জলকাব্য পর্ব ৬ || লেখিকা:সুরাইয়া আয়াত

জলকাব্য পর্ব ৬
লেখিকা:সুরাইয়া আয়াত

” আপনি ওনার কে হন? ওনার হাজবেন্ড কি ?”
শ্রাবনকে উদ্দেশ্য করে ডক্টর গুপ্তা বলে উঠলেন ৷
শ্রাবন কিছু বলতে যাবে তার আগেই নীলু বলে উঠলো
” নাহ নাহ উনি আমার কাজিন, আমার হাজবেন্ড রুদ্র আহমেদ ৷”
শ্রাবন নীলুর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে ডক্টরের দিকে তাকালো ৷ ডক্টর বেশ সাবলীল ভাবেই তাকিয়ে বললেন
” সে ঠিক আছে, বাট এখন ওনার কিছু টেস্ট করাতে হবে তার জন্য এখন আপনাকে বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে

” ওকে নো প্রবলেম ৷” কথাটা বলে শ্রাবন বেরিয়ে যেতে নিলেই নীলু বলল
” শ্রাবন ভাইয়া , আমি ঠিক আছি, চাইলে তুমি ফিরে যেতে পারো তাছাড়া আজকে তো আর রিপোর্ট দিচ্ছে না ৷”
শ্রাবন মুচকি হেসে বলল
” আমি অপেক্ষা করছি , কোন সমস্যা নেই নীলু, রিলেক্স ৷”
নীলুও একটু শ্রাবনের হাসির সাথে তাল মেলানোর চেষ্টা করলো ৷ সেই কখন থেকে কত রকমের অভিনয় নীলু করে চলেছে কেবল মাত্র সত্যিই টা যেন চাপা থাকে সেই জন্য , কিন্ত সত্যি যে সত্যিই হয় তাকে চেপে রাখা কখনো সম্ভব নয় সেটা নীলু যদি বুঝতো !

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নানা ধরনের মেশিন দিয়ে আর কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে নীলুর পরিক্ষা নিরীক্ষা করছে ডক্টর আর একজন মহিলা হেল্পার ৷ স্কুলে থাকতে নীলু সায়েন্সের স্টুডেন্ট ছিলো, নিউট্রেশন এ অনার্স ছিলো, সেকেন্ড ইয়ারে পড়তে পড়তেই বিয়ে হয়ে যাই তাই সবকিছুকে বুঝে ওঠার বেশি সময় পাইনি ৷
শ্রাবন ওর থেকে 4বছরের বড়ো , নীলু যখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়তো ততদিনে শ্রাবন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স কমপ্লিট করেছিলো, পরে আর এম এ করার ওর কোন ইচ্ছা ছিলো না, টুকটাক গানের প্যাশানটা নিয়ে ভাবতে লাগলো ৷ পড়াশোনার গতিপ্রকৃতি বেশি দুর না গড়ানোয় নিজের শরীরের পতিক্রিয়া স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক যেটা বোঝার ক্ষমতা নীলুর নেই ৷

দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নিয়ে নীলু চোখ বন্ধ করলো ৷ নিজেকে খুব অস্থির লাগছে, মনটা কেমন যেন আনচান আনচান করছে, এখন যদি কেউ ওর হাতটা শক্ত করে ধরতো তাহলে হয়তো মনোবল পেত ৷
বেশ অনেকক্ষন পরীক্ষা নিরীক্ষার শেষে নীলু রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ায আগে ডক্টরের দিকে ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
” রিপোর্ট কবে পাবো ডক্টর ?”
” বেশিখন লাগবে না, এই তো 2 ঘন্টার মধ্যেই পেয়ে যাবেন ৷ কিন্তু আই থিংক আপনার বেবিটা হয়তো আর ডেভোলপ করবে না ৷ ”

নীলুর সারা শরীর কেঁপে উঠলো ৷ওর আশঙ্কাটাই কি তাহলে ঠিক ?ওর বেবিটা আর নেই, নীলুর চোখ মুখের করুন অবস্থা , চোখগুলো টানটান হয়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম, হাতের শিরা গুলোতে টান ধরে যেন অসম্ভব এক ব্যাথা অনুভব হচ্ছে, পা দুটোও যেন চলবে না আর ৷ ডক্টর নীলুর চোখ মুখের অবস্থা দেখে বলল
” সরি টু বাট, রেজাল্ট এমন হওয়ার আশঙ্কাটাই বেশি ৷ আপনি বললেন যে দুবার পড়ে গেছেন, আর আপনার চোটটাও বেশ গুরুতর আই নোটিস্ড , সেই ধারনা থেকেই বলছি ৷ বাট নিরাশ হবেন না ৷”

নীলু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি জানিয়ে বেরিয়ে এলো ৷ বাইরে এসে দেখলো শ্রাবন দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে , গেলে চিন্তার ভঙ্গিতে হাত দিয়ে চুপচাপ বসে আছে ৷
বেবিটা আর হয়তো নেই ব্যাপারটা মানতে ভীষন কষ্ট হচ্ছে, ওটাই তো ওর বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বর ছিলো যাকে আঁকড়ে ধরে নীলু বাঁচতে চেয়েছিল ৷
নীলু চুপিসারে শ্রাবনের পাশে গিয়ে বসল, শ্রাবন হয়তো কোন গভীর ভাবনায় মগ্ন তাই নীলুর উপস্থিতি ও এখনো বুঝতে পারেনি ৷ নীলু খানিকখন থেমে বেশ থমথমে গলায় বলল

” তুমি আজ কনসার্ট টা মিস করলে কেন শ্রাবন ভাইয়া ?”
নীলুর কন্ঠে চমকে উঠলো শ্রাবন, পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে নীলু ৷ নীলুকে দেখে শ্রাবনের মুখের চিন্তার রেশটা যেন আরো কয়েকগুন বেড়ে গেল ৷
ও বেশ মিনমিন কন্ঠে বলল
” ডক্টর কি বলল রে নীলু ?”
নীলু শ্রাবনের দিকে মুচকি হেসে বলল
” বেবিটা হয়তো আর নেই শ্রাবন ভাইয়া ৷”

কথাটা শুনে শ্রাবনের সারা শরীরটা যেন কেঁপে উঠলো, এমন কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও নীলুর মুখে ফিচেল হাসি, কতোটা মনোবল থাকলে এরকম একটা পরিস্থিতিতে একটা মেয়ে এতটা শক্ত থাকতে পারে তা নীলুকে না দেখলে শ্রাবন জানতেই পারতো না ৷ নীলু শ্রাবনের চোখমুখের অবস্থা দেখে শ্রাবনের হাত থেকে ওর ব্যাগটা দেওয়ার জন্য ইশারা করলো ৷
শ্রাবন এক প্রকার ঘোরের মধ্যে আছে, আজ নীলুর সন্তানটাকে ও নিজের হিসাবেই কল্পনা করছে, আজ যদি সন্তান টা ওর আর নীলুর হতো তাহলেও তো শ্রাবন ঠিক এমনটাই কষ্ট পেতো ৷শ্রাবন নীলুর হাতে ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে আবার নিশ্চুপ হয়ে বসে পড়লো , এই মূহুর্তে নিজেকে সামলে কীভাবে নীলুকে শান্তনা দেবে তা শ্রাবন জানেনা, মনের মাঝে হাজারো কল্পনা জল্পনা চলছে ৷ আচ্ছা রুদ্র কি এটা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেবে ? নানাধরনের প্রশ্নর ভাজ পড়েছে শ্রাবনের কপালে ৷
নীলু ব্যাগ থেকে জলের বোতলটা বার করে শ্রাবনের দিকে ধরে বলল

” নাও জল খাও ৷ ডক্টর এখনো কনফার্ম হয়ে কিছু বলেননি ৷ আরো 2 ঘন্টা পর রিপোর্ট পাওয়া যাবে ৷ তাই তুমি চলে যাও ভাইয়া , আমি রিপোর্ট নিয়ে একা চলে যাবো ৷”
শ্রাবন জলটা খেলো না, নীলুর দিকে থতমত মুখ করে চেয়ে একবার শুকনো ঢোক গিললো , জলটা খেলে হয়তো পিপাসাটা মিটতো ৷জলটা না খেয়ে , পাশ থেকে গিটারের ব্যাগটা নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল ৷ নীলুর দিকে একবার ফিরেও তাকালো না ৷ নীলু শ্রাবনের যাওয়ার দিকে ছলছল চোখ করে তাকালো, সবাই এতোটা স্বার্থপর কেন? বিপদে কারোর পাশে দাঁড়ানোটা বুঝি বড্ড অপরাধের ?

নীলু চোখের কোনা থেকে জল মুছে সামনের দিকে তাকালো , মনের মধ্যে হাজারো ভয় এসে জমা হচ্ছে, ওর বাচ্চাকে হারানোর ভয়, রুদ্রকে হারানোর সাথে সাথে ওর ছোট্ট সংসারটা হারানোর ভয় ৷ চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে ৷ 2 ঘন্টা পর ডক্টরের দেওয়া রিপোর্ট কার্ডই যেন ওর আগামী জীবনের গতিপ্রকৃতিকে বর্ননা দিতে পারবে এমন ৷ নীলু বারবর চোখের জল মুছছে আর সামনের দিকে তাকাচ্ছে, আশেপাশের দু একজন ওর দিকে তাককচ্ছে কিন্ত ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস পাচ্ছে না ৷
বারবার নীলুর চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে আসছে , নিমেষেই কয়েকদিনের মধ্যেই যেন সম্পর্ক আর পরিস্থিতি বড্ড এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ৷

” কিরে তুই কোথায়? এতখন ফোন করলাম ধরলি না যে ৷ তোকে সেই থেকে ফোন করছি আমি, জানিস কতো চিন্তাই আছি ! তোকে একটা ভালো খবর দেওয়ার জন্যই এতখন ধরে ট্রাই করলাম ৷”
শ্রাবন চোখের জলটা হাতের তালু দিয়ে মুছে নিজের কন্ঠটাকে স্বাভাবিক করে বলল
” কি হয়েছে বলো ৷”
উনি উত্তিজত কন্ঠে বললেন
” তোর ওই পোগ্রাম টা তো আজ ক্যান্সেল হয়ে গেছে রে , ওটা 28 তারিখ নাগাদ হবে ৷ কিন্ত তোর কন্ঠটা এমন শোনাচ্ছে কেন রে ?কেমন ভাঙা ভাঙা লাগছে ৷”
শ্রাবন নিজেকে শক্ত করে নিয়ে বলল
” কই না তো এমনিই ৷ আর প্রোগ্রাম হবে কিন্তু আমি কি পারবো?আমার মনে হয় না আমি পারবো ৷”
” এসব কি বলছিস তুই ৷ এসব চিন্তা দূর কর আর তাড়াতাড়ি বসায় আই, খাবর বাড়ছি আমি ৷”
“হমম ৷”

” যেটা বলাই হলো না, নীলু মায়ের খবর কি ? ডক্টর কি বললো ?”
শ্রাবনের চোখ দিয়ে আবার অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়ল ! নীলু কীভাবে সহ্য করছে এত কষ্ট ?
শ্রাবন ওর মায়ের থেকে বিষয়টা লুকানোর জন্য বলল
” মা দু ঘন্টা হতে চলল,নীলু একা বসে আছে, আমি এখন যাই, আর একটু পরই বাসায় ফিরছি ৷রাখি ৷”
কথাটা বলে শ্রাবন ফোনটা কেটে দিলো ৷ চোখটা তাড়াতাড়ি মুছে , ঘাসে ভরা মাঠ থেকে গিটার টা নিয়ে দৌড়ালো নীলুর কাছে ৷ নীলুর মনের এই অশান্ত বিক্ষোভের মাঝে নিজের কষ্টটাকে দেখিয়ে শ্রাবন আর নীলুর কষ্টটা বাড়াতে চাইনি তাই ওখান থেকে তখন চলে এসেছিলো , তাছাড়া ও নিজেকেও সামলাতে পারছিলো না ৷

শ্রাবন দৌড়ে গিয়ে দেলো নীলু যেখানে ছিলো সেখানে নেই, চারিপাশে নীলুকে খুঁজেও পেলো না ৷ না পেরে চেম্বারের ভিতর ঢুকে ডক্টরকে জিজ্ঞাসা করলো
” ওই তে মেয়েটা টেস্ট করতে এসেছিলো নীলু সরি সারিকা নীলাজ্ঞনা নামের মেয়েটা তিনি কি রিপোর্ট নিয়ে চলে গেছেন ডক্টর?”
“হমম এই তো পাঁচ মিনিট মতো হলো উনি চলে গেছেন ৷ আপনি তো ওনার সাথে এসেছিলেন তাহলে আপনার সাথে ওনার দেখা হয়নি ?”
শ্রাবন অপরাধীর সুরে মাথা নাড়ালো ৷
একটু জিজ্ঞাসু সুরে বলল
” আচ্ছা ওনার রিপোর্টে কি এসেছে বলতে পারেন?”

” হমম তা তো বলতেই পারি,বলতে খারাপ লাগছে বাট ওনার ফিটাস(বেবি)ডেভোলপ করার আগেই মিসক্যারেজ হয়ে গেছে ৷নেক্সট,টাইম একটু সাবধানে চলাফেরা করতে বলবেন আর ওনার ফিটাস এর এজ ছিলো আড়াই মান্থ তাই আমি কিছু মেডিসিন দিয়েছি যেগুলো খেলেই হবে ,বেশি অসুবিধা হবে না ৷”
“আচ্ছা ৷”
শ্রাবন মাথা নীচু করে সেখান থেকে চলে এলো ৷ নীলুর এই সময়ে নীলুর পাশে থাকতে না পেরে অপরাধী বলে মনে হচ্ছে ওর ৷

শ্রাবন দৌড়ে রাস্তার দিকে এলো, ভাবলো নীলু যদি এখনো কোন গাড়িতে না ওঠে তাহলে তো নীলুর সাথে দেখা হবে এই ভেবে ৷ যেই ভাবা সেই কাজ,তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে রাস্তার দিকে আসলো ৷ বাস স্ট্য৷ন্ড চত্তরে নীলুকে পেলো না, চারিপাশে একটু চোখ বুলাতেই দেখলো নীলু বমি করছে , দূর থেকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে শরীর ক্লান্ত, শরীরে শক্তিটুকুও নেই ৷ শ্রাবনের থেকে নীলুর দূরত্বটা বেশ ভালোই দূর ছিলো ৷ শ্রাবন নীলুর কাছে যেতেই দেখলো নীলু চোখে মুখে জল দিয়ে একটা বেঞ্চে বসে আছে ৷ চোখ বন্ধ করে আছে নীলু, হয়তো বড্ড ক্লান্ত ৷ শ্রাবন নীলুর কাছে গিয়ে ওর কাধে হাত দিতেই নীলু কেঁপে উঠলো ৷ পিটপিট করছ শ্রাবনের দিকে তাকালো ৷ শ্রাবনের চোখজোড়া লাল, নীলু আধো আধো স্বরে বলল

” তুমি এখানে ভাইয়া , বাসায় যাওনি ?”
শ্রাবন খানিকটা ঢোক গিলে বলল
” আমি এখানেই ছিলাম, ডক্টরের কাছে গিয়ে দেখলাম তুই রিপোর্ট নিয়ে চলে এসেছিস তাই এখানে এলাম ৷ মন খারাপ ? ভেঙে পড়ছিস ? নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে হতভাগা মনে হচ্ছে? মনে হচ্ছে কি যে ,কপাল টা অন্য রকম হলে মন্দ হতোনা ?”
নীলু এবার মাথা নীচু করে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো ৷
ও এখন কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই ৷
শ্রাবন বলে উঠলো

” জীবনে যতই খারাপ সময় আসুক না কেন তুই আমাকে সবসময় তোর পাশে পাবি ৷ এটুকু মনে রাখিস ৷ এখন বাসায় চল সব ঠিক হয়ে যাবে ৷”
নীলু ওর ওপরের ঠোঁট দিয়ে নীচের ঠোঁট চেপে ধরে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে তবুও পারছে না ৷ খারাপ সময় বলে তা কি এতটাও খারাপ হওয়ার প্রয়োজন ছিলো?

রাত 10.30,,,,
“কোথায় আপনি ?”( ক্লান্ত কন্ঠে )
” আমি কোথায় সেটাও এখন থেকে কি তোমাকে বলতে হবে ? “( ঝাঝিয়ে)
” কেন বলবেন না ? আমি কি আপনার কেউ না ?”
রুদ্র খানিকটা হেসে বলল
” তোমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে ৷ চাই না তোমাকে আর ৷”
” আচ্ছা বিবাহিত জীবনে যৌন চাহিদায় কি আসল ? ভালোবাসা বলে কি কোন কিছু হয়না?”
রুদ্র তাচ্ছিল্যর সুরে হেসে বলল
” নিজের শরীরটার দিকে তাকাও তাহলে বুঝবে ৷”
নীলু শান্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেসু সুরে বলল

” আচ্ছা একটা কথা বলুন তো মিঠি কি আজীবন এমনই সুন্দরী থাকবে ? ওর কি কখনো বার্ধক্য নেমে আসবে না ? ওর শরীরের সুন্দর চামড়াগুলোতে কি কখনো বয়সের ভাজ পড়বে না ?”
রুদ্র ধমক দিয়ে বলল
” একদম চুপ ‌ ৷ নিজের সাথে মিঠির তুলনা করো কোন সাহসে ৷ ওর সাথে তুমি কখনো পেরে উঠবে ?”
নীলু চোখের জল মুছে বলল
” আজ তাহলে ফিরবেন না বলছেন?”
” নাহ ফিরবো না, সারারাত মিঠির সাথে থাকবো ৷”
কথাটা বলে নীলুর মুখের ওপর ফোনটা কেটে দিলো ৷
নীলু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চোখের জলটা মুছে মিঠির নাম্বারে কল করলো

” প্রথম বার কেউ ফোন তুলল না,দ্বিতীয়বারের বেলায় মিঠি ফোন ধরলো
” হমম নীলু বলো ৷ কেমন আছো?”
নীলু মিঠির কথার জবাব না দিয়ে বলল
” আচ্ছা মিঠি আমাকে একটা কথা বলোতো ৷ সারজীবন কি তুমি তোমার এই রুপ আর যৌবন ধরে রাখতে পারবে ?”
মিঠি খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল
” কি বলছো এসব , আর এমন কথা কেন হঠাৎ!”
” আচ্ছা একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সংসার ভাঙতে তোমার লজ্জা করে না ? আজ আমার জায়াগায় নিজেকে কখনো কল্পনা করে দেখেছো?বোঝো ঠিক কেমন কষ্টটা হয় ? পরের সংসার ভেঙে কেউ কখনও সুখী হয়না ৷ আমার স্বামীকে দয়া করে

জলকাব্য পর্ব ৫

মুক্তি দাও , ভালো থাকতে দাও আমাদের , আর নিজেও জীবন শুরু করো ৷”
মিঠি এবার খানিকটা গলা ভারী করে বলল
” এটা সম্ভব না নীলু, আমি রূদ্রকে ভালোবাসি, তুমি ওর জীবনে না এলে আমিই থকতাম ওর জীবনে ৷ তাই ওর লাইফে তোমাকে বিয়ে করার মতো ছোট্ট ভোকামোকে কিভাবে তাড়াতাড়ি সরানো যাই সেটা ভালো ভাবেই দেখবো আমি ৷ পারলে তুমি নিজে সরে যাও ৷ আর পারলে নিজেকে একটু মেইনটেইন করো তাতে করে যদি ভালো কোথাও তোমার লাকটা লেগে যাই ৷”

কথাটা বলে তাচ্ছিল্য করে ফোনটা কেটে দিলো মিঠি ৷
নীলুর মুখটা থমথমে ৷ তবে জীবনের কাছে ও হেরে যাবে না ৷ প্রতিটা মনুষের জীবনের কোন ঘটনার মাঝে একটা তাৎপর্য আছে তেমনি নীলুও জীবনেও আছে ৷ এই সমাজে অধিকার নিয়েই ও বাঁচবে , কারোর মুখাপ্রেক্ষী হয়ে থাকবে না ৷

জলকাব্য পর্ব ৭