তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫০

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫০
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

রিমি অচেনা নাম্বার থেকে ফোনটি রিসিভ করতে নিলেই, পিছন থেকে কেউ রিমিকে পাজকোলে তুলে নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। রিমি হতভম্ব হয়ে গেলেও, ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখতে পায় অয়নকে। রিমি তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে পিছনের দিকে দেখতে পায়, ইশা এবং মেঘসহ সব মেয়েরা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। রিমি খানিক্টা অস্বস্হি নিয়ে অয়নকে বারবার খুচিয়ে যাচ্ছে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্যে, কিন্তু অয়ন কি আদোও রিমির কথা শুনার মতো পাত্র? সে একটা আলাদা ভাব নিয়ে পিছনে না ঘুড়েই বললো,

‘ আমার বিয়ে করা বউ, দেখতে ইচ্ছে করছিলো, তাই নিয়ে যাচ্ছি। তোমাদের কারো সমস্যা? ‘
মেয়েগুলো দ্রুত মাথা নাড়ায়। ইশা মুচকি হাসি দেয়।
অয়ন রিমিকে চোখ মেরে কোলে করে বাইরের দিকে নিয়ে যায়। রিমি লজ্জায় মাথা নিচু করে অয়নের শার্ট খামচে ধরে আছে। লোকটা এতোটা অসভ্য কেন বুঝতে পারে না সে। অয়ন রিমিকে আলতো করে নিজের রুমে এনে বসিয়ে দেয়। অতঃপর গালে হাত দিয়ে তৃপ্তি নিয়ে নিজের হলুদ পরীকে দেখতে থাকে। হলুদ রঙের তাঁতের শাড়ি সঙ্গে ফুলের গয়নায় সজ্জিত রিমি। অয়ন রিমিকে নিজের সামনে বসিয়ে রাখে কিছুক্ষন। রিমি কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থেকে,অস্হির হয়ে প্রশ্ন করে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ আর কতক্ষন বসে থাকবো ডক্টর এয়ারসি?
কিছুক্ষন পর তো অনুষ্টান শুরু হয়ে যাবে। ‘
রিমি কথাটি বলেই, উঠতে নিলে তাতে বাধ সাধে অয়ন। রিমির হাতজোড়া শক্ত করে আকড়ে ধরে, রিমিকে নিজের কোলে বসিয়ে, ফিসফিস সুরে বলে,
‘ আধা ঘন্টার আগে ছাড়ছি না। এইটাই তোমার শাস্তি বুঝলে আমার পরী? তুমি কী বুঝো না তোমাকে দেখার জন্যে আমার পরাণপাখিটা সারাক্ষন ছটফট করে, কিন্তু তুমি অবুঝের মতো আমার ডাকে সাড়া দিচ্ছিলে না, তাইতো তুলে নিয়ে আসলাম একেবারে। এখন যেতে দিচ্ছি না সহজে। ‘

কথাটি বলেই রিমির গালে আলতো করে চুমু দিলো অয়ন। অনুষ্টানের শুরুর কিছুক্ষন এর মাঝেই, রিমিকে এক বিরাট পালকির মাঝে প্রবেশ করানো হলো। সেই পালকি দিয়ে রিমি হলুদের অনুষ্টানে প্রবেশ করবে। চৌধুরীর বাড়ির এক অন্যরকম নিয়ম যাকে বলে। নিয়মঅনুসারে বিরাট উৎসবের মতো রিমিকে প্রবেশ করানো হয়। রিমিকে স্টেজে প্রবেশ করার সাথে সাথে রিমিকে অয়ন পুনরায় কোলে তুলে পাশে থাকা গোলাপ ফুলের পাপড়ির পুলের মাঝখানে থাকা দোলনায় বসিয়ে দেয়। অতঃপর নিজেও রিমির পাশে বসে পড়ে। অয়নের গাঁয়ে হলুদ পাঞ্জাবি তার সাথে হলুদ কোর্ট। অয়ন তাদের সামনে থাকা৷ ছোট্ট টেবিল থেকে হলুদ দিয়ে রিমির দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ রঙ্গে যেমন আমার আগে কেউ আমার রিমিপরীকে
রঙ্গিন করে দিতে পারেনি, তেমনি আজ আমার হলুদপরীকে সর্বপ্রথম হলুদ আমিই লাগিয়ে দিবো।’
অয়নের কথায় চারদিকে আরেকদফা হাসিহাসি শুরু হয়। রুজা চৌধুরী মুখ চেপে হেসে বলেন,
‘ বাহ বাহ কি ভালোবাসা বউয়ের প্রতি। ‘
অয়ন ও প্রতিউত্তরে হেসে হলুদের বাটি থেকে হলুদ নিয়ে রিমির গালে লাগিয়ে দেয়। রিমিও দুষ্টু হেসে হলুদের বাটি থেকে হলুদ নিয়ে, অয়নের পুরো মুখে হলুদ লাগিয়ে দেয়। অয়ন হতভম্ব হয়ে রিমির দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই, রিমি কাচুমাচু মুখ নিয়ে বসে থাকে। রিমিকে সম্পূর্ন অবাক করে দিয়ে অয়নও রিমির মুখশ্রী হলুদ দিয়ে পুরো মাখিয়ে দেয়। রিমি ঠোট উল্টে, ক্ষিপ্ত গলায় বলে,

‘ এইটা কি করলেন আপনি? ‘
অয়ন রিমির দিকে ঝুঁকে অধরের কোণে অসাধারণ হাসি ঝুলিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
‘ ইটস কলড রিভেঞ্জ বেইবস। ‘
রিমিও প্রতিউত্তরে মুচকি হাসি হেসে ফেলে। অয়ন এবং রিমির হলুদ মাখা-মাখির মতো চমৎকার মুহুর্তকে ক্যামেরাবন্দী করে ফেললেন আশেপাশে থাকা সমস্ত ক্যামেরাম্যানগণ।

সুমাইয়াকে আপাতত কেবিনে ভর্তি রাখা হয়েছে। জ্ঞান ফিরে আসলেও, সুমাইয়া বর্তমানে বেশ দূর্বল।
দীর্ঘদিন পর কোমা থেকে ফিরে এসেছে সে। তাই ফারহান ও সুমাইয়াকে অতীত নিয়ে কোনপ্রকার প্রশ্ন করে না। কয়েকটা দিন যাক। সুমাইয়া কিছুটা সুস্হ হলেই সবকিছু জেনে নিবে সুমাইয়ার থেকে। ফারহান সুমাইয়াকে রিমি এবং অয়নের বিয়ের কথা জানিয়েছে এবং এইটাও জানিয়েছে রিমি একপ্রকার ভুল বুঝেই, প্রতিশোধ নিতে এসেছে, প্রতিউত্তরে সুমাইয়া উৎকন্ঠা হয়ে প্রশ্ন করে,

‘ এখন কেমন আছে আমার জান্নাত? কীভাবে করছে সংসার? সব ঠিক আছে তো? ‘
প্রতিউত্তরে ফারহান জানায়, ‘ আপাতত সবকিছুই ঠিক আছে। রিমি তো প্রতিদিনই তোমার খবর নেয় এবং অনেকবার তোমাকে দেখেও গিয়েছে,কিন্তু তোমার অপারেশন ব্যাপারটা এখনো বলেনি।
আসলে অয়ন এবং রিমির পুনরায় বিয়ে হচ্ছে তো। বিয়েটা মিটে গেলেই রিমিকে একদম তোমার সামনে এনে, চমকে দিবো। ‘

ফারহানের কথায় সুমাইয়া একপ্রকার চমকে গিয়ে, ফারহানের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
‘ পুনরায় বিয়ে মানে? রিমি কি তবে বিয়েটা মেনে নিয়েছে? ‘
ফারহান মুচকি হেসে সুমাইয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে অত্যান্ত তৃপ্তির সাথে বলে,
‘ শুধু কি তাই? প্রতিশোধ নিতে এসে তোমার বোন তো আমার ভাইকে ভালোবেসে ফেলেছে,যাকে বলে মাত্রাধিক ভালোবাসা। ‘

সুমাইয়াও মুচকি হাসে প্রতিউত্তরে। যাক অবশেষে তার ছোট্ট বোনটারও সুখের সংসার হবে। সুমাইয়া মনে মনে দোয়া করে কোনপ্রকার ঝর যেন তার ছোট্ট বোনটার জীবনে হানা না দেয়। ফারহানের দরকারি কাজে ফোন আসে বিধায় ফারহান ফোনটা হাতে নিয়ে, সুমাইয়ার কপালে ভালেবাসার স্পর্শ দিয়ে, চলে যায় বাইরে। সুমাইয়াও হেলান দিয়ে শুয়ে পরে, তখনি হুট করে সমস্ত জায়গা অন্ধকারে আচ্চাদিত হয়ে পরে। অর্থাৎ লোডশেডিং হয়।
অপরদিকে সায়েদ সানার কেসটি নিয়ে বেশ ঘাটাঘাটি করছে, তার মনে হচ্ছে কোথাও, একটা ঘাপলা আছে। সে সানাকে অনেক্ষন জিজ্ঞাসাবাধ করেছে, কিন্তু প্রতিবারই তার একরোখা জবাব। সায়েদ পুনরায় সানাকে যে লকাবে রাখা হয়েছে, সেখানে যায়। কালকে সানাকে কোর্টে পেশ করা হবে। সানা উপরের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছিলো।

সায়েদ সানার কাছে গিয়ে কিছুটা শান্ত গলায় বললো,
‘ দেখুন মিস সানা, কালকে আপনাকে কোর্টে চালান করে হবে, তখন কিন্তু চাইলেও আপনি নিজেকে সেফ করতে পারবেন না। তাই বলছি দয়া করে সত্যিটা বলুন। ‘
সানা অত্যান্ত শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, নিচু গলায় বললো,
‘ আমি চাই আমার শাস্তি হোক। কেননা আমি শাস্তি পাইলে আমার ভালোবাসার মানুষটার যে বড্ড তৃপ্তি হবে। তার থেকে ভালোবাসা না পাই, তার থেকে পাওয়া শাস্তি তো আমি পেয়েছি। এইটাই আমার জীবনের স্বার্থকতা। ‘
সানার কথাটি গভীরভাবে দাগ কাটে সায়েদের মন বেশ গভীরভাবে দাগ কাটে। সানার নেত্রকোণে জমে থাকা জলটুকু স্পষ্ট বলে দিচ্ছে তা ভিতরে থাকা গভীর অভিমানে ভরা ক্ষতগুলো। সায়েদ কিছুক্ষন চুপ থেকে পরক্ষনে বলে,
‘ যে আপনার অভিমানের মূল্য দিতে পারে না, তার প্রতি মনের অন্তরালে অভিমান পুষে রাখা মানে, নিজের অনুভুতির অপমান করা। ‘
সায়েদের কথায় সানা নিষ্প্রান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সায়েদ বেড়িয়ে যায় । সানা ধপ করে নীচে বসে পরে। ভাবতে থাকে তার জীবনের গতি নিয়ে।

রিমিকে ওহাইয়াট এবং গোল্ড মিশ্রিত ডায়মন্ড সেটের গয়নায় সাঁজানো হয়েছে। পড়নে লেহেংগা। লেহেংগাটা গোলাপি গাউনের।
নেট এর উপর পাথর এবং পুথির কারচুপির সম্পুর্ন কাজ। সবমিলিয়ে অন্যান্য লাগছে রিমিকে। নববধূ রিমিকে ধীরে ধীরে ইশা এবং মেঘ গাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়। ইশা রিমিকে বার বার খুচিয়ে বলে যাচ্ছে,
‘ আজকে আমার বন্ধু নিশ্চিত হার্ট ফ্রেল করবে। কি বলো মেঘ? ‘
মেঘ শুধু হাসে। উত্তর দেয় না। তার মনে অন্য এক চিন্তা বিরাজমান। আমান তো আজকে চলে যাবে। তার সাথে শেষবারের মতোও দেখা হবে না মেঘের?

রিমিদের গাড়ি একটি বিরাট পার্টি সেন্টারের সামনে থামে। প্রথমে ইশা এবং মেঘ নেমে যায়। রিমি নেমে যাওয়ার পূর্বে সমস্ত প্রেস -মিডিয়া একপ্রকার ঝাপিয়ে পড়ে। গার্ডরা কোনরকম সামলায় শুধু। একটি ফুলের রাস্তা দিয়ে অয়ন ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে এগিয়ে আসে রিমির দিকে। রিমি এক মুহুর্তের জন্যে থমকে যায় তার ডক্টর এয়ারসিকে দেখে। বরের বেশে গোল্ডেন শেরওয়ানী পরে, তোলয়ার হাত নেমে যায় অয়ন গাড়ি থেকে। অতঃপর রিমির হাত ধরে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। চারদিকে আতশবাজি ফুটতে শুরু হয়ে যায়। আকাশে বড় বড় অক্ষরে লেখা উঠে,
‘ রিয়ন। ‘

অয়ন রিমিকে হাত ধরে বিয়ের আসরে বসিয়ে দেয়। অতঃপর নিজেও বসে পড়ে। দুজনের সামনে বিরাট এক পর্দা টানানো হয়। কাজি সাহেব প্রথমে অয়নকে বলে কবুল বলতে কিন্তু তখনি রুহানা চৌধুরী।

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৯

( স্কুল একদম পুরাদমে শুরু হয়ে গেছে। ?স্কুল কোচিং সবমিলিয়ে এক করুন অবস্হা আমার। তাড়াতাড়ি ইতি টেনে দিবো ইনশা-আল্লাহ। সবাই জানাবেন কেমন হয়েছেন]

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫১

1 COMMENT

Comments are closed.