তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৪৯

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৪৯
Lutful Mehijabin (লেখা)

সমুদ্রকে একপ্রকার উপেক্ষা করে ভিতরে প্রবেশ করলেন শোয়াইব খান। তার চোখে মুখে হাসির চিটে ফোঁটাও নেই। সমুদ্র ডোর লক করে শোয়াইব খানের পিছু পিছু ধাবিত হলো। সে আজ বেশ আনন্দিত। শোয়াইব খানের আগমন তার নিকট সৌভাগ্যময় । বিশেষ করে সমুদ্র খানিক চিন্তিত ছিলো কারণ সেদিন ঘটনার পর শোয়াইব খান একবারের জন্যও সমুদ্রের খোঁজ খবর নেন নি। সমুদ্র তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে কয়েক বার।

চেয়ারে বসে সমুদ্রের প্লেটের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছিলো মেহের। হঠাৎ শোয়াইব খানকে দৃশ্যমান হতেই জড়তা সহিত দাঁড়িয়ে পড়লো সে। প্রথমত নিত্যদিনের ন্যায় মাথায় ঘোমটা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো মেহের। অবশেষে শোয়াইব খানকে সালম দিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেহেরকে দৃশ্যমান হতেই শোয়াইব খানের হৃদয় গহীনে প্রশান্তির প্রাদুর্ভাব ঘটছে। ইতিমধ্যে তার চোখ জোড়া স্বল্প সজল হয়ে এসেছে। নিজেকে ঠিক রাখতে বার কয়েক দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। মেয়েটাকে নয়ন জুড়ে প্রাণ ভরে দেখতে লাগলেন। আহ, একেই বুঝি প্রথম শান্তি বলে! মেহের তার মেয়ে, মেহের তার একমাত্র অস্তিত্ব, তার নিজের অংশ ভাবতেই শোয়াইব খান নিজের প্রতি গর্বে বুকটা ফুলে উঠছে।

মেয়েটা সম্পূর্ণ তার প্রতিচ্ছবি। মায়ের সঙ্গে আংশিক সাদৃশ্য রয়েছে মেয়েটার। ওই যে চোখ জোড়া যেন তার স্ত্রী কল্পনার ন্যায় মায়াবী! শুধু মাত্র চোখ দুটো প্রমাণ করেছে মেয়েটা মায়ের মতো বড্ড অবুঝ। একদমই মায়ের মতো শান্ত, কোমল হৃদয়ের অধিকারী।

প্রায় সেকেন্ড ষাট এক অতিক্রম হয়েছে কিন্তু কার মুখে কোন কথা নেই। সমুদ্র শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। মেহেরের চোখ যুগলের সংকোচ পূর্ণ দৃষ্টি পূর্বের ন্যায় ফ্লোরে আবদ্ধ। মুহুর্তেই শোয়াইব খান মেহেরের নিকটবর্তী এসে দাঁড়ালেন। অতঃপর ঠোঁট যুগল জিহ্বা দ্বারা ভিজিয়ে পরিবেশের নিরবতার ইতি ঘটালেন শোয়াইব খান। মেহেরের মুখশ্রীতে অসহায় দৃষ্টি আকর্ষন করে বলে উঠলেন,

— কেমন আছো মামুনি?
শোয়াইব খানের কথা শুনে সমুদ্রের দিকে দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করলো মেহের। সেকেন্ড পাঁচেকের মধ্যেই দৃষ্টি সরিয়ে নিতে বাধ্য হলো সে। ইশ, কি সাংঘাতিক চাহনি! তৎক্ষণাৎ ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির রেখা টেনে মেহের বলে উঠলো,
— জী স্যার, ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

মেয়ের মুখে থেকে স্যার শব্দটা শুনতেই শোয়াইব খানের বুকের মাঝে ধ্বক করে উঠলো। তার মেয়েটা কতোটা নিম্ন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত তা ঠিকই আন্দাজ করতে পারছেন। আজ পরিবেশ পরিস্থিতি মেহেরকে স্যার বলতে শিখিয়েছে। ওর জায়গায় অন্য কোন বিলাসবহুল ঘরের মেয়ে হলে অবশ্যই তাকে আঙ্কেল বলে সম্বোধন করতো তা নিশ্চিত। বিষয়টা মস্তিষ্ক থেকে খানিকের জন্য মুছে, শোয়াইব খান মেহেরকে বলেন,

— মামুনি, তোমাকে এতো অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে কেন?
আচমকা শোয়াইব খানের মুখশ্রী হতে নির্গত এমন অদ্ভুত বাক্য শুনে মেহেরের চোখ যুগল ছলছল করে উঠলো। সে বাকরুদ্ধ! কথা বলার ভাষা হারিয়েছে। কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।
শোয়াইব খান মেহেরের জবাব না পেয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। মেহেরের একদমই নিকটবর্তী চলেন এলেন তিনি। অতঃপর একটা শুকনো ঢোক চেপে বলে উঠলেন,

— মামুনি আমাকে নিজের বাবা মনে করে কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিবে, প্লিজ?
শোয়াইব খানের প্রত্যুত্তরে মাথাটা ডান দিকে খানিকটা কাত করলো মেহের।
আকস্মিক শোয়াইব খানের ব্যবহার বেশ সন্দেহ জনক লাগছে সমুদ্রের নিকট। কিন্তু যাইহোক এতে তার কোন সমস্যা নেই। তার মস্তিষ্ক বলে উঠছে, হয়তো মেহেরকে দেখে পছন্দ হয়েছে শোয়াইব খানের তাই তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। সমুদ্র দু হাত পকেটে গুঁজে ভাব বিলাসিহীন হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
লহমায় শোয়াইব খান শীতল কন্ঠে মেহেরকে উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,

— তুমি কি এই বিয়েতে রাজি ছিলে?
কথাটা কর্ণপাত হতেই চমকে উঠলো মেহের। এই প্রশ্নের জবাব যেন তার নিকট অনুপস্থিত।
শোয়াইব খান ফির বলে উঠলেন,

— আমি জানি নিরবতা সম্মতির লক্ষণ। এখন বলো তো মামুনি তুমি কি পড়ালেখা করতে ইচ্ছুক? ভবিষ্যতে বড়ো কোন পদে চাকরি করতে চাও কি? সংসার বাদ দিয়ে মুক্তি হয়ে পাখির ন্যায় ডানা মেলা উড়তে চাও কি?
শোয়াইব খানের কথা শুনে দিশেহারা হয়ে পড়লো মেহের।

এমন অদ্ভুত প্রশ্নে সে অনুভূতিহীন নির্বাক! বার দুয়েক দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো মেহের। অবশেষে দৃষ্টি ফেলল সমুদ্রের অচঞ্চল নয়ন যুগলে। ইশ, পূর্বের চেয়ে দ্বিগুণ সাংঘাতিক দৃষ্টি! সমুদ্র গম্ভীর মুখশ্রীতে কোথাও যেন অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। ওই চোখ দুটো যেন মেহেরের অদ্ভুত অনুভূতির শিহরণে জড়িয়ে নিচ্ছে। ভীষণ অদ্ভুত অনুভূতি! যার নাম এখন অবধি মেহেরের অজানা। দু হাত মুঠো বন্ধি করে নিজের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করার প্রয়াস করলো মেহের।

মেহেরের উত্তর না পেয়ে শোয়াইব খান পুনরায় আকুতি মিনতির সহিত বলে উঠলো,
— বলো না মামুনি? তুমি কি পড়ালেখা করতে চাও? চাও কী এই সমুদ্রের সারা জীবনের জন্য মুক্তি দিতে?
শেষোক্ত কথাটা শুনেই চিন চিন ব্যথা অনুভব হলো মেহেরের বক্ষ পিন্জরে। একরাশ সাহস জুটিয়ে বলে উঠলো,
— হ্যাঁ আমি চাই পড়ালেখা করতে। কিন্তু,,

মেহেরের বলা বাক্যগুলোর সমাপ্তি ঘটাতে দিলেন না শোয়াইব খান। আচমকা তিনি নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলেন মেহেরকে। মেহেরের মাথাটা আলতো করে বুকের সঙ্গে চেপে বলে উঠলেন,
— আর কিছু বলতে হবেনা মামুনি। যা বুঝার তা আমি বুঝেছি।

শোয়াইব খানের বুকে মাথা গুঁজতেই মেহেরের চোখ যুগল আপনা আপনি বন্ধ হয়ে এলো। খুবই শান্তি পাচ্ছে মেহের। তার অনুভব হচ্ছে এই যেন এক শাস্তির নিবাস। বর্তমানে মেহের নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ প্রাণী বলে মনে করছে। অদ্ভুত আনন্দ মেহেরকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে ধরছে।

এতো ভালোবাসা কেউ মেহের কে দেখাইনি। বাবা নামক শান্তি বুঝি একেই বলে। বাবাকে ঘিরেই যেন সকল প্রশান্তি যা পৃথিবীতে শুধু মাত্র বাবা নামক প্রাণী হতে নির্গত হয়।
সমুদ্র ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে শোয়াইব খানের কার্যক্রম লক্ষ্য করছে। তার বুকের ভেতর অদ্ভুত অস্থিরতার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। শোয়াইব খানের এমন উদ্ভট আচরণ সমুদ্রকে বড্ড আঘাত করছে। কি করতে চাইছেন শোয়াইব খান তা বোধগম্য করতে পারছে না সমুদ্র!

প্রায় মিনিট পাঁচেক নিরবে বাবার বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে রইলো মেহের। অতঃপর শোয়াইব খান মেহেরের কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে নিজের মুখশ্রীর সামনে দাঁড় করালেন। মেহের গাল জোড়া দু হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে বললেন,
— যাও মা ঘুমাও। আমি কালকে আবার আসবো তোমার জন্য সারপ্রাইজ নিয়ে।

শোয়াইব খানের কথার প্রেক্ষিতে মেহের সমুদ্রের দিকে আড় চোখে তাকালো। মেহেরের হৃদয় যেন শান্তিতে ভরে উঠছে। মেহেরের অনুভব হচ্ছে, আজ চারপাশে অক্সিজেন যেন পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মেহেরের শ্বাস প্রশ্বাসে প্রশান্তির চাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। মেহের বুঝতে পারলো না কেন অচেনা অজানা একজন লোকটা তার এতোটা আপন মনে হলো? কেন লোকটার বুকে নিজেকে অত্যাধিক নিরাপদ মনে হলো? কেন এখন লোকটার কথা মতো তার প্রস্হান করতে মন চাইছে না। ইচ্ছে হচ্ছে আরো খানিকটা সময় লোকটার সঙ্গে অবিবাহিত করতে। নানান চিন্তার আবির্ভাব ঘটেছে মেহেরের অন্তরালে।

মেহেরকে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শোয়াইব খান পুনরায় মেয়েটার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে শান্ত স্বরে বলে উঠলো,
— যাও মা। ঘুমিয়ে পড়। কি হাল করেছো নিজের শরীরের! এভাবে চললে তো তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে। সো এখন দ্রুত গিয়ে চোখ বুজে ঘুমিয়ে পড়।

তৎক্ষণাৎ ফির মেহের সমুদ্রের দিকে দৃষ্টিপাত ফেলল। সমুদ্র এখন অব্দি পূর্বের ন্যায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে। লোকটা চোখ জোড়া মেহেরকে ইশারায় কিছু বলতে চাইছে। মেহের আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। দ্রুত শোয়াইব খানকে বিদায় জানিয়ে পা যুগল ধাবিত করলো নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

সোফার উপর আয়েশ ভঙ্গিতে বসে রয়েছে শোয়াইব খান। ড্রইং রুম হতে সমুদ্র রুমে প্রস্হান করেছেন তারা। শোয়াইব খানের বিপরীতমুখী হয়ে বসে রয়েছে সমুদ্র। নিত্যদিনের ন্যায় স্তব্ধতা পালন করতে ব্যস্ত সমুদ্র। নিরবতা ভেঙে হঠাৎ শোয়াইব খান বলে উঠলেন,
— সমুদ্র,,
শোয়াইব খানের কথার উত্তরে সমুদ্র বলে উঠলো,

— ইয়েস স্যার। হাও ক্যান আই হেল্প ইউ?
সমুদ্রের শক্ত কন্ঠের প্রেক্ষিতে শোয়াইব খান বললেন,
— তুমি তো জানো সমুদ্র, হেঁয়ালি আমার একদমই পছন্দ নয়। আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এক কথা বলতে পারি না। যাইহোক , মনে আছি কি তোমার কয়েক দিন আগে আমি কি বলেছিলাম। বলেছি যে আমার একটা ভয়ঙ্কর পুরোনো অতীত রয়েছে তা তোমাকে বলতে চাই।

সমুদ্র নিশ্চুপ ভঙ্গিতে শোয়াইব খানের মুখ পানে তাকিয়ে রইলো। লহমায় তিনি বলেন উঠলেন,
— তুমি হয়তো জানো না আমার একটা পরিবার ছিলো। এমনকি আমার একজন ওয়াইফ ছিলো। বছর ষোলো পূর্বের কথা। হঠাৎ আমার মাথায় ভুত চেপে ধরে। আমি নিজের ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে পরিবার ত্যাগ করে অচেনা রাজ্যে পাড়ি দেই।

বলেই দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলেন শোয়াইব খান। সেকেন্ড পাঁচেক বিরতি নিয়ে ফির বলে উঠলেন,
— বিশ্বাস করো সমুদ্র, আমি জানতাম না আমার দ্বারা কতো বড় অন্যায় হয়েছে। সেদিন আমার নিকট অজানা ছিলো পৃথিবীর সর্বোচ্চ সুখ যে আমি ইচ্ছে করে ফেলে দিয়ে এসেছি! আমি জানতাম না আমার চলে যাবার পর আমার ওয়াইফের কোল জুড়ে সন্তান জন্ম নেয়। খবরটা আমি পাই নি। যদি জানতাম আমি বাবা হয়েছি তাহলে কসম আমি ফিরে আসতাম। আগলে রাখতাম আমার আদরের কন্যাকে। একটুও দুঃখের আঁচ আসতে দিতাম না। কিন্তু আমি এতোটা অভাগী যে আজ ষোলো বছর পর জানতে পেরেছি আমার পরিটার কথা।

শোয়াইব খানের কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে উঠলো সমুদ্র। শোয়াইব খান ক্রমশ সমুদ্রের হৃদয় বিচ্ছিন্ন কারি বাকের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। লহমায় তিনি বলে উঠলেন,
— তুমি জানতে চাইলে না আমার পরিটা কে? সে কোথায়?
সমুদ্র তৎক্ষণাৎ অস্থিরতার কাঁপা গলায় সহিত বলে উঠলো,
— কে?

সমুদ্রের কথার উত্তরে শোয়াইব খান দ্রুত গতিতে বলে উঠলেন,
— সে আর কেউ নয় মেহের। আমার মেহের। আমার একমাত্র মেয়ে।
বাক্যগুলো সমুদ্রের কর্ণকুহরে পৌঁছানো মাত্রই স্বল্প কেঁপে উঠলো সমুদ্র। চোখ যুগল বড় বড় করে বলল,
— হুয়াট!
শোয়াইব খান সমুদ্রকে উপেক্ষা করে বলে উঠলেন,

— আসল কথাই আসা যাক সমুদ্র। আমি চাইছি আমার মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে রাখবো। তুমি ইচ্ছুক না থাকলে ও দিতে বাধ্য। কারন একটু আগেই তুমি শুনেছ আমার মেয়ে কি চাই! সে বলছে তোমার সঙ্গে থাকবে না। সে পড়ালেখা করতে চাই। সে মুক্তি পেতে চাই তোমার সংসার থেকে।

শোয়াইব খানের কথা শুনে বুকের মধ্যে হাত চেপে ধরলো সমুদ্র। তার বুকটা যে ব্যাথায় ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতোক্ষণে অদৃশ্য রক্তক্ষরণে ভরে উঠছে তার অন্তর! ঠোঁট যুগল প্রসারিত করতে শক্তি পাচ্ছে না সমুদ্র। অবশেষে বহুত কষ্টে বলে উঠলো,

–না,,
সমুদ্রের কথার ভিত্তিতে শোয়াইব খান হুংকারের সহিত বলতে লাগলেন,
— লজ্জা লাগে না তোমার? নিজের হাঁটু বয়সী মেয়েকে স্ত্রী বানিয়ে রাখতে চাইছো! আমার মেয়ে তো বললো ও পড়ালেখা করতে চাই। দেখো সমুদ্র আমার মেয়ে আর তোমার কাছে বন্দী থাকবে না। আর হ্যাঁ আমি কালকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবো। এতে তোমার মত থাক বা না থাক। আমি কালকে আবার ও আসবো।
আরো কতো গুলো কথা শুনিয়ে আজকের মতো বিদায় নিলেন শোয়াইব খান।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে আকাশ পানে তাকিয়ে রয়েছে সমুদ্র। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে সে। তার বুকের মাঝে বড্ড কষ্ট। প্রিয় মানুষটাকে হারানোর ভয়ে সংঙ্কিত হয়ে উঠেছে তার অন্তরাল। তার চেয়ে দ্বিগুণ কষ্ট তার পুচকি কেন তাকে বুঝে উঠতে পারে না? কেন উপন্যাসের পাতার মতো তার মন পড়তে পারে না? মেয়েটা কেন তাকে অনুভব করতে পারে না?

মেহেরের কথা ভাবতে মত্ত হয়ে উঠেছে সমুদ্র। মেহেরের উপর তার ভীষণ অভিমান হচ্ছে। মেয়েটা একবারও খোঁজ নিলো সে খেয়েছি কিনা? ইতিমধ্যে সমুদ্রের চোখ জোড়া জলে ছলছল করে উঠেছে। অতিরিক্ত কষ্ট হচ্ছে তার। এক যেন এক পাহাড় সমান কষ্ট। তাকে বলে সীমাহীন দুঃখ! সমুদ্রের বুকটা যে মেহের নামক অনুভূতির দহনে পুড়ে ছারখার হয়ে উঠছে। ক্রমশ তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।

অন্যদিকে হঠাৎ মেহেরের মনে পড়ছে সমুদ্র রাতের খাবার খাই নি। সঙ্গে সঙ্গে এক মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করে নি মেহের। নিজেকে একগাদা ধিক্কার জানিয়ে ড্রইং রুমে হাজির হয়েছে সে। ড্রইং রুমে এসে তার লক্ষ হয়েছে সমুদ্রের ঘরের বাতি জানালো। শোয়াইব খানের ব‌্যাবহার বেশ সন্দেহ জনক লেগেছে। অদ্ভুত হলেও মেহের আন্দাজ করতে পেরেছে কোন এক ভয়াঙ্কর ঝড় বইছে সমুদ্রের উপর। তাই এক একরাশ ভয় নিয়ে সমুদ্রের বেলকনির দিকে ধাবিত হলো মেহের।

প্রায় মিনিট পাঁচেক বেলকনিতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে মেহের। সমুদ্রকে ডাক দেওয়ার সাহস হচ্ছে না মেহেরের। সমুদ্রের এমন অবস্থার দেখে তার অন্তরাল ফেটে যাচ্ছে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। লোকটার নিঃশ্বাস আওয়াজ বলে দিচ্ছে সে কতোটা যন্তণা হচ্ছে!

মেহেরের উপস্থিত আন্দাজ করতে পারলো সমুদ্র। প্রথমত তার স্বপ্নের পুচকি ভেবে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো সে। কেন আসবে তার পুচকি তার খোঁজ নিতে? সে তো এখন ঘুমে বিভোর। পুচকিটা তাকে কোনদিনই বুঝবে না।
লহমায় সমুদ্র জিহ্বা দ্বারা নিজের ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিলো। এক হাত পকেট রেখে অন্য হাতটা ঠিক বুকের মাঝখানে রাখলো। অতঃপর অভিমান স্বরে আকাশ পানে চেয়ে সমুদ্র বলতে লাগলো,

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৪৮

— জানো পুচকি, আমি কতোটা কষ্টে আছি? তুমি তো দিনের বেলা একটি বারের জন্যও কেন আমার কাছে আসো না? রাত হলেই বুঝি আমার কথা মনে পড়ে! তুমি কি জানো তুমি কতোটা নিষ্ঠুর? আচ্ছা পুচকি আমাকে দেখতে একটুও সুন্দর না? আমাকে দেখলে কি তোমার মনে ‘তুমি নামক অনুভূতির’ সৃষ্টি হয় না! কেন হয় না পুচকি? আমি কি খুব খারাপ? আমাকে কী একটুও ভালোবাসা যাই না। আমি কী তোমার থেকে অনেক বড়ো! তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না? আচ্ছা পুচকি, আমার বয়স কী কমানো যাবে না?

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৫০