ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪০

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪০
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

সিফাত আর শিলা কে একাকি নিরালায় এভাবে গল্প করা দেখে তানিশা নোমানকে বললো,চলেন না আমরা বাহিরে গিয়ে বসি সবাই।এখানে ভীষণ গরম লাগছে।তাছাড়া বৃষ্টি পড়া দেখবো আর মাছ ভাজা খাবো।ভীষণ মজা হবে।
নোমান সেই কথা শুনে বললো ওকে।এই বলে নোমান সবাইকে নিয়ে বারান্দায় চলে এলো।কিন্তু বারান্দায় ভীষণ ভীড় ছিলো।সেজন্য দাঁড়িয়ে থেকেই সবাই প্লেট হাতে নিয়ে খেতে লাগলো।কিন্তু তানিশা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে বার বার উঁকি দিয়ে দেখতে লাগলো ওদের।ওরা এখনো গল্প করতেই আছে।দুইজন দুইজনার কথা এতো মনোযোগ দিয়ে শুনছে যে আশেপাশে তাকানোর প্রয়োজনই মনে করছে না।

নোমান নিজেও দেখেছে ওদের কে।সেজন্যই তো তানিশা বলার সাথে সাথে বারান্দায় চলে এলো।একটিবারের জন্যেও জিজ্ঞেস করলো না কেনো তানিশা বাহিরে যেতে চাচ্ছে।
আসলে নোমান আর তানিশা দুইজনই চায় শিলা আর সিফাত দুইজনই ভালো থাক।কারণ শিলা আর সিফাতের কষ্ট টা তারা নিজেরাও উপলব্ধি করতে পারছে।কিন্তু তাদের কিছুই করার নাই।তবুও তারা দুইজনই চেষ্টা করবে ওই মন ভাংগা মানুষ দুইজনকে ভালো রাখার জন্য।তারা যদি অতীত টা ভুলে নতুন করে আবার ভালোবাসার চাদরে নিজেদের মুড়িয়ে নিতে চায় তাহলে যতটা সাহায্যের প্রয়োজন নোমান আর তানিশা করবে।
নোমান আড়চোখে শিলা আর সিফাতকে কে দেখে তানিশাকে জিজ্ঞেস করলো, এখন কি করা যায় বলো তো?
তানিশা নোমানের কথা শুনে বললো,আপনিও তাহলে দেখেছেন ওদের?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–হুম।
তানিশা তখন বললো, আগে ওরা নিজেরা ভালো করে মিশুক।দুইজন দুইজন কে ভালো করে পছন্দ করুক।তারপর বাকি কাজ আমরা করবো।
নোমান তখন বললো তাহলে চলো আমরা এখান থেকে চলে যাই।ওরা যদি দেখে ফেলে তাহলে হয় তো লজ্জা পেতে পারে।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো ওকে।এই বলে তানিশা সবাইকে নিয়ে চলে গেলো।এদিকে বৃষ্টি পড়াও থেমে গেছে।
রাতের সমুদ্র একেবারে অন্যরকম। ব্যস্ত নগরীর ক্লান্ত নাগরীকের নাক ডাকা সুরে যেন ঘুমিয়ে যায় পুরো পৃথিবী। কিন্তু সদা জাগ্রত সমূদ্রের উত্থাল ঢেউয়ে যেন উতলা করে তুলে সবার মন। এ দৃশ্য অসাধারন ।

রাতে সবাই মিলে আবার সমুদ্রের পাড়ে চলে গেলো আর রাতের সমুদ্র সৈকতের দৃশ্য দেখতে দেখতে বড় সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ খেতে লাগলো।শিলা আর সিফাত এখানেও পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে।তারা কি যে এতো গল্প করছে সত্যি কিছু বোঝা যাচ্ছে না, তবে তারা যে দুইজন দুইজনকে পছন্দ করে ফেলছে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই।
ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় সমুদ্র সৈকতের ভিন্ন রুপ আর সন্ধ্যার পরে আবার অন্য রুপ ধারণ করে।বিশেষ করে পূর্ণিমার রাতে আকাশের উজ্জ্বল চাঁদ সমুদ্রের জলে প্রতিফলনের দৃশ্য আনন্দের মাত্রাকে বহুগুন বাড়িয়ে দেয়।সবাই রাতের এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করে এক এক করে হোটেলে ফিরে এলো।
তানিশা আর নোমান তাদের রুমে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তে শিলা বললো,স্টপ!তোমরা রুমে ঢুকতে পারবে না এখন।
নোমান তখন বললো, কেনো?

সিফাত এবার এগিয়ে এসে বললো, হ্যাঁ কারণ আছে।কারণ তোমাদের জন্য এ রুম নয়।
নোমান আর তানিশা দুইজন দুইজনার দিকে তাকালো।কারণ তারা সিফাত আর শিলার কথা কিছুই বুঝতে পারলো না।
এবার তন্নি এসে তানিশা আর নোমানের হাত দুটি মিলিয়ে দিয়ে তাদের হাতে একটা চাবি দিলো।২০১ নাম্বার রুমের চাবি।
নোমান কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তন্নি বললো,ধন্যবাদ দিতে হবে না।এটা আমাদের সবার পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য ছোট্র এই গিফটা।প্লিজ গ্রহন করো তোমরা।

আমান তখন নোমানের গায়ে হাত দিয়ে বললো ভাই বেস্ট অফ লাক।আমরা ঘুমাতে গেলাম।এক এক করে সবাই তাদের অভিনন্দন জানাতে লাগলো।সবশেষে শিরিন এসে বললো,দেবর জি এখন খুশি তো?যাও তোমাদের হানিমুনের ব্যবস্থাটা করে দিলাম।তা না হলে মনে মনে ঠিক বলতে কক্সবাজারে আসলাম কিন্তু হানিমুন টা হলো না।এই বলে শিরিনও চলে গেলো।
নোমান আর তানিশা বোকার মতো হা করে দাঁড়িয়ে আছে।তারা বুঝতেই পারে নি সবাই তাদের জন্য এই রকম একটা সারপ্রাইজ রেখেছে।

তানিশা এবার নোমানের উপর রাগ দেখিয়ে বললো সব আপনার জন্য হয়েছে।আপনি যদি তখন ওরকম টা না করতেন তাহলে কি এভাবে সবাই আমাদের জন্য আলাদা রুম বুকিং করতো?কি দরকার ছিলো মেয়েদের রুমে এসে বউ এর সাথে রোমাঞ্চ করার?এখন যে আমার লজ্জা লাগছে।কিভাবে সবাই মিলে আমাদের অভিনন্দন জানালো।
নোমান তখন বললো এখানে আমার কি দোষ? বউ ছাড়া ভালো লাগে নাকি?সেটাও আবার নতুন বিবাহিত কাপল।সবাই আমার দুঃখ টা তাহলে শেষমেষ বুঝতে পারছে।এদের সবাইকে আমিও কিছু একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই।কারণ আমি কারো ধার রাখি না।কিন্তু কি সারপ্রাইজ দিবো?

তানিশা তখন বললো কাল সবাইকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান।সবাইকে কেনাকাটা করে দিন।তাহলে সবাই বেশ খুশিই হবে।
নোমান সেই কথা শুনে তানিশাকে কোলে তুলে নিলো আর বললো গুড আইডিয়া। চলো এখন রুমে যাই।এই বলে নোমান তানিশাকে কোলে করেই ২০১ নাম্বার রুমে চলে গেলো।কিন্তু নোমান যখন দরজা খুললো নিজের চোখ কে সে বিশ্বাস করতে পারছিলো না।সে তার চশমা টা খুলে আবার ভালো করে পড়ে নিয়ে বললো, এটা কি?
তানিশা নিজেও অবাক।কারণ তারা শুধু রুম বুকিং করে নি বরং রুম টাকে বাসর ঘরের মতো সাজিয়েছে।তানিশা তো এবার আরো বেশি লজ্জা পেতে লাগলো।কি করেছে এরা?আর কখন করলো?

পুরো বেডে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দিয়েছে তারপর মাঝখানে বড় করে একটা লাভ এঁকে তার ভিতর আবার নোমান তানিশা লিখেছে।বেডের চতুর্পাশে বেলুন ঝুলানো।ডিম লাইটের নীল আলোয় রুম টিকে আরো বেশি সুন্দর লাগছিলো।
নোমান এবার তানিশাকে নিয়ে রুমের ভিতর প্রবেশ করলো।
নোমান সাজানো রুম দেখে বললো বিয়ে টা হঠাৎ করে হওয়াই আমরা তো নিজেদের বাসর ঘর সাজাতে পারি নি।সেজন্য আজ এরা সবাই মিলে এতো সুন্দর করে সাজিয়েছে রুম টা।
তানিশা তখন বললো,এরা এসব করেছে টা কখন?

নোমান তখন বললো এতোক্ষণে বুঝলাম ব্যাপার টা।এসব করেছে সিফাত,শিলা আর তন্নি।কারন সিফাত আর শিলা তখন বসে বসে তাহলে এসব নিয়েই কথা বলছিলো।অন্যদিকে আজ তন্নির মেয়েটাকে ইকবালের কোলেই বেশি দেখেছি। তন্নির শরীর ভালো না বলে সে রুমে থাকার কথা বলেছে।শয়তান তিনটা যুক্তি-বুদ্ধি করে এসব করেছে।
তানিশা তখন বললো সবাই আমাদের কত ভালোবাসে দেখছেন?আমি চাই এই ভালোবাসা যেনো সারাজীবন থাকে।
নোমান সেই কথা শুনে বললো হ্যাঁ চাই তো।সবার ভালোবাসাই চাই।তার পাশাপাশি স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসাও ভীষণ প্রয়োজন।এই বলে নোমান তানিশাকে কোলে করে বেডে নিয়ে গেলো।

তারপর নোমান এই সুন্দর ফুলের বিছানায় তানিশাকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে থাকলো কিছুক্ষন।
ধীরে ধীরে দুইজনেরই শ্বাসের উষ্ণতা বাড়ছে।আর দুইজনই নেশাভরা চোখে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই দুইজনে একে অপরের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো।
এই মিলনের মাঝে নেই কোনো অশ্লীলতা,আছে কেবল অজস্র ভালোবাসা আর অনুভূতির সংমিশ্রণ। আসলেই ভালোবাসা সুন্দর।

রাতের নিরবতায় এবং স্নিগ্ধতায় সুখ কুড়াতে ব্যস্ত এই দুইজন মানব মানবী। অন্ধকার রাতের গভীরতার আড়ালে ভালোবাসার পূর্ণতা ঘটছে।
নোমান এবার তানিশার কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বললো,আই লাভ ইউ সো মাচ।কখনোই হারাতে চাই না তোমাকে।জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এভাবেই পাশে থেকো।তানিশা নিজেও তখন নোমানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,আমিও আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।আর আমিও নিজেকে সারাজীবন এভাবে আপনার ভালোবাসায় রাঙ্গাতে চাই।তারপর দুই প্রেমিক যুগল তলিয়ে গেলো শান্তির নিদ্রায়।আহা! কি আরামের ঘুম।কি এক প্রশান্তি!
এদিকে রাতকে বিদায় দিতে সমূদ্র বুকে জোয়ার এসে যেন চলছে ভোরের আমন্ত্রণ। আকাশে ধীরে ধীরে আলো ফুঁটছে।আর চোখে ধরা দিচ্ছে বালুচরে লাল কাঁকড়ার লুকুচুরি খেলা। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়া নানা রঙ্গের শামুক-ঝিনুক।এ যে এক দেখার মতো দৃশ্য! মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।যারা এই সৌন্দর্য দেখে নি তারা অনেক কিছু মিস করছে জীবনে।

কক্সবাজারের ১২ থেকে ২২ কি.মি দূরত্বের মধ্যে রয়েছে দুইটি আকর্ষণীয় পর্যটক স্থান।একটি হলো হিমছড়ি আর আরেকটি হলো ইনানী।নোমান আর তানিশা সবাইকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য অনেক সকালে ডেকে তুললো তাদের।তারপর কলাতলী থেকে জিপে চড়ে রওনা দিলো হিমছড়ি আর ইনানীর উদ্দেশ্যে।
পাহাড় আর ঝর্ণার জন্য বিখ্যাত হলো এই হিমছড়ি। কক্সবাজার শহর থেকে যাওয়ার সময় রাস্তার বাম পাশে সবাই দেখতে পেলো সবুজে ঘেরা ছোটো বড় অনেক পাহাড়।এবং ডান পাশে দেখতে পেলো সাগরের নীল পানি।এসব দৃশ্য দেখে সবাই অনেক বেশি মুগ্ধ হলো।সবার চক্ষু যেনো জুড়িয়ে গেলো।

হিমছড়ি তে পৌঁছেই সবাই এক এক করে সিঁড়ি বেয়ে হিমছড়ি পাহাড়ে উঠতে লাগলো।সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার পর নিচের সাগর এবং প্রকৃতি কে অসম্ভব সুন্দর লাগলো সবার।সবাই হাত মেলে নির্মল বাতাস অনুভব করতে লাগলো।ইচ্ছা করছিলো এখানেই যদি সারাক্ষণ তারা থাকতে পারতো।কিন্তু সেটা কি আর সম্ভব?এই অল্প সময়ের মধ্যে তো আরো অনেক জায়গায় যেতে হবে তাদের।হিমছড়ির প্রধান আকর্ষণ ছিলো ঠান্ডা পানির ঝর্ণা। শীতের আদ্র আবহাওয়ায় ঝর্ণাকে অনেক বেশি প্রাণবন্ত লাগে।

এবার নোমান সবাইকে ইনানী সমুদ্র সৈকতে নিয়ে গেলো।সেখানে গিয়ে দেখে শুধু তারাই নয় হাজার হাজার পর্যটক এসেছে অভাবনীয় সৌন্দর্যে ভরপুর এই ইনানী সৈকত দেখার জন্য।
যেহেতু নোমানরা ভোরে বের হয়েছিলো সেই জন্য তারা দুইটার মধ্যে আবার কক্সবাজার শহরে পৌঁছলো।তারপর তারা কক্সবাজারের অতি নিকটতম সমুদ্র সৈকত লাবনী সৈকতে গেলো।এই সৈকত কাছে হওয়ায় এখানে দোকানিরা নানা রকম পসড়া সাজিয়ে বসেছে।যা পর্যটকদের আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলছে।এখানে রয়েছে হস্তশিল্প ও মনোহরি পন্যের দোকান।তানিশারা এবার ঝিনুক মার্কেটে চলে গেলো।আর ঝিনুক শিল্পের রকমারি জিনিসপত্র কিনলো।
তারপর সবাই লাবনী বিচে গোসল টা সেরে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলো।

বিকেল বেলা নোমান সবাইকে রেডিয়ান্ট ফিশ ওয়াল্ড থেকে ঘুরে নিয়ে এলো।তারপর আজকেও সুগন্ধা বীচে এসে সবাই সূর্যাস্ত দেখলো।আর রাতের দিকে বার্মিজ মার্কেট থেকে সখের জিনিসপত্র কিনে নিলো সবাই।যার যেটা মন চায় সে সেটাই কিনে দিলো।আর সবাই বেশি বেশি করে মিষ্টি তেঁতুল নিলো।এখানকার এই মিষ্টি তেঁতুল গুলো খুবই পছন্দ করে সবাই।শুধু মিষ্টি তেঁতুলই না আম,তেঁতুল,আমলকী,আমড়া,বরই,কাঁচা মরিচ,রসুন,জলপাই চালতা সহ নানা রকমের মিক্স আচার পাওয়া যায় এখানে।

আজ সারাদিন সবাই মনের মতো করে ঘুরে বেড়ালো।এ যেনো এক স্বর্গীয় সুখ অনুভব করলো তারা।কারণ এতো সুন্দর সুন্দর দৃশ্য সবাই উপভোগ করলো সত্যি বলার মতো না।কোনো মানুষের যদি মন খারাপ থাকে তাহলে এই কক্সবাজার আসলে নিমিষেই তার মন ভালো হয়ে যাবে।

এভাবে একটানা ভ্রমনের ক্লান্তি সবার উপর ভর করেছে। তাই চোখ কচলাতে কচলাতে সবাই বিশ্রামের জন্য হোটেলে হুমড়ি খেয়ে পড়লো। মোটামোটি সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।কারণ সবাই যে আজ বড্ড ক্লান্ত।
পরের দিন ঠিক ভোরবেলা সবাই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।কক্সবাজারের এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ফেলে কারো মন যেতে চায় না।তবুও সবাইকে যেতে হচ্ছে।এই দুইদিন সবাই বিন্দাস জীবন যাপন করে ভুলেই গিয়েছিলো সবার একটা পার্সোনাল লাইফ আছে।আর সেই লাইফে সবাই কতটা ব্যস্ত।বিন্দুমাত্র অবসর নেওয়ার সময় নেই কারো।

দুইদিন ছুটি কাটিয়ে সবার আলসেমি শুরু হয়ে গেছে।তবুও ডিউটি বলে কথা।আলসেমি করলে তো হবে না।আমান আর ইকবাল ঠিক ভোরে তাদের ডিউটিতে চলে গেলো।কারন তন্নি সবার সাথে নোমানদের বাসাতেই আছে।শুধু তন্নি না,শিলা সিফাত,সোহান তানিয়া সবাই একসাথে নোমানদের বাসাতেই আছে।পুরো বাসাটা যেনো লোকে গমগম করছে।তায়েব চৌধুরী সবার মাঝে এমন মিল মহব্বত দেখে ভীষণ খুশি হলেন।তিনি ভাবতেই পারছেন না মাত্র দুইদিনের মধ্যে তিনি এই রকম একটা সুখী পরিবার দেখতে পাবেন।
সকাল সাড়ে সাতটায় শিলা চলে গেলো কলেজে।
এবার ঠিক দশটায় নোমান আর তানিশা বের হলো।
নোমান তানিশাকে তার চেম্বারে রেখে নিজের চেম্বারে চলে গেলো।
কিন্তু তানিশা চেম্বারে যেতেই তানিশার এসিস্ট্যান্ট দুইজন বললো,ম্যাডাম কেমন আছেন?এই কয় দিন ভীষণ মিস করেছি আপনাকে।

তানিশা জানালো সেও মিস করছে সবাইকে।এই বলে তানিশা কিছু আঁচারের প্যাকেট দিলো তাদের।আর কিছু শুটকি মাছ।এসব জিনিসপত্র পেয়ে ওরা দুইজন তো ভীষণ খুশি হলো।আসলে ডাক্তার আর তার এসিস্ট্যান্ট এর মধ্যে এরকম সম্পর্ক খুবই কম দেখা যায়।
তানিশা চেম্বারে প্রবেশ করতেই আদ্রিয়ান আর তার মা প্রবেশ করলো।তানিশা ওদের কে দেখে ভীষণ অবাক হলো।সে কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ানের মা বললো,ডাক্তার ম্যাডাম!এই দুইদিন চেম্বারে আসেন নি কেনো?
তানিশা জানালো সে ফ্যামিলি ট্রুরে গিয়েছিলো।
আদ্রিয়ানের মা তখন বললো আমি আপনার খোঁজে এসেছিলাম কিন্তু পাই নি আপনাকে।আপনার এসিস্ট্যান্ট বললো,আপনি আজ আসবেন সেজন্য আবার আসলাম।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৯

তানিশা তখন আদ্রিয়ান কে কোলে নিয়ে বললো, কোনো দরকার আছে?
আদ্রিয়ানের মা তখন একটা চার বাটির টিফিন বক্স তানিশার হাতে দিয়ে বললো, মা,কিছু মনে না করলে এই বক্সটি বাসায় নিয়ে যেও।আমি নিজের হাতে কিছু পিঠা,পায়েস,পোলাও আর দেশি হাসের মাংস রেঁধে নিয়ে এসেছি।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো আজ কি কোনো বিশেষ দিন?কি উপলক্ষে এই খাবার রেঁধেছেন?
আদ্রিয়ানের মা সেই কথা শুনে বললো, না কোনো বিশেষ দিন না।এমনিতেই সখ হলো সেজন্য এনেছি।এই বলে আদ্রিয়ানের মা চলে গেলো।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪১