তুমি নামক প্রশান্তি পর্ব ৩০

তুমি নামক প্রশান্তি পর্ব ৩০
জেনিফা চৌধুরী

সজোরে দুইটা থা°°/প্প/°°ড় খেয়ে নীলাভ্র গালে হাত দিয়ে চেয়ে আছে। চোখে লেগে আছে অসহায়ত্ব। যে মানুষটা ছোট বেলা থেকে মায়ের মতো আদর, স্নেহ দিয়ে বড় করে তুলেছে। আজ সেই মানুষটা গা°য়ে হাত তুলল! তাও বিনা দোষে! ভাবতেই অবাক লাগছে নীলাভ্রর। কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। রিতা রা°গান্বিত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। তার সর্বাঙ্গে কাঁ°পুনি হচ্ছে। রাগে বশিভূত হয়ে তৃতীয় থা°°/প্প/°°ড়টা মা°°/রা/র জন্য হাত উঠাতেই, বেলী সাহস করে মায়ের হাতটা ধরে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে অনুরোধ বাক্যে বলে উঠল,

“মা! আর মা°°/র/°°বে না প্লিজ।”
বেলীর চোখ অশ্রুসিক্ত। নীলাভ্রর দৃষ্টিতে মেঝের সাদা ঝকঝকে টাইলসের উপর। চোখ দুটো যে, অশ্রুসিক্ত তা বুঝতে দেরি হলো না বেলীর। রিতা কিছু একটা ভাবল হয়তো? কিছু সময়ের ব্যবধানে গম্ভীর স্বরে বলল,
“এই ছেলেটা আমার বাসায় কী করছে? এক্ষুনি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বল। নয়তো আমি ধা°°/ক্কা মে/°°রে বের করে দিব।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রিতার এহেন কথা শুনে নীলাভ্রর চোখ জোড়া থেকে দুই ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। শোকে নীলাভ্র স্তম্ভিত, কিংকর্তব্যবিমূঢ় কণ্ঠে বলে উঠল,
“ফুপ্পি! তুমি আমাকে এইভাবে বললে! ”

রিতা পুনরায় তাকাল। স্নেহ, মায়াহীন চোখে। যেই চোখে আগে নীলাভ্র ভালোবাসা, মায়া খুঁজে পেতো। আজ সেই চোখে কোনো স্নেহ, মায়া দেখতে পাচ্ছে না। কী অদ্ভুত! এই সাতদিনে কী সব পাল্টে গেলো? সবাই কী দূরে সরে গেলো? কে জানে? বুকের মধ্যে তীব্র হাহাকার যুক্ত কান্নারা দলবেঁধে আছে। যেকোনো মুহূর্তে সমুদ্রের পানির উপর তীরে উপচে পড়বে। রিতা কাঠকাঠ গলায় জবাব দিলো,

“তুই আমাকে আর ফুপ্পি বলে ডাকবি না। তুই কী করে পারলি আমাদের সবাইকে এভাবে কষ্ট দিতে? এবারও তোর বেলীর কথা মনে হলো না? মনে হলো না তোর মায়ের কথা, পরিবারের সবার কথা? সবাই কতটা দুশ্চিন্তায় দিন কা/°°টিয়েছে সেই ধারণা তোর আছে? কী এমন কাজে ছিলি তুই? বল কী কাজ ছিলো তোর?”

বলতে বলতে রিতা কান্নায় ভে°°/ঙে পড়ল। নিজের শক্ত আবরণটা ধরে রাখতে পারল না। মায়েরা যতই শক্ত হোক। সন্তানের কাছে বরাবরেই তারা খুব দূ°র্বল, নরম। নীলাভ্র কিছু বলল না। শুধু নিঃশব্দে রিতাকে জড়িয়ে ধরল। মেয়েদের মতো ফুঁপিয়ে কান্না করে উঠল। রিতা দুই হাতে নীলাভ্রর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। শান্ত, শীতল স্বরে বলল,
“তুই আমাকে সত্যি করে বল, তুই কোথায় ছিলি?”

নীলাভ্র কিছু সময় চুপ থাকল। খানিক সময় পর সবটা খুলে বলল। রিতার মন থেকে একটা ভারী পাথর নেমে গেলো। বেলীর থেকে সেদিন ওইসব রি°পোর্টের কথা শুনে দুশ্চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল। নীলাভ্র রিতার হাত দুটো শ°ক্ত করে আকঁড়ে ধরল। নরম স্বরে বলল,

“আমাকে ক্ষমা করে দাও ফুপ্পি, প্লিজ। আমি আর কখনো তোমাদের সবাইকে ছেড়ে যাব না।”
রিতা কিছু বলল না। পরম আবেশে হাত বুলিয়ে দিলো নীলাভ্রর গালে। মাঝখান থেকে বেলী চ্যাঁচিয়ে বলে উঠল,
“কোনো ক্ষমা করা হবেনা আপনাকে। এক্ষুনি আমার বাসা থেকে বের হয়ে যান। আপনাকে দেখলেই আমার গা-পিত্তি জ্ব°°/লে যাচ্ছে।”

বেলীর কণ্ঠে তীব্র রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটল। রিতা হেসে উঠল হাহা করে। আর নীলাভ্রর মুখটা চু°পসে গেলো। রিতা ওদের দুজনকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য, রুম থেকে বেরিয়ে গেলো৷ চা বানানোর বাহানায়। রিতা চলে যেতেই বেলীর রাগটা দ্বিগুণ হয়ে উঠল। কোমরে হাত রাখল। আঁখি জোড়ায় আ/°°গুন জ্ব°°/লে উঠল। বেলীর রাগান্বিত মুখটা দেখে নীলাভ্রর এবার হাসি পেলো। বেশ প্রফুল্ল মনে বলে উঠল,

“তোকে রাগলে কিন্তু বেশি সুন্দর লাগে, বেলীপ্রিয়া।”
বলে বেলীকে দ্বিতীয় বার কোনো শব্দ উচ্চারণ করার সুযোগ দিলো না। দুই হাতে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিলো। নরম, শান্ত, শীতল কণ্ঠে বলে উঠল,
“ভালোবাসি, বেলীপ্রিয়া।”

ব্যস! লাগে কী আর? বেলীর রাগ নিমিশেই উধাও। ছেলেটা জাদু জানে হয়ত? কী সুন্দর মুহূর্তেই রাগটাকে গ্রাস করে নিলো? শান্ত হয়ে গেলো বেলী। নড়াচড়ার মতো শ°ক্তি পেলো না। অশান্ত মনটা ছটফট করতে লাগল। কী এক অদ্ভুত শান্তি! আচ্ছা প্রিয় মানুষের বুকে কী এত শান্তি থাকে? না-কি প্রিয় মানুষ বলে এত শান্তি অনুভব হয়? কে জানে? উত্তর খুজে পেলো না। একদম লেপ্টে রইল নীলাভ্রর বুকে। দুজনের মাঝে পিনপতন নীরবতা। নীরবতা ভেঙে নীলাভ্র বলে উঠল,

“বেলীপ্রিয়া?”
বেলী নিচু স্বরে জবাব দিলো,
“হুম।”
নীলাভ্র সাথে সাথে বলল,
“আর মাত্র এক মাস। তারপর তুই আমার। সারাজীবনের জন্য। তোকে আগলে রাখব আমার বক্ষস্থলে। একদম ছেড়ে দিব না। শক্ত করে আকঁড়ে রাখব। প্রমিস।”

বেলী কিছুক্ষণ চুপ থাকল। তারপর আচমকা হুঁহুঁ করে কেঁদে উঠল। কান্নারত স্বরে বলল,
“আমাকে আপনার পায়ে হলেও একটু ঠাঁই দিয়েন। আমি সারাজীবন মাটি আঁকড়ে থাকব। তবুও ছেড়ে যাবেন না, প্লিজ।”
বেলীর কথায় নীলাভ্র থমকাল। ধমকের স্বরে বলল,
“আজেবাজে কথা বললে একটা সজোরে থা/প্প/ড় মা/র/ব।”

বলে থামল কিছুসময়। তারপর বেলীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছাড়ল। শান্ত কণ্ঠে বলতে লাগল,
“তোর জায়গা আমার পায়ে নয় রে, বেলীপ্রিয়া। তোর জায়গা আমার বক্ষস্থলে। তুই আমার এক প্রিয় অসুখ। মারাত্নক নে/শাধর অসুখ। যা দুনিয়ার কোনো ওষুধে কমবে না। বুঝলি, গা/ধি?”

এমন সরল স্বীকারোক্তিতে বেলীর মনটা গলে গেল। অশান্তটা মনটা শান্ত হয়ে গেলো। হাসল বোধহয়? কে/টে গেলো এভাবেই। মুহূর্তটা সুন্দর! ভীষণ সুন্দর! ভালোবাসাও সুন্দর!

তানিশার শরীরটা ইদানীং ভালো যাচ্ছে না। কেমন যেন সারাক্ষণ ঝিমাতে থাকে মেয়েটা! মুখটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মো°টাসো°টা মেয়েটা শুকিয়ে গেছে। একদম লা/°°ঠির মতো! দূর্বলতা গ্রা°স করে নিয়েছে শরীর। বিছানায় শ°রীর রাখলে আর উঠাতে মন চায়না।

এই শরীর নিয়েও সুয়ে থাকার সময় নেই। সারাদিন গা/°°ধার মতো খা°°টুনি খে°°টে যায় মেয়েটা। চু°লায় ভাত বসিয়ে দিয়ে নিচে বসে পড়ল ধপ করে। চলছে না শরীর টা। দুই হা°টুর ভাঁজ করে মুখ লুকাল সেখানটায়। গা গু°লিয়ে আসছে বার বার। ব°মির বেগ আসতেই দৌড়ে গেলো ওয়াশরুমে। ওয়াশরুমের সাদা টাইলসটা মুহূর্তেই র°°ক্তে ভেসে গেলো।

গলগল করে মুখ দিয়ে র°°ক্ত বেরিয়ে আসতে লাগল। ভ°য়ে বুকটা কেঁ°পে উঠল তানিশার। শরীর যেন অ°বশ হয়ে আসতে লাগল। হাত-পা সারা শরীর কাঁ°পা-কাঁ°পি শুরু হয়ে গেলো। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসল মুহূর্তেই। ফ্লোরে পড়ে গেলো চোখের পলকেই। ধ°পাস করে কিছু প°ড়ার শব্দ তানিশার শাশুড়ী দৌড়ে এলো রুম থেকে।

রান্নাঘরে তানিশাকে খুঁজে না পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে আবার অন্যদিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। রান্না ঘরের সোজাসুজি ওয়াশরুমে চোখ যেতেই আঁত°কে উঠল। তানিশার পড়নের শাড়িটা র°°ক্তে মাখা। চিৎকার করে ডাকতে লাগল সবাইকে। দৌড়ে গিয়ে তানিশার মা°থাটা নিজের কোলে নিয়ে বসল। তানিশার ঠোঁ°টের কোণে এখনো র°°ক্তের ছড়াছড়ি।

এইসব দেখে ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে আসতে লাগল। বাসায় তখন শাকিল ছিলো না। পাশের রুম থেকে বেরিয়ে এলো শাকিলের বাবা। ছেলের বউয়ের এই অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেলো। দুজনের পা°-গলের মতো অবস্থা হয়ে পড়ল। তাড়াতাড়ি এ°ম্বুল্যান্স খবর দিলো। প্রায় আধা ঘন্টা পর এ°ম্বুল্যান্স আসল।

তোলা হলো তানিশাকে এ°ম্বুল্যান্সে। এই আধাঘন্টা অনেক চেষ্টা করেও তানিশার জ্ঞা°ন ফেরানো যায়নি। এ°ম্বুল্যান্সে যেতে যেতে তারা দুজন সবাইকে ফোন করায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। দ্রুত একটা ভালো হসপিটালে ভর্তি করানো হলো। শাকিল প্রথমবার ফোনটা রিসিভ করেছিল, ঠিকি। কিন্তু তারপর থেকে ফোনটা বন্ধ করে রেখেছে।

তানিশার বাবা-মা প্রায় ঘন্টাখানেকের মা°থায় হসপিটালে এসে উপস্থিত হলেন। মেয়ের অবস্থা দেখে কান্নায় ভে°ঙে পড়ল। হসপিটাল জুড়ে সাহেলা বেগমের কান্নার শব্দ। রতন চুপচাপ বসে আছে। চোখের কোনে অশ্রুরা জমাট বেঁধে আছে। বুকটা কষ্টে ফে°-টে যাচ্ছে। কিছু সময় পর ডাক্তার বেরিয়ে আসতেই সবাই মিলে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। একের পর এক প্রশ্ন ছু°ড়ে মা°র°ল সবাই। ডাক্তার বেশ শান্ত স্বরেই জবাব দিলো,

“এইটুকু একটা মেয়ের এত চা°প কিসের বলুন তো? যে সে অতিরিক্ত চা°পে ব্রে°ন স্ট্রো°ক করে ফেলল?”
কথাটা সবার কানে যেতেই যেন, সবাই পা°থরে পরিনত হলো। ঠিকি তো? তানিশার এত কিসের চা°প? প্রশ্নটা হা°না দিলো সবার মনে। এত উত্তর খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

তুমি নামক প্রশান্তি পর্ব ২৯ শেষ অংশ

[আসসালামু আলাইকুম। অনেক দিন পর লিখছি৷ বিশ্বাস করুন, এইটুকু লিখতে আমার তিন দিন লেগেছে। হাত চলেনা। সত্যি। কালকেও আমি এক ব্যাগ রক্ত নিয়ে আসলাম। শরীর আজ একটু ভালো। প্রথম খন্ড শেষ হবে হয়তো কাল? আমার ভুল গুলো একটু ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। রিচেক করিনি। আমাকে ক্ষমা করবেন এত অনিয়মিত হয়েছি তাই।]

তুমি নামক প্রশান্তি পর্ব ৩১ (প্রথম খন্ডের সমাপ্তি)