ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৮

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৮
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

❝জানেন শিলা!আমি কিন্তু কখনোই তানিশাকে জোর করি নি,যে আমাকে আপনার ভালো বাসতেই হবে।তবে মাঝে মাঝে হেসে হেসে বলেছি যে আমাকে একটু ভালোবাসলে কি হয় তানিশা?করেন না আমাকে বিয়ে?কেনো এসব বলেছি জানেন?❞
–কেনো?(বিস্ময় ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে শিলা)

‘;তানিশা আমার এই কথা শুনে যে রিয়্যাক্ট করতো সেটা দেখার জন্য ওকে এভাবে জ্বালাতাম।সে সবসময় হেসে হেসে বলেছে,আপনি আর কখনো ভালো হবেন না। ভাইয়া আর আপুকে কিন্তু এসব ফাজলামির কথা বলে দিবো।ও আমার এই ভালোবাসাকে ফাজলামি মনে করতো।কেনো জানি ওর ধমকানি গুলো শুনতেও ভীষণ ভালো লাগতো আমার।আসলে ভালোবাসার মানুষের সবকিছুই ভালো লাগে।কেনো ভালো লাগে আজও বুঝলাম না।
শিলা আবেগপ্রবণ হয়ে গেলো সিফাতের কথা শুনে।সে তখন বললো আপনার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে আপনি এখনো তানিশাকে ভালোবাসেন!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘;হ্যাঁ ভালোবাসি।নির্ধিদ্বায় বললো সিফাত।
এতো সহজেই কি এতো দিনের ভালোবাসা ভোলা যায়?তবে এখন শুধু তানিশাকেই ভালোবাসি না।ওদের দুইজনকেই ভালোবাসি।তানিশা আর নোমানের কেমিস্ট্রি টাকে ভালোবাসি।দুইজন দুইজনকে ভালোবেসে সারাজীবনের জন্য কাছে পেয়েছে,এই পাওয়া টাকে ভালোবাসি।আসলে ভালোবাসার বিভিন্ন প্রকার আছে।একজন কে বিভিন্ন ভাবে ভালোবাসা যায়।
শিলা তখন বললো, আপনার কথা শুনে বিশ্বাস করুন আমার মনের ভিতর থাকা কষ্টগুলো সত্যি অনেক হালকা হয়ে গিয়েছে।আপনি যেভাবে তানিশাকে ভালোবেসেছেন আমি তো নোমান কে এতো বেশি ভালোবাসার সুযোগ ই পাই নি।আর তাতেই একদম ভেংগে পড়েছি।মনে হচ্ছে কেউ নির্মম ভাবে আমাকে মেরে ফেলেছে।এখন শুধু আমার দেহ টা পড়ে আছে।যার জন্যই নিজেকে শেষ করতে চাইছিলাম।

সিফাত সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো এটাই ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে পার্থক্য। ছেলেদের ধৈর্য্য অনেক বেশি যার কারনে অনেকেই তাদের হৃদয়হীন বলে। কিন্তু মেয়েরা হলো অধৈর্য্যেশীল।এরা একটুতেই ভেংগে পড়ে।এরা প্রেমে ব্যর্থ হলেই যেভাবে নিজেদের শেষ করে ফেলে মনে হয় প্রেম ছাড়া দুনিয়ায় আর কিছুই নাই।একজন কে ভালোবাসি,কিন্তু তাকে পেলাম না।তাই বলে কি নিজের এই মূল্যবান জীবন টা নষ্ট করে ফেলবো?কখনোই না।

আমি মারা গেলে তার কিছুই হবে না,কারণ সে তো আর আমাকে ভালোবাসে না,হয় তো দু একদিন আফসোস করবে তারপর কিন্তু ঠিক ভুলে যাবে সব।কিন্তু আমাকে যারা ভালোবাসে তারা ঠিক সারাবছর কাঁদবে।কেনো তাদের কে এভাবে কষ্ট দিবো আমি?আমার কষ্ট হচ্ছে হোক।দেখি কতদিন এই কষ্ট হয়?
শিলা তখন বললো,এভাবে তো ভেবে দেখি নি আমি?আসলেই তো।আমি নোমান কে না পেয়ে সুসসাইড করতে চেয়েছিলাম।এতে তো নোমানের কিছুই হতো না।সে তো তার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে দিব্যি থাকতো।হয় তো দু এক দিন একটু ভাবতো আমাকে।কিন্তু আমার মা, বাবা,ভাই,বোন সারাজীবন মনে করে কাঁদতো।

–হ্যাঁ ঠিক বলেছেন শিলা।আসলে সবাই কিন্তু তার পছন্দের মানুষের সাথে ঘর করতে পারে না।এটা সম্পূর্ণ ডিপেন্ড করে কপালের উপর।
ভাগ্যে লেখা না থাকলে আমি যতই চিৎকার চেঁচামেচি করে বলি না কেনো তানিশা!আই লাভ ইউ।আই লাভ ইউ সো মাচ।আমি তোমাকে ছাড়া আমার এই জীবনে আর কাউকে চাই না।তাহলে কি সে ফিরে আসবে আমার কাছে?
কথাগুলো বলতেই সিফাতের চোখের কোনে জল চলে এলো।শিলা দেখতে পেলো সেই জল।সে সিফাতের এই কষ্ট অনুধাবন করতে পারছে।

কারণ নোমান যেদিন তানিশাকে বিয়ে করেছিলো সেদিনও ঠিক এভাবেই শিলা চিৎকার করে বলেছিলো,নোমান!কই আপনি?প্লিজ ফিরে আসুন আমার জীবনে।আমি আপনাকে ছাড়া সত্যি কিছু ভাবতে পারছি না।আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।মুহুর্তের মধ্যে শিলা ভাবনার জগতে চলে গেলো।
শিলাকে আনমনে থাকতে দেখে সিফাত বললো,এই যে ম্যাডাম!কই হারালেন এভাবে?চলেন যাই এখন।তা না হলে সবাই খুঁজবে আমাদের।এই বলে সিফাত হাঁটা শুরু করলো।আর কিছু সমুদ্রের ছবি ওঠাতে লাগলো।

আসলে শিলা আর সিফাত দুইজনেরই প্রচন্ড ভাবে মন ভেংগেছে। সেজন্য দুইজন দুইজনার কষ্ট টা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারছে।আজ তারা তাদের মনের অনুভূতি গুলো প্রকাশ করে কিছুটা হলেও হালকা হলো।
এদিকে নোমান আর তানিশা,শিলা আর সিফাতকে খোঁজার জন্য এসেছে।সকালবেলার মনোরম দৃশ্য মন ভরে উপভোগ করে সবাই নাস্তা খাওয়ার জন্য হোটেলে চলে গেছে।কিন্তু শিলা আর সিফাত কে না দেখতে পেয়ে তানিশা আর নোমান খুঁজতে বের হইছে।

শিলা আর সিফাত কে একসাথে দেখতে পেয়ে তানিশা আর নোমান দুইজন দুইজনার দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো।তারপর নোমান তানিশাকে বললো,তুমি কি কিছু বুঝছো?তানিশা তখন বললো হুম বুঝছি।
নোমান তখন বললো,কি বুঝলা?তানিশা তখন বললো আপনি যেটা বুঝছেন আমিও সেটাই বুঝছি।
এদিকে সিফাত আর শিলা আবার নোমান তানিশাকে দেখে নিজেরাই এগিয়ে এলো।আর বললো তোমরা এখানে?
নোমান তখন বললো হ্যাঁ আমরা এখানে।তা আমরা কি এসে তোমাদের ডিস্টার্ব করলাম?

সিফাত আর শিলা সেই কথা শুনে দুইজন দুইজনার দিকে তাকালো।আর একসাথে বললো,ডিস্টার্ব? কিসের ডিস্টার্ব?
তানিশা তখন বললো ও তোমরা বুঝবে না।কয় টা বাজে সেটা আগে দেখো।সকালের নাস্তা খাবে কখন?
–হ্যাঁ তাই তো।১০ টা দেখি বেজে গেছে।এই বলে সিফাত আগে আগে চলে গেলো।তারপর শিলাও চলে গেলো।
নোমান তা দেখে বললো আমরা এলাম ওদের ডাকতে।আর এরা দেখি আমাদের রেখেই চলে যাচ্ছে।
তানিশা তখন বললো, শুধু কি চলে যাচ্ছে?দুইজন একসাথেই যাচ্ছে।মনে হচ্ছে কিছু একটা হতে চলেছে।
–হলেই তো ভালো।

তানিশা তখন বললো চলেন এখন আমরাও যাই।এই বলে তানিশা নোমানের হাত ধরে নিয়ে গেলো।
সবাই সকালের নাস্তা খেয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে আবার ছুটলো সমুদ্রের পাড়ে।এবার আর শুধু পা আর হাত ভেজানোর জন্য এলো না।সবাই সরাসরি নেমে পড়লো পানিতে।কারণ এখন শুরু হবে সমুদ্রের পানির সাথে রোমাঞ্চ করা।
আমান ঢেউয়ে পিঠ ঠেকিয়ে উপুড় হয়ে পড়ে আছে,আর সোহান ঢেউয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে।নোমান তো খুশির ঠেলায় লাফ দিয়ে শূন্যে উঠে ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিচ্ছে। সে এক অসাধারণ মুহূর্ত। সবাই আজ যেনো তাদের শৈশবে ফিরে গেছে। ঢেউয়ের সাথে চলছে সবার অবিরাম ছেলেখেলা।

অন্যদিকে সিফাত এসব আনন্দ ভরা দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করছে।
তারপর সবাই মিলে এক এক করে ওয়াটার বাইক এ চড়ে ঘুরে বেড়ালো কিছুক্ষন।সবাই আনন্দ করলেও ছাতার নিচে একা একাই বসে আছে শিলা।সে সবার আনন্দ করা উপভোগ করছে।
সিফাত তাকিয়ে দেখলো সে শুধু একাই নয় এরকম হাজারো ক্যামেরাম্যান বিচে ছাতায় বসে, পাড়ে দাড়িয়ে কিংবা সমুদ্র ঢেউয়ে ভিজে জুবুথুবু হয়ে একের পর এক ছবি ক্লিক করছে।দেখে মনে হচ্ছে এ যেনো ছবি ক্লিক করার ধুম পড়ে গেছে।
হঠাৎ সিফাতের চোখ পড়লো শিলার দিকে।সে তখন ছবি তোলা বাদ দিয়ে শিলার কাছে চলে গেলো।আর তাকে বললো, তুমি এখানে একা একা কি করো?যাও সবার সাথে আনন্দ করো।
শিলা তখন বললো আমার ওসব কিছু ভালো লাগছে না।

সিফাত সেই কথা শুনে হঠাৎ শিলার হাত ধরে টেনে জোর করেই পানির মধ্যে নেমে দিয়ে বললো, এখানে কি শুধু এভাবে ঝিমানোর জন্য এসেছেন?আনন্দ করেন সবার সাথে।সবাই কত আনন্দ করছে দেখতে পারছেন না?
শিলা তখন বললো কই সবাই আনন্দ করছে?একজন তো শুধু ছবিই তুলছে।
সিফাত সেই কথা শুনে বললো আমাকে তো এজন্যই আনা হয়েছে।এই বলে সিফাত শিলার কাছ থেকে সরে গেলো।আর আবার তার ফটোগ্রাফির কাজ শুরু করে দিলো।

মোটর বাইক, সার্ফিংয়ের এডভেঞ্চার সব ধরনের বিনোদন আছে এই কক্সবাজারে।
কলাতলি, সুগন্ধা, লাবনী বিচ সহ আরো কয়টি বিচ, ঢেউ আর গর্জন মিলে সমুদ্রকে এমন ভাবে সাজিয়েছে যেনো মনে হয় কোনো রোমাঞ্চিত সৌন্দর্যের পসরা বসেছে এখানে। এ যেনো মনোমুগ্ধকর এক ভিন্ন জগত।যে আনন্দ সত্যি প্রকাশ করার মতো নয়।

কিছুক্ষন আনন্দ করার পর নোমান সিফাতের কাছে চলে এলো।আর বললো আমাদের তো অনেক ছবিই তুললা এবার নিজে এসে একটু আনন্দ করো।এই বলে নোমান সিফাতের হাত থেকে ক্যামেরা রেখে দিলো তারপর ওকে টেনে নিয়ে সাগরের জলে নামলো।অন্যদিকে শিলা পানি থেকে উঠতে ধরলো তখন সবাই মিলে জোর করে শিলাকেও নামালো পানিতে।
তারপর সবাই ভীষণ মজা করতে লাগলো।সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে আজ সবার মন উতলা হয়ে উঠেছে।যে যার সঙ্গীর সাথে এবার রোমাঞ্চ শুরু করে দিলো।কিন্তু সিফাত আর শিলা একা একাই আনন্দ করতে লাগলো। তবে তারা মাঝে মাঝে দুইজন দুইজনার দিকে তাকাতে লাগলো।কিন্তু যখন দেখলো সবাই জুটি বেধে বেধে আনন্দ করছে তখন শিলা ভাবলো সিফাতের সাথে গল্প করা যাক।এই ভেবে শিলা সিফাতের কাছে চলে গিয়ে গল্প করতে লাগলো।সিফাতের মুখে এসব প্রেম ভালোবাসা নিয়ে জ্ঞানগর্ভ কথা শুনতে কেনো জানি ভালোই লাগছে তার।

কিছুক্ষন আনন্দ করার পর সবাই খেয়াল করলো নোমান আর তানিশা নাই।সবাই তখন ওদের কে খুঁজতে লাগলো।আমান তখন বললো ফোনও তো আনি নি যে কল করবো।শিরিন তখন বললো কই আর যাবে?হয় তো আশেপাশেই কোথাও আছে।আর যেখানেই থাক না কেনো সময় হলে এমনিতেই হোটেলে চলে যাবে।
সোহান তখন বললো তোমরা আর কতক্ষন থাকবে এই পানির মধ্যে।আমাকে আর ভালো লাগছে না।আমি হোটেলে চলে গেলাম।স্বর্না তখন সোহানের হাত ধরে বললো,ভালোই তো লাগছে বাবা।থাকি না আর কিছুক্ষন।সোহান সেই কথা শুনে থেমে গেলো।আর বাকিরাও রয়ে গেলো।

এদিকে নোমান তানিশাকে নিয়ে নিরিবিলি একটা জায়গায় এসেছে। সমুদ্রের পানির সাথে রোমাঞ্চ করতে যেয়ে তার নিজের মধ্যে রোমাঞ্চ করার ইচ্ছা জেগে উঠেছে।সেজন্য নোমান তানিশাকে জোর করেই কোলে করে নিয়ে এসেছে এখানে।সবাই সবার কাজে ব্যস্ত থাকায় কেউ খেয়াল করে নি তাদের।
ভেজা পোশাক থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে দুইজনের।নোমান অপলক ভাবে চেয়ে আছে তানিশার পানে।ভেজা চুলে কি স্নিগ্ধ দেখা যাচ্ছে তানিশাকে।ইচ্ছা করছে এখনি তাকে ভালোবাসার স্পর্শ দিতে।
নোমানকে এভাবে তাকানো দেখে তানিশা বললো, ছেড়ে দিন এখন।সবাই দেখছে তো।
–দেখুক।নিজের বউকেই তো কোলে নিয়েছি।

এদিকে ভেজা কাপড়ে থাকায় তানিশা বার বার হাঁচি দিতে লাগলো।
নোমান তা দেখে বললো তাড়াতাড়ি ভিজে কাপড় চেঞ্জ করতে হবে তোমার।তা না হলে আবার অসুখ বেঁধে ফেলবে।চলো রুমে নিয়ে যাই।এই বলে নোমান আবার তানিশাকে কোলে ওঠালো।
তানিশা তখন বললো, কোলে নিতে হবে না।আমি একাই যেতে পারবো রুমে।নোমান তানিশার কথা কিছুতেই শুনলো না।সে জানে তানিশা এই কথা বলে আবার সবার মাঝে চলে যাবে।কিন্তু নোমান কিছুতেই এই সুযোগ আর দিতে চায় না তাকে।কাল থেকে সে তার প্রিয়তমা বউ এর সাথে একাকি কথা বলার ট্রাই করছে।কিন্তু সবাই থাকার কারনে সে সুযোগ আর হচ্ছে না তার।এই সুযোগে রুমে গিয়ে একটু কথা বলা যাবে।সেজন্য নোমান তানিশাকে সোজা হোটেলে নিয়ে এলো।তারপর নামিয়ে দিলো কোল থেকে।

তানিশা তাদের রুমের চাবি নিয়ে দরজা খুললো।নোমান ও প্রবেশ করলো তানিশাদের রুমে।তানিশা যখন তার ব্যাগ থেকে ড্রেস বের করে চেঞ্জ করার জন্য ওয়াশ রুমে যেতে ধরলো ঠিক তখনি নোমান তানিশার হাত থেকে ড্রেস গুলো নিয়ে নিজেই তাকে চেঞ্জ করাতে ধরলো।কিন্তু তানিশা নোমানের হাত থেকে তার ড্রেস কেড়ে নিয়ে বললো,আমি চেঞ্জ করছি।আপনি গিয়ে নিজের ড্রেস চেঞ্জ করে নিন আগে।নোমান সেই কথা শুনে এক ঝটকায় তানিশাকে আবার তার কাছে টেনে আনলো।আর তানিশার ড্রেস চেঞ্জ করাতে লাগলো।তানিশা জানে নোমানের সাথে অযথা জিদ করে কোনো লাভ হবে না।সেজন্য তানিশা চোখ বন্ধ করে থাকলো।কারণ তার ভীষণ লজ্জা লাগছিলো।হঠাৎ নোমান তানিশাকে এক ঝটকায় কোলে করে বেডে নিয়ে গেলো।

তানিশা তা দেখে বললো এই কি করছেন আবার?ড্রেস তো চেঞ্জ করা শেষ। এখন চলুন ওদের কাছে যাই।
নোমান সেই কথা শুনে বললো পাগল হইছো তুমি?এতোবড় একটা সুযোগ মিস দিবো আমি?
–সুযোগ?কিসের সুযোগ?
নোমান তানিশার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে তাকে বেডে শুইয়ে দিলো। তারপর নেশাভরা চোখে তাকিয়ে রইলো তানিশার দিকে।
তানিশা নোমানের এমন চাহনি দেখে বললো, সবাই কিন্তু আসবে এখন রুমে।প্লিজ এরকম করেন না।সবাই চলে আসলে মুখ দেখাবেন কেমনে?

নোমান আছে এখন রোমান্টিক মুহুর্তে।তানিশার এসব আজেবাজে বকবকানি সে শুনতেই পাচ্ছে না।নোমান এবার তানিশার ঠোঁট দুটি মুখে পুরে নিয়ে তার বকবকানি থামিয়ে দিলো।তারপর কিস করতে করতে তাকে পাগল করে তুলছিলো।তানিশা যদিও নোমানের স্পর্শে দূর্বল হয়ে যাচ্ছিল তবুও সে থামিয়ে দিতে ধরলো নোমানকে।কারন তার শুধু ভয় লাগছে এই বুঝি সবাই এসে গেলো। কিন্তু নোমান কিছুতেই থামছিলো না।সে এখন তার লক্ষ্যে আছে।
এদিকে তানিশা যেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছিলো ঠিক সেটাই হলো।কারণ সবাই সাগরের পানি থেকে উঠে হোটেলের দিকে চলে এলো।আর এসেই ছেলেরা ছেলেদের রুমে আর মেয়েরা মেয়েদের রুমে চলে গেলো।কিন্তু ছেলেরা তাদের রুমে অনায়াসে ঢুকতে পারলেও মেয়েরা ঢুকতে পারলো না।তারা দরজা বন্ধ করা দেখে ঠকঠকাতে লাগলো।

শব্দ শুনে তানিশা নোমান কে সরিয়ে দিয়ে বললো,এই ছাড়ুন!ওরা সবাই আসছে।
নোমান তবুও ছাড়লো না তানিশাকে।ওর কানে যেনো তানিশার কথা পৌঁছলই না।এদিকে বাহিরে থেকে সবাই ঠকঠকাতেই আছে।শিরিন তখন তানিশাকে কল দিলো।কিন্তু তানিশার ফোন একটু দূরে থাকায় সে কল টা রিসিভ করতে পারলো না।সবাই তখন ভয়ের মধ্যে পড়ে গেলো।কোনো বিপদ হলো না তো আবার!
সেজন্য তারা এবার তানিশা তানিশা বলে ডাকতে লাগলো।

এবার আর তানিশা চুপ করে থাকতে পারলো না।সে নোমানকে একদম জোর করেই সরিয়ে দিয়ে বললো,শুনতে পাচ্ছেন না ওরা ডাকছে।যান খুলে দিয়ে আসুন এখন।আমি যেতে পারবো না।নোমান সেই কথা শুনে বেডে ভালো করে শুয়ে পড়লো।আর বললো তোমার প্রয়োজন হলে তুমি খোলো গিয়ে।
তানিশা এবার আর দেরী না করে নিজেই গিয়ে তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে দিতে গেলো।দরজা খুলতেই শিরিন বললো, কতক্ষন ধরে ডাকছি আমরা?

তানিশা তখন বললো না মানে ভাবি,সরি আপু আমি ড্রেস চেঞ্জ করছিলাম।
শিরিন তখন বললো আমরা তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।রিসেপশনে চাবি নিতে গিয়ে শুনি তুমি নিয়ে এসেছো চাবি।কিন্তু রুমে এসে ডাক দিচ্ছি তোমার কোনো সাড়াশব্দ নাই। শিরিনের ধমকানি শুনে তানিশা আর কিছু বললো না।সবাই এক এক করে রুমে ঢুকে গেলো।এদিকে তানিশা সবাইকে ঢোকা দেখে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে থাকলো।এখন সবাই নোমানকে দেখে কি ভাববে কে জানে?
সবাই রুমে গিয়ে দেখে নোমান শুয়ে আছে।নোমান কে দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে রইলো।

শিরিন তখন তানিশাকে বললো, তা তুমি বলবে না নোমান আছে রুমে?আমরা তো ভেবেছি তুমি একাই আছো।নোমান যে ইদানীং মেয়েদের রুম এতো বেশি পছন্দ করে তা তো আমার জানা ছিলো না।এই বলে শিরিন ডাকতে লাগলো নোমানকে।ওঠ ভাই ওঠ।আর লজ্জা পেতে হবে না।
কিন্তু নোমানের কোনো সাড়াশব্দ পেলো না শিরিন।অনেক ডাকাডাকি করার পরও নোমান উঠলো না।
তানিশা বুঝতে পারলো নোমান লজ্জায় ঘুমের অভিনয় করছে।সেজন্য তানিশা বললো ওনার নাকি শরীর টা ভালো লাগছে না।মাথা টা ভীষণ ঘুরছে।আর জ্বর জ্বর ফিল হচ্ছে।সেজন্য এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে।তুমি যেটা ভাবছো তেমন কিছুই হয় নি কিন্তু।

শিরিন সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো তাই?চোরের মন পুলিশ পুলিশ।ঠাকুর ঘরে কে রে?আমি কলা খাই নি।এই অবস্থা হইছে তোমার।
তানিশা সেই কথা শুনে লজ্জায় অন্য মুখ হলো।
ভাবি এবার নোমানের কান ধরে বললো,ওর যখন এতই ঘুম পাচ্ছে তাহলে ও আমাদের রুমে কেনো?ও নিজের রুমে যাই নি কেনো?এই বলে শিরিন ভালো করে নোমানের কান ডলে দিয়ে বললো, এই উঠবি তুই?এসব আজাইরে ঢং বাদ দে?আমার সাথে চালাকি করছিস?

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৭

নোমান এবার ঘুম ঘুম কন্ঠ নিয়ে বললো, ভাবি কান ছাড়ো আমার।ব্যাথা লাগছে তো?সারারাত ঘুমাই নি।এখন একটু চোখ টা লেগে গিয়েছিলো।তোমাদের জ্বালায় কি এখন আমি ঘুমাতেও পারবো না?এই বলে নোমান আবার শুয়ে পড়লো।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৯