তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩৫

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩৫
Lutful Mehijabin (লেখা)

অশ্রু সিক্ত নয়নে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রয়েছে মেহের। মনে হচ্ছে এই বুঝি তার চোখের কোণ বেঁয়ে কয়েক ফোঁটা দুর্বোধ্য রহস্য টপটপ করে ঝড়ে পড়বে! প্রায় মিনিট পাঁচেক ছলছল নয়নে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো মেহের। তখনো অবধি সাকিলা সমুদ্রের বাহু ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো। সমুদ্র স্তব্ধ হয়ে নিরবতা পালন করছে। অতঃপর নিরবতা ভেঙে ফেলল মেহের। ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির উপস্থিতির সাথে ভদ্রতার সহিত বলে উঠলো,

–আপনার ফোন! এই নিন।
তৎক্ষণাৎ সাকিলার হাত ছাড়িয়ে দূরে সরে এলো সমুদ্র। এতোক্ষণ মেহেরের মাঝে ডুবে ছিল সে। তার কমপক্ষ সেকেন্ড ষাট এক সময় লেগেছে মেহেরের উপস্থিতি উপলব্ধি করতে ! প্রথমত সে ভেবেছিল এ বুঝি তার কল্পনার অদৃশ্য মেহের। যে মেহেরের সঙ্গে কল্পনার রাজ্যে সমুদ্র হাজারো স্মৃতি মাখা সুমধুর মুহূর্ত কাঁটায় ! যার উপস্থিতি উপলব্ধি করা যায় না, যাকে ধরা ছোঁয়া যায় না। সেই অদৃশ্য মেহের তার নিকট বড্ড বেশি ভয়ঙ্কর! বাস্তবে মেহের তার সঙ্গে মন খুলে কথা বলে না কিন্তু এই অদৃশ্য মেহের তাকে প্রচন্ড জ্বালিয়ে মারে। সময়ে অসময়ে হাজির হয়ে যায় তার সামনে। বিষয়টা ভীষণ লজ্জাজনক সমুদ্রের কাছে!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সমুদ্র এই পরিস্থিতিতে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। যখন তার চোখ যুগল মেহেরের চোখে আবদ্ধ হয়েছে ঠিক তখনই তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতে আরম্ভ করছে। তার পুচকির ডাগর ডাগর চোখ জোড়ার অদৃশ্য ভাষা পড়তে সক্ষম হয়েছে সমুদ্র। মেহেরের চোখ জোড়াতে স্পষ্ট অভিমান ফুটে উঠেছে। এ যেন সামন্য অভিমান নয় বটে পাহাড় সমান সীমাহীন অভিমান! মেহেরের চাপা কষ্ট বুঝতে পেরে সমুদ্র নিশ্চুপ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

মেহের এমন অস্থির হয়ে উঠেছে তাদের সামনে থেকে চলে যাবার জন্যে। কিন্তু সমুদ্র যেন‌ ইচ্ছে করে তাকে দ্বিগুণ কষ্ট দিচ্ছে। সে মেহেরের কাছে থেকে ফোনটা নেয়নি। বর্তমানে মাথা নিচু করে সমুদ্রের ফোনটা শক্ত করে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মেহের। সমুদ্র ফোনটা সাক্ষী হিসেবে নিঃসন্দেহে বলে দিচ্ছে মেহের কাঁপছে। ফোনটা হাতে করে থরথর করে কাঁপছে!

সাকিলা মেহেরকে চিনতে ব্যর্থ। বর্তমানে তার অন্তরালে রাগের আবির্ভাব ঘটেছে। খুবই বিরক্ত সে মেহেরের উপর। মেহেরের আচমকা উপস্থিতির জন্য তার বিশেষ মুহূর্তটা নষ্ট হয়ে গেল। মনের কথা বাকি রয়ে গেল যে। বিরক্তিতে সাকিলার চোখে মুখে গম্ভীরতা ফুটে উঠেছে। স্তব্ধ হয়ে মেহেরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অতঃপর মেহেরকে এখন থেকে চলে যাবার জন্যে আদেশ করবে বলে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো সে। সমুদ্র দিকে একপকল তাকিয়ে ফির মেহেরের মুখশ্রীতে দৃষ্টিপাত আবদ্ধ করল। ঠোঁট জোড়া সংকুচিত করার পূর্বে লক্ষ্য করল ,সমুদ্র হঠাৎ মেহেরের হাত আবদ্ধ করে নিয়েছে নিজের হাতের‌ মুঠোতে। সমুদ্র মেহেরের হাত ধরে সাকিলার উদ্দেশ্যে বলল,

— ইউ হেভ গুট এ সারপ্রাইজ। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।
কথাগুলো বলেই মেহের কে নিয়ে হাঁটতে লাগলো সমুদ্র। আচমকা সমুদ্রের স্পর্শ পেয়ে ভরকে উঠেছে মেহের। সাকিলার বলা বাকগুলো এখনো অবধি মেহেরের কর্ণকুহরে প্রতিধ্বনি তুলছে। তার ছোট হৃদয় গহীনে বিষয়টা ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। এতে তার মস্তিষ্ক খানিকের জন্যে কর্ম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে।

মেহেরকে ধরফরিয়ে ছাদে নিয়ে এসেছে সমুদ্র। ছাদের এক কোণে এনে মেহেরকে ধরে রেখেছে সে। এখনো অবধি মেহেরের হাত জোড়া সমুদ্র আবদ্ধ করে রেখেছে। বর্তমানে গম্ভীর দৃষ্টিতে মেহেরের মুখশ্রীতে তাকিয়ে রয়েছে সমুদ্র। মেহের বারংবারের মতো সমুদ্রের সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে। চোখ জোড়া বন্ধ থাকা সত্ত্বেও মেয়েটার নেত্র পল্লব অতিরিক্ত হারে কাঁপছে। অবশেষে স্বল্প সময় নিশ্চুপ থেকে সমুদ্র মেহেরের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,

–চোখ খুলো মেহের। লুক এট মি!
শেষোক্ত বাক্যটা একটু জোর দিয়ে বলল সমুদ্র। ফলে সঙ্গে সঙ্গে মেহের চোখ যুগল উন্মুক্ত করে ফেলল। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার প্রয়াসে ব্যস্ত হয়ে উঠলো সে। ঠোঁট জোড়া একবার জিহ্বা দ্বারা ভিজিয়ে নিলো। মুচকি হেসে অস্ফুট স্বরে মিনমিন কন্ঠে সমুদ্রকে বলল,

–আমাকে এখানে আনলে যে,কোন দরকার? ওই ম্যামটা তো আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে। আপনি বরং যান।
মেহেরের বলা কথাগুলো কর্ণপাত হতেই সমুদ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। মেয়েটার কন্ঠস্বর অতিরিক্ত হারে কাঁপছে! এককথাই বয়স্ক লোকের কন্ঠের ন্যায় কাঁপছে। মেহেরের পরিস্থিতি লক্ষ্য করে সমুদ্র তপ্ত শ্বাস ত্যাগ করল। তার মস্তিষ্ক ভীষণ গরম হয়ে উঠেছে। একপর্যায়ে মস্তিষ্ক শীতল করার প্রয়াসে জড়ে জড়ে নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে লাগল সে। তৎক্ষণাৎ হঠাৎ মেহেরের উদ্দেশ্যে কটমট করে বলে উঠলো,

–ওই মেয়েটা আমাকে যা বলেছে, সেসব কথা কী তুমি শুনেছ?
সমুদ্রের কথা শুনতেই মেহেরের মুখ পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ ফ্যাকাসে রূপ ধারণ করে উঠলো। সে কিছু না বলে শুকনো ঢোক গিলে চুপ করে রইলো। মেহেরের উত্তর না পেয়ে সমুদ্র পুনরায় কর্কশ গলায় বলে উঠলো,
–আনস্যার মি মেহের?

সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠলো মেহের। মুহূর্তেই ভয়ের আবির্ভাব ঘটল তার অন্তরালে! ঠোঁটের কোণে জোর করে হাসির রেখে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করল। এ কর্মে খানিকটা সফল হলো সে। কম্পনিত স্বরে কান্না রত কন্ঠে বলল,
–হুম।

মেহেরের হ্যাঁ বোধক জবাব পেয়ে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করল সমুদ্র। অতঃপর গভীর দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করল মেহেরের অভিমান মাখা মুখশ্রীতে। আচ্ছা মেয়েটা এমন‌ কেন? নিজের কষ্ট কী কেউ এভাবে চেপে রাখতে পারে? সত্যি এই ছোট মেয়েটার তুলনা হয় না। মেয়েটা নিজের কষ্ট লুকিয়ে রাখার আপ্রাণ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে উঠেছে। বরাবরের মতো একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর ন্যায় নিজের কষ্ট বুকের ভেতর জমিয়ে রাখতে চেষ্টা করছে।

কিন্তু আজ মেহের ব্যর্থ। সমুদ্রের চোখ ফাঁকি দিতে ব্যর্থ হয়েছে সে। সমুদ্র ঠিকিই বুঝে নিয়েছে মেহেরের মুচকি হাসির পিছে লুকিয়ে থাকা একরাশ রহস্য। একেই হয়তো অদ্ভুত অনুভূতির অদৃশ্য আকর্ষণ বল বলে। এই সৃষ্টি জগতের প্রতিটি বস্তু যেমন নিজের ভরের কারণে একে অপরের প্রতি মহাকর্ষ বল দ্বারা আকর্ষিত হচ্ছে ঠিক তেমনি তুমি নামক এক অদ্ভুত অনুভূতির অদৃশ্য বলের ফলে সমুদ্র মেহেরের হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা একরাশ অভিযোগ কে আকর্ষিত করতে পেরেছে। সমুদ্র সন্ধান পেয়েছে তার পুচকির মনে লুকিয়ে থাকা গোপন বক্তব্য। মেহেরের চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুচকি হেসে উঠলো সমুদ্র। তৎক্ষণাৎ মেহেরের খানিকটা নিকটবর্তী এগিয়ে এলো। কন্ঠ স্বরে মলিনতা বজায় ফিসফিস করে বলল,

— আমার পুচকিটার অভিমান হয়েছে বুঝি?
জীবনের প্রথম সিরাত বেগম ব্যাতিত অন্য কারো মুখে স্নেহ মাখা বাক্য শুনে দু হাতের আঙুল দ্বারা নিজের সম্পূর্ণ মুখ ঢেকে নিলো মেহের। মুহূর্তেই মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সে।একেই বুঝি নারী জাতি বলে! নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে অন্য কারো সঙ্গে সহ্য করতে পারে না তারা।

জীবনে হাজারো যুদ্ধ অতিক্রম করে মুখ বুজে সহ্য করে যাবে। কিন্তু নিজের স্বামীকে অন্য কারো সঙ্গে ভাগ করার ধৈর্য ক্ষমতা তাদের নেই। লোকে বলে পৃথিবীতে নাকি নারীর জাতির ধৈর্য্য ক্ষমতা বেশি। তারা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ধৈর্য ধারণ করতে পারে। এককথাই বললে নারী জাতির সবচেয়ে বিশেষ একটি গুণ হচ্ছে ধৈর্য শক্তি। সবক্ষেত্রে তারা ধৈর্য ধারণ করতে পারলেও নিজের স্বামীকে পরনারীর ছায়াটাও সহ্য করতে পারে না।

ঠিক তখনই বোধহয় নারীরা নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। এক মুহুর্তে ভেঙে চুরমার হয়ে উঠে তাদের সাজানো গুছানো সুন্দর সংসারটা। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে , মেহেরের মতো বাচ্চা মেয়েটাও তার স্বামীর বাহুতে পরনারীর স্পর্শ সহ্য করতে পারছে! প্রায় ষোল বছরের জীবন যুদ্ধে আজ সে ভেঙে পড়েছে। শত চেষ্টা করেও হৃদয়ের রক্তক্ষরণ দমিয়ে রাখতে পারে নি। এতোক্ষণ যাবত রক্ত ঝড়েছে তার অন্তরালে।

তা সমুদ্রের দৃশ্যমান হয়নি। কিন্তু মেহের আর পেরে উঠে নি। এতো দিন মুখ বুজে সহ্য করে এলেও আজ ব্যর্থ হয়েছে সে। সমুদ্রের আল্হাল মাখা একটা শব্দ শুনেই তার চোখ জোড়া ভিজে উঠেছে। বুক চাপা কষ্ট গুলো বিন্দু বিন্দু জলে ধরনীর বুকে বিসর্জিত হচ্ছে। মেহেরকে কান্না রত অবস্থায় দেখতে বড্ড কষ্ট তার। পুচকিটার চোখের দুর্বোধ্য রহস্য তাকে প্রচন্ড ব্যাথিত করে তুলেছে।

মেহেরকে মিনিট পাঁচেক কাঁদতে দিলো সমুদ্র। স্বল্প সময় বাদে নাক টেনে কান্না কাটকে রাখার প্রয়াস চালানো সে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে! সমুদ্র পকেটে হাত ঢুকিয়ে গভীর দৃষ্টি আকর্ষণ করল মেহেরের মুখশ্রীতে। মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠেছে সমুদ্রের ঠোঁটের কোণে। তার পুচকি কাঁদছে। তাও আবার তার বিরহে বিরহী হয়ে! কিন্তু সে আপতত তার পুচকির অন্তরে দহন ক্রিয়া জ্বালাতে চাইনা। সে চাই তার পুচকি বড় হয়ে তার প্রতি আকৃষ্ট হবে।

প্রাপ্ত বয়স্ক নারী হয়ে তার উপর অধিকার খাটাবে। তখন পুচকিটা আর তাকে দেখে ভয় পাবে না। সেই মুহুর্তের প্রত্যাশায় অদম্য আগ্রহে অপেক্ষা করছে সমুদ্র। নিজেকে ঠিক রেখে সমুদ্র পুরনার ফিসফিস করে বলে উঠলো,
–আই এম সরি পুচকি! তুমি কেঁদো না প্লিজ। এভাবে কাঁদলে কারো অবস্থা খারাপ হয়ে যায় তা কি তুমি বুঝো না।টাস্ট মি, ওই সাকিলাকে আমার একদম সহ্য হয়না। তুমি যা ভাবছো তা ভুল। সমুদ্র শুধু মাত্র তার পুচকির।

সমুদ্রের বলা বাক্য গুলো শুনেই মেহের ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মেহেরের কান্না থামাতে সমুদ্র আপ্রাণ প্রচেষ্টায় লেগেছে। হঠাৎ সে মেহের মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো। মেহের তাও চোখ বুজে কান্না করছে। সমুদ্র মেহেরের চোখের দুর্বোধ্য রহস্য স্পর্শ করে মুছে দিচ্ছে।

–ইশ! এভাবে কেউ কাঁদে? তুমি তো বড়ো মানুষ। নিজের কাজগুলো নিখুঁতভাবে সম্পূর্ণ করো। কষ্ট গুলো লুকিয়ে রাখতে পার। ভাবো তুমি কতো বুদ্ধিমতি! তাহলে একবার চিন্তা করো তো এই বড়ো মানুষটা কাঁদলে কেমন দেখায়? হুম!
সমুদ্রের বলা বাক্য গুলো শুনে মেহের চোখ বুজে রইলো। কথাগুলো তার মস্তিষ্কে ভরসা জোগাতে সক্ষম হয়েছে। নিজেকে বড় ভাবতে আরম্ভ করছে সে। সত্যিই তো বড় মানুষ কী এভাবে কাঁদে? কেঁদে হাঁফিয়ে উঠেছে সে। ফলে জড়ে জড়ে নিঃশ্বাস গ্রহণ করছে। হঠাৎ সমুদ্র নরম গলা তার কর্ণপাত হলো। কতগুলো শুনে কান্না আপনা আপনি বিদায় নিলো তার থেকে। সমুদ্র স্নেহ মাখা কন্ঠে বলছে,

–আবার কাল রাতের ঘটনা মনে করোনা কিন্তু! কথাটা শুনতে ভিন্নরকম হলেই সত্যি বলতে কাল রাতে জীবনের প্রথম বুঝে শুনে অবুঝ শিশুর মতো কান্না করেছি আমি। কখনো কোন পরিস্থিতি আমার কান্না পাই না। সবাই বলে আমি নাকি কঠোর হৃদয়ের। হয়তো আমার ডিপ্টামেন্টের কেউ বিশ্বাস করবে না কাল রাতের কথা। আচ্ছা যাইহোক আমি কাঁদতে পারি আমার পুচকির সামনে।

দুনিয়ার সকল মানুষ আমার হাস্যজ্বল মুখ দেখলেও আমার অশ্রু দেখার অধিকার আমার একমাত্র পুচকির। আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করব। কিন্তু আপনি এই পানি গুলো অযথা ফেলবেন না। এগুলো সংরক্ষণ করে রাখুন। আর হ্যাঁ এখন চোখ মুছে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।

বলেই সমুদ্র ছাদ হতে প্রস্হান‌ করল। সমুদ্র চলে যাবার পর মেহের নিজের চোখের পানি মুছে ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়াল। তার মস্তিষ্ক বারংবার একটা কথাই বলে উঠলো, লোকটা কী সব বলল তাকে। আদৌ কি সমুদ্র দুনিয়ার সকলের সামনে হাসি মুখে কথা বলে? কথাটা একদমই গ্রহণ যোগ্য নয় মেহেরের কাছে। যার মুখের নির্ঝর হাসি কখনো চোখে পড়ল না। যে লোকটা সারাদিন দুনিয়ার সকল মানুষের সামনে হেসে কখনো কথা বলে না। মুখশ্রীতে বরাবর গম্ভীরতা ফুটিয়ে রাখে। তার মুখে এসব কথা কী মানায়!

ড্রইং রুমে উপস্থিতি হয়ে সমুদ্র জানতে পারে আজ এবং এক্ষুনি তাকে রংপুর যেতে হবে। যেখানে তার প্যাচালো এই কেসটার একজন ভিকটিম রয়েছে। অবশ্য যে ভিকটিম আর কেউ নয় তার বাড়ির গৃহকর্মী সকিনা বেগম। যাকে ঘিরেই কেসটা নির্ভর করছে। হঠাৎ মহিলাটার শহর ছেড়ে চলে যাওয়া। গুন্ডারা তার পিছনে লেগে থাকা। সবকিছুই মিলিয়ে রহস্য যেন তার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জাপটে রয়েছে। সমুদ্র ইনফরমেশন পেয়েছে সাকিনা বেগমের বেপারে।তাই আজ এবং এক্ষুনি সে জুরুরি ফাইটে রংপুর যাবে।

আকাশের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছিল সে। লহমায় আলোচনার বিরতি টানল সে। রিয়া সহ অন্যান্য অফিসারদের একত্র করছে সমুদ্র। সমুদ্র ওডারে আকাশ সহ সবাই সমুদ্র পাশ্ববর্তী দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যেখানে আয়েশ ভঙ্গিতে বসে রয়েছে শোয়াই খান। তার পাশে মাথা নিচু করে বসে রয়েছে সাকিলা। চোখে মুখে বিরক্তির আবির্ভাব ঘটেছে! সমুদ্রের উপর ক্রোধে ফেটে উঠেছে সে। লোকজনের ভিতরে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। মেহেরের হাত স্পর্শ করাটা সহ্য করতে পারে নি সে। অপমানিত বোধ করছে।

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩৪

খানিক বাদে মাথা নিচু করে ড্রইং রুমে উপস্থিত হলো মেহের। একরাশ অস্তিত্ব নিয়ে কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ হাঁটছে সে। সমুদ্রকে মনে মনে খুঁজে চলছে। তৎক্ষণাৎ সমুদ্রের দৃশ্যমান হলো মেহেরকে। সঙ্গে সঙ্গে গম্ভীর কন্ঠে সকলের উদ্দেশ্যে করে নিম্ন কন্ঠে বলে উঠলো,
–মিট মাই ওয়াইফ,,,

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩৬