তুমি নামক প্রশান্তি পর্ব ১৩

তুমি নামক প্রশান্তি পর্ব ১৩
জেনিফা চৌধুরী

পোড়া হাতের ফোস্কা গুলো গলে গেছে। ব্যাথায় দু চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। মনে হচ্ছে সারা অঙ্গ জ্বলছে। তবুও সহ্য করে নিলো। এমন সময় চোখের সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটাকে দেখে বেলী আকাশ থেকে পড়লো। সামনে থাকা মানুষটাকে সহ্য করতে পারলো না। রাগে পুরো শরীর জ্বলে উঠলো। হঠাৎ করে রাফিন কে দরজার সামনে দেখেই বেলীর মাথায় বাজ পড়লো। রাফিনকে দেখেই সব ক্ষত গুলো উতলে উঠলো। সাথে সাথে চিৎকার করে বলে উঠলো,

“আপনি! আপনি এই সময় আমার রুমে কেনো এসেছেন? আপনার লজ্জা করেনা আমার সামনে আসতে? এক্ষুনি বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে। আপনাকে আমার রুমে আসার পারমিশন কে দিয়েছে?”
বেলীর রাগ দেখে রাফিন হাসলো। বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“তোমার শরীর অসুস্থ, এত চেঁচামেচি তোমার জন্য ঠিক না। যতই হোক তুমি আমার বউ, খেয়াল রাখার দায়িত্ব তো আমারেই। ”
রাফিনের কথা শুনে বেলীর রাগ দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। রাফিনের দিকে আঙ্গুল উঁচু করে উত্তর দিলো,
“চুপ। আর একটাও বাজে কথা আপনি বলবেননা।বউ! তাও আবার আপনার? আমার ঘৃণা হয় মাঝে মাঝে নিজের উপর, যে আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম।”

বেলীর কথা শুনে রাফিন অসহায় স্বরে বললো,
“আমি যা করেছি ভুল করেছি বেলী। আমি অনেকবার তোমার কাছে ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু, তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারছোনা, তাহলে, আমি আর কি করবো? তোমার পায়ে ধরব। আমি তাতেও রাজি। তবুও আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।”
রাগে বেলীর মাথা ব্যাথা করছে। শরীর দূর্বল লাগছে খুব। চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝড়ছে। এত নির্লজ্জ হয় কি করে মানুষ? বেলী দাতে দাত চেপে বললো,

“অপমানিত হতে না চাইলে এক্ষুনি বেরিয়ে যান।”
রাফিন কথাটায় পাত্তা দিলো না। বেলীর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
“আমি তোমার জন্য সব করতে রাজি। প্লিজ তাও আমাকে একটা বার ক্ষমা করে দাও।”

বলেই বেলীর হাতটা চেপে ধরলো, বেলী পুড়ে হাতটা দিয়েই ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
“আমার হাত ছাড়ুন। নয়তো আমি এক্ষুনি সবাইকে ডাকব।”

বলে থামলো না বেলী, জোরে চেঁচিয়ে মাকে ডাকতে লাগলো। বেলী ভুলে গেছে যে, রিতা স্কুলে চলে গেছে। আইরিন আর মেরিন একটু বাইরে গেছে। নীলাভ্র সেই তখন থেকেই ড্রয়িং রুমেই থম মে’রে দাঁড়িয়ে ছিলো। বেলীর চিৎকার কানে আসতেই হকচকিয়ে উঠলো। মস্তিষ্ক প্রশ্ন করলো ‘বেলী কেনো চিৎকার করছে’। দেরি করলো না হন্তদন্ত হয়ে সেদিকে ছুটলো। বেলীর রুমের দরজায় পা দিতে চোখ দুটো অসম্ভব ভাবে লাল হয়ে উঠলো, সামনের দৃশ্যটা দেখে নিজেকে সামলাতে পারলো না, দরজার সামনে থেকেই গলা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

“ওর হাতটা ছাড়ুন।”
বেলী এত ক্ষণ ধরে রাফিনের থেকে হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলো, পোড়া হাত দিয়েই চেষ্টা করতে গিয়ে ফোস্কা গুলো গলে গেছে, ব্যাথায় ওর দম বেরিয়ে যাবে এমন মনে হচ্ছে। নীলাভ্রর কন্ঠস্বর শুনেই দরজার দিকে তাকালো। চোখে মুখে খুশির ঝলক দেখা গেলো। রাফিন পেছনে ঘুরে নীলাভ্রকে দেখে, মুচকি হেসে বললো,

“তুমি এখানে? ”
নীলাভ্র ওর কথায় পাত্তা দিলো না। রাফিন এখনো বেলীর হাতটা ধরে, ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে শান্ত স্বরে বললো,
“ওর হাতটা ছাড়ুন।”
রাফিন অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
“কেনো?”
নীলাভ্র পুনরায় শান্ত স্বরে বললো,

“আমি বলছি ওর হাতটা ছাড়ুন।”
নীলাভ্রর কথা শুনে রাফিন বেলীর হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। বেলী ভয়ে বার বার ঢোক গিলছে। নীলাভ্রর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। নীলাভ্রর কপালের রগটা বেশ ফুলে উঠে উঠেছে, দেখে বোঝা যাচ্ছে নীলাভ্র রাগে দাতে দাত চেপে আছে। রাফিন খামখেয়ালি ভাবে উত্তর দিলো,

“কেনো ছাড়বো? ”
এইবার নীলাভ্র সময় নিলো না, রেগে জোরে চিৎকার করে বলে উঠলো,
“ছাড়ুন বলছি।”
বলেই রাফিনের থেকে বেলীর হাতটা হেচকা টানে ছাড়িয়ে নিলো। বেলীর চোখে পানি টলমল করছে। আর নীলাভ্র রাগে ফোসফোস করছে। রাফিন এইবার বেশ শক্ত গলায় বললো,

“আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে তুমি কেনো ঢুকছো?”
রাফিনের কথা শুনে নীলাভ্রর কপালে ভাঁজ পড়লো। বেলী কিছু বলতে যাবে তখনি নীলাভ্র বলে উঠলো,
“স্যরি শুনতে পাইনি। কষ্ট করে আবার বলুন তো একবার?”

নীলাভ্রর ব্যবহারে রাফিন নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারছেনা। তবুও বললো,
“আমি আমার স্ত্রীর হাত ছাড়বো কি ছাড়বো না, এটা তুমি বলার কে?”
রাফিনের কথা শেষ হতে না হতেই নীলাভ্র হাহা করে হেসে দিলো, হাসি থামিয়ে কঠিন স্বরে বললো,
“স্বামী-স্ত্রী মাই ফুট, আপনাদের মধ্যে এখন কোনো সম্পর্ক নেই মিস্টার রাফিন এনায়েত। ভুলে গেছেন বুঝি? ওকে নো প্রবলেম, আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি। আপনাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। শুনতে পেয়েছেন?”

নীলাভ্রর কথা শুনে রাফিন বাঁকা হেসে উত্তর দিলো,
“ডিভোর্স হয়ে গেলেই বুঝি ভালোবাসার সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় নীলাভ্র?”
নীলাভ্র ভ্রু যুগল কুঁচকে বললো,
“আমার জানা মতে আপনাদের মধ্যে কোনো ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো না। তাহলে, আপনি কোন ভালোবাসার কথা বলছেন? ”

রাফিন এইবার রাগী স্বরে উত্তর দিলো,
“দেখো, তুমি শুধু শুধু ঝামেলা করছো। আমাদের সমস্যা, আমরা মিটিয়ে নিব। তুমি বেরিয়ে যাও।”
নীলাভ্র রাফিনের পাশ থেকে গিয়ে বেলীর পাশে দাড়ালো, দৃঢ় কন্ঠস্বরে বললো,
“ভুলে যাবেন না, বাড়িটা আমার। আর বেরিয়ে যাওয়ার হলে, আপনি যাবেন। আমি না। বাই দ্যা ওয়ে, এখন বলুন, আপনি কোন অধিকারে আমার বাড়িতে পা রেখেছেন?”

রাফিন রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো, চোখ গরম করে উত্তর দিলো,
“বেলীর সাথে এখন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নেই ঠিকি, কিন্তু বেলী এখনো আমাকে ভালোবাসে। আমি সেই ভালোবাসার অধিকার নিয়ে ওর কাছে এসেছি। আশা করি তুমি তোমার উত্তর পেয়ে গেছো। এখন যাও।”
রাফিনের কথায় নীলাভ্রর বুকে তীব্র ক্ষত হলেও, সামলে নিলো নিজেকে। বেলীর দিকে একবার তাকালো অসহায় চোখে। পরক্ষণেই, রাফিনকে বলে উঠলো,

“বেলী একবার নিজের মুখে স্বীকার করুক ও আপনাকে ভালোবাসে, প্রমিস চলে যাব।”
রাফিন আর নীলাভ্র দুজনেই প্রশ্নের উত্তরের জন্য বেলীর দিকে তাকালো। বেলী নীলাভ্র দিকে একবার তাকালো। ছেলেটা কত আশা নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে, চোখ দিয়ে যেনো বলার চেষ্টা করছে ‘একবার বলে দে ভালোবাসিনা’। বেলী সাহস করে নীলাভ্রর হাতটা আকঁড়ে ধরলো, রাফিনের দিকে তাকিয়ে শক্ত স্বরে বললো,

“আপনাকে ভালোবাসা তো দূরের কথা, আপনার জন্য ঘৃণা ছাড়া আমার মনে অবশিষ্ট কিছু নেই। শুনতে পেয়েছেন তো, এবার বিদায় হোন। নয়তো, ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব।”

রাফিন ভয়ংকর চাহনী দিয়ে আছে বেলীর দিকে। আর নীলাভ্র ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। বুকের ভেতরের জমানো অভিমান, অভিযোগ সবটা নিমিশেই ধুয়ে মুছে গেলো। মেয়েটার মধ্যে কি আছে? কেনো এত ভালোবাসতে ইচ্ছে করে বারবার? খুশিতে নীলাভ্রর সব বিষাদ মুহুর্তেই হাওয়ায় মিশে গেলো। রাফিন হুংকার ছেড়ে বলে উঠলো,

“বেলী।”
বলেই বেলীকে থা-প্পড় মা-রার জন্য হাত উঠাতেই, নীলাভ্র রাফিনের হাতটা ধরে ফেললো, রেগে রাফিনের কলার চে’পে ধরলো, চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
“ডোন্ট টু ডেয়ার টাচ মাই লাভ।”

ওদের চিৎকার, চেঁচামেচি শুনে বেলী ভয়ে থরথর করে কাঁপছে, ইশু আর সীমা একসাথে হন্তদন্ত হয়ে দাঁড়ালো দরজায়, ইশু সাথে সাথে বলে উঠলো,
“ভাইয়্যু কি করছো তুমি?”
সীমা নীলাভ্রর দিকে এগিয়ে এসে, রাফিনের দিকে অবাক চাহনী নিক্ষেপ করে বললো,
“একি তুমি এখানে কি করছো? আমাদের বাড়িতে পা রেখেছো কেনো? কোন সাহসে? ”
তারপর নীলকে শান্ত করার জন্য বললো,

“নীল বাবা ওকে ছেড়ে দে। মাথা ঠান্ডা কর বাবা।”
নীলাভ্র ওর মায়ের দিকে তাঁকিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
“মা ও বেলীপ্রিয়ার গায়ে হাত উঠানোর চেষ্টা করেছে, এত সাহস ওর হয় কি করে?”

বলে ঝাড়ি মে’রেই ছেড়ে দিলো রাফিনের কলার। এক হাত দিয়ে বেলীকে আকঁড়ে নিলো নিজের সাথে, বলে উঠলো,
“আমার বেলীপ্রিয়ার থেকে দূরে থাকাই আপনার জন্য মঙ্গল। বেরিয়ে যান। এক্ষুনি।”
বলে থামলো। রাফিন নীলাভ্রর দিয়ে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে, তখনি নীলাভ্র রুম কাঁপিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
“আউট।”

রাফিন আর দাঁড়ালো না। অপমানে ওর মুখটা তেতো হয়ে আছে। থমথমে, অপমানিত মুখ দিয়ে বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। রাফিন বেরিয়ে যেতেই নীলাভ্র বেলীকে ছেড়ে দিলো। ওর থেকে দূরে সরে দাঁড়ালো। সীমা তৎক্ষনাৎ বেলীকে রাগী স্বরে প্রশ্ন করলো,
“ওই ছেলেটা কেনো এসেছিলো? কে আসতে বলেছে ওকে? ওর সাহস হয় কি করে ও আমাদের বাড়িতে পা রেখেছে? তুই বলেছিস?”

সীমার কথা শেষ হতে না হতেই ইশু বলে উঠলো,
“তুমি ওকে ধমকাচ্ছো কেনো মা? ও কি জানতো যে রাফিন ভাইয়া এখানে আসবে?”
সীমা থেমে গেলো নীলাভ্রর ভয়ংকর চোখের চাহনী দেখে। অনেক কিছু বলতে চেয়েও পারলো না। বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। সীমা বেরিয়ে যেতেই, ইশু বললো,

“রাফিন ভাইয়া কেনো এসেছিলো?”
বেলী কাঠকাঠ গলায় জবাব দিলো,
“কেনো আবার? আমার শান্তি নষ্ট করতে। এ ছাড়া ওর তো কোনো কাজ নেই। ও প্রতিজ্ঞা করেই নিয়েছে, আমার জীবন থেকে সব শান্তি কেড়ে নিবে।”
নীলাভ্র বেশ শান্ত স্বরে শুধালো,

“ভালোবাসা ছিলো তো তোর, তাহলে, আজ কেনো বিরক্তিকর হয়ে গেলো বেলী?”
বলে ডান ভ্রু উঁচু করে বেলীর দিকে তাকিয়ে রইলো। বুঝতে দেরি হলো না, কথাটা বেলীকে খোঁচা মে”রে বলা হয়েছে। ইশুর কেনো যেনো মনে হলো ওদের দুজনকে একা ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন। তাই, বাহানা দিয়ে চলে গেলো বাইরে। ইশু বেরিয়ে যেতেই বেলী অসহায়, কাঁতর স্বরে শুধালো,

“বিশ্বাস করেন নীলাভ্র ওই নোংরা লোকটা কোনোদিন আমার ভালোবাসা ছিলো না।”
“তাহলে, সেদিন কেনো বলেছিলি ভালোবাসিস?” নীলাভ্রর পাল্টার প্রশ্ন শুনে, বেলী ভেতর থেকে এক আকাশসম দীর্ঘস্বাস আর আফসোস ছাড়া কিছু বের হলো না। নীলাভ্রর মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো। চোখে চোখ রাখলো, চোখ দুটো অশ্রুতে টলমল করছে, নীলাভ্রর চোখ দুটো নিশ্চল, নিস্প্রান। এ চোখে কোনো মায়া, অভিমান, অভিযোগ নেই।

মনে মনে ভাবলো, ছেলেটার চোখের ভাষা এত কঠিন কেনো? আগে তো এ চোখে তাকালে ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া যেতো? এখন কেনো ভালোবাসা নেই? আগে এ চোখে চোখ রাখতেই মস্তিষ্ক প্রশ্ন করতো ‘কারোর চোখে এত ভালোবাসা থাকে নাকি?’ কই জানা ছিলোনা তো? সংকোচ, ভয় কাটিয়ে আলতো করে নীলাভ্রর দুই গালে হাত রাখলো বেলী। নীলাভ্র ঘাবড়ালো। বুঝতে পারলো না। বেলী কি করতে চাইছে? কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমাট হলো। অস্পষ্ট স্বরে বললো, ‘বেলী’।
বেলী বেশ শান্ত স্বরে শুধালো,

“উহু, শুধু বেলী না। বলুন ‘বেলীপ্রিয়া’। আমাকে কেনো বেলীপ্রিয়া বলে ডাকেন না নীলাভ্র ভাই? আমি তো আপনার বেলীপ্রিয়া ছিলাম। তাহলে, এখন কেনো শুধু বেলী হয়ে গেলাম? ভালোবাসতেন তো, তাহলে, এখন কেনো আপনার চোখে আমি ভালোবাসা খুঁজে পাইনা? কি হয়েছে আপনার?”

বেলীর এমন এলোমেলোহীন ভাবে কথাগুলো শুনে নীলাভ্রর কি যেনো হলো? উত্তর দিতে পারছেনা। কন্ঠস্বর দিয়ে শব্দ বের হচ্ছেনা। শব্দ ভান্ডারে কি শব্দ ফুরিয়ে গেছে? নাকি হাজারটা শব্দ জমা থাকলেও ভাষায় রুপ দিতে পাছে না। কোনটা? ভাবলো, নাহ! উত্তর পেলো না। এই মুহূর্তে চুপ শ্রেয়। বেলী আবারো বলে উঠলো,

“সব সময় তো প্রশ্ন করেন ভালোবাসি কিনা? তাহলে আজ কেনো চুপ আছেন? আপনি চুপ থাকলেও, আজ আমি চুপ থাকবোনা। আপনার জানা উচিত, আপনার বেলীপ্রিয়া আপনাকে ভালোবাসে। শুধু মাত্র আপনাকে ভালোবাসে। আর কাউকে ভালোবাসে না। ভালোবাসতে পারেনা। আমার আপনাকে খুব প্রয়োজন নীলাভ্র ভাই।

সত্যিই প্রয়োজন। আপনাকে আমি কি করে বুঝাবো? আমি ভেঙে গেছি। আমি ভেতরে ভেতরে পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছি। কয়লা হয়ে গেছি। জীবন্ত লা”শ হয়ে গেছি। একটা বার শুধু আপনি আমার মাথায় হাত রাখেন। আদুরে স্বরে বলেন ‘বেলীপ্রিয়া ভেঙে পড়িস না। আমি আছি তো।’ ব্যাস, আমার আর কিছু চাইনা। আমি আবার উঠে দাঁড়াবো। নতুন করে গড়ে তুলবো সব। প্লিজ একটা বার আপনার ভরসার হাতটা আমাকে আকঁড়ে ধরতে দিন। প্লিজ…।”

আর বলতে পারলো না। বাঁধ ভাঙা অশ্রুকণা এসে হানা দিলো চোখের পাতায়। হুহু করে কান্না করে দিলো বেলী। হাত দুটো নীলাভ্রর গাল থেকে সরে আসলো। নীলাভ্র এখনো চুপ। কোনো শব্দ করছেনা। জড় বস্তুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। প্রাণ নেই হয়তো ওর দেহে। নীলাভ্রকে চুপ থাকতে দেখে বেলী এবার নীলাভ্রর বাহু ঝাকিয়ে, চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

“নীলাভ্র ভাই একবার বলুন না ভালোবাসি। শেষবারের মতো একটা সুযোগ দিন প্লিজ। আপনাকে একটা বার আকঁড়ে ধরার সুযোগ দিন। প্লিজ…।”
নিজেকে আর সামলাতে পারলো না বেলী। নীলাভ্রর পায়ের কাছে বসে পড়লো কাঁদতে কাঁদতে। নীলাভ্র বেশ শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলো,

“এভাবে কাঁদছিস কেনো? আমি ম’রে গেছি নাকি? ”
হঠাৎ, এই মুহূর্তে এমন প্রশ্ন শুনে বেলী স্বব্ধ। কান্না থেমে গেলো অটোমেটিক। বিস্ফোরিত চোখে নীলাভ্রর দিকে তাঁকিয়ে, কাঁতর কন্ঠে বললো,

“নীলাভ্র ভাই! কি বলছেন এসব?”
“উঠে দাঁড়া আগে।” আদেশের স্বরে বললো নীলাভ্র।বেলী উঠে দাঁড়ালো। দুই হাতে চোখের পানি গুলো মুছে নিতে নিতে বললো,
“বলুন”
নীলাভ্র বললো, “কান্না করছিস কেনো?”

“কেনো কান্না করছি বুঝতে পারছেন না?” বেলীর পাল্টা প্রশ্নে নীলাভ্র খানিকটা ভ্যাবাচেকা খেলো। বেলীর মাথায় হাত রেখে বললো,
“তোকে অপমানের হাত থেকে বাঁচানোটা আমার দায়িত্ব ছিলো। আমি তাই করেছি। যেকোনো বিপদে তুই অবশ্যই আমাকে পাশে পাবি। তোর নীলাভ্র ভাই তোর পাশেই থাকবে। কোনোদিন ছেড়ে যাবে না। প্রমিস।”

বলে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য দরজার দিকে পা বাড়ালো। বেলী আচমকা নীলাভ্রর হাত টেনে ধরলো, বললো,
“আর ভালোবাসবেন না?”
এই প্রশ্নে নীলাভ্র থমকালো। উত্তর দিতে মন চাইলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরার তীব্র ইচ্ছে হলো। কিন্তু সেই অধিকার তো ওর নেই। তাই উত্তর দিলো না। মুচকি হেসে বেলীর থেকে হাত ছাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো। আর বেলীর কান্নারত চোখ দুটো নীলাভ্রর পানে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে আওড়াতে লাগলো,

তুমি নামক প্রশান্তি পর্ব ১২

“ভালোবাসে! হ্যাঁ, আমার নীলাভ্র ভাই আমাকেই ভালোবাসে। নাহ! ভালোবাসে না? তার চোখে ভালোবাসা দেখতে পেলাম না তো?”
হ্যাঁ আর না এই দুটো শব্দ নিয়ে বড্ড দোটানায় পড়ে গেলো বেলী। জীবনের মোড় কি ঘুরবে? নাকি এভাবেই থেমে থাকবে?

তুমি নামক প্রশান্তি পর্ব ১৪