চৈত্রিকা পর্ব ৪৭

চৈত্রিকা পর্ব ৪৭
বোরহানা আক্তার রেশমী

কেটেছে প্রায় ১৫ দিনের মতো। জমিদার বাড়ি আর আগের মতো নেই। অর্থির বিদায় হয়েছে মিলাদের পরেরদিনই। একই গ্রাম হওয়ার পরও অর্থির সে কি কান্না! পল্লবীকে ছেড়ে সে কিছুতেই যাবে নাহ। কোনো রকমে জোড় করে পাঠানো হয়েছে। চৈত্রিকা ৩/৪ দিনের মতো শহরে ছিলো। তারপর আবার ফিরে চলে আসছে। প্রহর আর চৈত্রিকার মাঝে দূরত্ব বেড়েছে বেশ অনেকটা।

এতো সবের মধ্যে শুধু ঠিক আছে চিত্র আর অর্পিতা। কাল তারা শহরে চলে যাবে। দুজনেরই পড়ালেখা আছে। কতদিন আর এখানে থাকা যায়! তাছাড়া এখানে সবাার মুখ দেখলে দুজনেরই কষ্ট হয়। পল্লবীই দুজনকে শহরে চলে যেতে বলেছে। নীরা ডাক্তার দেখিয়ে সিউর হয়েছে সে সত্যিই প্রেগন্যান্ট। এই কথাটা গত ১৫ দিনে সে কাউকেই জানায়নি। মূলত ভয় পাচ্ছে বিষয়টা কে কিভাবে নিবে!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পিয়াস মা’রা গেছে ১ মাসও হয়নি এর মাঝেই এতো বড় একটা খবরে সে নিজেই এলোমেলো হয়ে গেছে। আজ নীরার বাড়ির লোকজনও আসবে তাকে নিয়ে যেতে। যেখানে পিয়াসই নেই সেখানে অল্পবয়সী বিধবা মেয়েকে তারা রাখবে কেনো? অযথাই মেয়ের জীবন ন’ষ্ট না করে তারা মেয়েকে আবার বিয়ে দেবে! নীরা এই কথা শোনার পর থেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েছে। কি করবে আর কি করবে না ভেবেই হয়রান হয়ে যাচ্ছে।

নিজের ঘরে বেশ অনেকক্ষণ পায়চারী করে আর থাকতে পারে না নীরা। বিষয়টা নিয়ে সরাসরি চৈত্রিকার সাথে কথা বলা উচিত ভেবেই ছুট লাগায় চৈত্রিকার ঘরের দিকে। প্রহর তখন বাহিরে গেছে। হয়তো কোনো কাজে! ঘরে চৈত্রিকা একাই বসে ছিলো। নীরা ঘরে কড়া নাড়ে। চৈত্রিকা দরজা খুলে দেখে নীরা। চৈত্রিকা কিছু বলার আগেই নীরা দ্রুত ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে চৈত্রিকার হাত আঁকড়ে ধরে বলে,

‘আপনার সাথে জরুরী কথা আছে ভাবীজান!’
‘আচ্ছা আচ্ছা! কি কথা আছে তা বলবেন কিন্তু এতো উত্তেজিত হচ্ছেন কেনো বুবু?’
নীরা বড় বড় শ্বাস নেয়। চৈত্রিকা নীরাকে বিছানার ওপর বসাতেই নীরা শান্ত কন্ঠে বলে, ‘আমি প্রেগন্যান্ট ভাবীজান!’
চৈত্রিকা চমকায়। একটু জোড়েই বলে ওঠে, ‘কিহহ!’

নীরা ভয় পায়। চৈত্রিকা নিজের অবাকতা কাটানোর চেষ্টা করে হেঁসে বলে, ‘এটা তো ভালো খবর! কবে পেলেন এই সুখবর? একবারও জানালেন না তো বুবু!’
‘২ মাস চলছে। জেনেছিলাম মিলাদের দিন। পরে ডাক্তার দেখিয়ে সিউর হয়েছি।’
‘এতোদিন পর বলছেন এতো ভালো খবর?’

নীরাা চুপ করে থাকে। ভীষণ কান্না পায় তার। কিছুক্ষণ ওভাবে চুপ থাকে। চৈত্রিকা বোঝে নীরার মনে নিশ্চয় কিছু চলছে! মেয়েটা চিন্তিত। হয়েছে টা কি আসলে? চৈত্রিকা নিজেও আলগোছে নীরার সামনে চেয়ার টেনে বসে। নীরা মাথা নিচু করে বলে,

‘ভালো খবর টা কি আসলেই ভালো ভাবীজান? উনি মা’রা গেছে কেবল ১৫ দিন। আমি ২ দিনের দিন জানতে পেরেছি। এটা যে কি বেদনাদায়ক তা কি বোঝাতে পারি? এই বাচ্চাটা আরো আগে আসলে হয়তো উনি শুধরে যেতেন! আবার হয়তো যেতেন না। কিন্তু উনি নিজের সন্তানের খবরটাও পেলেন না। এটার য’ন্ত্রণা আমি কেমন করে বোঝাবো?’
চৈত্রিকা হাতে হাত চেপে বসে থাকে। সে নিজ হাতে একটা অনাগত সন্তানকে অনাথ করে দিয়েছে। তারই বা কি করার ছিলো! পিয়াস যে পরিমাণ অ’ন্যায় করেছে তাতে এই শা’স্তিটুকু তার প্রাপ্য ছিলো। চৈত্রিকা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মাথা নিচু করে রাখে। নীরা ব্যস্ত গলায় বলে,

‘আমি কিন্তু আপনাকে কোনো দোষ দিচ্ছি না ভাবীজান। আপনি যা করেছেন তা কারোর না কারোর করারই ছিলো। তাছাড়া এটা আমার ভাগ্যে ছিলো।’
চৈত্রিকা শান্ত স্বরে বলে, ‘যা হয় তা ভালোর জন্যই হয় বুবু। কে বলতে পারে! পিয়াস বেঁচে থাকলে আপনার এই সন্তানকে নিজের মতো জ’ঘন্য বানাতো না! চয়ন রেনওয়াজ নিজ হাতে নিজের ছেলেকে যেভাবে অন্যায় শিখিয়েছে পিয়াস রেনওয়াজও যে তা করতো না তার কি নিশ্চয়তা ছিলো?’

নীরা চুপ থাকে। কিছুটা সময় দুজনে ওভাবেই বসে থাকে। চৈত্রিকা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বলে, ‘আচ্ছা নিচে চলেন! এতো ভালো সংবাদ সবাইকে জানাতে হবে তো নাকি!’
নীরা আতকে ওঠে। আতঙ্কে হাত চেপে ধরে চৈত্রিকার। দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বোঝায় ‘না’। চৈত্রিকা বুঝতে পারে নাহ নীরার ব্যবহারের মানে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই নীরা ভয়ে বলে,

‘আমার মনে হয় না এই বিষয়টা সবাই স্বাভাবিক ভাবে নিবে! আমি জানি নাহ আদৌও মানুষ আমার বাচ্চাটাকে সঠিক ভাবে নিবে কি না!’
‘মানে কি?’
‘মানুষ এমনই ভাবীজান। যেহেতু উনি মা’রা গেছে তাই কারোরই বলতে বাঁধবে না এটা উনার সন্তান না!’
নীরার কন্ঠ কেঁপে ওঠে। চৈত্রিকা ফুঁসে ওঠে। কন্ঠের জোড় বাড়িয়ে বলে, ‘কেনো বলবে? আমরা জানি সত্যটা।’
নীরা চুপ করে থাকে। চৈত্রিকা নীরার হাত ধরে বলে, ‘চলেন নিচে যাবো! এসব ভেবে যত নিজেকে গুটিয়ে নিবেন ততই মানুষ পার পেয়ে যাবে। শক্ত হোন! নিজের লড়াই নিজে লড়তে শিখেন!’

নীরা কান্না ভেজা চোখে তাকিয়ে বলে, ‘আমার সাথেই এমন কেনো হলো ভাবীজান?’
‘যা হয় তা ভালোর জন্যই হয় বুবু। আল্লাহ কিছু কেড়ে নিয়ে আবার কিছু দিয়েও দেন! আপনার ভালোবাসা কেড়ে নিয়ে হয়তো বাঁচার জন্য অবলম্বন দিলেন তিনি! আপনি আঁকড়ে ধরে রাখুন।’

অর্থির আজ ভাতের ফ্যান ঢালতে গিয়ে হাতে পড়ে হাত পু’ড়ে গেছে। জীবনে রান্নাঘরে না যাওয়া মেয়েটা এ’কদিনে যথেষ্ট ভুলের ওপর ভুল করেই গেছে আর নিপা বেগম কথা শুনিয়ে গেছেন। এই সংসারে পা রাখার পর অর্থির বোঝা হয়ে গেছে তার কপালে সুখ নেই। আগের সেই চঞ্চল, বোকা অর্থি এখন যথেষ্ট কম কথা বলার চেষ্টা করে।

নিবিড়ের সাথেও মেপে মেপে কথা বলে। কখন কোথা থেকে শ্বাশুড়ি এসে ক’টু কথা শোনাবে এই ভয়েই! হাতে ভাতের ফ্যান পড়ার সাথে সাথেই অজান্তে অর্থির মুখ থেকে ‘ওমাগো’ বের হয়ে আসে। ছুটে আসে নিপা বেগম। অর্থি কান্না ভেজা চোখে হাতটা ততক্ষণে পানিতে চুবিয়েছে। কি ভীষণ জ্বা’লা পো’ড়া যে করছে! নিপা বেগম রান্নাঘরে এসে নিচে ভাতের ফ্যানের সাথে কিছুটাা ভাত পড়া দেখে ক্ষে’পে উঠলেন। রাগে কটমট করতে করতে বলতে শুরু করলেন,

‘কোনো কামডাই তোমারে দিয়া হয় না। সামান্য দুইডা ভাত রানতো দিছি তাও তুমি পারতাছো না! মা এ কি খালি খাওয়াইয়া আর খোলা ষা’ড়ের মতো ছাইড়া দিয়াই বড় করছে? আর কিছুই শিখায় নাই? আমার কত্তডি ভাত ন’ষ্ট করলা? ভাতের ফ্যানডিও তো ছাগলরে দেওয়া যাইতো হেইডাও ন’ষ্ট করলা! এখন পানির মধ্যে হাত রাইখা ঢঙ না কইরা জলদি এগুলা পরিষ্কার করো!’

অর্থির গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করলো। মানুষ কি আদৌও এতো পা’ষাণ হয়! তার হাত পু’ড়ে গেছে এটা একবারও না দেখে ভাতের ফ্যানটাই চোখ পড়লো! নিপা বেগম তখনো নিজের মতো বলতেই আছেন। অর্থি এক হাতে চোখ মুছে নিয়ে পু’ড়া হাত বের করে নেয়। দাঁতে দাঁত চেপে পুরো জায়গাটা পরিষ্কার করে। যতটা স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে ঠিক ততটাই কান্না আসে। নিজের বাড়ির কথা ভীষণ মনে পড়ে তার!

সব মেয়ে সত্যিই তার বাবার বাড়িতে রাজকন্যার মতো বড় হয় আর সে তো স্বয়ং জমিদার কন্যা। ৩ ভাইয়ের একমাত্র আদরের বোন ছিলো। কখনো একটা কুটোও যার নাড়তে হয়নি তাকে পুরো সংসার সামলাতে হয়। যে মেয়েটা একটু ব্যাথা পেলেই মায়ের আঁচল ধরে কেঁদেছে কিছুদিন আগেও সেই মেয়েটার চোখের জল দেখার মতো কেউ নেই। অর্থি নিজের ভেতরের দীর্ঘশ্বাস গুলো নিজের মাঝেই গিলে নেয়।

চুপচাপ পো’ড়া, ক্ষ’ত হাতটা নিয়েই সব কাজ করতে থাকে। এর মাঝেই সন্ধ্যার আযান হয়। অর্থি সব গুছিয়ে ঘরে তুলে হাত মুখ ধুয়ে ওজু করে নেয়। পো’ড়া হাতে পানি ঠেকলেই মনে হচ্ছে জান বের হয়ে যাবে কিন্তু কিছু করার নেই। নামাজ আদায় করে ঘরের মাঝেই চুপচাপ বসে থাকে। কতক্ষণ পরই নিবিড় ঘরে আসে। অর্থি পো’ড়া হাতটা ওড়নার আড়ালে রাখে। ঘামে ভেজা চুপচুপে, ক্লান্ত শরীরটা টেনে এনে অর্থির পাশে বসে। ক্লান্ত গলাতেই বলে,

‘এক গ্লাস পানি দিবে অর্থি!’
অর্থি মাথা নাড়িয়ে ব্যস্ত গলায় বলে, ‘এক্ষুণি আনছি!’
অর্থি ছুটে গিয়ে কলপাড় থেকে এক গ্লাস পানি এনে দেয়। নিবিড়কে দিয়ে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে থাকে। নিবিড় ক্লান্ত ভঙ্গিতেই হাসে। অর্থি চিন্তিত গলায় বলে,
‘অনেক ক্লান্ত লাগছে মাষ্টারমশাই?’

নিবিড় সন্তুষ্ট চিত্তে হেঁসে বলে, ‘উহু একদমই নাহ। এই বোকা মেয়েটার বোকা বোকা মুখ দেখলেই আমার সকল ক্লান্তি উবে যায়।’
অর্থি মাথা নিচু করে নেয়। এই যে সারাদিন এতোকিছুর পর সেও তো এই মানুষটার নীড়েই শান্তি পায়! সকল য’ন্ত্রণার সমাপ্তি হয়ে যায় এই মানুষটার দিকে তাকালেই। নিবিড় এক হাতে অর্থির হাত টেনে পাশে বসিয়ে দেয়। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে,

‘এই যে মেয়ে! তোমার মাষ্টারমশাইয়ের চাকুরী হয়ে গেছে। এবার দুজনের ছোট্ট একটা শান্তির নীড় হবে। যেখানে সুখ উড়ে বেড়াবে চারপাশে!’
অর্থি হাসে। নিজেও উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে, ‘আলহামদুলিল্লাহ।’
‘কিন্তু একটা সমস্যা আছে!’

নিবিড়ের দমে যাওয়া গলা শুনে অর্থির মুখ থেকেও হাসি মিলিয়ে যায়। অর্থি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে নিবিড় বলে, ‘শহরে হয়েছে। আমার ওখানেই থাকতে হবে। আপাতত তোমাদের নিয়ে যেতে তো পারবো নাহ।’
‘এতে মন খারাপ করার কি আছে? বাড়িতে কি আসবেন না নাকি!’
‘আসবো তাও মাস শেষে। হয়তো ২/১ দিনের জন্য।’

অর্থি দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেয়। মুখে যত যায় বলুক তার মন শায় দেয় না নিবিড়কে দুরে পাঠাতে! এ সংসার তার জন্য এমনিই ভ’য়ং’কর এরওপর নিবিড় না থাকলে তার তো ম’রে যেতে হবে! কত কত দিন সে তার মাষ্টারমশাইকে দেখতেও পাবে নাহ। এসব ভেবেই ভীষণ কান্না,

পেলো তার। কোনো মতে নিজেকে সামলে ‘আপনাকে খাবার দিচ্ছি’ বলে উঠে যেতে নিলে নিবিড় অর্থির পো’ড়া হাতটাই চেপে ধরে৷ ব্যাথায় অর্থির মুখ থেকে আর্তনাদ বেড়িয়ে যায়। নিবিড় হঠাৎ এমন আর্তনাদে ভয় পেয়ে হাত ছেড়ে দেয়। অর্থি হাত আগলে নিয়ে চোখ মুখ খিঁচে থাকে। নিবিড় এগিয়ে এসে আগে হাতটাই দেখে। পো’ড়া জায়গা দেখে চমকে যায়! খপ করে হাত ধরে বলে,

‘তোমার হাতে কি হয়ছে? পু’ড়ে গেছে? কিভাবে? এতক্ষণ বলোনি কেনো?’
অর্থি কোনো কথার জবাব না দিয়ে হাত সরিয়ে নেয়। হাত অনবরত কাঁপতে থাকে। নিবিড় আঁকড়ে ধরে অর্থিকে৷ আদুরে হাতে মাথায় হাত বুলায়। অর্থি ঠোঁট চেপে কান্না আটকায়। নিবিড় ফের প্রশ্ন করে,
‘হাত পু’ড়লো কিভাবে?’

অর্থি ভাঙা গলায় ছোট্ট করে জবাব দেয়, ‘হাতে ভাতের ফ্যান পড়েছিলো!’
‘কিভাবে পড়লো? আম্মা ছিলো না? তুমি তো এসব পারো নাহ। আম্মাকে বললেই তো আম্মা করে দিতো!’
অর্থি জবাবে কোনো টু শব্দই করে নাহ। নিবিড় অর্থিকে বিছানার ওপর বসিয়ে দিয়ে বলে, ‘তুমি বসো! আমি আম্মার সাথে কথা বলে আসি!’

আতঙ্কে সাথে সাথেই নিবিড়ের হাত চেপে ধরে অর্থি। চট করে বলে, ‘কি বলবেন?’
নিবিড় কপাল কুঁচকে উত্তর দেয়, ‘কি বলবো আবার? এমনিই কথা বলবো। তুমি এমন করতেছো কেন? কি হয়ছে বলো তো!’

অর্থি হাত ছেড়ে দেয়। নিবিড় দুমিনিট ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে অর্থির উত্তরের আশায়। কিন্তু অর্থি জবাব দেয় না। তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেই এগিয়ে যায় নিপা বেগমের ঘরের দিকে। নিপা বেগমের ঘরের দরজায় টোকা দিতেই তিনি দরজা খুলে দেন। নিবিড় হাসি মুখে বলে,
‘আম্মা খাইছো? আব্বা খাইছে?’

নিপা বেগম ছেলের গালে হাত বুলিয়ে দেন। বলেন, ‘নাহ আব্বা খাইছি নাহ এহনো। তুই খাইবি নাহ?’
‘হুম খাবো। আসো! একসাথে খাই!’
নিপা বেগম মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন। নিবিড় হাত মুখ ধুতে গেলে নিপা বেগম ৩ জনের জন্য খাবার বাড়েন। এরপর নিপা বেগম, নিবিড়ের বাবা শামীম আহমেদ আর নিবিড় খাওয়া শুরু করে। খাওয়ার এক পর্যায়ে কথায় কথায় নিবিড় নিচু গলাতেই বলে,

‘আম্মা! অর্থি তো জমিদার বাড়ির মেয়ে। ‘ও’ কখনো রান্না ঘরে যায় নাই ওরে একটু কম কম কাজ দিয়ে সব না হয় শিখিয়ে নেও। মেয়েটা আজ হাত পু’ড়িয়ে ফেলেছে। তুমি একটু সব কাজ….’
এটুকু বলতেই নিপা বেগম খাওয়া ছেড়ে ফুঁসে উঠলেন। তার ছেলে বউয়ের হয়ে কথা বললো বিষয়টা তিনি মানতে পারলেন নাহহ। গলার স্বরের জোড় বাড়িয়ে বললেন,

‘তোর বউরে কি জোড় কইরা কাম করাই নি আমি? হেই নিজ ইচ্ছাতেই তো করে! এহন নিজে হাত পু’ড়াইয়া আবার নিজেই আমার পোলার কানে আমার নামো বি’ষ ঢালা শুরু করছে! আমার সংসারে আয়ছে ১৫ দিনও হয় নাই আর হেই মাইয়া এহনই আমার পোলারে আমার থেইকা ছিন্না নিতাছে!’
নিবিড় শান্ত হয়ে বলে, ‘আম্মা এমন কিছু নাহ। অর্থি আমারে কিছু বলে নাই৷ তুমি একটু আস্তে বলো! শুনতে পেলে মেয়েটা কষ্ট পাবে।’

চৈত্রিকা পর্ব ৪৬

নিপা বেগম শুনলেন না। শামীম আহমেদ ধমক দিলেও কোনো কাজ হলো নাহ। আরো জোড়ে তিনি যা তা বলতে থাকলেন। ঘর থেকে সবকিছুই শুনে অর্থি। চোখের কোণ বেয়ে জল গড়ায় আপনমনেই। বিড়বিড় করে আওড়ায়,
‘ভালোবাসা পাওয়ার এতো সুখ!’

চৈত্রিকা পর্ব ৪৮