ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৩

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৩
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

নোমান আজ আর চেম্বারে গেলো না।ফোন অফ করে বাসাতেই থাকলো।সে কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলছে না।কারণ তার কিছুই ভালো লাগছে না।এদিকে আমান নোমানকে ফোনে না পেয়ে বাসাতেই চলে আসলো।কিন্তু এসে যখন দেখলো এই অবেলাতে নোমান শুয়ে আছে সে ভীষণ অবাক হলো।
আমান তখন নোমানকে বললো,ভাই কি হয়েছে তোর?এই অবেলাতে শুয়ে আছিস যে?আজ কি হসপিটালে যাবি না?

–না ভাইয়া যাবো না।ভালো লাগছে না কিছু।
–কেনো কি হইছে?
–না এমনিতেই।
আমানের কেমন যেনো গড়বড় লাগছে।সে তখন হঠাৎ করেই বললো,আচ্ছা তানিশা কি তোকে কল দিয়েছিলো?ও কেনো জানি কাল আমার থেকে তোর ফোন নাম্বার,চেম্বারের ঠিকানা সব নিলো।
নোমান সেই কথা শুনে ভীষণ আশ্চর্য হয়ে বললো, তানিশার দেখা তুমি কোথায় পেলে?
আমান তখন হাসতে হাসতে বললো,সেই কথা আর বলিস না।আমি নিজেও ভীষণ আশ্চর্য হয়েছি।জিসানের জন্য মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম পরশু। কিন্তু গিয়ে দেখি মেয়ে আর অন্য কেউ নয়,আমাদের তানিশা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–বলো কি?নোমান একদম আশ্চর্য হয়ে গেলো।
সে তখন বললো তারপর কি হলো?
–কি আর হবে?জিসানের তো পুরো পছন্দ।সেজন্য শিলা জিসান আর তানিশাকে এক ঘরে পাঠিয়ে দিলো যাতে তারা নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষন গল্প করতে পারে।কিন্তু কয়েক মিনিট যেতেই জিসান হঠাৎ রাগ করে বের হয়ে এসে বললো,তাড়াতাড়ি চলো বাড়ি।আর থাকবো না এখানে।

নোমান সেই কথা শুনে বললো কেনো?কেনো এভাবে বললো জিসান?
আমান তখন বললো, ওই যে তানিশার এক স্বভাব।মুখের উপর না করে দেওয়া।জিসানকেও সে ডাইরেক্ট বলে দিয়েছে আমি আপনাকে বিয়ে করবো না,আর জিসান সেই কথা শুনে রেগে একদম আগুন।
নোমান আমানের কথা শুনে হো হো করে হাসতে লাগলো।
আমান তখন বললো, আচ্ছা নোমান, একটা জিনিস বুঝতে পারলাম না।তানিশার প্রবলেম টা কোথায়?এই মেয়ে বিয়ে করে না কেনো?
নোমান সেই কথা শুনে চুপ করে থাকলো।সে কিভাবে তার ভাইকে এসব কথা বলবে।
আমান তখন বললো,কি রে কিছু বলছিস না কেনো?নোমান তখন তার ভাই এর হাত ধরে বললো,ভাইয়া একটা গল্প শুনবা?

–কি গল্প?
নোমান তখন বললো, মনোযোগ দিয়ে শুনবা কিন্তু। তারপর মন্তব্য করবা।
–বল আগে।
নোমান তখন বললো,
রানা আর মিনা দুইজন দুইজনকে খুবই ভালোবাসে।কিন্তু কেউ কাউকে বলে না।এদিকে আবার মিনার বান্ধুবী দিশাও রানাকে খুবই ভালোবাসে।আবার দিশার সাথে রানার বিয়েও ঠিক হইছে।মিনা আবার এই কথা জানে যে দিশা আর রানার বিয়ে ঠিক হইছে,দিশা রানাকে খুব ভালোবাসে।
ভাইয়া বুঝেছো গল্পটা?

–হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝছি তো।তারপর কি হলো?
–একদিন রানা আর তার মনের মধ্যে ভালোবাসার কথাটা রাখতে পারলো না।মিনাকে ডাইরেক্ট প্রপোজ করে দিলো।কিন্তু মিনা সাথে সাথে রিজেক্ট করলো।বুঝেছো?
–হ্যাঁ রে বুঝছি।দিশা রানাকে ভালোবাসে দেখে মিনা রানার প্রপোজ রিজেক্ট করলো।
–হ্যাঁ ঠিক ধরেছো ভাইয়া।তারপর রানা মনের দুঃখে মিনাকে ভুলে যেতে চাইলো। কিন্তু পারলো না।আবার মিনাকে বললো তার ভালোবাসার কথা।কিন্তু মিনা এবারও রিজেক্ট করলো।
–তারপর কি হলো?

–তারপর আর রানা মিনাকে ভালোবাসার কথা বলে না।কারণ রানা ভাবলো মিনা যখন বার বার তার প্রপোজ রিজেক্ট করছে তাহলে মিনা রানাকে ভালোবাসে না।
আমান সেই কথা শুনে বললো, মিনা তাহলে দিশার জন্য নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিলো।কিন্তু রানা এসবের কিছুই জানে না তাই তো?
–এক্সাক্টলি ভাইয়া।একদিন রানা আর দিশার বিয়ের দিন ঠিক হইলো।রানা ভাবলো আজ হয়তো মিনা আসবে,তার ভালোবাসা প্রকাশ করবে।কিন্তু মিনা সেদিনও আসলো না।অন্যদিকে রানা কিছুতেই দিশাকে বউ হিসেবে মানতে পারছিলো না।সেজন্য সে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গেলো।
আমান সেই কথা শুনে বললো,তারপরের কাহিনী আমি বলছি।রানা তার ইগো নিয়ে থাকলো।আর মিনার কাছে তার ভালোবাসার প্রস্তাব নিয়ে গেলো না।অন্যদিকে মিনা ভেবেছে রানার সাথে দিশার বিয়ে হইছে সেইজন্য মিনাও আর আসলো না রানার কাছে।ঠিক তো?

নোমান অসহায় গুলোর মতো মাথা নাড়িয়ে বললো হুম।
আমান তখন বললো,এখন তুই একটা প্রশ্নের উত্তর দে দেখি?রানা যখন মিনাকে এতই ভালোবাসে তাহলে শিলার সাথে এনগেজড কেনো করলো?সে কি মিনার জন্য আর কিছুদিন অপেক্ষা করে থাকতে পারলো না?
নোমান তখন বললো, ওই যে রাগ করে।কারন রানা তো জানতো না মিনা তাকে সত্যি সত্যি অনেক ভালোবাসে।রানা তো ভেবেছে মিনা তাকে ভালোই বাসে না।হুদাই তার জন্য কেনো সে অপেক্ষা করবে?
আমান তখন বললো, ও বুঝেছি।তা রানা যখন অপেক্ষা করতে পারবেই না,সেজন্য শিলার সাথে এনগেজড করে নিলো।ব্যস ঝামেলা তো ক্লিয়ারই হলো।এখন রানা শিলাকে বিয়ে করবে।মিনার দিকে দেখার কি দরকার?এখানে প্রবলেম টা কোথায়?সব তো ঠিকই আছে।

নোমান তখন বললো,না ঠিক নাই।কারণ মিনা তার ভালোবাসা এতোদিনে প্রকাশ করেছে।এখন এতোদিন পরে মিনার মুখে ভালোবাসার কথা শুনে রানা কিছুতেই আর নিজেকে সামলাতে পারছে না।সে শুধু এখন মিনাকেই চাইছে।এখন তুমি বলো রানা কি করে মিনার কাছে যাবে?
আমান নোমানের কথা শুনে বললো, এটা তো অনেক জটিল সমস্যা।তবে এখানে সবচেয়ে বেশী দোষ দেখছি আমি তন্নীর।তারপরেই তুই।
নোমান সেই কথা শুনে বললো,আমি আবার কি করলাম?
–কি করলাম মানে?তুই যে তানিশাকে এতো ভালোবাসিস তা বলবি না আমাদের?বাবা তো তানিশাকে আমাদের বাড়ির বউ করতেই চাইছিলো।

–কিন্তু বাবা তো তানিশাকে তোমার বউ করতে চাইছিলো।তাছাড়া বাবা তন্নির মনে দুঃখে দিয়ে তানিশার সাথে কি আমার মিল করাই তো?ওদিকে ফুপি তো আমাকে ছাড়া আর কাউকে জামাই বানাবে না। তুমিও আবার তানিশাকে পছন্দ করো।এজন্যই বলি নি কাউকে।
আমান এবার নোমানের মাথায় চড় দিয়ে বললো, আচ্ছা ঠিক আছে সব মানলাম।কিন্তু শিলার সাথে যখন তোর ভাবি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলো তখন তো অন্তত তানিশার কথা বলতে পারতিস।আগেই হ্যাঁ করে দিলি।আর এখন বলছিস তোর তানিশাকে চাই।

–ভাইয়া আমার তো এটাই ভুল হয়ে গেছে।আমি তো জানতাম না তানিশা আমাকে ভালোবাসে।আমি ভাবছিলাম ও অন্য কাউকে ভালোবাসে।সেজন্য আমি আর ওর জন্য অপেক্ষা করি নি।কিন্তু এখন যখন জানলাম অন্য কেউ নয়,সে আমাকেই ভালোবাসতো,আমার জন্য আজ পর্যন্ত কাউকে বিয়েও করে নি।তখন কি করে ওর ভালোবাসা আমি ফিরিয়ে দেই।প্লিজ ভাইয়া কিছু একটা ব্যবস্থা করো না?এই বলে নোমান আমানের হাত ধরে রিকুয়েষ্ট করলো।

আমান তো পড়ে গেলো মহাবিপদের মধ্যে।কারণ শিলা তো তার একমাত্র আপন শালি হয়।তার সাথে নোমানের বিয়ে না হলে শিরিন তো আবার হুল্লোড় শুরু করে দেবে।অন্যদিকে শিলাও প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলছে নোমানকে।এই অংকের সমাধান আমান করবে কিভাবে?আমানের মাথা এবার চক্কর দিয়ে উঠলো।নোমান এতোদিন পর তাকে কি শুনালো এসব?তার তো এখন নোমানরেই মারতে ইচ্ছে করছে। আর অন্যদিকে তন্নিরেও ইচ্ছামতো গালিগালাজ করলো আমান।সে বললো
,তন্নি যদি নিজে তোর সাথে তানিশারে মিলিয়ে দিতো তাহলে এতো সমস্যা হতোই না।এজন্যই ওর কপালে এতো দুঃখ।আজ দিয়ে আমি পরিষ্কার বুঝতে পারলাম।

–হ্যাঁ ভাইয়া,তন্নির উপর আমার এতো রাগ উঠতেছে যে ইচ্ছে করছে খুন করি ওরে।ও সবকিছুই জানতো।তানিশার বান্ধুবী রা রিকুয়েষ্ট করেছে এমনকি তানিশাও নাকি অনেক বুঝাইছে তবুও ও শোনে নি।তন্নি আমাকেও বলে নি কিছু।আমি শুনলে তো সেদিনই তুলে আনতাম তানিশা রে।এখন তো আমার মাথায় খেলছে না কিছু।কাল তানিশা আমার চেম্বারে এসেছিলো।আমি তো রাগ করে ইচ্ছামত ওরে বকেছি।ও সে কি কান্না!তানিশা ভীষণ কষ্টে আছে ভাইয়া।আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারতেছি না।যা করবা তাড়াতাড়ি করবা।
আমান সেই কথা শুনে বললো, তুই তানিশাকে বকেছিস কেনো?ওর তো এখানে কোনো দোষই দেখছি না।তন্নির জন্য নিজের ভালোবাসা সে সেক্রিফাইস করলো।আবার যখন সত্য টা জানলো ঠিক তোর কাছে ফিরে আসলো।আর তুই ওকেই বকাঝকা করেছিস?

নোমান তখন আমানের হাত দিয়ে নিজেই নিজের গায়ে আঘাত করতে করতে বললো, ভাইয়া তুমি আমাকে ইচ্ছামত মারো।তবুও এই অংকের সমাধান বের করো প্লিজ।
আমান তখন বললো, হ্যাঁ চেষ্টা করবো।কিন্তু তার আগে তানিশাকে সরি বলে আয়।ও বেচারা এতোদিন ধরে তোর অপেক্ষায় আছে,তারপরেই তুই তাকে কষ্ট দিলি।
নোমান তখন বললো,ফুলশয্যার ঘরে সরি বলে নেবো।এখন এই মুখ আমি কিছুতেই দেখাতে পারবো না ওরে।
আমান তখন নোমানের মাথায় চড় দিয়ে বললো ওরে দুষ্টু ভাই আমার।তুই বাসরঘর অব্দি চলে গেছিস?এখন পর্যন্ত তো বিয়ের কথাবার্তায় ঠিক হয় নি।

নোমান তখন বললো, ভাইয়া আমার মনে হয় তুমি পারবে একটা ব্যবস্থা করতে।তাছাড়া বাবা তো একসময় তানিশাকে খুবই ভালোবাসতো।বাবাকে সব সত্য কথা বলে যদি রাজি করাতে পারো।আমার বিশ্বাস বাবা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলে কেউ কিছুই বলবে না।এই সুযোগে যদি আমার উপর থেকে বাবার রাগও কমে যায়।বাবা আমার কথা বিশ্বাস না করলেও তোমার কথা ঠিক বিশ্বাস করবে।
–ঠিক বলেছিস।আইডিয়া টা কিন্তু মন্দ নয়।
এখন বাবাই পারে এই সমস্যার সমাধান দিতে।অন্যদিকে আমিও শিরিন আর শিলাকে বুঝাতে থাকবো।দেখি কাজ হয় কিনা।

তানিশা চেম্বারে বসে আছে।কাল মন টা খারাপ থাকলেও সারা রাত কেঁদে কেঁদে আজ কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে সে।কাল পর্যন্ত তার মনের মধ্যে নোমানের প্রতি এক সাগর ভালোবাসা থাকলেও আজ তার কিঞ্চিৎ পরিমান নেই।সে এমন ভাবে জিদ ধরে বসলো যে নোমানের মুখ আর কখনোই দেখবে না।তার নাম পর্যন্ত মুখে নিবে না।এক কথায় সে নোমান নামের কাউকেই চেনে না।
এদিকে আজ তন্নি হসপিটাল ছেড়ে দিবে।সেজন্য মিসেস সায়রা বেগম আর ইকবাল তাদের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে।কিন্তু তন্নি যাওয়ার আগে একটু তানিশার সাথে দেখা করতে চায়।কিন্তু তানিশা তো একবারও আসলো না দেখা করতে।সেজন্য সে ইকবালকে বললো,একটু ডাক্তার ম্যাডামকে ডেকে দাও না?

ইকবাল সেই কথা শুনে তানিশাকে ডাকতে গেলো।কিন্তু চেম্বারে গিয়ে দেখে তানিশা রোগী দেখা নিয়ে ব্যস্ত আছে।
নীলা নামের ১৮ বছর বয়সী একজন মেয়ে এসেছে চেম্বারে।সাথে তার তিনজন বান্ধুবীও আছে।নীলার নাকি ভীষণ পেট ব্যাথা করছে আজ।সেজন্য তানিশার কাছে এসেছে।তানিশা প্রথমেই পিরিয়ডের ডেট জানতে চাইলো নীলার।কিন্তু মেয়েটি পিরিয়ডের কোন হিস্ট্রি ঠিকমতো দিতে পারলো না।ঠিক কত তারিখে হয়েছিলো মনে করতে পারছে না।অনেক কষ্টে বের হলো চারমাস ধরে তার পিরিয়ড বন্ধ।তবে সে জানালো এরকম প্রায়ই হয় তার।অথ্যাৎ যাকে বলে অনিয়মিত পিরিয়ড।
তানিশা নীলার পালস চেক করে দেখে Pulse Bp ভালোয় আছে।সেজন্য নীলাকে USG করতে পাঠানো হলো।
আর নীলার তিনজবান্ধুবী মিলে ফুসুরফাসুর করে গল্প করতে লাগলো।

এদিকে দরজায় এখনো ইকবাল দাঁড়িয়েই আছে।তানিশা সেজন্য রোগী বসিয়ে রেখেই তন্নির সাথে দেখা করতে গেলো।তন্নি তানিশাকে দেখে বললো, এতো লেট করলি কেন?আমি না সেই কখন ডেকেছি?
তানিশা তখন বললো,আমি কি ফ্রি নাকি?যে ডাকলেই সাথে সাথে আসতে পারি?পেশেন্ট দেখছিলাম।
–ও,আচ্ছা।যা তাহলে।আসলে আমরা আজ চলে যাচ্ছি তো সেজন্য দেখা করতে চাইলাম।
তানিশা তখন বললো,ও,তাহলে সাবধানে যাস।
হঠাৎ তন্নি তানিশাকে জড়িয়ে ধরে বললো,পারলে ক্ষমা করে দিস আমাকে।আমার জন্য তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস।মনের মধ্যে দয়া করে কোনো রাগ জমিয়ে রাখিস না।

তানিশা মনে মনে ভাবলো তুই যে আমার ক্ষতি করেছিস তা কোনোদিনও ভুলতে পারবো না আমি।কিন্তু এর বিনিময়ে আল্লাহ যে তোকে অনেক শাস্তিই দিয়েছে।সেজন্য তোর উপর আর কোনো রাগ নাই আমার।
তানিশার মন খারাপ থাকা সত্ত্বেও সে বললো ইটস ওকে।যার কপালে যা লেখা থাকবে সেটাই হবে।আমরা কি আর নিজেদের ভাগ্য নিজেরা তৈরি করতে পারবো?
তন্নি তখন বললো তা অবশ্য ঠিক বলেছিস।আচ্ছা যা এখন।তুই তো অনেক ব্যস্ত মানুষ হয়ে গেছিস।
–হ্যাঁ,ভীষণ ব্যস্ত আমি এখন।এই বলে তানিশা চলে গেলো।

অন্যদিকে তন্নিও তার বাচ্চাকে সাথে নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলো।
এদিকে তানিশা চেম্বারে এসে দেখে নীলার রিপোর্ট এসে গেছে।রিপোর্ট হাতে নিয়ে তানিশার চোখ একদম কপালে উঠে গেলো।কারন নীলা তো প্রেগন্যান্ট। অবিবাহিত মেয়ে প্রেগন্যান্ট ব্যাপার টা কিন্তু খুবই আশ্চর্যের বিষয়।
তানিশা জিজ্ঞাসা করলো তোমার যে পিরিয়ড হচ্ছে না তুমি সেদিকে খেয়াল করবে না?তাছাড়া পেট ও তো কিছুটা উঁচু উঁচু লাগছে।

নীলা তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো ম্যাডাম আমি ভাবছি পেটের ভুড়ি বাড়ছে।সেজন্য এমন উঁচু উঁচু লাগছে।এখন কি হবে আমার?আমার তো এখনো বিয়েই হয় নি।
তানিশা হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারলো না কিছু।এদিকে তো নীলা কেঁদেই চলেছে।বিয়ে না হতেই সে প্রেগন্যান্ট হয়েছে।এখন বাবা মার সামনে মুখ দেখাবে কেমনে?
তানিশা তখন বললো তোমার বয়ফ্রেন্ড কে বলো কথাটা।নীলা তখন কাঁদতে কাঁদতেই বললো,ম্যাডাম আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নাই।

তানিশা এবার নীলাকে দিলো এক জোরে ধমক।আর বললো,এখন কি মিথ্যা কথা বলার সময়?বয়ফ্রেন্ড নাই তাহলে পেটে বাচ্চা কি উড়ে এসেছে।সত্য কথা বলো তাড়াতাড়ি।
এদিকে নীলার বান্ধুবীরা একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলো।তখন নীলা বললো ম্যাডাম সত্যি আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নাই।তবে একজনের সাথে বিয়ে ঠিক হইছে।সে মাঝেমধ্যে ঘুরতে নিয়ে যেতো।আর আমাদের বাড়িতেও আসতো।নীলা বিস্তারিত ভাবে বলতে লাগলো।

–থাক আর বলতে হবে না।বেবিটা খবরদার নষ্ট করবা না।তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে নিও।লজ্জা না করে পরিবার কে জানাও ব্যাপারটা।এই বলে তানিশা কিছু ঔষধ লিখে নিলো।তারপর নীলা আর তার বান্ধুবীরা চলে গেলো।
তানিশা কেমন যেনো চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলো।সে মুহুর্তের মধ্যে নোমান কে কল্পনা করলো এই জায়গায়।শিলা আর নোমানেরও তো বিয়ে ঠিক হইছে।তাহলে কি ওরাও বিয়ের আগে,,,,।না কি ভাবছি আমি?আর করলেই কি?যা মন চায় করুক গিয়ে।তানিশা যতই তার মন কে শান্ত্বনা দিক না কেনো আজ সারাদিন শুধু তার নোমানের কথাই মনে হলো।সে কি করে চোখের সামনে নোমানকে অন্য জনের হতে দেখবে?তন্নি না হয় তার বান্ধুবী ছিলো,কিন্তু শিলা তো তার কেউ হয় না?তাহলে এখানে কেনো তার সেক্রিফাইস করতে হবে?আবার ভাবছে না কখনোই আর ফিরবো না নোমানের কাছে।নোমান তাকে ভুলে গিয়ে যখন শিলার সাথে এনগেজড করতে পারলো তাহলে সে তাকে কিসের ভালোবাসে? নোমানের চোখের পানিতে মোটেও তার হৃদয় গলবে না।সে একটা প্রতারক। এই বলে তানিশা চেম্বার থেকে বের হলো।

তানিশা আজ একটু তাড়াতাড়িই বাসায় ফিরলো।আর বাসায় এসেই আবার সবাইকে রাগে দুঃখে জিদ করে বললো,আমি যে দুই এক দিনের মধ্যেই বিয়ে করতে চাই।তোমরা কি পাত্র খুঁজছো না বসে আছো?
তানিশার কথা শুনে তহিদুল সাহেব আর শিউলি বেগমের মাথা যেনো বনবন করে ঘুরতে লাগলো।এতো দিন কত ছেলে বিয়ের জন্য ঘোরাঘুরি করলো তখন সে বিয়ে করে নি কিন্তু এখন দুই এক দিনের মধ্যে ভালো পাত্র কই পাবে তারা।এদিকে তানিয়া আর সোহান তো সবসময় তানিশার বিয়ের ধান্দাতেই থাকে।তারা তো শোনামাত্র পুরোদমে খুঁজতে লাগলো পাত্র।
তানিশা কোন পেশার ছেলেকে বিয়ে করবে সে সম্পর্কে কিছুই বলে নি।ও শুধু বলেছে দুই এক দিনের মধ্যেই তাকে বিয়ে করতে হবে।এখন ছেলে যেমনই হোক।

কিন্তু তানিশা বললো আর হলো নাকি?তহিদুল সাহেব আর তানিয়া কি যে সে ছেলে পছন্দ করবে?তারা তানিশার জন্য যোগ্য ছেলেকেই খুঁজে আনবে।
এদিকে আমান আজ অফিসে না গিয়ে সারাদিন বাসাতেই থাকলো।কারণ নোমান যেভাবে ধরেছে ওর কাজটা না করে দিলে বেচারা ভীষণ টেনশনের মধ্যে থাকবে।আমান সেজন্য একা একা অনেক প্রাকটিস করলো, কিভাবে তার বাবাকে বলবে কথাটা?
আমান সাহস করে চলেই গেলো তার বাবার কাছে।
তায়েব চৌধুরী চা খাচ্ছিলেন আর খবরের পাতা পড়ছিলেন।আবার সাথে টিভিও অন করা।সেজন্য মাঝেমধ্যে টিভির দিকেও তাকাচ্ছেন।

আমান তার বাবাকে সালাম দিয়ে পাশে বসলো।
আমান কে দেখামাত্র তায়েব চৌধুরী বললো,আজ অফিসে যাও নি?
–না বাবা।
–কিছু কি বলবা?
–হ্যাঁ বাবা।তোমাকে একটা গল্প শোনাতাম।
তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,কিসের গল্প?
–না মানে এমনিতেই একটা গল্প।
–আমি আজেবাজে গল্প শুনি না।কাজের কথা বলো।
আমান তখন তোতলাতে তোতলাতে বললো,

রানা আর মিনা দুইজন দুইজনকে খুবই ভালোবাসে।কিন্তু তন্নি আবার নোমানকে ভালোবাসে।আবার তানিশাও নোমানকে ভালোবাসে।এবার রানার সাথে যখন তন্নির বিয়ে ঠিক হয়,,,,,
তায়েব চৌধুরী আমানের আবোলতাবোল কথা শুনে ধমক দিয়ে বললো,কি বলছো এসব ভুলভাল?রানা কে, আবার মিনা কে?এখানে আবার নোমান,তানিশা,তন্নির নাম আসছে কেনো?

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২২

আমান তার বাবার ধমক শুনে বললো, আসলে তুমি নোমান আর তানিশার নাম শুনতে চাও না তো সেজন্য ওদের নামের পরিবর্তে রানা আর মিনা নাম রেখেছি।
তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,কারো নাম কিছু রাখতে হবে না।যা বলার পরিষ্কার করে বলো।
আমান তার বাবাকে পুরো কাহিনী বলা শুরু করলো।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৪