চৈত্রিকা পর্ব ৪৬

চৈত্রিকা পর্ব ৪৬
বোরহানা আক্তার রেশমী

আজ সাথী আর পিয়াসের মৃ’ত্যুর মিলাদ। ৩ দিনের দিন খাওয়ার ব্যবস্থা আর ওদের মিলাদ দেওয়াটাই মূখ্য উদ্দেশ্য। পুরো গ্রামকেই দাওয়াত করা হয়েছে। বাড়িতে সকাল থেকেই কাজের ধুম পড়েছে। বাড়ির অবস্থা খারাপ হওয়ায় অর্থির বিদায় হয়নি। বাধ্য হয়ে নিবিড়কেও জমিদার বাড়িতে থাকতে হয়েছে।

গত ২ দিন নিবিড়ের বাবা মা কেউ এ ব্যাপারের জন্য জমিদার বাড়িতে না আসলেও আজ দাওয়াতের উছিলায় ঠিকই এসেছে। পল্লবী কাজ সামলাবে নাকি নতুন বেয়াই বেয়াইনের আপ্যায়ন করবে তা বুঝে ওঠে নাহ। শেষ মেশ নিবিড়ের বাবা মায়ের আতিথেয়তার ভার পড়ে চৈত্রিকার ওপর। চৈত্রিকা বিনাবাক্যে মেনে নেয়। চয়ন যদিও নিবিড় আর অর্থির বিয়েটা মেনে নিতে পারেনি কিংবা নিবিড় বা তার পরিবারের কাউকেই পছন্দ করে না তবুও সবটা চুপচাপ হজম করে নেয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পিয়াসের মৃ’ত্যুর পর সবথেকে বেশি চুপচাপ হয়ে যায় নীরা। তবুও সব কাজই নিরুপণ ভাবে করছে। সবাই বোঝে তার মনের অবস্থা কিন্তু বোঝার পরও কারো কিছু করার নেই। কিই বা করতে পারবে! অর্পিতা একবার নীরার মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কাজ করতে করতে এগিয়ে আসে নীরার কাছে। নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করে,
‘আপনার কি খারাপ লাগছে মেজো ভাবীজান! আপনি না হয় গিয়ে বিশ্রাম নেন! এদিকটা আমি সামলে নিবো।’
নীরা মলিন মুখে হাসে। ছোট্ট করে বলে, ‘সমস্যা নেই অর্পিতা। তুমি যাও কাাজ করো!’

‘আপনি সিউর কোনো সমস্যা নাই?’
নীরা মাথা নাড়ে। অর্পিতা আর কিছু না বলে নিজের কাজ করতে থাকে। নীরা নিজেও মন দিয়ে নিজের কাজ করতে থাকে। এর মাঝে হুট করেই মাছের আঁশটে গন্ধ নাকে আসতেই নীরা পেট চেপে ধরে। এক দৌড়ে চলে যায় কল পাড়! এক পাশে বসে গড়গড় করে বমি করে দেয়। নীরার হঠাৎ এমন ছুটে যাওয়া দেখে অর্পিতা নিজেও পিছু পিছু ছুটে এসেছিলো কিন্তু হঠাৎ করে নীরার এমন বমি দেখে বেশ চমকায়। দ্রুত নীরাকে আগলে নিয়ে মাথা চেপে ধরে এক হাতে। অন্য হাত দিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। নীরা বমি করে ক্লান্ত হয়ে কল পাড়েই বসে পড়ে। অর্পিতা পানি দিয়ে নীরার চোখ মুখ ধুয়ে দেয়। কুলি করায়! চিন্তিত সুরে বলে,

‘কি হয়ছে ভাবীজান? হঠাৎ কি হলো? বমি হচ্ছে কেনো? কাল থেকে কিছু খাননি?’
নীরা মাথা নাড়িয়ে ক্লান্ত গলায় বলে, ‘খেয়েছিলাম!’
এর মাঝেই পেছন থেকে একজন অপরিচিত মহিলা বলেন, ‘কি গো মেজো বউ? তোমার চোখ মুখ দেইখা তো ভালা ঠেকে নাহ। পো*য়াতি নি?’

নীরা আর অর্পিতা দুজনেই চমকে ওঠে। দুজনই অবাক হয়ে নিজেদের দিকে তাকায়। অর্পিতা কথা ঘুরাতে বলে, ‘তেমন কিছু না চাচি! মেজো ভাবী তো অসুস্থ তাই হয়তো এমন হয়ছে!’
মহিলাটি মুখ বাকিয়ে কি যেনো বলতে বলতে চলে যায়। অর্পিতা নীরাকে ধরে তুলে ঘরে নিয়ে যায়। দুজনেই কথাটা এড়িয়ে গেলেও মনের মাঝে খুতখুত রয়েই যাচ্ছে। অর্পিতা আপাতত মাথা থেকে সব বের করে দিয়ে নীরাকে শুইয়ে দেয়। সাবধানে থাকতে বলে নিজে চলে যায় রান্নাঘরে। নীরা একবার সেদিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।

খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে থাকে কিছুটা সময়। মনের ভেতর যেনো হাজার টা প্রশ্নের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। নিজ জায়গা থেকে উঠে আয়নার সামনে বসে। নিজেকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। চোখ মুখ আগে থেকে কালো হয়ে গেছে কিন্তু পরিবর্তন এসেছে অনেক। গত মাস থেকেই শরীরটা খারাপ ছিলো। মাঝে জ্বর, ঠান্ডার কারণে কিছু খেতে পারেনি বলে সে ধরেই নিয়েছে তার বোধহয় এ কারণেই এতো সমস্যা।

গত মাসে তার বিশেষ সময়েও কিছু হয়নি। এটাও সে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলো কিন্তু এই মাসেও যখন সেম ভাবে তার বিশেষ সময় পার হয়ে গেলো অথচ হলো নাহ তখনই মনে সন্দেহ জাগে। আর তারপরই হঠাৎ করে এতো শতো কান্ড ঘটে যায়। নীরা বড় করে শ্বাস নেয়। নিজের পেটে হাত রেখে অনুভব করার চেষ্টা করে। বার কয়েক বড় বড় শ্বাস নিয়ে পেট থেকে হাত সরিয়ে নেয়। চোখ ভরে আসে কান্নায়। বিড়বিড় করে বলে,

‘যে এই পৃথিবী থেকেই চলে গেলো কেবল ২ দিন তারই অস্তিত্ব আবার কি আমার মাঝে মিশে রইলো? এ কেমন ভ’য়ং’কর য’ন্ত্রণা আল্লাহ! যে অনুভূতি একটা মেয়ের সবচেয়ে খুশির কারণ! সেই অনুভূতিই আমার তিক্ত কেনো লাগছে? আমার ভেতরটা পা’ষাণ হয়ে যাচ্ছে কেনো?’

নিবিড়ের জ্বরটা আগের চেয়ে যথেষ্ট কম। নেই বললেই চলে। তবে অর্থির মনটা এখনো বিষণ্ন। নিবিড়কে কোনো কাজ দেয়নি প্রহর। তারা দুই ভাই মিলেই সবটা সামলাচ্ছে। তাই নিবিড় নিজ ঘরে বসে বসেই সময় কাটায়৷ অর্থিও ঘর থেকে বের হয়নি৷ চুপচাপ বারান্দার দরজা ঘেষে বসে আছে। নিবিড় একবার ঘর থেকে উঁকি দিয়ে অর্থিকে দেখে নেয়৷ তারপর নিঃশব্দে অর্থির পেছনে এসে দাঁড়ায়। অর্থি বুঝতেই পারে নাহ। নিবিড় গলা পরিষ্কার করে অর্থির পাশে বসে পড়ে। অর্থি নিবিড়ের দিকে তাকাতেই নিবিড় এক হাতে আগলে নেয় অর্থিকে। অর্থি আলগোছে নিজের মাথাটা নিবিড়ের কাঁধে রেখে চোখ বন্ধ করে থাকে। নীরবতা ভেঙে নিবিড়ই বলে,

‘গত দুদিন থেকেই এমন চুপচাপ বসে আছো! তোমার এমন চুপচাপ স্বভাব আমার ভালো লাগে না মেয়ে! আমার ওপর একটুও মায়া হয় না?’
অর্থি মাথা তুলে ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। নিবিড় হাসে। অর্থির চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলে, ‘এতো বোকা দৃষ্টিতে তাকাও বলেই তো এতোবার তোমার প্রেমে পড়ি!’

অর্থি মাথা নিচু করে নেয়। নিবিড় হাসে৷ মেয়েটা বুঝি বড় হয়ে গেলো! এখন বুঝি অনুভূতিময় কথাগুলো সহজেই বুঝে যায়! অর্থি আর নিবিড় দুজনেই চুপচাপ বসে থাকে। এর মাঝেই বাহির থেকে ডাক পড়ে। নিবিড়ের মা ডাকছে নিবিড়কে। নিবিড় ডাক শুনে বারান্দা থেকে উঠে এসে দরজা খুলে দেয়। অর্থিও মাথায় কাপড় দিয়ে এগিয়ে আসে। নিবিড়কে দেখেই নিবিড়ের মা নিপা বেগম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে। অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘তোর শরীর কেমন এহন আব্বা? একবার বাড়িত যাওন লাগে না? আমি চিন্তায় ম’ইরা যাই।’
নিবিড় হেঁসে বলে, ‘তুমি তো নানি বাড়ি গেছিলে। আসলেই তো কাল! আজ বিকেলেই চলে যাবো বাড়িতে।’
নিপা বেগম মেনে নেয়। ছেলের সাথে হাজারটা কথা বলে পেছনে তাকান। সেখানে অর্থি ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে। নিপা বেগম চোখ মুখ কুঁচকায়।

অর্থিকে সে এর আগেও কয়েকবার দেখেছে। মেয়েটা একদম বোকা আর কথা বেশি বলে। শান্ত ভাবটা তার মধ্যে নেই। তার পছন্দের উল্টো মেয়েটা। শুধু রুপ আর জমিদার মেয়ে ছাড়া আর কোনো দিকই খুঁজে পায় না নিপা বেগম। মেয়েটাকে তার যথেষ্ট অপছন্দ অথচ এই মেয়ের সাথেই তার ছেলের বিয়ে হলো! কিভাবে হয়েছে তাও সে জানে। অর্থির ওপর মনে মনে ভীষণ ক্ষে’পে আছে তিনি৷ তার ধারণা অর্থি নিবিড়কে ফা’সিয়ে বিয়ে করেছে। তাই অর্থিকে দেখতেই তার হাসি হাসি মুখটা তেতোর মতো হয়ে যায়। গম্ভীর স্বরে অর্থিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘শাওড়ি মা রে দেখলো যে সালাম করন লাগে এই বুদ্ধিডাও কি মাথায় অয় নাই? মা এ কিছুই শিখায় নাই তোমারে?’
অর্থি হকচকিয়ে যায়। দ্রুত একটু এগিয়ে এসে মুখেই সালাম দেয়। তাতে যে নিপা বেগম সন্তুষ্ট হলেন না এটা তার মুখ দেখেই বোঝা যায়। নিবিড় পাশ থেকে নিচু স্বরে বলে,
‘আম্মা! ‘ও’ তো ছোট মানুষ। অতো বোঝে নাহ। বাদ দাও!’
নিপা বেগম ছেলের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন, ‘এহন কি তোর লাইগা ছেলের বউয়ের লগে কথাডাও কইতে পারমু না নিবিড়!’

নিবিড় হেঁসে সরে যায়। অর্থি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নিপা বেগম অর্থির কাছে এগিয়ে এসে আগের মতোই গম্ভীর স্বরে বলে, ‘পা এ হাত দিয়া সালাম করন লাগে জানো না!’
অর্থি দৃষ্টি এদিক ওদিক করে বলে, ‘আম্মাজান বলতেন একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারোর সামনে মাথা নত করা উচিত নয়।’

নিপা বেগম মনে মনে ভীষণ ক্ষুদ্ধ হলেন। তবে এই মুহুর্তে কিছু না বলে সবটা গিলে ফেললেন। একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে একদম নিচু স্বরে অর্থির কাছে ঘেঁষে এসে বললেন,
‘কোনডা উচিত আর কোনডা অনুচিত ওইডা না হয় আমি আমার বাড়িত্তে শিখামুনি তোমারে! কয়দিন আর থাকবা বাপের বাড়িত? শান্তিতে থাইকা নেও এরপর আর শান্তির আশা কইরো না।’
অর্থি চমকায়। নিপা বেগম চলে যায়। নিপা বেগমের কথার সঠিক সারমর্ম অর্থি বুঝতে পারেনি। বোকা মেয়েটা বুঝেই উঠেনি তার শ্বশুড়বাড়িতে ঢোকার আগেই অশান্তির বীজ বোনা হয়ে গেছে!

গ্রামের সব মানুষের খাওয়া দাওয়া শেষ। চৈত্রিকা নিজেও খেয়ে নিয়েছে। এরপর ঘরে ঢুকেছে আর বের হয়নি। বের হতে মূলত ভালোও লাগছে না তার। সাথীর মৃ’ত্যুর পর তার সবকিছুই বিষাদ লাগে। আচ্ছা আমাদের কাছের মানুষগুলো হারিয়ে যায় কেনো? কেনো তারা আজীবন আমাদের সাথে থাকে না? চৈত্রিকার প্রশ্নগুলোর উত্তর যেনো আপনা আপনিই আসে, ‘মানুষ কখনো আজীবন বাঁচে না।

জন্ম হলে মৃ’ত্যু নিশ্চিত এটাই নিয়তি। এই সত্যকে মেনেই আমাদের আজীবন বাঁচতে হয়। সবাই কখনোই থাকে নাহ। কে কোথায়, কিভাবে হারালো তা ধরে না রেখেই আমাদের এগোতে হয়। বাঁচতে হয়! ভালো থাকতে হয়!’ চৈত্রিকা দীর্ঘশ্বাস নেয়। অভিযোগ করার জায়গা নেই। কার কাছে, কার ওপর করবে অভিযোগ? চৈত্রিকার ভাবনার মাঝেই প্রহরের ক্লান্ত কন্ঠ ভেসে আসে,

‘খেয়েছো চৈত্র?’
চৈত্রিকা এক পলক তাকায় প্রহরের দিকে। ঘামে ভেজা ক্লান্ত চোখ মুখ। প্রহরের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ছোট্ট করে জানান দেয় যে সে খেয়েছে। প্রহর আর কিছু না বলে নিজের শার্ট খুলে বিছানায় শুয়ে পড়ে। ঘুমে চোখ দুটো বুজে আসছে যেনো! চৈত্রিকা আড়চোখে প্রহরের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে বলে,
‘অনিম ভাই এসেছে?’

প্রহর চোখ বন্ধ করে চোখের ওপর হাত রাখে৷ ওই অবস্থাতেই বলে, ‘এখনো তো আসেনি। আসবেও না বোধহয়!’
চৈত্রিকা ভাবলেশহীন ভাবে বলে, ‘আসবে। আমাকে নিতে আসবে অনিম ভাই।’
প্রহর অবাক হলো। চোখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে উঠে পড়ে। চৈত্রিকার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধায়, ‘তোমাকে নিতে আসবে মানে?’

‘নিতে আসবে মানে নিতে আসবে। আমি ওই শহরেই আবার যাচ্ছি।’
প্রহরের হুট করেই ভীষণ রাগ হলো। চৈত্রিকার মনের দিকটা বুঝেই সে এই ৩ দিন চুপচাপ মেনে নিয়েছে সব। তার মানে তো এই না যে চৈত্রিকা তাকে ছেড়ে কিংবা তাাকে না বলেই শহরে চলে যাবে আর সেটা সে মেনে নিবে! চৈত্রিকার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে নিজের দিকে ফিরায়। চোখ মুখ ততক্ষণে শক্ত হয়ে গেছে। চৈত্রিকা অনুভূতিশূণ্যের মতো চেয়ে রয় প্রহরের মুখ পানে। প্রহর বড় বড় শ্বাস নিয়ে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে বলে,

‘কোথায় যাবে তুমি? কেনো যাবে?’
চৈত্রিকা হেসে বলে, ‘ভয় নেই জমিদার সাহেব! আমি বিশ্বাসঘা’তকের মতো ছেড়ে যাবো নাহ। শুধু ক’দিনের জন্য একটু ওখানে থাকতে যাবো। তারপর চলে আসবো!’
প্রহর ছেড়ে দেয় চৈত্রিকাকে৷ চোখ থেকে ঘুম উবে গেছে। এই কঠিন চৈত্রিকা কবে বুঝবে তাকে হারানোর ভয়ে এই পা’ষাণ পুরুষ দিনে দিনে ভেতরে ভেতরে ম’রণ য’ন্ত্রণা সহ্য করেও উপরে চুপচাপ গম্ভীর হয়ে আছে! নাহ এই মেয়েটি কখনোই হয়তো বুঝবে নাহ।

অনেকক্ষণ দুজন ওভাবেই বসে থাকে। এর মাঝেই বাহির থেকে ডাক আসে। অনিম এসেছে তাই চৈত্রিকার ডাক পড়েছে। চৈত্রিকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে যায়। ঘরের দরজার সামনে গিয়েও দাঁড়িয়ে যায়। শান্ত কন্ঠে বলে,
‘আপনার আর আমার মাঝে দূরত্ব বেড়েছে জমিদার সাহেব। সাথীর মৃ’ত্যুর পর আপনার আর আমার দূরত্ব হয়েছে আকাশ পাতাল। আমি তো আপনাকে বিশ্বাস করেছিলাম কিন্তু আপনি আমার বিশ্বাসটা ভাঙলেন কেনো?’

প্রহর অবাক কন্ঠে বলে, ‘আমি তোমার বিশ্বাস ভেঙেছি? তোমার ধারণা সাথীর মৃ’ত্যুর পেছনে আমার হাতও..!’
চৈত্রিকা তাচ্ছিল্য করে হাসে। চোখের কোণা জলে ভরে আসে। বলে, ‘সাথী বলেছিলো আপনি আর পিয়াস রেনওয়াজ মিলে সব করছেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি। আপনাকে বিশ্বাস করেছি। আচ্ছা মহুয়া বুবু আর পিয়াস দুজন মিলেই তো আপনাকে ঠ’কিয়েছিলো! তবে আপনি মহুয়া বুবুকে শা’স্তি দিলেন পিয়াস রেনওয়াজকে কেনো দিলেন না?’

‘আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম এবং এখনো আছি। জমিদাররা প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে না আর তা যদি হয় প্রহর রেনওয়াজ তবে তার কাছে ন্যায় অ’ন্যায়ের মতো প্রতিজ্ঞা রাখাটাও ভীষন জরুরি।’
চৈত্রিকা হাসে। কথা না বাড়িয়ে উল্টো ঘুরে চলে যেতে নেয়৷ প্রহর পেছন থেকে ডাকে। চৈত্রিকা ফিরে তাকাতেই প্রহর অদ্ভুত কন্ঠে বলে,

‘তোমার জমিদার সাহেব বিশ্বাসঘা’তক নয়। তুমি যদি খানিকটাও আমার ভালোবাসা বুঝতে চৈত্র তবে তোমার কাছে আমি বিশ্বাসঘা’তক না হয়ে, ঘৃ’ণা না পেয়ে তোমার ভরসার স্থান হতাম। শুধু ভালোবাসলেই হয় নাহ চৈত্র ভালোবাসার মর্ম হিসেবে বিশ্বাসটাও আঁকড়ে ধরে রাখতে হয়।

চৈত্রিকা পর্ব ৪৫

ভালোবাসার মানুষকেও ধরে রাখতে হয়। হেলায়, ভুলে হারিয়ে ফেললে আর কখনো পাওয়া যায় নাহ। আমি তোমার সাথে আজীবন ভালোবেসে কাটাতে চেয়েছি কিন্তু তুমি না চাইলে আমি তোমাকে জোড় করতে পারি নাহ। করবোও নাহ। তোমার মন চাইলে মুক্ত হয়ে যেতে পারো।’

চৈত্রিকা পর্ব ৪৭