। নজর দেবো। কি করবে!’

শুধু এগুলোতেই থেমে থাকেনি। বি’শ্রী কিছু কথা জুড়ে দেয় সাথে। কথাগুলো শেষ করতে দেড়ি হলেও তামিমের পিঠে লা’থি পড়তে দেড়ি হয়নি। সবুজ আতঙ্কে পিছু তাকিয়ে দেখে ভ’য়ং’কর দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রহর। সবুজ জানে এখন কি হতে পারে তাই ভয়েই আগে দু পা পিছিয়ে গিয়ে দাঁড়ায়। প্রহর কোনো কথা ছাড়াই তামিমকে তুলেই পরপর থা’প্প’ড় বসিয়ে দেয়। তামিম বুঝে ওঠার আগেই তার গালে ৫ আঙুলের ছাপ বসে গেছে। প্রহর পর পর থা’প্রা’তেই থাকে। নিবিড়, চিত্র, অনিম এসে জলদি থামায়। বাকিরা কেউ এগোনোর সাহসই পায় না। প্রহর হিং’স্র প্রাণীর মতো ফুঁসতে থাকে। চিত্র ব্যস্ত গলায় বলে,

‘কি করছো ভাইজান! মা’রছো কেনো ওকে? কি হয়ছে?’
প্রহর কিছু না বলে শুধু ফুঁ’সতে থাকে৷ এর মাঝেই তামিমের বাবা মা ছুটে আসে। তামিমের বাবা প্রহরের দিকে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বলে, ‘তুমি আমার ছেলেরে মা’রলে কেনো প্রহর?’
প্রহর ফোঁস করে ওঠে। কন্ঠের জোড় বাড়িয়ে খ্যাক করে বলে, ‘এক্ষুণি এটাকে নিয়ে বের হন এই বাড়ির সীমানা থেকে। এখন শুধু থা’প্প’ড় দিয়েছি আর ১ মিনিটও এটাকে নিয়ে দাঁড়ালে আমি ওকে এখানেই কু’র’বা’নী দিবো। দুর হন চোখের সামনে থেকে!’

সবাই অবাক হয়। তামিমের বাবা মা প্রহরকে বে’য়া’দব বলে কথা শোনাতে শোনাতে আ’হত ছেলেকে নিয়ে জমিদার বাড়ি থেকে বের হয়। প্রহর কাউকে কিছু না বলে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গটগট করে বের হয়ে যায়। বিয়ে বাড়ির আমেজ ঝা’মেলার জন্য হুট করেই খানিকটা কমে গেলো। প্রহর সরাসরি ঘরে আসে। চৈত্রিকা ব্যস্ত গলায় শুধায়,
‘নিচে কি হয়ছে? ঝামেলা হলো কেনো জমিদার সাহেব? ওই ছেলেটাকে মা’রলেন কেনো?’

প্রহর যেনো এ কথার পিঠে দ্বিগুণ ক্ষে’পে উঠলো। চৈত্রিকার বাহু চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘কে বলেছে তোমাকে বারান্দায় দাঁড়াতে! ঘরের ভেতর চুপ করে বসে থাকতে পারো না? মানুষকে নিজের রুপ দেখিয়ে বেড়াতে মজা লাগে!’
চৈত্রিকা হতভম্ব হয়ে বলে, ‘কি বলছেন এসব?’

প্রহর চট করে ছেড়ে দেয় চৈত্রিকার হাত। ফুঁসতে ফুঁসতে বলে, ‘দুরে যাও আমার থেকে। আমার মাথা ঠিক নেই। তোমাকে কি থেকে কি বলবো জানি না! এখান থেকে যাও তুমি!’

প্রহর মাথা চেপে দাঁড়িয়ে থাকে। চৈত্রিকা শান্ত হয়ে প্রহরের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ প্রহর রাগে কাঁপতে থাকে। রাগ সামলাতে না পেরে হাতের কাছে যা পায় তাই ছুড়ে মা’রে। চৈত্রিকা চোখের পলকে কিছু না ভেবেই প্রহরকে জড়িয়ে ধরে। প্রহর নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে। মুহূর্তেই চৈত্রিকা করে বসে আরেকটা অনাঙ্ক্ষিত কান্ড!

চৈত্রিকা পর্ব ৩৯

(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনারা নাকি রহস্যের নিচে পড়ে যাচ্ছেন! এদিকে কিছু পাঠক নাকি রহস্যই খুঁজে পায় না🙂 এখন আমি কার কথা বিশ্বাস করবো আপনারাই বলেন🥹)

চৈত্রিকা পর্ব ৪১