তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৫৮

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৫৮
Lutful Mehijabin (লেখা)

ঘড়ির কাঁটায় ছুঁই ছুঁই নয়। প্রগাঢ় নিদ্রায় আচ্ছন্ন ছিল সমুদ্র। খানিক যাবত এক মেয়েলী কন্ঠস্বর বারংবার তাকে ডেকে চলছে! অথচ লোকটা জাগ্রত হতে নারাজ। কাল গভীর রাত্রি অবধি অতন্দ্রি থাকার ফলে অবসন্ন দেহ বিছানার কোমল পরশ ত্যাগ করতে অসম্মত পোষণ করছে। একরাশ সূর্যের আলোকরশ্মি প্রতিফলিত হচ্ছে তার মুখশ্রীতে। শুধু দেহ নয়, নয়ন জোড়া ও উন্মুক্ত হতে নারাজ! দীর্ঘ তিন মাস পর অবশেষে প্রশান্তিময় নিদ্রায় মগ্ন হতে সফল হয়েছে সমুদ্র। রাত্রি বেলা বারংবার মেহেরকে সংকোচে ফেলেও ক্ষান্ত হয়নি সে। মেয়েটার লালাভ গাল যুগল বোধহয় সমুদ্রের পছন্দের শীর্ষ তালিকায় স্থান নিয়েছে!

ঘুমের মাঝেই নড়েচড়ে উঠেছে সমুদ্র। কিৎক্ষণ পূর্বেও কোমল স্বর যেন পক্ষান্তরে রুক্ষ হয়ে উঠেছে! কর্কশ কন্ঠে অনবরত বলছে,
— সমুদ্র! উঠছো না কেন?
নিদ্রারত অবস্থায় বিরক্তেতে সমুদ্রের ভ্রূ যুগল কুঁচকে এসছে। আশ্চর্যে বিষয় হলো তার ঠোঁটের এক কোণে মৃদু হাসির বলি রেখা স্পষ্ট! সমুদ্র ঘুম মাখা আদুরে কন্ঠে বলে,
— পুচকি, আর একটু ঘুমাতে দেও তো,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মুহূর্তেই মেয়েলী কন্ঠস্বর প্রখর হতে প্রখরত হয়ে উঠলো। মেয়েটার গলার জোর বাড়িয়ে বলল,
— সমুদ্র, হেই সমুদ্র!তোমার সঙ্গে ইমপটেন্ট কথা আছে।
তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। আমি তোমার পুচকি বউ নই। আমি সরা।
শেষোক্ত বাক্যেটা কর্ণকুহুরে পৌঁছানো মাত্রই ধরফরিয়ে উঠে বসলো সমুদ্র। সদ্য জাগ্রত হওয়ার সত্বেও তার মুখশ্রীতে কঠোরতা স্পষ্ট ফুটে উঠলো! অত্যধিক ভয়ঙ্কর চাহনি নিক্ষেপ করল সামনে অবস্থিত সারার মুখশ্রীতে। অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে সারাহকে বলল,
— এই মেয়ে! আমার রুমে আসার অনুমতি কে দিয়েছে তোকে? স্টুপিড।
সমুদ্রের কথাগুলো কর্ণপাত হতেই সারার চোখ যুগল সজল হয়ে উঠলো। সে ম্লান কন্ঠ বলল,
— সমুদ্র!

— ডোন্ট কল মি সমুদ্র, বিয়াদপ! ভাইয়া বলবি নয়তো আমার চোখের সামনে আসবি না।
সমুদ্রের কথার প্রেক্ষিতে সারার ক্রন্দনরত কন্ঠ বলল,
— আচ্ছা, তুমি কেন আমাকে সহ্য করতে পার না। তোমার কী মনে নেই মামা মৃত্যুর আগে আমার আর তোমার বিয়ের কথা বলেছিলেন। আজ যদি মামা বেঁচে থাকতেন তাহলে মেহেরের জায়গাই আমি থাকতাম। এই ঘরটা ও আমার থাকতো। তুমি ও শুধু মাত্র আমার থাকতে।
এবার যেন সমুদ্রের অন্তরে ক্রোধের উৎপত্তি ঘটলো। জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস ত্যাগ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে। ফুসতে ফুসতে বলল,

— থাপ্পড় খেতে চাস? আমি তোর স্পর্ধা দেখে হতবাক! তুই বোধহয় ভুলে গিয়েছিস যে কার সঙ্গে কথা বলছিস। ভয় পাস না তাই তো?
সারা কেঁপে উঠলো! ছোট্ট বেলা থেকেই সমুদ্রকে ভীষণ ভয় পাই সারা। আজও ব্যতিক্রম কিছু পরিলক্ষিত হয় নি। যার ফলস্বরূপ ওড়নার আঁচল মুঠো বন্ধি করে চোখ যুগল বন্ধ করে ফেলল সে। সমুদ্র ফির তিক্ত কন্ঠে বলল,
— এই তোকে আমার রুমে কে পাঠিয়েছে?
সমুদ্রের কথার প্রত্যুত্তরে সারা কম্পনিত কন্ঠে বলল,
— তোমার বউ।
মুহূর্তেই খানিকটা ক্ষান্ত হলো সমুদ্র। ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের প্রয়াসে চোখ যুগল বন্ধ করে, স্নিগ্ধ বায়ু টেনে নিলো। অতঃপর শক্ত গলায় বলল,

— এক সেকেন্ডের মধ্যে রুম থেকে বেরিয়ে যা। গেইট আইট।
তৎক্ষণাৎ ক্রন্দনরত অবস্থায় সমুদ্রের কক্ষ হতে প্রস্থান করলো সারা। যাওয়ার পূর্বে দাঁত দাঁত চেপে বলল,
— দেখো সমুদ্র! তোমার বউ যেন আবার বড় হয়ে উড়াল না দেই। এতো ছোট বউ কোনোদিন তোমাকে সুখ দিতে পারবে না।
সারা কক্ষ হতে বিদায় নিতেই আনন্দময় শয্যা ত্যাগ করলো সমুদ্র। বিছানা থেকে উঠে চিৎকার করে ডাক দিলো মেহের কে।
— মেহের, মেহের! পাঁচ সেকেন্ড এর মধ্য রুমে আসো।

লহমায় দরজার আড়াল হতে বেরিয়ে এলো মেহের। এতক্ষন সে দরজার বাইরে ঠাই দাঁড়িয়ে ছিলো। কিৎক্ষণ পূর্বে সমুদ্রের চিৎকার শুনে কক্ষে নিকটবর্তী উপস্থিত হয়েছে সে। যার সুবাদে সমুদ্র এবং সারার প্রত্যেক বাক্য তার কর্ণকুহুরে প্রতিধ্বনি তুলছে! ইতোমধ্যে একরাশ ভয়ের আবির্ভাব ঘটেছে মেহেরের অন্তরে।
মেহেরকে দৃশ্যমান হতেই সমুদ্রের শরীরের শিরা উপশিরা ক্রোধে বশে টগবগ করে উঠেছে! ক্রোধ যেন পূর্বের চেয়ে দ্বিগুন ভয়ঙ্কর অবস্থায় স্থানান্তরিত হয়েছে। অতিরিক্ত ক্রোধ সমুদ্রের হাত পা থরথর করে কাঁপতে আরম্ভ করছে! মুহূর্তেই সমুদ্র মুঠোফোন হাতে করে দ্রুত পদে মেহেরের নিকটবর্তী উপস্থিত হলো। ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে প্রয়াসে হাতে অবস্থানকৃত মুঠোফোন শক্ত করে চেপে ধরলো। অতঃপর মেহের ভীত আঁখি যুগলে দৃঢ় দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করে, আকস্মিক তিক্ত কন্ঠ বলে উঠল,

— এই মেয়ে, দিন দিন অবুঝে পরিনত হচ্ছো! সারা কে আমার ঘরে কী তুমি পাঠিয়েছো?
মেহের স্বল্প কেঁপে উঠলো। মাথা নিচু করে বাকহীন হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অজানা আতঙ্কে মেহের বাকযন্ত্র হতে টু শব্দ নির্গতর করতে সক্ষম হলো না।
মেহেরের শান্ত পরিস্থিতি লক্ষ্য করে সমুদ্র চিৎকার করে বলল,
— হেই স্টুপিড, আনসার মি!
সমুদ্রের চিৎকার কর্ণপাত হতেই চোখ যুগল খিঁচে বুজে ফেলল মেহের। অতঃপর ঠোঁট যুগল কিঞ্চিৎ প্রসারিত করে মিনমিন করে বলল,
— আসলে, আমি ব্যস্ত ছিলাম। তাই আপুকে,,,

মেহেরের শেষোক্ত বাক্য সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তার কর্ণকুহুরে প্রতিধ্বনি তুলল কাঁচ চূর্ণ বিচূর্ণ শব্দ! তৎক্ষণাৎ চোখ যুগল উন্মুক্ত করে ভেঙে পড়া বস্তুত উপর দৃষ্টিপাত আবদ্ধ করল। ইশ! বিচ্ছিরি ভাবে ভেঙে গিয়েছে সমুদ্রের মুঠোফোন! ক্রোধের বশে সমুদ্র নিজ মুঠোফোন সজোরে মাটিতে নিক্ষেপ করেছে। পরিস্থিতি পরখ করে, নিমিষেই মেহেরের চোখ যুগল হতে কয়েক ফোঁটা দুর্বোধ্য রহস্য মাটিতে গড়িয়ে পড়ল।
সমুদ্র তৎক্ষণাৎ ঘর থেকে প্রস্থান করল। যাওয়ার পূর্বে মেহেরকে আদেশ স্বরে বলল,
— ফাজিল, আর যদি পাকামি করেছে! আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।

মেহের সজল নয়নে তাকিয়ে রইলো সমুদ্রের যাবার পানে। লোকটা পুনরায় তাকে বুঝলো! মেহের ধীর পদে বিছানার গিয়ে নতজানু হয়ে বসল। অতঃপর দু হাতের বন্ধনে মুখশ্রী আবৃত করে ক্রন্দনে ভেঙে পড়ল। বারংবার তার মস্তিষ্কের ভেসে উঠলো সারার বলা প্রতিটি বাক্য। যার ফলস্বরূপ ঈর্ষার আবির্ভাব ঘটল! তার হৃদয় গহীনে হানা দিল একরাশ অভিমান। লোকটার হৃদয় সত্যিই ভীষণ পাষাণভার! অযৌক্তিক কারণে লোকটা তাকে ভর্ৎসনা করল? সমুদ্র কেন বুঝে না, মেহেরের হৃদয়ে যে মেঘ জমে অগুনিত!

প্রভাতের প্রথম প্রহর হতেই ব্যস্ত জারা। ছোট ফুফু শাশুড়ি তাকে পিঠা তৈরি করতে আদেশ করছেন। মেহেরকে এসব ঝামেলায় যুক্ত করেন নি সে। আজ নাকি নতুন অতিথির আগমন ঘটবে। তার বাবার বাড়ির লোকজন আসবে। এমনকি মেহেরের মা বাবাও আসবেন। ছোট ফুপু শাশুড়ি বারংবার জারাকে হুকুম দিচ্ছেন যেন অতি দ্রুত রান্নার সমাপ্তি ঘটায়। তার ছেলে রাফু খুব শীঘ্রই উপস্থিত হবে। রাত্রির অন্তিম প্রহরে সমুদ্রের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে রাফু। তথ্যটা জানতে পেরে অত্যধিক আনন্দিত জারা। অনেক দিন বাদে ফির রাফুর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হতে চলল।

— স্যার, মিস্টার রাফি চৌধুরী শহর ছেড়ে পালিয়েছে। দুঃখিত, আমারা ওকে আ্যরেস্ট করতে সক্ষম হয় নি।
— নো প্রবলেম, মিস্টার শাফি। আপনি সময় নিন। আই থিংক রাফি এই শহরেই কোথাও না কোথাও পড়ে আছে। চিন্তা করবেন না ওকে আ্যরেস্ট করার না অবধি আমি ঢাকায় ফিরব না।

কথাগুলো বলেই মুচকি হেসে উঠলো ইয়াদ। আজ তার আনন্দের দিন। তার বিশ্বাসঘাতকের পতন খুবই সান্নিধ্যে! ইয়াদের এতোদিনের পরিশ্রম সার্থক। আজ সে রাফি চৌধুরী অর্থাৎ রাফুর সমস্ত অজাক কুকাজের তথ্য সংগ্রহ করতে সফল হয়েছে। ছেলেটাকে যত সহজ সরল বলে ধারণা করছিল ইয়াদ। সে যেন এক সাধারণ যুবক নয় বরং মাফিয়া। রাফুর বৃহৎ এক টিম বিদ্যমান! অপরাধ জগতে বেশ নামকরা তার ছোট ফুফুর একমাত্র ছেলে। বিষয়টা সম্বন্ধে অবগত হতেই ঘৃণায় ইয়াদ বিষয়ে উঠেছে! তার ছোট ভাই যে এতো জঘন্য অপরাধ লিপ্ত তা তার অজানা। রাফুর সঙ্গে অতিবাহিত স্মৃতি স্মরণ করতে অতীতের ডুব দিল সমুদ্র। এই অবস্থায় শাফির কন্ঠস্বর তার কানে পৌঁছাতে অক্ষম।
ইন্সপেক্টর শাফি ইয়াদের প্রত্যুত্তর না পেয়ে অতঃপর খানিকটা জোর গলায় বলল,

— স্যার,, ভাবির কথা চিন্তা করছেন!
মুহূর্তেই ইয়াদ স্বাভাবিক হলো। তৎক্ষণাৎ জারার মুখশ্রীতে প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠল তার মস্তিষ্কে! ইয়াদ গুকনো ঢোক চেপে বলল,
— মিস্টার শাফি, আমাকে একটু একা থাকতে দিন।
ইন্সপেক্টর শাফি মৃদু হেসে বলল,
— ওকে স্যার।
শাফি তৎক্ষণাৎ ইয়াদের কক্ষ হতে প্রস্থান করল। শাফি যাওয়ার পর দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করল ইয়াদ। অতঃপর ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির রেখা টেনে পকেটে হতে মুঠোফোন বের করল। উদ্দেশ্যে জেবুর কন্ঠস্বর একটি বারের জন্যে কর্ণপাত করে, অন্তর প্রশান্তিময় করা।

ঘড়ির কাঁটায় ছুঁই ছুঁই দুই। প্রভাত গড়িয়ে দ্বি প্রহরে ঠেকেছে। চার দেয়ালের অবরুদ্ধ নিষ্ক্রিয়তায় হাঁফিয়ে উঠেছে সমুদ্র। খানিক পূর্বে ইসরাত বেগম কে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে মেহের। কিন্তু নিজে স্ব শরীরে একটি বারের জন্যও সমুদ্রের নিকটবর্তী উপস্থিত হয় নি। নিজের ত্রুটি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে সমুদ্র। মেহের বোধহয় তার উপর অভিমান করেছে। ইতোমধ্যে কয়েক বার মেহেরকে সান্নিধ্যে পাবার প্রয়াস করছে সমুদ্র। বার পাঁচেক রান্না ঘরের আশেপাশে ঘুরঘুর করেছে। কিন্তু প্রত্যেক বার অসহায় ন্যায় তাকে ফিরতে হয়েছে।

মাত্র শাওয়ার নিয়ে বেলকনিতে প্রবেশ করছে সমুদ্র। মেহেরের এক পলক দর্শন পেতে সমুদ্রের আঁখি যুগল মরিয়া হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে। তার সহ্য করতে পারছে সে। অবশেষে গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে নিজ কক্ষ ত্যাগ করল। সর্বপ্রথম সমুদ্র চোরের ন্যায় উপস্থিত হলো পাক ঘরে। কিন্তু আফসোস মেহেরের সন্ধান মিলল না। জারার উপস্থিত দৃশ্যমান হতেই দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করল সমুদ্র। অতঃপর মলিন কন্ঠে বলল,
— জারা, মেহের কোথায়? ওকে যে দেখছি না।

আকস্মিক সমুদ্রের কন্ঠস্বর পেয়ে আতকে উঠলো জারা। পশ্চাৎ মুখী হয়ে নিজ কর্মে ব্যস্ত ছিল সে। অবশ্য সমুদ্রের হঠাৎ উপস্থিত তার নিকট মোটেও বিষ্ময়ক নয়। নিমিষেই জারার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। অতঃপর সমুদ্রের মুখ পানে দৃষ্টিপাত আবদ্ধ করে, নিম্ন কন্ঠে বলল,
— মেহের তো ইতি আপুর সঙ্গে ছাদে গিয়েছে। মেঘলা আকাশ তাই আপু ছাদে যাবার জন্যে জোর করছিল। অবশেষে বাধ্য হয়ে মেহের তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছ।
সমুদ্র জারার প্রত্যুত্তর স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,

— মেহের লাঞ্চ করছে ?
— জী ভাইয়া জোর করে খাইয়ে দিয়েছি। কেন ভাইয়া?
— না তেমন কিছু নয়। ধন্যবাদ।
আর এক মুহূর্তেও অপেক্ষা করল না। দ্রুত পদে রান্নাঘর প্রস্থান করে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। আচমকা সমুদ্রের থেকে ‘ধন্যবাদ’ প্রত্যাশা করে নি জারা। বিষয়টা লক্ষ্যে করেই অট্টস্বরে হাসিতে ফেটে পড়ল।

স্তব্ধ প্রকৃতি। বৈশাখ হওয়ার পূর্বেই কালবৈশাখীর আগমন! প্রকৃতির এই ঘটনা যেন বিরল। আকাশের বুকে বারংবার বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আবহাওয়া পূর্বাভাস হতে জানা গিয়েছে আজ ব্যাপক বর্ষণ হবে আজ। অনাকাঙ্খিত বর্ষণ! ধরণীর হৃদয় চিরে মৃদু গর্জন ভেসে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে ছাদ ত্যাগ করতে নারাজ মেহের। আজ সর্বপ্রথম ছাদ দর্শন করছে সে। প্রকৃতির এই মায়াবী রূপ মেহেরকে মুগ্ধ করে তুলছে। তার বড্ড অভিপ্রায় জেগেছে বর্ষণের পরশে দেহ শীতল করার। ইতোমধ্যে ইতি বিদায় নিয়েছে ছাদ থেকে। অবশ্য নিজ আগ্রহে প্রস্থান করেনি সে, বরং সমুদ্রের চোখের ভাষার মেহেরকে না জানিয়ে প্রস্থান করেছে। ইতির গমন সম্বন্ধে মেহেরের অজানা। সে দৃঢ় দৃষ্টিতে আকাশ পানে দৃষ্টি নিবন্ধ রেখেছে।

নিত্যদিনের ন্যায় মাথা ওড়ানা দ্বারা আবৃত রেখেছে মেহের। শুভ্র রয়ের লং ফ্রোগ পরিহিত অবস্থায় ভীষণ মোহনীয় লাগছে মেহেরকে। সমুদ্রের খানিকক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেহেরের মুখ পানে! অথচ মেহের বিষয়টা উপলব্ধি করতে অক্ষম।
মিনিট পাঁচেক নিরবতা পালন করলো সমুদ্র। ইতোমধ্যে কয়েক ফোঁটা বর্ষণ বিসর্জিত হলো ধরণীর বুকে! সমুদ্রের তৎক্ষণাৎ মেহেরের নিকটবর্তী এসে দাঁড়াল। অতঃপর ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে বলল,
— কি হয়েছে পুচকি? মন খারাপ বুঝি!
সমুদ্রের কথার প্রেক্ষিতে, পূর্বের ন্যায় ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো মেহের। সমুদ্রের ফির বলল,
— বৃষ্টি পড়ছে, ঘরে চলো।
মেহের গম্ভীর মুখে প্রত্যুত্তর দিলো,
— আমি যাব না।

সমুদ্র আর এক মুহূর্তে ও অপেক্ষা করলো না। অতঃপর দ্রুত খপ করে মেহেরের হাত ধরে বলল,
— সরি তো বউ।
সমুদ্রের কথা শুনে অদ্ভুত অনুভূতি বয়য়ে গেল মেহেরের অন্তরালে! তৎক্ষণাৎ চোখ জোড়া বুজে, একরাশ সাহস যুটিয়ে বলে উঠলো,
— ছাড়ু্ন, আমি যাব না।

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৫৭

মুহূর্তেই সমুদ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। পরিশেষে ভ্রূ যুগল কুঁচকে সে বলে উঠলো,
— যাবেন না তাই তো? ওকে নো প্রবলেম, আমার আবার বাচ্চাদের কোলে নিতে কোন সমস্যা নেই। তাছাড়া আগে থেকেই অভ্যস্ত হওয়াই বেটার!

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৫৯