ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৮

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৮
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

তানিশা বাসায় পৌঁছেই আগে তার ব্যাগ গোছাতে লাগলো।তা দেখে তন্নি বললো,হয়েছে টা কি তানিশা?কলেজ থেকে এসেই এভাবে ব্যাগ গোছাচ্ছিস কেনো?
তানিশা তখন বললো আমি হোস্টেলে যাচ্ছি তন্নি।আমার মাথার ব্যাথা তো এখন মোটামুটি ভালোই হয়েছে।
তন্নি সেই কথা শুনে বললো তার মানে তুই আমাদের বাসায় থাকতে চাচ্ছিস না?মামা এতো করে বলার পরও তুই চলে যাচ্ছিস?
তানিশা তখন ব্যাগ গোছা বাদ দিয়ে বললো,

তন্নি দেখ এটা হয় না কখনো।আমি কেনো তোর মামার বাসায় এভাবে থাকবো?শুধু মামা চাইলেই তো হবে না।এ বাসার অনেকেই চাই না আমি তোদের সাথে থাকি।
তন্নি তখন তানিশাকে বললো,কে চায় না?নাম বল তার।
–না না। এমনি বললাম।আমার নিজেরই ভালো লাগছে না।দেখ আমার একটা আত্নসম্মানবোধ আছে।আমি নিজে কষ্ট করে আজ এতোদূর এসেছি। সেজন্য বাকি পথচলা নিজেই সামলাতে চাই।
তন্নি তখন তানিশার হাত ধরে তাকে বিছানায় নিয়ে গিয়ে বসালো।আর বললো,সত্যি করে বলতো কি হয়েছে?কে কি বলেছে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তানিশা তখন তন্নির হাত সরিয়ে দিয়ে বললো কেউ কিছুই বলে নি।আমারই ইচ্ছে করছে না আর থাকতে।এই বলে তানিশা তার বাবাকে খুঁজতে গেলো।তার বাবার সাথে আগে এ নিয়ে কথা বলতে হবে।কিন্তু তানিশার বাবা বাসায় ছিলেন না।তায়েব চৌধুরী ওনাকে সাথে করে নিয়ে অফিসে গেছেন।
তানিশা সেজন্য ব্যাগ গুছিয়ে রেখে বিছানার এক সাইডে রেখে দিলো।আর তন্নিকে বললো,তুই আর কখনো তোদের বাসায় আসতে বলবি না প্লিজ।যদি কখনো আমাকে দেখার ইচ্ছা হয় তাহলে কলেজে গিয়ে দেখা করিস বা হোষ্টেলে চলে যাস।তবুও এই বাসায় আসতে বলবি না।

হঠাৎ আমান প্রবেশ করলো রুমে।আর এসেই তানিশার উপর এক প্রকার রাগ দেখিয়ে বললো,তানিশা তোমার হয়েছে টা কি?সকালবেলা তুমি আমাকে রেখেই একা একা চলে গিয়েছো কলেজে।আবার কলেজ শেষ হলে তোমাকে আনতে গেলাম গিয়ে দেখি তুমি নাই।তোমাকে না বার বার সবাই বলছে এভাবে একা একা কলেজ যাবে না।তারপরও গেলে কেনো?
তানিশা তখন বললো, আমান ভাইয়া আমাকে নিয়ে আপনারা সবাই একটু বেশিই টেনশন করছেন।কিছুই হবে না আমার।আপনারা প্লিজ অযথা টেনশন করবেন না।আর আমি আজ একা একা যাই নি কলেজে।আপনার ছোট ভাই নিয়ে গিয়েছিলো।
–নোমান?নোমান তোমাকে নিয়ে গিয়েছে?সে আবার কবে থেকে এতো বড় দায়িত্বশীল হলো?তার তো আশেপাশে তাকানোর সময়ই নাই।

তানিশা তখন বললো, হ্যাঁ ঠিক বলছেন।তার হাতে কোনো সময় নাই।কিন্তু আমি বলেছিলাম,যে আমাকে একটু কলেজে রেখে আসেন।
–তুমি বলেছো?কিন্তু কেনো?
তানিশা তখন বললো এমনি বলেছি।উনি কলেজে যাচ্ছিলেন সেজন্য ভাবলাম ওনার সাথেই যাই।আপনি আবার অযথা কষ্ট করতে যাবেন কেনো?
আমান তখন বললো,ওহ,তাহলে আসার সময়ও ওর সাথেই এসেছো?
–হ্যাঁ।

আমান সেই কথা শুনে শান্ত কন্ঠে বললো,ভালোই করেছো।আমি তো ভেবেছিলাম একা একা এসেছো বাসায়।এই বলে আমান তানিশার রুম থেকে চলে গেলো।
আমান চলে যাওয়ার সাথে সাথে তন্নি তানিশাকে বললো,নোমান ভাইয়া তোকে কিছু বলেছে তাই না?কি বলেছে সত্যি করে বল।
তানিশা কি বলবে এখন?সে তখন বললো না কিছুই বলে নি।উনি তো জাস্ট আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন।আর আসার সময় নিয়ে আসলেন।

তন্নি বুঝতে পারলো নোমানই কিছু বলেছে।তা না হলে তানিশা কলেজ থেকে এসেই এরকম পাগলামি করছে কেনো?
তায়েব চৌধুরী তহিদুল সাহেব কে নিয়ে বাসায় ফিরলেন।তহিদুল সাহেব ভীষণ খুশি হলেন তায়েব চৌধুরীর সাথে সারাদিন ঘুরে বেড়িয়ে।এবার তায়েব চৌধুরী তহিদুল সাহেব কে প্রস্তাব দিলেন পরবর্তী তে তিনি যেনো তানিশার মাকে নিয়ে বেড়াতে আসেন।তহিদুল সাহেব রাজিও হয়ে গেলেন।তিনি হাসতে হাসতে তানিশার রুমে প্রবেশ করলেন।আর সারাদিন কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়িয়েছেন সব কথা তানিশাকে বলবেন এখন।কিন্তু তানিশা যে মন খারাপ করে বসে আছেন তা তহিদুল সাহেব বুঝতেই পারলেন না।তিনি হাসতে হাসতে বললেন,

জানিস মা,এমন ভালো মানুষ আমি জীবনেও দেখি নি।কত বড়লোক!অথচ কত সহজ সরল।তিনিও নাকি এক সময় খুব সাধারণ ঘরের ছিলেন।কিন্তু নিজের অগাধ পরিশ্রমে আজ এতোদূর এসেছেন।খুব ভালো লাগলো ওনার সাথে ঘুরে বেড়িয়ে।পরবর্তীতে তোর মাকে নিয়ে বেড়াতে আসবো।
তহিদুল সাহেব অনর্গল কথা বলেই যাচ্ছেন।কিন্তু তানিশা আর নিজেকে আটকাতে পারলো না।তার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো।সেজন্য সে তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছিয়ে নিয়ে বললো,বাবা তোমার গল্প বলা শেষ হয়ে গেলে আমি কিছু বলতে চাই তোমাকে।

তহিদুল সাহেব সেই কথা শুনে বললো, হ্যাঁ হ্যাঁ বল বল।কি বলবি?
তানিশা তখন বললো,তায়েব মামা আমাদের নিকটতম কোনো আত্নীয় নয়।বা তাদের সাথে না আছে আমাদের কোনো সম্পর্ক।
–হ্যাঁ।তা হঠাৎ এ কথা বলছিস কেনো?
–এজন্যই বলছি যে, আমি জানি তুমি পুরোপুরি এই পরিবারকে বিশ্বাস করো।আর সেই বিশ্বাসের জেরেই আমাকে এখানে রাখতে চাচ্ছো।

তহিদুল সাহেব কোনো উত্তর দিলেন না।তিনি তানিশার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলেন।
তানিশা তখন বললো,আমি বলছি না এই পরিবার খারাপ,বা এই পরিবারের সদস্যরা খারাপ।আমি বলছি আমার আত্নসম্মানের কথা।তোমার মানসম্মানের কথা।আমি এখানে থাকলে নানা মানুষ নানা ধরনের কথা বলবে।
–হ্যাঁ তা ঠিক বলেছিস।আমি তো তায়েব চৌধুরী কে বার বার সেটাই বোঝাচ্ছি।কিন্তু উনি তো বুঝতেই চাচ্ছেন না।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো, এভাবে বললে হবে না।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজকেই চলে যাবো হোস্টেলে।আমি আর থাকবো না এ বাড়িতে।বা আর কখনো আসবো ও না।তাহলেই আর তায়েব চৌধুরী কিছু বলবেন না।

–কিন্তু মা সেই দিনের সন্ত্রাসী গুলো যদি আবার এট্যাক করে।তোর যদি কোনো ক্ষতি হয়।
তানিশা নির্ধিদ্বায় বলে দিলো,হবে না কিছু।চলো তাড়াতাড়ি। আর দেরী করতে চাই না আমি।এই বলে তানিশা তার বাবার হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
তন্নি তানিশাকে চলে যাওয়া দেখে তার হাত ধরে বললো,এই তানিশা?আবার তুই পাগলামি করছিস?

তানিশা তখন তন্নির হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,কিসের পাগলামি?আমি তোদের বাসায় কি জন্য থাকবো বল?আমাকে নিয়ে এতো বেশি চিন্তা করতে হবে না।তুই ভালোভাবে পড়াশোনা করিস।এই বলে তানিশা বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।সে আর কাউকেই বলে গেলো না।তায়েব চৌধুরী আর আমান গিয়েছে বাহিরে।বাসায় শুধু নোমান আর তন্নি ছিলো।অন্যদিকে তাহমিনা চৌধুরী থেকেও নেই।তিনি তো তানিশা যাওয়াতে বেশ খুশিই হয়েছেন।
নোমান বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে তানিশাদের যাওয়া দেখছিলো।আর বেলকুনিতে লাগানো লতানো পাতাগুলোর একটা একটা করে পাতা ছিড়ছিলো।

কিন্তু তানিশা একবারের জন্যও পিছন ফিরে তাকালো না।সে সোজা তার বাবার হাত ধরে চলে গেলো।
তহিদুল সাহেবের বেশ খারাপ লাগলো।এভাবে তায়েব চৌধুরী কে না বলে যাওয়াটা কি ঠিক হলো তাদের? কিন্তু তানিশার জোরাজোরি তে তিনি আর সে কথা বললেন না তানিশাকে।
তানিশা চলে যাওয়াতে তন্নির ভীষণ মন খারাপ হলো।সে তখন নোমানকে গিয়ে বললো,
ভাইয়া আপনি কি বলেছেন তানিশাকে?যে ও আর এক সেকেন্ডও দেরী করলো না।
নোমান কোনো উত্তর দিলো না।

তন্নি তখন বললো, কি হলো ভাইয়া?কিছু তো বলেন।
নোমান তখন তন্নিকে ধমক দিয়ে বললো, তুই যাবি এখান থেকে।দেখছিস না আমি পড়ছি।এসব আজাইরে বিষয়ে কথা বলার মোটেও ইচ্ছা নাই আমার।
তন্নি নোমানের এমন ধমক খেয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখে তায়েব চৌধুরী আর আমান একসাথে বাসায় প্রবেশ করছে।তন্নি তার মামাকে দেখামাত্র বললো,মামা তানিশা আর তার বাবা চলে গিয়েছে।
–মানে?কি বলছিস এসব?আমাকে না বলে এভাবে যেতে পারলো?
তন্নি তখন বললো,এ বাসার কেউ হয় তো তানিশাকে কিছু বলেছে।সেজন্য তানিশা ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।ও অনেক কাঁদছিলো।

তায়েব চৌধুরী তখন চিৎকার করে তাহমিনা চৌধুরী কে ডাকতে লাগলো,আর বললো নিশ্চয় তুই কিছু বলেছিস।
তাহমিনা চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,না ভাইয়া।কসম আমি কিছু বলি নি।আমি যখন বুঝতে পারলাম আমার চেয়েও তুমি তানিশাকে বেশি ভালোবাসো তখন থেকে আমি কিছুই বলি না ওকে।
–তাহলে কে বলেছে?

নোমান তার বাবার চিল্লানি শুনে রুম থেকে বের হয়ে আসলো আর বললো আমি বলেছি।আমি বলেছি তানিশা তুমি চলে যাও।আর যেনো তোমায় না দেখি এ বাড়িতে।
তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে ভীষণ রেগে গেলেন আর নোমানের কাছে গিয়ে বললো,কেনো বলেছো?তানিশা তোমার কি ক্ষতি করেছে?
–আমার কোনো ক্ষতি করে নি।তবে এই পরিবারের অনেক ক্ষতি হতে পারতো।
তাহমিনা চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো এসব বলে কোনো লাভ নেই নোমান।তোমার বাবা তো তানিশার একদম বড় ভক্ত হয়ে গেছেন।

আমান এবার কথা বলে উঠলো।সে নোমানকে বললো,যা বলার স্পষ্ট করে বল।কেনো তুই তানিশাকে যেতে বলেছিস?আর তোর কেনো মনে হলো তানিশা এ বাড়িতে থাকলে এ বাড়ির ক্ষতি হতে পারে।
নোমান তখন বললো, ভাইয়া তুমি একজন ভবিষ্যৎ পুলিশ অফিসার।তোমার দ্বারা এই কাজ আশা করি নি কখনো।আমি যদি এখন মুখ খুলি খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।
আমান সেই কথা শুনে তোতলাতে লাগলো।আর বললো কি বলছিস এসব?
তায়েব চৌধুরী এবার এগিয়ে এসে বললো,বাবা নোমান তুমি কি ঠিক আছো?কি সব ভুলভাল বলছো।সারাদিন পড়াশোনা করতে করতে তোমার মাথা তো পুরাই শেষ হয়ে গেছে।

নোমান তখন বললো,না বাবা।ঠিক আছি আমি।আমান ভাইয়ার থেকেই শোনো সে কি কি করেছে তানিশার সাথে।
আমান বুঝতে পারলো নোমান সবকিছু জেনে গেছে।সেজন্য সে চলে যেতে ধরলো। তখন নোমান বললো,ভাইয়া যাচ্ছো কেনো এভাবে?বাবাকেও একটু বলো তোমার কাহিনী।
তায়েব চৌধুরী তখন বললো,নোমান!আমার ধৈর্যের সীমা কিন্তু এবার শেষ হয়ে যাচ্ছে।যা বলার পরিষ্কার করে বল।
নোমান তখন বললো সেদিনের যে সন্ত্রাসী গুলো তানিশাকে এট্যাক করেছিলো সেগুলো তোমার গুনধর ছেলের টাকাই কেনা লোক ছিলো।তোমার গুনধর ছেকে যা যা করতে বলেছে ছেলেগুলো সেটাই করেছে।কিন্তু মাঝখানে আমি গিয়ে তার প্লান সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
তায়েব চৌধুরী তখন আমানের দিকে তাকিয়ে বললো,নোমান এসব কি বলছে?আমান সেই কথা শুনে সেখান থেকে চলে গেলো।

তায়েব চৌধুরী তখন নোমানকে বললো তুমি এসব জানলে কি করে?
–আমি সন্ত্রাসী গুলোরে খুঁজে বের করেছিলাম তাদের পুলিশে দেবো বলে।কিন্তু সন্ত্রাসী গুলো জেলে যাওয়ার ভয়ে সব সত্য কথা বলে দিয়েছে।সেজন্য আমি ওদের ছেড়ে দিয়েছি।কারণ ওদের পুলিশে দিলে আমাদের মানসম্মানই নষ্ট হয়ে যেতো।
তায়েব চৌধুরীর মাথা এবার চক্কর দিয়ে উঠলো।শুধু তায়েব চৌধুরী না বাসার সবাই অনেক বেশি অবাক হলো।সবার এক কথা আমান এসব কেনো করতে গেলো?
তন্নি কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো।সেও বুঝতে পারলো ফেক আইডি থেকে মেসেজ দেওয়া ছেলেটা তাহলে আমানই।কারণ সে নিজেকে একজন পুলিশ অফিসার বলে দাবি করছিলো।তাহলে কি সত্যি সত্যি তার আমান ভাইয়া তানিশাকে ভালোবেসে ফেলেছে।

নোমান তখন পুরো ঘটনা খুলে বললো।যে আমান হিরো হয়ে তানিশা কে বাঁচাতে চেয়েছিলো।আর এসব সন্ত্রাসী দের ভয়ে যাতে তানিশাকে সবাই এ বাড়িতেই রাখতে চায় আর তানিশা নিজেও এ বাড়িতে থাকতে চায় সেজন্য সে এ নাটক সাজিয়েছে।
তায়েব চৌধুরী বুঝতে পারলো আমান তাহলে নিজেও তানিশাকে পছন্দ করে।কিন্তু সে এসব কাজ মোটেও ঠিক করে নি।তানিশাকে পছন্দ করে সেটা সে বলতেও পারতো।তা না করে অযথা বাড়তি ঝামেলায় জড়িয়েছে।সেজন্য তায়েব চৌধুরী সিদ্ধান্ত নিলেন এখন কিছু বলবেন না তিনি।আপাতত চুপচাপ ই থাকবেন।আমান চাকরি টা পাওয়ার সাথে সাথে তিনি তহিদুল সাহেব কে তানিশার সাথে আমানের বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবেন।

তায়েব চৌধুরী এবার নোমানকে বললো যা হবার হয়ে গেছে।ভুল করেও যেনো এই নিউজ বাহিরের কেউ না জানে।তাহলে মানসম্মান একদম শেষ হয়ে যাবে।আর তন্নি তুই কিন্তু তানিশাকে এসব বলবি না খবরদার।তা না হলে আমি কিন্তু মুখ দেখাতে পারবো না।
–জ্বি মামা।তবে আমান ভাইয়াকে সতর্ক করে দিয়েন যে পরবর্তীতে যেনো এরকম জঘন্য কাজ আর না করে।
–সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।আমি আমানের সাথে কথা বলবো।

নোমান ভেবেছিলো তার বাবাকে আমানের এমন কুকীর্তির কথা বলে দিলে তিনি আমানকে শাসন করবেন।যাতে আমান ভুল করেও আর তানিশার দিকে না তাকায়।কিন্তু নোমান এটা জানে না তার বাবা অনেক আগে থেকেই আমানের বউ হিসেবে তানিশাকে ভেবে রেখেছে।নোমান আজ এসব বলায় তায়েব চৌধুরী আরো তাড়াতাড়ি বিয়ের কথা পাকাপোক্ত করতে চাইছেন।

তানিশা বাসা থেকে চলে যাওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ হলো। বাড়িটা কেমন যেনো শূন্য শূন্য লাগছিলো নোমানের কাছে।মনে হচ্ছে কি যেনো নাই তার।পড়াশোনাতে মোটেও মন বসছে না তার।নোমান একটা একটা করে বই হাতে নিচ্ছে আর তার পৃষ্ঠা ওল্টাচ্ছে।তার আজ কোনো সাবজেক্ট ই পড়তে ইচ্ছে করছে না।তখন নোমানের হঠাৎ করেই তানিশার ছবিটার কথা মনে হলো।যেটি সে তার বই এর ভিতর রেখেছিলো।নোমান অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ছবিটার দিকে।

আসলে নোমান তানিশার ছবিটা বেলকুনিতে কুড়িয়ে পেয়েছিলো।তন্নির কাছে অনেক ছবি আছে তানিশার।তন্নি আর তানিশার দুইজন মিলে অনেক ছবি আছে।বা তানিশার কোনো ছবি একক ভাবেও আছে।হয়তো তন্নির এলব্যাম থেকে তানিশার এই ছবিটা পড়ে গিয়েছিলো।কিন্তু নোমান তন্নিকে ছবিটা ফেরত না দিয়ে নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলো।সে ভেবেছিলো তন্নিকে এই ছবি দিতে গেলে নানা প্রকারের প্রশ্নের জবাব দিতে হবে তাকে।কিন্তু আজ কেনো জানি মনে হচ্ছে ছবিটা রেখে সে ভালোই করেছে।
নোমান ছবিটা স্পর্শ করছে আর বলছে,

তোমার সাথে আমার না আছে কোনো সম্পর্ক না তুমি আমার রক্তের কেউ হও।তবুও তোমাকে ছাড়া বাড়িটা কেমন যেনো শূন্য শূন্য লাগছে।যে কয়দিন ছিলে এখানে সে কয়দিন কিছু মনে হয় নি।কিন্তু আজ হঠাৎ এতো খারাপ লাগছে কেনো?মনে হচ্ছে যদি আর একবার তোমাকে কাছে থেকে দেখতে পেতাম!এই বলে নোমান হাত দিয়ে তানিশার ছবিটায় বোলাতে লাগলো।তার বুকের ভিতর টা কেমন যেনো খাঁ খাঁ করছে।সেজন্য নোমান সিদ্ধান্ত নিলো আজ কলেজ শেষ করে তানিশাকে এক নজর দেখবে সে।সে দেখতে চায় তখন তার অনুভূতি কেমন হয়?এই বলে নোমান ছবিটা আবার তার বই এর পাতার মধ্যেই রেখে দিলো।

নোমান আটটার আগেই কলেজ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো।কিন্তু আটটা বেজে গেলো তবুও সে তানিশাকে দেখতে পেলো না।তারপর ভাবলো তিরিশ মিনিটের টিফিন পিরিয়ডে হয়তো ক্যান্টিনে দেখতে পাবে।কিন্তু ক্যান্টিনেও দেখতে পেলো না তাকে।অবশেষে কলেজ ছুটি হলে সবার আগে গেটে এসে দাঁড়ালো তবুও সে তানিশার দেখা পেলো না।
হঠাৎ নোমানের তানিশার রুমমেট রিশা আর লিরার সাথে দেখা হলো।নোমান তানিশার কথা কিভাবে জিজ্ঞেস করবে বুঝতে পারলো না।সে মনে মনে কথা তৈরি করতেই তারা হোস্টেলের দিকে চলে গেলো।

নোমান তখন মন খারাপ করে বাসায় চলে এলো।পরের দিনও ঠিক এভাবেই নোমান তানিশাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করলো।বাট সেদিনও দেখতে পেলো না।
এবার নোমান ভীষণ টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলো।তানিশা হঠাৎ কই উধাও হলো।তাকে সে কেনো দেখতে পাচ্ছে না।আর তানিশাকে দেখতে না পেয়ে তার এমন কেনো লাগছে।ভীষণ অস্থিরতা কাজ করছিলো নোমানের মধ্যে।সে আর চুপ করে বসে থাকতে পারলো না।আজ সে রিশা আর লিরাকে তানিশার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে বলে ডিসিশন নিলো।যেমন ভাবা তেমনি কাজ।নোমান আজও কলেজ শেষ করে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো,আর রিশা আর লিরাকে দেখামাত্র হাত দিয়ে ইশারা করলো।

লিরা আর রিশা ভীষণ অবাক হলো।তারা ভাবতেই পারছে না নোমান তাদের ডাকছে।কিন্তু কাকে ডাকছে তারা ঠিকভাবে বুঝতে পারলো না।তখন দুইজনই এগিয়ে এসে বললো,ভাইয়া ডাকছেন আমাদের?
–হ্যাঁ ডেকেছি।
নোমানকে কলেজের সবাই এক নামেই চেনে।সিনিয়র আর মেধাবী স্টুডেন্ট হিসেবে নোমানের বেশ ডাকনাম।সে নিজের থেকে যে লিরা আর রিশাকে ডাকছে তারা ভীষণ প্রাউড ফিল করলো।
নোমান তখন নির্ধিদ্বায় বললো,তোমরা তানিশার রুমমেট না?

–জ্বি ভাইয়া।
–তা তানিশাকে দেখছি না যে।তোমরা শুধু দুইজন কেনো?
রিশা আর লিরা তখন দুইজন দুইজনার দিকে তাকালো।তারা দুইজন ভাবলো কি আর নোমান বলছে কি?
লিরা তখন বললো তানিশা ওর বাড়ি চলে গেছে।
নোমান লিরার কথা শুনে বললো,বাড়িতে গেছে?কিন্তু কেনো?

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৭

–ওর বড় বোনের বিয়ে।
–ওহ।এই বলে নোমান চলে যেতে ধরলো।
কিন্তু রিশা জিজ্ঞেস করলো ভাইয়া তানিশা আপনার কে হয়?সেদিনও দেখলাম আপনার সাথে একই গাড়ি করে যেতে।
নোমান তখন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বললো,কেউ হয় না।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৯