চৈত্রিকা পর্ব ৫১

চৈত্রিকা পর্ব ৫১
বোরহানা আক্তার রেশমী

জমিদার বাড়ির পুকুরপাড়ে লা’শ দুইটি তোলা হয়েছে। লা’শ দুইটা দেখেই সবার মুখের কথা হারিয়ে গেছে। একটি লাা’শ নাসিমার আরেকটা সা’দিকের। সাদিকের গায়ে অসংখ্য মা’রের দাগ। সাথে কা’টা ছেড়া আছেই৷ লা’শটা সম্ভবত সারারাত পানিতে থাকায় ফুলে উঠেছে। নাসিমার গায়ে কোনো রকম চিহ্ন নেই।

শুধু ফুলে উঠেছে লা’শ। অনেকক্ষণ এক নাগাড়ে পানিতে ডুবে থাকায় দুজনের মুখটাই ফ্যাকাশে হয়ে গেছে৷ চয়ন গম্ভীর হয়ে বসে আছে পুকুরপাড়ের শান বাঁধানো উচু জায়গায়। প্রহর চোখ মুখ শক্ত করে হাত দুটো পেছনে রেখে টান টান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে নাসিমা আর সাদিককে। চৈত্রিকা কতক্ষণ সাদিকের লা’শের দিকে তাকিয়ে থেকে প্রহরের মুখপানে চেয়ে রইলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সে জানে না সাদিককে কে এবং কেনো মা’রলো! তবে তার দৃঢ় বিশ্বাস এর পেছনে প্রহরের গভীর সম্পর্ক আছেই। চৈত্রিকা শুধু তাকিয়েই রইলো। প্রহর একবারও তার দিকে তাকালো নাহ। নিজ মনে লা’শ দুটিকে দেখতে থাকলো। পল্লবী শান্ত হয়ে তাকিয়ে আছে। অর্থি সাদিককে দেখে ভয় পেয়েছে। তাই তাদের থেকে খানিকটা দুরে নিবিড়ের সাথে দাঁড়িয়ে আছে সে। নিবিড় স্বাভাবিক। যেনো সে জানতো সবই। অর্থি খিঁচে দাঁড়িয়ে নিবিড়ের টি-শার্ট আঁকড়ে ধরে। আতঙ্কিত কন্ঠে বলে,

‘কাকার চোখ মুখ এতো ভ’য়ং’কর হলো কেমন করে মাষ্টারমশাই? পানিতে ডু’বে মা’রা গেলে কি চোখ মুখ এমন হয়? উনাকে কি কেউ খুব মে’রেছে?’
নিবিড় শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। অর্থির চোখে চোখ রেখে শীতল কন্ঠে বলে, ‘তুমি তাকিও না ওদিকে। কিছু সময় পা’পের সাজা এমনই হয়।’

অর্থি বুঝতে পারলো নাহ। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। পল্লবী নীরাকে এই অবস্থায় পুকুরপাড়ে আসতে দেয়নি তাই সে আপাতত বাড়ির হল রুমেই আছে। নিবিড় একবার বাড়ির সদর দরজার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে বলে,
‘মেজো ভাবী একা না? উনার এই সময় এই অবস্থায় একা রাখাটা ঠিক হবে নাহ। তুমি ভেতরে যাও অর্থি! এখানে থাকলে ভয় পাবে।’

অর্থি একবার দ্বিমত করতে চাইলেও করে নাহ। নিবিড়ের টি-শার্টের কোণা ছেড়ে দিয়ে আস্তে করে পা বাড়ায় সদর দরজার দিকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ঘাড় ফিরিয়ে একপলক দুরের সাদিক নাসিমাকে দেখে বিড়বিড় করে বলে,
‘জমিদার বাড়িতে শুধু মৃ’ত্যুর গন্ধ। একের পর এক মৃ’ত্যুতে বাড়িটা মৃ’ত্যুপুরী হয়ে গেছে যেনো!’

চলে যায় অর্থি। নিবিড় ঘাড় বাঁকিয়ে সেদিকে তাকিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত গুজে এগিয়ে যায় প্রহরের দিকে। প্রহরের থেকে সামান্য দূরত্ব রেখে দাঁড়াতেই প্রহর চোখ তুলে তাকায়। চোখে চোখে দুজনে হাসে। চৈত্রিকা দেখে, অবাক হয়। নিবিড়! ফ্যালফ্যাল করে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায়। পরক্ষণেই দৃষ্টি নামিয়ে সত্যটা গিলে নেয়। এর মাঝেই তার গালে ক’ষে থা’প্প’ড় পড়ে। থা’প্প’ড়ের শব্দে সবাই অবাক হয়। প্রহর হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তাকায়। চয়ন থা’প্পড় মে’রেছে তাকে। চৈত্রিকা অবাক হয়ে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই চয়ন রাগী স্বরে বলে,

‘তোমার কি লাজ, লজ্জা, দয়া, মায়া কিচ্ছুই নাই? নিজের মা’কে নিজ হাতে মা’রতে পারলে? তোমার হাত কাঁপলো না?’
চৈত্রিকা চোখ মুখ শক্ত করে। ভেবে নেয় কঠিন জবাব দেবে। কিন্তু তার আগেই পল্লবী অবাক হওয়ার ভান করে বলে, ‘ওর মা মানে? কি বলতেছেন এগুলা? ওর মা কে?’

চয়ন হকচকিয়ে যায়। চৈত্রিকার দৃষ্টিও শীতল হয়ে যায়। পল্লবী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। নিবিড় শ্বাশুড়ির কথায় কথা মিলিয়ে নিজেও বলে, ‘আসলেই তো! বড় ভাবীজানের মা কে আব্বাজান?’
চয়ন গ্যারাকলে পড়ে যায়। সে ভাবে সত্যিটা বলে দিতে দোষ নেই। এখন তো সাদিক আর নাসিমা মা’রা গেছেই। কিন্তু পরক্ষণেই নিজ মনের সাথে মস্তিষ্কের দ্বন্দ লেগে যায়।

সত্যটা সবার সামনে প্রকাশ করে দেওয়াটা বোকামো মনে হয়৷ তাছাড়া প্রহর নিজেই এখানে উপস্থিত। প্রহরের ধূূর্ততা সম্পর্কে সে অবগত। সাদিক, নাসিমার সত্য সামনে আসলে চয়নের নিজের সত্যটাও যে আড়ালে থাকবে না তা সে হাড়ে হাড়ে বুঝে যায়। পল্লবী জবাব না পেয়ে ফের শুধায়,
‘কি হলো? কিছু বলতেছেন না কেনো? বড় বউয়ের মা কে?’
চয়ন আমতা আমতা করতে থাকে। চৈত্রিকা শীতল কন্ঠে বলে, ‘চুপ করে আছেন যে আব্বাজান! বলুন সবাইকে আমার মা কে?’

চয়ন ধমকে ওঠে। আমতা আমতা ছেড়ে কোনো রকমে বলে, “মা না হোক। মায়ের মতো তো নাকি! নাসিম তো তোমার মায়ের মতোই ছিলো তাহলে তুমি ওরে মা’রলা কেমনে? আর সাদিকরে কেমনে মা’রলে? তোমার এতো সাহস বাড়ছে!’
এ পর্যায়ে মুখ খোলে প্রহর। যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো ঠিক সেভাবেই দাঁড়িয়ে রয়। কন্ঠ মাত্রাতিরিক্ত শীতল করে বলে, ‘প্রমাণ আছে আব্বাজান? কাল চৈত্রিকা পায়ে আ’ঘাত পেয়ে ঘরেই ছিলো। ‘ও’ যে কাকা, কাকিকে মে’রেছে এটা কি কেউ দেখেছে? নাকি কোনো প্রমাণ আছে?’

চয়ন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। প্রহর শান্ত, স্বাভাবিক। ছেলের এতো শান্ত স্বভাব চয়নের হজম হলো নাহ। তার মতো করে তো এই ছেলেকে কেউ চেনে না। নিজের গম্ভীর দৃষ্টি দ্বারা প্রহরের পা থেকে মাথাা অব্দি পর্যবেক্ষণ করে নেয়। নিজেও দু হাত পেছনে নিয়ে টান টান হয়ে দাঁড়ায়। কন্ঠের তেজ ধরে রেখে বলে,
‘তুমি কবে থেকে বউয়ের আঁচল ধরে কথা বলতে শিখলে প্রহর? আর চয়ন রেনওয়াজের যে কোনো প্রমাণ লাগে না এটা তুমি ভালো করেই জানো। তোমার বউ পায়ে ব্যাথা পেয়েছে কিভাবে? কাল যখন আমরা কেউ ছিলাম না তখন সে কেথায় ছিলো?’

প্রহরের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। তবে নিজের পিতার দিকে চোখ তুলে তাকায় নাহ। চৈত্রিকা বুকের ওপর হাত আড়াআড়ি করে দাঁড়ায়। নিজের কন্ঠের শীতলতা ধরে রেখে সহজ গলায় বলে,
‘পায়ের ওপর ফুলদানি পড়ে পা কে’টে গিয়েছিলো এজন্যই ব্যাথা ছিলো আব্বাজান। আর যদি বলেন কাকিকে মা’রার কথা! তাহলে আমার যদি কাউকে মা’রতেই হয় নিশ্চয় এভাবে সুন্দর করে মা’রবো নাহ। কাকির গায়ে একটা দাগও নেই মা’রের। আমি উনাকে মা’রিনি। তাছাড়া উনার যা মানসিক অবস্থা ছিলো তাতে উনি যে নিজেই পুকুরে ঝা’প দিয়ে নিজের প্রাণ নেননি তার কি কোনো মানে আছে? বিকেল বেলাতেও যখন সাদিক কাকা বেঁচে ছিলেন তখন আমার সাাথে উনাার দেখাও হয়নি৷ সারারাত আমি ঘরেই ছিলাম। আপনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করে দেখেন! সব কিছুর দো’ষ আমার ওপর চাপাবেন না আব্বাজান।’

চয়ন কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। মিনিট খানেক চুপ থেকে কিছু ভাবে। এরপর অবাক চোখে প্রহরের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘প্রহর! তুই!’
প্রহর একটুও বিচলিত হয় নাহ। নিজের আব্বাজানের চিন্তাধারা ধরতে পেরে স্বাভাবিক গলায় বলে, ‘আমি নিজের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করি না তা আমার চেয়েও আপনি বেশ ভালো করেই জানেন আব্বাজান।’
প্রহর দাড়ায় নাহ। নিজের জায়গা প্রস্থান করে। চৈত্রিকা একবার ঘাড় ফিরিয়ে সেদিকে তাকায়। ভ্রু কুঁচকে মনে মনে হাসে। তবে প্রশ্ন রয়েই যায় কিসের প্রতিজ্ঞা! কিসের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার কথা বলছে প্রহর? চৈত্রিকা চয়নের দিকে তাকায়। পল্লবী এগিয়ে এসে বলে,

‘অন্তত নিজের ছেলেরে সন্দেহ করা বন্ধ করেন। যতক্ষণ না শিমুল, শায়লা, অর্পিতা, চিত্র ওরা আসছে ততক্ষণ দাফন কাফনের কাজ তো হবে না অন্তত উঠানে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।’
পল্লবী চলে যায়। পিছু পিছু নিবিড়ও চলে যায়। চয়ন বুঝে ওঠে না কি করবে! তার চতুর মস্তিষ্ক তাকে বার বার বলছে ‘এই কাজ একমাত্র চৈত্রিকা আর প্রহর ছাড়া কারোর দ্বারা সম্ভব নয়। ওরা আ’গুন। ওরাই পারবে একমাত্র পাপকে ঝ’লসে দিতে কিন্তু সত্যটা সবার সামনে আসবে কি করে?’ তার ভাবনার মাঝেই চৈত্রিকা গলা পরিষ্কার করে শান্ত ভাবে বলে,
‘এতো কিছু না ভেবে নিজেকে নিয়ে ভাবেন শ্বশুরআব্বা! আপনার সব অ’পক’র্মের সঙ্গীরা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে। এরপর বেঁচে আছেন আপনি একা। পা’পের মাথা! বাঁচেন কতক্ষণ এটা আগে দেখেন!’

নাসিমা আর সাদিকের মৃ’ত্যুর খবর শুনে বাড়িতে সবাই এসেছে। নীরার বাবা-মাও আরো একবার এসেছে নিজের মেয়েকে বোঝাতে। নীরা ভেবেছিলো তাকে এবার তার বাবা মা বুঝবে কিন্তু তাকে মি’থ্যা প্রমাণিত করে ফের একই কথা তুলেছেন। এতো কিছু মেনে নিতে পারে নাহ সে। তাই চুপচাপ সবাইকে ফেলে নিজের ঘরের দরজা আটকে বসে আছে। এক হাত নিজের পেটে রেখে মন দিয়ে নিজের সন্তানকে অনুভব করছে।

অর্পিতা, অর্থি, পল্লবী, শায়লা সবাই একসাথে আছে। অর্পিতা ছোট ভাই অয়নও এসেছে। এতোকিছুর মাঝে সে ভয় পাবে বলে চিত্র তাকে নিয়ে দুরে রেখেছে। চয়ন, শিমুল নিজের ভাইয়ের কবর খননের ব্যবস্থা করছে। নিবিড় আর চিত্র এক পাশে বসে সব দেখছে। তাদের কোনো আগ্রহ নেই এসবে। চিত্র যথেষ্ট জানে তার কাকা কেমন ছিলো! কিন্তু নাসিমার মৃ’ত্যু রহস্যটা সে বুঝে ওঠে নাহ। প্রহরকে বাহির থেকে ঘরে যেতে দেখে চৈত্রিকাও পিছু পিছু যায়। ঘরের দরজা আটকে সরাসরি দাঁড়ায় প্রহরের সামনে। প্রহর শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

‘তোমার পায়ের ব্যাথা কমেছে? এভাবে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছো কেনো?’
চৈত্রিকা কপালে ভাজ ফেলে তাকায়। মাথা উচু করে প্রহরের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে,
‘আপনি সাদিক কাকাকে মে’রেছেন তাই না? মা নিজেই পুকুরে লা’ফ দিয়েছিলেন কিন্তু সাদিক কাকা! উনাকে তো আমি বিকেলের পর দুচোখেও দেখিনি মা’রা অনেক দুরের ব্যাপার। আপনি করেছেন এসব তাই না?’
প্রহরের মুখভঙ্গি স্বাভাবিক। চৈত্রিকার কপালের ওপর পড়ে থাকা চুলে ফু দেয়। চৈত্রিকা চোখ বন্ধ করে নেয়। প্রহর চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে, ‘কিছু সত্য জানতে হয় না বউজান। কিছু সত্য গোপনে যত্ন করে রেখে দিতে হয়।’
‘সত্য কখনো গোপনে থাকে না জমিদার সাহেব।’

প্রহর বাঁকা হাসে। চৈত্রিকার কথার পিঠে কোনো জবাব দেয় নাহ। হামি তুলে বসে বিছানায়। শার্টের কলার টেনে বিরক্তির গলায় বলে, ‘চৈত্র ফ্যানের পাওয়ারটা বাড়াও তো! একটু বেশিই গরম লাগতেছে যেনো!’
চৈত্রিকা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। প্রহরের কথা শুনলোও না, জবাবও দিলো নাহ। কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ঘরের মাঝ বরাবর। প্রহর বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে। খানিকটা বাদেই বুঝতে পারে চৈত্রিকা তার কথা শোনেনি। চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ঠোঁট কামড়ে হাসে প্রহর। কতক্ষণ ওভাবে থেকে কন্ঠের শীতলতা ফিরিয়ে আনে। অত্যাধিক শীতল কন্ঠে ছোট্ট করে আওড়ায়,

‘এতো শতো পা’পের শা’স্তি প্রাপ্যের খাতায় রেখেও আমার বউজানকে কেউ গা’লি দেওয়ার মতো সাহস দেখালে তাকে বেঁচে থাকতে দেই কেমন করে? তার একেক সেকেন্ডের নিঃশ্বাসের গতি আর আমার শিরায় শিরায় বি’ষ ঢালার অনুভূতি একই।’

চৈত্রিকা থমকায়। অবাক হয়। নির্বাক দৃষ্টিতে চেয়ে রয় প্রহরের দিকে। চোখে মুখে কাঠিন্যতা স্পষ্ট। তবুও শান্ত হয়ে শুয়ে আছে। চোখ জোড়া তার এখনো বন্ধ। হয়তো চোখ মেললেই দেখতে পেতো তার বউজানের স্তব্ধ হওয়া দৃষ্টি। নাকি চোখ বন্ধ করেই অনুভব করছে? কি জানি! চৈত্রিকা দৃষ্টি এদিক ওদিক করে। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় প্রহরের কাছে। প্রহরের পায়ের কাছটাই বসে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। নিজেকে স্বাভাবিক করতে বড় বড় শ্বাস নেয়। মিনিট তিনেক বাদে বলে,

‘আপনি কখন করলেন এসব? আর..আর আমাকে একবারও জানালেন না কেনো?’
‘তুমি কিছু করার আগে আমাকে জানাও চৈত্র? তাছাড়া কাকার পা’পটা দিন দিন একটু বেশিই বেড়ে যাচ্ছিলো। ভাবলাম বউজানেরও সাহায্য হবে আর দুনিয়া থেকে আরেকটা পা’প কমবে। তোমার শ’ত্রু পক্ষ এবার ১ এর কোঠায়! যার পা’পের রাজ্য বিশাল বড়। এবারে নিজের শেষ শ’ত্রুর মোকাবেলা তোমার নিজের করতে হবে।’
প্রহরের সহজ জবাব। চৈত্রিকা ফের জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি কোন প্রতিজ্ঞায় সীমাবদ্ধ জমিদার সাহেব?’

প্রহর চোখ মেলে তাকায়। সরাসরি চৈত্রিকার দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে বলে, ‘আমরা জমিদার বংশের পুত্র চৈত্র। আমাদের অ’ন্যায়, জু’লুম শিক্ষার সাথে সাথে প্রতিজ্ঞা করানো হয় যেনো আমরা নিজেরা নিজেদের প্রাণ কে’ড়ে না নিই। জমিদার বংশের কেউ কাউকে মা’রার দুঃসাহস করতে পারবে নাহ। ভাই ভাইকে, ছেলে বাবাকে, ভাতিজা কাকাকে কিংবা ভাই বোনকে আ’ঘাত করবে নাহ। আর প্রহর রেনওয়াজ নিজের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে পারে নাহ। তার কাছে নিজের প্রতিজ্ঞা মানে বিশাল এক দায়ভার।’
‘তাহলে কাল?’

প্রহর মাথার নিচে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে আবারও। ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলে, ‘আ’ঘাত করা যাবে না তবে বুদ্ধি দিয়ে মা’রা যাবে না বিষয়টা এমন না বউজান। যদিও নিজেদের ওপর বুদ্ধি খাটানোর নিয়ম নেই আমাদের তবুও মাঝে মাঝে নিয়ম ভঙ্গ করতেও মজা। আমি তো কাকাকে ছুঁয়েই দেখিনি। ইশশশ! নিজের হাতে কাকার জিভ কে’টে নিতে পারলে শান্তি পেতাম। প্রশান্তিতে মন, প্রাণ, শিরায় শিরায় ভরে উঠতো।’

চৈত্রিকা অবাক হয়৷ প্রহরের একের পর এক কথাতে যেনো তার মাথা ভন ভন করে ঘুরছিলো। পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে ব্যস্ত গলায় বলে, ‘আপনাকে সাহায্য করেছে কে জমিদার সাহেব?’
প্রহর এ প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে আগের মতোই হাসে। স্বাভাবিক কন্ঠে বলে, ‘নিজের বুদ্ধি, বিচক্ষণতা কাজে লাগাও বউজান!’

চৈত্রিকা পর্ব ৫০

চৈত্রিকা মাথায় চাপ দিয়ে ভাবতে থাকে। সব কিছু মিলিয়ে তার মাথায় একটাই নাম আসে। চোখ পিটপিট করে বলে ওঠে, ‘নিবিড় ভাইজান!’

চৈত্রিকা পর্ব ৫২