ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৪

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৪
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

❝যা তোর বন্দুক টা নিয়ে আয়❞ তাড়াতাড়ি নিয়ে আয়।আজ তোদের সব কয়টারে খুন করবো আমি।
আমান তায়েব চৌধুরীর এমন রাগ দেখে ভয়ে ভয়ে বললো,বাবা আমি আবার কি করলাম?
তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে ধমক দিয়ে বললো, কি করলাম মানে?এতোকিছু ঘটে গেছে আর তোরা আমাকে কিছুই বলিস নি?তোদের কাছে কি জীবন টা এতোটাই তুচ্ছ?

আমান তখন বললো,বাবা বিশ্বাস করুন।আমি আগে এসব জানতাম না।কাল দিয়ে নোমান বললো আমাকে।
নোমানের কথা শোনামাত্র তায়েব চৌধুরী বললেন,খবরদার, ওই শয়তানের নাম আমার সামনে নিবি না।ও কিভাবে নিজের জীবনটা এভাবে নষ্ট করলো?নিজের ক্যারিয়ার, নিজের ভালোবাসা সবকিছু ভেংগে তছনছ করে দিলো?ও কি মানুষ না অন্যকিছু?আর তন্নিরে ডাক দে।ওরে আমি পাইলে টুকরো টুকরো করে কাটবো।ও কেন একটিবার বললো না যে নোমান আর তানিশা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে।সেটা না বলে চুপচাপ বিয়ে করতে ধরেছিলো।শেষে তো কিছুই পাইলো না জীবনে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমান তখন বললো, বাবা,মানুষ মাত্রই তো ভুল করে।আসলে সবাই সবার জায়গা থেকে ভুল করেছে।এখানে কারো কোনো দোষ নাই।
তায়েব চৌধুরী তখন বললো আমি তো কখনোই কাউকে ক্ষমা করবো না।আর নোমানকে জীবনেও এ বাসায় উঠতে দেবো না।সে তো আমাকে আপন কেউ ভাবে না।যদি ভাবতো তাহলে সেদিন পালিয়ে না গিয়ে আমাকে সত্য টা বলতে পারতো।তারপর আমি বিবেক বিবেচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নিতাম।

আমান তখন বললো, বাবা,নোমান ভেবেছিলো তানিশা তাকে ভালোবাসে না সেজন্য সে তানিশার কথা তোমাকে বলে নি?
–চুপ কর তুই আমান।নোমানের দোষ খবরদার আড়াল করবি না।আর ওই তানিশার নামও মুখে নিস না।কত ভালোবাসতাম মেয়েটারে!একদম নিজের মেয়ে ভাবতাম তাকে।সে কি পারতো না একটিবার আমাকে সত্য টা বলতে?সে সেক্রিফাইস করে!ভালোবাসা নিয়ে আবার সেক্রিফাইস!সব কয়টা আসলে অমানুষ।এগুলো আসলে ভালোবাসার মর্যাদা দিতে জানে না।
তায়েব চৌধুরীর চিল্লাচিল্লি শুনে হঠাৎ সেখানে শিরিন চলে আসলো,আর বললো,বাবা কি হয়েছে?

–কিছু না।ড্রামা হচ্ছে এখানে।
শিরিন সেই কথা শুনে চুপ করে থাকলো।
তায়েব চৌধুরী তখন শিরিন কে বললো, আচ্ছা মা বলো তো তোমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কোনটা?
তোমার ভালোবাসা?না তোমার বান্ধুবীর ভালোবাসা?
–আগে নিজের ভালোবাসা।তারপর বান্ধুবীর ভালোবাসা।কেনো কি হইছে বাবা?
তায়েব চৌধুরী তখন হাসতে হাসতে বললো,বান্ধুবীর জন্য কেউ নিজের ভালোবাসাকে দূরে ঠেলে দেয়, শুনেছো কখনো?

–না বাবা।
–তাহলে শোনো ড্রামাটা।এই আমান! শিরিন কেও বল ড্রামাটা।ও নিজেও একটু বিনোদন নেক।
শিরিন তখন আমানকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বললো, কিসের ড্রামা?কিন্তু আমান শিরিন কে বলতে চাইলো না।
তায়েব চৌধুরী আবার আমানকে চুপ থাকা দেখে বললো,এ বলিস না কেনো এখন?বল তোদের ড্রামা।
আমান তখন একবার তার বাবার দিকে, তো অন্যবার শিরিনের দিকে তাকাতে লাগলো।তারপর বললো,
আসলে রানা আর মিনা দুইজন দুইজনকে খুবই ভালোবাসতো।কিন্তু,,,

তায়েব চৌধুরী আমানের কথা শুনে রাগ করে বললো,আবার রানা আর মিনাকে টানতেছিস?বউমাকে সব টা ক্লিয়ার করে বল।কারণ ওনারও জানা উচিত।এই ড্রামার সাথে ওনার বোনের জীবনও জড়িত।
এই বলে তায়েব চৌধুরী তার রুমে চলে গেলেন।তিনি ভাবতেই পারছেন না ছেলেমেয়েগুলো তাকে এতোটাই পর ভাবে।যার কারণে কেউ তাকে সত্য কথা বলে নি।উলটো সবার জীবন একদম শেষ করে ফেলেছে।যে সময়গুলো চলে গিয়েছে সেটা কি আর কখনো চলে আসবে?

তায়েব চৌধুরী কি সমাধান দেবেন,উলটো এসব কাহিনি শুনে আরো বেশি রাগ হলেন তিনি।নোমান কে হাতের কাছে পেলে হয় তো মেরেই ফেলতেন আজ।এতো টা রাগ উঠেছে ওনার।
এদিকে শিরিন পুরো কাহিনি শুনে নিজেও শকড খেয়ে গেলো।এখন তার বোনের কি হবে?তিনি তখন বললেন,এই তানিশা মেয়েটা তো দেখি খুবই বাজে একটা মেয়ে।এতো দেখি সবার মাথা নষ্ট করে ফেলেছে।এই মেয়েকে আমি কিছুতেই নোমানের বউ হতেই দেবো না।এই বাজে মেয়ে আমার সাথে একই বাড়িতে থাকবে। ইম্পসিবল!
আমান তখন বললো, তুমি যেমন টা ভাবছো ও আসলে তেমন মেয়ে নয়।তানিশা খুবই ভালো একটা মেয়ে।
–হ্যাঁ,তা তো দেখতেই পারছি কেমন ভালো মেয়ে।এক সাথে দুই ভাই এর মাথা খারাপ করে ফেলছে।সেই মেয়ে কেমন তা আর বলতে হবে না।

আমান এবার শিরিন কে ধমক দিয়ে বললো তুমি বার বার আমার নাম নাও কেনো?আমার জাস্ট ওকে ভালো লাগতো।সেজন্য বিয়ে করতে চাইছিলাম।আর বাবারও ইচ্ছা ছিলো ওকে এ বাড়ির বউ বানাতে।এটাই।এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।তাছাড়া ছেলেরা অবিবাহিত থাকলে এরকম সবার সাথেই বিয়ের কথা হয়।তাই বলে কি সবার সাথে বিয়ে হয়?বিয়ে তো হয় একজনের সাথে।যেমন তোমার সাথে আমার হয়েছে।এই বলে আমান শিরিন কে তার কাছে টেনে আনলো আর বললো,এখন আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।তুমি ছাড়া আমার মনে কেউ নাই এখন।
শিরিন তখন আমান কে দূরে সরে দিয়ে বললো,আর অভিনয় করতে হবে না।আমি কিন্তু সবই বুঝি।তানিশাকে নিজের ভাই এর বউ করে আনতো চাচ্ছো যাতে তুমি তাকে রোজ রোজ দেখতে পারো।

আমান সেই কথা শুনে বললো,তোমার মন মানসিকতা এতো নিচু কেনো শিরিন?এতো বছর সংসার করার পর তোমার এটা মনে হলো?তোমার তো নিজের ও মামাতো ভাই এর সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।তাহলে হলো না কেনো?সে কি তোমাদের বাসায় আসে না?তুমি তাকে দেখো না?কিভাবে তাহলে বাচ্চাদের মতো না বুঝেই কথা বলো।
শিরিন তখন বললো,আচ্ছা আমার কথা বাদ দাও।শিলাকে বুঝাবে কিভাবে?ও যখন শুনবে নোমান ওকে বিয়ে করতে চায় না তখন ওর মনের অবস্থাটা কেমন হবে?

আমান তখন বললো,ওকে বোঝাতেই হবে।যে করেই হোক ওকে বলতেই হবে কথাটা।তা না হলে যত দিন যাবে সে আরো বেশি কষ্ট পাবে।যেহেতু এখনো বেশি দিন হয় নি,আমার মনে হয় না তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে ওর উপর।তাছাড়া ও যথেষ্ট বুদ্ধিমান মেয়ে।তোমার মতো না বুঝে কথা বলে না।ওকে আমি বোঝাবো।দরকার হলে নোমানের নামে আজেবাজে কথা বলবো।যাতে ওর মন বিগড়ে যায়।এই বলে আমান চলে গেলো অফিসে।নোমানের চক্ররে পড়ে সে আজ অফিসেই যায় নি।

এদিকে নোমান তো চেম্বারে যাওয়া বাদ দিয়ে হাত পা গুটিয়ে ঘরেই বসে আছে। মনে হচ্ছে ঘরে বসে থাকলেই সব সম্যাসার সমাধান হবে।হঠাৎ শিলা ফোন দিলো নোমানকে।নোমান ফোন রিসিভ করবে কি করবে না ভাবতে লাগলো।তারপর করেই ফেললো রিসিভ।
ওপাশ থেকে শিলা বললো,আপনার হয়েছে টা কি?কাল থেকে ফোন বন্ধ।আবার নিজেও আমাকে কল দিচ্ছেন না।আজ চেম্বারেও যান নি।আমি দুপুরে খাবার নিয়ে গেছিলাম হসপিটালে।
নোমান তখন বললো আসলে আমার এক্স আবার ফিরে এসেছে আমার জীবনে।সে আমাকে পাওয়ার জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।সেজন্য আমি বসে বসে ভাবতেছি কি করা যায়?

শিলা সেই কথা শুনে ফিক ফিক করে হেসে উঠে বললো,আপনার আবার এক্স ও আছে?সো ফানি?যিনি তার উডবি ওয়াইভের সাথেই ঠিক করে কথা বলতে পারে না তার আবার ভালোবাসার মানুষ ও আছে?
–কি মনে হয় তোমার?আমি কি কাউকে ভালোবাসতে পারি না?
–অবশ্যই না।কতবার বলি আমরা কিছুদিন পর স্বামী স্ত্রী হতে চলেছি।চলুন একটু রোমান্টিক কথাবার্তা বলি।কোনো জায়গায় বেড়াতে যাই।একটু রোমান্টিক মুহুর্ত উপভোগ করি।কই শোনেন না তো আমার কথা?
নোমান তখন বললো,শিলা আমি সত্যি ফান করছি না।সত্যি আমার একজন ভালোবাসার মানুষ ছিলো।একসময় অনেক পাগলামিও করেছি তারজন্য।

–ভালো তো।তাহলে ব্রেকাপ হলো কিভাবে?
নোমান তখন হাসতে হাসতে বললো,প্রেমই তো করি নি।তাইলে ব্রেকাপ হবে কেমনে?শুধু আমি তাকে ভালোবাসতাম।প্রপোজও করি।বাট সে রিজেক্ট করে দেয়।
শিলা তখন হাসতে হাসতে বললো,ও তার মানে ছ্যাকা খাইছেন।ছ্যাকা খাইয়া ব্যাকা হইয়া তারপর আমাকে বিয়ে করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
নোমান সেই কথা শুনে বললো,বিশ্বাস করো তোমাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত আমি কখনোই নেই নি।ভাবী নিজে নিজেই ঠিক করেছে।ভাইয়াও বললো বিয়ে টা করে নে।আমিও ভাবলাম করি।যে ভালোবাসে না শুধু শুধু তার অপেক্ষা কেনো করবো?
শিলা এবার একটু সিরিয়াস হলো।সে তখন বললো তাহলে এখন কি সেই মেয়ে এসে বলতেছে যে সে আপনাকে ভালোবাসে।

–হুম।
–আর তাতেই আপনার রাগ অভিমান সব গলে গেলো?
–হুম।
–তার মানে আপনি আমাকে আর বিয়ে করতে চাচ্ছেন না?
–হুম।
শিলা সেই কথা শুনে বললো,আপনি কি করে সিওর হলেন সে আপনাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে।যার জন্য আপনার তার কাছে ব্যাক করা উচিত।

নোমান তখন বললো,সেই মেয়ে আমাকে প্রথম থেকেই ভালোবাসতো।কিন্তু তার বান্ধুবীর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হইছে দেখে প্রকাশ করে নি নিজের ভালোবাসা।কিন্তু এখন যখন তার বান্ধুবীর সাথে আমার বিয়ে হয় নি সে পাগলের মতো ছুটে এসেছে।এতো বছর ধরে সে না কারো সাথে রিলেশনে গেছে,না বিয়ে করেছে।
শিলা তখন বললো,কে সেই মেয়ে?একটিবার দেখতে চাই তাকে?এতো ভালোবাসে আপনাকে?তবে মেয়েটি আপনার থেকে ভালো কাউকে ডিজার্ব করে।

নোমান সেই কথা শুনে বললো,কেনো?আমি কোন দিক দিয়ে খারাপ?
–খারাপ না।আপনিও সব দিক দিয়েই ভালো আছেন। বাট আপনি তাকে ভুলে গিয়ে আমার সাথে এনগেজড করে ফেলছেন।তাহলে তো আমি বলবো আপনি তাকে ভুলে গেছেন।আপনি তাকে ভালোবাসেন নি কখনো।
নোমান সেই কথা শুনে বললো,আমি সত্যি ভালোবেসেছি ওকে।কি বলছো এসব?ওর চিন্তায় খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত বাদ দিয়েছি। রাতের পর রাত নির্ঘুমে কাটিয়েছি।রাগ করে নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে অচেনা এক জায়গায় চলে গিয়েছি।একবার তো মারাত্মক ভাবে এক্সিডেন্ট ও হয়েছিলো আমার।তবুও সে প্রপোজ এক্সসেপ্ট করে নি আমার।আমিও সেজন্য রাগ করে আর জিদের বশে তোমার সাথে এনগেজড করে নিয়েছি।

শিলা সেই কথা শুনে বললো,ওগুলো আপনার ভালোবাসা ছিলো না।ওগুলো ছিলো পাগলামি। আর এখন যেটা ফিল করছেন সেটা হলো সহানুভূতিতা।মানে মেয়েটা আপনাকে ভালোবেসে অন্য কাউকে গ্রহন করতে পারে নি বিধায় আপনি সেই কথা শুনে জাস্ট ইমোশনাল হয়ে গিয়েছেন।
নোমান শিলার কথা শুনে ভীষণ চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলো আর ভাবতে লাগলো সত্যি কি সে তানিশাকে ভালোবাসে না?তানিশার প্রতি তার সহানুভূতি হচ্ছে?না, এটা হতে পারে না।সে সত্যি ভালোবাসে তানিশাকে।এখন সেটা নোমান প্রমান করবে কিভাবে?
সেজন্য নোমান শিলাকে বললো,শিলা একটা হেল্প করতে পারবা?

–কি হেল্প?
–আচ্ছা সত্যিকার ভাবে কাউকে ভালোবাসলে তার কি কি গুন থাকতে হবে?মানে সে কি করে বুঝবে আমিও তাকে প্রচন্ডভাবে ভালোবাসি।
শিলা নোমানের কথা শুনে বুঝতে পারলো নোমান সত্যি সত্যি মেয়েটাকে ভালোবাসে।তা না হলে তার থেকে এভাবে টিপস চাই তো না?শিলার চোখের কোনায় আকস্মিকভাবে জল এসে গেলো।সে তার চোখের পানি মুছিয়ে বললো,
এখন আপনার উচিত মেয়েটাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করা।তাহলেই মেয়েটি বুঝবে আপনিও তাকে ভালোবাসেন।
নোমান শিলার কথা শুনে ভীষণ আশ্চর্য হলো।শিলা বলছে কি এসব।সেজন্য নোমান বললো,কিন্তু তুমি?তোমার সাথে যে আমার এনগেজড হয়েছে?
শিলা তখন বললো আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন?

–না
–তাহলে আমার কথা কেনো ভাবছেন?আপনি যাকে ভালোবাসেন এখন আপনার শুধু তাকে নিয়েই ভাবতে হবে।
নোমান সেই কথা শুনে এতো খুশি হলো যে মনে হলো তার ঘাড় থেকে অনেক বড় একটা বোঝা নেমে গেলো।সে তো টেনশনে একদম শেষ হয়ে যাচ্ছিলো।সেজন্য নোমান শিলাকে বললো, তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো সত্যি আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।আমি জানতাম তুমি অনেক ভালো মেয়ে।কিন্তু তুমি যে এতো ভালো সত্যি আমি বুঝতে পারি নি।
শিলা নোমানের কথা শুনে এতোটাই আশ্চর্য হলো যে সে কথা বলার ভাষায় হারিয়ে ফেললো।নোমান তাহলে তাকে মন থেকে মেনে নেয় নি।কি সহজে ভুলে গেলো তাকে।সেজন্য শিলা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, ইটস ওকে নোমান।আসলে যে যাকে ভালোবাসে তার সাথেই তাকে বিয়ে করে নেওয়া উচিত।কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে বিয়ে করলে আসলে শান্তি পাওয়া যায় না।আমি তোমাকে জোর করে বিয়ে করলে কোনো শান্তিই পেতাম না।অযথা আমাদের সবার জীবন নষ্ট হয়ে যেতো।

নোমান শিলার কথাবার্তা শুনে একদম ইমোশনাল হয়ে গেলো।সে তখন বললো,শিলা! তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?
শিলা অনেক ভেবেচিন্তে বললো,হ্যাঁ।কারন না বললে সেটা ভালোবাসার অপমান করা হবে।
নোমান তখন বললো, তাহলে এখন তুমি যে কষ্ট পাবে?
–হ্যাঁ পাবো।কিন্তু তোমার আমার বিয়ে হলে যে তোমরা দুইজন কষ্ট পাবে।এভাবে অন্যকে কষ্ট দিয়ে কখনো ভালো থাকা যায় না নোমান।শিলা কথাগুলো বলছে আর কাঁদছে।সে সত্যি সত্যি নোমানকে ভালোবেসেছিলো।সে তো ভাবতেই পারছে না নোমান অন্য কাউকে ভালোবাসে।

নোমান শিলার কথা শুনে আফসোস করতে করতে বললো,তোমার মতো করে যদি তন্নি এভাবে ভাবতো তাহলে আমাদের কারো জীবনই আজ এলোমেলো হতো না।আমি আর তানিশাও সুখে থাকতাম।তন্নি নিজেও ভালো থাকতো।আর মাঝখানে তোমার জীবনটাও এলোমেলো হতো না?
শিলা এবার তার চোখের পানি মুছে নিয়ে বললো,আপনার গার্লফ্রেন্ডের নাম কি তানিশা?
–হ্যাঁ।
–তাহলে তো মনে হয় আমি দেখেছি তাকে।ভাইয়ার জন্য দেখতে গিয়েছিলাম তানিশা নামের কাউকে।
নোমান তখন বললো, হ্যাঁ হ্যাঁ, সেই মেয়েই।

শিলা সেই কথা শুনে বললো,আপনার পছন্দ আছে।আপুটি অনেক কিউট।তার উপর আবার ডাক্তার।ভালোই মানাবে আপনার সাথে।
নোমান তখন বললো, তুমি মন থেকে বলছো কথাগুলো?
–হ্যাঁ সিওর।একদম মন থেকেই বলছি।আপনাদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।

এই বলে শিলা কল কেটে দিলো।সে বুঝতে পারছে না তার এতো খারাপ লাগছে কেনো?মনে হচ্ছে কেউ তার বুকটা মুহুর্তের মধ্যে ক্ষতবিক্ষত করে দিলো।শিলা তবুও নিজেই নিজেকে শান্ত্বনা দিতে লাগলো।কারণ যে সম্পর্কে দুইজনার ভালোবাসা থাকবে না সে সম্পর্ক না গড়াই ভালো।ভাগ্যিস সম্পর্ক তৈরি হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে গেলো। তা না হলে সারাজীবন তাকে পশ্চাতে হতো।সেই ভুলের মাশুল সে কি করে দিতো তখন।সারাজীবন কাঁদার চেয়ে কিছুদিন কাঁদা অনেক ভালো ভালো।

কিছুক্ষন পর শিরিন আবার ফোন দিলো শিলাকে।শিলা কল রিসিভ করতেই শিরিন বললো,
শিলা শোন!তোর দুলাভাই কিন্তু তোকে নোমানের নামে উল্টাপাল্টা বোঝাবে।খবরদার কান দিবি না সে কথায়।নোমান কিন্তু অনেক ভালো ছেলে।ওর কোনো খারাপ দিক নাই কিন্তু।তোর দুলাভাই চাচ্ছে না তোর সাথে নোমানের বিয়ে হোক।বুঝেছিস?
শিলা তার বোনের কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,হুম বুঝেছি। ঠিক আছে। এখন রাখছি।

–আগেই রাখিস না।শোন ভালো করে।তুই শুধু বলবি নোমান যেমনই হোক তবুও আমি তাকেই বিয়ে করবো।আমি আর অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।
–আচ্ছা ঠিক আছে বলবো।এই বলে শিলা কল কেটে দিলো।আর এবার জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো। তার খুবই খারাপ লাগছে।যাকে নিয়ে দিন রাত স্বপ্ন দেখে ফেললো সে নাকি তাকে কোনোদিন ভালোই বাসে নি।ভাবতেই শিলার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তে লাগলো।
রাতের বেলা আমান আসলো শিলাদের বাড়িতে।শিলার মা জামাইকে দেখে তো খুশিতে একদম গদগদ হয়ে গেলো।তিনি আর দেরি না করে আমানের জন্য খাবার বানাতে গেলেন।এদিকে আমান শিলা শিলা বলে তার রুমে প্রবেশ করলো।
শিলা তার দুলাভাই এর কন্ঠ শুনে তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছিয়ে নিলো।আর এগিয়ে গিয়ে বললো,দুলাভাই আপনি হঠাৎ?

–আসলাম একটা প্রয়োজনে।খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলতে চাই তোকে।
শিলা তখন বললো কি কথা দুলাভাই?
আমান তখন বললো, আমি যে সবসময় তোর ভালো চাই, জানিস তো?
–হ্যাঁ, দুলাভাই।আপনি একদম আমার বড় ভাই এর মতো।
আমান সেই কথা শুনে বললো,তাহলে আমি একটা উপদেশ দিবো শুনবি কি?
–হ্যাঁ সিওর।বলতেই শিলা কেঁদে উঠলো।
আমান তখন বললো কাঁদছিস কেনো এভাবে?
–কই কাঁদছি?বলো তুমি কি বলতে চাও।
–না থাক বলবো না।

শিলা তখন বললো, তুমি কি বলতে চাও সেটা আমি জানি।আপু আমাকে আগেই ফোন করে বলে দিয়েছে।যে তুমি নোমানের নামে উল্টোপাল্টা কথা বলে আমার মন টা তিক্ত করতে এসেছো।কিন্তু এসবের কোনো প্রয়োজন নেই দুলাভাই।আমি বাস্তবতা মেনে নিয়েছি।
আমান মনে মনে ভাবলো এই শিরিন টা আর মানুষ হলো না।এতো করে বললাম ওকে কিছু বলো না আগেই।তবুও বলে দিয়েছে।আমান সেজন্য শিলাকে শান্ত্বনা দিয়ে বললো, এর থেকে অনেক ভালো ছেলের সাথে তোর বিয়ে দেবো আমি।
শুধু বল কোন পেশার ছেলে চাই তোর?

শিলা তখন হাসতে হাসতে বললো, কোনো পেশারই না।আমার কপালে যাকে লেখা আছে শুধুই তাকে চাই আমি।
শিলার কান্না করা দেখে আমানের খুবই খারাপ লাগলো।কিন্তু আমানের কিছুই করার নাই।যেখানে নোমান নিজের মুখে বলছে সে বিয়ে করবে না,সেখানে সে আর কি করতে পারে?তবুও সে শিলাকে অনেক বুঝিয়ে বিদায় নিলো তাদের বাড়ি থেকে।আমান তার সাধ্যমতো সবদিক দিয়ে ম্যানেজ করলেও এখন পর্যন্ত তার বাবার মনোভাব বুঝতে পারলো না।তার বাবার মনে যে কি চলছে কিছুই বুঝতে পারলো না সে?তবুও সাহস করে আরেকবার গেলো তার বাবার কাছে।

আমান তার বাবার হাত ধরে বললো,, বাবা নোমানকে এবার একটু মাফ করে দাও না?ওকে আর কত কষ্ট দেবে?ও বেচারা সারাক্ষণ শুধু তোমার কথাই বলে।বাবা এখন কি করছে?বাবা ঠিকভাবে অফিস যাচ্ছে তো?বাবার শরীল ভালো আছে কিনা?
তায়েব চৌধুরী আমানের কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,নোমান কি আমাকে আদৌ বাবা ভাবে!যদি ভাবতো তাহলে আর এভাবে অভিমান করে দূরে থাকতো না।আমি না হয় সেদিন রাগ করে দুই একটা চড় মেরেছি।রাগ করে বাসা থেকে বের করে দিয়েছি।কিন্তু ও কি পারতো না আরেকদিন আমার সাথে এসে দেখা করতে।আমার পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইতে।কিন্তু ও সেসবের কিছুই করে নি।উলটো আলাদা বাসা নিয়ে একা একা থাকছে।ভালোই তো আছে সে?ওর জীবনে আমার কি দরকার আছে?এই বলে তায়েব চৌধুরী রুম থেকে চলে গেলেন।

আমান বুঝতে পারছে না তার বাবার রাগ ভাংগাবে কেমনে?সেজন্য সে নোমানকে প্রস্তাব দিলো সে যেনো এখনি একবার বাসায় আসে।।
নোমান সেই কথা শুনে বললো, বাবা কি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে?
–হ্যাঁ হ্যাঁ দিয়েছে।তুই শুধু এখন বাসায় আয়।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৩

নোমান ভেবেছে তার বাবা ঠিকই তাকে মেনে নিয়েছে।তার দোষ মাফ করে দিয়েছে।সেজন্য নোমান হাসতে হাসতে বাসায় চলে এলো।কারণ কালকের থেকে এখন কিছুটা ভালো লাগছে তার।সবচেয়ে বড় চিন্তা যাকে নিয়ে ছিলো সেই শিলা নিজের থেকে সরে গেছে।তার বাবাও ঠিক হয়েছে।এখন তার সাথে তানিশার বিয়ে কে আর আটকায়?নোমান একদম খুশিতে গদগদ হয়ে তাদের বাসায় প্রবেশ করলো।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৫