তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৪০

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৪০
Lutful Mehijabin (লেখা)

কথাগুলো বলেই দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো সমুদ্র।মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইলো।
মেহের শিউরে উঠেছে সমুদ্রের বলা প্রতিটি শব্দ শুনে। কথাগুলো তার ছোট্ট মস্তিষ্ককে বোধগম্য না হলেও তার হৃদয়ে ভীষণ অস্তিত্ব হচ্ছে ফলে তার স্পন্দন তড়িৎ বেগে ছুটছে। বারংবার শুকনো ঢোক গিলছে সে।

অসম্ভব অস্থিরতার স্বীকার মেহের। তৎক্ষণাৎ তার লক্ষ্য হলো সমুদ্র সম্পূর্ণ খাবার খাইনি! মুহূর্তেই তার মস্তিষ্ক কর্ম ক্ষমতা হারাতে বসেছে। সারাদিন না খেয়ে রয়েছে লোকটা। বাক্যটা বারবার তার কর্ণকুহরে প্রতিধ্বনি তুলছে। অতঃপর মেহের হুট করে কম্পিত গলায় বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–আপনি খাবার শেষ করেন নি কেন? আপনার হাতে কী খুব বেশি ব্যাথা করছে? আচ্ছা হাত কাটলো কী করে?
মেহেরের বলা শেষোক্ত বাক্যটা কর্ণপাত হতেই সমুদ্রের ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ফুটে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে বিছানা থেকে নেমে পড়লো সে। দেয়ালের সঙ্গে লাগানো জানালার সঙ্গে ঘেসে দাঁড়াল। অতঃপর মেহেরের প্রত্ত্যতুরে দাঁতে দাঁত চেপে অর্থাৎ কটমট করে বলে উঠলো,

–তুমি কী সত্যিই জানো না! এই হাতটা দিয়ে আমি আমার নিঃশ্বাসকে আঘাত করেছি। তাই শাস্তি দিয়েছি হাতটাকে।
সমুদ্রের কথাগুলো শুনে ছিট্টে উঠলো মেহের। লোকটা ভীষণ আত্মগ্লানি সহিত বাক্য গুলো বলেছে! কতোটা ক্রোধ মিশে থাকলে মানুষ নিজের হাতকে বাজে ভাবে ক্ষত বিক্ষত করে তুলতে পারে তা সমুদ্রের কথার মধ্যে স্পষ্ট! তৎক্ষণাৎ মেহের কেঁপে কেঁপে বলে উঠলো,

–এটা ঠিক করেন নি কিন্তু! আমি খাইয়ে দেই।
মেহেরের বলা বাক্যটা শুনে, উল্টো হতে সোজা হয়ে মেহেরের মুখশ্রীতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সমুদ্র। তার চোখে মুখে গম্ভীরতা স্পষ্ট! মুহূর্তেই সমুদ্রের গম্ভীর কন্ঠে ভেসে উঠলো মেহেরের কর্ণকুহরে। হঠাৎ সমুদ্র বলল,

–যেদিন আমার পুচকি বড় হবে। যেদিন আমাকে খাইয়ে দিতে গিয়ে তার হাত কাঁপবে না। সে স্বেচ্ছায় আমার ওডার ব্যতিত আমাকে ভালোবাসে খাইয়ে দিবে। সেদিন তার হাতে খাবো আমি।এখন না হয় আমি সুযোগটা মিস করি নিজ ইচ্ছেয়। আজ থেকে চাতক পাখির ন্যায় আমি অপেক্ষা করবো।

ভৎসনা নয় এ যেন এক ভিন্ন রকম আবেদন! সমুদ্র মেহেরকে বকা দিচ্ছে না ঠিকই কিন্তু তার কথাগুলো অত্যধিক কঠোর। একটু স্নেহের সহিত কি সে বলতে পারে না? মেহেরের মস্তিষ্ক বর্তমানে কর্ম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এই সমুদ্র নামক লোকটা দিন যাচ্ছে আর তার মস্তিষ্কে আষ্টেপৃষ্টে ঘিরে ফেলছে।

প্রকাশ না করলেই এখনো মেহেরের হৃদয় স্পন্দন অবাধ্য হয়ে উঠেছে। সমুদ্রকে দেখলে, সমুদ্রের কন্ঠস্বর শুনলেই যেন স্পন্দন তড়িৎ বেগে ছুটতে আরম্ভ করে। সমুদ্রের কথাগুলো তার শান্ত হৃদয়ে অশান্তর আবির্ভাব ঘটায়। তার হৃদয় মনেই সুক্ষ্ম বালুর কণার নেয় অনুভূতি জাগ্রত হয়। কেন সমুদ্র বুঝে না তার এই উদ্ভট কথাগুলোর প্রভাব যে মেহেরের অন্তরালে পড়ে!

ঘড়ির কাঁটাতে ছুঁই ছুঁই একটা। রাতের অন্ধকার ডুবে রয়েছে কুয়াশার সরু চাদরে। নিকোটিনের প্যাকেট শক্ত করে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইয়াদ। এই ভীষণ বাজে জিনিসটা কখনো আলোতো করে ছুঁয়ে দেখেনি সে। কিন্তু আজ সে পুরো এক প্যাকেট নিকোটিনের ধোঁয়ার সঙ্গে নিজের দুঃখগুলো ওই দূর আকাশে উড়িয়ে দেবার প্রয়াস চালাচ্ছে। আচ্ছা এমন কেন হয়, কাউকে একতরফা ভালোবাসা বুঝি এতোটা কষ্টের? আচ্ছা তার সঙ্গে এমনটা কেন হলো?

সে তো মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসাতো তার জেবুকে । তাহলে কেন বারংবার তার জেবু তাকে আঘাত করেছে? বাহ্যিক আঘাত হলে সে হয়তো মুখ বুজে সহ্য করতে নিতে পারতো। কিন্তু এই আঘাত তো অন্ত আঘাত। যে আঘাত কাউকে দেখানো যায় না,কাউকে বলা যায় না, আবার গলা ছেড়ে কারো সামনে কান্না করাও যায় না। এ আঘাত যে ক্ষত বিক্ষত করে তুলে বক্ষ পিঞ্জরের হৃদয় মনকে।

এ আঘাত মহা বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোঁটার ন্যায় টপটপ করে রক্ত ঝরায় হৃদয় থেকে। সে যদি কাউকে খোলসা করে বলে তাহলে লোক হাসে বেড়াবে। দুনিয়ার কোন চিৎসকের কাছেও এর রোগের উপশম নেই। এই ভীষণ মারাত্মক আঘাতটা যে লোকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য সহকারে দেখে। এতে করে তারা আঘাত প্রাপ্ত ব্যক্তিকে ডিপ্রেশনের দিকে ঠেলে দেয়। এই ব্যাথার কোন‌ মূল্য নেই পৃথিবীর স্বার্থপর মানুষদের কাছে।

ইয়াদ আজ উন্মাদ পাগলে পরিনত হয়েছে। মধ্যে রাতে নিকোটিনের ধোঁয়ার ডুবে রয়েছে সে। কিন্তু এতে করতেও তার কষ্ট কমছে না। তার স্বল্প লালাভ বর্ণের ঠোঁট যুগল যেন এক রাতেই নিকোটিনের আয়ত্তে চলে এসেছে। ঠোঁট জোড়া পুরে গিয়ে কালচে বর্ণ ধারণ করে উঠছে। তাও ইয়াদ একের পর এক নিকোটিনের আগুন জ্বালিয়ে মনের জ্বালা মেটাচ্ছে। আগুনের লালচে আলোকচ্ছটা‌ যেমন ধীরে ধীরে পুরো নিকোটিন গ্রাস করে দহন ক্রিয়াতে যুক্ত হয়েছে ঠিক তার সঙ্গে দ্বিগুণ তাপে দহন ক্রিয়াতে যুক্ত হয়েছে ইয়াদের হৃদয়। প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে তার। সহ্য করতে পারছে না ইয়াদ। তাই সে বিরবির করে জারাকে বলছে,

–তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছ জারা। তুমি আমাকে তোমার ঠকিয়েছ। তুমি বিশ্বাস ঘাতক। সামন্য ভালোবাসা চেয়েছিলাম তোমার কাছে। চেয়েছিলাম জীবনের বাকিটা পথ তোমার সঙ্গে পারি‌। তোমাকে তো আমি মনের বিরুদ্ধে গিয়ে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আবারও আমার মন নিয়ে খেলতে শুরু করলে। কি আছে তোমার প্রেমিকের মধ্যে। কী দিয়েছে সে তোমাকে? যা আমি দিতে পারি নি! আমার ভালোবাসায় কী খাদ ছিলো? তোমার পুরাতন প্রেমিক কী আমার থেকেও তোমাকে অধিক ভালোবাসে!

আমি বোধহয় কোন সাংঘাতিক পাপ করছিলাম,তাই বোধহয় আজ আমি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি। আচ্ছা তুমি তো পারতে, বিয়েটা ভেঙে দিয়ে নিজের প্রেমিক পুরুষের সঙ্গে পালিয়ে যেতে! কেন গেলে না? কেন আমার মনে কোণে আশার আলো জ্বালিয়ে তা এক মুহুর্তেই নিভিয়ে দিলে? তোমাকে আমি কখনোই ক্ষমা করব না জারা। আই হেইট ইউ। আমি ভীষণ ঘৃণা করি তোমাকে। ভীষণ ভীষণ ভীষণ,,,,

দরজায় কড়া ঘাতের আওয়াজ মেহেরের কণকুহরে পৌঁছানো মেহেরের নিদ্রা ভেঙে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে ঘুমান্ত চোখ জোড়া উন্মুক্ত করে ধরফড়িয়ে উঠে বসলো সে। মুহূর্তেই তার কানে ভেসে উঠলো অহনার মৃদু আওয়াজ। তৎক্ষণাৎ তার দৃষ্টি পড়ল সমুদ্রের ঘুমে আচ্ছন্ন মুখশ্রীতে। জানালা কাঁচ ভেদ করে একরাশ মিষ্টি আলোকচ্ছটা প্রতিফলিত হচ্ছে তার মুখের উপর। কিন্তু তাও সমুদ্রের ঘুম ভাঙার নাম গন্ধ নেই।

বোধহয় কাল সারা দিন হতে মধ্য রাত অবধি পরিশ্রম করে বেশ ক্লান্ত সে। রাতের মেহেরের পূর্বে ঘুমে অচেতন হয়ে পড়েছিল সমুদ্র। উল্টো পাল্টা কথা বলে মেহেরের চোখ জোড়া হতে নিদ্রা কেড়ে নিয়ে আরামে ঘুমিয়ে পড়েছিল সমুদ্র। চোখের পাতা ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়ার পূর্ব সময় পর্যন্ত মেহেরের মস্তিষ্ককে বারংবার প্রতিধ্বনি তুলছে। না চাইতেই সমুদ্রের কথাগুলো মেহেরের কীশরী মনে অজান্তেই গেঁথে গিয়েছে।

বর্তমানে লজ্জা, সংকোচ ত্যাগ করে ফিসফিস করে সমুদ্রের ডেকে চলেছে মেহের। তার বড্ড ভয় হচ্ছে। মনে হচ্ছে আজ অহনা ইচ্ছে মতো সমুদ্রকে কথা শুনাবে সঙ্গে হয়তোবা তাকেই।
–অহনা আপু এসে পড়েছে। আপনি উঠবেন না।
মেহেরের কম্পমান কন্ঠেসর শুনে বেশ বিরক্তের সহিত ঘুম থেকে উঠে পড়ে সমুদ্র। অতঃপর বিছানায় সঙ্গে পিঠ ঠেকিয়ে বসে গম্ভীর কন্ঠে বলে,

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩৯

— ওপেন দা ডোর।
সমুদ্রের কথা শুনে মেহের থতমত হয়ে পড়ে। অহনা এসে নিশ্চিত তাকে খারাপ ভাববে। তাই মেহের নিম্ন কন্ঠে সমুদ্রকে বলে উঠে,
–আপু কী ভাববে?
মেহেরের বলা বাক্যটা সমুদ্রের কর্ণপাত হতেই তার মুখ হাতে বিরক্তির ‘চ’ শব্দ নির্গত হয়। অতঃপর সমুদ্র পুনরায় বলে উঠে,
–পুচকি তোমাকে আমি বেশি ভাবতে নিষেধ করেছি। গো,,
তৎক্ষণাৎ মেহেরের ধীরগতিতে,,,

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৪১