ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২২

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২২
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

নোমান নিচ মুখ হয়ে প্রেসক্রিপশন লিখছে।সে এতোই ব্যস্ত যে উপরের দিকে তাকানোর সময় নেই তার। তানিশাকে না দেখেই বললো,সিট ডাউন প্লিজ।
তানিশা নোমানের কথা শুনে বসে গেলো।নোমান তখন বললো,নাম,বয়স আর প্রবলেম বলুন।
তানিশা তখন বললো, আমার নাম তানিশা তাবাচ্ছুম।আপাতত আমার কোনো প্রবলেম নাই।তবে আমাকে দেখার পর হয়তো ডাক্তার সাহেবের কোনো প্রবলেম হতে পারে।

নোমান সেই কথা শুনে প্রেসক্রিপশন লেখা বাদ দিয়ে উপর দিকে তাকালো।তবে তানিশাকে দেখে তার বিন্দুমাত্র কোনো রিয়েকশন হলো না।সে স্বাভাবিক ভাবে বললো,তুমি?
–হ্যাঁ আমি।আপনি দেখি একটুও অবাক হলেন না আমাকে দেখে।
–অবাক হওয়ার কি আছে?তুমি কি ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী নাকি?
তানিশা তখন বললো, আপনার সাথে আমার কিছু কথা বলার ছিলো।এজন্যই আসা।বিরক্ত না হলে কথাগুলো বলার পারমিশন চাচ্ছি।
–যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।বাহিরে আমার অনেকগুলো পেশেন্ট অপেক্ষা করছে।এই বলে নোমান তার চেয়ার থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তানিশা নোমানের এমন শান্তশিষ্ট ব্যবহার দেখে বেশ অবাক হলো।আবার একটু কষ্টও পেলো।সে বুঝতে পারলো না নোমান এতো স্বাভাবিক ভাবে তার সাথে কথা বলছে কেনো?মনে হচ্ছে তাদের কালও দেখা হয়েছে।সে তো ভেবেছিলো নোমান খুব বাজে রিয়্যাক্ট করবে।সেজন্য তানিশা ধৈর্য্য ধরে চুপচাপ থাকলো কিছুক্ষন।তারপর হঠাৎ করেই বললো,নোমান, আই লাভ ইউ।
নোমান এবার ও কোনো রিয়্যাক্ট করলো না।সে তখন হাসতে হাসতে বললো,এখন কি প্রেম করার বয়স আমাদের?যে আই লাভ ইউ বলছো?
তানিশা তখন বললো, ভালোবাসা সব বয়সেই প্রকাশ করা যায়।আর কতই বয়স হয়েছে আমাদের যে আই লাভ ইউ বলা যাবে না।
নোমান আবার হাসলো।আর বললো তা হঠাৎ এতো বছর পর মনে হলো, যে তুমি আমাকে ভালোবাসো।এ কয় বছরে কি একবারও মনে হয় নি?

তানিশা তখন নোমানের কাছে এগিয়ে এসে বললো,নোমান প্লিজ আপনি রাগ করে থাকবেন না।একবার শুনুন না আমার কথাগুলো?কি জন্য আমি আপনার ভালোবাসা এক্সসেপ্ট করি নি।আর কি জন্য আজ এতোদিন পর ছুটে আসলাম আপনার কাছে?
নোমান তখন আবার হেসে হেসে বললো,আমার মতো হয় তো আর কাউকে পাও নি।আমার মতো কেউ হয় তো বেহায়া গুলোর মতো বলে নি,তানিশা!আই লাউ ইউ।আমি খুব ভালোবাসি তোমাকে।প্লিজ এক্সসেপ্ট মি।দয়া করে আমাকে ফিরিয়ে দিও না।সেজন্য এসেছো।আর কি?

তানিশা এবার কেঁদে ফেললো নোমানের কথা শুনে।সে তখন কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,আপনার কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে আপনি আমাকে ভুলে গেছেন।আপনি বোধ হয় আর আগের মতো ভালোবাসেন না আমাকে।কিন্তু আমি তো সেই আগের মতোই ভালোবাসি আপনাকে।কই আমি তো ভুলতে পারলাম না।
নোমান এবার চিৎকার করে উঠলো।এই শাট আপ।তোমার মুখে আমি কোনো ভালোবাসার কথা শুনতে চাই না।তুমি ভালোবাসা বোঝো?ভালোবাসা কি জিনিস আগে সেটা শিখে আসো। তবেই আমার সাথে তর্ক করিও।এখন যাও আমার সামনে দেখে।তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করতেছে না আমার।
এদিকে নোমানের চিৎকার শুনে তার এসিস্ট্যান্ট দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো আর বললো,স্যার, এনি প্রবলেম?
–নো।কোনো প্রবলেম নেই।আর শোনো!বাহিরের জটলা একটু কম করো।আর সবাইকে এক ঘন্টা পর আসতে বলো।
–স্যার কোনো সমস্যা?

নোমান তখন চিৎকার করে বললো, বললাম তো কোনো সমস্যা নেই।বার বার এক কথা কেনো জিজ্ঞেস করছো?
সেই কথা শুনে এসিস্ট্যান্ট টি আবার দরজা লাগিয়ে দিলো।
এদিকে তানিশা কাঁদতেই আছে।তার খুবই কষ্ট হচ্ছে।সে বুঝতে পারছে সব দোষ তারই।সে যদি সেদিন নোমানকে তার ভালোবাসার কথা বলে দিতো তাহলে আজ আর এ দিন দেখতে হতো না তাকে।

তানিশা তখন আবার এগিয়ে আসলো নোমানের কাছে।আর বললো,সরি আমার ভুল হয়ে গেছে।আর আসবো না কখনো।শুধু এটাই বলার জন্য এসেছিলাম যে আমিও আপনাকে ভালোবাসতাম।আর আজও ভালোবাসি।
নোমান হঠাৎ তানিশার হাত ধরে টেনে তার কাছে আনলো আর তানিশার একদম মুখের কাছে মুখ এনে বললো,আজ কি জন্য এসেছো?এতোবছর পর তোমার কি এই কথাগুলো মনে হলো?বার বার আমার ভালোবাসা তুমি প্রত্যাখ্যান করেছো।আমি অসহায়দের মতো কতোবার তোমাকে রিকুয়েষ্ট করেছি।তবুও তুমি একটিবার আমার ভালোবাসায় সাড়া দাও নি।আমি ভিতরে ভিতরে মানসিক ভাবে কত টা ভেংগে পড়েছিলাম তার খোঁজ পর্যন্ত নেও নি।

এমনকি আমার আর তন্নির বিয়ের কথা শুনেও কোনো রিয়্যাক্ট করো নি।আমি বিয়ের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম।আমি ভেবেছিলাম অন্তত আজ আসবে তুমি।এসে তোমার মনের কথা জানাবে।তুমি সেদিনও আসলে না।তাহলে আজ কেনো এসেছো?সেদিন যদি সত্যি সত্যি তন্নিকে বিয়ে টা করতাম?তারপরেও কি এভাবে আসতে পারতে?তুমি তো আমাকে তন্নির হাতে দিয়েই দিয়েছো?তোমার মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছো।সারা বিশ্বের কাছে মহান হতে চেয়েছিলে।সবাই তোমার উদারতা দেখে বলবে,আহা!কি দরদি মেয়ে টা।বান্ধুবীর জন্য নিজের প্রেম বিসর্জন দিয়েছে।তুমি তো খুশিই হয়েছিলে আমার আর তন্নির বিয়ের কথা শুনে।তাহলে আজ কেনো কাঁদতেছো?আমি তো তোমাকে আর ভালোবাসি না।যে মেয়ে প্রেমিকের ফিলিংস বোঝে না,তার মনে কি কষ্ট হচ্ছে সেটা অনুভব করতে পারে না সে কখনোই আমার ভালোবাসার যোগ্য নয়।
তুমি তো ভালো সাজতে চেয়েছিলে?সবার প্রশংসা শুনতে চেয়েছিলে?তাই না?

আমিও প্রশংসা করছি আজ।তানিশা!সত্যি তুমি অনেক মহান।তোমার তুলনা হয় না।আর কিছু শুনতে চাও?এই বলে নোমান তানিশার হাত ছেড়ে দিলো।আর বললো,আর কখনোই আসবে না আমার কাছে।আর এভাবে তোমার মুখে ভালোবাসি শব্দ টা বলবে না।কারণ ভালোবাসা শব্দ টা তোমার মুখে বেমানান লাগে।তুমি কারো ভালোবাসার যোগ্যই নও।কথাগুলো একদম এক নিঃশ্বাসে বললো নোমান।মনে হলো তার বুকের কষ্ট টা কিছুটা হালকা হলো।অনেক বড় বোঝা মনে হয় সরে গেলো বুক থেকে।
তানিশা নোমানের এতোগুলো কথা শুনে চোখ মুছতে মুছতে চলে যেতে ধরলো।সে কখনোই ভাবে নি নোমান এরকম রিয়্যাক্ট করবে।সে ভেবেছিলো হয় তো নোমান রাগ আর অভিমানে কিছু কথা শোনাবে।কিন্তু সে যে সারাজীবনের জন্য তাকে ভুলে গেছে সে সেটা কল্পনাও করে নি।

নোমান হঠাৎ বললো,দাঁড়াও।আরেকটা কথা শুনে যাও।আমার কিন্ত বিয়ে ঠিক হয়েছে।আমান ভাইয়ার শালির সাথে।আশা করি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছো। এখন পারলে নিজেও বিয়ে টা করে নিও।আর আমি একটা জিনিস বুঝতে পারতেছি না তুমি বিয়ে কেনো করো নি?না মানে তুমি তো আমাকে তন্নির জন্য ছেড়েই দিয়েছো তাহলে কিসের আশায় বসে ছিলে?না ভেবেছিলে নোমান বার বার তোমার ইগনোর পাওয়া সত্ত্বেও আবার এসে বলবে,তানিশা!আমাকে একটু ভালোবাসো।তানিশা!দুনিয়ায় আর কোনো মেয়ে নেই।তানিশা!আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।এইরকম কিছু ভেবেছিলে কি?
এই বলে নোমান আবার তানিশার হাত ধরে তার কাছে টেনে আনলো।আর বললো,উত্তর দাও।
তানিশা একটা কথাও বলতে পারছে না।সে শুধু কেঁদেই চলেছে।তানিশা আবার নোমানের হাত ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে ধরলো।নোমান তখন বললো আগেই যাচ্ছো কেনো?শুনে যাও কিছু কথা আরো?তুমি কয়জন মানুষের জীবন নষ্ট করেছো জানো?
গুনেগুনে চারজন মানুষের।

এক তোমার নিজের জীবন।দুই আমার জীবন।তিন তন্নির জীবন।আর চার যে আমার বউ হতে চলেছে তার জীবন।
আরো দুইজন মানুষের মন ভেংগেছো তুমি।আমার আমান ভাইয়ার আর আমার বাবার।সবচেয়ে দামী একটা সম্পর্ক বাবা ছেলের সম্পর্ক। আমার আর বাবার মধ্যকার সম্পর্ক টাও তুমি চিরতরে নষ্ট করেছো।সেই থেকে বাবা আজও আমার মুখ দেখে নি।আমার কত টা কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছো সেটা?কি অসহায় দিন পার করেছি জানো সেটা?
এখন তুমিই বলো, আমি কি করে তোমার কাছে ফিরে যাই?তাছাড়া ইতোমধ্যে একজনের সাথে আমার বিয়ে ঠিকও হয়েছে।এনগেজড ও হয়ে গেছে।এই দেখো আংটি।এই বলে নোমান তার হাতের আংটি ও দেখালো।
তানিশা তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো,বিশ্বাস করুন আমি জানতাম না আপনার বিয়ে ঠিক হইছে।তাহলে আর কোনোদিনও আসতাম না।আমি তো ভেবেছি আপনি আজও আমাকেই ভালোবাসেন।সেজন্যই মনে হয় তন্নিকে বিয়ে করেন নি সেদিন।সেজন্যই এসেছি।

নোমান তখন বললো,আবার সেই কথা।আমি তোমাকে আর কি জন্য ভালোবাসবো?তুমি তো আমাকে ছেড়েই দিয়েছো।আমি যাতে অন্যজনের হাজব্যান্ড হই।যদি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা থাকতো আমার প্রতি তাহলে একদিন অন্তত খোঁজ নিতে আসতে।আমি কি যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটিয়েছি তা দেখতে আসতে।জানি না আজ আমার অবস্থান কোথায় যেতো?
এই ভাই আর ভাবী না থাকলে আমি তো একদম শেষ ই হয়ে যেতাম।তারা যেভাবে আমাকে সাহস যুগিয়েছে আর আমার পাশে থেকেছে যা আমি ভুলতে পারবো না কখনো।
সেজন্য তারা যখন রিকুয়েষ্ট করলো আমাকে আমি আর না করতে পারলাম না।ভাবলাম তোমার মতো নির্দয়া একজন মেয়ের জন্য কেনো বসে থাকবো যে একদিনও দেখতে এলো না আমাকে?আমার খোঁজ পর্যন্ত নিলো না।আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি সেটাও সে জানে না।

তানিশা তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো, আমি ভেবেছিলাম আপনি আর তন্নি বিয়ে করে সংসার করছেন।সেজন্য আপনাদের সুখের সংসারে অযথা কেনো আসতে যাবো আমি?এজন্য আসি নি।তাছাড়া আপনিও তো একদিন খোঁজ করলেন না আমার?একবার জানতে চেয়েছিলেন আমি কেমন আছি?
নোমান তখন বললো কি বললে?আমি কেনো তোমার খোঁজ করি নি?
আমি কি পরিস্থিতির মধ্যে নিজের জীবন পার করেছি তা শুধু আমি জানি।এই পরিস্থিতিতে প্রেম ভালোবাসার চিন্তা মাথায় আসবে কি করে?

বাবা বাসায় উঠতে দেয় নি,তার মধ্যে ফাইনাল এক্সাম।টাকা পয়সা দরকার ছিলো।একটা থাকার জায়গা পর্যন্ত ছিলো না।ভাইয়া কোনো ভাবে টেনেটুনে মেনেজ করেছে।সেটা দিয়েই কোনোভাবে চলেছি।সেই পরিস্থিতিতে নিজেকে ছাড়া আর কারো কথা ভাবার টাইম ছিলো না আমার।
তানিশা তখন বললো, হ্যাঁ এখন সব দোষ আমার।আমি তা মাথা পেতে মেনে নিচ্ছি।আপনার ফ্যামিলিতে কার কি প্রবলেম হয়েছে সব আমার জন্য হয়েছে।আপনার জীবন তন্নির জীবন সবার জীবন নষ্ট করেছি আমি।আমার মতো খারাপ মেয়ে আর একজনও নেই।পারলে ক্ষমা করে দিয়েন।আর আমিও চেষ্টা করবো নিজেকে ক্ষমা করতে।কারণ অন্যের ভালো করতে গিয়ে আজ নিজেই দোষী হয়ে বসে আছি।সবাই শুধু সবার ক্ষত দেখাতেই ব্যস্ত।আমার বুকে যে কত ক্ষতর সৃষ্টি হয়েছে তা কারো না দেখলেও চলবে।আমার যত কষ্টই হোক না কেনো আমি সেটা মানিয়ে নিতে পারবো।

তানিশা এবার আর থাকতে চাইলো না।সে দরজা খুলে বের হয়ে যেতে ধরলো।নোমান তখন আবার তার হাত ধরে টেনে আনলো।আর বললো,এতো তাড়াহুড়ো করছো কেনো যাওয়ার জন্য?আরেকটু কষ্ট পাও।আজ তোমার কান্না দেখতে আমার ভালোই লাগতেছে।দাঁড়াও একটু।কিছুক্ষন পর আমার উড বি ওয়াইফ লাঞ্চ নিয়ে আসবে।বিয়ে না হতেই কত টা কেয়ার করে আমার।রেলি আই এম এ ভেরি লাকি পারসন।নিজের চোখে দেখে যেও সেটা।তুমি ভেবেছিলে তুমি ছাড়া দুনিয়ায় আর কোনো মেয়ে নেই।কিন্তু তোমার থেকেও যে অনেক অনেক ভালো মেয়ে আছে সেটা নিজের চোখেই দেখে যেও।
তানিশা তখন রাগ করে নোমানকে সরিয়ে দিয়ে বললো, বার বার আমাকে ধরছেন কেনো?ছাড়ুন আমাকে।আমি যেতে চাই এখন।প্লিজ যেতে দিন আমাকে।

–কেনো? ধরলে কি হবে?তুমি নাকি আমাকে ভালোবাসো?
তানিশা তখন চিৎকার করে বললো,আগে ভালোবাসতাম।এই চেম্বারে আসার আগ পর্যন্তও বাসতাম।বাট এখন থেকে আর বাসি না।ভালো থাকবেন।আপনার নতুন জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।আর কখনোই আসবো না আপনার সামনে।

নোমান তখন হাসতে হাসতে বললো,এগাইন সেক্রিফাইস করতেছো।আচ্ছা তুমি যে বার বার এভাবে সেক্রিফাইস করো তোমার কি খারাপ লাগে না?তুমি কি মানুষ নও নাকি?না তোমার হৃদয় টা পাথর দিয়ে গড়া সেজন্য কষ্ট হয় না।আমি তো ভাবছিলাম তুমি জোর করবে আমাকে।যে নোমান যা হবার হয়ে গেছে ভুলে যাও।আমাকে ফিরিয়ে দিও না।আমি অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম।প্লিজ এক্সসেপ্ট মি।আই লাউ ইউ সো মাচ।তা না করে আমার নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানাচ্ছো।কি ইন্টারেস্টিং মেয়ে তুমি!
তানিশা এবার চুপ করে রইলো।এদিকে তার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে।কিছুতেই সে তার চোখের পানি আটকাতে পারছে না।

নোমান তা দেখে বললো,কি লাভ এই চোখের পানি ফেলে?এতেই কি তুমি সুখ খুঁজে পাও নাকি?
তানিশা তখন বললো,আপনি প্লিজ আর একটা কথাও বলবেন না আমার সাথে।আপনি কেমন লোক তা আমার জানা হয়ে গেছে।আপনি যখন জানতেনই সব, কেনো আমি আপনার প্রপোজ এক্সসেপ্ট করি নি, তবুও আপনি আমার কাছে যান নি।আপনি আপনার ইগো নিয়ে বসে ছিলেন।তাছাড়া আবার নতুন আরেকজন কে পেয়ে গেছেন।আমার কথা মনে কি করে থাকবে? আসলে ছেলেদের ধর্মই এটা।অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে নিজেরা সাধু সেজে ঘুরে বেড়ান।আজ থেকে আমি আপনাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করা শুরু করবো।আপনার মুখ আমি দেখতে চাই না কখনো।এই বলে তানিশা কাঁদতে কাঁদতে চলে যেতে ধরলো।

হঠাৎ নোমান কিছু না বুঝে তানিশা কে জড়িয়ে ধরলো। তার চোখ দিয়েও পানি পড়ছে।তার কত টা কষ্ট হচ্ছে হয় তো তানিশা বুঝতে পারে নি।সে যে আজও তানিশাকেই ভালোবাসে।শুধুমাত্র তানিশার উপর রাগ দেখাতে গিয়ে তার ভাই আর ভাবীর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।এখন যে তানিশাকে দেখার পর তার সব রাগ অভিমান চলে গেছে।এখন কি করবে সে?
তানিশাও কাঁদছে আর নোমানও কাঁদছে।

হঠাৎ নোমানের এসিস্ট্যান্ট বাহির থেকেই বললো,স্যার ভাবি এসেছে।ভিতরে কি পাঠিয়ে দিবো?
তানিশা সেই কথা শোনামাত্র নোমানকে ছেড়ে দিলো।আর সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
তানিশা চেম্বার থেকে চলে যাওয়ার পর নোমানের এতো খারাপ লাগছিলো যে সে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারতেছিলো না।তার শুধু বার বার তানিশার ঐ কান্না করা চেহারা ভেসে উঠতে লাগলো।তার মনে পুষে থাকা রাগের কারনে সে একের পর এক আঘাত দিয়ে দিয়ে কথা বলেছে তানিশাকে।সে কি করলো এটা?ভাবতেই ভীষণ কষ্ট হচ্ছে নোমানের।

আসলে নোমান সত্যি কথা টা মাত্র কিছুদিন আগে জেনেছে।রিশার সাথে কিছুদিন আগে দেখা হয়েছিলো নোমানের।তখন রিশা বলে দিয়েছে সব সত্য কথা।নোমান আগে যদি জানতো তাহলে কবেই চলে যেতো তানিশার কাছে।নোমান এতোদিন ধরে ভেবে এসেছে তানিশা তাকে ভালোবাসে না।সেজন্যই তানিশা একদিনও তার খোঁজ নেয় নি।সেজন্য নোমান তানিশার অপেক্ষা না করে তার ভাই আর ভাবির রিকুয়েষ্ট এ রাজি হয়ে যায় শিলাকে বিয়ে করতে।সে কখনোই ভাবে নি তানিশা তাকে এতো বেশি ভালোবাসে।কারণ তানিশা যে কখনো তাকে তার ভালোবাসার কথা বলে নি।অন্যদিকে তানিশা ভেবেছে নোমান আর তন্নি দুইজনে সংসার করছে।এজন্য সেও আর কারো খোঁজ নেয় নি।এই ভুলবোঝাবুঝির কারণে আজ কত গুলো মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।আমান শিরিনের সাথে আর তন্নি ইকবালের সাথে তবুও কোনোমতে সংসার করছে কিন্তু নোমান,তানিশা আর শিলার জীবনে কি ঘটবে এখন সেটাই দেখার পালা।

শিলা প্রবেশ করলো নোমানের চেম্বারে।নোমান সেজন্য তাড়াতাড়ি করে তার চোখের পানি মুছিয়ে নিলো।কিন্তু তার চোখ দুটি ভীষণ লাল দেখাচ্ছিলো।নোমান সেজন্য ওয়াশরুমে গিয়ে আগে চোখে পানি দিয়ে নিলো।এদিকে শিলা নোমানের জন্য খাবার সার্ভ করে দিলো।সে নিজেও নোমানের সাথে বসেই এই চেম্বারে লাঞ্চ করে।
নোমান হাতমুখ ধুয়ে এসে তার প্লেট হাতে নিলো।বাট আজ আর এক লোকমা খাবারও তার মুখে ঢোকাতে পারলো না।সে শুধু খাবার নড়াচড়া করতে লাগলো।তা দেখে শিলা বললো,কি হয়েছে আজ আপনার?খাচ্ছেন না যে?
নোমান সেই কথা শুনে খাবার টা রেখে দিয়ে বললো,আজ আমার শরীর টা কেনো জানি ভালো লাগছে না।আমি আজ একটু বাসায় গিয়ে রেস্ট নিতে চাই।এই বলে নোমান শিলাকে রেখেই চলে গেলো।
আজ আর সে একজন রোগী ও দেখতে চাইলো না।তার যে আজ রোগী দেখার মন মানসিকতাই নেই।এতোদিন তার এই যন্ত্রনা ছিলো না।সে ভোলার চেষ্টা করেছিলো তানিশাকে।কিন্তু আজ তানিশা তার সামনে এসে সবকিছু এলোমেলো করে দিলো।

অন্যদিকে শিলা কিছুই বুঝতে পারলো না।সে ভাবতে লাগলো আজ হঠাৎ নোমান এমন বিহেভ কেনো করলো?তার সাথে ঠিক করে কথাও বললো না।এমনকি তার দিকে তাকালো না পর্যন্ত।শিলা আবার এ নিয়ে ভীষণ চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলো।
নোমান সোজা তার বাসায় চলে গেলো।সে একা একাই থাকে বাসায়।এমনিতেই পরিবার ছাড়া একা একা থাকে সে তার জন্য ভীষণ কষ্টে ভুগছে।তার মধ্যে তানিশা ফিরে আসায় নতুন করে কষ্ট শুরু হলো নোমানের।
অন্যদিকে তানিশাকে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ঢোকা দেখে তার বোন একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো।তানিশা তার বোনের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে শুধু বললো,আপু আমি বিয়ে করতে চাই।তোরা না খুব ব্যস্ত হয়ে গেছিস আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য।দুই এক দিনের মধ্যে বিয়ে করবে এমন ছেলে থাকলে আমাকে খবর দিস।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২১

তানিয়া তখন বললো, কি বলছিস এসব পাগলের মতো?কি হয়েছে তোর?
–কিছুই হয় নি আমার।আমি ঠিক আছি।অনেক ভেবে দেখলাম আমার এখন বিয়ে করা উচিত।
এই বলে তানিশা তার ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।
তানিশা যখন দেখলো নোমান তার লাইফ পার্টনার খুঁজে নিয়েছে তাহলে অযথা কেনো তার অপেক্ষা করবে?তার চেয়ে বরং তার বিয়ে করে নেওয়াই শ্রেয় হবে।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৩