ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৫

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৫
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

নোমান বাসায় প্রবেশ করতেই তায়েব চৌধুরীর সাথে দেখা তার।তায়েব চৌধুরী নোমানের সাহস দেখে ভীষণ অবাক হলেন।কিন্তু নোমান ভেবেছে তার বাবা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে সেজন্য তায়েব চৌধুরী কে সে জড়িতে ধরতে গেলো।কিন্তু নোমান এটা জানে না যে তায়েব চৌধুরী তার উপর কত টা রেগে আছেন।নোমানকে দেখামাত্র তায়েব চৌধুরী ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চড় মারলো নোমানের গালে তারপর বললো,কেনো এসেছিস এ বাসায়?তোকে কে ডেকেছে।বের হয়ে যা এক্ষুনি।আমি তোর মুখ দেখতে চাই না।

নোমান তার বাবার চড় খেয়ে একদম আহাম্মকের মতো তাকিয়ে রইলো সে কি উত্তর দেবে বুঝতে পারলো না।এদিকে চড় খেয়ে নোমানের চোখের চশমা মেঝেতে পড়ে গেছে।চশমা ছাড়া নোমান চোখে একদম আবছা আবছা দেখতে লাগলো।যার কারণে সে তার চশমাটা খুঁজতে লাগলো।কিন্তু পেলো না খুঁজে। কারণ চশমাটা একটু দূরে পড়েছে।সে তো আবার দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পারে না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তায়েব চৌধুরী নোমানকে কি শাসন করবেন আর কি মারবেন,ছেলের এমন করুন অবস্থা দেখে ওনার ভীষণ মায়া হলো।সেজন্য তিনি নিজেই মেঝে থেকে তুলে আনলেন চশমাটা।কিন্তু চশমাটার দুটি কাচই ভেংগে গিয়েছে।যর কারনে তায়েব চৌধুরী চশমা টা ফেলে দিলেন।আর নোমানকে জিজ্ঞেস করলেন,কাছে এক্সট্রা চশমা নেই?
নোমানের প্যান্টের পকেটে আরো একটি চশমা আছে তবুও সে বললো নাই চশমা।এই অজুহাতে যদি তার বাবার রাগ কিছুটা কমে।
হ্যাঁ,সেটাই হলো।তায়েব চৌধুরীর রাগ কিছুটা কমে গেলো। তিনি আর কিছু বললেন না নোমানকে।তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন।

এদিকে আমান বাসাতে থাকা সত্ত্বেও নোমানের কাছে আসে নি।এমনকি শিরিন কেও বারণ করে দিয়েছে,কেউ যাতে ওদের বাবা ছেলের মাঝে না যায়।যাতে তারা বাবা ছেলে নিজেরাই নিজেদের ব্যাপার মিটমাট করে নেয়।কিন্তু কোনো মিটমাট ই হলো না।তার বাবা তো কিছু না বলেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন।
তায়েব চৌধুরী চলে যাওয়ার সাথে সাথে নোমান তার এক্সট্রা চশমাটি বের করলো।তারপর সেটি চোখে দেওয়ার সাথে সাথে পরিষ্কার দেখতে পেলো। নোমান এবার সবাইকে খোঁজার জন্য রুমে চলে গেলো।সে বুঝতে পারলো না বাসার বাকি সদস্য রা কোথায় এভাবে লুকিয়ে আছে।বিশেষ করে তার আমান ভাই যে তাকে ফোন করে ডাকলো।তাকেও তো নোমান দেখতে পারছে না।

কিন্তু নোমান যখন তার ভাই এর ঘরে গেলো গিয়ে দেখে তার ভাই আর ভাবী দুইজনই বসে আছে। তখন নোমান রাগ করে বললো,তোমরা দুইজন এখানে কি করো?কই আমাকে একটু বাবার হাত থেকে বাঁচাবে তা না করে লুকিয়ে আছো সব?
আমান তখন বললো,আমাদের কে দেখলে বাবা আরো বেশি রাগ করতেন।হয় তো তোকে টেনে বাসা থেকেই বের করতেন।এখন তো দুই চারটা চড়ের উপর দিয়ে চলে গেলো।
নোমান তখন বললো, ভাইয়া তুমি না বললে বাবা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।বাবার রাগ কমে গেছে। তাহলে বাবা এরকম রিয়্যাক্ট করলো কেনো?

আমান তখন বললো,বাবার রাগ মোটেও কমে নি।আর তোকে ক্ষমাও করেন নি।আমি চালাকি করে তোকে ডেকে এনেছি।তাছাড়া তুই যে আসতে চাস না।এভাবে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ালে কিভাবে সমস্যার সমাধান হবে?
নোমান তখন বললো, তাই তো বলি বাবা এরকম রিয়্যাক্ট করলো কেনো?আমার তো এখন দিয়ে ভয় হচ্ছে।ভাগ্যিস চশমাটা ভেংগে গিয়েছিলো তা না হলে জানেই মেরে ফেলতো আজ।যেভাবে এট্যাক করেছিলো।
আমান তখন বললো, আচ্ছা ওসব চিন্তা এখন বাদ দে।বাবার রাগ যে কমে গেছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে।ওরকম একটু অল্প অল্প অভিমান তো করবেই।তার আগে বল তোর তানিশার কি খবর?কথা বলেছিস ওর সাথে?তোদের মধ্যকার ঝামেলা মিটমাট করেছিস?

নোমান মাথা নাড়িয়ে বললো, না।কি কথা বলবো?আর কিভাবে মিটমাট করবো?আমি তো এসবের কিছু বুঝি না।
–ওরে আমার কচি খোকা।কিছুই বোঝে না।এই বলে আমান নোমানের মাথায় একটা টেলা দিলো আর বললো,কি কথা বলবি সেটা তুই ভালো জানিস।সেটাও কি আমাকেই শিখে দিতে হবে?ওর সাথে সম্পর্ক টা তো আগে ঠিক করতে হবে।যেভাবে ওর উপর রাগারাগি করেছিস না জানি সে এখন কি করছে।এদিকে তো আমি ম্যানেজ করছিই।
নোমান সেই কথা শুনে বললো,ওর ফোন নাম্বার নেই আমার কাছে।

আমান তখন নিজের মোবাইল থেকে তানিশার নাম্বার টা বের করে দিলো।
শিরিন তা দেখে বললো,বাহঃ ভালোই তো।তাহলে তানিশার ফোন নাম্বার তোমার কাছেও আছে।অথচ যার কাছে থাকার কথা তার কাছেই নাই।
আমান তখন বললো, কার সামনে কি করলাম ভাই?এরে এখন বোঝায় কে?নোমান তুই কথা বল রুমে গিয়ে।আমি তোর ভাবিকে এখন বিস্তারিত ভাবে বলি এই নাম্বার আমি কিভাবে পেলাম।তা না হলে উনি আমার মাথাটা একদম চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।
নোমান তার ভাই এর কথা শুনে হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে গেলো।

নোমান কত দিন পর নিজের রুমে ঢুকলো।ভাবতেই তার মন টা খারাপ হয়ে গেলো।সে চলে যাওয়ার পর আর কেউ থাকে নি এ রুমে।তবুও রুমটি গোছানোই আছে।হয় তো শিরিন ভাবি ঠিক করে রেখেছে এই ভেবে নোমান তার বেডে ধপাস করে শুয়ে পড়লো।আর তানিশার নাম্বারে কল দিলো।কিন্তু তানিশা রিসিভ করলো না ফোন।নোমান মনে হয় গুনে গুনে ১০-২০ বারের মতো দিলো তবুও তানিশার কোনো রেসপন্স পেলো না সে।নোমান তখন ভাবলো হয় তো তানিশা রাগ করে তার কল রিসিভ করছে না।কিন্তু তানিশা আজ একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ রোগীর সিজার করছে।সেজন্য সে ব্যস্ত আছে এখন।তাছাড়া সিজার করার সময় তার ফোন সবসময় সাইলেন্ট রাখে সে।

রোগীটির নাম ছিলো কোহিনুর বেগম।যার বিয়ের পাঁচ বছর চলছে তবুও এখন পর্যন্ত কোনো বাচ্চা হচ্ছিলো না।সেজন্য একদিন কোহিনূর বেগম তানিশার কাছে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসে।আর এসেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।এই বাচ্চা না হওয়ার জন্য তার শশুড়বাড়ি থেকে নাকি খুবই অত্যাচার করা হচ্ছে তাকে।একদিকে শশুড় শাশুড়ী তো অন্যদিকে পাড়াপ্রতিবেশি। সবাই নানা ধরনের কথা শোনান তাকে।শেষমেষ হাজব্যান্ড ও নাকি হুমকি দেয়।এবার বাচ্চা না হলে ডিভোর্স দিয়ে দেবে।সেজন্য কোহিনূর বেগম তার মায়ের সাথে এসেছিলেন তানিশার চেম্বারে।

তানিশা কোহিনূর বেগমের ভালোভাবে চিকিৎসা করতে লাগলো,আর বিভিন্ন নিয়মকানুন শিখিয়ে দিলো। আর বললো এই নিয়ম ঠিক তিনমাস ফলো করবেন।তারপর ফলাফল কি হয় জানাবেন।কহিনুর বেগম তানিশার কথামতো সেইভাবেই চলে,আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি তিন মাসের মধ্যেই কনসিভ করেন।কিন্তু তানিশাকে আর জানান না।এমনকি কোনো যোগাযোগ ও করেন না।

কিন্তু হঠাৎ করে ২৩ সপ্তাহে আবার এসে উপস্থিত হন কোহিনূর বেগম।আর কাঁদতে কাঁদতে বলেন তার নাকি জরায়ুর মুখ খুলে গেছে। এই বেবী আর রাখা সম্ভব না।তাদের এলাকার নিকটতম এক হাসপাতালের ডাক্তার বলেছেন।
কিন্তু তানিশা কোহিনূর বেগমকে বলেন,আপনি যদি আমার কথামতো চলেন,আর আমার নিয়ম ফলো করেন তাহলে এই বাচ্চা রাখা সম্ভব।

কোহিনূর বেগম আর তার মা সেই কথা শুনে সাথে সাথে তানিশার পায়ে পড়ে।আর বলে ডাক্তার ম্যাডাম,প্লিজ চেষ্টা করুন একটু।এবার আর কোনো গাফলতি করবো না।প্লিজ ডাক্তার ম্যাডাম।
তানিশা তা দেখে বলে এই আপনারা কি করছেন,উঠুন।পায়ে পড়ছেন কেনো?সব আল্লাহর রহমত।উনি চাইলে সবই সম্ভব।তবে আমি শেষ চেষ্টা করবো।
তানিশা সেই কথা শুনে তার শেষ চেষ্টা করে।সে কোহিনূর বেগমের জরায়ুর মুখ সেলাই দিয়ে রাখে আর ওনাকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখেন।এ কয় মাস কোহিনূর বেগম তার বাবার বাড়ি থাকেন।কিন্তু ফোনে ফোনে তিনি তানিশার থেকে চিকিৎসা নিতেন।এভাবে ৩৪ সপ্তাহ পার হয়ে গেলো।

কিন্তু আজ হঠাৎ করে ওনার ব‍্যাথা উঠলে দ্রুত তিনি তানিশাদের হসপিটালে চলে আসেন। তানিশা সেজন্য প্রথমে কোহিনুর বেগমের USG করলো।USG করে তো তানিশার চোখ একদম কপালে উঠে গেলো।কারণ এ যেনো একাদশে বৃহস্পতি।কারণ কোহিনূর বেগমের পেটে জমজ বাচ্চা আছে।সেজন্য তানিশা আর দেরী না করে দ্রুত ডেলিভারি করে।

সব ঠিক আছে।শুধু বেবী দের ওজন কম কিন্তু মাশাল্লাহ্ বেবীরা সুস্থ আছে।মাও ভালো আছে। কোহিনূর বেগম আল্লাহ্ র কাছে চেয়েছিল একটি বেবী আল্লাহ্ দিয়েছেন দুইটি বেবী।দুইটি বেবি পেয়ে কোহিনূরের পরিবারের সবাই এতো খুশি হলো যে তানিশাকে কিছু গিফট দিতে চাইলো।কিন্তু তানিশা বললো,আমার জন্য শুধু দোয়া করবেন।আমি যেনো এইভাবেই সব সময় সবার উপকার করতে পারি।তবে তানিশা কোহিনূর বেগমের হাজব্যান্ড আর শশুড় শাশুড়ী কে বললেন,কখনোই কারো মনে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে নেই।সব সময় আল্লাহর উপর ভরসা করে চলতে হয়।আর কোনো নারী কিন্তু নিজের ইচ্ছাতে বাচ্চা নিতে পারে না।আল্লাহ চাইলে তবেই সম্ভব হয়।দেখলেন আল্লাহর নিয়ামত।একটির জায়গায় দুইটি বাচ্চা পেলেন।
কোহিনূরের শশুড় বাড়ির লোকজন তো একদম লজ্জার মধ্যে পড়ে গেলো।তারা বুঝতে পারলো আসলেই তারা কোহিনূরের সাথে অন্যায় করেছে।

আজ তানিশার মন টা যেনো খুশিতে ভরে উঠলো।সে মনে মনে ভাবলো এ পেশায় এসে সত্যি তার জীবন সার্থক হয়েছে।সবাই কত দোয়া করছে তাকে।আর মানুষ জনের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে তার খুব বেশি আনন্দ হচ্ছে।
এদিকে নোমান কল দিতেই আছে তানিশাকে।বেচারার মনে যে নতুন করে প্রেমের বাতাস বইতেছে।তার আর দেরী সইছে না কিছুতেই।কিন্তু তানিশা আছে তার রোগী নিয়ে ব্যস্ত।সে একটিবারের জন্যও ফোন হাতে নিলো না।এদিকে নোমান ছটফট করতে লাগলো আর অপেক্ষা করতে লাগলো কখন তানিশা কল বেক করবে?

কিন্তু তানিশা অপারেশন শেষ করে সবার আগে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর রেস্ট হাউজে গিয়ে রেস্ট করলো।
অন্যদিকে নোমান তার রুমে শুয়ে তানিশার কলের অপেক্ষা করছে আর ভাবতেছে কবে সব ঠিক হয়ে যাবে।কবে সে আর তানিশা এক হয়ে যাবে।তার আর কিছুতেই ভালো লাগছে না।
হঠাৎ তায়েব চৌধুরী প্রবেশ করলেন নোমানের রুমে।নোমান ভাবতেই পারে নি তার বাবা আসবে তার রুমে।সেজন্য সে চশমাটা লুকানোর সময়ই পেলো না।এদিকে তায়েব চৌধুরী অন্য আরেকটি নতুন চশমা কিনে এনেছেন।কারন তিনি জানেন নোমান চশমা ছাড়া এক সেকেন্ড চলতে পারে না।
নোমানের চোখে চশমা দেখে তায়েব চৌধুরী হা করে তাকিয়ে রইলো।তিনি কিছু বলার আগেই নোমান বললো,চশমা টা ভাইয়া দিলো।ওর কাছে নাকি ছিলো।

তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,ও।আমি আরো নতুন আরেক টা নিয়ে আসলাম কিনে।
নোমান তার বাবার কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।কারন তার প্রতি এতো রাগ অভিমান থাকার পর ও তার বাবা নতুন আরেকটা চশমা কিনে এনেছেন।
নোমান সাথে সাথে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো,বাবা,সরি।ভুল হয়েছে আমার।আমি সত্যি বুঝতে পারি নি তুমি এতো টা রেগে যাবে আমার উপর।প্লিজ বাবা ক্ষমা করে দাও না?
তায়েব চৌধুরী তখন নোমান কে সরিয়ে দিয়ে বললো,চশমা টা রাখো।আর যত দ্রুত সম্ভব এ বাসা থেকে চলে যাও।ভেবো না ক্ষমা করে দিয়েছি তোমাকে।চশমা ছাড়া যাবে কিভাবে সেজন্যই নিয়ে এসেছি।এই বলেই তায়েব চৌধুরী চলে যেতে ধরলেন।

নোমান বুঝতে পারলো তার বাবার রাগ এখনো কমে নি।তবে ভালোবাসা আর টান সেই আগের মতোই আছে।সেজন্য নোমান এবার তার বাবার একদম পায়ে পড়লো।আর বললো,বাবা,প্লিজ রাগ টা একটু কমাও।প্লিজ বাবা।
তায়েব চৌধুরী তখন সরে গেলো।নোমান তখন তার বাবার কাছে গিয়ে বললো,
তুমিই বলো? যাকে আমি ভালোবাসি না তাকে কি করে বিয়ে করি?কিন্তু তুমি যেভাবে জোর করছিলে মুখের উপর নাও করতে পারি নি সেজন্য পালিয়ে গিয়েছি।এতে আমার দোষ টা কোথায়?
তায়েব চৌধুরী তখন নোমান কে আবার সরিয়ে দিলো,আর বললো,হ্যাঁ তোর তো কোনো দোষই নাই।তার আগে বল?পালিয়ে কি লাভ হয়েছে?দেখা আমাকে লাভ টা?

নোমান তখন বললো, তাহলে কি করতাম আমি?
–কি করতিছ মানে?আমাকে সত্য টা বললে কি প্রবলেম হতো?
নোমান তখন বললো, আমি তো নিজেও সত্য টা জানতাম না।কিছুদিন আগে জানলাম।
তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,ধর আমি তোকে ক্ষমা করে দিলাম।কিন্তু যে বছর গুলো জীবন থেকে হারিয়েছিস সেগুলো কি আর ফেরত পাবি?
নোমান তার বাবার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।

তখন তার বাবা বললো, চুপ করে আছিস কেনো?উত্তর দে?তারপর শুনলাম আমানের শালির সাথে আবার এনগেজড ও করেছিস।বিয়ে টা কি তোর কাছে ছেলেমানুষী মনে হয়?এখন আবার শুনছি শিলাকে বাদ দিয়ে তানিশাকে বিয়ে করতে চাচ্ছিস?কি শুরু করেছিস বল তো তুই?
নোমান সেই কথা শুনে বললো,বাবা! ভুল হয়ে গেছে আমার।আমি বুঝতে পারি নি।
তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, এতো ভুল কেনো হয় তোমার?বুঝেশুনে কাজ করতে পারো না?এখন এ ভুলের মাশুল কে দেবে?

ছাপোস,তানিশার সাথে তোর বিয়ে হলো,কিন্তু তখন শিলার কি হবে?ও বেচারা কত কষ্ট পাবে ভেবেছিস একবার?
নোমান এবার একদম নিশ্চুপ হয়ে রইলো।সে বুঝতে পারছে আসলেই সে ভুল করেছে।তার বাবার প্রশ্নের কোনো উত্তর নাই তার।
হঠাৎ নোমানের ফোনে রিং বেজে উঠলো।তানিশা কল দিয়েছে।নোমান ফোনের দিকে তাকাচ্ছে শুধু কিন্তু রিসিভ করছে না।তখন তার বাবা ধমক দিয়ে বললো, কল রিসিভ করো।এই বলে তিনি চলে গেলেন।
আর নোমান এদিকে তাড়াতাড়ি করে কল টা রিসিভ করলো।আর বললো,হ্যালো তানিশা।

কিন্তু তানিশা কোনো উত্তর দিলো না।
নোমান তখন বললো, কথা বলো না কেনো?প্লিজ রিপ্লাই দাও।
তানিশা এবারও চুপচাপ।
নোমান তখন বললো, আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই তানিশা।কখন কোথায় দেখা করবে জাস্ট জানিয়ে দাও।
তানিশা এতোক্ষনে উত্তর দিলো।সে বললো,আমি আপনার সাথে কখনোই দেখা করবো না আর।আপনি কি জন্য কল দিয়েছেন?সেদিন এতোগুলো অপমান করেও কি শান্তি হয় নি আপনার?এজন্য আবার ডাকছেন আমাকে যাতে আমাকে আরো বেশি অপমান করতে পারেন।

নোমান তখন বললো,সরি ইয়ার।ভুল হয়ে গেছে আমার।সরি।প্লিজ রাগ করো না।তোমার সাথে দেখা করাটা এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। প্লিজ।
–নো।আমি করবো না দেখা আপনার সাথে।কেনো দেখা করবো আপনার সাথে?
–বিকজ,আই লাভ ইউ।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো, কি বললেন?আরেকবার বলেন।শুনতে পাই নি।
–আই লাভ ইউ।
তানিশা এবার নোমানকে ধমক দিয়ে বললো,এই আপনি কোন সাহসে অন্যজনার ওয়াইফকে আই লাভ ইউ বলেন?আপনার সাহস তো দেখি কম না?

নোমান সেই কথা শুনে বললো, অন্যজনের ওয়াইফ মানে?কি যা তা বলছো?
–হ্যাঁ আমি ঠিক বলছি।কারণ আমি বিয়ে করতেছি।দুই একদিনের মধ্যেই বিয়ে আমার।
নোমান সেই কথা শুনে বললো, এই, এই কি বলছো এসব?পাগল হইছো তুমি?বিয়ে করছো মানে টা কি?
–বিয়ে করছি মানে বিয়ে করছি।আপনি যদি শিলার সাথে এনগেজড করতে পারেন তাহলে আমি কেনো বিয়ে করতে পারি না?আর কখনোই ফোন দিবেন না আমাকে।এই বলে তানিশা কল কেটে দিলো।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৪

নোমান তা দেখে আবার কল দিলো।কিন্তু তানিশা এবার আর কল বেক করলো না।কারণ সে নোমানের উপর ভীষণ অভিমান করে আছে।নোমান কি করে তাকে বাদ দিয়ে অন্য মেয়ের সাথে এনগেজড করে নিলো?তানিশার যখনই এই কথাটা মনে হয় তখনি তার ভীষন রাগ ওঠে।সে তখন আর নোমানের কথা সহ্য করতেই পারে না।
এদিকে নোমান তানিশার বিয়ের কথা শুনে দৌঁড়ে তার ভাই এর রুমে চলে গেলো।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৬