ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৬

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৬
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

শিরিন একটুতেই সন্দেহ করে আমানকে আর কোনো কিছু না বুঝেই আজেবাজে মন্তব্য করে।আমান এজন্য একটু বকাঝকা করলে উলটো আবার রাগ করে বসে থাকে।হাত ধরতে দেবে না,কাছে আসতে তো দেবেই না এমনকি সে আমানের সামনেও আর যাবে না।যার কারনে বাধ্য হয়ে আমানকেই তার ভাঙ্গাতে হয়।হাজার হোক বউ তো!আমান শিরিনের রাগ ভাঙ্গাতে ব্যস্ত আছে এখন।

ঠিক সেই সময়ে নোমান তার ভাই এর ঘরে উপস্থিত হলো।কিন্তু নোমান যখন দেখলো তার ভাই আর ভাবি রোমান্টিক মুহুর্ত কাটাচ্ছে সে সাথে সাথে অন্য মুখ হয়ে বললো,
সরি,সরি।ভুল সময়ে এসে পড়েছি।আসলে ভাইয়া, খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা কথা ছিলো তোমার সাথে।
আমান সেই কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে বেড থেকে নেমে আসলো।আর বললো, কি কথা?
নোমান তখন বললো,ভাইয়া!তানিশা বিয়ে করছে।
আমান সেই কথা শুনে বললো,বাহঃ এতোদিনে তাহলে তানিশার শুভ বুদ্ধির উদয় হলো।ঠিক কাজই করছে সে।
নোমান তখন বললো,কি বলছো ভাইয়া?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–হ্যাঁ ঠিক বলছি আমি।তোর মতো এমন বোকা হাদারাম জামাই দিয়ে সে করবে টা কি?
–আমি বোকা?হাদারাম?
–এবসুলেটলি!এতে কোনো সন্দেহ নাই।যে ছেলে তার প্রেমিকার মন জয় করতে পারে না সে বোকা ছাড়া আর কি হতে পারে?
নোমান আমানের কথা শুনে বললো, ভাইয়া এটা কিন্তু তর্ক করার সময় নয়।কিছু একটা ব্যবস্থা করো না প্লিজ।
–না,আমি এবার আর কোনো ব্যবস্থা করতে পারবো না।এতোদিন শুনেছি তোরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসিস।যেহেতু আমি ভালোবাসাকে অনেক বেশি শ্রদ্ধা করি সেজন্য যতটুকু হেল্পের প্রয়োজন ততটুকু করেছি।কিন্তু এখন যেখানে তানিশা নিজের ইচ্ছায় অন্যখানে বিয়ে করছে সেখানে আমার আর কি করার আছে?নিজের ব্যবস্থা নিজে কর গিয়ে।

নোমান সেই কথা শুনে বললো, ভাইয়া এটা বলতে পারলে তুমি?আমি কি অবস্থার মধ্যে আছি সেটা তো বুঝতেই পারছো?টেনশনে চেম্বারে পর্যন্ত বসতে পারছি না।হাসপাতাল থেকে একের পর এক ফোন আসছে।কিন্তু আমি আগেই চেম্বারে বসবো না বলে ঠিক করেছি।আগে এই সমস্যার সমাধান করবো তবেই নিজের পেশায় মন দেবো।এবারের মতো একটা সমাধান বের করে দাও না প্লিজ।এই বলে নোমান আমানের হাত ধরলো।
আমান তখন বললো, না পারবো না আমি।তোর প্রেমিকা কে তুই কি করে ঠিক করবি সেটা তুই ভালো জানিস।এই বলে আমান রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

এদিকে শিরিন এগিয়ে এসে বললো, তানিশা মেয়েটা বড্ড নাটকবাজ।তা না হলে এসব কি কাহিনি শুরু করছে?ফাজলামির একটা লিমিট থাকা দরকার?এতোদিন পর কোথা থেকে এসে এক এক করে সবার জীবন টা নষ্ট করে ফেলছে।আমার বোন টার জীবন টা একদম তছনছ করে দিলো।বোনটা আমার টেনশনে খাওয়াদাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছে।
শিলার কথা শুনে নোমানের খুবই মন খারাপ হলো।তারই জন্য আজ শিলা আপসেট হয়ে আছে।সেজন্য নোমান বললো, ভাবি শিলার কি খবর?ও কেমন আছে?

শিরিন তখন মুখ ভেংচিয়ে বললো,ও কেমন আছে সেটা শুনে তুমি কি করবে?তুমি ওর জীবনটা একদম নষ্ট করে দিলে নোমান।এরকম না করলেও পারতে।তোমার থেকে এটা আশা করি নি আমি।আমার আব্বু আম্মু কিন্তু এখনো শোনে নি কিছু।যেদিন শুনবে সেদিন নিজেকে লুকানোর জায়গা খুঁজে পাবে না।বিয়ে নিয়ে ছেলেখেলা শিখিয়ে দেবে তোমাকে।
নোমান শিরিনের কথা শুনে আর এক মুহুর্ত ও রুমে থাকলো না।সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।তা না হলে তার শিরিন ভাবি মাথাটা আরো খারাপ করে ফেলবে।এমনিতেই সে মরন জ্বালার মধ্যে আছে।তারমধ্যে শিরিন ভাবি আরো তাকে কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছে।কোনদিন যে নোমান এই টেনশন হতে মুক্তি পাবে সত্যি সে জানে না।

সারাদিন সারারাত চলে গেলো।বাট নোমান কোনো উপাই খুঁজে পেলো না।আমান আজ আর বাসাতেই আসলো না।সারারাত তার ডিউটি ছিলো।অন্যদিকে তায়েব চৌধুরী এখন পর্যন্ত নোমানের অপরাধ ক্ষমা করেন নি,তার সাথে কথা বলা তো দূরের কথা তাকে দেখলেই সেখান থেকে চলে যাচ্ছে।এদিকে আবার তানিশা নোমানকে ব্লক দিয়ে রাখছে যাতে নোমান তাকে আর ফোন দিতে না পারে।

নোমান বুঝতে পারছে না সে কি করবে এখন?অনেক ভেবেচিন্তে নোমান সিদ্ধান্ত নিলো সরাসরি তানিশার বাড়ি চলে যাবে।তাছাড়া আর কোনো উপাই ও দেখছে না সে।সেজন্য নোমান আমানের থেকে তানিশার বাড়ির ঠিকানা নিলো।
নোমান পরের দিন ঠিক দুপুরবেলা ঠিকানা মতো তানিশার বাড়ি পৌঁছে গেলো।কারণ এসময় তানিশা বাড়িতেই থাকে।নোমানকে দেখামাত্র তহিদুল সাহেব আর শিউলি বেগম খুবই আশ্চর্য হলেন।কারণ তারা বুঝতে পারলেন না নোমান হঠাৎ এ সময়ে তাদের বাড়ি কেনো?তারা স্বামী স্ত্রী দুইজন দুইজনার দিকে তাকালো।
নোমান ও পুরাই বেয়াকুবের মতো চুপ করে থাকলো।সে কি বলবে নিজেও জানে না।তবে সে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।কিন্তু তানিশাকে দেখতে পেলো না।

তহিদুল সাহেব নোমানকে চুপ থাকা দেখে বললো বাবা নোমান!তুমি?তা কেমন আছো?
–জ্বি আংকেল আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা কেমন আছেন?
–আমরাও ভালো আছি।
এদিকে মিসেস শিউলি বেগম নোমানকে দেখামাত্র নাস্তা আনতে গেলেন।নোমানকে বাসায় আসা দেখে তিনি কেনো জানি খুবই খুশি হয়েছেন।
সবাই বেশ খুশিই হয়েছে নোমানকে দেখে।কিন্তু নোমান শুধু চেষ্টা করছে তানিশার কথা জিজ্ঞেস করার জন্য।কিন্তু পারছে না বলতে।এদিকে তহিদুল সাহেব এক এক করে সবার ভালোমন্দো জিজ্ঞেস করতে লাগলো।নোমানও এক এক করে উত্তর দিতে লাগলো। হঠাৎ সেখানে সোহান আসলো।

নোমান সোহানকে দেখামাত্র সালাম দিলো।সোহান সালামের উত্তর নিলো,কিন্তু সে চিনতে পারলো না নোমানকে।সেজন্য সে তহিদুল সাহেব কে জিজ্ঞেস করলো,বাবা! কে এই ছেলে?
তহিদুল সাহেব তখন হাসতে হাসতে বললো,চিনিস না একে?নোমান এটা?
সোহান সেই কথা শুনে বিস্ময়ভরা মুখ নিয়ে বললো,ও, নোমান এটা?আসলে অনেক দিন পর দেখা তো চিনতে পারি নি। এই বলে সোহান নোমানকে জড়িয়ে ধরে বললো,
সরি নোমান।চিনতে পারি নি তোমাকে।
নোমান তখন বললো, ইটস ওকে দুলাভাই।
ঠিক তখনি স্বর্ণা হঠাৎ দৌঁড়ে এসে বললো,বাবা মার্কেটে যাবো কখন?

–এই তো যাবো মা।এই বলে সোহান তার মেয়েকে কোলে তুলে নিলো।
মার্কেটে যাওয়ার কথা শুনে নোমানের বুক টা কেমন যেনো ধক করে উঠলো।সে ভাবতে লাগলো,তারা আবার বিয়ের মার্কেটে যাচ্ছে না তো?তানিশা তো বলেছে দু এক দিনের মধ্যেই বিয়ে হবে তার।নোমানের মুখ চোখ একদম শুকিয়ে গেলো।সে তখন আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো,দুলাভাই!অসময়ে মার্কেটে যাচ্ছেন যে?
সোহান তখন হাসতে হাসতে বললো, সময় আর কই আছে?আজকের দিনটাই তো শুধু ফাঁকা।
পরে আর কখন করবো মার্কেট?

নোমানের এবার সত্যি ভয় হতে লাগলো।সে জিজ্ঞেস করতে যাবে ঠিক সেই সময়ে আবার তানিয়া রেডি হয়ে এসে বললো,
হয়েছে আমার।চলো এখন।এই বলে সে যখন নোমানকে দেখলো সাথে সাথে বললো,নোমান তুমি?কতদিন পর দেখা!
নোমান সেজন্য তানিয়া কে সালাম দিয়ে বললো,আপু কেমন আছেন?
–জ্বি ভালো আছি ভাই।তুমি কেমন আছো?
–জ্বি আমিও ভালো আছি।এই বলে তানিয়া স্বর্নার হাত ধরে বললো,আংকেল কে সালাম দিয়েছো মামনি?
–আংকেল?ইনি আমার আংকেল হন?
–হ্যাঁ মামুনি।যাও সালাম দিয়ে এসো।

স্বর্না সেই কথা শুনে দৌঁড়ে নোমানের কাছে গিয়ে বললো,আসসালামু আলাইকুম আংকেল।কেমন আছেন আংকেল?
–ওয়ালাইকুম আসসালাম।আমি ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?
–আমিও ভালো আছি।এই বলে স্বর্ণা আবার তার মায়ের কাছে চলে গেলো।আর বললো,দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।কখন যাবো আমরা মার্কেটে?
তানিয়া আর সোহান তখন নোমানকে বললো,নোমান!তুমি তাহলে বসো একটু।আমরা মার্কেট থেকে ঘুরে আসছি।
নোমান মাথা নাড়িয়ে বললো,জ্বি আচ্ছা।
সেই কথা শুনে সোহান আর তানিয়া চলে গেলো।
এদিকে নোমানের হার্টবিট শুধু বাড়তেই আছে।তার এমন কেনো হচ্ছে সত্যি সে বুঝতে পারছে না।এদিকে আবার তানিশার পরিবারের লোকদের মতিগতি বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না।তারা সবাই কেমন যেনো এক অন্যরকম আচরণ করছে তার সাথে।

নোমান আর চুপ করে না থেকে বলেই ফেললো,আচ্ছা আংকেল তানিশা কই?ওকে দেখছি না যে?
তহিদুল সাহেব সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো, ওর কথা আর বলো না।দুইদিন পর ওর বিয়ে।কই একটু কেনাকাটা করবে,একটু বিয়ের প্রস্তুতি নিবে তা না করে আজও চেম্বারেই বসে আছে।
–মানে,,,,বিয়ে?তানিশার বিয়ে দুইদিন পর?কি বলছেন এসব?
তহিদুল সাহেব সেই কথা শুনে বললো, বাবা নোমান!তুমি কি ঠিক আছো?এরকম করছো কেনো বাবা?
নোমান সেই কথা শুনে বললো, না আংকেল,আমি ঠিক আছি।ঠিক আছি আমি।এই বলে নোমান আর এক মুহুর্ত দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।আর সাথে সাথে তার ভাইকে ফোন দিলো।কিন্তু আমানের ফোন ব্যস্ত দেখালো।

এদিকে নোমানের পুরো শরীর ঘামতে লাগলো।আর হাত পা হঠাৎ করেই অবশ হতে লাগলো।সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।তার মাথা যেনো বনবন করে ঘুরতে লাগলো।এই বুঝি সে মাটিতে পড়ে যায়।কিন্তু নোমান নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করলো।তারপর একটা রিক্সা নিয়ে সোজা তানিশার চেম্বারে চলে গেলো।তানিশার সাথে আজ তোর বোঝাপড়া আছে।সে পাইছে টা কি?এভাবে হঠাৎ করে কাকে বিয়ে করছে সে?
এদিকে তানিশা অনেক আগেই বাসায় আসার জন্য হসপিটাল থেকে বের হয়েছে।সেজন্য নোমান আর তানিশার দেখা পেলো না।নোমান একদম পাগলের মতো হয়ে গেলো।সে তখন তানিশার এসিস্ট্যান্ট কে জিজ্ঞেস করলো তানিশা কখন ফিরবে চেম্বারে?

তানিশার এসিস্ট্যান্ট জানালো,ম্যাডাম আজ আর আসবেন না।ম্যাডামের বিয়ে তো সেজন্য কয়েকদিনের জন্য ছুটি নিয়েছেন।
নোমান সেই কথা শুনে বললো, আপনারা কি জানেন কার সাথে বিয়ে হচ্ছে?
–না স্যার।জানি না।
নোমান সেই কথা শুনে আবার পাগলের মতো তানিশার বাসার দিকে ছুটে গেলো।সে এবার আর কিছুতেই চুপ থাকবে না।ওর ফ্যামিলির সবার সামনে তানিশাকে আজ বিয়ের কথা বলবেই বলবে।এভাবে তানিশার অন্য কোথাও বিয়ে হতেই পারে না।তীরে এসে কিছুতেই নৌকা সে ডুবতে দেবে না।সে ভাবতেই পারছে না তানিশা সত্যি সত্যি বিয়ে করছে।সে ভেবেছিলো হয় তো রাগ করে বলেছে তানিশা।

নোমান তানিশার বাসায় আসতেই তাড়াতাড়ি করে রিক্সা থেকে নেমে গেলো।সে আর এক সেকেন্ড অপেক্ষা করতে পারছে না।এদিকে সে এতো তাড়াহুড়ো করার ফলে পুরো শরীর ঘেমে একাকার।শরীর একদম হাঁপসে গেছে তার।এক পা এগোতেই পারছে না।তবুও কষ্ট করে তানিশাদের দরজার সামনে গেলো।
কিন্তু বাসায় গিয়ে দেখে তানিশার বাসায় বড় একটা তালা ঝুলানো।নোমানের মাথা এবার সত্যি পাগল হয়ে গেলো।সে তখন চিৎকার করে করে বললো,তানিশা!এরকম কেনো করতেছো?তানিশা!নোমান ফোন করে যে কথা বলবে সেটাও করতে পারছে না।নোমান একদম তানিশা তানিশা করতে করতে কেঁদে ফেললো।
এদিকে নোমানের চিৎকার করা দেখে তানিশাদের পাশের ফ্ল্যাট এর এক ছেলে বের হয়ে আসলো।আর জিজ্ঞেস করলো,আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?

নোমান তখন শান্ত হয়ে বললো,জ্বি।তানিশারা কই গেছে বলতে পারেন?
ছেলেটি তখন বললো,সরি ভাই।বলতে পারলাম না।ফোন করে শুনুন কই গেছে?
নোমান লোকটিকে এখন কি বলবে?তানিশা যে তাকে ব্লক করে রেখেছে।তার সাথে সে তো কোনো যোগাযোগ করতেই পারছে না।সেজন্য নোমান বললো,এক্সকিউজ মি ভাই।কিছু মনে না করলে আপনার ফোনটা থেকে একটু কল করতে পারি?
–জ্বি সিওর।এই বলে ছেলেটি তার ফোন দিলো নোমানকে।

নোমান তাড়াতাড়ি করে তানিশার নাম্বার ডায়াল করতে লাগলো।কিন্তু ছেলেটির ফোনে আগে থেকেই তানিশার নাম্বার সেভ করা ছিলো।নোমান সেজন্য তাড়াতাড়ি করে কল দিলো।কিন্তু তানিশা রিসিভ করলো না ফোন।নোমান আবার দিলো কল।কিন্তু এবারও তানিশা কল রিসিভ করলো না।এদিকে আবার ছেলেটির একটু তাড়া আছে।সেজন্য সে বললো, ভাই আমার একটু এক জায়গায় যেতে হবে।কিছু মনে না করলে ফোন টা নিতে হবে এখন।
নোমান সেই কথা শুনে ছেলেটিকে দিয়ে দিলো ফোনটা।

নোমান এখন কি করবে সত্যি তার মাথাতে খেলছিলো না।হঠাৎ তার মনে হলো কোনো দোকানে গিয়ে তো সে তানিশার সাথে কথা বলতে পারে।সেজন্য নোমান আর দেরী না করে রিক্সা নিয়ে সামনের একটা দোকানে চলে গেলো।এবং সেখান থেকে তানিশাকে কল দিলো।বাট তানিশা এবারও ধরলো না।নোমানের এবার মেজাজ বিগড়ে গেলো।তার ইচ্ছা করছে তানিশার দুই গালে দুইটা কষে থাপ্পড় মারতে।কি শুরু করেছে তার সাথে সে।নোমান তখন রাগ করে দোকানদারের ফোনটাই মাটিতে আছাড় দিতে ধরলো।
তা দেখে দোকানদার চিৎকার করে বললো, ভাই কি করছেন এটা?পাগল টাগল হলেন নাকি?এই বলে দোকানদার তাড়াতাড়ি করে ফোনটা নিয়ে নিলো।

নোমান তখন তার নিজের ফোন টা বের করে আমানকে আবার ফোন দিলো।এবার আমান রিসিভ করলো।আমান রিসিভ করার সাথে সাথে নোমান হাঁপাতে হাঁপাতে আর এক নিঃশ্বাসে বলতে লাগলো,
ভাইয়া তানিশার তো দুই দিন পরে সত্যি সত্যি বিয়ে হচ্ছে।এদের বাসার সবাই বিয়ের জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছে।আজ এরা সবাই বিয়ের কেনাকাটাও করছে।এখন আমার কি হবে?আজকের মধ্যেই কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
আমান সেই কথা শুনে বললো,তুই কই এখন?
নোমান জোরে জোরে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,তানিশাদের বাসার এখানে।ওরা কেউ বাসায় নেই।
আমান তখন বললো,ওখানে না থেকে আমাদের বাসায় চলে আয়।বাবাকে রিকুয়েষ্ট কর।তা না হলে আর কেউ এই সমস্যা থেকে তোকে বাঁচাতে পারবে না।

নোমান সেই কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে বাসায় চলে এলো।
কিন্তু বাসায় এসে সে যা দেখলো তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।কারন তানিশা এসেছে তাদের বাসায়।
নোমান তখন হাঁপাতে হাঁপাতে তানিশার কাছে চলে গেলো।আর তাকে জোরে করে এক ধাক্কা দিয়ে বললো,ফাজলামি শুরু করছো আমার সাথে?আমাকে রেখে কাকে বিয়ে করছো?আবার সেই বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছো এখানে?
তানিশা তখন বললো,কি বলছেন এসব?সবাই শুনছে তো?
–শুনুক।শোনার জন্যই তো বলছি।তোমার বিয়ে আমি অন্যখানে হতে দেবো না কিছুতেই।দরকার হলে জোর করে তুলে নিয়ে এসে বিয়ে করবো।

তানিশা নোমানের এমন পাগলামি দেখে তার থেকে দূরে সরে গেলো।নোমান তখন তার বাবার হাত ধরে বললো,
বাবা, তানিশা কিন্তু আমাকে ভালোবাসে।আর আমিও ওকে ভালোবাসি।ও কিন্তু মন থেকে বিয়ে টা করছে না।রাগ আর জিদের জন্য করছে বিয়ে টা।প্লিজ এই বিয়ে টা হতে দিবে না।প্লিজ কিছু একটা করো বাবা।
তায়েব চৌধুরী কোনো উত্তর দিলেন না।তিনি ছেলের এমন পাগলামি দেখে মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলেন।
এদিকে নোমান তার বাবাকে চুপ থাকা দেখে বললো, কি হলো বাবা?কিছু বলছো না কেনো?বিশ্বাস করো বাবা আমরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসি।ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করে দেখো।এই বলে নোমান আমানকে বললো,ভাইয়া তুমি কিছু বলছো না কেনো?প্লিজ সবটা বলো বাবাকে।আমার কথা বিশ্বাস করছে না বাবা।

আমান সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,ভাই এবার একটু শান্ত হ।তোদের ভালোবাসার কথা সবাই জানে এখন।
–জানে সবাই?তারপরও তানিশার বিয়ে অন্য জায়গায় হতে দিচ্ছে কেনো?
আমান তখন বললো, না,অন্য জায়গায় হচ্ছে না বিয়ে।তোর সাথেই হচ্ছে।কাল রাতে বাবা গিয়ে সব ফাইনাল করে এসেছে।
নোমান আমানের কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।তার কি বলা উচিত এখন আর কি করা উচিত সেটাই সে ভুলে গেলো।নোমান একদম হা করে তাকিয়ে রইলো তার ভাই এর দিকে।
আমান তা দেখে বললো,এবার মাথা কি ঠান্ডা হয়েছে? এখন রুমে গিয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে নে।তারপর তানিশার সাথে মার্কেটে চলে যা।
নোমান তখন বললো,মানে?কিভাবে কি হলো?

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৫

–আবার কথা বলছিস?যা বললাম সেটা কর আগে।তানিশার বাবা,মা,ভাগ্নি, বোন দুলাভাই সবাই আগেই চলে গিয়েছে মার্কেটে।ওরা তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।কিন্তু তানিশাকে আমি বলেছিলাম বাসায় আসতে।যাতে তোরা দুইজন মিলে একসাথে মন মতো নিজেদের বিয়ের জন্য মার্কেট করতে পারিস।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৭