ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৯

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৯
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

আজ নোমানের ঘুম আর শেষ হচ্ছে না।মেয়েরা কোনো উপাই না দেখে রুম চেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নিলো।কারণ এখন সবাই বেশ ক্লান্ত।সেজন্য সবার এখন বিশ্রামের প্রয়োজন।কিন্তু নোমান যেভাবে ঘুমিয়ে আছে মনে হয় না সে আজ আর উঠবে?সেজন্য ছেলেরা আসলো মেয়েদের রুমে আর মেয়েরা চলে গেলো ছেলেদের রুমে।
আমান,সোহান আর সিফাত রুমে এসেই নোমানকে ডাকতে লাগলো।কিন্তু নোমান এখনো ঘুমের অভিনয় করেই যাচ্ছে।সোহান তখন বললো ওকে ডিস্টার্ব করো না কেউ।ওকে ঘুমাতে দাও।চলো আমরা শুয়ে থেকে গল্প করি।

সিফাত তখন বললো কিসের গল্প করবো?
সোহান তখন নোমানের কাছে গিয়ে বললো, এমন এমন গল্প বলো যাতে ঘুমন্ত মানুষ ও জেগে ওঠে।
আমান তখন বললো তাহলে তুমিই আগে শুরু করো।
সোহান তখন বললো, এক লোক তার স্ত্রীকে জোরে করে একটা চড় মেরে বললো ‘যাকে মানুষ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তাকেই এভাবে মারে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

স্ত্রী সেই কথা শুনে স্বামীর গালে দ্বিগুণ জোরে দুইটি চড় মেরে বললো, ‘তুমি কি ভাবো আমি তোমাকে ভালোবাসি না?আমি তোমাকে আরো অনেক বেশি ভালোবাসি।
সোহানের গল্প শুনে সবাই হা হা করে হেসে উঠলো।
সিফাত সোহানের গল্প শুনে বললো এবার আমি একটা গল্প বলি শোনো।গল্পটা কিন্তু একদম বাস্তব।আমার সাথেই ঘটেছিলো এই কাহিনি।
আমি একটা ছবি ওয়াশ করে হাতে নিয়ে দেখতেছিলাম।হাতে আমার ক্যামেরাও আছে।হঠাৎ বাতাসে ছবি টা হাত থেকে পড়ে গেলো।তখনি আবার এক মহিলা আসলো সেখানে আর উনি ছবিটার উপর দাঁড়িয়ে থাকলেন।আমি তখন দৌঁড়ে গিয়ে বললাম

ম্যাডাম,পা টা একটু ওঠান,ছবি তুলবো।
ভদ্রমহিলা সেই কথা শুনে বললো বেয়াদব ছেলে,তোর বাবা মা কি কোনো শিক্ষা দেয় নি?
আমি তখন বললাম,ম্যাডাম আমি আবার কি করলাম?শুধু তো পা টা সরাতে বলছি যাতে আমি ছবি টা তুলতে পারি।
ভদ্র মহিলা এবার আমায় জোরে করে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললো ছবি তোলার জন্য অনেক কিছু আছে।সেগুলো তোল গিয়ে।আমার পায়ের ছবি কেন ওঠাবি?
আমি এতোক্ষনে বুঝতে পারলাম ব্যাপার টা।তখন বললাম ম্যাডাম আপনার পায়ের নিচে আমার একটা ছবি আছে।পা টা একটু সরান ছবি টা নিবো।

ভদ্র মহিলা পা সরাতেই ছবি টা দেখতে পেলো আর বললো সরি সরি।আমি তো ভেবেছিলাম আমার,,।আমি আর কি করি সরি শুনেই নিজেকে শান্ত্বনা দিলাম।আসলে কিছু কথা বিস্তারিত ভাবে না বললে এভাবেই জনগনের পিটুনি খেতে হয়।
আমান সিফাতের গল্প শুনে হা হা করে হাসতে হাসতে শেষ। আমান তখন বললো এরকম মজার একটা কাহিনী আমার এক পুলিশ সদস্যের সাথেও ঘটেছে।
পুলিশ সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে।
তো একজন লোক রাস্তার পাশ দিয়ে যাবার সময় কৌতুহল বশে গেটে পাহাড়ায় থাকা পুলিশ সদস্যর কাছে জানতে চাইল, “ভাই, এখানে কি হচ্ছে?”

পুলিশ সদস্য তখন বললো পুলিশ সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে।
লোকটি সেই কথা শুনে তার কপাল চাপড়াই য়ে বললো, কি দিন এলো! আজকাল চোরেরাও সংবর্ধনা পায়।
লোকটির কথা শুনে পুলিশ সদস্য দু ঘা লাগিয়ে দিয়ে বলল, “ব্যাটা, এত বড় সাহস! আমাদের চোর বললি”?
লোকটি তখন কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,আরে ভাই, আপনাদের কখন চোর বললাম! আমি বলেছি পুলিশরা চোর। এই পুলিশ তো ভারতীয় পুলিশ অথবা পাকিস্তানী পুলিশ অথবা আমেরিকান পুলিশ হতে পারে!আমি তো বাংলাদেশের পুলিশদের চোর বলি নি।

পুলিশ সদস্য সেই কথা শুনে বললো,আমাকে বুদ্ধু পাইছিস তুই? আমি কি জানি না যে, কোন দেশের পুলিশ চুরি করে?
লোকটি সেই কথা শুনে বললো আমি তো সেজন্যই চোর বলেছি আপনাদের।
নোমান এবার ঘুম থেকে উঠে এলো।আর বললো ভাই তোরা থাম এবার।আমি আর না হেসে থাকতে পারছি না।হাসতে হাসতে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।ঘুমানোর অভিনয় করা যে এতো কঠিন তা আজ দিয়ে বুঝলাম।
সোহান তখন বললো এজন্যই তো এসব গল্প শুরু করে দিয়েছি।তুমি যে ঘুমানোর অভিনয় করছো তা আমরা ভালো করেই জানি।মেয়েদের কে এইভাবে বোকা বানালে তুমি?
নোমান তখন বললো, কি আর করার আছে বলো?ধরা পড়ে গেছি।এখন যে করেই হোক নিজের মানসম্মান টা তো বাঁচাতে হবে?

আমান তখন নোমানের কান ধরে বললো,এতোক্ষন তাহলে সত্যি সত্যি ঘুমের অভিনয় করছিলি?
–ভাইয়া ছাড়ো আমার কান।লাগছে আমার।ভাবিও এমন ভাবে মলে দিয়েছে যে এখনো ব্যাথা করছে কানটা।
আমান সেই কথা শুনে নোমানের কান টা ছেড়ে দিলো।
সিফাত তখন এগিয়ে এসে বললো,তা ডাক্তার সাহেব তোমার জানা কোনো মজার কাহিনী বলো?এতোক্ষন তো তোমাকে হাসানোর ট্রাই করলাম।এবার তুমি আমাদের হাসাও দেখি।
নোমান তখন বললো আচ্ছা ঠিক আছে।এই বলে নোমান ভেবেচিন্তে একটা গল্প মনে করলো।

পাগলা গারদের এক ডাক্তার তিন পাগলের পরীক্ষা নিচ্ছেন। পরীক্ষায় পাস করলে তিনজনকে পাগলা গারদ থেকে মুক্তি দেয়া হবে।কিন্তু ফেল করলেই তাকে তিন বছরের জন্য আটকে দেয়া হবে।
ডাক্তার এখন তিন পাগলকে একটা জলবিহীন ফাঁকা সুইমিং পুলের সামনে নিয়ে ঝাঁপ দিতে বললেন।
প্রথম পাগল তৎক্ষণাৎ তাতে ঝাঁপ দিয়ে পা ভেঙে ফেলল।
দ্বিতীয় পাগলটিও ডাক্তারের নির্দেশমতো তাতে ঝাঁপ দিল এবং হাত ভেঙে ফেলল।
কিন্তু তৃতীয় পাগলটি কোনোমতেই ঝাঁপ দিতে রাজি হল না।
ডাক্তার উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, ‘আরে, তুমি তো সুস্থ হয়ে গেছ! যাও, তুমি মুক্ত।
তবে একটা কথা বল তো, তুমি পুলে ঝাঁপ দিলে না কেন?’

পাগলটি তখন নির্দ্বিধায় জবাব দিল, ‘দেখুন ডাক্তার বাবু, আমি সাঁতার একেবারেই জানি না!’সেজন্য ঝাঁপ দেই নি।
নোমানের জোকস শুনে সবাই হাসতে হাসতে শেষ হয়ে গেলো।কিন্তু সিফাত তখন বললো তোমার বাস্তব জীবনে এরকম মজার কোনো ঘটনা ঘটে নি?

নোমান তখন বললো হ্যাঁ ঘটেছে।আমি তখন নতুন জয়েন করেছি।কেউ তেমন একটা চেনে না আমাকে।এক জায়গায় গিয়েছিলাম সেজন্য চেম্বারে আসতে দেরী হয়েছে। তো নরমাল ড্রেসেই তাড়াতাড়ি করে চেম্বারে যাচ্ছিলাম।কিন্তু চেম্বারের সামনেই ছোটো খাটো একটা এক্সিডেন্ট হয় আমার।হাত আর পায়ের বিভিন্ন জায়গায় ছিলে যায়।ব্যান্ডেজ করলেই ঠিক হয়ে যেতো।কিন্তু উঠতে পারছিলাম না।তখন কিছু লোকজন আমাকে কাঁধে করে চেম্বারের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো আর বলছিলো ভাগ্যিস ডাক্তার সাহেবের চেম্বারের কাছাকাছিই আপনার এক্সিডেন্ট টা হয়েছে।এখন তাড়াতাড়িই আপনি ডাক্তার দেখাতে পারবেন।

আমি তখন বললাম, যে চেম্বারে নিয়ে যাচ্ছেন সেই চেম্বারেরই ডাক্তার আমি।
আমার কথা শুনে সবাই অবাক।
এদিকে নোমানের গল্প শুনে সকল মেয়েরা অবাক।কারণ সকল মেয়ে আবার তাদের রুমে এসেছে।
শিরিন জানতো নোমান ঘুমায় নি।ঘুমানোর অভিনয় করছিলো মাত্র।সেজন্য শিরিন নোমানের গল্প শুনে হাত তালি দিতে দিতে এগিয়ে এলো।শিরিন কে এগিয়ে আসা দেখে নোমান বললো, ভাবি প্লিজ আর কান টা ধরো না।ভাইয়াও কিছুক্ষন আগে ধরেছিলো।

শিরিন তখন বললো, কান ধরবো না।এদিকে আয়, তোর সাথে গোপন একটা কথা আছে।
নোমান সেই কথা শুনে শিরিনের কাছে এগিয়ে গেলো।আর যেতেই শিরিন আবার নোমানের কান ধরে বললো, ভাবিকে বোকা বানাতে চাইছিলি?আমাকে বোকা বানানো এতো সহজ নয়। অনেক অভিনয় হইছে।যা এখন তোদের রুমে যা।
–কিন্তু কেনো?রুম তো অদলবদল করেছিই।

শিরিন তখন বললো, ও রুমে আমরা থাকতে পারছি না।সিগারেটের গন্ধে থাকা যাচ্ছে না।
আমান আর সোহান সেইকথা শুনে সাথে সাথে বের হলো রুম থেকে।কারন এই কাজ এই দুইজন করেছে।সিফাত ও খায় বাট সে রুমে খায় নি।বাহির থেকে খেয়ে এসেছে।আর নোমান খায় না সিগারেট।
নোমান আর সিফাত কে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে শিরিন বললো, কি হলো?তোমরা আবার যাচ্ছো না কেনো?যাও তাড়াতাড়ি।আমাদের রুম ফাঁকা করো। সেই কথা শুনে নোমান আর সিফাতও চলে গেলো।

সবাই কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে দুপুরের খাবার খাবে বলে হোটেলে চলে গেলো।রংধনু, পারিজাত,নীহারিকা, অবসর পুল ক্যাফে,ঝর্ণা,এবং মহুয়া নামে বিশ্বমানের পাঁচটি রেস্তোরাতে খাবারের সুযোগ আছে এই সীগাল হোটেলে।তানিশারা রংধনু তে চলে গেলো।সবাই সবার পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করলো।তবে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ মেন্যুর প্রধান আকর্ষণ দখল করে আছে।বিশেষ করে চিংড়ি,রুপচাঁদা, কোরাল,টুনা ফিস লাইট্রা,ছুরি মাছসহ মজাদার শুটকি মাছের ভর্তার প্রতিই আকর্ষণ থাকলো বেশি।

সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার তাদের নিজেদের বেডে চলে গেলো।এখন আর কোনো ঘোরাঘুরি নয়।পুরোদমে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো।
কিন্তু নোমান তানিশাকে কল দিয়ে বললো,জান কি করো? আমার তো ঘুম আসছে না।
তানিশা ফিসফিস করে রিপ্লাই দিলো,খবরদার আমারে জান বলবেন না।আপনার জন্য আমি লজ্জাই কারো দিকে তাকাতে পারছি না।

নোমান তখন বললো কি করেছি আমি?যে তোমায় এতো লজ্জা পেতে হবে?
তানিশা তখন বললো এখন ফোন রাখেন, সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।কথা বলা যাবে না এখন।
নোমান তখন বললো বেলকুনিতে এসে কথা বলো।সাগর,পাহাড় আর ঝাউবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে কথা বলি।
তানিশা সেই কথা শুনে বেলকুনিতে চলে গেলো।

আসলেই অনেক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সীগাল হোটেল টি সুগন্ধা পয়েন্টে অবস্থিত হওয়ার কারণে হোটেলের বেলকুনি থেকেই সাগর দেখা যায়।দূরের পাহাড় আর ঝাউবনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সত্যি নিজের মন কে একদম শীতল করে তোলে।
নোমান বললো, কেনো জানি আমার সব কিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না তোমাকে আমি সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেয়েছি।
তানিশা তখন বললো, যদি না পেতেন তখন?
নোমান তখন বললো, যেটা হয় নি সেটা নিয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না।আমি তোমাকে পেয়েছি এটাই এখন সবচেয়ে বড় কথা।

তানিশা তখন বললো তো এখন কেমন অনুভুতি হচ্ছে আপনার?
নোমান তখন জোরে করে একটা শ্বাস ছেড়ে বললো,পৃথিবীতে প্রিয় মানুষ কে পাওয়ার সুখের চেয়ে বড় কোনো সুখ আছে বলে আমার মনে হয় না।এ সুখ যেনো অবর্ননীয়। যা বলে বুঝানো যাবে না।আমি কিন্তু অন্যদের মতো ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি না।তবে মনে হয় আমি অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে।তুমি ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। এখন এক নজর না দেখতে পেলে ভীষণ অস্থির অস্থির লাগে আমার।ইচ্ছে করে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে যাই তোমার ঐ চোখের মায়ায়।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো এই অসুখ টা খুবই বাজে।কারণ কারো চোখের মায়ায় পড়ে গেলে পৃথিবীর আর কিছুই ভালো লাগে না।যেমন আমি আপনাতে মুগ্ধ হয়েছি।আপনার মায়ায় পড়ে এতো বছর ধরে অপেক্ষা করেছি।

নোমান তখন বললো আমি একটা জিনিস অনুধাবন করলাম,তা হলো আসলে বেঁচে থাকার জন্য আর ভালোভাবে বাঁচার জন্য তার মনের মতো একজন জীবনসঙ্গীর অবশ্যই প্রয়োজন।তা ছাড়া পুরো জীবনটাই অনর্থক।
নোমান আর তানিশা ঘুম বাদ দিয়ে এই ভাবে তাদের মনের ভাব আদান প্রদান করতে লাগলো।এদিকে বাকিরা ঘুমিয়েছে।
তবে শিলা আর সিফাত একা একা নিজেদের ভাবনার জগতে আছে।দুইজনই ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে শুধু।আর নিরবে চোখের জল ফেলছে।তারা তাদের মন কে শুধু একটা কথাই জিজ্ঞেস করছে,আদৌ কি তারা এসব অতীত ভুলে বর্তমানে সুন্দর একটা ভালোবাসার সম্পর্ক গড়তে পারবে?সবার সামনে হাসিমুখে থাকলেও যখন তারা একা থাকে তখন কেনো জানি কষ্ট টা আরো বেশি হয়।আর যখন দেখে তাদের ভালোবাসার মানুষ তাদেরই চোখের সামনে অন্য আরেকজনের সাথে ভালোবাসার কথা বলছে তখন বুকের ভেতর টা এমনিতেই হু হু করে ওঠে।

তানিশা কে এভাবে হেসে হেসে কথা বলা দেখে শিলা রুম থেকে বের হয়ে গেলো অন্যদিকে ফোনেই তানিশাকে একের পর এক চুমু খাচ্ছে নোমান,তা দেখে সিফাত ও বের হয়ে এলো রুম থেকে।
দুইজনই যখন ঘুরে দাঁড়ালো তখন দুইজনই একদম চোখাচোখি হলো।শিলা তখন বললো তুমি এখানে?
সিফাত ও বললো তুমি?
শিলা তখন বললো আমার ঘুম ধরছে না।এজন্য বের হলাম।সিফাতও সেম কথা বললো।তারপর দুইজন একসাথে হাঁটতে হাঁটতে হোটেল থেকে বের হয়ে গেলো।
তারপর তারা একটা রেস্তোরাঁয় বসে কফি খেতে খেতে গল্প করতে লাগলো।
হঠাৎ শিলা সিফাতকে বললো,একটা প্রশ্নের উত্তর দেবে?

–কি?
–তোমার ভালোবাসার মানুষ টা যখন তোমারই চোখের সামনে অন্যজনের সাথে প্রেম ভালোবাসার কথা বলে তখন তোমার কেমন লাগে?
সিফাত বুঝতে পারলো শিলা নোমান আর তানিশার কথা বলছে।সেজন্য সে এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।কারণ এ প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই।
শিলা তখন বললো চুপ করে আছো কেনো?উত্তর দাও।না বলবে চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষ তার প্রেমিকের সাথে কথা বললে মোটেও তোমার হিংসা হয় না?বরং ভালোই লাগে।
–তো?আমার তো ভালোই লাগে।

শিলা তখন বললো তাহলে রুম থেকে বের হয়ে এসেছো কেনো?বসে বসে দেখতে আর শুনতে।
সিফাত তখন বললো তুমি এখনো ভুলতে পারো নি নোমানকে?
শিলা সেই কথা শুনে বললো, চেষ্টা তো করছিই।
সিফাত তখন বললো শুধু কি চেষ্টা করলেই হবে?না সারাজীবনের জন্য মন থেকে মুছে দিতে হবে?
শিলা সেই কথা শুনে বললো, আচ্ছা বাদ দাও ওদের কথা।এখন বলো তোমার নেক্সট পরিকল্পনা কি?
সিফাত জানালো আপাতত তার কোনো পরিকল্পনা নেই।সিফাত তখন উল্টো শিলাকে জিজ্ঞেস করলো তার কি পরিকল্পনা?

শিলা হেসে বললো,মন ভাংগা মানুষের আবার কিসের পরিকল্পনা?কোনো পরিকল্পনাই নাই।দেখি ভাগ্যে কি আছে?
সিফাত বুঝতে পারলো শিলা কিছুতেই তার মন কে বোঝাত পারছে না।সে এখনো নোমানের প্রতি দূর্বল।সেজন্য সিফাত বললো, একটা রিকুয়েষ্ট করতে চাই তোমাকে রাখবে?
–কি রিকুয়েষ্ট?
;রাগ করবে না তো?
–বলেন আগে।তারপর ভেবে দেখবো রাগ করবো না খুশি হবো?
সিফাত তখন বললো তুমি নতুন আরেকটা প্রেমে জড়িয়ে যাও।দেখবে পুরাতন ভালোবাসা মুহুর্তের মধ্যে ভুলে যাবে।আসলে ভালোবাসার অনেক শক্তি আছে।

শিলা তখন বললো, তাহলে তুমি কেনো জড়াচ্ছো না নতুন প্রেমে?তুমিও তো ভুলতে পারো নি তানিশাকে।
সিফাত সেই কথা শুনে বললো, চলো রুমে যাই এখন।তা না হলে সবাই খুঁজবে আবার।
শিলা সেই কথা শুনে বললো,আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না?
সিফাত তখন বললো কিছু কিছু প্রশ্ন এতই কঠিন যে তার উত্তর দেওয়া যায় না।

পড়ন্ত বিকেলে হাজারো পর্যটকদের কোলাহলে মুখরিত হয় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।বাতাসে ভেসে বেড়ানো সুরে অবিরাম ঢেউয়ের তালে সাগরের নোনা জলে ভেসে বেড়ায় যান্ত্রিক শহুরে মানুষ গুলো।বিশাল সমুদ্রে যেনো মিশেছে দূর আকাশের সীমানা।উত্তাল সমুদ্রে ঢেউয়ের পেছনে ফনা তুলে আসে ঢেউ।সাথে দুধ সাদা ফেনার উৎসব। বিরামহীন ঢেউয়ের নৃতে ঝংকার তুলে হু হু সুরের মূর্ছনা।সৈকতে আছড়ে পড়া সে ঢেউ পর্যটকদের পায়ে পরায় ফেনার নূপুর।সমুদ্রের মনভোলানো নানান রোমাঞ্চ মুহুর্তে ভুলিয়ে দেয় পর্যটকদের সব ক্লান্তি।শিস দিয়ে যেনো আনাড়ি করে তোলে পর্যটকদের মন।

শেষ বিকেলে তানিশারা আবার বেড়িয়ে পড়লো সমুদ্রের পাড়ে।কারন শেষ বিকালে পৃথিবীর বুকটাকে লাল রঙ এ সাজিয়ে লাল থালার মতো সূূর্য ডোবে পশ্চিম সমুদ্রে ।দিনের ক্লান্তিতে বিদায় হয় ঢেউয়ের সাথে পাঞ্জা লড়ার রোমাঞ্চ।
সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্যে দেখার জন্যই এসেছে তানিশারা।সূর্যাস্তের এই অপরূপ দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে থাকলো তারা।সে এক অপরুপ দৃশ্য।যা কখনো ভোলার মতো নয়।

কিন্তু তানিশাদের সাথে শিলা আর সিফাত আসে নি।তারা জানালো এখন আর কোথাও তাদের যেতে ইচ্ছে করছে না।কিছুক্ষন আগেই তারা ঘুরিয়ে এসেছে।সেজন্য তানিশারা ওদের কে রেখেই এসেছে।
সন্ধ্যা গড়িয়ে পৃথিবীর বুকে নেমে এলো কালো অন্ধকার।হঠাৎ শুরু হলো গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে সবাই কাকভেজা হয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে এলো পাশের এক রেস্তোরায়।যেখানে মাছ ভাজা খাওয়ার ধুম পড়ে গেছে।এই সন্ধ্যার সময় প্রতিটা রেস্তোরাঁয় রকমারি তাজা সামুদ্রিক মাছ ভাজা পাওয়া যায়।সুগন্ধা বিচের পাশেই আছে তাজা সামুদ্রিক মাছ ভাজা খাওয়ার অনেক ভ্রাম্যমাণ দোকান।
নোমান তখন দাম ঠিক করে সবার পছন্দমতো মাছ অর্ডার করে বসে থাকলো।আর সবাই নানা ধরনের গল্প করতে লাগলো।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৮

কিছুক্ষণ পরেই একটা ছেলে ধোঁয়া ওঠা গরম মাছ ভাজা নিয়ে আসলো।এ এক অন্যরকম লোভনীয় মজাদার খাবার।দেখলেই জিভে জল চলে আসে।
চিংড়ি, লবস্টার,টুনা,রুপসা,রুপচাঁদা, স্যামন,কোরাল,লাইট্রা,কাঁকড়া সহ হরেক রকমের মাছ ভাজা।
হঠাৎ তানিশা খেয়াল করলো একটু দূরের বেঞ্চে বসে সিফাত আর শিলা গল্প করছে।আর মাছ ভাজা খাচ্ছে।
কিন্তু সিফাত আর শিলা তো হোটেলেই ছিলো।তারা আর সমুদ্র সৈকতে যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে তানিশাদের।সেজন্য তানিশারা ওদের কে রেখেই চলে এসেছে।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪০