তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩৭

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩৭
Lutful Mehijabin (লেখা)

–আমার বিশ্বাস হচ্ছে না সমুদ্র! আপনি মজা করছেন? প্লিজ একবার বলুন আপনি মিথ্যা বলছেন। আমি জানি আপনি আমাকে ইচ্ছে করে বিভ্রান্তে ফেলছেন। এই পিচ্চি মেয়েটা কী করে আপনার ওয়াইফ হতে পারে! মেয়েটা তো আপনার হাঁটু বয়সের। আপনার মতো একজন স্টং,গম্ভীর, কিউট অফিসার কখনোই এতটুকু পিচ্চি মেয়েকে বিয়ে করতে পারে না। মেয়েটার বয়স তো এখনো আঠারো হয় নি।

কথাগুলো বলে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগল সাকিলা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে শোয়াইব খান সাকিলা এবং সমুদ্রের নিকটবর্তী চলো এলেন। অহনার এহেন কাণ্ডে, সে কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। কী বলে অহনাকে শান্তনা দেবে তাও ভেবে পাচ্ছেন না।সে নিজেই সমুদ্রের বিয়ের কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে! তার ভাবতেই অবাক লাগছে সমুদ্র বিয়ের বিষয়টা তাকে জানায়নি!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পরিস্থিতি নিমিষেই বিগড়ে যাচ্ছে। সাকিলা অতিরিক্ত রেগে গিয়ে সমুদ্রের শার্টের কলার এখনো অবধি চেপে ধরে রয়েছে। সমুদ্র সকিলার অবস্থা দেখে থতমত খেয়ে গিয়েছে। বিরক্তিতে তার মুখশ্রীতে লালাভ বর্ণ ধারণ করে উঠেছে। শুধু বিরক্তি বললে ভুল হবে, তার চোখ মুখে রাগের ভাবটা স্পষ্ট! সকলের সামনে সাকিলার এমন অদ্ভুত আচরণ মোটেও প্রত্যাশা করেনি সে।

সাকিলার চোখের জল দেখে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে গিয়েছে। অবাকের চরমে পৌঁছে গিয়েছে সবাই। ফলে তাদের মুখ দিয়ে টু শব্দও নির্গত হচ্ছে না। তিতাস অবাকের সহিত মেহেরের মুখশ্রীতে দৃষ্টিপাত আবদ্ধ করে রয়েছে। শুধু অবাক নয় বিষয়টা ব্যাথিত করে তুলেছে তার হৃদয় গহীন। যাকে বোন ভেবে ভালোবাসে এসেছে।সে বোনটা তাকে এতবড় চিরন্তন সত্যের ব্যাপারে একবারও জানাইনি! বেশ অভিমান হচ্ছে বোনটার উপর।আজ তার কাছে মেহের এবং সমুদ্রকে নিয়ে সকল রহস্যের সমাধান মিলেছে।

সমুদ্র আচমকা অহনার হাত যুগল শার্ট থেকে ছাড়িয়ে স্বল্প জোড় গলায় বলে উঠলো,
–শাট আপ! অন্যের হাজবেন্ড এর গায়ে হাত দিতে আপনার লজ্জা করে না।
সমুদ্রের কথা শুনে সাকিলা তার মাথার চুলগুলো মুঠো বন্ধি করে নিশ্চুপ ভঙ্গিতে কাঁদতে লাগলো। সমুদ্রের কথাটা শোয়াইব খানের কর্ণকুহরে পৌঁছানো মাত্রই রাগে দু হাতের মুঠো করে ফেললেন তিনি। সমুদ্র এমন বিহেভ তার কাছে অভদ্রতা ছাড়া অন্য কিছু মন হচ্ছে না। একপর্যায়ে ক্রোধের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলেন শোয়াইব খান। মুহূর্তেই তিনি ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন,

–আই কান্ট বিলিভ সমুদ্র! তুমি আমার অবাধ্য হলে? এমনটা তোমাকে দিয়ে আশা করে নি আমি। তুমি আমাকে অপমান করলে। আমার তো এখন তোমাকে থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করছে। আজ যদি এখানে কেউ না থাকতো তাহলে তোমাকে আমি কি করতাম, আমি নিজেও জানি না। তুমি নিজেই তোমার রিপুটেশন নষ্ট করতে চাইছে।
সাকিলা শোয়াইব খানের কথার মাঝে বলতে লাগলো,

— আংকেল, তুমি কেন আমাকে এই লোকটাকে নিয়ে স্বপ্ন বাঁধতে শিখালে? আমি তো ভালোই ছিলাম এই লোকটাকে নিয়ে না ভেবে। বিগত ছয় মাস যাবত আমি সমুদ্রের কথা চিন্তা করে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি নি। যেদিন প্রথম তার ছবি দেখেছিলাম সেদিন থেকেই ওনার প্রেমের গভীর সমুদ্রে ডুবে গিয়েছি আমি। জানো আংকেল আমি লাইফে কখনো যায়গা মতো শুট করতে ব্যর্থ হয়নি। কিন্তু যখনি সমুদ্রের মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঠিক তখনি আমার পৃথিবী ওলোটপালোট হয়ে যায়। তুমি আমাকে ঠকিয়েছে আংকেল। আই হেইট ইউ। এর পরিনতি একদমই ভালো হবেনা কিন্তু।
সাকিলার কথাগুলো প্রত্ত্যুরে শোয়াইব খান বললেন,

–কান্না করে না, মামুনি! আই আম সরি। দেখো এখানে সবাই তোমার জুনিয়র। এদের সামনে কান্নাকাটি করলে তোমার সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে। সো শান্ত হও। আমার মামুনিটাকে কাঁদতে দেখতে একদমই ভালো লাগে না।
সকলের কথা মনোযোগ সহকারে কর্ণপাত করছে মেহের। অদ্ভুত ভাবে তার বড্ড কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে সাকিলার বলা কথাগুলো তার হৃদয় ক্ষত বিক্ষত করে তুলেছে।

সে উপলব্ধি করতে পাচ্ছে, তার ব্যথিত হৃদয় থেকে টপটপ করে অদৃশ্য রক্ত ঝরে পড়েছে! ইতিমধ্যে সবাই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সাকিলার মুখশ্রীতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আকাশ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক হতে চাইছে না। সমুদ্র মেহেরের থেকে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তপ্ত শ্বাস ত্যাগ করেছে সমুদ্র। শোয়াইব খান তৎক্ষণাৎ এগিয়ে গেলেন মেহেরের নিকটবর্তী। জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন মেহেরের মুখশ্রীতে।

মেহের মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি ফ্লোরে আবদ্ধ। শোয়াইব খান গভীর মনোযোগ সহকারে মেহেরকে দেখতে লাগলো। মেয়েটা কাঁপছে। কোলাহল পূর্ণ পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে না পেরে কাঁপছে সে! তার মুখশ্রীতে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। শোয়াইব খান মেহেরের মুখ দেখে শান্ত। কি আছে মেয়েটার মুখশ্রীতে? মেহেরের প্রতি অদ্ভুত টান অনুভব করছে সে।

মেয়েটাকে দেখতেই তার অশান্ত হৃদয়ে এক অজানা শান্তির উৎপত্তি ঘটেছে! মূহুর্তে তার অন্তরালে বলে উঠেছে, মেয়েটা কে? অতীত যেন ভেসে উঠছে তার মস্তিষ্কে। কিন্তু সে তো অতীত হীনা দিব্বি বেঁচে আছে। শোয়াইব খান দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলেন। অতঃপর সমুদ্রের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,

–তুমি কতো বড় অপরাধ করেছ তা কি তুমি জানো? বাল্যবিবাহ করেছো তুমি। একজন সিআইডি অফিসর হয়ে তুমি বাচ্চা একটা মেয়েকে বিয়ে করেছ! তোমার চাকরী থাকবে তো? তুমি কী একবারও ভেবেছো, যখন তোমার বিয়ের বয়স হয়েছে তখন এই মেয়েটার জন্ম হয়েছে কী সন্দেহ! আর তুমি নিজের থেকে এত্ত ছোট কোন সেন্স এ বিয়ে করলে? ছিঃ
শোয়াইব খানের বলা বাক্য গুলো শুনেই মাথা নিচু করে ফেলল সমুদ্র। উত্তরে অনুতপ্ত স্বরে বলল,

–আম আই সরি স্যার। আমি সত্যিই দুঃখিত।
আমি পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম। প্লিজ ফরগিভ মি।
শোয়াইব খান একজন বুদ্ধিমান এবং সচেতন মানুষ। তাই তিনি সমুদ্রকে আর কিছু বললেন না। বিষয়টা এখানে স্থগিত করলেন। অতঃপর সাকিলাকে উদ্দেশ্যে করে বললেন,

–চলো সাকিলা এখানে থেকে যাই। আকাশ তোমার উপর সব দায়িত্ব দিয়ে গেলাম।
বলেই সাকিলার বাহু ধরে পা জোড়া সংকুচিত করলেন। যাওয়ার পূর্বে শোয়াইব খান সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে তিক্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,
— বিষয়টা তুমি আমাকে জানাতে পারতে। তোমাকে দিয়ে আমি এমনটা আশা করিনি। তুমি আমাকে আগেই বলতে পারবে। কেউ করুক না করুক আমি তো তোমাকে খারাপ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতাম। যাইহোক তোমার সঙ্গে আমার বোঝাপড়া বাকি রইলো।

কথাগুলো মুখ হতে নির্গত করে , সাকিলাকে নিয়ে ড্রইং রুম প্রস্থান করলেন তারা। সমুদ্র আর এক মুহূর্তও দেরি করলো না। মেহেরকে রেখেই সেখান থেকে চলে গেলো সে। মেহের এখনও ঠাই দাঁড়িয়ে রয়েছে। সবার দৃষ্টি মেহেরের উপর। তৎক্ষণাৎ রিয়া এগিয়ে এলো মেহের কাছে। মনোযোগ সহকারে মেহেরকে দেখতে লাগলো। সে যতই মেহেরকে দেখছে ঠিক ততোই অবাক হচ্ছে। হঠাৎ রিয়া অবাকের সহিত বলল,

–জানো পিচ্চি সরি ভাবি, তখন তো আমি তোমাকে দেখে স্যারের ছোট বোন ভেবেছিলাম। বাট বিশ্বাস করো আমার একফোঁটাও বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি স্যারের ওয়াইফ! আই কান্ট বিলিভ।
রিয়ার কথার প্রেক্ষিতে একজন সিআইডি জুনিয়র অফিসার সাইফুল বিষ্মত কন্ঠে বলল,

–আমার ও বিশ্বাস হচ্ছে না। সমুদ্র স্যার এমনটা কীভাবে করলো?
আমি তো ভাবতাম স্যার কোনদিনও বিয়ে করবেন না। তা যাইহোক আজ স্যারের জন্য নিজের মেয়ের সঙ্গে পড়ুয়া মেয়েকে ভাবি বলে সম্বোধন করতে হবে! মানলাম স্যার আমার চেয়ে বয়সে ছোট কিন্তু তারপরেও ইগোতে বাঁধছে।

সোফার উপর নতজানু হয়ে বসে রয়েছে মেহের। এ যেন মেয়েটার ব্যক্তিগত অভ্যস। নতজানু না হয়ে সে বসতেই পারে না। তার মনটা আজ ভীষণ বিষাদময়। তখনকার ঘটনার স্বীকার হয়ে বেশ ব্যাথিত সে। তার উপর সমুদ্র তাকে না বলেই চলে গিয়েছে। কোথায় গিয়েছে তা তার অজনা। লোকটা আকস্মিক সারপ্রাইজ তার হৃদয় পুলকিত করে তুলেছে। তার মন‌ নব্য সূচনার উদ্ভাবন ঘটেছে। সমুদ্রকে নিয়ে তার ধারণা পাল্টে গিয়েছে। লোকটা গম্ভীর, রাগী টাইপের হলেও খারাপ নয়। রাগটা একটু কমলে ভালো হতো। একটু ভয় ও পেত না সে। এতোদিনের জমানো যতসব কথা রয়েছে সব তাকে মন খুলে বলতো।

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩৬

তার সামনে অহনা ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে রয়েছে। সারাদিন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে অহনা। মেহেরের সঙ্গে নানান কথাবার্তায় ব্যস্ত সে। খানিক পূর্বে অহনার কাছে থেকে সে জানতে পেরেছে , সমুদ্র আজকে সারাদিনে কিছু খাই নি। খাবেই বা কী তার হাত তো বেন্ডেজ দিয়ে বাঁধা! ভেবেই বড্ড অভিমান হচ্ছে তার। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। সে এতোটা বেখেয়ালি! সমান্য খাবারের খোঁজটাও নেই নি।

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩৮