তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৯

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৯
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

মাঝরাতে কোন অপরিচিত ঠান্ড হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলো রিমির সর্বাঙ্গ। তৎক্ষনাৎ তড়িৎ গতিতে উঠে পরলো রিমি। দেয়ালে দেখতে পেলো কারো অবয়। অবয়ের ছায়া মানবের শারীরিক গঠন দেখে, কেমন একটা অয়নের মতো মনে হলো রিমির। রিমি কিছুটা ভীত গলায় হাক ছেড়ে ডাকে,
‘ ডক্টর এয়ারসি, আপনি কি এখানে আছেন? কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেন? ‘
রিমির ডাকে অন্ধকারে থাকা অবয়টি কোথায় যেন মিলিয়ে গেলো। রিমি মুখ চেপে দ্রুত রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলে, অয়ন এসে পড়ে রিমির সামনে।
অয়নকে দেখে ভয় পেয়ে দ্রুত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, উৎকন্ঠার সহিত রিমি আওড়াতে থাকে,
‘ জানেন ডক্টর এয়ারসি? কেউ ছিলো। আমার রুমে..’
রিমির কথাকে সম্পূণ করতে না দিয়ে, রিমির মাথায় পরম যত্নের সহিত মাথা হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অয়ন বললো,

‘ কেউ ছিলো না রিমিপরী। আমার এতো কড়া পাহারের মধ্যে কারো সাহস হবে না, তোমার রুমে প্রবেশ করার। আমি এসেছিলাম রিমিপরী। তোমাকে দেখার জন্যে মনটা ছটফট করছিলো, তাই তোমার রুমে সামনে এসেছিলাম। ‘
অয়নের কথায় পূর্বের ন্যায় মুখে বিষন্নতা মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। একরাশ ভয় এসে রিমির মুখশ্রীতে হানা দিয়েছিলো। নেত্রকোণে স্হীর নয়, অনরবত দুশ্চিন্তায় টলমল করছে, অদ্ভুদ এক দুশ্চিন্তা অদ্ভুদ এক ভয়। সবমিলিয়ে রিমির মন-মস্তিষ্কে অস্হিরতা বিরাজমান। অয়ন বুঝলো রিমির মনের অবস্হা। রিমি কোন একটা বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তায় আছে। অয়ন কিছু একটা ভেবে রিমিকে পাজকোলে তুলে নিলো। রিমি হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন করলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ কি করছেন ডক্টর এয়ারসি। ‘
অয়ন রিমির প্রশ্নের উত্তরে জবাব দিলো না। রিমিকে কোলে নিয়েই উপরের দিকে চলে গেলো। উপরের ছাদে এসে রিমিকে নিয়ে, ছাদের মাঝখানে থাকা দোলনায় পরম যত্নের সাথে বসিয়ে দিলো। অয়নও বসে পড়লো।
ছাদের বিশাল অংশজুড়ে বিভিন্ন দেশি বিদেশি ফুল গাছের ছড়াছড়ি। রিমি রাতের আকাশের দিকে তাকায় যেখানে রাতভর তারারা খেলা করে, জানান দেয় তাদের উপস্থিতি, ঔজ্জ্বল্য দিয়ে ভরে তোলে রিমির হৃদয়। নানা রঙের তারকারাজি ঘিরে থাকে চাদকে আর চাদ তার শুভ্রতা নিয়ে এক মায়াচ্ছন্ন চাদর বিছিয়ে দেয় সারা প্রকৃতিতে।
মৃদ্যু বাতাস এসে অয়নের উষকষ্ক চুলগুলো উড়তে লাগলো লাগামহীন। রিমি হাত নাড়িয়ে অয়নের সিল্কি চুলগুলো ছুইয়ে দিলো। অয়ন চোখ বন্ধ করে,রিমির কোলে নিজের মাথা হেলিয়ে দিয়ে। রিমি মুচকি হেসে অয়নের চুলগুলো নিয়ে খেলা করতে থাকে। মানুষটা সাথে থাকলে তার সমস্ত ভয় নিমিষেই দূর হয়ে যাবে। বিশাল এক ভরসা জায়গায় অয়ন রিমির। যাকে চোখ বুজে বিশ্বাস করা যায়। অয়ন আখিজোড়া বন্ধ রেখেই তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে,

‘ জানো রিমিপরী? তোমার অধরের কোণে লেগে থাকা মুচকি হাসিটুকুর দেখার জন্যে জন্যে হাজারো রজনী তোমার পাশে দিব্বি কাটিয়ে দিতে পারবো। ‘
রিমিও অয়নের কথার প্রেক্ষিতে, পাল্টা উত্তর দিয়ে বলে,
‘ যদি সময় পেরিয়ে যায়? ‘
‘ আজীবন তোমার সাথে কাটিয়ে দিলেও, সময় পেরিয়ে যাবে না।’
কথাটি বলেই অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে রিমির ললাটে নিজের ঠোট ছুইয়ে, রিমির অধরে ভালোবাসার স্পর্শে পরিপূর্ন করে তুলে। অতঃপর রিমির দিকে তাকাতেই, রিমি লজ্জায় অয়নের বুকে মাথা রেখে আখিজোড়া বন্ধ করে, ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে। অয়ন তার লজ্জারাঙ্গা বউয়ের দিকে তাকিয়ে, খানিক্টা দুষ্টু হেসে বলে,
‘ এখুনি এই অবস্হা? কালকে কি করবে তাহলে রিমিপরী? অনেক তো দূরে দূরে থেকেছো, কালকে কি করবে? ‘

অয়নের লাগামহীন কথায় চোখ বড় বড় করে রিমি উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বিড়বিড় করে আওড়াতে থাকে,
‘ অসভ্য, বড্ড অসভ্য লোক। ‘
অয়নও উঠে ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে,
‘ সে তুমি অসভ্য বলো, আর যাই বলো। কালকে আমাদের ভালোবাসা পূর্নতা পাবে। গোটা দুনিয়া যানবে তুমি শুধুমাত্র ডক্টর অয়ন রওযাক চৌধুরীর বউ। আমার রিমিপরী। একান্তই আমার। ‘
রিমি পা বাড়িয়ে ছাদ থেকে চলে যেতে নিলে, অয়নের কথাটি শুনে থেমে যায়। অয়নও আনমনে গাইতে থাকে,
.. তোমায় ছোঁবো সেখানে,
ও.. ভালোবাসো এখনি
হো.. পরে কি হয় কে জানে ।
সারাটা দিন
ঘিরে আছো তুমি এত রঙ্গিন
হয়নি কখনো মন,
সারাটা রাত
আসছে না ঘুম ধরেছি হাত
থাকবো সারাজীবন।
অয়ন গানটি গুনগুন করে গাইতে গাইতে, রিমিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। অয়ন এবং রিমির ঘনিষ্ট মুহুর্তকে দূর থেকে কেউ পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে। মুখে তার অদ্ভুদ কুটিল হাসি। সে ফোন করে কাউকে ফোন কর, ফিসফিস কন্ঠে বলতে থাকে,
‘ সব ব্যাবস্হা হয়ে গিয়েছে তো? ‘
ফোনের অপর পাশ থেকে উত্তর আসে,
‘ জ্বে সব ব্যাবস্হা হয়ে গেছে। ‘

প্রায় ভোর হয়ে গিয়েছে।দুইদিন হতে চললো সুমাইয়ার জ্ঞান ফিরছে না। তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তার মধ্যে আছে ফারহান। দুইদিন ধরে সে অফিসে ও যাইনি কিংবা বাসাতেও যাইনি। সুমাইয়ার পাশে নিরব হয়ে দুইরাত কাটিয়ে দিয়েছে ফারহান। ফারহান ঠিক আজ রাতের ফ্লাইটে সুমাইয়াকে নিয়ে
মালেশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে, আর সে তার সুমাইয়াকে ফেলে রাখবে না। সুমাইয়ার জন্যে সে যতপ্রকার বেস্ট চিকিৎসা সবকিছু করাবে। ভাবতে ভাবতে ফারহানের ফোন বেজে উঠে। ফারহানের ফোনের দিকে তাকিয়ে সুদীর্ঘ শ্বাস ফেলে, ফোন টা হাতে নিয়ে কেটে দেয়। তাকে বাইরে বের হতে হবে। অনেক গুছগাছ আছে। সবকিছু আজকের মধ্যে পেকিং করে ম্যালেশিয়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়তে হবে। ফারহান সুমাইয়ার ঘুমন্ত মুখখানার দিকে তাকিয়ে, ক্লান্ত গলায় বলে,

‘ তোমার ঘুমন্ত মুখশ্রী আমার বড্ড অপ্রিয় প্রেয়সী। আমি ক্লান্ত হয়ে উঠেছি তোমার হাসিজ্বল মুখস্রী দেখার তীব্র অপেক্ষায়। কবে এই অপেক্ষার অবসান ঘটবে প্রেয়সী? অপেক্ষা যে বড্ড পোড়ায়। ‘
ফারহানের কথার বিপরীতে কোনরুপ উত্তর আসে না। ফারহান নেত্রকোণে জলটুকু মুছতে গিয়েও পারে না। হতাশ হয়ে বিনা উত্তরে বেড়িয়ে আসে। হুট করে সুমাইয়ার হাতজোড়া আস্তে আস্তে নড়ে উঠে। পাশে আখিজোড়া মৃদ্যুভাবে কাঁপতে থাকে। পাশে থাকা যন্ত্রে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সুমাইয়ার হার্টব্রিট সময়ের সাথে সাথে তড়িৎ গতিতে বেড়ে চলেছে। সুমাইয়ার আখিজোড়া ধীরে ধীরে খুলে যায়। নার্স একজন সবেমাত্র ভিতরে ঢুকছিলো, সুমাইয়ার চোখের পাতা নড়তে দেখে, চিৎকার করে হাক ছেড়ে ডেকে বলে,

‘ সবাই কে কোথায় আছেন ? দেখুন মিসেস চৌধুরীর জ্ঞান ফিরেছে। ‘
ফারহান বেড়িয়ে যাচ্ছিলো, নার্সের কথা শুনে একপ্রকার থমকে যায়। দ্রুত দৌড়ে এসে সুমাইয়ার কেবিনে এসে দেখতে পায়, সুমাইয়া আখিজোড়া মেলে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। হাত বাড়িয়ে ধীর গতিতে ফারহানকে নিজের কাছে ডাকে। ফারহান দৌড়ে সুমাইয়ার কাছে গিয়ে,সুমাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অতঃপর সুমাইয়ার সমস্ত মুখশ্রীতে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে, খুশিতে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ আমার প্রেয়সী তুমি অবশেষে আমার অপেক্ষার অসমাপ্তি করলে তবে? ‘
সুমাইয়া উত্তর দেয় না। আলতো করে ফারহানকে জড়িয়ে, নিরবে অশ্রু বিসর্জন দেয়।

আজ চৌধুরী বাড়িতে লেগেছে বিয়ের ধুম। আজ অয়ন চৌধুরী এবং রিমির শুভ পরিনয়। সকাল থেকেই সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিছুক্ষন এর মাঝেই রিমি এবং গাঁয়ে হুলুদের অনুষ্টান শুরু হবে।
রিমিকে হলুদ শাড়িতে এবং ফুলের গয়নায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মুখে লজ্জার আভাস। অয়ন বার বার ফোন দিচ্ছে, রিমিকে একপলক দেখার জন্যে। রিমি লজ্জায় অয়নের ফোন ধরেনি। তাছাড়াও অয়নের বাকি কাজিনরাও নানাভাবে অয়নের পাগল করা ভালোবাসা নিয়ে রিমির সাথে হাসি ঠাট্টা করছে। শুধুমাত্র মেঘ ব্যতিত। মেঘের মুখে আজ অন্যান্য দিনের তুলনায় নেই কোন হাসি। কালকে থেকে কোনপ্রকার যোগাযোগ করতে পারছে না আমানের সাথে। আমান তার ফোন ধরছে না। ভিষন ভয় হচ্ছে মেঘের, আমান কি তাকে ভুল বুঝলো। রিমির ফোন হুট করে পুনরায় বেজে উঠলো। রিমি দেখতে পেলো অচেনা নাম্বার থেকে….

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৮

[ এইযে সবাইকে রিমি এবং অয়নের বিয়েতে দাওয়াত দিলাম, সবাই গিফ্ট নিয়ে আসিয়েন]

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫০

2 COMMENTS

Comments are closed.