তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩৬

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩৬
Lutful Mehijabin (লেখা)

খানিক বাদে মাথা নিচু করে ড্রইং রুমে উপস্থিত হলো মেহের। একরাশ অস্তিত্ব নিয়ে কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ হাঁটছে সে। অস্বস্তি নিয়ে সমুদ্রকে মনে মনে খুঁজে চলছে। তৎক্ষণাৎ সমুদ্রের দৃশ্যমান হলো মেহেরকে। সঙ্গে সঙ্গে সে গম্ভীর গলায় সকলের উদ্দেশ্যে করে নিম্ন কন্ঠে বলে উঠলো,

–মিট মাই ওয়াইফ।
সমুদ্রের মুখ থেকে বাক্যটা নির্গত হওয়ার পর,সকলে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো তার মুখশ্রীতে। শোয়াইব খান প্রথমত ভেবে বসল, সমুদ্র বুঝি সাকিলাকে ওয়াইফ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিবে। ভেবেই মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠলো তার ঠোঁটের কোণে। অন্যদিকে আনন্দিত হয়ে উঠলো সাকিলার অন্তরাল!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এই সারপ্রাইজের কথাই কি তখন সমুদ্র তাকে বলেছিল? মুহূর্তেই সাফা হতে উঠে দাঁড়াল সাকিলা। হাস্যজ্বল মুখশ্রীতে তাকাল সমুদ্রের দিকে। সমুদ্র সামনে দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তার দৃষ্টিপাত মেহেরে আবদ্ধ। মেহেরের আগমন দেখে তার মনে এক অদ্ভুত অভিপ্রায় জাগলো। স্বল্প এগিয়ে আকাশের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

–যা তো আমার শালাকে বাবুকে ডেকে নিয়ে আই। ব্লু ট্রি শার্ট পড়েছে। সেদিন ওই যে ছেলেটাকে দেখিয়েছিলাম।
সমুদ্রের প্রত্ত্যুরে আকাশ বলল,
–তিতাস নামের ছেলেটাকে!
–হুম।

মাথা নিচু করে সমুদ্রের দিকে ধীরে ধীরে ধাবিত হচ্ছে মেহের। তার অন্তরে অতি সুক্ষ্ম বাষ্পের ন্যায় অনুভূতি দেখা দিয়েছে সমুদ্রকে ঘিরে। লোকটা রাগী, বদমেজাজি, গম্ভীর হলেই বেশ অন্যরকম। সমুদ্রের রাগান্বিত চাহনি ভেসে উঠছে মেহেরের চোখ জোড়াতে। সে ভয়ের সহিত ভেবে চলছে সমুদ্রের ক্রোধ মাখা স্নেহ। অযথাই তার ভয় হচ্ছে। লোকটা যদি বকা দেয়! চিন্তিত অবস্থায় মেহের দ্রুত পৌঁছে গিয়েছে সমুদ্রের নিকটবর্তী।

এতো মানুষের সমাবেশে দেখে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তার। শুধু মাত্র সমুদ্রের কথা মতো এগুচ্ছে। ঠিক তখনই হঠাৎ পা ফসকে ফ্লোরে হুমড়ি খেয়ে পড়ল মেহের। আছাড় খেয়েই মুহূর্তেই সেকেন্ড পাঁচেকের ভেতরে নিজকে সামনে ধরফড়িয়ে ফ্লোর থেকে সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়ল সে।

মেহেরকে বেখেয়ালি ভাবে আছাড় খেতে দেখে তৎক্ষণাৎ সমুদ্র ছুটে এলো মেহেরের নিকটবর্তী। এসেই মেহেরের হাত ধরে চিন্তিত কন্ঠে অস্থির হয়ে বলে উঠলো,
–তোমার লাগে নি তো? ব্যথা পেয়েছ নিশ্চিত? দেখি।

সমুদ্র অস্থিরতা দেখে মেহেরের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ক্রমশ।কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ আছাড় খাওয়ার ফলে তার দিকে প্রায় সবাই মনোযোগ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে। এতে করে বেশ লজ্জিত মেহের।‌ একরাশ দ্ধিধা সংকোচের আবির্ভাব ঘটেছে তার হৃদয় গহীনে। ব্যথাতু্র মুখশ্রী লজ্জায় রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে! লোকচক্ষু সামনে সমুদ্র এই অদ্ভুত বিভেব তার নিকট বড্ড লজ্জার বিষয়। মেহের সমুদ্রের অস্থিরতা দেখে বারংবার নিম্ন কন্ঠে বলেছে,

–ব্যথা পাই নি তো। পাই নি। আপনি,,,
মেহেরের বলা বাক্য শেষ করার পূর্বে সমুদ্র ধমকের স্বরে বলল,
–স্টপ ইউর মাউথ!

বলেই অসস্থি হয়ে মেহেরের হাত পা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল সমুদ্র। আসলেই মেহের মেয়েটা বড়োই অদ্ভুত! এতোটা ব্যথা পাওয়া সত্ত্বেও সমুদ্রকে বলছে ব্যথা পাই নি সে। কিন্তু ব্যথাতুর ভাবটা তার চোখ‌ মুখে স্পষ্ট! একেই বোধহয় বলে পরিবেশ দোষ। মানুষ ছেলেবেলা থেকে যে পরিবেশে বড় ঠিক সেভাবেই তার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে। পরিবেশ পরিস্থিতিই মানুষের জ্ঞান বিকাশে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত।

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মানুষ যখন কষ্ট পেয়ে তিলে তিলে গড়ে উঠতে আরম্ভ করে, ঠিক তখনই মানুষ সত্যিকার অর্থে জীবনের মানেটা উপলব্ধি করতে শিখে। পৃথিবীতে একমাত্র কষ্ট নামক বিষ মানুষকে প্রাপ্ত বয়সের পূর্বে বোঝমান অর্থাৎ জ্ঞানি ব্যক্তিতে রুপান্তরিত করে তুলে। কোন মানুষ যদি আরাম আয়েশে কষ্ট হীনা সময় পার করতে থাকে তাহলে সে একসময় জীবনের আসল মানেটা বুঝে উঠতে পারে না। মেহেরের ক্ষেত্রে একই ঘটনা পরিলক্ষিত হয়েছে।

পরিবেশ তাকে ক্রমশ বাস্তবতা শিখিয়েছে দিচ্ছে। মেয়েটা হারে হারে বুঝে জীবনটা আসলে কেমন! সে বুঝে জীবনের যুদ্ধ করেই তাকে চলতে হবে। পরিবেশ তাকে মাত্র ষোলো বয়সে প্রাপ্ত বয়স্ক নারীতে পরিনত করে তুলেছে! তাইতো সে কষ্ট পেলেও তা লুকিয়ে রাখতে পারে। সে এতো ছোট হওয়ায় সত্বেও ব্যাথার কথা স্বীকার করতে নারাজ।

মিনিট পাঁচেক বাদে শান্ত হলো সমুদ্র। দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে মেহেরের মুখশ্রীতে দৃষ্টিপাত ফেলল। মেহেরের হাত আলতো স্পর্শ করে মেহেরকে সামনের দিকে নিয়ে এলো। মেহের মাথা নিচু করে সমুদ্র পায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে লাগল। সমুদ্র মেহেরকে তার টিমের সকলের সামনে এনে দাড় করালো। অতঃপর সবার উদ্দেশ্যে গম্ভীর কন্ঠে সিরিয়ার হয়ে বলল,

–সবাইকে একটা কথা বলা হয়নি। স্যার ,আই আম সরি ফর লেট।
বলেই শান্ত ভঙ্গিমায় দাঁড়াল সমুদ্র। তার টিমের উপস্থিত সবার দৃষ্টি তাদের উপর আবদ্ধ। সকিলা অবাকের সহিত সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে আকাশ‌ তিতাস নিয়ে এসেছে। পরিবেশ গমগম হয়ে উঠেছে। স্থানটা ড্রইং রুমের এক কোণে হওয়ার ফলে শুধু মাত্র সমুদ্রের টিম মেম্বারস এবং সেখানটাতে তিতাস উপস্থিত। তাছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাকি সব সদস্য নিজ নিজ কাজে লিপ্ত।

অর্থাৎ উপস্থিত কেউ খাবার খেতে,কেউ কথা বলতে আবার কেউ চুপচাপ বসে রয়েছেন। সমুদ্র বলা শেষাক্ত কথাটা শুনে শোয়াই খানের কপালে চিন্তার সুক্ষ্ম ভাঁজ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে! উপস্থিত সব জুনিয়র সিআইডি রিয়া, সাইফুল , সজীব এরা সবাই দৃষ্টিতে সমুদ্রকে সম্মান জানিয়ে আগ্রহ নিয়ে পরবর্তী বাক্য শুনার আদ্যম প্রত্যাশা প্রকাশ করছে। শুধু মাত্র উপস্থিত আকাশ মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার পাশে তিতাস আবাক দৃষ্টিতে মেহেরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

মেহেরের হাতে সমুদ্রের হাতের বন্ধন দেখে তার মনে সন্দেহের দানা বেঁধেছে। হঠাৎ সমুদ্র তাকে কেন ডেকেছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে! মেহেরের দেখা পেয়ে তার হৃদয় পুলকিত হয়ে উঠলেও তার অবস্থা দেখে বেশ চিন্তিত মেহের। সুযোগ পেলেই মেহরকে জেঁকে ধরবে বলে অধিক সন্দেহ নিয়ে মনে মনে প্রার্থনা করছে তিতাস। সমুদ্র সবার দিকে একপকল তাকিয়ে হঠাৎ বলে উঠলো,

–মিট মাই ওয়াইফ, মিসেস সমুদ্র।
সমুদ্রের মুখ হতে নির্গত বাক্যটা শুনতেই সবাই স্তম্ভিত হয়ে উঠলো। শোয়াইব খান বসা থেকে চমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। সকিলা স্তব্ধ হয়ে মেহেরের দিকে তাকাল। মুহূর্তেই রিয়া নামের সুঠাম দেহের অধিকারী সিআইডি অফিসার চোখ জোড়া বড়ো বড়ো করে মেহেরকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। তার চোখ জোড়া যেন বেরিয়ে আসার উপক্রম! সবার মতো অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছে তিতাস। কথাটা বিশ্বাস করতে পারছে না সে। অবাকের প্রমাণ স্বরুপ তার ওষ্ঠ এবং অধর কিঞ্চিৎ ফাঁকা হয়ে উঠেছে।

অন্যদিকে সবার মতো সমুদ্রের বলা বাক্যটা মেহেরের কর্ণপাত হতেই ধকব করে উঠছে তার বক্ষ পিঞ্জরের হৃদয় গহীন। শুধু মাত্র কয়েকটা ওয়াডের উপর ভিত্তি করে তার হৃদয় স্পন্দন তড়িৎ বেগে ছুটতে আরম্ভ। সমুদ্রের মুখে সামস্য কথাটুকু শুনে থমকে গেছে তার পৃথিবী!

প্রায় মিনিট দুয়েক পরিবেশ স্তব্ধতা পালন করল। হঠাৎ স্তব্ধতা ভেঙে ফেলল সাকিলা। সে দৌড়ে গিয়ে সমুদ্রের শার্টের কলার চেপে ধরল। লহমায় চিৎকার করে বলতে লাগল,

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩৫

–আপমার বিশ্বাস হচ্ছে না সমুদ্র! আপনি মজা করছেন?প্লিজ একবার বলুন আপনি মিথ্যা বলছেন। আমি জানি আপনি আমাকে ইচ্ছে করে বিভ্রান্তে ফেলছেন। এই পিচ্চি মেয়েটা কী করে আপনার ওয়াইফ হতে পারে! মেয়েটা তো আপনার হাঁটু বয়সের। আপনার মতো একজন স্টং,গম্ভীর, কিউট অফিসার কখনোই এতটুকু পিচ্চি মেয়েকে বিয়ে করতে পারে না। মেয়েটার বয়স তো এখনো আঠারো হয় নি।

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩৭