তান্ডবে ছাড়খার পর্ব ১১

তান্ডবে ছাড়খার পর্ব ১১
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

আফিয়া বেগম দুপুরে খাবার খেয়ে রুমে যায়।মোবারক সাহেব তখন বিছানায় হেলে শুয়ে পড়েছে।আফিয়া স্বামীর পাশে বসে বললো,
“তাহসানের যেনো কি হয়েছে।”
মোবারক সাহেব ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কি হয়েছে?”
আফিয়া মন খারাপ করে বললো,

“সারাদিন মন খারাপ করে থাকে।টেবিলে বই নিয়ে বসে থাকে অথচ পড়ে না অন্যমনস্ক হয়ে কি যানো ভাবে।”
মোবারক সাহেব আফিয়ার কথা ততোটা আমলে নিলো না;বালিশ বিছানায় ঠিকমতো পেতে শুয়ে পড়ে।
“ছেলেদের একটু আকটু এমন হয়ই।এতো পেরেশানি হয়ো না তো।”
উনার কথায় আফিয়া সন্তুষ্ট হয় না।ভারী মুখে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ওর কি আর এমন পাগলামি করার বয়স আছে?কিছুতো একটা গোলমাল আছেই।”
“শোন,ছেলে মেয়ে বড়ো হলে তাদের নিজস্ব একটা দুনিয়া হয় সেখানে নিজ মতামত ছাড়া অন্যকারো মতামত পছন্দ করেনা।তুমিও তাহসানের ব্যাপারে এতো বাড়াবাড়ি করোনা।বেশী সমস্যা হলে সে অবশ্যই বাবা মাকে বলবে।তাছাড়া আমাদের ছেলে ভুল কিছু করবেনা,সে বিশ্বাস আছে।ইনশাআল্লাহ।”

আফিয়া বেগম স্বামীর কথা মন দিয়ে শুনলেও মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় এর কারন তিনি বের করবেনই।মোবারক সাহেব ঘুমিয়ে পড়লে আফিয়া তাহসানের রুমে যায় উদেশ্য কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করা কিন্তু রুমে যে তাহসান নেই!আফিয়া বেগম ছুটে সারা বাসায় খুঁজেন কোথাও নেই।

এমন কখনো হয়না;তাহসান কোথাও গেলে উনাকে অবশ্যই বলে যায় তাহলে আজকে বললোনা কেনো?খুব জরুরী কিছু নাকি?আফিয়া দরজা লক করে তড়তড়িয়ে নিচে নেমে যায়।বৃষ্টির কারনে দারোয়ান গেইটের কাছে বসতে পারেনি গ্যারেজে টুল পেতে সেখানে বসে আছে।

আফিয়া উনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে তাহসান আজকে বের হয় নি।উনার মাথা ঘুরে উঠে।বাসায়ও নেই ;তাহলে গেলো কোথায়?আস্ত একটা মানুষ বাসা থেকে উধাও হয়ে যায় কি করে?সেড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে ছাদের কথা মনে হলো।দ্রুত গতিতে ছাদে যায় কিন্তু ছাদে উঠে ছাদের দৃশ্য দেখে উনার মাথা ঘুরে উঠে।বন্যার হাত ধরে তাহসান দাঁড়িয়ে কেনো?তিনি দারাজ গলায় তাহসানকে ডাকে,

“তাহসান এসব কি?”
এই ঝুম বৃষ্টির মাঝে আফিয়া বেগমকে ছাদে তারা আশা করেনি উনাকে দেখে তাহসান বন্যার হাত ছেড়ে দেয়।দুজনেই হাসার চেষ্টা করে।তাহসান মায়ের কাছে এসে বললো,
“আম্মু! তুমি এখানে?”
আফিয়া বেগম তীর্যক চোখে বন্যাকে দেখে নিয়ে বললো,
“কেনো আমি আসাতে সমস্যা হলো নাকি?”

উনার কথার ধরনে তাহসান আর বন্যা দুজনেই অসস্থিতে পড়ে যায়।বন্যাও এগিয়ে আসে তখনো তার মুখ হাসি হাসি।তাহসান এখনি বন্যার ব্যাপারে তার মাকে বলতে চাচ্ছে না আগে দুজনের মনের আনাগোনা বাড়ুক পরে না হয় বলা যাবে।সে মাথা নেড়ে না করে মুখে বললো,

“আমরা একটা চুক্তি করছিলাম তখন;এখন তুমি এলে ভালোই হয়েছে,তুমি চুক্তির সাক্ষী হবে।”
আফিয়া বেগম বুঝতে পারে না উনার ছেলে কিসের চুক্তির কথা বলছে।ভ্রু খানিক কুঁচকে জবাব দিলেন,
“কিসের চুক্তি?”
তাহসান গাল ভরে হেসে বললো,
“বন্ধুত্বের চুক্তি।”
আফিয়া বেগম অবিশ্বাস্য চোখে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

“এই মেয়ে তোর বন্ধু?”
“হ্যাঁ।ওরও বৃষ্টি পছন্দ আমারো।
ওরও ঘুরতে পছন্দ আমারো
ওরও পাহাড় পছন্দ আমারো।আমাদের দুজনের এমন অনেকগুলো মিল আছে তাই দুজনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা বন্ধু হবো।হাতে হাত রেখে প্রমিস করছিলাম।”

তাহসানের কথাগুলো উনার বিশ্বাস হতে চায় না কিন্তু উনার ছেলে মিথ্যা বলার মতো ছেলে না;তাছাড়া তাহসান যেভাবে বললো মনে হয়না মিথ্যা বলছে।মানুষ সাধারনত মিথ্যা বললে থেমে থেমে কথা বলে কিন্তু তাহসানকে দেখে মনে হচ্ছে সে সত্যই বলছে।উনি বন্যার দিকে তাকিয়ে দেখে বন্যাও হাসি মুখে তাকিয়ে আছে।আফিয়া বেগম দুজনের ভেজা শরীরের দিকে তাকিয়ে বললো,

“ভিজে ভিজে বন্ধুত্ব করতে হয়?”
তাহসান কি বলবে খুঁজে পেলো না।ঠোঁট উল্টে বললো,
“হয়ে গেলো তো।”

তাহসান শুধু গেঞ্জি পড়ে আছে।তাহসানের শার্ট যে বন্যার গায়ে এটা উনি বুঝতে পারলো না কারণ বন্যা লম্বায় প্রায় তাহসানের সমান তাই শার্টটা পুরোপুরি না লাগলেও হঠাৎ দেখে বুঝার উপায় নেই যে এটা অন্যকারো শার্ট।যেহেতু বন্যা সবসময়ই শার্ট,টিশার্ট পড়ে তাই আফিয়া বেগম বুঝতে পারলো না নদীর জল উল্টো যাচ্ছে।উনি তাহসানের গেঞ্জি গায়ে ছাদে আসা নিয়ে বিরক্ত হলেন,তার উপর একটা মেয়ের সামনে এমন করে দাঁড়ানোর মানে হয়?

“তুই গেঞ্জি পড়েই চলে এসেছিস?বাসায় শার্ট নেই?”
মায়ের এমন প্রশ্ন শুনে না চাইতেও তাহসান বন্যার দিকে তাকিয়ে ফেলে।
“বৃষ্টিতে ভিজবো বলেই এভাবে এসেছিলাম।”
“আচ্ছা অনেক ভিজেছিস বাসায় চল,আজকে নির্ঘাত জ্বর আসবে।”
তারপর বন্যার দিকে তাকিয়ে বললো,

“তাহিয়া তো তোমার কাছে ছাড়া অন্যকারো কাছে পড়তে চাইছে না যদি সম্ভব হয় পড়াতে এসো।”
বন্যা আলতো হেসে বললো,
“দেখি আন্টি।”

তারপর আফিয়া বেগম তাহসানকে নিয়ে নিচে নেমে যায় নামার আগে অবশ্য তাহসান ফোন ধরার জন্য ইশারা দেয় আর বন্যাকে অবাক করে দিয়ে টুক করে বাম চোখটা টিপে দেয়।তাহসান চলে যাবার পরেও বন্যা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।তাহসান বেশ পাগলামি করছে এই যে একটু আগে চোখ মে রে বন্যার বুকে শীতল বাতাস বয়িয়ে দিয়ে গেলো।গায়ের শার্টটা যেনো সারা শরীরে সুড়সুড়ি দিচ্ছে;বন্যা কেঁপে কেঁপে উঠে হাত দিয়ে খামচে ধরে শার্টের কোনা।দ্রুত পায়ে বাসার দিকে ছুটে এই শার্ট না খুলা অবধি নিস্তার পাবেনা।

আফিয়া বেগম বাসায় এসে রুমে যায়।মোবারক সাহেব তখন জেগে গেছে আফিয়া বেগমকে দেখে বললো,
“কি ব্যাপার কই গিয়েছিলে?এতো ডাকলাম কোনো সাড়া নেই।”
আফিয়ার মুখ অন্ধকার করে বললো,

“ছাদে গিয়েছিলাম।”
মোবারক সাহেব উঠে বসে।
“এই বৃষ্টির মাঝে ছাদে?”
“তোমার ছেলে গিয়েছিলো তাই গিয়েছিলাম।”
“অহ!তাহসান;ছেলে মানুষ ভিজতে ইচ্ছে হয়েছে হয়তো।”
আফিয়া বেগম অভিযোগের সুরে বললো,

“ভিজতে গিয়েছে আর বন্ধুত্বও করেছে।”
মোবারক সাহেব স্ত্রীর কথা বুঝতে পারলেন না
“কিসের কথা বলছো।”
“তোমার ছেলে নাকি বন্যার সাথে বন্ধুত্ব করেছে।এই বেয়াদব,উড়নচণ্ডী মেয়েটা নাকি তোমার ছেলের বন্ধু,কি চয়েস।”
মোবারক সাহেব স্ত্রীর ভাব ভঙ্গিমা দেখে বললেন,
“যাই বলোনা কেনো বন্যা কিন্তু ততোটাও খা,রাপ মেয়ে না।তাহসানের যদি মনে হয় বন্ধু বানানো যাবে তাহলে যাবে।আমার ছেলে বিচক্ষণ।”

আফিয়া স্বামীর কথায় সায় পায় না।মন খারাপ করে চিন্তিত্ব গলায় বললো,
“ওরা যদি প্রেম করে ফেলে তো?আমার কিন্তু একটাই ছেলে কতো শখ আহ্লাদ আছে।”
মোবারক সাহেব স্ত্রীর চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো,
“প্রেম করলে করবে।”
আফিয়া ক্ষেপে যায়।চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,

“অসম্ভব!বন্যার সাথে আমার ছেলের এসব হতে দেয়া যাবেনা।তুমি যানোনা বন্যার কাহীনি,অতীত ভুলে গেছো?”
মোবারক সাহেব কিছু বলেন না চিন্তিত্ব চোখে বাহিরের দিকে তাকায়।
রাতে তাহসানের গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে।জ্বরের মাঝেই বন্যার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে।মানুষ অসুস্থ হলে তার প্রিয় মানুষের সানিধ্য চায়।আর তাহসানও এই মূহুর্তে বন্যার সানিধ্য চাইছে।সে কাথা গায়ে দিয়ে বন্যার নাম্বারে ফোন দেয়।কয়েকবার রিং হওয়ার পরে বন্যা ফোন রিসিভ করে।তাহসানের গলার স্বর জড়ানো।

“বন্যা!”
বন্যা তখন তাহসানের শার্টটা হাতে নিয়ে বিছানায় বসে আছে।শার্টটা তার হাতে থাকার কারণেই কিনা মনে হচ্ছে ঘরটা তাহসানের সুভাসে ভরে আছে আরো মনে হচ্ছে তাহসান এখানেই আছে।রাত তখন দশটা তাহসানের ফোন দেখে রিসিভ করে।তাহসানের জড়ানো গলার স্বর শুনতে পায়।আজকে তাহসানের গলায় তার নামটা শ্রুতিমধুর লাগছে।আস্তে করে বললো,

“শুনছি।”
তাহসান বাচ্চাদের মতো করে বললো,
“আমার খুব জ্বর।”
বন্যা চমকে যায় আন্টি বলেছিলো জ্বর আসবে তাই বলে সত্যি সত্যিই আসলো?
“বেশী?”
বন্যার কন্ঠ শুনে তাহসান যেনো গলে যায়।
“তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।”
“দুপুরে না দেখা হলো।”

তাহসান আবদারের সুরে বললো,
“এইটুকু দেখাতে হয়?আরো মন ভরে দেখা চাই।”
বন্যা বুঝলো তাহসানের মাথা ঠিক নেই।
“ওষুধ খেয়েছেন?”
“হ্যাঁ।”

“তাহলে ভালো হয়ে যাবেন।এখন মোবাইল রেখে চুপচাপ ঘুমানোর চেষ্টা করেন।”
তাহসান বললো,
“ঘুমাতে পারছিনা তো।”
“চোখ বন্ধ করে রাখেন ঘুম চলে আসবে।”
তাহসান দুষ্টু গলায় বললো,
“টিনেজাররা প্রেমিকের জ্বর হলে কি করে জানো?”
বন্যা হেসে বললো,
“জানিনা,প্রেম করিনি কখনো।”

“চুমু দিয়ে জ্বর সারিয়ে তুলতে চায়।”
“তো?আমাকে এসব বলছেন কেনো?”
“আমি তোমার প্রেমিক না!এই ট্রিকটা এপ্লাই করাই যায়।”
বন্যা শক্ত গলায় বললো,
“আমি কখন বললাম আপনি আমার প্রেমিক?”
তাহসানের হাসিমুখ ঠুস করে চুপসে যায়।
“আমি তোমার প্রেমিক নই?”
“না।”

তাহসান নিশ্চুপ হয়ে যায়।কি বলা যায় খুঁজে পাচ্ছেনা।মেয়েটা কেনো বুঝেনা বুকে হাজারো আগুনের শিখা লকলক করে জ্বলছে।সে আস্তে করে বললো,
“আমি তোমার কি হই বন্যা?”
বন্যার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসবে।ছেলেটার কন্ঠ আজকে এতো ভালো লাগছে কেনো?মনে হচ্ছে কথাগুলো তার কানে না বুকে দিমদিম করে লাগছে।তাহসানের এমন প্রশ্নে কি উত্তর দেয়া যায় বুঝতে পারে না।ভেবেচিন্তে বলল,

“জানিনা।”
“তুমি আমার কি হও জানো?”
বন্যা শুনতে চায় সে তাহসানের কি তাইতো বললো,
“কি?”
“আমার ভবিষ্যত বউ।”
বন্যা চুপ করে থাকে।এই ছেলেটা নির্ঘাত পাগল হয়ে গেছে।
“আপনি পাগল হয়ে গেছেন।”
তাহসান শব্দ করে হেসে বললো,

“হ্যাঁ।কিন্তু তুমি সেটা বুঝতে চাইছো না।”
বন্যার মুখে লাজুক হাসি ফুটে উঠে।মুখে বললো,
“রাখছি।ঘুমান।”
তাহসান বললো,
“শোন।”
“কি?”
“একবার বলো শুনে বুকের তৃষ্ণা মেটাই।”
বন্যা তাহসানের কথা না বুঝে বললো,
“কি বলবো?”

তাহসান ফিসফিস করে বললো,
“ভালোবাসি।”
বন্যা তাহসানের মতোই ফিসফিস করে বললো,
“না।”
তাহসান আবদার করে বললো,
“একবার প্লিজ।”
“না,না।”
“আমিই বলি তুমি শোন।”

তান্ডবে ছাড়খার পর্ব ১০

বন্যা নিশ্চুপ হয়ে থাকে।সে শুনতে চায়।নিজের বলতে সংকুচ হলেও তাহসানের মুখে এমন বাক্য শুনতে নিশ্চয়ই খারাপ লাগবে না।
তাহসান ফিসফিস করে বললো,
“ভালোবাসি লক্ষীটা।”

তান্ডবে ছাড়খার পর্ব ১২