ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৭

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৭
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

নোমান পড়াশোনা ছাড়া কিছুই বোঝে না,সে কারো সাথে ঠিক করে কথা বলতেও পারে না,নোমানের ইগো বেশি,নোমান অহংকারী। এরকম কত কথা শুনতে হয়েছে তাকে।কিন্তু সে ছেলেটাও একসময় প্রেমে পড়েছে।অসম্ভবভাবে কাউকে ভালোবেসেছে।প্রেমিকাকে একটি নজর দেখার জন্য ভীষণ ভাবে ছটফট করেছে।প্রেমিকাকে কাছে পাওয়ার তীব্র বাসনায় কাতর হয়েছে।কিন্তু তার আর পাওয়া হলো না প্রেমিকাকে।

প্রেমিকার ভালোবাসায় নিজেকে বিলীন করতেও পারলো না সে।কারণ মাঝখানে একটা কালবৈশাখীর ঝড় এসে তার জীবনটা এলোমেলো করে দিলো।যার কারনে সে তার ভালোবাসার মানুষ কে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলে।কত কষ্ট আর অসহায় গুলোর মতো দিন পার করেছে সে।সেদিনের সেই কষ্টের কথা মনে হলে আজও রাতে তার বালিশ ভিজে যায়।কেউ ছিলো না পাশে সেদিন।দুঃখে, কষ্টে,রাগে আর অভিমানে অন্য কোথাও নতুন করে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখে সে।ভেবেছে এবার অন্তত সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু এবারও কিছু ঠিক হলো না।কারণ তার পুরাতন প্রেমের আগুন আবার দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো।সেই পুরাতন প্রেমিকা আবার ফিরে এলো তার জীবনে।সে শুধু ফিরেই আসে নি, সাথে করে নিয়ে এসেছে এক সমুদ্র ভালোবাসা।তার প্রেমের আকুতি, বুক ভরা ভালোবাসা দেখে নোমান আবার তার অতীতেই ফিরে গেলো।অতীতের সেই ভালোবাসাকে সারাজীবনের জন্য বরণ করে নিলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আর সাথে সাথে চিরদিনের জন্য ভুলে গেলো বর্তমানকে।শিলাকে নোমান একবারের জন্যও বলে নি তোমাকে আমি ভালোবাসি,অনেক বেশি ভালোবাসি,তুমি চিরদিন আমার পাশে থেকো।এখন প্রশ্ন হলো তাহলে নোমান কেনো শিলাকে বিয়ে করতে চাইলো? এটাই হলো নোমানের সবচেয়ে বড় অপরাধ।আর এই অপরাধের জন্য শিলার সাজানো গোছানো স্বপ্নটা নষ্ট হয়ে গেলো।এটা অবশ্য নোমানের দোষ নয়।কারন ভাগ্যের পরিহাস বলেও একটা কথা আছে।শিলা ভুল জায়গায় ঘর বাঁধতে চাইছিলো বিধায় তার ঘর তৈরি হওয়ার আগেই ভেংগে গেলো।শিলার জন্য হয় তো অন্য কেউ অপেক্ষা করে আছে,যার কারনে সে নোমানকে তার শিকলে বেঁধে রাখতে পারলো না।

অন্যদিকে তানিশা তো নোমানকে হারিয়েই ফেলেছে।সে শুধু নোমানের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলো।দ্বিতীয় কাউকে গ্রহন করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিলো না তার। সে তো কল্পনাও করে নি নোমান আবার তার জীবনে ফিরে আসবে।অতীতের সেই ভালোবাসাকে ফিরে পেয়ে তার মনের অবস্থা এখন কেমন সেটা শুধুমাত্র সেই বুঝতে পারছে।অন্য কারো বোঝার ক্ষমতা নেই এটা।
কোনো জিনিস হারিয়ে গেলে কিন্তু আমাদের ভীষণ কষ্ট হয়।কিন্তু সেই হারানো জিনিস টা যখন আবার আমরা পেয়ে যাই বা সেই জিনিস টা না চাইতেই যখন আমাদের কাছে ফিরে আসে তখন আমাদের কেমন আনন্দ হয়?আজ সেই রকম আনন্দ হচ্ছে নোমান আর তানিশার মনে।

তানিশা আর নোমান আজ কিছুতেই তাদের মনের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছে না।বা কাউকে বলতেও পারছে না আজ তাদের কেমন লাগছে।আবার খুশিতে হা হা করে হাসতেও পারছে না।তবে তারা তাদের হৃদয়ের মধ্যে একটা শান্তির আভাস পাচ্ছে।মনে হচ্ছে এতোদিনে শূন্যস্থান টা ফিল আপ হলো তাদের।এতোদিন শুধু মরুভূমির মতো খা খা করছিলো হৃদয় টা।আজ তাদের মন শুধু একটা কথাই বলছে,আমরা পেলাম,আমরা আমাদের সেই হারানো ভালোবাসাকে সারাজীবনের জন্য পেলাম।

আজ নোমান আর তানিশা বিয়ের জন্য কেনাকাটা করতে যাচ্ছে।তাদের সাথে আর কাউকে পাঠানো হলো না।ফ্যামিলির সবাই ভাবলো এতোদিন পরে বেচারা দুইজন দুইজনকে কাছে পেলো আজ একাই ছেড়ে দেওয়া হোক তাদের।বিয়ের আগে নিজেরদের মাঝে একটু ফ্রি হয়ে নেওয়া দরকার।কারণ তারা তো প্রেম করার সময় পায় নি।মনের মধ্যে প্রেম ভালোবাসা ভরা ছিলো বাট তা আর বাস্তবে রুপান্তরিত হয় নি।তাদের যে দুইজনের অনেক কথা বলার আছে আজ।
নোমান ড্রাইভিং করছে।আর তানিশা চুপচাপ বসে আছে।দুইজনই চুপচাপ। কারো মুখে কোনো কথা নাই।কারণ তারা কি কথা বলবে আর কি নিয়ে কথা বলবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না।তবে সুন্দর একটা মিউজিক বাজছে,

কি করে বল তোকে বুঝাই,
হৃদয় জুড়ে তুই শুধু একাই।
দুটি চোখে তোরই ছবি ভাসে দিবানিশি।
তোকে অনেক ভালবাসি।
তোকে অনেক ভালবাসি।
বড় বেশি ভালবাসি।
তোকে অনেক ভালবাসি।।
ছাড়ব না আর কোন দিনও,
ধরেছি এই দুটি হাত;
পারব না আর থাকতে একা,
আসে যদি কালো রাত।
দূরে গিয়ে আবার তাই ফিরে ফিরে আসি।
তোকে অনেক ভালবাসি।
তোকে অনেক ভালবাসি।
বড় বেশি ভালবাসি।
তোকে অনেক ভালবাসি।।

গানটি নোমানের ভীষণ প্রিয়।সে ইদানীং মাঝেমধ্যেই শোনে গানটি।আগে যদিও তেমন একটা গান শুনতো না তবে আজকাল অবসর সময়েই ইয়ার ফোন কানে গুজে শুনতে থাকে গান।আর মুহুর্তের মধ্যে হারিয়ে যায় তার না পাওয়া ভালোবাসার কাছে।

একের পর এক মিউজিক বেজেই যাচ্ছে।অথচ যাদের এখন মন খুলে কথা বলা দরকার,মনের ভাব শেয়ার করা দরকার সেই ভালোবাসার পাখি দুইটিই নিরব হয়ে আছে।মনে হচ্ছে তাদের মুখের ভাষা কেউ যেনো জোর করেই কেড়ে নিয়েছে।
নোমান এক মনে ড্রাইভিং করছে।একটিবার তাকাচ্ছেও না তানিশার দিকে।কারন সে ভীষণ অভিমান করে আছে তানিশার উপর।তানিশা তাদের বিয়ের কথা শুনেও কেনো তাকে এ হয়রানি টা করালো?আবার তাকে ফোনে ব্লক করেও রেখেছে।নোমান ভাবতে লাগলো ভালোবাসা টা বোধ হয় সে বেশি প্রকাশ করে ফেলেছে।যার জন্য তানিশা এতো বেশি অবহেলা করছে তাকে।

হঠাৎ তানিশা খেয়াল করলো নোমানের হাতে অনেক খানি জায়গা ছিলে গেছে।জায়গাটা একদম ফুলে গেছে আর রক্ত একটু একটু করে বের হয়ে আছে।সে তখন তার ব্যাগ থেকে স্যাভলনের বোতল আর তুলা বের করলো।কিন্তু গাড়ির ঝাকুনির কারণে তুলায় কিছুতেই স্যাভলন লাগাতে পারলো না।সে তখন বললো,গাড়িটি একটু থামাবেন প্লিজ।
নোমান সাথে সাথে গাড়িটি সাইট করলো।বাট একটিবার জিজ্ঞেস ও করলো না তানিশা কেনো তাকে হঠাৎ এভাবে গাড়ি থামাতে বললো।
এদিকে তানিশা তুলায় কিছুটা স্যাভলন লাগিয়ে নোমানের ক্ষত জায়গা ট পরিষ্কার করতে লাগলো।কিন্তু নোমান হঠাৎ তার হাতটি সরিয়ে নিয়ে বললো,লাগবে না।আমার কোনো প্রবলেম হচ্ছে না।
কিন্তু তানিশা আবার নোমানের হাতটি তার কাছে আনলো।আর বললো,কিন্তু আমার প্রবলেম হচ্ছে।এই বলে তানিশা সেখানে ভায়োডিন লাগিয়ে দিয়ে স্টিকার যুক্ত একটা ব্যান্ডেজ লাগিয়ে এলো।এসব টুকিটাকি সরাঞ্জম সব সময় তার ব্যাগেই থাকে।

তানিশা তখন বললো এখন গাড়ি স্টার্ট করুন।নোমান সেই কথা শুনে গাড়ি স্টার্ট করলো।কিন্তু সে আর কোনো কথা বললো না।তানিশা তখন বললো, কিভাবে কাঁটা গিয়েছে?দেখেন নি?
–হ্যাঁ দেখেছি।কিন্তু গুরুত্ব দেই নি।
তানিশা নোমানের এমন কথাবার্তা শুনে বললো, এতো রেগে আছেন কেনো?বিয়ের কথা শুনে আপনি কি খুশি হন নি নাকি?
–না,খুশি হই নি।
তানিশা তখন বললো তাহলে সবার সামনে কিছু বললেন না কেনো?
–প্রয়োজন মনে করি নি।
তানিশা তখন বললো,তাহলে আমি বলে দিচ্ছি সবাইকে।আপনার যখন ইচ্ছাই নাই তাহলে অযথা কেনো মনের বিরুদ্ধে বিয়ের মতো একটা পবিত্র সম্পর্কে জড়াতে যাবেন?

নোমান তানিশার কথা শুনে সাথে সাথে আবার গাড়ি থামালো।আর চিৎকার করে বললো,তুমি যে এই কাজটা খুবই ভালো পারো তা আমি ভালো করেই জানি।কারো মনের ফিলিংস তো তোমার বোঝার ক্ষমতা নাই।তুমি আসলে বোঝোই না অন্যজনের কষ্ট।সরি ভুল বললাম,অন্যজনের কষ্ট ঠিকই বোঝো বাট শুধু আমার কষ্ট বোঝো না তুমি।সেদিন যদি আমার ভালোবাসার একটু মূল্য দিতে তাহলে বছর গুলো এভাবে নষ্ট হতো না আমার।
তানিশা তখন বললো, আপনি আবার সেই অতীত কে টানছেন কেনো?যা চলে গেছে তা কি আর ফিরে আসবে?কেনো সেগুলো বার বার মনে করে দেন?

নোমান তখন চিৎকার করে বললো, মনে করে দিচ্ছি এই কারনে যে,তুমি আগেও যেমন ছিলো ঠিক এখনো তেমনি আছো।তুমি আসলে আমার মনের অবস্থা বোঝার বিন্দুমাত্র ট্রাই করো না।তুমি জানতে আমাদের বিয়ে ঠিক হইছে একবারের জন্যও সেটা বললে না কেনো?উল্টো কাল রাতে তুমি জানিয়ে দিলে,তুমি অন্য জায়গায় বিয়ে করছো।দুই দিন পর তোমার বিয়ে।এইটা বলে আবার সাথে সাথে ব্লক করে দিলে আমাকে।যাতে আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করতে না পারি।একবারের জন্যও কি তোমার মনে হয় নি ছেলেটা এই কথা টা শোনার পর এখন কি অবস্থার মধ্যে আছে?ছেলেটার যে টেনশন হয় বোঝো সেটা?না মনে করো ছেলেটার কোনো অনুভূতি নেই?

তানিশা তখন বললো,আমি নিজেও জানতাম না আমাদের বিয়ের কথা।আপনার সাথে কথা বলার পর তায়েব মামা এসেছিলেন আমাদের বাসায়।তারপর বাবাকে সবকিছু খুলে বলেন।দেন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ের জন্য।বিশ্বাস করুন আমি জানতাম না কিছু।আর অন্য জায়গায় বিয়ে করার কথা তো রাগ করে বলেছিলাম।
নোমান সেই কথা শুনে আরো বেশি রাগান্বিত হলো।সে তখন বললো, আচ্ছা সব বাদ দিলাম।কিন্তু তুমি আমাদের বিয়ের কথা জেনেও একটিবার আমার সাথে কথা বলার প্রয়োজন মনে করো নি?আচ্ছা কথা না বললে অন্তত ফোন থেকে ব্লক টা তো খুলে দিতে পারতে।

তানিশা তখন বললো, মামা তো অনেক রাত পর্যন্ত ছিলো বাসায়।সবাই মিলে অনেক গল্প গুজব করেছে।আমিও ছিলাম সেখানে।মামা চলে যাওয়ার পর পরই ঘুমিয়ে যাই।সেজন্য ব্লক খোলার কথা আমার মনে ছিলো না।
–বাহঃ দারুন!দারুন!তোমরা সবাই মিলে কাল মনের সুখে আনন্দ করেছো।আর আমি টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।তুমি মনের আনন্দে ঘুমাচ্ছিলে আর আমি ঘুমাতে পারছিলাম না।রাতে খাবার পর্যন্ত খাই নি।কোনোভাবে রাত টা পার করে সকাল সকাল আবার উঠেছি।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো,প্লিজ নোমান রাগ করে থাকবেন না।রাগ টা একটু কম করেন এখন।আমরা কিন্তু আমাদের নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি।আমি চাই না সে জীবনে আর অশান্তির কোনো ছোঁয়া লাগুক।
নোমান তখন বললো আমি যে কাল থেকে আজ পর্যন্ত এতো পেরেশানির শিকার হলাম তার কি হবে?এর বিচার এখন কে করবে?

তানিশা সেই কথা শুনে চুপ করে থাকলো?
নোমান তখন তানিশার গা ধরে দিলো এক ঝাঁকি।আর বললো কথা বলছো না কেনো এখন?জানো কি হয়েছিলো আজ?
তানিশা নোমানের দিকে তাকিয়ে বললো,কি?
নোমান তখন শান্ত হয়ে বললো,

আজ আমি তোমার বাসায় যাবো বলে ঠিক করলাম।কিন্তু তোমার বাসার ঠিকানাও জানি না।অন্যদিকে আমান ভাইয়া কাল সারারাত ডিউটিতে ছিলেন।উনি সেজন্য বাসায় ফেরেন নি।ভাইয়াকে একশো বার ফোন দেওয়ার পর তবে দিয়ে তিনি ফোন রিসিভ করলেন।তারপর ভাইয়ার থেকে তোমাদের বাসার ঠিকানা নিলাম।আর এক মুহুর্ত দেরি না করে পাগলের মতো ছুটে গেলাম তোমাদের বাসায়।কিন্তু গিয়ে দেখি তুমি আবার বাসায় নাই।কাউকে জিজ্ঞেস করতেও পারছি না তোমার কথা।কিন্তু যখন আংকেলের মুখে তোমার বিয়ের কথা শুনলাম তখন মনে হয় আমি ওখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেতে ধরেছিলাম।

কোনো রকমে নিজেকে কন্ট্রোল করে আবার তোমার চেম্বারে ছুটলাম।সেখানেও তুমি নাই।আবার সেখান থেকে তোমার বাসায় আসলাম।ঠিক করলাম এবার সবাইকে বলেই দিবো সত্য কথাটা।কিন্তু তোমার বাসায় এসে দেখি বড় একটা তালা ঝুলানো।তা দেখে মাথা তো গেলো ঘুরে।তোমাকে হারানোর ভয়ে এবার তোমার নাম ধরে চিৎকার করতে লাগলাম।কিন্তু শান্তি মতো একটু চিৎকার দিতেও পারলাম না।তোমাদের পাশের ফ্ল্যাটের এক ছেলে এগিয়ে আসলো।

তারপর তার মোবাইল নিয়ে ফোন দিলাম তোমাকে, তুমি তবুও রিসিভ করলে না।আবার বাধ্য হয়ে বাজারের দিকে ছুটে গেলাম।সেখানে এক দোকান থেকে ফোন দিলাম তোমাকে।এবারও তুমি রিসিভ করলে না।তারপর ভাইকে আবার ফোন দিলাম।ভাইয়া তখন বললো বাবাকে মেনেজ কর।তা না হলে আর কেউ তানিশার বিয়ে আটকাতে পারবে না।সেই কথা শুনে আবার পাগলের মতো ছুটে গেলাম বাসায়।আমার মনের মধ্যে কি হচ্ছিলো তা শুধু আমিই ভালো জানি।
নোমানের এমন পেরেশানির গল্প শুনে তানিশা একদম কেঁদে ফেললো।সে সাথে সাথে নোমান কে জড়িয়ে ধরে বললো,সরি।আমি বুঝতে পারি নি আপনাকে এতো হয়রানি হতে হবে।তাহলে হাতের এই ক্ষত হয় তো এভাবে ছোটাছুটি করার ফলেই হয়েছে তাই না?

–হতে পারে।আমি টের পাই নি।কখন কোথায় লেগে এভাবে কেটে গিয়েছে?আসলে বাহিরের ক্ষতর চেয়ে ভিতরের ক্ষতর জ্বালা অনেক বেশি এজন্য বুঝতে পারি নি।
তানিশা নোমান কে এবার আরো জোরে জড়িয়ে ধরলো। আর কাকুতি মিনতি করে বললো,প্লিজ এবারের মতো ক্ষমা করে দিন।আর কখনোই এ ভুল হবে না।আর কখনোই আপনাকে এমন পেরেশানির মধ্যে রাখবো না।কথা দিলাম।
নোমান তানিশাকে জড়িয়ে ধরা দেখে বললো,লাগবে না জড়িয়ে ধরা।সরে যাও তুমি।তুমি আমাকে পাগল বানাতে ধরেছিলে।আর আজ এসব সরি বলে কি হবে?আমি যেভাবে ছোটাছুটি করছিলাম যদি কিছু হয়ে যেতো আমার?মরেও তো যেতে পারতাম?

তানিশা সেই কথা শুনে নোমানের মুখ টিপে ধরে বললো,কি বলছেন এসব?খবরদার এসব মরার কথা আর জীবনেও বলবেন না।অনেক কষ্ট আর যন্ত্রণা সহ্য করার পর আপনাকে আমি ফিরে পেয়েছি আর হারাতে পারবো না কখনো।জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আপনাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই এখন।আই লাভ ইউ ভেরি মাচ নোমান।প্লিজ ব্লিভ মি।আমি আপনাকে ছাড়া আর এক মুহুর্ত দূরে থাকতে পারবো না।
নোমান তখন তানিশার হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,এই কথাটা যদি সেদিন বলতে তাহলে আজ আর এতো কষ্ট পেতে হতো না?সব তোমার জন্য হয়েছে তানিশা।এখন আমি এই দিনগুলো কিভাবে ফিরিয়ে পাবো?এই ক্ষতি গুলো আমি পুষাবো কি দিয়ে?

তানিশা সেই কথা শুনে বললো,আবার অতীতকে টানছেন?বলেছি না অতীত কে টানবেন না আর।তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট করুন।আপুরা হয় তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।কি ভাববে কি সবাই বলুন তো?এই টুকু রাস্তা যেতে আমরা কত টা টাইম লাগালাম?
নোমান সেই কথা শুনে আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো।তবে এবার তানিশার প্রতি নোমানের আর কোনো রাগ অভিমান নাই।কেমন যেনো মুহুর্তের মধ্যে সবকিছু দূরে চলে গেলো।আসলে তানিশা তার কাছে না থাকলে আর কথা না বললেই তার মাথাটা এমন গরম হয়ে যায়।কোথায় থেকে যে আসে এই রাগ নোমান সত্যি বুঝতে পারে না।
নোমান এবার ধামাকা একটা মিউজিক ছেড়ে দিলো।যার তালে তালে সে নিজেও গাইতে লাগলো।আর তানিশার দিকে বার বার তাকাতে লাগলো।

কিছু কিছু সুখে এত খুশি থাকে মিশে
ধরা দেয় অচেনা কাছে এসে ভালবেসে
কিছু কিছু সুখে এত খুশি থাকে মিশে
ধরা দেয় অচেনা কাছে এসে ভালবেসে
আজ মন খুঁজে পেল মনের খুশি
আজ মন ফিরে পেল সুখের হাসি
এলো যে স্বপ্নের দিন ও কাছে এলো
জীবন আরো যেনো রঙ্গিন হলো।

তানিশা নোমানের এমন বেসুরে কন্ঠ শুনে হা হা করে হাসতে লাগলো।তার হাসি যেনো কিছুতেই থামছে না।
নোমান তা দেখে বললো,হাসছো কেনো?
–কিছু না।কিন্তু তানিশা হেসেই যাচ্ছে।
নোমান তখন হঠাৎ তানিশাকে তার কাছে টেনে এনে কিস করতে লাগলো।কিন্তু তানিশা তখন চিল্লায়ে বললো,কি করছেন?এক্সিডেন্ট করবেন তো?সাবধানে গাড়ি চালান।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৬

নোমান তানিশার চিল্লানি শুনে তাড়াতাড়ি করে তানিশাকে ছেড়ে দিলো।আর বললো,এখন ছেড়ে দিলাম।কিন্তু আর কোনোসময় কিস করতে চাইলে যদি বারণ করো তখন কিন্তু খবর আছে?এমনিতেই কত ক্ষতি হয়ে গেছে আমার।ইসঃ ভীষণ আফসোস হচ্ছে আজ।এতোদিনে আমাদের বাচ্চাকাচ্চা দিয়ে ভরে যেতো ঘর।
তানিশা নোমানের কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ হয়ে গেলো।এই নোমানটার দেখি একটুও লজ্জা শরম নাই।কি সব বলছে?
তবে নোমানের এমন পাগলামি গুলো তার ভীষণ ভালো লাগে।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২৮