ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৯

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৯
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

নোমান কলেজ থেকে ফিরেই তন্নি তন্নি করে ডাকতে লাগলো।কারণ সে জানতে চায় তানিশার বোনের বিয়েতে তাদের ইনভাইট করেছে কিনা?
তন্নি নোমানের মুখে এই প্রশ্ন শুনে ভীষণ অবাক হলো।কারণ তন্নিই তো জানে না তানিশার বোনের বিয়ের কথা।তাহলে নোমান জানলো কি করে?
হঠাৎ সেই সময় তায়েব চৌধুরীও কার সাথে যেনো কথা বলতে বলতে বাসায় প্রবেশ করলেন।
তিনি বলছেন,

না আমরা কেউই যাবো না।কারণ আমি তোমাদের প্রতি ভীষণ রেগে আছি।তোমরা কি করে এই কাজটা করতে পারলে?আমাকে না জানিয়ে কিভাবে বাসা থেকে চলে গেলে?
তায়েব চৌধুরীর কথা শুনে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তিনি তানিশার সাথে কথা বলছেন।সেজন্য নোমান আর তন্নি চুপচাপ থাকলেন।
তায়েব চৌধুরী এবার তহিদুল সাহেবের সাথে কথা বলছেন, তায়েব চৌধুরী বলছেন,
তানিশা না হয় ছোটো মানুষ, কিছু বোঝে না।কিন্তু আপনি বুঝদার মানুষ হয়ে কি করে এই কাজটা করতে পারলেন?আমরা কেউই যাবো না আপনাদের বাসায়।
তন্নি আর নোমান চুপচাপ তায়েব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে থাকলো।আর তায়েব চৌধুরী কি কি বলছে সেসব কথা ভীষণ মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হঠাৎ তন্নির ফোনেও কল আসলো।তানিশা ফোন দিয়েছে।তন্নি কল রিসিভ করতেই তানিশা এক নিঃশ্বাসে বললো,
তন্নি, আমার বড় আপুর হঠাৎ করেই বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।পরশুদিন পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিলো।তাদের ভীষণ পছন্দ হয়েছে আপুকে।সেজন্য তারা সেদিনই বিয়ে করতে চাইছিলো।কিন্তু আব্বু রাজি হয় নি।কারণ বড় মেয়ের বিয়ে বলে কথা।সবাই আনন্দ করবে বলে অনেক আশা নিয়ে বসে আছে।এভাবে হুট করে কি বিয়ে দেওয়া যায়?সেজন্য এখন সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেছে পাত্রপক্ষ। এখন ধুমধামেই হবে আপুর বিয়ে।আমি পরশু দিন এসেছি গ্রামে।কারণ সেদিনই ঘরোয়াভাবে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু এখন যেহেতু দুইদিন পরে বিয়ে সেজন্য আমাদের পরিচিত সবাইকে ইনভাইট করতেছি।প্লিজ দোস্ত আসবি কিন্তু।আর দেরী করে বলার জন্য সরি।ভীষণ ব্যস্ত আছি রে।একা হাতে আর কয়দিকে সামলায়।
তন্নি সেই কথা শুনে বললো,হ্যাঁ দেরী করে ইনভাইট পাবার আত্নীয়ই তো আমরা।তুই যে মনে করেছিস এটাই তো অনেক। আমরা কি তোর পরিচিত কেউ নাকি?তুই তো আমাদের অপরিচিতই ভাবিস।

–কি বলছিস এসব?একটু বোঝার চেষ্টা কর।তুই সেই আগের কাহিনী তেই পড়ে আছিস?তুই বল,এভাবে কারো বাসায় থেকে পড়াশোনা করা যায় কি?নিজেরও তো একটা আত্নসম্মানবোধ আছে।প্লিজ তোরা ওই বিষয় টা আর উঠাস না।এটা এখানেই স্টপ কর।বর্তমানে ফিরে আয় তন্নি।
–হ্যাঁ বল।
তানিশা তখন বললো, কিছুক্ষন আগে মামাকে ইনভাইট করেছি।মামা তো সেই রেগে আছেন আমার উপর।তবে আমার বিশ্বাস বেশিক্ষন তিনি রেগে থাকতে পারবেন না।নিশ্চয় আসবেন আপুর বিয়েতে।তুই কিন্তু অবশ্যই অবশ্যই আসবি।আমি বার বার কিন্তু বলতে পারবো না।কারন আমার উপর অনেক দায়িত্ব। অনেক দিকে সামলাতে হচ্ছে।
তন্নি শান্তভাবে বললো,দেখি কি করি?

তানিশা সেই কথা শুনে বললো, কিসের দেখাদেখি?তুই মাস্ট আসবি।তুই না আসলে কিন্তু জীবনেও কথা বলবো না তোর সাথে।
তন্নি তখন ভীষণ অভিমান মাখা কন্ঠ নিয়ে বললো,আমার সাথে এখন কথা না বললেও চলবে তোর।এখন কলেজে নতুন নতুন বান্ধুবি পেয়েছিস।পুরাতন বান্ধুবি দিয়ে কি করবি?
তানিশা তখন হাসতে হাসতে বললো,জানিসই তো ওল্ড ইজ গোল্ড।তাছাড়া আমাদের গ্রাম অঞ্চলে একটা কথা আছে যে পুরাতন চাল ভাতে বাড়ে।বুঝেছিস!কথা বাড়াস না এখন।

রাখ এখন পরে কথা বলছি।অনেক জায়গায় ইনভাইট করা বাকি আছে।এই বলে তানিশা কল কেটে দিলো।
তন্নি কল কেটে দেওয়ার সাথে সাথে নোমান বললো,তানিশা ফোন দিয়েছিলো?
–হ্যাঁ।আমাকে ইনভাইট করলো।
–শুধু তোকে ইনভাইট করলো?
–হ্যাঁ।আর তো কারো কথা বললো না।
নোমান সেই কথা শুনে বললো, ভালো তো।তা কবে যাবি?

–জানি না।আম্মু যেতে দিলে তো যাবো।দেখি মামা কি বলে?তা আপনি কি করে জানলেন ওর বোনের বিয়ের কথা?
নোমান তন্নির কথা শুনে একদম চুপসে গেলো।এখন কি জবাব দেবে তন্নিকে?কিন্তু তন্নি ব্যাপারটাকে সিরিয়াস ভাবে নিলো না।সে তায়েব চৌধুরীর কাছে গিয়ে বললো, তানিশা তো খুবই রিকুয়েষ্ট করছে।আমাকে নাকি যেতেই হবে। মামা কি করবো এখন?
তায়েব চৌধুরী তন্নির কথা শুনে বললো,কি করবি মানে?যেতেই হবে।তা না হলে তহিদুল সাহেব মন খারাপ করবেন।কারণ বার বার রিকুয়েষ্ট করেছেন আমাকে।কিন্তু সমস্যা হলো আমি কি করে যাবো?অফিসে অনেক কাজ আছে।এই সময়ে অফিস ছেড়ে কি করে যাবো সেটাই ভাবছি।
তন্নি তখন বললো, তাহলে আমি একা একাই যাবো?

–একা যাবি কেনো?আমান আর তুই যাবি।
–ওকে।এই বলে খুশিতে লাফ দিয়ে উঠলো তন্নি। কতদিন পর বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবে সে।আর সে বিয়েটা যদি বেস্ট ফ্রেন্ডের বাড়িতে হয় তাহলে তো আর কথাই নেই।কত দিন পর এমন আনন্দ করার সুযোগ পাবে সে।
তন্নি আর এক সেকেন্ড দেরী করলো না।তার রুমে গিয়ে কাপড় চোপড় প্যাক করতে লাগলো।
অন্যদিকে নোমান বেচারা বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকলো।কারণ তার কথা একবারের জন্যও কেউ বললো না।তন্নি ব্যস্ত তার যাওয়া নিয়ে অন্যদিকে তার বাবা ব্যস্ত আমান কে পাঠানোর জন্য।নোমান সেজন্য মন খারাপ করে থাকলো।তবে তার ভীষণ ইচ্ছা করছে তানিশাদের গ্রামে যেতে।অনেকদিন ধরে সে নিজেও তো কোনো প্রোগ্রামে যায় না।কিন্তু কেউ তো তাকে ইনভাইট ই করলো না।

তবুও নোমান একটু চেষ্টা করে দেখলো।সে তায়েব চৌধুরী কে বললো,বাবা আমান ভাইয়া এতো বড় একটা ঘটনা ঘটানোর পরও কি করে তাকে পাঠাতে চাইছেন?ওখানে গিয়ে যদি আবার খারাপ কিছু করে তানিশার সাথে।আমাদের মানসম্মান তখন কিন্তু একটুও থাকবে না।
তায়েব চৌধুরী তখন হাসতে হাসতে বললো,আর খারাপ কিছু করবে না সে।আমি আমানের সাথে এ নিয়ে কথা বলেছি।বেচারা তানিশাকে ভীষণ পছন্দ করে ফেলেছে।সেজন্য এমন পাগলামি করেছে।আমান তার ভুল স্বীকার করেছে আমার কাছে।সে এটাও বলেছে এমন ভুল আর কখনোই হবে না।আমানের প্রতি আমার যথেষ্ট বিশ্বাস আছে।এই বলে তায়েব চৌধুরী চলে গেলেন তার রুমে।

নোমান তখন মন খারাপ করে নিজেও তার রুমে চলে গেলো।
নোমানকে একটিবারের জন্য কেউ যেতে বলছে না, কারন বাসার সবাই জানে নোমান কোনো প্রোগ্রামেই যেতে চায় না।আর সেখানে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে তিনচার দিন সময় নষ্ট তো সে কখনোই করবে না।কিন্তু তাদের নোমান যে ইতোমধ্যে কিছুটা চেঞ্জ হয়েছে সেটা এখন পর্যন্ত কেউই বুঝতে পারলো না।নোমান তানিশার বাড়িতে যাওয়ার জন্য এক পায়ে খাড়া হয়ে আছে।কেউ যদি একটিবার শুধু বলতো তাহলে সে সাথে সাথে রাজি হয়ে যেতো।

এদিকে তন্নি তো উত্তেজনায় একদম পাগল হয়ে যাচ্ছিলো।সে শুধু অপেক্ষা করছে কখন সে সময় আসবে?তন্নি ঠিক করলো সে কালকেই রওনা দিবে।কারণ দুই একদিন আগে না গেলে সে বিয়ে বাড়ির অনেক আনন্দই মিস করবে।কারণ সে বিয়ে বাড়ির সব আনন্দ উপভোগ করতে চায়।কোনো আনন্দ মিস করতে চায় না।
কিন্তু তার মা তো এখনো জানে না।সেজন্য তন্নি দৌঁড়ে তার মায়ের রুমে চলে গেলো।আর তার মায়ের গলা ধরে বললো,
আম্মু একটা কথা বলি?কথা দাও রাগ করবে না?

তাহমিনা চৌধুরী সেই কথা শুনে তন্নির হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,ন্যাকামো না করে যা বলার বলে ফেল।
তন্নি তখন সাহস করে বলেই ফেললো যে সে তানিশাদের বাড়িতে যেতে চায়।কারণ তানিশা এই মুহুর্তে তাকে তার বোনের বিয়েতে ইনভাইট করলো।
তাহমিনা চৌধুরী শোনার সাথে সাথে বললো,না, আমি যেতে দিবো না তোকে।ওখানে গেলে পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।তাছাড়া অচেনা জায়গা অচেনা মানুষজন।না না যাওয়া হবে না ওখানে।

তন্নি তখন বললো,কিন্তু মামা যে পারমিশন দিলো।তিনি নিজেই আমাকে যাওয়ার জন্য বললেন।
তাহমিনা চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, তোর মামা যখন পারমিশন দিয়েই দিয়েছে তাহলে আমাকে বলতে এসেছিস কেনো?যা চলে যা।
তন্নি তখন তার মায়ের গলা ধরে বললো,তুমি আমার মা হও না?সেজন্য তোমার থেকে পারমিশন না নিয়ে কি করে যাই বলো?
তাহমিনা চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো হইছে এবার। আর পাম দিতে হবে না।তা তুই একা একা কি করে যাবি?

–একা যাবো কেনো?আমান ভাইয়া আর আমি যাবো।
আমানের কথা শুনে তাহমিনা চৌধুরীর মাথা যেনো চক্কর দিয়ে উঠলো।তার ভাই আমানের ব্যাপারে সবকিছু জেনেও তাকে পাঠাচ্ছে কেনো?তার ভাই তো এ ধরনের লোক না।অন্যায় কে প্রশয় দেওয়ার লোক নন তিনি।নিশ্চয় এর পিছনে কোনো বড় ধরনের রহস্য আছে।
এজন্য তাহমিনা চৌধুরী তায়েব চৌধুরীর রুমে গিয়ে বললো, ভাই, ভাই তন্নি কি বলছে এসব?ও নাকি তানিশাদের বাড়ি যাবে।তুমিই নাকি যেতে বলেছো?

–হ্যাঁ।বলেছি।
–কিন্তু তন্নি একা একা কি করে যাবে?
–একা যাবে কেনো?আমান ও যাবে।
তাহমিনা চৌধুরী সেই কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বললো,কি বলছো ভাই?আমানের ব্যাপারে এতোকিছু জেনেও কি করে ওকে পাঠাচ্ছো?
তায়েব চৌধুরী তখন বললো, তুই বুঝবি না ওসব।
–বুঝবো না মানে?বোঝালেই বুঝবো।

তায়েব চৌধুরী এবার তার গোপনীয় কথা টা পেটে বেশিক্ষণ রাখতে পারলেন না। তিনি তাহমিনা কে বললেন,
আসলে আমার অনেক ইচ্ছা আমানের সাথে তানিশার বিয়ে হোক।কিন্তু সেটা প্রকাশ করার আগেই আমান নিজেই যখন প্রকাশ করলো তখন আর কি বলবো তাকে?আমান তানিশাকে পছন্দ করে।সে ওকে বিয়ে করতে চায়।সেজন্য আমার মনে হয় আমানেরই যাওয়া উচিত তন্নির সাথে।এতে করে তানিশার ফ্যামিলি কিছুটা হলেও আমানের সম্পর্কে জানতে পারবে তাকে ভালোভাবে চিনবে।যাতে করে পরবর্তীতে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তানিশার ফ্যামিলি আর না করতে না পারে।
তাহমিনা চৌধুরী এবার পুরাই শকড খেলেন।তার ভাই তলে তলে এতোদূর পর্যন্ত পরিকল্পনা করে ফেলেছে।যেখানে সে কিছুই জানে না।অথচ তার ভাই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবার আগে তার পরামর্শ নেন।অথচ এবার একা একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তাহমিনা চৌধুরী তখন মনে মনে ভাবলো তুমি যেমন আমানের সাথে তানিশার বিয়ের কথা ভাবছো আমিও তেমন নোমান আর তন্নির বিয়ের কথা ইতোমধ্যে ভেবে ফেলেছি।তবে আমানের সাথে তানিশার বিয়ে আমি কিছুতেই হতে দেবো না।তানিশা এই বাড়ির বউ হবে?অসম্ভব! এ আমি হতে দেবো না। কিছু একটা বুদ্ধি বের করে আমানকে তানিশার থেকে দূরে পাঠাতে হবে।আর তন্নি আর নোমানকে কাছাকাছি আসার সুযোগ দিতে হবে।

–কি হলো?কি ভাবছিস?আর আমার আইডিয়া টা কেমন লাগলো?কিছু বললি না তো?
তাহমিনা চৌধুরী তখন বললো,খুব ভালো আইডিয়া ভাই।তবে আমি একটা কথা বলতে চাই শুনবে কি?
–কি কথা?

তাহমিনা চৌধুরী তখন কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,আমার ভীষণ ইচ্ছা ছিলো তন্নিকে এই বাড়িতেই রাখতে।তাছাড়া আমান আর নোমান অন্য জায়গায় বিয়ে করলে তাদের বউরা যে কেমন আচরণ করে আমার সাথে সেটা ভাবতেই আমার ভয় লাগছে।আমি আর এ বয়সে কোথায় যাবো ভাই?মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এখানেই থাকতে চাই।সেজন্য তুমি যখন আমানের সাথে তানিশার বিয়ে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছো তাহলে অন্তত নোমানের সাথে তন্নির বিয়ে টা পাকা করে দাও।
তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে তাহমিনার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।তাহমিনা তার ভাইয়ের এমন চাহনি দেখে একদম ভয় পেয়ে গেলো।তাহমিনা ভাবলো তার ভাই এই প্রস্তাব শুনে নিশ্চয় ভীষণ রেগে যাবে।কিন্তু তায়েব চৌধুরী তার বোনকে অবাক করে দিয়ে বললো,

তন্নি কে আমি কেনো বার বার বলি যে ভালোকরে পড়াশোনা কর,তোকে মেডিকেলে চান্স পেতেই হবে।
–কেনো ভাই?
–কারণ একজন ডাক্তার ছেলে কখনোই কম মেধাবী স্টুডেন্ট কে পছন্দ করবে না।বা তাকে বিয়েও করতে চাইবে না।
–মানে?কি বলছো ভাই?
–বুঝলি না?
–না তো।

তায়েব চৌধুরী তখন বললো, আমানের মা চলে যাওয়ার পর সংসার টা একদম আমার এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো।আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম প্রায়।সবাই বলেছিলো আরেকটা বিয়ে করতে কিন্তু ছেলে দুইটার ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাজি হই নি।অনেক কষ্টে ছেলেদুই টাকে নিয়ে বেঁচে আছি।দেখ ভাগ্যের কি পরিহাস,তুই ও ঘরছাড়া হলি সেই সময়ে।নিজের স্বামীর সংসার বাদ দিয়ে তোর ভাই এর সংসার টাকে নিজের করে নিলি।তুই না থাকলে আমার সংসার টা এমন গোছানো হতো না।সেজন্য এই সুখের সংসার টাকে আরো ভালোভাবে সাজাতে আমার দুইজন লক্ষ্ণীর প্রয়োজন এখন।যারা দুইজন বোনের মতো একসাথে থেকে সংসার টাকে সুন্দর ভাবে পরিচালনা করবে।

আমি অনেক আগে থেকেই তন্নিকে নোমানের জন্য ঠিক করে রেখেছি।কারণ তন্নি এতোবেশি চালু না।সে ছোট বউ হলেই বেশি মানাবে।তাছাড়া আমার নোমানের সাথে বেশ মানাবে তাকে।তবে যেদিন থেকে তানিশাকে দেখলাম,ওকে দেখেই যেনো মনে হলো আমার বাড়িরই সদস্য সে।কেমন সহজেই মিশে গেলো আমাদের পরিবারের সাথে।ওকে আমি আমার আমানের বউ বানাবোই বানাবো।বাকিটা এখন উপরওয়ালার হাতে।সে হবে আমার বাড়ির বড় বউ।

তাহমিনা চৌধুরী তার ভাই এর কথা শুনে একদম কেঁদে ফেললেন।তবে তিনি তানিশাকে মোটেও এ বাড়িতে আনতে চান না।তানিশাকে দেখলেই কেমন যেনো রাগ ওঠে তার।তবে তার ভাই যখন চাচ্ছে তখন তো মেনেই নিতে হবে।
অন্যদিকে তন্নি নিজেও মনে মনে নোমানকে ভীষণ পছন্দ করে।নোমানের তার প্রতি এক্সট্রা কেয়ারগুলো সত্যি তার ভালো লাগে।সারাক্ষণ পড়তে বসতে বলা।খাওয়ার সময় মনে করিয়ে দেওয়া।বেশি রাত না জাগা।বাহিরে গেলেই তার জন্য হরেক রকমের খাবার আনা।সে অসুস্থ হলে ভীষণ টেনশন করা,বার বার তার খোঁজখবর নেওয়া।এসব এক্সট্রা কেয়ারগুলোতে সে ভীষণ ভাবে দূর্বল নোমানের প্রতি।আজকাল নোমান কে ভাইয়া বলে ডাকতে তার কেমন যেনো লাগে।কিন্তু সে যে তার মামাতো ভাই,সেজন্য এক প্রকার বাধ্য হয়েই ভাই বলে ডাকতে হচ্ছে তাকে।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৮

তন্নি সেদিন তানিশাকে নোমানের কথাই বলতে চাইছিলো।কিন্তু যেখানে সে নোমানের মনের খবর এখন পর্যন্ত পাই নি সেখানে কোন সাহসে তার ভালোবাসা সে প্রকাশ করবে?সেজন্য তার মনের কথা আড়ালেই রয়ে গেলো।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ১০