ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৫

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৫
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

তাহমিনা চৌধুরী তার ভাই এর সাথে জেরা করতে লাগলো। তাকে না জানিয়ে কেনো তার ভাই তানিশার সাথে নোমানের বিয়ে দিলো।তায়েব চৌধুরী এতো করে বোঝাচ্ছেন যে এটা এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে।তবুও তাহমিনা চৌধুরী বুঝতে চেষ্টাই করছেন না।
তিনি তখন বললেন,

তুই তো নোমানের মুখ দেখবি না বলে শপথ করেছিস,ওকে বাড়িতে উঠতে দিবি না বলে জানিয়েছিস তাহলে সে এ বাড়িতে আসলো কিভাবে?আর বিয়ে টাই বা হলো কিভাবে?যে ছেলের জন্য আমার মেয়ের জীবন টা একদম ওলট-পালট হয়ে গেলো সে কি করে এই বাড়িতে ঠাই পেলো?না তোর ছেলে দেখে ওর সব অপরাধ মাফ করে দিয়েছিস?
এ কয় দিন আমি না থাকায় পুরো বাড়ির চেহারাই তো পালটে গেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তায়েব চৌধুরী তখন বললো তুই মাত্র আসলি বাসায়।এখন একটু রেস্ট নে আগে।তারপর পরে বিস্তারিত ভাবে শুনিস।এই বলে তায়েব চৌধুরী তার নিজের রুমে চলে গেলেন। এমনিতেই তিনি নানা রকম টেনশনের মধ্যে আছেন তার ভিতর এই তাহমিনা টা কি সব বকবকানি শুরু করে দিয়েছে।
তাহমিনা তার ভাই এর কথা শুনেও মাথা ঠান্ডা করলো না।তিনি এবার লিনার থেকে বিস্তারিত ভাবে শুনতে গেলেন।আসলে হয়েছিলো টা কি?

লিনা তখন বললো আমি তো এতো কিছু জানি না খালা।শুধু শুনেছি নোমান ভাইয়া আর তানিশা ভাবি নাকি এক সময় দুইজন দুইজনকে খুব ভালোবাসতো।কিন্তু সে কথা কেউ জানতো না।কিন্তু খালু এতো দিন দিয়ে সেই কথা শুনেছে।সেজন্য দুইজনার বিয়ে দিয়েছে।

লিনার কথা শুনে তাহমিনার মাথায় যেনো আগুন উঠে গেলো।তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন তলে তলে এতো দূর পর্যন্ত চলে গিয়েছিলো তানিশা।নিজের বান্ধুবীর হবু বরকেই ভালোবেসেছিলো।যার জন্য নোমান তন্নিকে বিয়ে করে নি।যার জন্য তার মেয়ের আজ এই অবস্থা। সেই মেয়ে এই বাড়িতে সংসার করবে?তার চোখের সামনে সারাক্ষণ ঘুরঘুর করবে?না, কখনোই হবে না।তার মেয়ের জীবন টা যে এভাবে এলোমেলো করেছে তার ঠাই এ বাড়িতে কিছুতেই নাই।এই বলে একা একাই বিড়বিড় করতে লাগলো তাহমিনা।

এদিকে নোমান আর তানিশা একসাথে বাসায় ফিরলো।তবে নোমানের কেনো জানি চেম্বারের ঐ মহিলার কথা বার বার মনে পড়ছে।কিভাবে তার চোখ মুখ স্পর্শ করে দিলো মহিলাটি।সে যেনো এই স্পর্শের মধ্যে অন্য রকম একটা ভালোলাগা ফিল করতে লাগলো।তানিশাও বুঝতে পারলো না কিছু।হঠাৎ আদ্রিয়ানের আম্মু নোমানকে দেখে এভাবে ইমোশনাল হয়ে গেলেন কেনো?আর ওনার চোখে পানিই বা এলো কেনো?

তানিশারা রুমে প্রবেশ করতেই তাহমিনা চৌধুরীর সাথে দেখা হলো তাদের।নোমান তাহমিনা চৌধুরী কে দেখামাত্র বললো, ফুপি,কেমন আছো?এই বলে নোমান তাকে জড়িয়ে ধরতে গেলো।
কিন্তু তাহমিনা চৌধুরী নোমানকে সরিয়ে দিয়ে তার রুমে চলে গেলো।তিনি নিজের থেকে তো কোনো কথা বললেনই না এমনকি নোমানের প্রশ্নের ও কোনো জবাব দিলেন না।কারন তিনি এখনো রেগে আছেন নোমানের উপর।তিনি মনে করেন শুধুমাত্র নোমানের জন্যই তন্নির আজ এ অবস্থা।সেজন্য এতোদিন পর নোমানের সাথে দেখা হয়েও তিনি খুশি হলেন না।
নোমান তখন চিৎকার করে বললো,ফুপি! তোমার রাগ এখনো কমে নি?কবে কমবে রাগ?
তাহমিনা কোনো উত্তর দিলো না।

নোমানকে মন খারাপ করা দেখে তানিশা বললো,আসলে আমি সবচেয়ে বড় অপরাধী।আমি এখানে তন্নির কোনো দোষই দেখছি না।তন্নি ওর স্বার্থ দেখেছে।কিন্তু আমি যদি সেদিন আমার স্বার্থ দেখতাম তাহলে এতোকিছু ঘটতোই না।আর বাবাও তন্নির সাথে আপনার বিয়ের ব্যবস্থা করতেন না।
নোমান তানিশার কথা শুনে বললো,হ্যাঁ,ঠিক বলছো তুমি।তবে শুধু তোমার একার দোষ নয়।এতে আমারও দোষ কিন্তু কম না।আমি যদি সেদিন মুখ ফুটে বাবার সামনে সব সত্যি কথা প্রকাশ করতাম তাহলে হয় তো বাবা তখনি কিছু একটা ব্যবস্থা করতেন।এখন কত সহজে আমাদের ভালোবাসা টা মেনে নিয়েছেন।আর নিজের থেকে আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দিলেন।

–হ্যাঁ ঠিক বলেছেন।সেই সুযোগে আপনি এ বাসাতে আবার ফিরে এলেন।বাবার সাথে আপনার সম্পর্ক টাও ঠিক আগের মতো হয়ে গেলো।
কিন্তু আমি একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারছি না বাবা কিভাবে সবকিছু এতো সহযে মেনে নিলো?
নোমান তখন বললো তানিশা, তুমি যেটা দেখছো সেটা বাবার উপরের চেহারা।বাবা এখনো আমাকে মন থেকে মেনে নেয় নি। উনি তো এখনো ঠিক করে কথা বলেন না আমার সাথে।শুধু এই বাসায় থাকি এটাই।তাছাড়া বাবার সাথে সম্পর্ক আমার আগের মতো নেই আর।

তানিশা নোমানের কথা শুনে বেশ অবাক হলো।সে তখন বললো, কথা বলেন না?তাহলে আপনার বিয়ে দিলেন কেনো?
–বাবা,ভালোবাসাকে খুব বেশি শ্রদ্ধা করেন।সেজন্য আমার কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারেন নি।মানে ভালোবাসার কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারেন না।কিন্তু এই কথা টা আমি আগে জানতাম না।এতোদিনে পরিষ্কার বুঝলাম।
তানিশা তখন নোমানের কাছে এগিয়ে যেয়ে বললো, পারমিশন দিলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই।

–কি?
–আপনার মা বাবার কি লাভ ম্যারেঞ্জ ছিলো?
–জানি না।এ বিষয়ে বাবা কখনো কিছু বলে নি।
–আচ্ছা মা কিভাবে মারা গিয়েছিলো?
মায়ের কথা শোনামাত্র নোমানের চোখে জল চলে এলো।কারণ সে যে তার মাকে কখনোই দেখে নি।
তানিশা নোমানকে চুপ করে থাকা দেখে বললো, আই এম সরি নোমান।আর কখনো জিজ্ঞেস করবো না।আমি জানি না তো এজন্য জানতে চাইছিলাম।

নোমান তখন বললো,শুনেছি আম্মু অসুখে হঠাৎ করে মারা গিয়েছেন।আমি তখন ছোটো, এজন্য মনে নেই কিছু আমার।
তানিশা নোমানের কষ্ট বুঝতে পারলো। সেজন্য সে নোমানকে জড়িয়ে ধরে থাকলো কিছুক্ষন।আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না নোমানকে।কিন্তু নোমান মায়ের কথা শুনে অনেক বেশি ইমোশনাল হয়ে গেলো।সে মায়ের সম্পর্কে কিছুই জানে না।এমনকি মায়ের কোনো ছবিও দেখে নি।তার বাবা কেনো জানি তাদের কখনোই মায়ের গল্প শোনান না।এমনকি তার আমান ভাইয়াও কিছু বলে নি।

আজ তানিশাদের বিয়ের দ্বিতীয় দিন।গা থেকে এখনো তাদের নতুন বিয়ের গন্ধ যায় নি।দুই প্রেমিক যুগলের কাছে আজকের রাত টিও প্রথম রাতের মতোই মনে হচ্ছে।ঘরের সব আলো নিভিয়ে ডিম আলোতে জ্বলছে তাদের প্রেমের লিলা খেলা।মনে হচ্ছে তারা যেনো স্বর্গ সুখে ভাসছে।আর তার সাথে বাজছে নেশা ধরানো মিউজিক।

Saanson ko saanson mein dalne do zara
Saanson ko saanson mein dalne do zara
Dheemi si dhadkan ko badne do zara
Lamho ki guzarish hai yeh paas aa jaaye
Hum… hum tum…
Tum… hum tum…
Aankhon mein humko utharne do zara
Baahon mein humko pighalne do zara
Lamho ki guzarish hai yeh paas aa jaaye
Hum… hum tum…
Tum… hum tum…

দুই দিন আরাম আয়াশে কাটানোর পর আজ দুইজনই তাদের কর্মস্থলে ফিরবে।সেজন্য খুব সকালে উঠতে হয়েছে তানিশাকে।যদিও লিনা একাই সব সামলাতে পারে তবুও বাড়ির বউ হিসেবে তানিশার একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে।ওদিকে শিরিন এখনো আসে নি বাসায়।সেজন্য তানিশা লিনাকে হেল্প করতে লাগলো।
লিনা রুটি বেলতে লাগলো আর তানিশা কেটে রাখা সবজি ধুয়ে রান্না করা শুরু করলো। লিনা চালু বেশি এজন্য তাড়াতাড়ি করে শেষ করলো রুটি বেলা।তারপর সে রুটি সেঁকা শুরু করলো।
কিছুক্ষণ পর তাহমিনা চৌধুরীও আসলো কিচেন রুমে।তিনি তানিশার সাথে একটা কথাও বললেন না, সোজা লিনাকে জিজ্ঞেস করলেন নাস্তা কি রেডি হয় নি?

লিনা বললো,না খালা, এখনো বাকি আছে।
তাহমিনা চৌধুরী সেই কথা শুনে চিৎকার করে
বললো,আজ এতোক্ষণ লাগছে কেনো?সবাই তো উঠে যাবে কিছুক্ষনের মধ্যে।
লিনা তখন বললো এই তো হয়ে যাবে।
তাহমিনা চৌধুরী তখন তানিশার দিকে তাকিয়ে বললো,অন্যের আশায় না থেকে নিজের কাজ নিজেই কর লিনা।তাতেই তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। আর আমার নাস্তা রুমে দিয়ে আছিস।শরীর টা আমার বেশি ভালো না।এই বলে তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন।

তানিশা বুঝতে পারলো তন্নির মা তাকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বললো।কিন্তু সে কিছু মনে করলো না।
লিনা এবার তানিশা কে বললো, ভাবি আপনি না হয় রুমে চলে যান। বাকি কাজ আমি করছি।আপনিও তো আজ চেম্বারে যাবেন।আপনার আবার দেরি হয়ে যাবে।
তানিশা তখন বললো,কোনো সমস্যা নেই।হবে না দেরি।
লিনা সেই কথা শুনে বললো আচ্ছা আপনি তাহলে রুটি গুলো সেঁক দিন।আমি সবজি রান্না করছি।
–ওকে।এই বলে তানিশা রুটিগুলো ধীরে ধীরে সেঁক দিতে লাগলো।আর লিনা সবজি রেডি করে এবার ডাল সিদ্ধে দিলো।আর আমানের জন্য কফি রেডি করতে লাগলো।কারণ আমান এই সময়ে আগে এক মগ কফি খায়।যেহেতু শিরিন ভাবি নাই সেজন্য লিনাই নিয়ে গেলো কফির মগটা।

অন্যদিকে তানিশা রুটিগুলো সেঁক দিয়ে নোমানের জন্যও এক মগ কফি রেডি করে রুমে চলে গেলো।
নোমান এখনো ওঠে নি।সেজন্য তানিশা কফির মগ টা টেবিলে রেখে নোমানকে ডাকতে লাগলো।নোমান কোলবালিশ টা জড়িয়ে ধরে যেভাবে ঘুমাচ্ছে মনেই হচ্ছে না সে আজ চেম্বারে যাবে।

তানিশা তখন জানালা টা খুলে দিয়ে পর্দা গুলো সরিয়ে দিলো।আর সাথে সাথে বাহির থেকে রোদের ঝিলিক নোমানের চোখে এসে লাগলো।কিন্তু নোমান তবুও উঠলো না।সে বরং অন্য পাশ হয়ে আরো ভালোভাবে ঘুমিয়ে পড়লো।
তানিশা তখন নোমানের পাশে বসে ওর মুখে ভিজা চুল দিয়ে স্পর্শ করতে লাগলো।নোমান এবার ও কিছু বললো না।সেজন্য তানিশা এবার একটা কাঠি দিয়ে নোমানের কানে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো।
নোমান তখন তানিশার হাত টিপে ধরে বিরক্ত হয়ে বললো,তানিশা! কি করছো?ঘুমাতে দাও।

তানিশা তখন বললো,কয়টা বাজে দেখেছেন?
নোমান ঘুমঘুম কন্ঠ নিয়েই বললো,কয়টা?
তানিশা তখন শয়তানি করে বললো দশ টা বাজে।
নোমান সেই কথা শুনে এক লাফ দিয়ে উঠে বসলো।
এদিকে তানিশা হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।আর বলছে ওঠেন না বলে?এই বলে নোমানের হাতে কফির মগ টা দিয়ে দিলো।

নোমান তখন কফির মগে চুমুক দিতে দিতে মোবাইল টা হাতে নিলো।কিন্তু ঘড়ির দিকে তাকিয়েই সে আবার তানিশার দিকে রাগান্বিত লুকে তাকালো।
তানিশা তখন বললো,এভাবে তাকানোর কি আছে?দশ টা বাজে নি কিন্তু বাজবে তো?
নোমান তখন কফির মগ টা রেখে দিয়ে বললো এদিকে এসো।
–না,কাজ আছে আমার।এই বলে তানিশা উঠতে ধরলে নোমান তার আগেই তার হাত ধরে টেনে বিছানায় নিয়ে আসে।
তানিশা তখন বললো ছাঁড়ুন।কিচেনের দিকে যেতে হবে আমাকে।
নোমান তখন তানিশার ঠোঁট দুটি মুখে পুরে নিয়ে বললো, ফাজলামি করো আমার সাথে?এখনো পুরো এক ঘন্টা বাকি আছে।আজ ফাজলামি শিখে দেবো।

তানিশা তখন বললো, ছাড়েন বলছি।কেউ আসবে তো?
–কেউ আসবে না আমার ঘরে।এই বলে নোমান তানিশাকে বিছানায় শুয়ে দিলো।আর ধীরে ধীরে তানিশার দিকে এগোতে লাগলো।ঠিক সেই সময়ে রিং বেজে উঠলো নোমানের ফোনে।নোমান সেজন্য থেমে গেলো।
এদিকে তানিশা ফোনের রিংটোন শুনে হাসতে লাগলো আর বললো বেশি করে আদর করুন।নোমান এবার তানিশা কে ছেড়ে দিয়ে তার মোবাইল টা হাতে নিলো।
–আমান ভাইয়া?নোমান ভীষণ অবাক হলো।সেজন্য নোমান তাড়াতাড়ি করে রিসিভ করলো।
রিসিভ করতেই আমান বললো, আমি অফিসে যাচ্ছি।
আর শিলা মোটামুটি সুস্থ হয়েছে।

আজ শিলার জবানবন্দি নেওয়া হবে। তোকে ডাকলে ঠিক সময়ে আসিস পুলিশ ষ্টেশনে।
নোমান তখন বললো সে না হয় আসলাম।কিন্তু তুমি বাসাতে থাকতেও ফোনে কল দাও কেনো আমাকে?ডাকলেও তো পারো,বা রুমে এসে বলে যেতে পারো।
আমান তখন বললো,এখন ভাই আমার বড় হয়ে গেছে।বিয়ে করেছে।এখন কি যখন তখন রুমে যাওয়া যায়?সেজন্য ফোনেই কল দিলাম।এই বলে আমান রেখে দিলো ফোন।
যদিও নোমানের কোনো অপরাধ নাই।তবুও কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে তার।।নোমানের ভীষণ টেনশন হতে লাগলো যদি আবার শিলা সত্যি সত্যি মিথ্যা কথা বলে তখন কি হবে?তার তো একটা রেপুটেশন আছে?এভাবে তার মানসম্মান নষ্ট করে যে কি মজা পাচ্ছে জিসান সত্যি নোমানের মাথাতেই ঢুকছে না।

তায়েব চৌধুরী, নোমান,তানিশা আর লিনা একসাথে বসে নাস্তা করছে।কিন্তু তাহমিনাকে না দেখতে পেয়ে তায়েব চৌধুরী বললো,তাহমিনা কই?
লিনা তখন বললো খালার নাকি শরীর ভালো লাগছে না সেজন্য রুমে দিয়ে এসেছি খাবার।
তায়েব চৌধুরী বুঝে ফেললেন কেনো তাহমিনা এরকম করছেন।সেজন্য আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না লিনাকে।চুপচাপ নাস্তা খেতে লাগলো।একটিবারের জন্য তিনি নোমানকেও কিছু জিজ্ঞেস করলেন না।তবে তানিশাকে জিজ্ঞেস করলো আজ সে চেম্বারে যাবে কিনা?
তানিশা জানালো হ্যাঁ সে আজ যাবে হাসপাতালে।

তায়েব চৌধুরী তার নাস্তা খাওয়া শেষ করে নিজেও অফিসে চলে গেলেন।
এদিকে নোমান খুব ধীরে ধীরে খাচ্ছে। আর কি নিয়ে যেনো চিন্তা করছে। তানিশা তা দেখে বললো, কি হয়েছে আপনার?এই কিছুক্ষন আগেই তো বেশ আনন্দে ছিলেন।হঠাৎ করে কি হলো?
নোমান তখন বললো,কিছু হয় নি তো।এই বলে সে দুই এক লোকমা মুখে দিয়েই রুমে চলে গেলো।আর তানিশাকে বললো তাড়াতাড়ি রুমে এসো।বের হতে হবে এখন।তানিশা সেই কথা শুনে নিজেও তাড়াতাড়ি খাবার টা শেষ করে রুমে চলে গেলো।

তানিশা রুমে গিয়ে দেখে নোমান অফিস যাওয়ার জন্য রেডিও হচ্ছে। ব্লু কালারের শার্ট আর ধূসর কালারের একটা প্যান্ট পড়েছে।তারপর ব্লু কালারের টাই বাঁধছে।কিন্তু তানিশা নোমানের কাছে চলে গিয়ে নিজেই বেধে দিলো টাই।আর তার গায়ে সাদা এপ্রোণ টি জড়িয়ে দিলো।আর বললো, মাশাল্লাহ ডাক্তার সাহেব কে আজ বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে কিন্তু।
নোমান সেই কথা শুনে তানিশার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো, দেখতে হবে না জামাই টা কার?তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি।এই বলে নোমান বের হয়ে গেলো রুম থেকে।
তানিশা নোমানের কথা শুনে রেডি হতে লাগলো।সে নিজেও একটা ব্লু কালারের শাড়ি পড়ে নিলো।আর সাদা এপ্রোণ টি গায়ে জড়িয়ে হাতে একটা পার্স নিয়ে নোমানের সামনে এসে দাঁড়ালো।আর বললো চলুন।

–হ্যাঁ চলো।
নোমান এতোক্ষন তার মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত ছিলো।সেজন্য খেয়াল করে নি তানিশাকে।কিন্তু সে যখন তানিশার দিকে ভালো করে তাকালো সে কিছুতেই তার চোখ ফেরাতে পারছিলো না।
ব্লু কালারের শাড়ির উপর সাদা এপ্রোণ জড়ানো তানিশাকে একদম অন্যরকম লাগছিলো।গলায় আবার পুতি বসানো সাদা নেকপিস পড়েছে যা তার সৌন্দর্য কে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
তানিশা তখন বললো কি হলো?দাঁড়ালেন কেনো? চলুন তাড়াতাড়ি। এই বলে তানিশা নোমানের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো গাড়ির দিকে।

নোমান তখন বললো,এই দাঁড়াও।যাবোই তো।তার আগে বলো এটা কি লিপিস্টিক দিয়েছো?এই শাড়ির সাথে এই লিপিস্টিক তো একটুও মানাচ্ছে না।একদম বাজে দেখাচ্ছে।অন্য কোনো লিপিস্টিক ইউজ করতে হবে।
তানিশা তখন বললো কি বলছেন এসব?কোন লিপিস্টিক ইউজ করবো?
নোমান তখন এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো, জাস্ট ওয়েট,আমি আছি না?ঠিক করে দিচ্ছি।এই বলে নোমান হঠাৎ তানিশার ঠোঁটে ঠোঁট মিলালো।কিছুক্ষন পর বললো,

হ্যাঁ ঠিক আছে।চলো এখন।
তানিশা নোমানের এমন কান্ড দেখে ভীষণ অবাক হয়ে গেলো,সে তখন বললো, এই দাঁড়ান।কি করলেন এটা?
–কি করলাম আবার?লিপিস্টিক একদম গাঢ় হয়ে গিয়েছিলো।তাই হালকা করে দিলাম।আর এখন কালার টাও বেশ দারুন লাগছে।
–ধ্যাত।আপনি এতো ফাজিল ছেলে!আমি তো সত্যি ভাবছিলাম।এই বলে তানিশা গাড়িতে গিয়ে বসলো।
তারপর নোমান ও আসলো গাড়িতে।নোমান গাড়িতে এসেই গাড়ি স্টার্ট দিলো।আর একটা মিউজিক ছাড়লো।

আকাশে দৃষ্টি তোর, বৃষ্টি তোর
মনে মেঘ জমে ,
জানালার হাওয়াতে , ছাওয়াতে
মনের রোদ কমে।
দিন শুরু , তোর কথায় ,
তুই ছাড়া নামে না রাত ,
চাঁদ থেকে ।
চল হারাই , সব ছেড়ে
তোর সাথেই ফুরবে দিন , আজ থেকে ।
উড়েছে মন , পুড়েছে মন
যা ছিলো আমার সবই ,তোর হাতে।

নোমান বাহিরে যতই হাসি খুশি ভাব দেখাক না কেনো সে মনে মনে ভীষণ দুশ্চিন্তা করতে লাগলো।কারন আজকে একটা ভালো নিউজ পেলে তাকে আর কখনোই এরকম অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে না।
তানিশা নোমানের মুখ চোখ দেখে বুঝে গেলো নোমান ভীষণ টেনশনে আছে।সেজন্য সে বললো, আপনি এতো টেনশন করছেন কেনো?আপনি তো খারাপ কিছু করেন নি। তাহলে কিসের এতো দুশ্চিন্তা?এই বলে সে নোমানের গলা জড়িয়ে ধরলো।

নোমান তখন বললো আমি সেজন্য দুশ্চিন্তা করছি না তানিশা।আমি তো চিন্তা করছি আমার মানসম্মান নিয়ে।বাহিরে বের হলেই সবাই আংগুল দিয়ে দেখায়।বলে,এই যে ইনি হলেন সেই দুশ্চরিত্র ডাক্তার।এনার একাধিক মেয়ের সাথে রিলেশন।শুনতে কতো টা খারাপ লাগে আমার ভেবে দেখেছো একবার?
তানিশা তখন বললো শফিক আংকেল আপনার সাথে সাথে ওনার নিজের মেয়ের ও ইমেজ নষ্ট করছে।শিলার তো একটা ভবিষ্যৎ আছে।

নোমান তখন বললো,শফিক আংকেল কে উস্কাচ্ছে জিসান।কারণ জিসান তো এটাই চাচ্ছে যে আমার রেপুটেশন নষ্ট হয়ে যাক।সবাই আমাকে ছিঃ ছিঃ করুক।আমি যাতে সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে না পারি।
–কিন্তু কেনো?জিসানের সাথে আপনার কিসের শত্রুতা?
গল্প করতে করতে তানিশার চেম্বার এসে গেলো।সেজন্য নোমান বললো আরেকদিন বলবো তোমাকে।তুমি এখন চেম্বারে চলে যাও।এই বলে নোমান তানিশার কপালে একটা কিস করলো।আর তানিশাও নোমানকে কিস করে কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে থাকলো।তারপর তার চেম্বারে চলে গেলো।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৪

তানিশার চেম্বার একটু দূরে।সেজন্য নোমান আগে তানিশাকে রেখে গেলো।তারপর সে নিজের চেম্বারে ব্যাক করলো।
এদিকে শিলার জবানবন্দি নেওয়ার জন্য মিডিয়ার লোকেরা ভীড় জমিয়েছে।শিলা কিছু বলতে চাইছে না।কারণ সে এখনো সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয় নি।সেজন্য তার এসব ভালো লাগছে না।কিন্তু জিসান শিলার মাথায় হাত দিয়ে বললো,শিলা তুই পরিষ্কার ভাবে সবকিছু বলে দে।নোমানের মুখোশ আজ তোকে খুলতেই হবে।নোমান তোকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিয়ে করে নি আর সেজন্যই তুই আত্নহত্যা করতে চেয়েছিস।নোমানের এই প্রতারণার শাস্তি ওকে পেতেই হবে।
জিসানের কথা শুনে মিডিয়ার লোকেরা বললো,আপনি সরে যান প্লিজ।ওনার উপর চাপ সৃষ্টি করবেন না।শিলাকে নিজের মুখে সবকিছু বলতে দিন।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৬