ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৬

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৬
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

আমি নিজের ইচ্ছাতেই নিজেকে শেষ করতে চাইছিলাম।এখানে ডক্টর নোমানের কোনো দোষ নেই।আমি ওনার উপর রাগ করে মোটেও আত্নহত্যা করতে চাই নি।
মিডিয়ার লোক তখন জিজ্ঞেস করলো,তাহলে আপনার বাবা আর ভাই কেনো বলছে আপনার আত্নহত্যা করার পিছনে ডক্টর নোমান দায়ি।

শিলা তখন বললো,ডক্টর নোমানের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হইছিলো, আমাদের এনগেজড ও হয়েছিলো।এই যে আমার হাতের আংটি টা দেখছেন,উনি নিজেই পড়িয়ে দিয়েছেন।কিন্তু উনি আমার সাথে বিয়ে টা ক্যান্সেল করে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করেন।এজন্য আমার বাবা আর ভাই ভেবেছে সেজন্য আমি আত্নহত্যা করতে চেয়েছি।
মিডিয়ার লোক তখন জিজ্ঞেস করলো,তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন ডক্টর নোমান সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–হ্যাঁ অবশ্যই উনি নির্দোষ।
মিডিয়ার লোক তখন আরেকটি প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।তাহলে কি ডক্টর নোমানের সাথে আপনার বাবা মা জোর করে বিয়ে দিতে ধরেছিলেন?
–না, এরকম কিছু না।আমি নিজের ইচ্ছাতেই বিয়ে তে রাজি হয়েছি।আমার বাবা নিজেই প্রথম এ বিয়ের কথা আমার দুলাভাই কে বলেন,তারপর আমার দুলাভাই অর্থাৎ ডক্টর নোমানের ভাই নিজেই তার ভাই কে রাজি করান।

মিডিয়ার লোকেরা শিলার কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গেলো।যেখানে ডক্টর নোমানের কোনো দোষই নাই সেখানে তাকে এই মিথ্যা হয়রানি টা কেনো করানো হলো?সেজন্য শিলাকে জিজ্ঞেস করা হলো,
আপনার বাবার পক্ষের আইনজীবী বলছেন আপনাদের মধ্যে শারিরীক সম্পর্ক ও হয়েছে।এটা কতো টা যুক্তিসঙ্গত কথা?

শিলা সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো এটাও সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা।শারীরিক সম্পর্ক তো দূরের কথা তিনি কখনো আমার হাত টিও ধরেন নি।তিনি অনেক ভালো মনের মানুষ।ওনার চরিত্র আসলেই অনেক ভালো। তার নামে যা যা বলা হয়েছে সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।
মিডিয়ার লোকেরা এবার শেষ প্রশ্ন করলো শিলাকে।তাহলে তুমি কেনো আত্নহত্যা করতে ধরেছিলে?এই ব্যাপার টা ক্লিয়ার করা দরকার।

শিলা তখন বললো, আমি ডক্টর নোমানকে ভালোবাসি, ভীষণভাবে ভালোবাসি।উনি অন্য আরেকজন কে বিয়ে করায় ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো আমার।সেই কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আমার ছিলো না।এইজন্য আত্নহত্যা করতে চেয়েছিলাম।
মিডিয়ার লোক তখন বললো, তাহলে তো ডাক্তার নোমানই দায়ী।ডাক্তার নোমান আপনার সাথে বিয়ে ক্যান্সেল করায় আপনি ভীষণ ভাবে ভেংগে পড়েন তারপর আত্নহত্যা করতে চেয়েছে।

–নো,ডাক্তার নোমান কোনোভাবেই দায়ী নয়।ওনাকে প্লিজ এর ভিতরে জড়াবেন না।তিনি আমার থেকে পারমিশন নিয়েই আমাদের সম্পর্ক টা নষ্ট করেছেন।আমি নিজে ওনাকে বলেছি যে উনি যাকে ভালোবাসেন তাকেই ওনার বিয়ে করা উচিত।আপনারা চাইলে আমাদের শেষ দিনের কল রেকর্ড টি শুনতে পারেন।
শিলা তখন তার আর নোমানের রেকর্ড টি শোনালো।

শিলাঃআপনার হয়েছে টা কি?কাল থেকে ফোন বন্ধ।আবার নিজেও আমাকে কল দিচ্ছেন না।আজ চেম্বারেও যান নি।আমি দুপুরে খাবার নিয়ে গেছিলাম হসপিটালে।
নোমানঃ আমার এক্স আবার ফিরে এসেছে আমার জীবনে।সে আমাকে পাওয়ার জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।সেজন্য আমি বসে বসে ভাবতেছি কি করা যায়?
শিলাঃহা,হা,হা।আপনার আবার এক্স ও আছে?সো ফানি?যিনি তার উডবি ওয়াইভের সাথেই ঠিক করে কথা বলতে পারে না তার আবার ভালোবাসার মানুষ ও আছে?

নোমানঃকি মনে হয় তোমার?আমি কি কাউকে ভালোবাসতে পারি না?
শিলাঃঅবশ্যই না।কতবার বলি আমরা কিছুদিন পর স্বামী স্ত্রী হতে চলেছি।চলুন একটু রোমান্টিক কথাবার্তা বলি।কোনো জায়গায় বেড়াতে যাই।একটু রোমান্টিক মুহুর্ত উপভোগ করি।কই শোনেন না তো আমার কথা?
নোমানঃশিলা আমি সত্যি ফান করছি না।সত্যি আমার একজন ভালোবাসার মানুষ ছিলো।একসময় অনেক পাগলামিও করেছি তারজন্য।
শিলাঃভালো তো।তাহলে ব্রেকাপ হলো কিভাবে?

নোমানঃহা,হা,হা।প্রেমই তো করি নি।তাইলে ব্রেকাপ হবে কেমনে?শুধু আমি তাকে ভালোবাসতাম।প্রপোজও করি।বাট সে রিজেক্ট করে দেয়।
শিলাঃহা,হা,হা।তার মানে ছ্যাকা খাইছেন।ছ্যাকা খাইয়া ব্যাকা হইয়া তারপর আমাকে বিয়ে করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
নোমানঃবিশ্বাস করো তোমাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত আমি কখনোই নেই নি।ভাবী নিজে নিজেই ঠিক করেছে।ভাইয়াও বললো বিয়ে টা করে নে।আমিও ভাবলাম করি।যে ভালোবাসে না শুধু শুধু তার অপেক্ষা কেনো করবো?

শিলাঃ তাহলে এখন কি সেই মেয়ে এসে বলতেছে যে সে আপনাকে ভালোবাসে।
নোমানঃহুম।
শিলাঃআর তাতেই আপনার রাগ অভিমান সব গলে গেলো?
নোমানঃহুম।
শিলাঃতার মানে আপনি আমাকে আর বিয়ে করতে চাচ্ছেন না?
নোমানঃহুম।
শিলাঃআপনি কি করে সিওর হলেন সে আপনাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে।যার জন্য আপনার তার কাছে ব্যাক করা উচিত।

নোমানঃসেই মেয়ে আমাকে প্রথম থেকেই ভালোবাসতো।কিন্তু তন্নির সাথে আমার বিয়ে ঠিক হইছে দেখে প্রকাশ করে নি নিজের ভালোবাসা।কিন্তু এখন যখন তন্নির সাথে আমার বিয়ে হয় নি সে পাগলের মতো ছুটে এসেছে।এতো বছর ধরে সে না কারো সাথে রিলেশনে গেছে,না বিয়ে করেছে।
শিলাঃকে সেই মেয়ে?একটিবার দেখতে চাই তাকে?এতো ভালোবাসে আপনাকে?তবে মেয়েটি আপনার থেকে ভালো কাউকে ডিজার্ব করে।
নোমানঃকেনো?আমি কোন দিক দিয়ে খারাপ?
শিলাঃখারাপ না।আপনিও সব দিক দিয়েই ভালো আছেন। বাট আপনি তাকে ভুলে গিয়ে আমার সাথে এনগেজড করে নিয়েছেন।তাহলে তো আমি বলবো আপনি তাকে ভুলে গেছেন।আপনি তাকে ভালোবাসেন নি কখনো।

নোমানঃআমি সত্যি ভালোবেসেছি ওকে।কি বলছো এসব?ওর চিন্তায় খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত বাদ দিয়েছি। রাতের পর রাত নির্ঘুমে কাটিয়েছি।রাগ করে নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে অচেনা এক জায়গায় চলে গিয়েছি।একবার তো মারাত্মক ভাবে এক্সিডেন্ট ও হয়েছিলো আমার।তবুও সে প্রপোজ এক্সসেপ্ট করে নি আমার।আমিও সেজন্য রাগ করে আর জিদের বশে তোমার সাথে এনগেজড করে নিয়েছি।
শিলাঃওগুলো আপনার ভালোবাসা ছিলো না।ওগুলো ছিলো পাগলামি। আর এখন যেটা ফিল করছেন সেটা হলো সহানুভূতিতা।মানে মেয়েটা আপনাকে ভালোবেসে অন্য কাউকে গ্রহন করতে পারে নি বিধায় আপনি সেই কথা শুনে জাস্ট ইমোশনাল হয়ে গিয়েছেন।

নোমানঃশিলা একটা হেল্প করতে পারবা?
শিলাঃকি হেল্প?
নোমানঃআচ্ছা সত্যিকার ভাবে কাউকে ভালোবাসলে তার কি কি গুন থাকতে হবে?মানে সে কি করে বুঝবে আমিও তাকে প্রচন্ডভাবে ভালোবাসি।
শিলাঃএখন আপনার উচিত মেয়েটাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করা।তাহলেই মেয়েটি বুঝবে আপনিও তাকে ভালোবাসেন।
নোমানঃকিন্তু তুমি?তোমার সাথে যে আমার এনগেজড হয়েছে?
শিলাঃআপনি কি আমাকে ভালোবাসেন?
নোমানঃনা

শিলাঃতাহলে আমার কথা কেনো ভাবছেন?আপনি যাকে ভালোবাসেন এখন আপনার শুধু তাকে নিয়েই ভাবতে হবে।
নোমানঃতোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো সত্যি আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।আমি জানতাম তুমি অনেক ভালো মেয়ে।কিন্তু তুমি যে এতো ভালো সত্যি আমি বুঝতে পারি নি।
শিলাঃ ইটস ওকে নোমান।আসলে যে যাকে ভালোবাসে তার সাথেই তাকে বিয়ে করে নেওয়া উচিত।কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে বিয়ে করলে আসলে শান্তি পাওয়া যায় না।আমি আপনাকে জোর করে বিয়ে করলে কোনো শান্তিই পেতাম না।অযথা আমাদের সবার জীবন নষ্ট হয়ে যেতো।

নোমানঃশিলা একটা সত্যি কথা বলবে?
শিলাঃকি?
নোমানঃতুমি কি আমাকে ভালোবাসো?
শিলাঃহ্যাঁ বাসি।
নোমানঃ তাহলে এখন তুমি যে কষ্ট পাবে?
শিলাঃহ্যাঁ পাবো।কিন্তু আপনার আমার বিয়ে হলে যে আপনারা দুইজন কষ্ট পাবেন।এভাবে অন্যকে কষ্ট দিয়ে কখনো ভালো থাকা যায় না নোমান।
নোমানঃইসস,তোমার মতো করে যদি তন্নি এভাবে ভাবতো!তন্নি যদি সেদিন বাবাকে আমার আর তানিশার ভালোবাসার কথা বলে দিতো তাহলে আমাকেও আর সেদিন বাড়ি থেকে পালাতে হতো না। আমাদের কারো জীবনই আজ এমন এলোমেলো হতো না।আমি আর তানিশাও সুখে থাকতাম।তন্নি নিজেও ভালো থাকতো।আর মাঝখানে তোমার জীবনটাও এলোমেলো হতো না?

শিলাঃআপনি তাহলে সেদিন আপনার গার্লফ্রেন্ডের জন্যই তন্নিকে বিয়ে করেন নি?
নোমানঃহ্যাঁ।তানিশা আর আমি যে দুইজন দুইজনকে ভালোবাসি তা তন্নি জানতো।সে জেনেও আমাকে বা বাবাকে কিছু বলে নি।সে উলটো আমাকে বিয়ে করতে ধরেছিলো।কিন্তু আমার মনে তো শুধু তানিশাই ছিলো।যার কারনে আমি বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাই।
শিলাঃআচ্ছা,আপনার গার্লফ্রেন্ডের নাম কি তানিশা?
নোমানঃহ্যাঁ।

শিলাঃতাহলে তো মনে হয় আমি দেখেছি তাকে।জিসান ভাইয়ার জন্য দেখতে গিয়েছিলাম তানিশা নামের কাউকে।
নোমানঃ হ্যাঁ হ্যাঁ, সেই মেয়েই।
শিলাঃআপনার পছন্দ আছে।আপুটি অনেক কিউট।তার উপর আবার ডাক্তার।ভালোই মানাবে আপনার সাথে।
নোমানঃ তুমি মন থেকে বলছো কথাগুলো?
শিলাঃহ্যাঁ সিওর।একদম মন থেকেই বলছি।আপনাদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।

শিলা আর নোমানের সেদিনের সেই রেকর্ড শুনে আর কারো কোনো জিজ্ঞেস করার ছিলো না।এই রেকর্ড থেকে তন্নির ব্যাপারটাও ক্লিয়ার হয়ে গেলো।তন্নি যে নিজের স্বার্থের জন্য নোমান তানিশার ভালোবাসা গোপন করে নিজেই নোমানকে বিয়ে করতে চাইছিলো তা ক্লিয়ার হয়ে গেলো। এখানেও নোমান নির্দোষ ছিলো।তবে এখন সবাই তন্নির বয়ান শুনতে চাইছিলো।যার কারনে মিডিয়ার লোকেরা তন্নির হাজব্যান্ডের বাসাতে চলে যায়।

তন্নিও একটা মিথ্যা কথাও বললো না।সে সব সত্যি বলে দিলো।তন্নি তার পাপের শাস্তি পেয়েছে।সে নিজেও এখন চায় তানিশা ভালো থাক।কারন বেচারি তার জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছে।
এবার মিডিয়ার লোকেরা বুঝে গেলো জিসান তানিশাকে বিয়ে করতে না পেরেই এভাবে নোমানের পিছনে লেগেছিলো?কিন্তু তারা জিসান কে খুঁজে পেলো না।জিসান তার আগেই পালিয়েছে।কিন্তু শফিক সাহেব কে পাওয়া গেলে তিনি বলেন,আমি ভেবেছি আমার মেয়ে নোমানের জন্যই আত্নহত্যা করেছে।এজন্য মামলা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার মেয়ে যে নিজেই নোমানকে অন্য কাউকে বিয়ে করতে বলেছে সেটা আমার জানা ছিলো না।সরি।

এদিকে পুরো টিভি চ্যানেলে এখন শুধু শিলা আর নোমানের সংবাদ।নোমান আর শিলার ফোন রেকর্ড টি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে।এই রেকর্ড শুনে কেউ কেউ কেঁদেও ফেলেছে।কারন শিলার কথাগুলো সবার মন ছুঁয়ে গেছে।সবাই শিলার অনেক বেশি প্রশংসা করছে।আর বলছে ভালোবাসতে হলে শিলার মতোন ভালোবাসো।সে নোমানের ভালোবাসা পায় নি এটা ঠিক কিন্তু সে তার ভালোবাসার অবমাননা করে নি।সে চাইলে নিজেও নোমানের নামে মিথ্যা কথা বলতে পারতো।কিন্তু তেমন টা করে নি শিলা।এদিকে সবাই যাকে দুশ্চরিত্র বলে জেনেছে সেই ডক্টর নোমান যে এতোটাই ভালো ছেলে সত্যি কারো বিশ্বাস হচ্ছে না।নিজের উড বি ওয়াইফের যে হাত পর্যন্ত ধরে নি,তাকে নিয়ে একদিন ঘুরতেও যাও নি,ফোনে কোনো নোংরা কথা বলে নি তার মতো ছেলে আসলে লাখে একটা।আর সেই নিষ্পাপ ছেলেটিকে এভাবে হয়রানি করা হলো?এটা মোটেও ঠিক কাজ করে নি শিলার বাবা।যিনি নিজেও একজন ডক্টর।একজন স্বনামধন্য ডক্টর হয়ে তার থেকে এমন ব্যবহার কেউ আশা করে নি।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নোমান আর তানিশার প্রেম ভালোবাসার কথা ইতোমধ্যে সবার মুখে প্রচার হলো।সবাই তাদের প্রেম ভালোবাসাও জেনে গেলো।জিসান নোমানকে অপদস্ত করতে চেয়েছিলো, সবার সামনে তাকে খারাপ প্রমান করতে চেয়েছিলো কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডক্টর নোমান আর ডক্টর তানিশার সুনাম আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো।তাদের কে আগে কেউ চিনতো না,কেউ জানতো না।কিন্তু এখন পুরো দেশের মানুষ চিনে গেলো।আসলে একটা কথা আছে,অন্যের জন্য গর্ত করলে শেষমেশ সেই গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়।যা আজ প্রমাণিত হলো।যদিও সবটা কৃতিত্ব শিলার।সে যদি রেকর্ড টি না শোনাতো আর পরিষ্কার ভাবে সবকিছু না বলতো তাহলে নোমান কখনোই তার কলঙ্গের দাগ মুছে ফেলতে পারতো না।

নোমান নিজের নামে এমন পজিটিভ কথা শুনে সত্যি সে আজ কেঁদে ফেললো।তা না হলে সে ভীষণ টেনশনের মধ্যে ছিলো।রাস্তায় বের হলে সবাই তাকে আংগুল দেখিয়ে বলতো দুশ্চরিত্র ডক্টর।কিন্তু আজ বলছে চরিত্রবান,সৎ আর ভালো মনের ডক্টর। সেই সাথে একজন প্রেমিক।যে শেষ মেষ তার ভালোবাসার মানুষ কে আপন করে পেয়েছে।
তানিশা আর নোমান এবার শিলাকে দেখার জন্য হসপিটালে ছুটে এলো।তারা শিলাকে কি বলে ধন্যবাদ দেবে সত্যি বুঝতে পারছিলো না।

নোমান আর তানিশা কে একসাথে দেখে শিলার চোখে জল চলে এলো।কিন্তু সে সেটা কাউকে বুঝতে দিলো না।তাড়াতাড়ি করে জল টা মুছিয়ে নিয়ে নরমাল ভাবে কথা বলতে লাগলো।
নোমান শিলার জন্য একটা ফুলের তোড়া নিয়ে এসেছিলো।যেটা সে নিজের হাতে শিলাকে দিয়ে দিলো।আর বললো, থ্যাংক ইউ শিলা।তোমার মতো একজন মেয়ের সাথে পরিচয় না হলে বুঝতেই পারতাম না কিভাবে একজন মানুষ তার ভালোবাসার মানুষ কে শ্রদ্ধা করে।কিভাবে তার মানসম্মান নষ্ট না করে তার ভালো দিক টা সবার সামনে তুলে ধরে।
তানিশা এবার শিলার হাত ধরে বললো,আই এম সরি শিলা।আমার জন্য আজ তোমার এই অবস্থা হয়েছে।আই এম ভেরি ভেরি সরি।

শিলা তখন বললো,আপু কথাটা ভুল বললেন আপনি।আপনার জন্য হয় নি বরং আমার জন্যই আপনারা আজ এই অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন।কিন্তু আমি তো আপনাদের থেকে চিরদিনের জন্য দূরে যেতে চেয়েছিলাম।আমার জন্য যে নোমানকে এতো হয়রানি হতে হবে সত্যি আমি বুঝতে পারি নি।আমার জন্য ওনার মানসম্মান নষ্ট হয়ে গেলো।
বিশ্বাস করুন নোমান আমি ভাবতেই পারি নি আমার জন্য এভাবে আপনার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলবে সবাই।
নোমান তখন বললো, যা হবার হয়ে গেছে।সব তো মিটমাট হয়েই গেলো।এখন আর যেনো আত্নহত্যার কথা ভুল করেও মাথাতে এনো না।তোমাকে আরো অনেক টা পথ এগোতে হবে।সামনে তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।

শিলা তখন বললো না আর কখনোই আত্নহত্যা করতে চাইবো না।আত্নহত্যা যে কোনো সমস্যার সমাধান নয় তা আমি বুঝে গেছি।তাছাড়া আমি আত্নহত্যা করলে সবাই আবার আপনার দিকে আংগুল তুলবে,আপনাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলবে।তা আমি হতে দিবো না।

তানিশা শিলার কথাবার্তা শুনে সত্যি মুগ্ধ হলো।সে বুঝে গেলো শিলা নোমান কে অসম্ভব ভাবে ভালোবাসে।নোমানের প্রতি শিলার এই ভালোবাসা দেখে তানিশার চোখে জল চলে এলো।সেজন্য তানিশা শিলাকে জড়িয়ে ধরে বললো, তোমার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা শিলা।তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করছি।
এদিকে তায়েব চৌধুরীও আর নোমানের উপর রাগ করে থাকতে পারলেন না।তিনি নিজেও নোমানের সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দিলেন।তিনি মনে মনে ভাবলেন সবকিছু যখন ভালোভাবেই মিটমাট হয়ে গেলো এবার অন্তত তাদের সংসারে আবার শান্তি ফিরে আসবে।

নোমান আর তানিশা যেহেতু বিয়ের পর থেকে এসব যন্ত্রনার মধ্যে ছিলো সেজন্য তিনি ঠিক করলেন কয়দিনের জন্য তারা দুইজন একটু নিরিবিলি সময় কেটে আসুক।কিন্তু তানিশা আর নোমানের হাতে মোটেও সেই সময় নাই।তবুও তারা কোনোভাবে দুইদিনের জন্য ছুটি নিলো।তবে তারা একা একা যাবে না বলে জানিয়ে দিলো।তারা দুইজন ঠিক করলো সবাই মিলেই বেড়াতে যাবে কোথাও।।কারণ এই ঘটনার জন্য শুধু তারা দুইজন কষ্ট পায় নি,পুরো পরিবারের লোক ই পেরেশানির মধ্যে ছিলো।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৫

তানিশা,নোমান,আমান,শিরিন,শিলা,সিফাত,তন্নি, ইকবাল,ইশা,তানিয়া,সোহান,স্বর্না সবাই মিলে দুইদিনের জন্য ভ্রমণে বের হলো।
কিন্তু তায়েব চৌধুরী আর তাহমিনা চৌধুরী গেলো না।তারা ভাবলো সবাই চলে গেলে তাদের বাড়ি দেখাশোনা করবে কে?

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৭