তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ২৫

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ২৫
Lutful Mehijabin (লেখা)

হঠাৎ ইয়াদ তার চোখ জোড়া বড় বড় করে অস্ফুটস্বরে ব্যথ্যতুর আওয়াজ নির্গত করল। লহমায় মাথার চুল গুলো মুঠো বন্দি করে বেলকনি থেকে প্রস্হান করল। অঃপর সে দ্রত বিছানায় গিয়ে উষ্ণ চাদর গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে জারা বেলকনি হতে রুমে চলে এলো। এই পরিস্হিতে তার কি করা উচিত কিছু্ই বুঝে উঠতে পারছে না সে। শুধু মাএ ধারণা করল শীতল পরিবেশের প্রভাবে হয়তো মাথা ব্যথা করছে ইয়াদের। তাই বিষয়টা বেশি গুরুত্ব না দিয়ে জারা। বিছানার এক কণে শুয়ে পড়ল সে। আর মনে মনে ভাবতে লাগল, তার আর্মি পুরূষের ও মাথায় যন্ত্রণা হয়!

কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল। খানিক পূর্বে সূর্যি মামা তার অস্তিত্ব জানান দিতে সক্ষম হয়েছে। ধীরে ধীরে কুয়াশার চাদর বিদায় নিচ্ছে প্রকৃতি থেকে। ঘরির কাটাতে ছুঁই ছুঁই আটটা। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল মেহের। বর্তমানে জানালার স্বচ্ছ কাঁচ ভেদ করে একরাশ মিষ্টি আলোক রশ্মি প্রতিফলিত হয়েছে তার তৈলাক্ত মুখশ্রীতে। ফলে স্বল্প বিরক্তি স্পষ্ট ফুটে উঠেছে মেহেরের ঘুমন্ত মুখশ্রীতে। এতে করে একপর্যায়ে মেহের আর ঘুমিয়ে থাকতে পারল না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ক্লান্তি মাখা ঘুমের সঙ্গে লড়াই পিটপিট করে নেএপল্লব উন্মক্ত করল। আজ তার বড্ড কষ্ট হচ্ছে চোখ মেলা দৃষ্টি উন্মুক্ত করতে। চোখ যুগলে আঠালো ভাবটা স্পষ্ট! অতঃপর চোখ মুখ কুঁচকে নিয়ে সাটান হয়ে বসে পড়ল মেহের। তার মাথায় চিনচিন ব্যথা করছে। শরীরে একরাশ দুর্বলতার আগমন ঘটেছে। মনে হচ্ছে বিছানা থেকে নামলে মাথা ঘুরে ফ্লোরে পড়ে যাবে।

প্রায় মিনিট পাঁচেক অতিক্রম হতে মেহের দৃষ্টিপাত ফেলল দেয়াল ঘরির কাটাতে। কতোই না দেরি করে ঘুম ভেঙেছে তার! ইশ আজকে সালাত আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে সে। তৎক্ষণাৎ মেহেরের অন্তরালে বিষণ্ণতার আবির্ভাব ঘটেছে। ফলে তীব্রভাবে তার হৃদয়মনে ব্যথা করে উঠছে। আজ অনেক দিন পর সে ভোর রাতে জাগ্রত হতে ব্যর্থ হয়েছে। বিষয়টা মেহেরের মস্তিষ্ক ভরে ঘৃণার উৎপত্তি ঘটাতে সক্ষম হলো। পরক্ষণেই বিছানা ত্যাগ করে ধীর পায়ে ওয়াশরুমে দিকে ধাবিত হলো সে। চটজলদি ফ্রেশ হয়ে স্কুল ড্রেস পড়ে নিল। তার মাথাটা ভারী হয়ে আসছে। কিন্তু মেহের ব্যাপারটা গুরুত্ব দিল না। দুর্বল শরীর নিয়ে ধীর পায়ে ধাবিত হলো ড্রইং রুমের দিকে।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি বিলাস করতে ব্যস্ত সমুদ্র। আকাশ পানে দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করে বারংবার অধরে চায়ের উষ্ণ ছোঁয়া দিচ্ছে সে। এই অভ্যাস বরাবরের মতোই তার মধ্যে বিদ্যমান। প্রতিদিন সকালে চায়ের সঙ্গে প্রকৃতি বিলাস তার রক্তের সাথে মিশে গিয়েছে। অভ্যাসটা তার হৃদয়মনে আনন্দের উৎপত্তি ঘটায়। মস্তিষ্কে ভেসে উঠে ছেলে বেলার স্মৃতি।

সমুদ্রের ছোট বেলাটা গ্রামে অতিবাহিত হয়েছে। তার বয়স যখন দশ, তখন তাকে ছেলে বেলার স্মৃতি মাখা গ্রাম ত্যাগ করতে হয়। তারপর থেকেই তারা সপরিবারে শহরে এসে পড়ে। খুব একটা ছোট্ট থাকলেও সেই সুমধুর স্মৃতি গুলো তার মস্তিষ্ক থেকে বিদায় নেয় নি। এখনো বেলকনিতে সকাল বেলা এক কাপ চায়ের সঙ্গে উপস্থিত হলে তার সেই স্মৃতি গুলো চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে উঠে।

মনে পড়ে যায় ঘুম থেকে উঠে কুয়াশাচ্ছন্ন শীতল সকালে কল পাড় হতে কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে কাঁপতে কাঁপতে রান্নাঘরে যাওয়া ঘটনা। মায়ের আঁচলে মুখ মুছে উষ্ণ উনুনের তাপ পোহানো। মনে পড়ে যাই, মায়ের দিকে দৃষ্টিপাত ফেলে চায়ে উষ্ণ ছোঁয়াতে জিহ্বা পুড়িয়ে ফেলার স্মৃতিচারণ মুহূর্ত। মূলত এই বিশেষ কারনে সমুদ্রের চা খুব বেশি পছন্দের। আর যাই হোক সকালটা তার চায়ের সঙ্গেই কাটাতে হবে। লহমায় মায়ের কথা মনে করে সমুদ্রের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠেছে।

কিন্তু পরক্ষণে রান্না ঘর হতে পানি বিন্দু বিন্দু জলের কলকল ধ্বনি তার কর্ণকুহরে পৌঁছতেই সমুদ্র সজাগ হয়ে উঠল। তৎক্ষণাৎ বেলকনি প্রস্থান করল সে। দ্রুত পদে পা জোড়া চলমান করল ড্রইং রুমের উদ্দেশ্য।
ড্রইং রুমে উপস্থিত হতেই সমুদ্রের অন্তারালে ক্রোধ নামক অনুভূতি আবির্ভাব ঘটল। অধিক রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে এসেছে।

আচ্ছা মতো থাপ্পড়াতে ইচ্ছে করছে মেহেরকে। মেয়েটা কতো বড় স্পর্ধা? এমন শরীর নিয়ে রান্নাঘরে উপস্থিত হয়েছে! কাল সারা দিন জ্বরের ঘোরে বমি করে অস্থির ছিল। সে আজই কাজ করতে রান্নাঘরে এসেছে। সমুদ্র একপর্যায়ে রাগ নিয়ন্ত্রণের প্রয়াসে ব্যর্থ হলো। অবশেষে ধীরে পায়ে রান্নাঘরের এক কোণে এসে দাঁড়াল। লহমায় দাঁতে দাঁত চেপে কর্কশ গলায় ধমকের স্বরে বলে,

–এই মেয়ে সাহস তো কম না তোমার? ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই রান্নাঘরে এসে পড়েছ? আমি কী তোমাকে রান্না করতে বলেছি?
থালা বাসন পরিস্কার করতে ব্যস্ত ছিল মেহের। হঠাৎ কাজের মাঝে সমুদ্রের ভয়ঙ্কর কন্ঠস্বর কর্ণপাত হতেই সে হাত থেকে দ্রুত থালা রেখে দিয়ে সমুদ্রের দিকে ঘুরে দাঁড়াল। একপলক সমুদ্রের দিকে দৃষ্টিপাত ফেলতেই তার বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে ফ্লোরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল সে।

তৎক্ষণাৎ সমুদ্রের দৃষ্টি পড়ল মেহেরের পাণ্ডর মুখশ্রীতে। জ্বরের সঙ্গে লড়াই করে মেয়েটার মুখ ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করেছে! মুহূর্তেই রাগ যেন আষ্টেপিষ্টে চেপে বসল সমুদ্রের মস্তিষ্ক জুড়ে। ফির সমুদ্র মেহেরের মুখশ্রীতে কঠোর দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করল। অতঃপর কর্কশ কন্ঠে বলে উঠল,

–আর ইউ স্টুপিড! তুমি কী কিছু বুঝ না, হুম? এই যে কাল সারাদিন আমার সময় ওয়েস্ট করেও তোমার শান্তি হয় নি? কালকে তো হাত দিয়ে খাবারটাও খেতে পারলে না। আর আজকেই একটু সুস্থ হতেই রান্না ঘরে চলে এলে? আশ্চর্য!
সমুদ্রের বলা বাক্যগুলো শুনে লজ্জিত হলো মেহের। ইশ, কালকে তো তার জ্ঞানই ছিল না। নিশ্চয়ই লোকটার বড্ড কষ্ট হয়েছে তার অসুস্থতার জন্য। বিষয়টা ভেবে একরাশ শীতল অনুভূতি বইয়ে গেল তার হৃদয়মনে। সমুদ্রের বকুনি তিক্ত হলেও তার হৃদয়ে অনন্দের উদ্ভাবন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। পুনরায় মেহেরের কর্ণপাত হলো সমুদ্র কন্ঠস্বর। এবার সমুদ্র মেহেরের কিছুটা নিকটবর্তী এসে বলে উঠল,

–এই মেয়ে চুপ করে আছো কেন? কান খুলে শুনে রাখো আবার যদি অসুস্থ হও তাহলে তোমাকে আমি চুপচাপ তুলে নিয়ে নদীতে ফেলে দিয়ে আসব। আন্ডারইস্টান্ড?
সমুদ্র কথা শুনে অপরাধীর ন্যায় ফ্লোরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে রইল মেহের। সমুদ্র এতো বকা শুনেও তার হৃদয়ে ব্যথার আগমন ঘটল না। অনুভূতিহীন নির্বাক হয়ে রইল সে। সমুদ্রের ফির মেহেরের মলিন মুখশ্রীতে তাকিয়ে বলে উঠল,

–এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও চুপচাপ চেয়ারে গিয়ে বসো।
সমুদ্রের বলা বাক্যের প্রত্যুত্তরে নিম্ন কন্ঠে মেহের বলে উঠল,
–এইতো নাস্তাটা সার্ভ করে তারপর নাহয়,,,

মেহেরের সম্পূর্ণ কথা সমাপ্ত করতে দিল না সমুদ্র। কথার মাঝেই দাঁতে দাঁত চেপে মেহেরের উদ্দেশ্য বলল,
–বাহ্, এতোই কাজ করতে মন চাই তোমার! চিন্তা কর না, পড়ালেখার যে অবস্থা করে রেখেছ কয়দিন বাদে তোমাকে গৃহকর্মী হিসেবে অন্যের বাড়ি কাজ করতে হবে।

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ২৪

সমুদ্রের বলা শেষোক্ত বাক্যটা শুনেই মেহের মনটা বিষণ্ণ হয়ে উঠল। কখনোই তাকে পড়ালেখার খোটা কেউ দেই নি। বরাবর সে তার মেধা দিয়ে শিক্ষকদের মনে স্থান করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু পৃথিবীতে একমাত্র সমুদ্র নামক শিক্ষক তাকে না জেনেই পড়ালেখার জন্য বাজে ভাবে কথা বলে। শুধুমাত্র একটা দিন ক্লাসে পড়া দিতে পারেনি সে।তার উপর ভিত্তি করেই সমুদ্র তাকে উপেক্ষার পাত্রীর ন্যায় আচরণ করে। খানিক মন খারাপ হলেও বিষয়টা সাদরে গ্রহণ করল মেহের। চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো চেয়ার টেনে বসে পড়ল।

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ২৬