তোমাকে চাই পর্ব ১৩+১৪

তোমাকে চাই পর্ব ১৩+১৪
লেখনীতে Alisha Rahman Fiza

রক্তিম অফিসে বসে জরুরি ফাইল দেখছিল তখনই তার মোবাইলটা ভাইব্রেট করতে লাগলো।সে ফাইল থেকে নজর সরিয়ে মোবাইলে নজর দিয়ে দেখতে পেলো শাওন নামটা ভেসে উঠছে।রক্তিম হাতের ফাইলটা টেবিলে রেখে কলটা রিসিভ করে কানে দিতেই
শাওন আতঙ্কিত কন্ঠে বলে উঠলো,
~ভাইয়া,অধরাকে কোথাও খুজে পাচ্ছিনা।তুমি কী জানো সে কোথায়?আমি বাসায় কল করেছি কোনো খবর পায়নি।
রক্তিম শুধু কথা গুলো শুনলো কিছু না বলেই খট করে ফোনটা রেখে গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে আসলো অফিস থেকে।হার্টবিট বেড়ে গেছে তার মনে হচ্ছে কেউ তার বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করছে সে গাড়ি চালাচ্ছে আর আশেপাশে দেখছে। কিন্তু কোথাও অধরার খোজ খবর নেই রক্তিম ফোন বের করে শাওনকে ফোন করলো শাওন কল রিসিভ করতেই রক্তিম বললো,

~ওর বান্ধবীদের জিজ্ঞেস করেছিস?
শাওন বললো,
~হ্যাঁ ওরা বলেছে অধরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল।
রক্তিম চোয়াল শক্ত করে বললো,
~শাওন,এটা অনেক সিরিয়াস ম্যাটার আমার কাছে অন্য কিছু মনে হচ্ছে।
শাওন বললো,
~পুলিশের কাছে যেতে হবে অধরা কিডন্যাপ হয়েছে।
রক্তিম বললো,
~পুলিশ না শাওন আমাদের অন্য কোথাও যাওয়া উচিত। রোকেয়া ফুপির বাসায় এসে পর
বলেই সে খট করে ফোন রেখে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো আর বলতে লাগলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

~কিছু হবে না তোমার অধরা আমি এসে পরবো তোমার কাছে।
অধরার জ্ঞান ফিরতেই সে তার সামনে তিনজন বলিষ্ঠ মানুষকে দেখতে পায়।অধরা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
~আমাকে কেন এখানে নিয়ে এসেছেন?
সেই তিনজনের থেকে একজন বলে উঠলো,
~বস জানে কেন তোরে উঠায়া আনতে কইসে।হোন মাইয়া তোর লগে খারাপ কিছু করবার চাইনা তাই চুপ মাইরা বয়া থাকবি বুঝসোস।
অধরা চিৎকার করে বললো,
~আমাকে বাসায় দিয়ে আসেন আমার পরিবার আমার জন্য চিন্তিত যেতে দিন আমায়।
একজন লোক এগিয়ে অধরার চিৎকার শুনে রেগে গিয়ে ঠাস করে অধরার গালে চড় মেরে বললো,
~তোরে কী কইছে চুপ থাকতে চুপ থাকবি নইলে কিন্তু একেবারে সব শেষ কইরা দিমু।
অধরা বললো,

~আমাকে দিয়ে কে কী করবে?আমি তো কারো ক্ষতি করিনি।
লোকগুলো উচ্চস্বরে হেসে বললো,
~সেইটা কেমতে কমু টাহা পাইসি কাম করছি।এই চল বাইরে যাই বস আয়া পরবো।
অধরাকে রেখে সেই তিনজন সেখান থেকে চলে গেলো অধরা ডুকরে কেঁদে উঠলো কিন্তু পরক্ষণেই মনে করলো সে যদি হাল ছেড়ে দেয় তাহলে তো সে মারা যাবে তাই অধরা আশেপাশে তাকিয়ে হাতের বাঁধন খোলার জন্য কিছু খুঁজতে।
রক্তিম আর শাওন দাড়িয়ে আছে রোকেয়া হোসেনের বাসার সামনে শাওন বললো,
~Are u sure ভাইয়া?তুই ভিতরে যাবি
রক্তিম বললো,
~পৃথুলা সব জানে শাওন আমার বিশ্বাস ও জানে আমার অধরা কোথায়?
রক্তিম কলিংবেল চাপতেই কাজের মেয়ে দরজা খুলে দিলো রক্তিম কে দেখে বললো,
~ভাইজান যে ভালা আছেন?
রক্তিম আর শাওন ভিতরে প্রবেশ করলো রক্তিম বললো,
~তোমার পৃথুলা আপুকে ডেকে দে।
কাজের মেয়ে বললো,
~ভাইজান আপা আর ম্যাডাম বাইরে গেসে আমি জানিনা কোহানে গেসে?
রক্তিম একবার শাওনের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আজ মার্ডার হবে আমার হাত থেকে।

অধরা একটা কাঁচের টুকরো খুজো পেলো এখন সে চেষ্টা করছে সেটাকে উঠানোর তখনই সেখানে কেউ উপস্থিত হয়ে বললো,
~আহারে বেচারি কতো কষ্ট করছে ওকে একটু পানি তো দেও।
অধরা চোখ উপরে করলো আর যে মানুষগুলোকে দেখতে পেলো এতে সে অবাক হয়ে পরলো।তার সামনে স্বয়ং দাড়িয়ে আছে পৃথুলা আর রোকেয়া হোসেন।রোকেয়া হোসেন অধরার কাছে এসে তার থুঁতনি ধরে বললো,
~অনেক সুখের দিন কাটিয়ে ফেলেছিস এখন মরনের দিন হাতে গুনতে থাক।
অধরা বললো,
~এসব কী বলছো? ফুপি আমি কী করেছি?
রোকেয়া হোসেন বললেন,
~কঁচি খুকী বুঝে না কিছু।তোর কারণে আমার মেয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছে।
অধরা কিছু বললো না শুধু নিষ্পলক ভাবে রোকেয়া হোসেনের দিকে চেয়ে রইলো।পৃথুলা এগিয়ে এসে বললো,
~মা,ওকে এখন মারা যাবে না আমাদের দলের আরেকজন এখন পর্যন্ত এসে পৌছাইনি আসল কাজ এখনো বাকি।
অধরা বললো,
~তোমাদের সাথে আর কে আছে?
পৃথুলা বললো,

~My sweet littel sister মানুষটাকে নিজ চোখে দেখে নিস তাহলেই বুঝতে পারবি।
রক্তিম তার পুলিশ বন্ধুর সাহায্যে পৃথুলার মোবাইল লোকেশন ট্রেস করে ফেলেছে।শাওন বললো,
~ওরা এই পুরোনো বাড়িতে কী করছে এটাতো ফুপার বদ্ধ বাড়ি।
রক্তিম বাঁকা হেসে বললো,
~কী করতে পারে আর অধরা সেখানেই আছে।
বাসায় সবাই জেনে গেছে অধরা কিডন্যাপ হয়েছে অধরার মা কেঁদে কেটে দোয়া করছে মেয়ের জন্য প্রিয়া শশুড় বাড়ি থেকে এসে পরেছে।সবার অবস্থা নাজেহাল জোহোরা খাতুনের কেন জানি আইয়ুব হোসেনের ওপর সন্দেহ হচ্ছে বার বার ফোন আসছে তার।জোহোরা খাতুন বললেন,
~আপনি কী কিছু জানেন?
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~দুখের সময় এসব বলবেনা বুঝতে পেরেছো।

তখনই তৈয়ব হোসেনের ফোন বেজে উঠলো সে রিসিভ করতেই শাওন সব বলে দিলো শুধু রোকেয়া হোসেন আর পৃথুলার কথা গোপন রাখলো।তাদের ঠিকানা দিয়ে দিলো তৈয়ব হোসেন ফোন রেখে বলে উঠলো,
~আমার মেয়েকে পাওয়া গেছে চলো তাহিদা মেয়ের কাছে চল।
সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো জোহোরা খাতুন আইয়ুব হোসেনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার চেহারার রঙ্গ পাল্টে গেছে।
অধরা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে পৃথুলা বললো,
~অধরা,জানিস রক্তিমকে সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসতাম আর তুই দুদিনের অতিথি আমার রক্তিমকে ছিনিয়ে নিলি।
অধরা বললো,
~সে আমাকে ভালোবাসে আপু আমি তাকে দেখবে ঠিক এসে পরবে সে।
পৃথুলা ঠাস করে একটা অধরাকে থাপ্পড় মারলো তখনই একজন গুন্ডা এসে বললো,

~বাহিরে পুলিশ এসে পরেছে আমার তো মনে হয় ভিতরেও চলে আসবে আমার দুজন সাথী পালিয়েছে আমি গেলাম।
বলেই সে ভো দৌড় অধরা হাসি দিয়ে বললো,
~দেখেছো আপু মাত্র ৪ঘন্টার ভিতরে আমাকে খুজে ফেললো সে।
রোকেয়া হোসেন বললেন,
~এই জায়গার কথা কীভাবে জানলো?
তার কথা শেষ হতেই রক্তিম ভিতরে প্রবেশ করে বললো,
~আপনার গুনধর মেয়ের জন্য জেনেছি ফুপি।
সামনে তাকালো রোকেয়া হোসেন ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠলো পুরো পরিবার একসাথে পুলিশও আছে সাথে অধরা রক্তিমকে দেখে কেঁদে উঠলো।লেডি কনস্টেবল কৌশলে পৃথুলার হাতে লকআপ পরিয়ে দিলো রোকেয়া হোসেনকেও ধরে ফেললো।রক্তিম অধরার হা-পায়ের বাঁধন খুলে দিলো অধরা ছাড়া পেয়ে রক্তিমকে জড়িয়ে ধরলো।অধরাকে তাহিদা ইসলামের কাছে দিয়ে পৃথুলার কাছে গিয়ে তার গালে পরপর দুটো থাপ্পড় মেরে বললো,

~কোন সাহসে ওর গায়ে হাত দিয়েছিস?
পৃথুলার চোখে কোনো অনুতাপ নেই সে বললো,
~শুধু থাপ্পড় মারার না গলা টিপে মেরে ফেলার প্ল্যান ছিল।
রক্তিম আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো পৃথুলার গালে তারপর বললো,
~নিয়ে যান।
রোকেয়া হোসেন বললেন,
~আমরা তো গুটি মাত্র আসল খেলা অন্য কেউ খেলছে আপন মানুষ তোকে শেষ করে দিচ্ছে যা ওকে শেষ করে দেখা।
রোকেয়া হোসেনের কথা শুনে আইয়ুব হোসেনের মাথা বেয়ে ঘাম ঝড়লো পুলিশ তাদের নিয়ে যেতে সবাই অধরাকে নিয়ে হাঁটা ধরলো পায়ের ব্যাথার কারণে সে হাঁটতে পারছেনা রক্তিম অধরাকে কোলে নিয়ে হাঁটা ধরলো।গাড়িতে বসিয়ে দিলো তারপর নিজেও গাড়িতে বসে পরলো অধরা রক্তিম কে শক্ত কর জড়িয়ে ধরে রাখলো তার অনেক ভয় করছে ভীষন ভয়।
আইয়ুব হোসেনের মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছো জোহোরা খাতুন বলে উঠলেন,
~আমার ছেলেকে আর কষ্ট দিবেন না দয়া করে সুখে থাকতে দিন ওকে।
আইয়ুব হোসেন বললেন,

~ওর সুখ ওই মেয়ের সাথে নেই।তুমি জানোনা কেন এমন করছি আমি?
জোহোরা খাতুন বললেন,
~এরমানে এসব আপনি?
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~বাসায় গিয়ে কথা বলবো।
বাসায় পৌছে রক্তিম অধরাকে কোলে তুলে নিলো রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। অধরা রক্তিমের গলা শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে রক্তিম অধরাকে বিছানায় বসিয়ে কার্বাড থেকে অধরার প্রয়োজনীয় সব জিনিস নিয়ে ওয়াশরুমে রেখে আসলো।আবারও অধরাকে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে ঝর্ণার নিচে দ্বার করিয়ে দিলো।পানি ছাড়তেই অধরা আর রক্তিমের শরীরে পানি পরতে শুরু করলো।রক্তিম অধরার গাল দুটো ধরে বললো,
~অধরা,তুমি একদম ঠিক আছো কথা বলো আমার সাথে।
অধরা চুপ করে দাড়িয়ে পরলো অধরার চোখে মুখে পানি পরছে।হঠাৎ অধরা রক্তিমকে জড়িয়ে ধরে সে জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।রক্তিম অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~আপন মানুষদের আঘাতটা দাগ কেটে যায় মনে।
আইয়ুব হোসেন নিজ ঘরে বসে চিন্তা-ভাবনায় ব্যস্ত জোহোরা খাতুন ঘরে এসে বিছানায় বসে বললেন,
~যা করেছেন তা একবার রক্তিম জানলে সব শেষ করে দিবে আপনার।
আইয়ুব হোসেন নিজ স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,

~ছেলে আমার গুনও সব আমার কিন্তু আফসোস বুদ্ধিটা একটু কম।
জোহোরা খাতুন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
~আমার ছেলে লোভী না মানবতা তার মধ্যে আছে।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তা তো দেখতেই পাচ্ছি।অধরা কত কিছুর মালিক তুমি জানো?
জোহোরা খাতুন ভ্রুকুচকে বললেন,
~আপনি কী কোনোদিন বলেছেন আমায়?
আইয়ুব হোসেম স্মিত হেসে বললেন,
~বাবা মারা যাওয়ার আগে এই কাজটা না করে যেতেন তাহলে হয়তো আজ আমার মনে তার জন্য কোনো ক্ষোভ থাকতো না।
জোহোরা খাতুন বললেন,
~আপনাকে কে তো বাবাজান ঠকিয়ে জাননি সব দিয়ে গেছে।
আইয়ুব হোসেন ঠান্ডা মাথায় বললেন,

~জোহোরা পরম প্রিয় স্ত্রী আমার, বাবা অধরাকে গ্রামের সব জমি লিখে দিয়েছে এবং কী আমাদের যে ফ্যাক্টরি আছে তাও অধরার নামে।আর শোনো অধরা যদি মারা যায় তাহলে এসব চলে যাবে এতিম খানায়। কিন্তু যদি অধরা নিজ ইচ্ছা শেচ্ছায় কাউকে এই সব সম্পত্তি দিয়ে দেয় তাহলে সে পারমানেন্ট মালিক হয়ে যাবে।আমি আজ তাই করতে চেয়েছিলাম চুপিসারে সব কিছু আমার নামে করে নিয়ে ওই মেয়েটাকে গলা টিপে মেরে ফেলতাম।কারণ ওই মেয়ের জন্য আমার বাবা আমাকে চড় মেরেছিল তুমি হয়তো জানোনা বাবা মৃত্যুর কিছুদিন আগে সবকিছুর দলিল করে ফেলেছিল তখন আমি সব জেনে যাই বাবাকে জিজ্ঞেস করলে সে একটা উত্তর দেয় এটা অধরার পাওনা।তাহলে আমি কেন এতো কম পাবো তাই প্ল্যান করেছিলাম অধরাকে মেরে ফেলবো।
জোহোরা খাতুন এক নজরে স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছে এতোটা অমানুষ কীভাবে হলো সে?কিছু সম্পত্তির জন্য এতো নিচে ছিহ।আইয়ুব হোসেন বললেন,

~তোমার মনে আছে আমরা গ্রামে গিয়েছিলাম বাবার মৃত্যুর চারদিন আগে সেখানেই অধরা পানিতে পরে গেছিলো।সে পা পিচলে পরে যাইনি আমি তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিলাম।কিন্তু তৌহিদ ওকে বাঁচিয়ে ফেলেছিলো সেদিন রাতে বাবা আমাকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে যায় আর সেখানে জানতে পারি বাবা সব জেনে গেছে আমাকে থাপ্পড় মেরে বলেছিল, অধরা থেকে দূরে থাকতে। ওইদিন কিছু না বললেও আমি সব প্রতিজ্ঞা করেছিলাম অধরা এই দুনিয়ায় আর থাকবেনা।
জোহোরা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
~আপনার পায়ে পরি এসব ভুলে যান সংসারে আর অশান্তি করবেন না।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~একজন মরলে কোনো কিছু যায় আসেন আর রক্তিমকে সুন্দরী একটা মেয়ে বিয়ে করালে সে ভুলে যাবে অধরাকে।
রক্তিম অধরার চুল মুছে দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো।রক্তিম বললো,
~ক্ষুধা লেগেছে?
অধরা বললো,

~নাহ।
রক্তিম অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~দুপুরে কিছু খেয়েছিস? আমি খাবার খাইয়ে দিবো টেবিলে রাখা আছে।
অধরাকে ছেড়ে দিয়ে রক্তিম খাবার প্লেট নিয়ে এসে পরলো তার কাছে অধরা বসে পরলো। রক্তিম খাবার অধরার মুখে পুরে দিলো অধরা ছোট্ট মেয়ের মতো খাবার শেষ করলো।রক্তিম প্লেট রেখে হাত ধুইয়ে বললো,
~তোমার পরীক্ষা শেষ তাই আমি ভাবছি কিছুদিনের জন্য তুমি নানা বাড়ি থেকে ঘুরে আসো সঙ্গে আমি,শাওন,ইরা,প্রিয়া আর রায়হানও যাবে।
অধরা বললো,
~ওদের সাথে আরেকজনও ছিল রক্তিম।
রক্তিম অক্ষীযুগল উঠিয়ে অধরার দিকে তাকালো অশ্রুসিক্ত নয়নে অধরা তার দিকে তাকিয়ে আছে।রক্তিম অধরার বাহুডর ধরে বললো,
~সেই তিন নম্বর মানুষটাকে আমি অবশ্যই খুজে বের করবো অধরা।বিশ্বাস রাখ আমার উপর
অধরা বললো,
~আমি চাই সেই ব্যক্তিটাকে দেখতে এতো কাছের মানুষ আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে।

প্রিয়া রায়হান চলে এসেছে সকালবেলায় সবাই রেডি হয়ে গেছে ব্যাগ নিয়ে অধরার নানু বাসায় যাওয়ার জন্য। অধরার নানুবাসা গাজীপুর তাই তারা জলদি বের হচ্ছে শাওন শওকতকে ফোন করে আসতে বলেছে যাতে সেও যেতে পারে।রক্তিম আর অধরা ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে আসলো রুম থেকে।রক্তিম শওকতকে দেখে বললো,
~তুই এখানে?
শওকত বললো,
~শাওন আসতে বললো তোদের জয়েন করতে তাই এসে পরলাম।
রক্তিম এক গাল হেসে বললো,
~ঠিল আছে।সবাই রেডি তো?
তখনই পিছন থেকে জোহোরা খাতুন বলপ উঠলেন,
~রক্তিম তোর সাথে কথা আছে।
রক্তিম পিছন ফিরে মায়ের দিকে তাকালো রক্তিম জোহোরা খাতুনের কাছে গিয়ে দাড়ালো আর বললো,
~কী হয়েছে মা?
জোহোরা খাতুন বললেন,

~অধরাকে একা ছাড়বিনা ওর সাথে সাথে থাকবি আর শোন আমি কালকে সেখানে পৌছে যাবো তোর চাচীর সাথে।আজ যেতে চেয়েছিলাম তোর নানীর শরীর ভালো না তাই যেতে পারছিনা তাকে দেখে তারপর যাবো।
রক্তিম একটু অবাক হলো কিন্তু মুখে কিছু না বলে হালকা হেসে বললো,
~আমি দেখে রাখবো মা।
সবাই বাসা থেকে বের হয়ে আসলো জোহোরা খাতুন দোয়া করলো যাতে তার বাচ্চারা সহিসালামত বাসায় ফিরে আসে।গাড়িতে সবাই বসে পরলো রক্তিম অধরার পাশে বসে পরলো শওকত গাড়ি ড্রাইভ করছে তার পাশে আজ ইরা বসেছপ।আড়চোখে সে ইরাকে দেখে যাচ্ছে ইরা তা খেয়াল করে বললো,
~আপনি কী আমায় কিছু বলবেন শওকত ভাইয়া?
শওকত অনেকটাই হকচকিয়ে উঠলো সে আমতা আমতা করে বললে,
~নাহ তোমার সাইডের দৃশ্য অনেক সুন্দর তাই খেয়াল করলাম।
ইরা আর কিছু বললোনা শুধু শওকতের বোকা টাইপ কথা শুনে মুখ টিপে হাসলো। অধরা রক্তিমের কাঁধে মাথা রেখে বাহিরের দৃশ্য দেখছে রক্তিৃ চিন্তিত জোহোরা খাতুনের কথা শুনে আর কে সেই মানুষ যে অধরাকে কষ্ট দিচ্ছে তার ক্ষতি করতে চায়।
অধরা শীতল কন্ঠে বলে উঠলো,

~আমাকে যদি ওরা মেরে ফেলতো আজ আমি আপনার সাথে থাকতাম না।
রক্তিমের বুকটা কেঁপে উঠলো অধরার কথা শুনে সে অধরার হাত শক্ত করে ধরে বললো,
~এসব অলুক্ষুনে কথা বলবেনা অধরা।আমি কিন্তু হাত উঠিয়ে ফেলবো।
রক্তিমের কথা শুনে অধরা আর কিছুই বললোনা সে চুপচাপ হয়ে বসে রইলো।প্রিয়া রায়হানের পাশে বসে আছে রায়হান গেইম খেলতে ব্যস্ত তাই প্রিয়া বললো,
~সারাক্ষন গেইম গেইম আর কিছু আছে আপনার বউয়ের দিকে তাকাতে আপনার কী লাগবে বলুন তো?
রায়হান ফোন থেকে মাথা তুলে বললো,
~তাকালাম কী বলবে বলো?
প্রিয়া বললো,
~একটা কথা বলার আছে।
রায়হান বললো,
~বলো।
প্রিয়া বললো,
~আই’ম প্রেগন্যান্ট।

রায়হান চোখ বড় বড় করে প্রিয়ার দিকে তাকালো প্রিয়া হালকা হেসে বললো,
~গাধা এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
রায়হান বললো,
~সত্যি?
প্রিয়া বললো,
~না মিথ্যা বলছি।
রায়হান বললো,
~সবাই জানে?
প্রিয়া বললো,
~মা জানে শুধু।
রায়হান বললো,
~ধন্যবাদ।আমি সবাইকে বলে আসি
রায়হান নিজ সীট থেকে উঠে চেচিয়ে বললো,
~আমি বাবা হবো আপনারা শুনেছেন আমি বাবা হবো।
প্রিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো অধরা আর রক্তিম অবাক হয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে।
শাওন বললো,
~বাহ বাহ ভাইয়া থেকে এখন মামা not bad.

অধরার নানুবাসায় পৌছাতে পৌছাতে বিকেল হয়ে পরলো গাড়ি থেকে বের হতেই অধরার বড় মামার সাথে দেখা পায়।অধরার বড় মামা এগিয়ে এসে রক্তিমের সাথে কুশলাদি করে বললেন,
~বাবারা তোমাদের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।তোমার মামী তো কতবার খোজ নিয়ে ফেলেছে।
রক্তিম বললো,
~আসলে মামা রাস্তায় জ্যাম ছিল তাই আসতে দেরি হয়ে গেছে।
অধরা বললো,
~মামা কেমন আছো?
অধরাকে দেখে অধরার বড়মামা বললেন,
~ভালো মা তোকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে।
সবাই বাসার ভিতরে চলে গেলো অধরার ২মামা আর নানী এ বাসায় থাকে।ভিতরে ডুকে সবাই সোফায় বসে পরলো অধরার বড় মামী আর ছোট মামী এসে হাজির।তারা নাস্তা ট্রে টে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে শাওন বললো,
~এটা একটা ভালো কাজ করেছেন মামীরা অনেক ক্ষুধা লেগেছে।
অধরা বললো,

~বড় মামী,নাদিয়া কোথায়?
বড় মামী হেসে বললেন,
~কোচিং গিয়েছে এসে পরবে।
ছোট মামী বললেন,
~তোমাদের জন্য রুম ঠিক করে রেখেছি শাওন আর শওকতের জন্য উপরের রুম ঠিক করেছি আর প্রিয়া আর রায়হান আমাদের রুমের পাশে থাকবে।আর রক্তিম আর অধরা এই রুমে থাকবে ইরা নাদিয়ার রুমে থাকবে।
রক্তিম বললো,
~তা ঠিক আছে আমরা ম্যানেজ করে নিবো।
তারা নাস্তা করে যে যার রুমে চলে গেলো অধরা বিছানায় শুয়ে পরলো তার শরীরটা ভালো লাগছেনা।রক্তিম অধরাকে শুয়ে থাকতে দেখে বললো,
~আজ রাতে ছাদে পার্টি হবে এখানের পরিবেশটা কতো সুন্দর দেখেছো।আমরা ইনজয় করবো মজা করবো
অধরা কিছু বললো না চুপ করে শুয়ে রইলো রক্তিম অধরার পাশে এসে অধরার হাতটা টেনে তাকে উঠিয়ে দিয়ে বললো,
~অধরা,এভাবে বেপোরোয়া ভাব দেখাবে না আমি সবসময় থাকবোনা তোমাকে সামলানোর জন্য।
অধরা রক্তিমের কথা শুনে বললো,
~এভাবে কেন বলছেন?আপনাকে আমি কোথাও যেতে দিবোনা।
বলেই সে রক্তিমকে জড়িয়ে ধরলো রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অধরার চুলে হাত বুলিয়ে দিলো।

 তোমাকে চাই পর্ব ১১+১২

শাওন বাড়ি থেকে একটু দূরে এসে সিগারেট ফুঁকছে তখনই বোরখা পরা এক যুবতী শাওনের সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,
~আপনি সিগারেট খাওয়া শিখে গেছেন?
শাওন বোরখা পরো যুবতীর দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমার সিগারেট খাওয়া দেখে আপনার এতো জ্বলে কেন?
যুবতী মেয়েটা বোরখার নেকাব সরিয়ে বললো,
~শাওন ভাইয়া আপনি আমাকে হয়তো চিনতে পারেননি।
শাওন যুবতীর মুখশ্রী দেখে হাতে থাকা সিগারেটটা হাত থেকে পরে গেলো আর বললো,
~নাদিয়া তুমি আসলে আমি তোমাকে চিনতে পারেনি।
নাদিয়া বললো,
~চলেন বাসায় এখানে এসব করছেন আমি বলে দিবো রক্তিম ভাইয়াকে।
শাওন বাঁকা হেসে বললো,
~প্রশিক্ষনটা তোমার রক্তিম ভাইয়া থেকেই পেয়েছি।
নাদিয়া বললো,

~এখন বাসায় চলে সবাই হয়তো আপনাকে খুজতে শুরু করে দিয়েছে।
নাদিয়া আর শাওন হাঁটতে হাঁটতে বাসার দিকে যাচ্ছে আর কথা বলছে।
অধরা তার নানুর ঘরে নানুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে অধরার নানু মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~প্রিয়ার সুখবর শুনে খুব খুশি হয়েছি ওর জন্য এক বোয়েম আমের আচার দিয়ে দিবো।
অধরা বললো,
~আমিও অনেক খুশি হয়েছি কিন্তু তোমার সাথে রাগও করেছি তুমি কেন বিয়ের অনুষ্ঠানে আসো নি?
নানু মুখ আধার করে বললো,
~যাওয়ার ইচ্ছা সবার ছিল কিন্তু তোর মামারা তোর জন্য সোনার কিছু কিনতে পারেনি তাই আর আমরা যাইনি।
অধরা বললো,
~এতে কী হয়েছে নানু?তোমাদের দোয়াই সব
নানু বললেন,
~মানুষ তা বুঝবে না সোনা।তোর মা আর ২চাচি কাল আসবে।
অধরা বললো,
~জানি।

নানু মুচকি হেসে অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।রাতের বেলা সব আয়োজন শেষ করে সবাই ছাদে বসে পরলো ইরা এক বাটি আমের আচার নিয়ে সিড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো তখনই তার পা স্লিপ কাটলো আর হাতে থাকা আমের আচারের বাটি ছিটকে গিয়ে সামনে থাকা ব্যক্তিটির ওপর পরে ইরা সিড়ির রেলিং ধরে ব্যালেন্স করলো কিন্তু সামনে তাকাতেই ইরার চোখ ছানাবরা কারণ

তোমাকে চাই পর্ব ১৫+১৬