ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

তন্নি এবং তানিশা দুইজনই এইচ,এস,সি তে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে মেডেকেল এ চান্স পাওয়ার জন্য রেটিনা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়।
দূর্ভাগ্যবশত তন্নি কোনো সরকারি মেডিকেল এ চান্স না পাওয়ায় সে দ্বিতীয় বার সুযোগ নিচ্ছে।যদি দ্বিতীয় বার ও না হয় তখন তার মামা প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি করে দেবে।
কিন্তু তানিশা প্রথম সুযোগেই চান্স পেয়ে যায়।

তানিশা এই ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাওয়ার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছে।সে একটি রাত ঠিকভাবে ঘুমায় নি।তার মনের মধ্যে ভীষণ জিদ ছিলো।সে সবসময় একটি কথাই ভাবতো,
“সবাই যদি পারে তাহলে সে কেনো পারবে না”।
এদিকে তন্নি তায়েব চৌধুরীর কথা শুনে মন খারাপ করে বেলকুনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।তানিশাও সেখানে চলে গেলো।তানিশা তন্নির কাছে গিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তুই কি আমাকে সেই জন্য ডেকেছিস তোদের বাসায়?তুই মুখ গোমড়া করে থাকবি আর আমি তোর রাগ ভাঙ্গাবো?
তন্নি তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো,মামা সবসময় শুধু তোর ই উদাহরণ দেয় এখন।কেনো যে তোর সাথে আমার দেখা হলো,আর কেনোই বা তোকে বেস্ট ফ্রেন্ড বানিয়ে এই বাসায় আনলাম!এখন দিনরাত তো শুধু এটাই শুনতে হয় আমাকে।আমি তো একজন মানুষ।আমার তো খারাপ লাগে।মামা কেনো যে এভাবে কষ্ট দেয় আমাকে বুঝি না কিছু।
তানিশা তখন তন্নির চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো, মামা তোর ভালোর জন্যই এভাবে বলে।তুই তাহলে মন দিয়ে পড়াশোনা করবি।প্রথমবার সুযোগ পাস নি তো কি হইছে,আরো একবার তো চান্স আছে।দ্বিতীয় বার ইনশাআল্লাহ পেয়ে যাবি।
তন্নি সেই কথা শুনে তানিশাকে জড়িয়ে ধরে বললো,তুই আবার মন খারাপ করলি নাকি?আমি কিন্তু মন থেকে কিছু বলি নি।
–না না।কিসের মন খারাপ?

হঠাৎ টুং করে আবার মেসেজ আসলো তানিশার ফোনে।
❝আই লাভ ইউ ডাক্তার ম্যাডাম❞প্লিজ রিপ্লাই দাও।আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।
তানিশা মেসেজটি এড়িয়ে যেতে চাইলো।কিন্তু তন্নি তার আগেই তানিশার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বললো,
কি ব্যাপার তানিশা?প্রেম করছিস নাকি?এতো টুং টুং করে কিসের আওয়াজ হচ্ছে?এই বলে তন্নি মেসেজটি সিন করলো।তন্নি মেসেজটি দেখে মাথায় হাত দিয়ে বললো,

–ও মাই গড।তানিশা এই ছেলেটা কে?১০০+ মেসেজ।
তানিশা তখন তন্নির হাত থেকে ফোন টা নিয়ে বললো,দূর চিনি না আমি।
তন্নি তখন তানিশার মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললো,আমি কি ছোট বাচ্চা।যেটা বোঝাবি ওটাই বুঝবো।তুই যদি না চিনিস তাহলে এই ছেলে তোর ফ্রেন্ড লিস্টে আসলো কিভাবে?
তানিশা তন্নির কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে ছেলেটির সকল মেসেজ চেক করতে লাগলো।কারণ তানিশা নিজেও বুঝতে পারছে না,আসলে ছেলেটা কে?

কিন্তু ছেলেটির প্রথম মেসেজ দেখে তানিশা যেনো শূন্যে ভাসতে লাগলো।
এই তো সেই মেয়েটা,যে তানিশাকে তার ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সসেপ্ট করার জন্য বার বার অনুরোধ করেছিলো।আর বলেছিলো,আপু আমিও এবার মেডিকেলে চান্স নিতে চাই।প্লিজ হেল্প মি।আপনি কিভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন জানাবেন প্লিজ।
তানিশা তার সাধ্যমতো মেয়েটাকে সাহায্য করেছিলো।কোন কোচিং সেন্টার ভালো হবে,কি কি বই কিনতে হবে এসব বিষয় এ পরামর্শ দিয়েছিলো।তারপর থেকে রেগুলার মেয়েটি তাকে মেসেজ দিতে থাকে।কিন্তু তানিশা ব্যস্ত থাকার কারণে যথাসময়ে রিপ্লাই দিতে পারে না।কিন্তু যখন সময় হয় তখন কথা বলে।

কিন্তু আজ হঠাৎ সেই মেয়ে ছেলে হয়ে গেলো কিভাবে?কুইন শামিমা থেকে আজ কিং শামিম হয়ে গিয়েছে।তারমানে এটা ফেক আইডি ছিলো!এতোদিন সে এই ফেক আইডির সাথে কথা বলে তার মূল্যবান সময় নষ্ট করেছে।
এদিকে তন্নি শুধু বার বার বলছে,কি হলো তানিশা?কিছু বলছিস না যে?ছেলেটাকে রিপ্লাইও দিচ্ছিস না?
তানিশা তখন তন্নিকে সব কিছু খুলে বললো।
এদিকে তানিশা মেসেজ সীন করায় ছেলেটি একের পর এক মেসেজ দিতেই আছে।ছেলেটি লিখেছে,
“এতোদিন আমি মিথ্যা কথা বলেছি।
আসলে আমি কোনো মেডিকেলে চান্স নিতে চাই না।এটা ছিলো তোমার সাথে কথা বলার বাহনা মাত্র।
আমি একজন ছেলে।

তোমাকে আমার অনেক বেশি ভালো লাগে।
কিন্তু বলা হয়ে ওঠে নি।
আমি একজন পুলিশ অফিসার।
আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি আর বিয়েও করতে চাই।
তানিশা কোনো উত্তর দিলো না।সে মনে মনে ভাবলো রিয়েল আইডির ছেলেদেরকেই পাত্তা দেই না,আর এই ছেলে আসছে ফেক আইডি দিয়ে প্রপোজ করতে। এসব লোকের সাথে আজাইরে কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাই না।সেজন্য ব্লক দেওয়ার জন্য ব্লক অপশনে যেতেই ছেলেটি আবার মেসেজ দিলো তানিশাকে,

–হ্যালো ডাক্তার ম্যাডাম!কিছু বলছো না কেনো?এতোদিন তো ভালোই কথা বলতে।তা আজ হঠাৎ এতো অহংকারী হয়ে গেলে কেনো?আমিও কিন্তু একজন নামকরা পুলিশ অফিসার।ইচ্ছা করলে তোমাকে তুলে নিয়ে যেয়ে বিয়ে করতে পারি।ভালোভাবে বললাম দেখে গায়ে লাগাচ্ছো না আমার কথা?
মেসেজ টা দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো তানিশা।কারণ ঢাকা শহরে সে একলা থাকে।কোনো নিকট আত্নীয় কেউ নেই।শুধু আছে এই কলেজের বান্ধুবীটাই। এভাবে কেউ যদি হুমকি দেয় তাহলে তো ভয় পাবারই কথা।তবুও সাহস করে উত্তর দিলো তানিশা,
–বিয়ে করা তো দূরের কথা আপনি আমার ধারেকাছেও ঘেষতে পারবেন না।আর আপনি যত বড়ই অফিসার হন না কেনো আমার তাতে কিছু যায় ও আসে না।

–এতো অহংকার তোমার?মেডিকেলে পড়ছো দেখে কি এতো অহংকার দেখাতে হবে?
তানিশা তখন বললো, অনেক পরিশ্রম করে মেডিকেলে চান্স পাইছি,সেজন্য তো একটু অহংকারী হবোই।
ছেলেটি তখন রাগের ইমোজি দিয়ে বললো,
–এই যে মিস তানিয়া।এরকম দুই চারটা মেডিকেল স্টুডেনদের আমি পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
তানিয়া নাম শুনে ভীষণ হাসি পেলো তানিশার।সে তখন হা হা ইমোজি দিয়ে বললো,যে আমার নামটাই ঠিক করে জানে না,সে আবার নাকি আমাকে উঠে নিয়ে যাবে।তানিয়া না।আমি মিস তানিশা।আর আপনার পকেটে আপনি কাকে কাকে রাখবেন সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
ছেলেটি তখন বললো, চ্যালেঞ্জ রইলো তোমার সাথে।শনিবার দেখি কি করে কলেজে ঢুকতে পারো তুমি?সোজা উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো তোমাকে।

তানিশা এই মেসেজ দেখার সাথে সাথে তাকে চিরদিনের জন্য ব্লক লিস্টে পাঠিয়ে দিলো।তবে তার ভীষণ ভয় হতে লাগলো।ছেলেটি তাকে এভাবে চ্যালেঞ্জ করলো কেনো?এখন সত্যি সত্যি যদি উঠিয়ে নিয়ে যায়?
তন্নি তানিশাকে এমন ভয় করা দেখে বললো,তুই আসলেই একজন পাগল মেয়ে।ও বললো আর তোকে উঠিয়ে নিয়ে গেলো?এতো সহজ?
আরে ফেসবুকে এরকম অহরহ ছেলে আছে যাদের কোনো কাজকর্ম নেই।হুদাই মেয়েদেরকে এভাবে ডিস্টার্ব করে আর ভয় দেখায়।

তানিশা তন্নির এমন শান্ত্বনা শুনেও তার আতংক কিছুতেই দূর হলো না।তার বুক দুরুদুরু করে কাঁপতে লাগলো।
এদিকে তন্নি তানিশাকে এমন ভয় করা দেখে তার মন ভালো করার চেষ্টা করতে লাগলো।তাকে ছাদে নিয়ে গেলো।সেখানে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে তারপর নিজের হাতে তানিশাকে নুডলস রান্না করে খাওয়ালো।বিকালবেলা আবার দুই মগ কফি বানিয়ে নিয়ে বেলকুনিতে বসে কিছুক্ষণ গল্প করলো।তানিশা সবকিছু ভুলে যাওয়ার ট্রাই করলো।আর তন্নির সাথে দিনটি উপভোগ করতে লাগলো।এই ভাবে হাসি আনন্দে কখন যে দিন পেরেয়ি রাত হয়ে গেলো তানিশা টেরই পেলো না।
রাতের বেলা হঠাৎ তন্নি মিউজিক এর সাউন্ড বেশি করে দিয়ে তার তালে তালে নাচতে লাগলো আর বলতে লাগলো,

আহা ঊ ঊ আহা ঊ ঊ
সাঁহ চুটকী জো তুনে কাতী হৈং
জোরী সে কাতী হৈং, যহাঁ বহাঁ
রোতী হূঁ, মেং তুঝসে রোতী হূঁ
মুঝে মানা লে না ও জান-এ-জান
ছেড়েংগে হম তুঝক
লড়কী তূ হৈং বড়ী বুম্বাত
আহা আহা আহা আহা
উহ লা লা, উহ লা লা,
উহ লা লা, উহ লা লা
তূ হৈং মেরী ফংতাসী
চূ না না, চূ না না,
চূ না না, চূ না না
অব মেং জবান হো গযী
তন্নি এবার তানিশাকেও ডাকলো তার সাথে ডান্স করার জন্য।
কিন্তু তানিশা আসতে চাইলো না।তন্নি তখন জোর করেই তানিশার হাত ধরে লাফাতে লাগলো।একেবারে যাকে বলে উরাধুরা নাচ।

তানিশা বুঝতে পারছে না তন্নিকে আজ হঠাৎ এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো?
হঠাৎ দরজায় দাঁড়িয়ে নোমান চিৎকার করে বললো,শাট আপ!কি শুরু করেছিস তন্নি?বন্ধ কর এসব গান বাজনা।
নোমান জোরে জোরে চিল্লাছে আর বলছে,এতো জোরে সাউন্ড দিয়ে কেউ গান শোনে নাকি?বাসায় তো তুই একা না?বাকি মেম্বারদের কথাও তো ভাবতে হবে?
নোমানের এতো জোরে জোরে চিল্লানি তন্নীর কানেই পৌঁছলো না।সে চোখ বন্ধ করে সেই আগের মতোই গানের তালে তালে ডান্স করছে।কিন্তু তানিশা নোমানের কন্ঠ শুনে অনেক আগেই থেমে গেছে।সে তখন তাড়াতাড়ি করে নিজেই গিয়ে মিউজিক টা অফ করে দিলো।
এতোক্ষণে তন্নির হুঁশ ফিরে এলো।গান বন্ধ হওয়ায় সে যখন চোখ মেলে তাকালো,আর নোমানকে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে সাথে সাথে বললো,

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ২

নোমান ভাইয়া আপনি এই সময়ে বাসায়?
আপনার না আজ ওয়ার্ডে ক্লাস আছে।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪