তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ২৮ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ২৮
Suraiya Aayat

বিশ্বাসঘাতকতা করলো আরুর মা আরুর সাথে ৷ আজ বুঝছে খুব প্রিয় কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করলে তার কষ্টটা ঠিক কতোখানি ৷ আরুর গলার আওয়াজ ক্ষীন, সব সত্তের মুখমুখি হওয়াতে বাকশক্তির ক্ষমতাও যেনো হারাচ্ছে ৷ নয়তো জোর গলায় চেঁচিয়ে বলতো যে

” আমি জানি আম্মু তুমি মিথ্যা বলছো, তুমি আমার সাথে কখনো এমনটা করতেই পারো না ৷”
কিন্তু কিসের ওপর ভিত্তি করে ও এই কথাগুলো বলবে ? ওর আম্মুর হয়ে কোন সত্তের বানী ও গাইবে যেখানে ওর আম্মু নিজেই প্রমান করলেন যে উনি একজন পতিতা ৷ আর নিজের মেয়ের এই চরম দুর্দশা উনি নিজেই টেনে এনেছেন ৷
আরুর চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে , চোখ বন্ধ করে মাথা নীচু করে আছে, সবটা যেন সামলে ওঠার চেষ্টা করছে, আসলেই কি এই দিনটা দেখার খুব প্রয়োজন ছিলো ?

হঠাৎই নাকে এক উগ্র আর বিদঘুটে গন্ধ আসতেই আরু চোখ খুলে পিটপিক করে তাকালো, চোখের পলকে অশ্রুসিক্ত নোনা জলগুলি বিদ্যমান ৷
সামনে তাকাতেই অদ্ভুত রকম এক গা ঘিনঘিনিয়ে ওঠা অনুভুতি হলো , আফসানা বেগম মদ্যপান করছেন ৷ কই আগে তো কেউ ওনাকে এভাবে দেখননি ? প্রশ্নটার একটাই উত্তর যে আগে হয়তো আরুকে দেখিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করার প্রয়োজন পড়েনি তা হয়তো ৷এতোদিন যে এভাবেই উনি প্রিয়জন হয়ে ক্ষতি করার চেষ্টা করে এসেছেন ৷
আরু ভাঙা গলায় বলল,,,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আম্মু তুমি এগুলো কবে থেকে খেতে শুরূ করলে, আর তোমার এই আচরান এত উগ্র আর অদ্ভুত কেন?”
আফসানা বেগমের চোখ লাল, একরাশ বিতৃষ্ণার ছায়া ছেয়ে যাচ্ছে তার চোখে ৷
উনি এবার একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন
” এগুলো যে অমৃত তা তুই কি করে বুঝবি !”
আরু আর সহ্য করতে পারছে না, ও ভাবছে ওর আম্মু হয়তো অবুঝের মতো সবকিছু করছে তাই ভাবলো বেশি নরম হয়ে কথা না বলে যদি একটু রাগ আর তেজ নিয়ে কথা বলে তাহলে যদি উনি মুখ খোলেন ৷
এই শিক্ষা ও আফসানা বেগমের থেকেই পেয়েছে ৷উনি সবসময় বলতেন যে

” আরু মা তুই যখন তোর নজরে কাউকে দুর্বল ভাবে দেখবি তখন তার মধ্যে তুই অনেক কমতি লক্ষ করবি, তখন যদি তোর তার সত্যতা জানতে হপূ তাহলে তার ওপর নিজের সমস্ত আক্রোশ ঢেলে দিবি তাহলে সে খানিকটা নরম সুরে সব বলতে বাধ্য হবে ৷”
আরুও ঠিক সেই জিনিসটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করলো ৷
আরু তেজ নিয়ে বলল
” তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না আম্মু, এমন করছো কেন আমার সাথে ! কি এমন ক্ষতি করছি আমি ৷”
কথাটা ওনার কানে যেতেই উনি যেন আরো বেশি পরিমান তেতে গেলেন, হাতে থাকা কাঁচের গ্লাসে পরিপূর্ণ মদটা আরুর মুখে ছুড়ে মারলেন,,,,

মুখের বাম পাশের কাটা জায়গায় তরল মদ্য গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ায় জায়গাটা যেন পুঁড়ে যাওয়ার মতো যন্ত্রনা হয়ে উঠলো, আরুর খুব ইচ্ছা করছে গলা ছেড়ে চিৎকার করতে, হাতটা খোলা থাকলে হয়তো মুখের সেই অংশের চামড়া খুবলে খুবলে নিজেই তুলে ফেলতো, এত জ্বালা যন্ত্রনা আর সহ্য করা যাই না ৷
আরু যন্ত্রনায় ” আআআআআ” করে চেঁচিয়ে উঠলো ৷
আফসানা বেগম হাতের গ্লাসটা দূরে ছুড়ে মারলেন,নিমেষেই ঝনঝন শব্দে ভেঙে গুড়িয়ে গেল মাটিতে ৷ উনি আরুর এই তীব্র আর্দনাত থামাতে আরুর মুখটা শক্ত করে চেপে ধরলেন ৷
বেশ কয়েকক্ষন আরু বাঁচার জন্য ছটফট করতে লাগলো ৷ কিছুক্ষন পর উনি আরুকে ছেড়ে দিয়ে ঠাস করে ওর মুখে চড় মারলেন ৷

” একদম চুপ ৷ একজন পতীতার মেয়ে হয়ে এত গলার জোর কিসের , জানিস না পতিতাদের কাঁদতে মানা ?”
আরু জোরে জোরে চেঁচিয়ে কাদছে, এই যন্ত্রনার চেয়ে যেন মৃত্যু অনেক সুখের মনে হতে লাগলো আরুর কাছে ৷
আফসানা বেগম আরুর চুলের মুঠি ধরে বললেন
” আজ তোর জন্য আমি আজ এই পতিতা ৷ শুধু তোর জন্য ৷”
তোর বেঁচে থাকার কোন অধিকারই নেই ৷
বলে আরুর চুল ছেড়ে দিয়ে ওর মুখের সামনে মুখ নিয়ে গিয়ে বললেন

” আজ আমি পতিতা হয়েও তোকে রক্ষা করতে পারিনি ৷ দেখলিতো আপনজন বিশ্বাসঘাতকতা করলে কেমন লাগে ৷ আমার সাথেও যখন বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো আমার বাবা তখন আমারো এমনটাই হয়েছিলো ৷
যাকে তুই নিজের প্রিয়জন মনে করিস তারা তোকে প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোন নজরে ভ্রুনাক্ষরেও দেখে না ৷”
আরুর কাঁদছে, অঝোর ধারায় কাঁদছে, আরিশ চলে গেলেও এতোটা কষ্ট পাইনি যতটা না আজ পাচ্ছে ৷
আফসানা বেগম পুরোনো সব কথা আরুকে শোনাতে লাগলেন,,,,,

” আরমান খান যাকে তুই নিজের জন্মদাতা বলে মনে করিস সে তোর কেউ না রে, কেউ না৷ তোর বাপ তো অন্য কেউ ,তুই যার সন্তান ৷
তুই যখন দেড়মাস আমার গর্ভে তখন তোর আসল বাবা মিনহাজ রহমান সে চিটাগাং যাই কাজের সূত্রে ৷”
মিনহাজ সাহেবের নাম শুনে আরু চমকে গেল ৷ উনি আরুর বাবা, আরুর নিজের বাবা ৷ এক এক করে আরু সব জানছে কিন্তু মাঝপথে এখন ও কিছু বলবে না নইতো শেষ হয়েও সবটা শেষ হবে না এমন একটা পরিস্থিতির তৈরি হবে

আমাকে জোর করে বিয়ে করে আরমান , তখন আহান এর বয়স পাঁচ, তুই দেড়মাস আমার গর্ভে ৷ মিনহাজ আর আমার দীর্ঘ ছয় বছরের সুখের সংসার, পুলিশ হওয়াই কাজের সূত্রে প্রায়ই বাইরে থাকতে হতো তাকে তবে আমি ব্যাতিত কখনো কোন দ্বিতীয় নারীর দিকে তাকাইনি৷ কিন্তু আমি কি করলাম !”
কথাটা বলে উন্মাদের মতো হাসতে লাগলেন উনি ৷
পরক্ষনেই আবার হাসি থামিয়ে নিজে থেকেই বলতে শুরু করলেন

” উনি সেবার চিটাগং যান পাঁচ মাসের জন্য ৷ আরমান আমাকে পছন্দ করতো আমাদের বিয়ের আগে থেকেই ৷ আমার বাবা বরাবর লোভী একজন মানুষ ছিলেন, ওনার এমন বহু কুকর্মের কারনে আমার আম্মু ওনাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, আমাকে নিয়ে যেতে গেলেও তার (আফসানার বাবক)জোরাজুরিতে পারেননি ৷ আমার আম্মু খুব ভীতু একজন মহিলা ছিল, টাকা পয়সা, কূটনিতী এই জিনিসগুলোকে বড্ড ভয় পেতেন ৷ আমার আম্মু বাধ্য হয়েছিলেন আমাকে ওনার কাছে একা ছেড়ে চলে যেতে ৷মিনহাজের সাথে বিয়ের আগে আরমান আমার বাবার কাছে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল কিন্তু তখন তার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না থকার দরুন উনি আরমানের সাথে আমার বিয়ে দেননি ৷

দেখাশোনা করে মিনহাজের সাথে আমার বিয়ে দেন, সে প্রতিষ্ঠিত একজন তাই আমার বাবার শেষ বয়সে টাকা পয়সার যে কোন অভাব হবে না সেটা উনি ভালোই জানতেন ৷মিনহাজের বড্ড শখ ছিলো আমাদের দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে হবে, আর তার নাম রাখবে আরুশি ৷ আরুশি কথার অর্থ হলো সূর্যের আলোর ছটা, যা সবাইকে অন্ধকার থেকে আলোর দিশা দেখাবে ৷ আর দেখ তোর তেজ ও তেমন ৷ তারপর উনি চিটাগং যেতেই হঠাৎ একদিন আমার বাবা আমাকে তার বাসায় ডাকেন ৷ আমি বরাবর পর্দা করে চলতাম, বিয়ের পর পর পুরুষকে মুখ দেখাতাম না ৷ বাসায় মেহমান এসেছে দেখে রুমের ভিতরে ছিলাম ৷ সেদিন প্রচন্ড বমি হয় আমার আর মুখেও অরুচি ৷ হঠাৎ বাবা ডাকতেই দরজার আঢালে আরমানকে দেখেছিলাম বাবার সামনে বসে কথা বলতে আর টেবিলের মাঝে ছিলো এক বাক্স টাকা ৷ টাকার এই চুক্তিনামা দেখে শিঊরে উঠেছিলাম ৷ বিক্রি হয়ে গেলাম আরমানের কাছে টাকার বিনিময়ে ৷ আমার বাবা সেদিন অনেক অনেক টাকার মুখ দেখে তার মেয়ের মুখটা ভুলে গিয়েছিলেন ৷ আরমানকে আমি কখনোই মেনে নিতে পারিনি ৷ বন্ধ ঘরে আবদ্ধ ছিলাম প্রায় 3 মাস ৷ বারবার ভাবতাম মিনহাজ বুঝি আসবে আর আমাকে নিয়ে যাবে কিন্তু সে আসেনি ৷ আমি অপেক্ষারত ছিলাম তার ৷

তারপর তুই যখন পাঁচ মাস আমার গর্ভে এলি তখন পেটটা খানিকটা উঁচু হতে শুরু করলো, আরমান প্রথমে ভেবেছিলো যে তুই হয়তো ওর সন্তান কিন্তু পরে যখন বুঝলো যে আরু ওর মেয়ে নয় তখন সেই পাঁচ মাস বয়সেই ও তোকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো, একেই আহানকে উটকো ঝামেলা মনে করতো তার ওপর তুই ৷ আমি যেহেতু একজন মা, আমি কখনোই আমার সন্তানের মৃত্যু চাইবো না,তাই তোকে বাঁচাতে আরমানের পায়ে পড়ে অঝোরে কেঁদেছিলাম ৷ তার মনে যেহেতু আমার জন্য একটা দুর্বল স্থান ছিলো তাই আমার এই কথাটা আর ফেরাতে পারেনি ৷

তারপর তুই হলি, তোর বয়স হলো দেড় বছর,ততদিনে মিনহাজকে ফিরে পাওয়ার আশা প্রায় ভুলে যেতে থাকি ৷ অপরুপ সৌন্দর্য নিয়ে জন্মালি তুই, তোকে কোলে নিলে কেউ আর আমাকে ফেরত দিতে চাইতো না, সবাই বলতো যে আমার গর্ভে নাকি একটা হুর জন্ম নিয়েছে ৷ কিন্তু সেই ছোট্ট হুরের ভবিষ্যৎ খুবই অনিশ্চিত ছিলো ৷ তোর অনিকা ফুপি তোকে খুব ভালোবাসতেন,তোকে কোলে নিয়ে খালি একটাই কথা বলতেন যে তোকে তার আরিশের বউ বানাবে ৷ ছোট্ট আরিশ সেই কথাটা শুনে মুচকি মুচকি হাসতো ৷তোর প্রতি ছোট্ট আরিশের এত যত্ন দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে যেত আর ভাবতাম যে কেউ তো আমার আরু মা কে ভালোবাসে ৷

তোকে আরমান কখনো কোলে অবধি নেইনি,তা নিয়ে আমার যদিও কোন দুঃখ ছিলোনা কখনো ৷
হঠাৎ একদিন একটা বিরাট চেহারাওয়ালা, কালো হুডি পরা লোককে বাসায় ঢূকতে দেখে আমার কলিজা কেঁপে উঠলো ৷ নাম জানতে পারলাম তাহির আব্বান ৷ তিনি নারী পচারের সাথে যুক্ত, সেদিক থেকে ওনার নামডাক অনেক ৷ তাহির আব্বানের কুনজর যাতে তোর ওপর না পড়ে সেই জন্য সবসময় তোকে আগলে আগলে রাখতাম, কিন্তু শেষ অবধি কোন কাজ হলো না ৷অবশেষে তার কুনজর পড়লো তোর ওপর ৷ আরমানের ও দিনের পর দিন টাকার নেশায় আসক্ত হলো , ধীরে ধীরে সেও খারাপ কাজের সাথে যুক্ত হতে হতে খারাপ মানুষে পরিনত হলো যার কলিজা হয়তো টাকা দিয়ে মোড়া ৷

একদিন তাহির আব্বান আর আরমানের গোপন কথোপকথন কানে আসতেই সিদ্ধান্ত নিলাম এক মুহূর্তও আর এ বাসায় আমার আরুকে রাখা যাবে না, যে কোন সময় আরুর বিপদ হতে পারে কারন আরমান আমার সেই ছোট্ট হুরটাকে বিদেশে দেহব্যাবসার জন্য পাঠতে চেয়েছিলো ৷ মা হয়ে এই কতটা শোনা যে কতঝটা কষ্টকর তা সেদিন বুঝেছিলাম ৷
ওই বাসা ছেড়ে পালানোর প্রয়োজন ছিলো, কিন্তু কাছে এক কানাকড়িও ছিলো না, তোদেরকে নিয়ে রাখবো কোথায় ?
বেশ লক্ষ করেছিলাম যে তাহির আব্বানের নজর খানিকটা হলেও আমার ওপর পড়ে,তার নজরটা সুবিধার না ৷

হাঠাৎ একদিন তাহির আব্বান বাসায় আসে, আরমান ছিলো না বাসায় তখন, ওনাকে দেখে আমি চমকে যাই, তার বাসার আসার কারন জানতে চাইলে সে বলে উনি আমার ছোট্ট আরুকে নিতে এসেছেন, কথাটা শুনে আমার দুনিয়া ঘুরে যাই ৷ তোর জীবন বাঁচাতে ওনার শর্তে রাজি হই,নিজেকে বিলিয়ে দিই তার কাছে, পরিবর্তে আমাকে কিছু টাকা দেন ৷ সেই দিনের পর নিজের প্রতি তীব্র এক ঘৃনা জন্মায় ৷ সামনে থাকা টাকা গুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম বেশ অনেকখন,আর ভাবছিলাম জীবনের কালো অতীত ৷অভিমান কাজ করছিলো অনেক মিনহাজের প্রতি ৷ আজ সে থাকলে এগুলো হতো না ৷ তাহিরের কথা আরমানকে বলতে পারিনি আমি ভয়ে কারন তাহির আব্বান অনেক ক্ষমতাবান একজন ৷ দ্বিতীয়দিন উনি বসায় আসলে আরো টাকা দেন, সেদিন টাকার সেই তীব্র বিশ্রি গন্ধ নাকে ধরেছিলো বেশ ৷আমারো টাকাটা যেন দিনদিন নেশায় পরিনত হলো ৷ রোজ রোজ মোটা অঙ্কের টাকার গন্ধটা মাদকের মতো কাজ করতো ৷ভালো লাগতে শুরূ করে এই দেহ ব্যাবসা , এটাকেই যেন জীবনের বৃহৎ অংশ হিসাবে মানলাম ৷

ধীরে ধীরে বুঝলাম টাকা মানুষের মনকে পিশাচের রুপ দেই ৷ আমার মনটাও হতে লাগলো পিশাচের মতো ৷
এতকিছুর ব্যাপারে আরমান কিছুই জানতো না, আমি এসব কিছু ভ্রুনাক্ষরেও ওকে টের পেতে দিইনি ৷ হঠাৎ তাহির আব্বান বাসায় আসা বন্ধ করে দিলেন কারন তার এমন নিয়মিত বাসায় আসা আরমান পছন্দ করতো না ৷ তিনি টাকা ছড়ালে তার চারিপাশে মেয়ের অভাব থাকবে না , কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তো তেমনটা নই, আমি অনেক অনেক টাকা থেকে বজ্ঞিচত হলাম ৷
অনাকাঙ্খিত যৗনচাহিদা আর টাকার নেশায় নেশাগ্রস্ত ছিলাম আমি ৷ আরমান বাসা থেকে বার হতে দিত না তাই বাড়তি কোন সুযোগ সুবিধা আমার ছিলো না ৷

তারপর একদিন বাসায় আরমানের চেনা পরিচিত একজন লোক আসলো, আমিও তখন খুব যে খারাপ দেখতে ছিলাম তেমনটা নই, কাউকে সহজে আকৃষ্ট করার অদ্ভুত এক ক্ষমতা আমার ছিলো, তারপর সেখান থেকে বাসায় শুরু হয় আমার টাকা উপার্জনের পথ ৷ শুধু আরমান কেন কাউকেই এ ব্যাপারে কখনো কিছু জানতে দিইনি , কিন্তু হঠাৎ একদিন অনিকা জেনে গেল আমার এই সব কুকি্তী ৷ আরমানকেও সব জানিয়ে দিতেই, আরমান সদিন বেধড়ক মেরেছিলো আমাকে, আর অনিকা তারপর থেকে আমার সাথে বেশি কথা বলতো না, এমনকি এই বাসায় ও আসতো না

অনিকা সেদিন আমাকে বলেছিলো
” ছিহ ভাবি, তোমাকে এতোদিন ভালো মানুষ ভাবতাম, কিন্তু তুমি যে এত যঘন্য একটা রুপ দেখাবে সেটা ভাবিনি ৷ তোমার থেকে আমার আরু মা কে দুরে রাখো ৷ ওর কাছে কাছে তুমি যাবেনা ৷ এত যঘন্য কাজ তুমি কীভাবে করতে পারো ৷ টাকা টাই কি সব ?একবারো নিজের সংসারের কথা , নিজের ছেলেমেয়েদের কথা ভাবলে না ? তোমার মতো মহিলাদের সমাজে স্থান দেওয়া উচিত না ৷ নিজের মতো তোমার মেয়েটাকে দয়া করে পতিতা বানিওনা, ওর বাচ্চা মনটাকে এভাবে বিষিয়ে দিও না ৷ ওকে ভালো থাকতে দাও ৷”

কথাটা সেদিন আমার বড্ড গায়ে লেগেছিলো, যার জন্য চুরি করি তার জন্যই খারাপ অপবাদ শুনতে হয় এই জিনিসটা যেন কোনভাবেই মানতে পারছিলাম না ৷ যে মেয়েকে বাঁচানোর জন্য নিজে পতিতা হয়েছি সেই মেয়ের জন্য আজ সবাই আমাকে কথা শোনাচ্ছে,মানুষ হিসাবে গ্রহনযোগ্যতা দিচ্ছে না , ব্যাপারটা আমার মনে বড্ড আচড় কেটেছিলো, তোর প্রতি সেদিন তীব্র ঘৃনা জন্মেছিলো, মনে হচ্ছিল যে তোর জন্মর আগেই যদি তোকে মেরে ফেলতাম, যদি এই পৃথিবীর আলো না দেখাতাম তাহলেই বোধহয় ভালো হতো,তাহলে আমাকেও পতিতা হতে হতো না আর তোকেও এই নোংরা পরিবেশে আসতে হতো না ৷

ইচ্ছা করছিলো তোকে তখন গলা টিপে মেরে ফেলি কিন্তু তোকে মারলে আমার রাগ মিটলেও আরমান আমাকে ছাড়তো না, কারন ও যে তোকে অনেক অনেক টাকা দিয়ে বিক্রি করবে বলে স্বপ্ন দেখছে ৷ সেদিন আরমানের হাতে বেল্ট দিয়ে মার খেয়ে সেই জায়গা দগদগে ঘা হয়ে গিয়েছিল যা দেখলে আজো আমার মনের মাঝে আগুন জ্ঝলে ওঠে বারবার মনে হয় সবথেকে বড়ো খেলোয়াঢ় তুই ,তুই যেন আমাকে শেষ করার জন্য এমন চালটা চালছিস আর আল্লাহর কাছে তোর এই অপরুপ সৌন্দর্য চেয়েছিস আমাকে ধ্বংস করার জন্য ৷”
এতটুকু শুনতেই আরু ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো ৷ আফসানা বেগম ঠিক ভুলের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন, এখন আরু কিছু বোঝাতে গেলেও উনি কিছু বুঝবে না ৷ এখন আরুর নিজের বঁচার ইচ্ছাটা মরে গেছে, জন্ম নেওয়াটাও যেন পাপ বলে মনে হচ্ছে ৷

আফসানা বেগমের চোখে ঘৃনা মিশ্রিত জল, এই চোখের জলের অর্থ বোঝা খুব কঠিন ৷
উনি আবার বলতে শুরু করলেন
” আরমানের সামনে ভালো হওয়ার তুমুল চেষ্টা করলাম, দেহ ব্যাবসাটাকে এবার নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে নিজের মতো আরো হাজারো মেয়েকে পতিতা বানানোর স্বপ্ন ভাসছিলো আমার চোখে ৷ সময় নিয়ে আরমানের সামনে নিজেকে ঘরোয়া স্ত্রী প্রমান করার চেষ্টাতে সফল হলেও আরমান মাঝে মাঝে পুরোনো কথা টানতো যাতে ক্ষনে ক্ষনে তোর প্রতি রাগ বাড়তো ৷ আমিও চাইতাম যে তুই ও একটা পতিতা হস তাই আমি আরমানকে আর আটকাইনি , আড়ালে ওকে সাপোর্ট করতাম ৷

পুনরায় তাহির আব্বানের সাথে যোগাযোগ করলাম গোপনে , আমাকে যুক্ত করলো তার বিরাট বড়ো সেই পতিতা পল্লীর সাথে, আসতে আসতে সেখানকার দায়িত্ব আমার হাতে তুলে দিলো, আমি হলাম তার পতীতা পল্লীর মালকিন ৷ সে কি আনন্দ, কি খুশি ৷ অনেক টাকার অধিকারীনি আমি , অনেক টাকার ৷
আজ তাহির আব্বান ধরা পড়েছে সাথে আরমান সহ সবাই, সে জেলে গেলে একা ফাসবে না সাথে আমাকে নিয়েও ফাসবে তাই হসপিটালে গিয়ে তাকে খুন করে এলাম , আহ কি শান্তি ৷ তোর জামাই আরিশ ওর কাছে গিয়েছিলো তোর খোঁজ নিতে কিন্তু পাইনি ৷ হাহা ! আমার পরিকল্পনা মাফিক তাকে খুন করে আমার রাস্তা পরিষ্কার করলাম ৷ শান্তি ! এখন বাকি তুই, তোর কাছে দুটো পথ আছে ——1. আমার মতো পতিতা হবি আর 2. আমার হাতে মরবি ৷
আরু এবার অদ্ভুতভাবে নিজের মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল

” তুমি কি চাও ?”
আফসানা বেগম চুপ করে রইলেন৷ ওনার এই নীরবতা দেখে আরু এবার উচ্চস্বরে হেসে বলল
” জানোতো আম্মু আমি আজও তোমাকে ভালোবাসি তার কারন তুমি আমাকে জন্ম দিয়েছো, আমাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছো ৷ সেদিন আরমান সাহেব আমাকে মেরে ফেললে সেখানেই আমার কাহিনী শেষ হয়ে যেত, কিন্তু হলো না দেখ ৷ তোমার জন্যই এতো হাসি, কন্না সব কিছু উপভোগ করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার, আমার জীবনে আমি আরিশ আর আর্শিয়ানকে পেয়েছি ৷ এটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট , আশা করি ভবিষ্যতে তুমি আরো উচ্চবিত্তবান হও, আর তোমার পথে এই আরু নামক হুররা যেন কখনো জন্ম নিয়ে তোমার পথের কাটা না হয় দোঁয়া করি ৷

এটুকুই বলতে চাই এতকিছুর পরেও তুমি আমার আম্মু, আমার ভালোবাসা ৷ তোমার এই ঘৃনার মধ্যেও আমি ভালোবাসা খুজে পাই ৷ আমি নিজেই এখন তৃষ্ণার্ত নিজের মৃত্যুকে গ্রহন করার জন্য ৷ আমি আর বাঁচতে চাই না ৷ এটুকু ভেবে শান্তি পাচ্ছি সবটা জানতে পারলাম আর তোমার ঘৃনা ভালোবাসা দুটোর ই দেখার মতো সৌভাগ্য হল আমার , আমি খুব খুশি ৷”

আরুর কথা শেষ হতে না হতেই বাইরে পুলিশের গাড়ির আওয়াজ শোনা গেল ৷ আরু দরজার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বলল
” আম্মু তোমার হাতে সময় কম, আরিশ এসেছে হয়তো আমাকে নিতে , আমাকে মেরে ফেল , আমি আর বাঁচতে চাইনা, এই চোখে আর আরিশকে দ্বিতীয়বার ভালোবাসার চোখে দেখতে চাইনা ৷ চোখ বুজে খানিকটা শান্তি পেতে চাই ৷ আমাকে মেরে তুমি পালিয়ে যাও , নিজেকে বাঁচাও ৷”

আফসানা বেগম ওনার হাতে একটা কাচের বড়ো বোতল তুলে নিলেন, আরুর হাতটা তাড়াতাড়ি করে খুলে দিলেন ৷ নিজের মেয়েকে মারতে উনি ভয় পাচ্ছেন ,ওনার কলিজা কাঁপছে, নিজের সন্তানকে খুন করবে !
আফসান বেগম চুপ করে আছেন দেখে আরু ওনাকে উত্তক্ত করার জন্য বলল যাতে উনি আরুকে মেরে ফেলেন ৷
” তুমি কিন্তু ভুলে যাচ্ছ যে তুমি একজন পতিতা ,আর একজন পতিতা কখনো ভালো হতে পারে না ৷”
কথাটা শোনামাত্রই আফসানা বেগম গর্জে উঠ বললেন

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ২৭

” হমমম আমি তাই, তুই পতিতার মেয়ে তোর বাঁচার কোন অধিকার নেই ৷”
কথাটা বলেই উনি আরুর মাথায় কাঁচের বোতলটা দিয়ে সপাটে মারলেন, নিমেষে আরুর মাথা থেকে রক্ত ঝরতে লাগলো, আরুর চোখটা উল্টে আসতে লাগলো ,শরীর মটিতে নেতিয়ে পড়লো, ৷
আফসানা বেগম আরুর রক্তাক্ত শরীরের দিকে তাকালেন,ওনার চোখ থেকে জল চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে , উনি নড়লেন না , ঠাই দাড়িয়ে আছেন ৷ নিজের সন্তানকে মেরে ফেলেছন !
নিমেষেই আরিশ সহ,মিনহাজ সাহেব আর পুলিশ রুমে ঢুকে গেল ৷

আরু মেঝেতে পড়ে আছে, শরীরে রক্তের বন্যা , চারিদিকে টুকরো টীকরো ভাঙা কাঁচের ছড়াছড়ি ৷ আর মধ্যে পড়ে আছে আরুর রাক্তাক্ত নিথর শরীর ৷আরিশ আরুকে এই অবস্থায় দেখে আরুর কাছে গিয়ে আরুকে জাপটে ধরলো ওর বুকের মাঝে ৷আরিশের সাদা শার্টে রক্তে লাল ছোপ,কোলে পড়ে আছে আরুর রক্তাক্ত মুখ আর সেই মায়াবিনী চেহারা যাতে আরিশ বারবার পাগল হয়েছে ৷
ওর আরুপাখি কি আর ওর রইলো না ? উড়াল দিলো কি কোন অজানা পথে ? আর কি কখনো চোখ খুলে বলবে না
” এই যে মিঃ অভদ্র আপনিই যে আমার #তুমি_নামক_প্রাপ্তি ৷ ”

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ২৯