তুমি নামক প্রশান্তি পর্ব ১৪

তুমি নামক প্রশান্তি পর্ব ১৪
জেনিফা চৌধুরী

ফোস্কা গুলো গলে কেমন ঘা’য়ের মতো ক্ষত হয়ে গেছে, ক্ষত জায়গা গুলোতে খুব যত্ন করে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে নীলাভ্র। মাঝে মাঝে খুব সাবধানতা অবলম্বন করে ফুঁ দিচ্ছে। বেলী নিষ্পলক চেয়ে আছে নীলাভ্রর চিন্তিত চেহারার পানে। ছেলেটা তখন কিছু না বলে বেরিয়ে গিয়ে, মিনিট কয়েকপর হাতে মলম নিয়ে আবার ফিরে আসে।

কোনো শব্দ না করে বেলীর হাতে সযত্নে মলম লাগিয়ে দিতে লাগলো। চুল গুলো সামনের দিকে ঝুঁকে আছে ছেলেটার, চোখ দুটো বেলীর হাতে সীমাবদ্ধ, ঠোঁট দুটো কিছুক্ষণ পর পর জিহ্বা দ্বারা ভিজিয়ে নিচ্ছে। এই দৃশ্যটাকে খুব ইন্টারেস্টিং বিষয় মনে হচ্ছে বেলীর কাছে। ছেলেটার মুখে এত মায়া কেনো? নীলাভ্র হুট করে প্রশ্ন করলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? আমার লজ্জা লাগছে।”
হঠাৎ এমন প্রশ্নে বেলী হকচকালো। খানিক কেঁশে উঠলো। দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। আমতা আমতা করে বললো,
“কই? তাকিয়ে ছিলাম না তো।”

নিজের কান্ডে নিজেকেই লজ্জায় পড়তে হবে, ভাবেনি বেলী। নীলাভ্র যে তার চাহনী খেয়াল করেছে, ভাবতেই লজ্জায় মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। বেলীর কথা শুনে নীলাভ্র শান্ত স্বরেই বললো,
“আমাকে অন্ধ মনে হয় তোর?”

বলে বেলীর মুখ পানে তাকালো। আর বেলী সাথে সাথে দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো,
“ও মা! অন্ধ মনে হবে কেনো? আপনি যে চোখে দেখতে পান, তা তো আমি জানি।”
নীলাভ্র বেলীর হাতে শেষ বারের মতো মলম টুকু লাগিয়ে, ফুঁ দিলো বার কয়েক। মলমটা টেবিলে রেখে দিতে দিতে বললো,

“আজকে তোকে বেশ ফুরফুরে লাগছে, ব্যাপার কি?”
নীলাভ্র প্রশ্ন করতে দেরি হলেও বেলীর হাসতে দেরি হলো না। কি চমৎকার, হাসে মেয়েটা! লম্বা চুলগুলো আজ বড্ড এলোমেলো। হয়তো হাতের যন্ত্রণায় বাঁধতে পারেনি। চোখের কোটর গুলো খানিক ফুলে আছে, ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি। দেখতে কি ভয়ংকর সুন্দর লাগছে!

মানুষের গায়ের রঙ দিয়ে সৌন্দর্য বিচার করা বোকামি। আসল সৌন্দর্য তো মানুষের চোখের দৃষ্টিতে, যার চোখের দৃষ্টি সুন্দর, সে কুচকুচে কালো মেয়েটার মাঝেও সৌন্দর্য খুঁজে পাবে। নীলাভ্রকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বেলীর হাসি থেমে গেলো। দুজনের একবার চোখাচোখি হলো। নীলাভ্র দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো, বললো,

“খেয়েছিস?”
বেলী দুইদিকে মাথা নাড়ালো। অর্থাৎ ‘না’। খাবে কি করে? সকাল সকাল রাফিন নামক উটকো ঝামেলাটা এসে হাজির হয়েছিলো। নীলাভ্র কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো। সোজা নিজের রুমে চলে আসলো। গায়ের শার্টটা চেঞ্জ করে একটা ধূসর রঙের টি-শার্ট পড়ে নিলো। জিন্স চেঞ্জ করে কালো রঙের টাউজার পড়ে নিলো। তড়িঘড়ি করে কাউকে ফোন করলো। কয়েকবার রিং হতেই ওপাশ থেকে কেউ ফোন রিসিভ করতেই, নীলাভ্র বলে উঠলো,

“আজ আমি আসতে পারব না। তোমরা সব সামলে নিও। আর হ্যাঁ, চোখ কান খোলা রেখে কাজ করো।”
ওপাশের মানুষটাকে প্রতিউত্তরে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কে’টে দিলো। ওপাশের মানুষটা নিশ্চয়ই মনে মনে নীলাভ্রকে ‘আজব প্রাণী’ ভাবছে। ভাবলে ভাবুক, এতে ওর কিছু যায় আসে না। রুম থেকে বেরিয়ে সোজা কিচেনে ঢুকে পড়লো। সীমা কিচেনেই টুকটাক কাজ করছিলো। নীলাভ্রকে হঠাৎ কিচেনে ঢুকতে দেখে সীমা বেশ আদুরে স্বরে বললো,

“কিছু লাগবে বাবা? আমাকে বলতে পারতিস তো, তোর আবার এখানে আসার কি দরকার ছিলো? কি লাগবে আমাকে বল…।”
নীলাভ্র কিছু খুঁজতে খুঁজতে উত্তর দিলো,
“খাবার কোথায়?”

সীমা একবার ভাবলো নীলাভ্র তো সকালের নাস্তা করেছে, তাহলে এখন কেনো খাবার চাইছে? পরক্ষণেই ভাবলো, ‘হয়তো ক্ষিদে পেয়েছে’। তাই কিছু না বলে সোজা ডাইনিং টেবিলে গিয়ে, দুইটা পরটার, সাথে আলু ভাজি একটা প্লেট সাজালো। নীলাভ্র সীমার সামনে এসে দাঁড়াতেই, সীমা প্লেটটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,

“একটা ডিম ভেজে দিব বাবা? ক্ষিদে পেয়েছি বুঝি?”
নীলাভ্র হালকা হাসলো, বললো,
“না মা। এই খাবারটা আমার জন্য না, বেলীর জন্য।”

বলে সোজা বেলীর রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো। মায়ের মুখের অবস্থা মনে করে হাসি পাচ্ছে কেনো জানি? আর সীমা যেনো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মুখটা এই মুহূর্তে ‘হা’ হয়ে আছে। চোখের পলক পড়ছে না। তার ছেলে বেলীর জন্য খাবার নিয়ে গেলো। ভাবতে পারছেনা। ভাবলেই রাগে শরীর শিরশির করে উঠছে। এখন যদি ছেলেকে কিছু বলতে যায়, তাহলে তো তুলকালাম কান্ড হবে। তাই দাঁত খিটে দাঁড়িয়ে রইলো।

বেলী ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে এক হাতে এলোমেলো চুলের বেনুনী খোলার চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। অন্য হাতে মলম লাগানোতে বেশ জ্বলছে। কি এক বাজে অবস্থা! হাতের দিকে তাকালে, নিজেরেই ভয় লাগছে। নীলাভ্র রুমে ঢুকে দৃশ্যটা দেখে সাথে সাথে ধমকের স্বরে বলে উঠলো,

“কি করছিস? হাতে ব্যাথা লাগবে তো।”
নীলাভ্রর কন্ঠ পেয়ে বেলী পেছন ফিরলো, দেখলো নীলাভ্রর হাতে নাস্তার প্লেট। কেমন যেনো সবটা স্বপ্ন মনে হচ্ছে। সত্যিই কি নীলাভ্র আজ এত স্বাভাবিক আচরণ করছে? নাকি সবটাই বেলীর কল্পনা। নিজের চোখকে নিজেরেই বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

মনে মনে খুব প্রার্থনা করছে, যদি এটা স্বপ্ন হয় তাহলে যেনো এই স্বপ্ন কোনোদিন শেষ ন হয়। আর, যদি সত্যি হয়, তাহলে এই মুহূর্তটা এখানেই থেমে যাক, ঘড়ির কাটা থেমে যাক, সময় থমকে যাক। বেলী চেয়ে আছে তো আছেই, চোখের পলক ফেলছে না। নীলাভ্র নাস্তার প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে, এগিয়ে এলো বেলীর কাছে৷ বেলীকে আদেশের স্বরে বললো,

“এখানে বস। আমি চুল বেঁধে দিচ্ছি।”
বেলীর মনে হলো ও এক মুহূর্তের জন্য কানে শুনতে পেলো না, মানে নীলাভ্র কি সজ্ঞানে এইসব করছে? প্রথমে যত্ন করে হাতে মলম লাগিয়ে দেওয়া, নাস্তা নিয়ে আসা, এখন আবার চুল বেঁধে দিবে বলছে। সব কি স্বপ্ন নাকি সত্যি? বেলী শব্দ না করে চুপচাপ বসে পড়লো।

নীলাভ্র হাতে একটু তেল নিয়ে সুন্দর করে বেলীর এলোমেলো বেনুনীটা খুলে দিতে লাগলো। ওর সম্পূর্ণ নজর বেনুনীতে, ওকে দেখে মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে এর থেকে বড় কাজ আর কিছু নেই। প্রায় কয়েক মিনিটের মাথায় সম্পূর্ণ এলোমেলো বেনুনীটা খুলতে সক্ষম হলো।

চিরুনী নিয়ে আলতো, সযত্নে বেলীর চুল আঁচড়ে দিতে লাগলো। ড্রেসিং টেবিলের আয়নাতে এক দৃষ্টিতে নীলাভ্রর দিকে চেয়ে আছে বেলী। ভাবছে, এত সুখ কি ওর কপালে সইবে? নাকি আবার কোনো ঝড়ে সব এলোমেলো হয়ে যাবে? ভাবতেই, বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো৷

নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো। নীলাভ্র বেলীর চুল আঁচড়ে দিয়েছে ঠিকি, কিন্তু কিছুতেই খোঁপা করতে পারছেনা। চুল পেঁচাতেই পারছে না। বার বার খুলে যাচ্ছে। বিরক্তিতে নীলাভ্রর কপালে ভাঁজ পড়েছে। তা দেখে কেনো যেনো বেলীর খুব হাসি পাচ্ছে, ঠোঁট টিপে হাসছে বেলী। আর নীলাভ্র বার বার চেষ্টা করেই যাচ্ছে।

ইশু কি মনে করে যেনো বেলীর রুমে এসেছিলো। দরজায় এসে দাঁড়াতেই সামনের দৃশ্যটা দেখে ওর চোখ কপালে। দুই হাত গালে দিয়ে অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো। সামনের দৃশ্যটা ওর বিশ্বাস হলো না। ওর ভাইয়্যু স্বয়ং বেলীর চুল বেঁধে দিচ্ছে। বিশ্বাস করার জন্য নিজেই নিজেকে জোরে চিমটি কা’টলো। ব্যাথা পেয়ে যেনো শব্দ বের না হয় তাই মুখ চে’পে ধরলো। ফিসফিস করে নিজে নিজেই বলে উঠলো,

“তার মানে আমি স্বপ্ন দেখছি না। সত্যি! ওহ মাই গড! ভাইয়্যু তাহলে বেলীকে মেনে নিয়েছে? ভাইয়্যুর সব অভিমান কে’টে গেছে। ”
ভাবতেই ইশুর ঝাকানাকা ডান্স দিতে মন চাচ্ছে। কিন্তু, এই মুহূর্তে পারছে না। তখনি, মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসলো, ফোনের ক্যামেরা চালু করে লুকিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে নিলো ওদের। তারপর ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে মুগ্ধতা স্বরে বলে উঠলো,
“ইস এক জোড়া লাভ বার্ড! কোনো শ” কু”নের নজর না লাগুক।”
বলে চলে গেলো।

নীলাভ্র অনেকক্ষণ চেষ্টা করে এইবার রাগে চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলো,
“ধুর ছাই। আশ্চর্য! এত বড় চুল তুই সামলাস কি করে? আমার হাত গুলা একদম ব্যাথা হয়ে গেছে। আমি আর পারব না।”
বলে খাটের উপর ধপ করে বসে পড়লো।

নীলাভ্রর চেহারা দেখে বেলী আর হাসি আটকে রাখতে পারলো না। শব্দ করেই হেসে দিলো। বেলীকে হাসতে দেখে নীলাভ্রর রাগ যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। তাও কিছু বলতে পারছে না। বেলীর হাসি থামানোর জন্য শান্ত স্বরেই বললো,
“খোলা চুলে তোকে একদম…। ”

এইটুকু বলে কেমন করে হাসলো। এই হাসিটা কি লজ্জা মাখা হাসি? বেলী ঠিক ঠাওর করতে পারলো না। কিন্তু নীলাভ্র কি বলবে বুঝতে পেরে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো। মাথা নিচু করে রাখলো। তখনি নীলাভ্র আবার সেই সুরে বলে উঠলো,
“খোলে চুলে তোকে.. তোকে একদম..। ”

থেমে থেমে এইটুকু বলে তারপর দাতে দাত চে’পে বলে উঠলো,
“একদম পে-ত্নীর মতো লাগে। কি ভেবেছিলি? বলবো পরীর মতো লাগে। এহহ আইছে পরী, তোর মতো পে-‘ত্নীরে পরী বললেও পরী লজ্জা পাবে।”

বলে মুখ ভেংচি কে”‘টে নাস্তার প্লেটের দিকে এগিয়ে গেলো। আর বেলী আহা’ম্মকের মতো চেয়ে আছে। চোখের পাতা ঝাপটালো কয়েকবার। মনে মনে ভাবলো ‘ও কি দেখতে এতই বা’জে?’ কথাটা মনে করে অভিমানে মুখটা গোমড়া করে বসে রইলো। নীলাভ্র বেলীর সামনে সুন্দর করে হাঁটু ভাঁজ করে বসলো।

যত্ন করে খাবার তুলে দিলো বেলীর মুখে। আজ বেলীর অবাক হওয়ার দিন। নীলাভ্রর এত যত্ন ওর কপালে সইবে তো। চোখের কোনে পানি টলমল করছে, এটা আনন্দ অশ্রু। সব অভিমান গলে জল হয়ে গেলো। নীলাভ্র যত্ন করে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। আর বেলী মুগ্ধ চোখে দেখছে মানুষটাকে। শেষ খাবার টুকু বেলীর মুখে তুলে দিয়ে নীলাভ্র বললো,

“তখন প্রশ্ন করেছিলি না ‘ভালোবাসি কিনা?’
প্রশ্নটা শুনেই বেলী জোরে জোরে মাথা নাড়ালো। মুখের খাবার টুকু তাড়াতাড়ি গিলে নিয়ে, কোনোরকম উত্তর দিলো,
” হ্যাঁ, আমাকে ভালোবাসেন নীলাভ্র ভাই?”
বেলীর প্রশ্নে নীলাভ্র হাসলো। পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বললো,

“আগে পানি খেয়ে নে। বলছি।”
বেলী ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে ফেললো। তারপর বললো,
“এবার বলুন।”
বেলীর কান্ড দেখে নীলাভ্র হাসবে নাকি কাঁদবে খুঁজে পেলো না। মেয়েটা ওকে এত ভালোবাসে? এতদিন কেনো বুঝতে পারেনি। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শান্ত স্বরে বললো,

“শুধু ভালোবাসি বললেই সব সময় ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে না। ‘আমি তোমাকে ঘৃণা করি’ কথাটা দিয়েও অনেক সময় তীব্র ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বুঝলি?”
বলে বেলীর সামনের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে হাসলো। বেলী প্রথমে নীলাভ্রর কথাটার মানে বুঝতে না পারলেও এখন ঠিক বুঝে গেছে। মুখে হাসি ফুটলো, চোখ দুটো খুশিতে চকচক করে উঠলো। মন চাচ্ছে এক্ষুনি নীলাভ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে, কিন্তু পারছে না।

“কি প্রেম? বাবাগো বাবা!”
হঠাৎ করে এমন বাক্য কানে আসতেই বেলী আর নীলাভ্র দুজনেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো তানিশা, রাকিব দাঁড়িয়ে। ওদের দেখেই নীলাভ্র আর বেলী দুজনেই অপ্রস্তুত ভাবে হাসলো। তানিশা ওদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে দুষ্টু হাসলো। তা দেখে নীলাভ্র মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,

“তোমরা আড্ডা দেও। আমি আসছি।”
বলে আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ালো না। এই মুহূর্তে এখানে দাঁড়ানো মানে, নিজের ইজ্জত নিজের হাতে শেষ করা। নীলাভ্র চলে যেতেই ওরা তিনজন এক সাথে হেসে উঠলো। রাকিব রুমে ঢুকেই বিছানায় ধপ করে সুয়ে পড়লো, আয়েশী ভঙ্গীতে বললো,

“উফফ শান্তি! বেলী এক গ্লাস শরবত বানিয়ে নিয়ে আয় তো। এই রৌদ দিয়ে এসে আমি ক্লান্ত হইয়া গেছি।”
রাকিবের কথা শুনে তানিশা রাকিবের পায়ে চি’ম’টি কে’টে বলে উঠলো,
“গাঁ*ধার বাচ্চা, তুই বেলীরে হুকুম দেস কেন? জানোস না বেলীর হাত পু*ইড়া গেছে।”
কথাটা শুনে রাকিব সাথে সাথে উত্তর দিলো,

“ও হ্যাঁ, ভুইলা গেছিলাম রে। ”
সাথে সাথে তানিশা উত্তর দিলো,
“তুই রুগী দেখতে আইয়া ভ্যাট’কাইয়া পড়লি কেন?উঠ কইতাছি। নয়তো এক লা*থি খাবি।”
রাকিবের পাল্টা জবাব,

“তোর কি? আমি কি তোর খাটে হুইয়া আছি (শুয়ে আছি)? তোর জ্ব” লে কেন?”
বেলী ওদের কান্ড দেইখা বুঝতে পারলো এরা দুজন থামবার মানুষ নয়। তাই কানে হাত দিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
“এই চুপ! একদম চুপ। আর একটাও কথা বলবি না।”
তানিশা ভদ্র মেয়ের মতো ঠোঁটের উপর আঙ্গুল রেখে বললো,

“আমি কি শুরু করছিলাম। ওই গ*রু শুরু করছে। আমার কি দোষ?”
বেলী কিছু বলার আগেই, রাকিব বললো,
“এহহ আইছে আমার ভদ্র মাইয়া। কিছু জানেনা লাগে। বে’ক্কল।”
তানিশা গর্জে উঠে কিছু বলবে, তার আগেই বেলী বলে উঠলো,
“তোরা এখানে কি করছিস?”

তানিশা সাথে সাথে উত্তর দিলো,
“তোকে দেখতেই আইছি। আর তুই এমন প্রশ্ন করস কেন।”
বেলী ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কি করে জানতে পারলি? আমার হাত পু*ড়ে গেছে।”
তানিশা আয়েশ করে খাটের উপর পা তুলে বসলো। তারপর উত্তর দিলো,

“তোরে সকালে ফোন দিছিলাম। তুই তো ফোন ধরস নাই দেইখা, আন্টিরে দিছিলাম। তখনি, আন্টি কইছে।”
বলে বেলীর খোলা চুপ গুলো খোঁপা করে দিতে লাগলো। আর বেলী মুচকি হাসলো। মেয়েটা এক নিমিশেই বুঝে গেলো কি করে যে, খোলা চুলে থাকতে ওর অসুবিধা হচ্ছিলো? তানিশা একটু চুপ থেকে জোরে বলে উঠলো,

“জানোস কি হইছে?”
তানিশার কথা শেষ হতে না হতেই রাকিব উত্তর দিলো,
“তুই না কইলে জানবো ক্যামনে?”
তানিশা এইবার একটা বালিশ ছু’ড়ে মা*রলো রাকিবের দিকে। আর বেলী ওকে থামিয়ে বললো,
“বল, কি হইছে?
তানিশা শান্ত স্বরেই উত্তর দিলো,

” ওই রাফিন, কফিন স্যার তোর কথা জিগাইছিলো। তুই কেন ভার্সিটি যাস নাই? পরে আমি কইছিলাম তোর হাত পু*ইড়া গেছে । তারপর আর কিছু কয় নাই।”
কথাটা শুনেই বেলীর ভেতর জমানো রাগ গুলো ভেসে উঠলো। তার মানে তানিশার থেকেই খবর পেয়ে রাফিন এখানে এসেছিলো, সিমপ্যাথি আদায় করার জন্য। বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
“বিরক্তিকর একটা ছেলে।”

তুমি নামক প্রশান্তি পর্ব ১৩

তারপর ওরা তিনজন মিলে আড্ডায় মেতে উঠলো। বেলীর মনের সব বিষাদ কেটে গেলো নিমিশেই। এমন কিছু বন্ধু থাকলে জীবনে কোনো বিষাদ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বেঁচে থাকুক বন্ধুত্ব । বন্ধুত্ব শব্দটা ছোট হলেও, এর বিশালতা অনেক। বন্ধুত্ব তো শব্দটা বড় কিছু না, ধরে রাখতে জানলে এর স্থায়ীত্ব হাজার বছর অব্দি হয়। এইসব ভাবতে ভাবতেই বেলীর মনে ভয় হানা দিচ্ছে, এত সুখ, এত হাসি ওর কপালে সইবে তো…?

তুমি নামক প্রশান্তি পর্ব ১৫