তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৬১

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৬১
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

পুরুষালি শক্ত হাতজোড়া রিমির পিঠে ঠেকিয়ে,নিজ বক্ষে দ্রুত টেনে নিলো অয়ন। রিমির নেত্রপল্লব জোড়া উন্মুক্ত হলো সঙ্গে সঙ্গে। অয়নের বক্ষস্হলে ঠায় পেয়ে যেমন চমকে উঠেছে রিমি, তেমনি খুশিতে আবেগপ্লুত হয়ে অয়নের শার্ট হাতের মুঠোয় নিয়ে, শক্ত করে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে।রিমির কার্যকলাপ দেখে বিস্তর হাসলো অয়ন। রিমি নাক টেনে টেনে বললো, ‘ আপনি যান নি ডক্টর এয়ারসি?’
অয়ন অনড়ভাবে রিমিকে নিজ বক্ষে শক্ত করে ধরলো। অতঃপর আফসোসের সুরে বললো,
‘ আমার পরী এইদিকে কেঁদেকেটে শেষ! আমি কি করে যাই বলো তো? আচ্ছা আমার পরী তো ছিচকাদুনি ছিলো না। অনেক স্ট্রং আমার পরী,তাহলে এতো ছিচকাদুনি কীভাবে হয়ে গেলো?
আচ্ছা এই ছিচকাদুনিকে রেখে সেই সদূর বিদেশ পথ পারি দিবো কীভাবে আমি? ‘
রিমি কিছুটা ঠোট উল্টিয়ে অয়নের বুকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে,

‘ আমি ছিচকাদুনি? ‘
‘ তাহলে একটুও কাঁদবে না, কথা দাও। আমি যখন ফিরে আসবো, তখন আমার বক্ষে মাথা রেখে কেঁদে কেঁদে বন্যা বানিয়ে দিও, আমি বসে বসে তোমার কান্না দেখবো। ‘
রিমি ফিক করে হেঁসে দেয়। অয়ন পুনরায় ঝুঁকে রিমির পেটে আলতো করে কান পাতে,অতঃপর ধীর কন্ঠে বলে,
‘ মাই লিটেল চ্যাম্প! ডোন্ট বি আপসেট ওকে? পাপা ইউল কাম বেক সোন। তোমার মাম্মামের খেয়াল রেখো, কেমন? ‘
কথাটি বলতে বলতে অয়নের নেত্রকোণা বেয়ে,জল গড়িয়ে পড়লো। রিমিও ঝুঁকে অয়নের আখিজোড়ায় লেগে থাকা অশ্রু মুছে ফেলে। কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে,
‘ আই লাভ ইউ আ লট ডক্টর এয়ারসি। ‘
অয়ন রিমির গালে আলতো করে চুমু দিয়ে, শীতল কন্ঠে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ লাভ ইউ মোর দেন ইউ। ‘
রিমি এবং অয়ন কিছুক্ষন মুগ্ধ হয়ে একে অপরের আখিজোড়ার দিকে তাকিয়ে থাকে,যেন কত যুগের তৃষ্ণা নিবারণ করছে। গাড়ির হর্ণে দুজনের হুশ ফিরে আসে। গাড়ি থেকে ইশা বেড়িয়ে এসে,কিছুটা মুচকি হেসে বলে,
‘ তোদের প্রেম শেষ হলে, এখন যাওয়া যাক? ‘
ইশার কথায় অয়ন রিমিকে পুনরায় বক্ষে জড়িয়ে নেয় গভীরভাবে। ললাটে একেঁ দেয়, ভালোবাসার গভীর স্পর্শ। অতঃপর আদুরে কন্ঠে বলে,
‘ আমাকে হাসিমুখে বিদায় দিবে, একদম কাঁদবে না তুমি। তুমি কী জানো না? তোমার আখিজোড়ার কোণে লেপ্টে থাকা কাজল কতটা দামী আমার কাছে। ‘
রিমি ও স্মিত হেসে মাথা নাড়িয়ে সে কাঁদবে না আর।
অয়ন রিমির গালে হাত রেখে, ভরসার সাথে বলে,

‘ আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো, আমার লিটেল চ্যাম্প এবং নিজের খেয়াল রাখবে,জাস্ট কয়েকটা বছর, তারপর তো আজীবনের জন্যে সব দায়িত্ব আমার আর হ্যা তোমার মোহনীয় আখিজোড়ায় একদম কাজল দিবে না রিমিপরী। তোমাকে কাজল দিলে বড্ড সুন্দর লাগে, আমি যখন ফিরবো তখন পরবে,তোমার কাজলে কালো আখিজোড়া শুধুমাত্র আমি দেখবো। আর হ্যা নিজের স্বপ্ন থেকে কখনো বিচ্যুত হবেনা রিমিপরী, আমি আমার রিমিপরীকে একজন সফল ডক্টর হিসেবে দেখতে চাই।’
রিমি মাথা নিচু করে, লাজুক হেসে মাথা নাড়ায়।
‘ আল্লাহ হাফেজ, আসছি। ‘

কথাটি বলে অয়ন চলে যেতে নিলে, পিছন থেকে অয়নের হাতজোড়া শক্ত করে ধরে রাখে রিমি। অয়নের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে, নিজের কপালে ঠেকিয়ে বলে,
‘ যতদিন আপনি ফিরবেন না,ততদিন আমি এবং আপনার লিটেল চ্যাম্প আপনার জন্যে অপেক্ষা করবো এবং আমাদের সকল সুখকর স্মৃতিকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখবো ডক্টর এয়ারসি এবং সেই উপন্যাসের প্রতিটা পাতায় কেন্দ্রবিন্দু শুধুমাত্র আপনি হবেন।’
রিমির কথার বিপরীতে অয়ন চমৎকার হাসি উপহার দিয়ে বললো,
‘ বেশ কিন্তু সেই উপন্যাসের সপ্তাপ্তি ঘটবে আমাদের দীর্ঘ অপেক্ষৃত সুখকর এক মিলনে। ‘
‘ আমি অপেক্ষায় থাকবো ডক্টর এয়ারসি। ‘
রিমির কথার মাঝে ইশা অয়নের কাছে এসে তাড়া দিয়ে বললো,
‘ এখন কিন্তু আমাদের যেতেই হবে অয়ন। অনেক লেট হচ্ছে। উই হেভ টু গো নাও। ‘
‘ ওকে লেটস গো। ‘

অয়ন রিমিকে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায়, রিমিও হাত উঁচু করে অয়নকে হাসিমুখে বিদায় জানায়। ইশাও রিমিকে নিশ্চয়তা দেয় অয়ন সম্পূর্ন হয়ে ফিরে আসবে। অয়ন এবং ইশা গাড়িতে উঠে পড়ে। রিমি এইবার কাঁদেনা এবং হাসিমুখে অয়নকে বিদায় দেয় এবং অপেক্ষাকৃত এক প্রেমিকের ন্যায় তার প্রেমিকের পথপানে চেয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।এই অপেক্ষার সমাপ্তি কোথায় রিমি জানে না, কিন্তু তাকে শক্ত থাকতে হবে। তাদের সন্তানের এবং তার
গুরুদায়িত্ব অয়ন রিমিকে অর্পন করেছে, তা রিমিকে পালন করতে হবে।

ধরনীকে ভিজিয়ে বৃষ্টিগুলো মেঘের আনন্ত্রনকে নাখোচ করে হুট করে অদৃশ্য হয়ে গেলো। মেঘের আড়াল থেকে সূর্য বেড়িয়ে এসে ক্ষীন্ন মিষ্টি আলো ছড়াতে লাগলো, চারদিকে। গোধূলীর বেলা পড়ে গেছে। রিমি গোধূলীর বেলার দিকে তাকিয়ে আনমনে বললো,
‘ গোধূলীর রঙ্গে নতুন এক ভোরের সূচনা হোক, আমাদের ক্ষনিকের বিচ্ছেদের সমাপ্তি ঘটুক খুব শীগ্রয়। ‘
রিমি তার পেটে আলতো করে হাত রেখে নিজের সন্তানকে অনুভব করতে লাগলো। মনে মনে আল্লাহর কাছে চাইলো, আল্লাহ যেন তাকে শক্তি দেন। আল্লাহর কাছে এই কঠিন পরিস্হিতিতে আশ্রয় নিবেদন করলো।
নরম ঘামের উপর পা রেখে হেটে চললো রিমি। অনেকটা পথ তাকে এইবার একাই হাটতে হবে। রিমি হুট করে দেখতে পেলো, আকাশে বিমান তার নিজ গন্তব্যে পাড়ি জমাচ্ছে। রিমি আকাশের দিকে তাকিয়ে অয়নকে বিদায় জানালো। নেত্রপল্লবে জল চলে এলেও,তা মাটিতে গড়াতে দিলো না,তার আগেই মুছে নিলো সযত্নে। মুখে টেনে রাখলো তার উজ্জ্বল হাসি।

রাতে অয়নের ছবি নিজের টেবিলের পাশে রেখে, রিমি একটা কলম এবং ডাইরি বের করলো এবং লিখতে শুরু করলো সেই দীর্ঘমেয়াদি উপন্যাস। যেই উপন্যাসের সমাপ্তি কোথায় রিমি নিজেও জানে না।

মেঘ মন খারাপ করে বসে আছে ড্রইং রুমে। অয়ন চলে গেলো, রিমিও কেমন একটা মনমরা হয়ে গিয়েছে। বাড়ির সবাইও উদাস হয়ে আছে। মেঘ নিজেও মন খারাপ করে বসে আছে। এমনিতেই বাবা-মায়ের এবং ভাইয়ের কৃর্তিকলাপ সম্পর্কে জেনে, নিজের উপর নিজের রাগ হয় তার। তার বাবা-মায়ের জন্যেই তো আজ অয়নের এমন করুণ অবস্হা। আশরাফ এবং রুজা অনেকবার মেঘের সাথে দেখা করতে চেয়েছে, কিন্তু মেঘ দেখা করেনি একবারও। মেঘের মনে হলো অনেকদিন ধরে, বাগানে যাওয়া হয় না। তাই মেঘ পা বাড়িয়ে রাতের আধারে বাগানে গেলো। তখনি আমানের ফোন এলো ভিডিও কলে। মেঘ তা দেখে দ্রুত রিসিভ করলো এবং সঙ্গে সঙ্গে ফোনের অপাশ থেকে আমান মেঘকে ডেকে বললো,
‘ মেঘ তোমার চেহারাটা এমন লাগছে কেন? তুমি কি কেঁদেছো কোন কারণে? ‘
মেঘ দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলে,
‘ না, আসলে। ‘

‘ বন্ধু বলে যখন ডেকেছো, তখন বন্ধুর সাথে সব শেয়ার করতে পারো। ‘
আমানের নিঃসংকচ কথা। মেঘ স্মিত হেসে দিলো। মানুষটা তাকে অনেকভাবে পাশে থেকেছে। মানুষিকভাবে নিজেকে সুস্হ রাখার বেশ চমৎকার উপায় জানে আমান।মেঘ বললো,
‘ আসলে আজকে অয়ন ভাইয়া মালেশিয়া চলে গেলো, তাই হঠাৎ খারাপ লাগছে অনেক, রিমিপু বলেছে ভাইয়ার যখন অপেক্ষা করবে। ‘
আমান কিছুক্ষন চুপ থেকে চোখে থাকা চশমার ফ্রেমটা সরিয়ে বললো,
‘ ভালোবাসার মানুষের জন্যে নির্ধাদ্বায় অপেক্ষা করা যায়, একটা কথা কি জানো? অপেক্ষার ফল কিন্তু মিষ্টি। ‘,
‘ তাহলে আমান সাহেব, আমাকেও তাহলে এখন থেকে আপনার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে,যদি কোনদিন আপনার মতো নির্দয় ব্যক্তির পাষন্ড হৃদয়,এই বাচ্চা মেঘের জন্যে গলে যায়। ‘
আমান মেঘের কথা শুনে ফিক করে হেঁসে উঠে উচ্চস্বরে। মেঘ আমানের সেই নির্মল সুন্দর হাসির দিকে তাকিয়ে, নিজেও হেসে দেয়।

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৬০

সময়ের গতির সাথে তাল মিলিয়ে, রিমি এখন ৮মাসের গর্ভবতী। সময়ের সাথে অনেককিছু পরিবর্তন হলেও, রিমি প্রতিটা রাত জানালার ধারে গিয়ে বসে, ডাইরি নিয়ে বসে, অয়নের প্রতিক্ষায় লিখে ফেলে কয়েক পাতা। অয়নের কথামতো রিমি তার পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও কলেজে যেতে পারেনা, তাই বাসাতেই নিজের পড়াটুকু শেষ করার চেষ্টা করে। একদিন রিমি সিড়ি বেয়ে উপরে যাচ্ছিলো, হুট করে তার পেটে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলো। রিমির অবস্হা বেগতিক দেখে….

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৬২

1 COMMENT

  1. Next part ta aktu taratare diyen apu onk opekkhay thaki golpo tar ar onk sundor apner golpo ta tnx amader ato sundor golpo deoyar jonno???

Comments are closed.