তুমি নামক প্রশান্তি পর্ব ৭

তুমি নামক প্রশান্তি পর্ব ৭
জেনিফা চৌধুরী

“একবার আমার বুকে আসবি বেলীপ্রিয়া। শুধু একবার জড়িয়ে ধরব। শক্ত করে জড়িয়ে ধরব। আমার বুকের ভেতরের জমানো বিষাক্ত, তিক্ত স্মৃতি গুলো মুছে ফেলবো। প্লিজ।”

বেলীর চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে। নীলাভ্র কথার মাঝে বার কয়েক চোখ, মুখ খিচে ফেলছে। বেলী নিজেকে সামলে নীলাভ্রর কপালে হাত রাখতেই আঁতকে উঠলো। এত জ্বর! প্রচন্ড জ্বরে নীলাভ্রর শরীর পু’ড়ে যাচ্ছে। বেলী কাঁপা স্বরে বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপনার শরীর তো জ্বরে পু’ড়ে যাচ্ছে নীলাভ্র ভাই। আমি এক্ষুনি বড় মামিকে ডেকে নিয়ে আসচ্ছি।”
বলে বেলী উঠতে চাইলো। পারলো না। নীলাভ্র শক্ত করে বেলীর ওড়না ধরে আছে। স্বল্প স্বরে বললো,
“আমাকে একা ফেলে চলে যাস না প্লিজ। তুই আমাকে বার বার একা করে দিয়ে চলে যাস। কেনো রে? আমার জন্য একটুও মায়া হয়না তোর।”

নীলাভ্র জ্বরের ঘোরে কি বলছে? নিজেও হয়তো জানেনা। বেলী উঠতে পারলো না। নীলাভ্র শারীরিক কষ্ট সহ্য করছে আর বেলী মানসিক কষ্ট। শারীরিক যন্ত্রণার চাইতে মানসিক যন্ত্রণার পরিমানটা বেশি। খুব বেশি। আকাশ সমান। বেলীর কন্ঠস্বর কাঁপছে। কি করবে ও? নীলাভ্রকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। খুব ইচ্ছে করছে।

জড়িয়ে ধরে নীলাভ্রর বুকে মাথা রেখে মন খুলে কাঁদতে। চেঁচিয়ে বলতে ‘আমি আপনাকে ছাড়া ভালো নেই নীলাভ্র ভাই’। সব ইচ্ছে কি আর পূরণ হয়? কিছু ইচ্ছে শুধু ইচ্ছে হয়েই থেকে যায়। এত রাতে একটা ছেলের ঘরে এসেছে দেখলে সবাই তীর বেলীর দিকেই ছুঁড়বে। ওর চরিত্রে দাগ লাগাবে৷ ডিভোর্সির সাথে যুক্ত হবে ‘চরিত্রহীন’। বেলী কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,
“দেখুন নীলাভ্র ভাই আপনার শরীর খারাপ। আপনি প্লিজ চুপ থাকুন। আপনার কষ্ট হচ্ছে। ”

বেলীর কথা শুনে নীলাভ্র কেমন বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়াতে লাগলো। বেলীর ওড়না আরো শক্ত করে চে’পে ধরলো। আবদারের স্বরেই বললো,
“তুই প্রতিরাতে আমার স্বপ্নে এসে আমাকে ধোকা দিয়ে চলে যাস। আজকে আমি কিছুতেই তোকে যেতে দিব না। কিছুতেই না।”

একদম বাচ্চাদের মতো করে মুখ লুকালো বেলীর ওড়নার আড়ালে। এমন পরিস্থিতে বেলীর কি করা উচিত? চলে যাবে? নাকি বড় মামিকে ডাকবে। নীলাভ্রকে এই অবস্থায় একা রেখে যাওয়া কি ঠিক হবে? বড় মামিকে ডাকতে গেলে যদি আবার ঝামেলা হয়? এইসব প্রশ্নে নিজেকে পা’গল পা’গল লাগছে ওর। নীলাভ্রর থেকে ওড়নাটা ছাড়িয়ে নিতে নিতে বললো,

“আমি কোথায় ও যাবো না। প্লিজ ওড়নাটা ছাড়ুন। আপনার কষ্ট হচ্ছে তো। ”
নীলাভ্র সময় নিলো না। একদম দেরি করলো না। ঝটপট বিষন্ন গলায় উত্তর দিলো,
“শরীর পু’ড়ছে জ্বরে। আর হৃদপিন্ড পু’ড়ছে তোর দহনে। পু’ড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছে । ”

কথাটা বেলীর হৃদ ক্ষত বিক্ষত করে দিলো। কাচের টুকরোর মতো ভেঙে ছড়িয়ে গেলো। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো বেলী। নীলাভ্র মিনিয়ে মিনিয়ে বলতে শুরু করলো,

“তোরে কোলে একটু মাথা রাখতে দিবি বেলীপ্রিয়া।”
বেলী এক মিনিট ও বসে থাকলো না। একপ্রকার জোর করেই নীলাভ্রর থেকে ওড়নাটা ছাড়িয়ে নিলো। দৌড়ে বেরিয়ে আসলো রুম থেকে। নীলাভ্র বেশ কিছু সময় আপনমনে কথা বলতে বলতে ঘুমে তলিয়ে গেলো৷

বেলী নিজের রুমে এসেই দরজা আটকে দিলো। হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে পড়লো। দুই হাতে মুখ চেপে কান্নায় ভেঙে পড়লো। বদ্ধ চিৎকার করছে। দম আটকে যাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে বললো,

“আমাকে ক্ষমা করে দিন নীলাভ্র ভাই। আমি আপনার আবদার রাখতে পারিনি। পারিনি আপনাকে জড়িয়ে ধরতে। আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আপনার কষ্ট কমাতে। আমি খুব স্বার্থপর। অনেক স্বার্থপর। আমাকে কেনো ভালোবাসেন আপনি? কে বলেছে? আমি আপনার ভালোবাসার মূল্য দিতে জানিনা। ”

বলে আবারো কাঁদতে লাগলো। আজ রাতটা হয়তো এভাবেই কেটে যাবে। বিষাদময় যন্ত্রণায় ছটফট করতে হবে সারারাত। ভোরের সূর্যটা উঠতেই সব বিষাদ কেটে যাবে। একদম কেটে যাবে।

ব্যস্ত শহরের যান্ত্রিক গাড়ির শব্দ কানে যেতেই নীলাভ্রর ঘুম ভাঙে। বিরক্তিতে চোখ, মুখ কুঁচকে রাখলো কিছুক্ষণ। হাতের মধ্যে চিনচিন ব্যাথা রয়েছে এখনো। জ্বরটা কমেছে। জানালার কাচ ভেদ করে সূর্যের আলো পড়ছে সারা শরীরে। শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা। এত সব যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নীলাভ্র উঠে বসলো।

ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকাতেই মাথায় ভীষণ ব্যাথা অনুভব করলো। এক হাতে চুল গুলো শক্ত করে চেপে ধরলো। অলসতা, অসরতা কাটিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেলো। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে, মুখে পানি দিলো বেশ কিছুক্ষণ। তখনি, মায়ের গলার স্বর শুনতে পেলো। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো সীমা নাস্তার ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে আছে। নীলাভ্রকে দেখেই অস্থির কন্ঠে বললো,

“এখন কেমন লাগছে বাবা? শরীরটা ভালো লাগছে তো?”
নীলাভ্র প্রতি উত্তরে শুধু মাথা ঝুঁকালো। মুখে শুধু বললো,
“আমি সবার সাথে বসেই খাবো মা। নাস্তাটা নিয়ে যাও। আমি আসছি।”
সীমা আগ বাড়িয়ে কিছু বলার আগেই নীলাভ্র ফের বললো,
“আমি এখানে একা একা খাবো না।”

সীমা আর বাঁধা দিলো না। মাথা ঝুঁকিয়ে বেরিয়ে গেলো। শার্ট পাল্টাতে গিয়ে বিপত্তি বাঁধলো। হাতটা ব্যাথায় টনটন করছে। তাই নাড়াতেও কষ্ট হচ্ছে। বহু কষ্টে একটা পাতলা টি-শার্ট পড়ে নিলো। রুম থেকে বেরিয়ে দরজার বাইরে আসতেই দেখলো বেলী দাঁড়িয়ে আছে। বেলীকে দেখেই কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করলো,

“সকাল সকাল এখানে দাড়িয়ে কি করছিস? ভার্সিটি নেই?”
নীলাভ্রর মুখের দিকে তাকানোর সাহস পেলো না। বললো,
“আপনার শরীর এখন কেমন নীলাভ্র ভাই?”
নীলাভ্র ছোট করে উত্তর দিলো,
“ভালো”

বলে বেলীকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। বেলী ও নীলাভ্রর পিছু পিছু খাবার টেবিলের দিকে গেলো। নীলাভ্রর বাবার পাশে বসলো। নীলাভ্রর বাবা আমির বলে উঠলো,
“কি রে মা আজ তোর মুখটা শুকনো লাগছে কেনো?”
বেলী প্রশ্নটা শুনে আড় চোখে একবার সবার দিকে তাকালো। সীমা কপাল কুঁচকে রেখেছে। বেলী কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর কথায় ফোঁড়ন কেটে সীমা বলে উঠলো,

“নিজের ছেলেটা অসুস্থ সে খেয়াল নেই। অথচ ভাগনীকে নিয়ে তামাশা করা হচ্ছে।”
নীলাভ্র কিছু বললো না। আমির হোসেন বললো,
“আমার ছেলে হলে অবশ্যই আমার কথা শুনতো। হাজার বার বলেছি রাজনীতি করা লাগবে না। এসব ভালো না। শুনেছে তোমার ছেলে। শুনেনি। তাই ওর বিষয় আমিও আর কিছু বলবো না।”

নীলাভ্র ওর বাবার কথায় পাত্তা দিলো না। এর মধ্যেই রিতা কিচেন থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে বললো,
“ভাইজান আপনাকে আমার একটা কথা বলা ছিলো।”
আমির হোসেনের মত পেয়ে রিতা একটু থেমে বলে উঠলো,
“আমি এখানে আর থাকব না। ”

রিতার কথা শুনে উপস্থিত সবাই অবাক হলো। নীলাভ্র খাবার মুখের সামনে নিয়েও থেমে গেলো। প্রশ্নবিদ্ধ চোখে বেলীর দিকে তাকালো। বেলীর দৃষ্টি স্থির। স্বাভাবিক। আমির হোসেন অবাক স্বরে প্রশ্ন করলো,
“থাকবি না মানে? কোথায় যাবি?”
রিতা খানিক থেমে বললো,

“বেলীর ভার্সিটির পাশে একটা বাসা ভাড়া নিয়েছি। সেখানেই, চলে যাব।”
বেলী এবার অবাক হলো। এক রাতের মধ্যে এইসব কিছু কি করে ম্যানেজ করলো তিনি? কিন্তু প্রশ্নটা করতে পারলোনা। নীলাভ্র শান্ত কন্ঠে বললো,
“কবে চলে যাচ্ছো ফুপ্পি?”

নীলাভ্রর প্রশ্নে বেলী বজ্রাহত চোখে তাকালো ওর দিকে। এত শান্ত কন্ঠস্বর আশা করেনি। রিতা উত্তর দিলো,
“দুই দিন পরেই শিফট হয়ে যাবো বাবা। ”
নীলাভ্র আর উত্তর দিলোনা। আমির হোসেন ও আর কিছু বললো না। সে জানে তার বোন বেশ বুদ্ধিমতী। যা করবে ভেবে চিন্তে করবে। তাই আর বাঁধা দিলো না। বললো,

“তুই যা ভালো বুঝেছিস তাই করেছিস। আমার আপত্তি নেই।”
রিতা মুখে হাসি টানলো৷ হাসোজ্জল স্বরে বললো,
“ভাইজান আরেকটা কথা বলতাম।”
“বল শুনছি তো।”
রিতা খুশি মনে বললো,

“আমার বেলীর জন্য পাত্র পছন্দ করেছি। আপনাদের অনুমতি পেলেই তাদের সাথে কথা বলবো। ”
কথাটা সবার কানে যাওয়ার আগেই নীলাভ্রর কানে পৌঁছালো। বেলীর মাথায় যেনো বাজ ভেঙে পড়লো। হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে? জীবনের মোড় কোন দিকে ঘুরে যাবে আবার?

“একবার আমার বুকে আসবি বেলীপ্রিয়া। শুধু একবার জড়িয়ে ধরব। শক্ত করে জড়িয়ে ধরব। আমার বুকের ভেতরের জমানো বিষাক্ত, তিক্ত স্মৃতি গুলো মুছে ফেলবো। প্লিজ।”

বেলীর চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে। নীলাভ্র কথার মাঝে বার কয়েক চোখ, মুখ খিচে ফেলছে। বেলী নিজেকে সামলে নীলাভ্রর কপালে হাত রাখতেই আঁতকে উঠলো। এত জ্বর! প্রচন্ড জ্বরে নীলাভ্রর শরীর পু’ড়ে যাচ্ছে। বেলী কাঁপা স্বরে বলে উঠলো,

“আপনার শরীর তো জ্বরে পু’ড়ে যাচ্ছে নীলাভ্র ভাই। আমি এক্ষুনি বড় মামিকে ডেকে নিয়ে আসচ্ছি।”
বলে বেলী উঠতে চাইলো। পারলো না। নীলাভ্র শক্ত করে বেলীর ওড়না ধরে আছে। স্বল্প স্বরে বললো,
“আমাকে একা ফেলে চলে যাস না প্লিজ। তুই আমাকে বার বার একা করে দিয়ে চলে যাস। কেনো রে? আমার জন্য একটুও মায়া হয়না তোর।”

নীলাভ্র জ্বরের ঘোরে কি বলছে? নিজেও হয়তো জানেনা। বেলী উঠতে পারলো না। নীলাভ্র শারীরিক কষ্ট সহ্য করছে আর বেলী মানসিক কষ্ট। শারীরিক যন্ত্রণার চাইতে মানসিক যন্ত্রণার পরিমানটা বেশি। খুব বেশি। আকাশ সমান। বেলীর কন্ঠস্বর কাঁপছে। কি করবে ও? নীলাভ্রকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। খুব ইচ্ছে করছে।

জড়িয়ে ধরে নীলাভ্রর বুকে মাথা রেখে মন খুলে কাঁদতে। চেঁচিয়ে বলতে ‘আমি আপনাকে ছাড়া ভালো নেই নীলাভ্র ভাই’। সব ইচ্ছে কি আর পূরণ হয়? কিছু ইচ্ছে শুধু ইচ্ছে হয়েই থেকে যায়। এত রাতে একটা ছেলের ঘরে এসেছে দেখলে সবাই তীর বেলীর দিকেই ছুঁড়বে। ওর চরিত্রে দাগ লাগাবে৷ ডিভোর্সির সাথে যুক্ত হবে ‘চরিত্রহীন’। বেলী কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,
“দেখুন নীলাভ্র ভাই আপনার শরীর খারাপ। আপনি প্লিজ চুপ থাকুন। আপনার কষ্ট হচ্ছে। ”

বেলীর কথা শুনে নীলাভ্র কেমন বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়াতে লাগলো। বেলীর ওড়না আরো শক্ত করে চে’পে ধরলো। আবদারের স্বরেই বললো,
“তুই প্রতিরাতে আমার স্বপ্নে এসে আমাকে ধোকা দিয়ে চলে যাস। আজকে আমি কিছুতেই তোকে যেতে দিব না। কিছুতেই না।”

একদম বাচ্চাদের মতো করে মুখ লুকালো বেলীর ওড়নার আড়ালে। এমন পরিস্থিতে বেলীর কি করা উচিত? চলে যাবে? নাকি বড় মামিকে ডাকবে। নীলাভ্রকে এই অবস্থায় একা রেখে যাওয়া কি ঠিক হবে? বড় মামিকে ডাকতে গেলে যদি আবার ঝামেলা হয়? এইসব প্রশ্নে নিজেকে পা’গল পা’গল লাগছে ওর। নীলাভ্রর থেকে ওড়নাটা ছাড়িয়ে নিতে নিতে বললো,

“আমি কোথায় ও যাবো না। প্লিজ ওড়নাটা ছাড়ুন। আপনার কষ্ট হচ্ছে তো। ”
নীলাভ্র সময় নিলো না। একদম দেরি করলো না। ঝটপট বিষন্ন গলায় উত্তর দিলো,
“শরীর পু’ড়ছে জ্বরে। আর হৃদপিন্ড পু’ড়ছে তোর দহনে। পু’ড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছে । ”

কথাটা বেলীর হৃদ ক্ষত বিক্ষত করে দিলো। কাচের টুকরোর মতো ভেঙে ছড়িয়ে গেলো। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো বেলী। নীলাভ্র মিনিয়ে মিনিয়ে বলতে শুরু করলো,

“তোরে কোলে একটু মাথা রাখতে দিবি বেলীপ্রিয়া।”
বেলী এক মিনিট ও বসে থাকলো না। একপ্রকার জোর করেই নীলাভ্রর থেকে ওড়নাটা ছাড়িয়ে নিলো। দৌড়ে বেরিয়ে আসলো রুম থেকে। নীলাভ্র বেশ কিছু সময় আপনমনে কথা বলতে বলতে ঘুমে তলিয়ে গেলো৷

বেলী নিজের রুমে এসেই দরজা আটকে দিলো। হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে পড়লো। দুই হাতে মুখ চেপে কান্নায় ভেঙে পড়লো। বদ্ধ চিৎকার করছে। দম আটকে যাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে বললো,

“আমাকে ক্ষমা করে দিন নীলাভ্র ভাই। আমি আপনার আবদার রাখতে পারিনি। পারিনি আপনাকে জড়িয়ে ধরতে। আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আপনার কষ্ট কমাতে। আমি খুব স্বার্থপর। অনেক স্বার্থপর। আমাকে কেনো ভালোবাসেন আপনি? কে বলেছে? আমি আপনার ভালোবাসার মূল্য দিতে জানিনা। ”

বলে আবারো কাঁদতে লাগলো। আজ রাতটা হয়তো এভাবেই কেটে যাবে। বিষাদময় যন্ত্রণায় ছটফট করতে হবে সারারাত। ভোরের সূর্যটা উঠতেই সব বিষাদ কেটে যাবে। একদম কেটে যাবে।

ব্যস্ত শহরের যান্ত্রিক গাড়ির শব্দ কানে যেতেই নীলাভ্রর ঘুম ভাঙে। বিরক্তিতে চোখ, মুখ কুঁচকে রাখলো কিছুক্ষণ। হাতের মধ্যে চিনচিন ব্যাথা রয়েছে এখনো। জ্বরটা কমেছে। জানালার কাচ ভেদ করে সূর্যের আলো পড়ছে সারা শরীরে। শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা। এত সব যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নীলাভ্র উঠে বসলো।

ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকাতেই মাথায় ভীষণ ব্যাথা অনুভব করলো। এক হাতে চুল গুলো শক্ত করে চেপে ধরলো। অলসতা, অসরতা কাটিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেলো। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে, মুখে পানি দিলো বেশ কিছুক্ষণ। তখনি, মায়ের গলার স্বর শুনতে পেলো। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো সীমা নাস্তার ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে আছে। নীলাভ্রকে দেখেই অস্থির কন্ঠে বললো,

“এখন কেমন লাগছে বাবা? শরীরটা ভালো লাগছে তো?”
নীলাভ্র প্রতি উত্তরে শুধু মাথা ঝুঁকালো। মুখে শুধু বললো,
“আমি সবার সাথে বসেই খাবো মা। নাস্তাটা নিয়ে যাও। আমি আসছি।”
সীমা আগ বাড়িয়ে কিছু বলার আগেই নীলাভ্র ফের বললো,
“আমি এখানে একা একা খাবো না।”

সীমা আর বাঁধা দিলো না। মাথা ঝুঁকিয়ে বেরিয়ে গেলো। শার্ট পাল্টাতে গিয়ে বিপত্তি বাঁধলো। হাতটা ব্যাথায় টনটন করছে। তাই নাড়াতেও কষ্ট হচ্ছে। বহু কষ্টে একটা পাতলা টি-শার্ট পড়ে নিলো। রুম থেকে বেরিয়ে দরজার বাইরে আসতেই দেখলো বেলী দাঁড়িয়ে আছে। বেলীকে দেখেই কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করলো,

“সকাল সকাল এখানে দাড়িয়ে কি করছিস? ভার্সিটি নেই?”
নীলাভ্রর মুখের দিকে তাকানোর সাহস পেলো না। বললো,
“আপনার শরীর এখন কেমন নীলাভ্র ভাই?”
নীলাভ্র ছোট করে উত্তর দিলো,
“ভালো”

বলে বেলীকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। বেলী ও নীলাভ্রর পিছু পিছু খাবার টেবিলের দিকে গেলো। নীলাভ্রর বাবার পাশে বসলো। নীলাভ্রর বাবা আমির বলে উঠলো,
“কি রে মা আজ তোর মুখটা শুকনো লাগছে কেনো?”
বেলী প্রশ্নটা শুনে আড় চোখে একবার সবার দিকে তাকালো। সীমা কপাল কুঁচকে রেখেছে। বেলী কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর কথায় ফোঁড়ন কেটে সীমা বলে উঠলো,

“নিজের ছেলেটা অসুস্থ সে খেয়াল নেই। অথচ ভাগনীকে নিয়ে তামাশা করা হচ্ছে।”
নীলাভ্র কিছু বললো না। আমির হোসেন বললো,
“আমার ছেলে হলে অবশ্যই আমার কথা শুনতো। হাজার বার বলেছি রাজনীতি করা লাগবে না। এসব ভালো না। শুনেছে তোমার ছেলে। শুনেনি। তাই ওর বিষয় আমিও আর কিছু বলবো না।”

নীলাভ্র ওর বাবার কথায় পাত্তা দিলো না। এর মধ্যেই রিতা কিচেন থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে বললো,
“ভাইজান আপনাকে আমার একটা কথা বলা ছিলো।”
আমির হোসেনের মত পেয়ে রিতা একটু থেমে বলে উঠলো,
“আমি এখানে আর থাকব না। ”

রিতার কথা শুনে উপস্থিত সবাই অবাক হলো। নীলাভ্র খাবার মুখের সামনে নিয়েও থেমে গেলো। প্রশ্নবিদ্ধ চোখে বেলীর দিকে তাকালো। বেলীর দৃষ্টি স্থির। স্বাভাবিক। আমির হোসেন অবাক স্বরে প্রশ্ন করলো,
“থাকবি না মানে? কোথায় যাবি?”
রিতা খানিক থেমে বললো,

“বেলীর ভার্সিটির পাশে একটা বাসা ভাড়া নিয়েছি। সেখানেই, চলে যাব।”
বেলী এবার অবাক হলো। এক রাতের মধ্যে এইসব কিছু কি করে ম্যানেজ করলো তিনি? কিন্তু প্রশ্নটা করতে পারলোনা। নীলাভ্র শান্ত কন্ঠে বললো,
“কবে চলে যাচ্ছো ফুপ্পি?”

নীলাভ্রর প্রশ্নে বেলী বজ্রাহত চোখে তাকালো ওর দিকে। এত শান্ত কন্ঠস্বর আশা করেনি। রিতা উত্তর দিলো,
“দুই দিন পরেই শিফট হয়ে যাবো বাবা। ”
নীলাভ্র আর উত্তর দিলোনা। আমির হোসেন ও আর কিছু বললো না। সে জানে তার বোন বেশ বুদ্ধিমতী। যা করবে ভেবে চিন্তে করবে। তাই আর বাঁধা দিলো না। বললো,

“তুই যা ভালো বুঝেছিস তাই করেছিস। আমার আপত্তি নেই।”
রিতা মুখে হাসি টানলো৷ হাসোজ্জল স্বরে বললো,
“ভাইজান আরেকটা কথা বলতাম।”
“বল শুনছি তো।”
রিতা খুশি মনে বললো,

তুমি নামক প্রশান্তি পর্ব ৬

“আমার বেলীর জন্য পাত্র পছন্দ করেছি। আপনাদের অনুমতি পেলেই তাদের সাথে কথা বলবো। ”
কথাটা সবার কানে যাওয়ার আগেই নীলাভ্রর কানে পৌঁছালো। বেলীর মাথায় যেনো বাজ ভেঙে পড়লো। হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে? জীবনের মোড় কোন দিকে ঘুরে যাবে আবার?

তুমি নামক প্রশান্তি পর্ব ৮