ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২০

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২০
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

❝আমাকে বিয়ে করলে কি হয় ডাক্তার ম্যাডাম?❞
সিফাত তুমি চুপ করবা একটু।সবসময় এমন ফাজলামি ভালো লাগে না।
–আমি কিন্তু ফাজলামি করছি না।খুবই সিরিয়াস আমি।এখন পর্যন্ত বিয়ে করছি না তোমার অপেক্ষায় বসে আছি তবুও কি তোমার মন গলে না?

তানিশা সিফাতের কথা শুনে চিল্লায়ে বললো,এই আপু তোর দেবর কে একটু চুপ করতে বলবি?দেখা হলেই শুধু ওনার বিয়ের কথা।আমার কিন্তু ভালো লাগে না এসব।
তানিয়া সেই কথা শুনে বললো,তো কি করবে?এরকম বিবাহ উপযুক্ত অবিবাহিত মেয়ে ঘরে থাকলে ছেলেরা একটু আধটু বিরক্ত করবেই।সেজন্য তাড়াতাড়ি মেয়েদের বিয়ে করে নেওয়া উচিত।
এই বলে তানিয়া সিফাতকে বললো,তুই আবার এসেছিস কেনো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–ভাইয়া আসতে বললো।
তানিয়া তখন বিড়বিড় করে সোহানকে গালমন্দ করতে লাগলো। এই ছেলের যদি একটু বুদ্ধি থাকতো।আজ পাত্র পক্ষ তানিশাকে দেখতে আসবে আর উনি এই পাগলাটাকেও ডেকেছেন।পাত্রপক্ষের সামনে কি উল্টাপাল্টা কথা বলবে কে জানে?
সিফাত তখন বললো ভাবি তুমি কি কিছু বললে আমাকে?
–না তো?তুই একটা কাজ করতে পারবি?
–কি কাজ ভাবি?
–কিছু জিনিস আনতে হবে।একটু এনে দেনা?
সিফাত তখন বললো আচ্ছে ঠিক আছে।কি আনতে হবে বলো শুধু।
তানিয়া তখন তার মাকে বললো মা সিফাতকে একটু বাজারের ব্যাগটা দাও তো।আজকের বাজার ওই করবে।
শিউলি বেগম সেই কথা শুনে বললো,কি বলছিস এসব?সিফাত কেনো বাজার করবে?তোর বাবা পরে গিয়ে করে নিয়ে আসবে।

তানিয়া তখন চোখ বড় বড় করে বললো,বাবা আজ আর কখন যাবে বাজারে?বাসায় মেহমান আসতেছে। সবার সাথে কথা বলতে বলতেই তো সারাদিন চলে যাবে।
এই বলে তানিয়া নিজেই ব্যাগটা সিফাতের হাতে দিলো আর তার হাতে একটা এক হাজার টাকার নোটও দিয়ে দিলো।
সিফাত বুঝতে পারলো তার ভাবি হয় তো খুশি হয় নি সে আসাতে।সেজন্য এভাবে তাড়াচ্ছে বাসা থেকে।সে তো এমনিতেই একটু ফাজলামি করে তানিশার সাথে।তাছাড়া সে ভালো করেই জানে তানিশা তাকে কখনোই বিয়ে করবে না।কই তানিশা একজন ডাক্তার।আর কই সে নিজে একজন সামান্য ফটোগ্রাফার। সিফাত মন খারাপ করে খরচের ব্যাগ হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।সে কিন্তু মন থেকে বিয়ের কথা বলে না।নিছক শুধু মজা করে।আর তানিশা তা শুনে রেগে যায়।এটাই ভালো লাগে সিফাতের।

এদিকে তানিয়া যখন সিফাতকে বিদায় করে তানিশার কাছে আসলো তখন তানিশা বললো,
এই আপু কি শুরু করেছিস বল তো তোরা?আবার কোন পাত্রকে ধরে এনেছিস?বিকাল পাঁচটায় আমার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা অপারেশনের রোগী আছে।আমি কিন্তু পাত্রী সেজে ওদের সামনে এভাবে বসে থাকতে পারবো না।
তানিয়া তখন ঘড়ির দিকে তকিয়ে বললো বিকাল চার টার আগেই তোকে অফিস পাঠিয়ে দেবো।তুই জাস্ট দশ মিনিট একটু সময় দেস আমাদের। এখন সুন্দর একটা নতুন জামা পরে আয়।আর সাথে একটু হালকা সাজগোজ করবি।।ওনারা যা জিজ্ঞেস করবে তার উত্তর দিবি।ব্যস কাজ হয়ে গেলো।বাকিটা আমি আর তোর দুলাভাই সামলাবো।

তানিশা আর কোনো কথা বললো না।কারণ এদের কে বুঝিয়ে কোনো লাভ নাই।এরকম দুই একদিন পর পর এরা কই থেকে যেনো এদের ধরে নিয়ে আসে।যাদের কে দেখলে বিয়ে করা তো দূরের কথা কথা বলতেই ইচ্ছা করে না।সবাই যে অসুন্দর বা আনস্মার্ট এমন কিন্তু নয়।যথেষ্ট পার্সোনালিটি আছে সবার।সবাই অনেক হ্যান্ডসামও।ভালো ভালো পেশায় নিযুক্ত সবাই।আসলে মনের মধ্যে অন্য কোনো ছেলেকে তানিশা বসাতেই পারছে না।কোনো পাত্র দেখতে আসলে সবার আগে তার নোমানের চেহারা ভেসে ওঠে।মনে হয় সেই চশমা চোখে দেওয়া মুখ গোমড়া ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে আছে।আর তাকে বার বার বলছে প্লিজ বলো আমাকে ভালোবাসো কিনা?শুধু একটিবার বলো ভালোবাসার কথা।
তানিশার কানে আজও নোমানের ওই কথাগুলোই শুধু বাজে।

তানিশা নোমানের মতো আর কাউরে খুঁজে পায় নি।সে মনে করে এরকম করে আর কেউ তাকে ভালোবাসতে পারবে না।আর সে নিজেও নোমানের জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে পারবে না।
সবার রিকুয়েষ্ট এ তানিশা রেডি হয়ে আসলো।জাম কালারের একটা জামা পরলো সে। যেটা পুরাটাই এক কালারের ছিলো।আর সাথে ম্যাচিং করে জাম কালারের প্রিন্টের পায়জামা আর ওড়না।তানিশা তার চুলগুলো আজ আর ছেড়ে দিলো না।মাথার কাঁকড়া দিয়ে বেধে রাখলো।কারণ যে গরম পড়েছে তার মধ্যে চুল ছেড়ে দিলে ভীষণ অস্বস্তি লাগবে তার।
তানিশা রুম থেকে বের হতেই হঠাৎ তানিয়া তানিশাকে ধরে আবার তাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিয়ে গেলো।

আর বললো তুই তো বাসাতে থাকলেও এর থেকে ভালো সাজগোছ করিস।আর আজ পাত্রপক্ষ আসার কথা শুনে বুড়িদের মতো মাঝখানে সিথি করে খোপা বেঁধে এসেছিস?এই বলে তানিয়া এক টানে তানিশার মাথার খোঁপা খুলে ফেললো।আর চুলগুলো ছেড়ে দিলো।তারপর সাদা পাথর বসানো বড় বড় দুইটি কানের দুল পড়িয়ে দিয়ে তার সাথে ম্যাচিং করে গলাতেও একটা পাথর বসানো মালা পড়িয়ে দিলো।ঠোঁটে হালকা করে ব্রাউন কালারের লিপিস্টিক লাগাতে ভুললো না তানিয়া।তানিশার লুকটা মুহুর্তের মধ্যে পালটে গেলো।

আসলে তানিশা সেই আগের মতোই সুন্দর আছে।তার সৌন্দর্য এখনো সবার নজর কাড়ে।সেই হাসি,সেই কথাবার্তা সবকিছু একই রকম থাকলেও শুধু গায়ের কালার টা একটু মলিন হয়েছে।তবে সেই আগের মতোই চিকনা আছে।সারাদিন এতো পরিশ্রম করে আর এতো পেরেশানির মধ্যে তাকে থাকতে হয় যে সবসময় ক্লান্ত ক্লান্ত লাগে তাকে।সেজন্য একটু অবসর পেলেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।আসলে যত কষ্ট করে পড়াশোনা করে সে ডাক্তার হয়েছে এখন আবার ততো পরিশ্রম করেই তাকে টাকা ইনকাম করতে হচ্ছে।আগেও যেমন কোথাও যাওয়ার সময় পায় নি আর এখন তো পায় ই না।কোনো কোনো সময় ছুটি কাটানো অবস্থাতেও তার ডাক পড়ে।ফোন করে এমন ভাবে রিকুয়েষ্ট করে যে না গেলেও হয় না।কারণ অনেক পেশেন্ট একদম ইমার্জেন্সি অবস্থাতে ডাক্তারের কাছে আসে সেজন্য তানিশাকে বাধ্য হয়েই যেতে হয়।একটু লেট হলেই মা আর বাচ্চার দুইজনের জীবনই সংকটপূর্ণ অবস্থায় থাকতে পারে এই ভেবে তানিশা কখনোই অবহেলা করে না তার কাজে।

তানিয়া রেডি করা শেষ করে বললো,তানিশা সত্যি করে বল তো? তোর কি পছন্দের কেউ আছে?
তানিশা মাথা নাড়লো, না নেই।
–তাহলে বিয়ে কেনো করতে চাস না?তোর কি সংসার করতে ইচ্ছে করে না?স্বামীর বুকে মাথা রেখে নিজের সুখ দুঃখের কথা শেয়ার করতে ইচ্ছে করে না?শুধু কি টাকা ইনকাম করলেই হবে?টাকাতে কিন্তু কোনো শান্তি নাই।আসল শান্তি তো মিলেমিশে মহব্বতের সহিত স্বামীর সাথে সংসার করা।
–আপু বাদ দাও না এসব কথা।এখন কি করতে হবে সেটা বলো।ইতোমধ্যে কিন্তু সাড়ে তিনটা বেজে গেছে।তুমি কিন্তু চার টার আগে আমাকে চেম্বারে পাঠাবে বলে কথা দিয়েছো।
তানিয়া তখন বললো কথা অন্য দিকে ঘুরাস কেনো?আমি কি বলি তার আগে উত্তর দে?আর সময়ের কথা বলছিস?ঠিক চারটার আগেই পাঠিয়ে দেবো তোকে।

তানিশা চুপ করে থাকলো আর আয়নার দিকে তাকিয়ে বার বার নিজের দিকে দেখতে লাগলো।তার বোনের প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই তার কাছে।তবে তার নিজের ও ভীষণ ইচ্ছা করে প্রিয় মানুষটার বুকে মাথা রেখে জীবনের গল্প বলতে।সারাদিন কাজ শেষে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরে তার সাথে রোমান্টিক মুহুর্ত কাটাতে।আদৌ কি সম্ভব সেটা?কারণ কাউকেই তো তার ভালো লাগছে না।তার মনে যে ধরছেই না কাউকে।
হঠাৎ স্বর্ণা কোথা থেকে দৌঁড়ে এসে বললো, খালামনি তোমার কয়েকটা ছবি তুলি?
তানিশা হাসতে হাসতে বললো,ওঠাও মামনি।

–কিন্তু তুমি তো হাসছো না।মুখ গোমড়া করে থাকলে ছবি ভালো আসে না।
তানিশা সেই কথা শুনে স্বর্নাকে তার কোলের মধ্যে নিয়ে নিজেই কয়েকটা সেলফি তুললো।
এদিকে পাত্রপক্ষও এসে গেছে।তহিদুল সাহেব তানিয়ার নাম ধরে ডাকতে লাগলো।আর বললো মা তানিয়া তাড়াতাড়ি বের হয়ে আয়।ওনারা এসে গেছেন।তানিয়া সেই কথা শুনে তানিশাকে বললো তুই এ ঘরেই থাক।খবরদার আগেই বের হবি না।আমি দেখে আসি কে কে এসেছে।

তানিয়া আর সোহান তাদের গেস্ট রুমে গিয়ে দেখে শুধু দুইজন মেয়ে এসেছে।তানিয়া তাদের কে সালাম দিলো। তারপর বললো,আপনারা শুধু দুইজন যে।বাকি লোক কোথায়?তাছাড়া ছেলেও তো আসার কথা।
তখন একটি মেয়ে বললো, আসলে আমার হাজব্যান্ড খুবই বিজি লোক তো।সেজন্য অফিস থেকে আসতে লেট হচ্ছে।আমার হাজব্যান্ড না আসা পর্যন্ত আবার আমার ভাইও আসবে না।সেজন্য ওরা পরে আসবে।আমরা দুইবোন আগেই আসলাম।একমাত্র ভাই এর বিয়ে তো তার বউ কেমন হবে ভীষণ এক্সসাইটেড আমরা।
তখন অন্য আরেকজন মেয়ে বললো,প্লিজ আপনাদের মেয়েকে একটু আনবেন।আমরা একটু কথা বলে নেই।
তানিয়া তখন বললো, ঠিক আছে আনছি।তার আগে আপনাদের সাথে একটু পরিচয় হয়ে নেই।আমি তানিয়া। পাত্রীর বড় বোন আমি।আর উনি আমার হাজব্যান্ড সোহান।

তানিয়ার পরিচয় দেওয়া দেখে একটি মেয়ে বললো আমি মিসেস শিরিন আর এ হলো আমার ছোট বোন শিলা।আমরা দুইবোন এক ভাই।আমার ভাই এর জন্যই মেয়ে দেখতে এসেছি।
তানিয়া সেই কথা শুনে বললো,ও আচ্ছা।ঠিক আছে।
এই বলে তানিয়া তানিশাকে ডেকে আনলো।তানিশাকে এক দেখাতেই দুইবোনের পছন্দ হয়ে গেলো।তারা ফিসফিস করে বললো ভাইয়ার সাথে বেশ মানাবে।আবার দুইজন একই প্রফেশনের।
শিলা একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো তানিশাকে।আর শিরিন পুরো বাড়ি টা চক্কর দিতে লাগলো।বাড়ির পরিবেশ কেমন তা দেখতে লাগলো।দুইবোনের সবদিক দিয়ে বেশ পছন্দ হলো।

এবার শিলা তানিশাকে বললো,আপনার কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
তানিশা তখন বললো কিছু জানার নেই আমার।আমার গার্ডিয়ান রা আছেন ওনারা জানলেই হবে।
শিলা সেই কথা শুনে বললো,গুড।খুব ভালো লাগলো আপনার কথা শুনে।নিজে এতো বড় একজন ডাক্তার হয়েও গার্ডিয়ানের উপর ভরসা করছেন। আমার ভাইয়াও কিন্তু এমন।গার্ডিয়ানদের যথেষ্ট সম্মান করেন তিনি।
আচ্ছা আপনার বাবাও কি ডাক্তার?

–না।
–আপনার ফ্যামিলিতে আর কেউ ডাক্তার নেই?
–না।
শিলা সেই কথা শুনে বললো আনবিলিয়াবল।তাহলে ডাক্তার হওয়ার জন্য কে ইন্সপিরেশন দিয়েছিলো?
তানিশা মনে মনে ভীষণ বিরক্ত হতে লাগলো।এতো প্রশ্ন কেনো করছে মেয়েটা?তবুও এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাকে উত্তর দিতে হলো।
তানিশা তখন বললো আমার বাবার ভীষণ ইচ্ছা ছিলো আমি যেনো একজন ডাক্তার হই।তাছাড়া আমার নিজেরও ইচ্ছা ছিলো।আর একজন চেনাজানা মেডিকেলের স্টুডেন্ট কে দেখে আমি ডাক্তার হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি অনুপ্রানিত হয়েছিলাম।
শিলা সেই কথা শুনে বললো, ওয়াও গুড।
আর আমাদের পরিবারের সবাই ডাক্তার।আমার দাদু আর দাদী ডাক্তার ছিলেন। আবার আমার বাবা মাও ডাক্তার,আমার ভাইও ডাক্তার।আমি মেডিকেলে পড়ছি।আর শিরিন আপু এমবিবিএস কম্পিলিট করেছে বাট দুলাভাই তাকে চাকরি করতে দেয় নি।

শিলার কথা শুনে তানিয়া আর তানিশা দুইজন দুইজনার দিকে তাকালো।তারা হয় তো ভাবছে এই কোন পরিবার ভাই?সবাই শুধু ডাক্তার?দেশের সকল ডাক্তার বোধ হয় এই পরিবারে আছে।
তানিয়া হঠাৎ শিরিন কে জিজ্ঞেস করলো,তাহলে কি আপনার বরও ডাক্তার?
শিরিন তখন হাসতে হাসতে বললো, না, উনি অন্য গোত্রের।এতো ডাক্তারের মাঝে উনি আবার পুলিশ অফিসার।
শিলা সেই কথা শুনে বললো, আমরা এ নিয়ে খুবই ফান করি দুলাভাই এর সাথে।দুলাভাই আমাদের ভীষণ মজার মানুষ।তিনি অন্য পেশার হয়ে ভালোই হয়েছেন।
সবাই কথা বলছে আর তানিশা চুপচাপ আছে।সেজন্য দেখতে খুব খারাপ লাগছিলো ব্যাপারটা।তানিশা তখন শিলাকে জিজ্ঞেস করলো,আপনারও কি বিয়ে হইছে?

–না।
তানিয়া সেই কথা শুনে বললো,না জানি তোমার হাজব্যান্ড আবার কোন গোত্রের হয়?এই বলেই তানিয়া হো হো করে হেসে উঠলো।
কয়েকমিনিটের মধ্যে শিরিন আর শিলা তানিশা আর তানিয়ার সাথে এমন ভাবে গল্পে মেতে উঠলো মনে হলো তারা কত বছরের চেনাজানা।

শিরিন তানিয়ার কথা শুনে বললো,না,না।অন্য গোত্রের হতে যাবে কেনো?ওর হাজব্যান্ড ও ডাক্তারই হবে।আসলে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে।আংটি বদলও হয়েছে।এখন শুধু ভালো একটা দিন দেখে বিয়ের ডেট ফাইনাল করা হবে।আসলে শিলার উড বি হাজব্যান্ড এখন ভীষণ ব্যস্ত আছে।বিয়ের জন্য দুই তিন দিন সময় একটু মেনেজ করতে পারছে না।
শিলা হঠাৎ তার ফোনটি বের করে তার ভাইকে ফোন দিলো।আর বললো তোরা কতদূর ভাইয়া? তাড়াতাড়ি আয়।আমরা তো ইতোমধ্যে এসে গেছি।আর মেয়ের সাথে কথাও বলছি।
তারপর শিলা অন্য মুখ হয়ে ফিসফিস করে বললো,ভাইয়া,মেয়ে তো অনেক সুন্দর।কথাবার্তার স্টাইল ও সুন্দর।আর খুব মিশুকেও।তাড়াতাড়ি আয় তোরা।

শিলার ভাই তখন বললো, এই তো আমরা এসেই গেছি।আর পাঁচ মিনিট সময় দে।
–ওকে ভাইয়া।এই বলে শিলা ফোন রেখে দিলো।আর তার বোনকে বললো,আপু ভাইয়ারা কিছুক্ষনের মধ্যেই আসবে।
পাত্র আসার কথা শুনে তানিশার বুকের ধড়ফড়ানি বেড়ে গেলো।সে বুঝতে পারছে না কিছু।তার বোন আর দুলাভাই যেভাবে বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে না জানি বিয়েটা এবার হয়েই যায়।তাছাড়া শিরিন আর শিলা যেভাবে গল্প করছে মনে হচ্ছে তাদের ও বেশ পছন্দ হয়েছে।কিন্তু তানিশা আগেই বিয়ে করতে পারবে না।সে আগে নোমানকে খুঁজে বের করবে।তারপর তাকে তার মনের কথা জানাবে।

তানিশা ভেবেছে নিশ্চয় নোমান তার অপেক্ষাতেই বসে আছে এখনো।তানিশার মুখে ভালোবাসার কথা শুনলে নিশ্চয় নোমানের সব রাগ অভিমান সব দূর হয়ে যাবে।
এদিকে মিসেস শিউলি বেগম মেহমানদের সামনে নাস্তা নিয়ে আসলো।
ঠিক তখনি কলিং বেলও বেজে উঠলো।সেজন্য তহিদুল সাহেব তাড়াতাড়ি নিজে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।কিন্তু তহিদুল সাহেব দরজা খুলতেই ভীষণ চমকে উঠলেন।তিনি বোবার মতো হা হয়ে রইলেন।
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমানও অবাক!

আমান তহিদুল সাহেব কে দেখামাত্র বললো,আংকেল আপনি?
তহিদুল সাহেবও বললো বাবা আমান তুমি?
কতদিন পর দেখা তাদের।আমান আর তহিদুল সাহেব দুজনই বেশ ইমোশনাল হয়ে গেলেন।
এদিকে পাত্র মিঃ জিসান তার দুলাভাই আমান আর তহিদুল সাহেবের মধ্যে কথাবার্তা শুনে বললো দুলাভাই আপনি চেনেন এনাদের?

–হ্যাঁ চিনি।আমাদের আত্নীয় হন এনারা।
আমানের আর বুঝতে দেরি হলো না তার শালার সাথে তানিশারই বিয়ের কথা চলছে।আমান ভীষণ লজ্জার মধ্যে পড়ে গেলো।কোন মুখ নিয়ে সে তানিশার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে?একসময় যাকে বিয়ে করার জন্য সে পাগল হয়ে গিয়েছিলো আজ তার সাথেই তার একমাত্র শালকের বিয়ের জন্য এসেছে।
আমানকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা দেখে তহিদুল সাহেব বললো,বাবা ভিতরে আসো।আমান সেই কথা শুনে ভিতরে প্রবেশ করলো।তবে সে তানিশার মুখোমুখি হবে কিভাবে এ চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলো।
আমান কে দেখামাত্র শিরিন বললো,তোমাদের এতো দেরী হলো কেনো?তোমার কি সব কাজেই লেট করতে হবে?আজ একটু তাড়াতাড়ি আসলে কি ক্ষতি হতো?

আমান শিরিনের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।
তখন শিলা বললো দুলাভাই আমরা কিন্তু অনেক আগেই এসেছি।আপনি কিন্তু অনেক বেশি লেট করে ফেলেছেন।কতবার বলেছি লেট করবেন না।
এদিকে তানিয়া শুধু ভাবতেছে আমানকে সে কই যেনো দেখেছে?সবার সামনে তানিশাকে বলতেও পারছে না।অন্যদিকে তানিশা পাত্র আসার কথা শুনে নিচ মুখ হয়ে বসে আছে।সে এখনো আমানকে দেখে নি।
আমান এবার নিজেই কথা বলে উঠলো।সে বললো,তানিশা! কেমন আছো?
তানিশা আমানের কন্ঠস্বর শুনে সাথে সাথে উপর দিকে তাকালো।আর মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো, আমান ভাইয়া?আপনি?আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি?

আমান তখন নিজেও হেসে উঠলো আর বললো না,স্বপ্ন দেখছো না।তুমি সত্যি দেখছো।
তানিশা বুঝতে পারলো না কিছু।আমানের সাথে এদের আবার কি সম্পর্ক?
আমান এবার নিজেই তানিশার সাথে পরিচয় করে দিলো শিরিনের।সে তানিশাকে বললো,তানিশা!ইনি হলেন আমার ওয়াইফ মানে তোমার ভাবি।মিসেস শিরিন চৌধুরী।
তানিশা সেই কথা শুনে ভীষণ খুশি হলো।আর চিল্লায়ে বললো,ভাইয়া আপনি বিয়ে করেছেন!খুবই ভালো লাগলো শুনে।
আমান এবার শিরিন কে বললো,এ হলো তানিশা।আমাদের তন্নির বেস্ট ফ্রেন্ড। তোমাকে বলেছিলাম না তানিশার কথা!সেই তানিশা!

শিরিন একদম আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।বিদ্যুৎ লাগলে যেমন ঝটকা লাগে ঠিক তেমন ভাবে ঝটকা খেলো সে।কারণ আমান তানিশার কথা বহুবার বলেছে। একসময় সে তানিশা নামের কাউকে পছন্দ করতো,তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো সব শিরিন কে বলেছে আমান।তানিশার গল্প শুনতে শুনতে শিরিন তানিশাকে দেখার জন্য খুবই আগ্রহী ছিলো।কিন্তু আমানের কাছে তানিশার কোনো ছবি ছিলো না।যখন শিরিনের সাথে আমানের বিয়ে ঠিক হইছে ঠিক তখনি আমান তানিশার সমস্ত স্মৃতি মুছে ফেলেছে।সে বিয়ের পর চেষ্টা করেছে তানিশাকে ভুলে যেতে।আর সে সেটা পেরেছেও।
শিরিন অনেক বেশি কেয়ার করে আমানের।আর আমানও।দুইজনের মধ্যকার প্রেম ভালোবাসা দেখে আশেপাশের সবাই অবাক।বিশেষ করে তায়েব চৌধুরী। তিনি ভেবেছিলেন এভাবে জোর করে আমান কে তিনি বিয়ে দিচ্ছেন।না জানি কি হয় শেষে?আমান কি মেনে নিতে পারবে শিরিন কে?

কিন্তু আমান শিরিন কে কখনোই বুঝতে দেয় নি তার মনে অন্য কেউ আছে।সে শিরিন কে যথাযথভাবেই স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছে।তাকে প্রথমদিন থেকেই আপন করে নিয়েছে।শিরিনও কখনোই বুঝতে পারে নি আমানের এক্স ছিলো।আমান অন্য কোনো মেয়ের জন্য পাগল ছিলো একসময়।কিন্তু আমান যখন দেখলো শিরিন তাকে যথেষ্ট বিশ্বাস আর সম্মান করে তখন আমানের মনে খুঁতখুতানি শুরু হলো।সে সিদ্ধান্ত নিলো তানিশার ব্যাপারটা বলবে তাকে।কারণ যদি কোনো দিন শিরিন কারো কাছ থেকে জানতে পারে তখন ভীষণ মন খারাপ করবে।তার প্রতি যে বিশ্বাস আর ভালোবাসা আছে সব নষ্ট হয়ে যাবে শিরিনের।

শিরিন যেদিন প্রথম আমানের মুখে তানিশার গল্প শুনেছিলো সেদিন তার ভীষণ মন খারাপ হয়েছিলো।সারারাত সে ঘুমাতে পারে নি।এমনকি খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিলো।আমানকে তার কাছে পর্যন্ত আসতে দেয় নি।আমান সেজন্য নিজেও ভীষণ মন খারাপ করেছিলো।সে বুঝতে পার নি শিরিন এভাবে রিয়্যাক্ট করবে?

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ১৯

কিন্তু পরে আবার শিরিন একা একাই ঠিক হয়ে যায়।সে যখন বুঝতে পারে ওটা আমানের অতীত ছিলো।সেই অতীত বর্তমানে টেনে এনে কি লাভ?তাছাড়া আমান তো একদিনও তার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করে নি।বরং অনেক বেশি ভালোবেসেছে তাকে।সেজন্য শিরিন সব ভুলে যায়।সে এখন ব্যপারটকে সহজভাবেই নিয়েছে।কারণ আমান তাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২১