ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩১

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩১
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

বিবাহকে বলা হয় শান্তির প্রতিক।এটি একটি পবিত্র বন্ধন।বিবাহ এমন একটি সামাজিক বন্ধন যার মাধ্যমে দুজন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয় আর তাদের মধ্যে মনের মিলন ঘটে। বিবাহের মাধ্যমে শুধু যে দুটি মানুষের মধ্যেই সম্পর্ক তৈরি হয় তা কিন্তু নয়,এর পাশাপাশি দুটি পরিবারের মধ্যেও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, নির্ভরশীলতা,বিশ্বাস আর ভালোবাসা গড়ে ওঠে।বিয়ে নিয়ে প্রতিটি ছেলে মেয়ের মনেই থাকে একরাশ অনুভূতি।যে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

তানিশা আর নোমান আজ সেই বিবাহের মতো একটি পবিত্র আর সামাজিক বন্ধনের সাথে যুক্ত হলো।এখন দেখা যাক তাদের দাম্পত্য জীবন কেমন হয়?
তায়েব চৌধুরী ছেলের বউকে আজকেই নিজের বাসায় নিয়ে যেতে চান। কারণ বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে এখন তিনি মোটেও কোনো লুকোচুরি সহ্য করবেন না।তবে তিনি লুকোচুরি ভাবে বিয়েটা দিলেন এই ভেবে যে, বিয়েতে যেনো কোনো ঝামেলার সৃষ্টি না হয়।বিয়েটা যেনো সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়।ঠিক তেমন সুষ্ঠুভাবেই হয়ে গেলো বিয়েটা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সেজন্য তায়েব চৌধুরী সবার থেকে পারমিশন চাচ্ছেন তার ছেলের বউকে নিজের ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য।কিন্তু তহিদুল সাহেব আর শিউলি বেগম সেই কথা শুনে একদম কান্নায় ভেংগে পড়লেন।।তারা ভাবতেই পারছেন না তাদের মেয়ে আজ থেকে অন্যের বাড়ি আলোকিত করবে।আজ থেকে তাদের ঘর একদম অন্ধকার হয়ে যাবে।যদিও তারা তানিশার বিয়ে নিয়ে নিজেরাও ভীষণ চিন্তার মধ্যে ছিলেন কিন্তু আজ মনে হচ্ছে কেউ তাদের ভিতর থেকে হৃদয় টা একদম ক্ষতবিক্ষত করে ফেলছে।তারা কিছুতেই নিজেদের আর শান্ত্বনা দিতে পারছেন না।এতোবছর ধরে যে মেয়ে তাদের সাথে থেকেছে আজ সে অন্যের ঘরে যাবে ভাবতেই ভিতর টা তাদের হু হু করে কেঁদে উঠছে।

তানিশা তার মা বাবার কান্না দেখে নিজেও কাঁদতে লাগলো।সেও আর নিজেকে থামাতে পারলো না।কিছুক্ষন আগে যে বাড়িটা হাসি খুশিতে ভরা ছিলো কিন্তু সেই বাড়িটাতে এখন শুধু কান্নার আওয়াজ ই পাওয়া যাচ্ছে।
নোমান তানিশাকে তার বুকের কাছে ধরে আছে।তবে সে আজ তানিশাকে বারণ করলো না কাঁদতে।সে আরো বলছে,কেঁদে নাও,ভালো করে কেঁদে নাও।এর পর আর কখনোই জল আসতে দিবো না এই চোখে।এই বলে নোমান তানিশার চোখ দুটি মুছে দিলো।

তানিশা সেই কথা শুনে আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।তার কেনো জানি আজ ভীষণ কাঁদতে ইচ্ছা করছে।এই কাঁদার সংগে মিশে আছে খুশি আর বেদনা।একদিকে সে আজ তার ভালোবাসার মানুষ টিকে সারাজীবনের জন্য আপন করে পেলো আর অন্যদিকে তার বাবা মাকে ছেড়ে অন্য জনের ঘরে যাচ্ছে।
তানিয়া এবার নিজের চোখের পানি মুছে তানিশার সামনে এলো।আর বললো,বোন,চুপ কর এখন।তোর কান্না করা দেখে বাবা মা আরো বেশি ভেংগে পড়ছেন।প্লিজ তুই চুপ কর।
তানিশা সেই কথা শুনে এবার তানিয়ার গলা ধরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো। আর বললো, আপু বাবা মাকে এখন কে দেখবে?তাদের খোঁজখবর কে নেবে?

তানিয়া তখন বললো, আরে বোকা!আমি আছি না?আমি আর তোর দুলাভাই তো এখন মাঝেমধ্যে এসেই বাবা মাকে দেখে যাবো।তুই বাবা মাকে নিয়ে অযথা এসব বাড়তি চিন্তা করিস না।আজ থেকে মন দিয়ে নিজের সংসার করবি,শশুড়ের খেতমত করবি।আর তোর নোমানকে দেখে রাখবি।সবকিছু সামলিয়ে আবার চেম্বারেও বসতে হবে। তোর কাঁধে কিন্তু এখন অনেক দায়িত্ব।

তাছাড়া তুই কি একবারে যাচ্ছিস নাকি?মাঝেমধ্যে তো তুইও আসবি।এই বলে তানিয়া তানিশাকে শান্ত্বনা দিতে লাগলো।
তানিশা তার বোনের কথা শুনে নিজেকে শক্ত করে নিলো।তবুও ভিতর থেকে তার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।
এবার তায়েব চৌধুরী নিজে এলো তানিশার কাছে আর বললো,মা তানিশা,এবার কান্নাকাটি থামাও।আর বাবা মাকে হাসিমুখে বিদায় জানাও।আর নোমান!যা শশুড় শাশুড়ী কে সালাম করে আয়।যেতে হবে এখন আমাদের।
নোমান সেই কথা শুনে তানিশাকে সাথে করে নিয়ে তহিদুল সাহেব আর শিউলি বেগমের কাছে চলে গেলো।তারপর তার শশুড় শাশুড়ী কে সালাম করলো।তানিশার বাবা সাথে সাথে নোমানকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।তারপর তানিশার হাত নোমানের হাতে দিয়ে বললো,বাবা আমাদের মেয়েটাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম।ওর খেয়াল রেখো বাবা।দুইজনের মধ্যে যেনো কখনোই অশান্তির সৃষ্টি না হয়।সুখে শান্তিতে ঘর করিও বাবা।

নোমান সেই কথা শুনে বললো, আংকেল আপনারা এতো চিন্তা করছেন কেনো?ও ভালোই থাকবে আমাদের বাড়িতে।আপনারা শুধু দোয়া করিয়েন।
তানিয়া তখন বললো,ভাই নোমান,তানিশার বাবা মানে তোমার বাবা।সেজন্য আজ থেকে আংকেল না বলে তুমিও বাবা বলেই ডাকবে।বুঝেছো?
–জ্বি আপু।

তখন তায়েব চৌধুরী বললো,হয়েছে তোমাদের বিদায় নেওয়া?এখন চলো সবাই।এই বলে তায়েব চৌধুরী তহিদুল সাহেব কে বললো, তাহলে আসছি বেয়াই আর তানিশা কে নিয়ে চিন্তা করার কিছুই নাই।আমাদের বাসায় ও অনেক ভালো থাকবে।এই বলে তিনি নোমান আর তানিশার হাত ধরে বেড়িয়ে গেলেন।আর সোজা গাড়িতে গিয়ে বসলেন।
আমান আর তার বাবা সামনের সীটে বসলো,আর নোমান,তানিশাকে পিছনের সীটে বসতে বললো।তানিশাকে নোমান জানালার কাছে বসতে বললো।কারণ যে গরম পড়েছে জানালার কাছে বসলে তানিশা একটু বাতাস পাবে।

গাড়িতে বসে নোমান একটিবারের জন্য তানিশার হাত ছাড়লো না।সে তানিশাকে আগলে রাখার চেষ্টা করলো। কিন্তু তবুও তানিশার মন কিছুতেই ভালো হলো না।সে এখনো কাঁদছে।আর নোমান তাকে সেই থেকে শান্ত্বনা দিয়েই যাচ্ছে।তানিশা এবার চুপ হলো।তবে কেমন যেনো এক অচেনা ভয় তাকে পেয়ে বসলো। প্রিয় মানুষ কে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেয়েও তার ভীষণ ভয় হতে লাগলো।সে একমনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
তানিশাকে চুপচাপ থাকা দেখে নোমান বললো,এখনো কি খারাপ লাগছে তোমার?
তানিশা মাথা নাড়িয়ে বললো, না।

নোমান তখন তানিশার মাথাটি তার ঘাড়ে রেখে বললো,কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকো ভালো লাগবে।
কিন্তু তানিশা তার মাথাটা সরিয়ে নিয়ে বললো,কি করছেন?সামনের সীটে বাবা আর আমান ভাইয়া আছে না?
–তো কি হইছে?
–না লাগবে না শোয়া।
নোমান তখন জোর করেই আবার তানিশার মাথাটা তার ঘাড়ে রেখে বললো,কোনো কথা না বলে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে থাকো।

তানিশা সেজন্য এবার আর কিছু বললো না।কিন্তু সে চোখ বন্ধ করতেই ঘুমিয়ে পড়লো।নোমান তখন তার হাত দিয়ে তানিশাকে ভালো করে ধরে রাখলো,যাতে গাড়ির ঝাঁকুনিতে তার ঘুম নষ্ট না হয়।
তানিশা আরামে ঘুমিয়ে আছে।তার নিঃশ্বাসের শব্দ নোমানের ঘাড়ে এসে যেনো আছাড় খাচ্ছে।গাড়ির ভিতর ডিম লাইট জ্বলছে।তবুও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তানিশার মুখ টি। আর নোমান সেই আলোতেই প্রাণভরে দেখছে তার নিদ্রাচ্ছন্ন প্রেয়সী বধূকে।ঘুমন্ত অবস্থায় তানিশাকে কত মায়াবতী লাগছে তা শুধু সেই জানে।নোমান অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো তানিশার দিকে।প্রচন্ড গরম পড়েছে আজ।গরমে তানিশার নাগের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমিয়েছে।নোমান তখন তার অন্য আরেকটা হাত দিয়ে ঘামগুলো মুছিয়ে দিলো।কিন্ত তানিশা সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালো।এদিকে নোমানও তাকিয়ে আছে।দুইজন এই প্রথমবার এতো কাছে থেকে দুইজন কে দেখছে।কারন নোমানের নাক আর তানিশার নাকের মাঝে মনে হয় দুই তিন ইঞ্চির মতো ফাঁকা।হঠাৎ গাড়ির একটা ঝাঁকুনিতে নোমানের নাকের সাথে তানিশার নাক ছুঁয়ে যেতেই তানিশা ইসঃ বলে সরে গেলো।কারন নোমানের চশমা দিয়ে তানিশার কপালে আঁচড় লেগেছে।

নোমান তখন বললো,সরি,সরি।এই বলে সে তার চশমাটা খুলে ফেললো।
কিন্তু তানিশা তখন মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো, ইটস ওকে।তারপর সে নোমানের ঘাড় থেকে মাথাটা সরিয়ে জানালা দিয়ে আবার বাহিরে তাকিয়ে রইলো। সে জানালা দিয়ে অন্ধকার শহর টাকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে।আর মনে মনে ভাবছে মন দিয়ে কাউকে ভালোবাসলে সে মনে হয় এভাবেই ফিরে আসে।সে তো নোমানকে হারিয়েই ফেলেছিলো,সেই হারানো ভালোবাসাকে এভাবে সে সারাজীবনের জন্য পেয়ে যাবে সত্যি ভাবতে পারছে না।
হঠাৎ নোমান তানিশাকে জড়িয়ে ধরায় সে একদম চমকে উঠলো।

নোমান তখন ফিসফিস করে বললো, এভাবে কি দেখছো বাহিরে?আমার দিকে তাকাও একটু।
তানিশা সেই কথা শুনে নোমানের মুখ হলো।কিন্তু বেশিক্ষণ তাকাতে পারলো না নোমানের দিকে।কারন নোমান কেমন যেনো এক আবেদন ময় ভংগীতে দেখছে তাকে।নোমান তখন বললো কি হলো?তাকাও?
তানিশা সেই কথা শুনে নোমানের মুখ চেপে ধরে বললো,চুপ করুন না।ভাইয়া শুনতে পাবে তো?
–পাবে না শুনতে। ভাইয়ার কানে ইয়ার ফোন লাগানো আছে।
–কিন্তু বাবার কানে তো নেই?বাবা তো শুনতে পাবে।

নোমান তখন তানিশাকে ভালো করে জড়িয়ে ধরে বললো, বাবার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তো যে জেগে জেগে ছেলে আর ছেলের বউ এর কথা শুনবে? ভালো করে তাকিয়ে দেখো বাবাও ঘুমাইছে।
তানিশা তখন বললো, তাহলে তো এখন আরো বেশি চুপচাপ থাকতে হবে।তা না হলে বাবা কিন্তু উঠে যাবে।
নোমান তখন বললো ওকে,মুখ বন্ধ রাখলাম,তবে হাত চলবে কিন্তু?এই বলে নোমান তানিশাকে স্পর্শ করতে লাগলো।কিন্তু তানিশা এতে ভীষণ আন ইজি ফিল করলো।সে তখন বললো, প্লিজ!থামেন এখন।এই বলে সে আবার সরিয়ে দিলো নোমানকে।

নোমান তখন বললো, ওকে।জাস্ট বাসায় যেতে দাও শুধু।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো, কি করবেন বাসায় গেলে?
–সেটা গেলেই টের পাবে।নিজের বাড়ি বলে কথা।এই বলে নোমান আবার তার চশমা টা চোখে দিয়ে নিলো।
তানিশা নোমানের কথা শুনে বললো,এই যে মিঃ ওটা শুধু আপনার বাড়ি না,আজ থেকে কিন্তু আমারও বাড়ি ওটা।
–ও তাই?তোমারও বাড়ি?
–হুম।আমারও বাড়ি।
হঠাৎ মোবাইলের রিংটোনে তায়েব চৌধুরীর ঘুম ভেঙ্গে গেলো।তিনি একদম তাড়াহুড়ো করে মোবাইল টা পকেট থেকে বের করলেন।
শিরিন ফোন দিয়েছে।কারণ তার ভীষণ টেনশন হচ্ছে হঠাৎ তার শশুড় এভাবে কই গেলো?রাত হয়ে গেছে তবুও তিনি কেনো ফিরছেন না বাসায়?

তায়েব চৌধুরী শিরিন কে কল করা দেখে আমান কে ডাকতে লাগলো।আর বললো,শিরিন দেখি কল দিচ্ছে আমাকে।
আমান তখন বললো,রিসিভ করার দরকার নাই বাবা।বাসায় তো যাচ্ছিই।তারপর এমনি বুঝে যাবে কই গিয়েছিলাম আমরা।
তানিশারা পৌঁছে গেলো বাসায়।সেজন্য গাড়ি থামতেই এক এক করে সবাই নেমে গেলো গাড়ি থেকে।নোমান তানিশার হাত ধরে ধীরে ধীরে তাকে গাড়ি থেকে নামালো।তারপর তাকে নিয়ে বাসার ভিতর প্রবেশ করলো।তায়েব চৌধুরী আর আমান আগেই প্রবেশ করেছে বাসায় সেজন্য দরজা খোলায় ছিলো।

তানিশা আর নোমানকে বিয়ের সাজে দেখে শিরিন একদম তাজ্জব লেগে গেলো।সে মনে হয় আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।তার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে নোমান আর তানিশার বিয়ে হয়ে গেছে।এবার শিরিন ভালো সাজার নাটক করতে লাগলো।সে কাঁদতে কাঁদতে বললো, বাবা আমি কি আপনাদের কাছে এতো টাই পর যে আমাকে না জানিয়ে আপনারা একা একা চুরি করে বিয়ে দিলেন নোমান তানিশার?

তায়েব চৌধুরী তখন বললো, এখানে পর আপন টা বড় কথা নয় মা,কথা হলো তুমি শফিকের মেয়ে।তোমাকে জানালে তুমি ঠিক শফিক কে বলে দিতে।আর এজন্য জিসান, শফিক এসে আবার ঝামেলা বাঁধাতো।এজন্য বলা হয় নি তোমাকে।তার জন্য দুঃখিত আমি।এখন যাও তানিশাকে নোমানের ঘরে নিয়ে যাও।
শিরিন তানিশাকে এ বাড়িতে বউ এর সাজে দেখে রাগে খিটমিট করতে লাগলো।তার কিছুতেই তানিশাকে সহ্য হচ্ছে না।সে ভাবতেই পারছে না তানিশা সত্যি সত্যি নোমানের বউ হয়ে এসেছে।সে তার বোনের জন্য চিন্তা করতে লাগলো।না জানি তার বোনটা শুনে কি করবে এখন?

তায়েব চৌধুরী তখন বললো, কি হলো শিরিন?যাও তানিশাকে ঘরে নিয়ে যাও।তবে তার আগে একটা কথা ভালো করো শোনো।তানিশাও মনোযোগ দিয়ে শোনো।এ বাড়িতে কিন্তু তোমাদের কোনো শাশুড়ি নাই।যদিও তোমাদের ফুফু শাশুড়ী আছে,তবে সে এখন প্রায় সময়ই মেয়ের সাথে থাকে।সেজন্য দুইজন বউ মিলে মিলেমিশে থাকবে।আমি যেনো কখনোই শুনি না তোমরা নিজেদের মধ্যে কোনো অশান্তির সৃষ্টি করেছো।যেহেতু তোমরা দুইজনই যথেষ্ট শিক্ষিত, সেজন্য তোমাদের তো কিছু বিস্তারিত ভাবে বলতে হবে না।আদব কায়দা,শিষ্টাচার সব তোমাদের জানাই আছে।
শিরিন মুখ চোখ অন্ধকার করে বললো,জ্বি বাবা।এদিকে তানিশা তার শশুড়কে সালাম করে বললো,মামা দোয়া করবেন আমাকে।

তায়েব চৌধুরী তখন হাসতে হাসতে বললো,আবার মামা?ওসব মামা টামা এখন ক্যান্সেল।এখন থেকে বাবা বলে ডাকবি।আমার নিজের কোনো মেয়ে নাই।তোরা দুইজনই হলি আমার মেয়ে।সেজন্য আমিও চাই তোরা নিজেরা আপন বোনের মতো মিলেমিশে থাকবি।যাও শিরিন, নিয়ে যাও ওকে ঘরে।
শিরিন তায়েব চৌধুরীর কথা শুনে তানিশাকে নোমানের ঘরে নিয়ে গেলো।
এদিকে নোমান তার বাবার হাত ধরে বললো,বাবা আমার উপর কি এখনো তোমার রাগ আছে?এখনো কি আমাকে ক্ষমা করো নি?

তায়েব চৌধুরী তখন নোমানের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,না করি নি।আর করবোও না কখনো।শুধু ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা করি বলে দুইজনকে মিলিয়ে দিলাম।তা না হলে জীবনেও তোর মুখ দেখতাম না আমি।
নোমান তখন বললো, বাবা এতো কেনো অভিমান আমার উপর।প্লিজ মাফ করে দাও আমাকে।আমার সাথে আগের মতো আবার কথা বলো,আর আগের মতো ভালোবাসো।
তায়েব চৌধুরী তখন বললো, যা রুমে যা এখন।আমি ঘুমাবো এখন।এই বলে তায়েব চৌধুরী চলে গেলেন।
নোমানকে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে আমান বললো,মন খারাপ করিস না।ঘরে চলে যা।আর বেস্ট অফ লাক ভাই।
নোমান সেই কথা শুনে তার ভাইকে জড়িয়ে ধরে বললো, তোমার মতো ভাই যেনো সবার ঘরে ঘরে হয়।তুমি আমার সব স্বপ্ন পূরন করেছো ভাই।

আমান তখন বললো,এসব কান্নাকাটি বাদ দিয়ে যা তো এখন।ঘরে বউ বসে আছে।এই বলে আমান নিজেও তার রুমে চলে গেলো।
এদিকে শিরিন তানিশাকে নোমানের ঘরে নিয়ে গেছে।তবে সে একটা কথাও বলে নি তানিশার সাথে।তানিশা তখন বললো, ভাবি আপনি কি আমার উপর রাগান্বিত? প্লিজ রাগ করে থাকবেন না।
শিরিন তখন বললো, না,রাগ করবো কেনো?

তানিশা তখন বললো, নোমান যে কাজ করেছে তাতে রাগ হওয়ারই কথা।শুধু শুধু শিলাকে কষ্ট পেতে হলো।
শিরিন তখন বললো,তানিশা এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না আমি।
এই বলে শিরিন রুম থেকে বের হয়ে যেতে ধরলো।কিন্তু নোমানের সাথে তার দরজায় দেখা হলো।
নোমান তখন শিরিনের হাত ধরে বললো,ভাবি,যা হবার হয়ে গেছে।প্লিজ ভাবি আমার উপর আর রাগ করে থেকো না।প্লিজ।তোমার অবদান কিন্তু আমি ভুলতে পারবো না কখনো।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩০

শিরিন তখন নোমানের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো, আমার অবদানের কেমন প্রতিদান দিলি তা তো নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি।আর এসব ন্যাকামি কথাবার্তা না বলে নিজের নতুন জীবন উপভোগ কর।বেস্ট অফ লাক।এই বলে শিরিন চলে গেলো।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩২