তোমাকে চাই পর্ব ১১+১২

 তোমাকে চাই পর্ব ১১+১২
লেখনীতে Alisha Rahman Fiza

প্রতিবেশীদের সামনে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে অধরা তার অনেক লজ্জা করছে সবাই তার দিকে তাকাচ্ছে আর চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে।তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো,
~আমরা কিন্তু কোনোদিন বুঝতেই পারিনি রক্তিম আর অধরার মধ্যে এসব চলছে।
অধরা চোখ তুলে একবার সেই মহিলার দিকে তাকালো আরেকজন বললো,
~অধরা তো বিয়ের পর আরো সুন্দর হয়ে গেছে।
অধরা আবারও মাথা নিচু করে ফেলে জোহোরা খাতুন গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
~২দিন পর ওদের বিয়ে উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে আপনারা সবাই আমন্ত্রিত।
ইরা এবার মজার ছলে বললো,

~আপনারা আবার বিয়ে হয়ে গেছে ভেবে খালি হাতে এসে পরবেন না গিফট সাথে করে নিয়ে আসবেন।
সব মহিলা হা করে ইরার দিকে তাকিয়ে আছে অধরা মুচকি মুচকি হাসছে।সবাই অধরারকে গিফট দিয়ে নিজ নিজ বাসায় চলে গেলো অধরা নিজের রুমে গিয়ে শাড়ি পাল্টে ফ্রেশ হয়ে কাউচে বসে পরলো বই আর খাতা নিয়ে পড়তে শুরু করলো অনেকদিন এগুলোর ধারে কাছে যাওয়া হয়নি এইবার হয়তো ফেলের তকমা লেগে যাবে তার মাথায়।সে পড়ায় মনোযোগ দিচ্ছে তখনই দরজা ঠেলে ঘরে চলে আসে রক্তিম অধরা বই থেকে মুখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো রক্তিম দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে পকেটে হাত গুজে। অধরা বইটা টেবিলে রেখে বললো,
~কী হয়েছে?
রক্তিম বললো,
~আগামীকাল শপিংয়ে যাবো আমরা।
অধরা বিরক্তি নিয়ে বললো,
~মাফ করবেন আমি কোথাও যেতে পারবোনা আপনি করে নেন শপিং আমাকে টানবেন না। সেই প্রিয়া আপুর বিয়ে থেকে শুরু হয়েছে আমার পড়া অনেক বাকি রয়েছে পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে।
রক্তিম মনোযোগ সহকারে সব কথা শুনে বললো,
~যা আনবো তাই পরতে হবে মনে রেখো।
অধরা বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

~কোনোদিন দেখেছেন এসব নিয়ে ক্যাটক্যাট করতে।
এতটুকু বলে অধরা কার্বাড থেকে একটা কম্বল বের কাউচে শুয়ে পরলো তা জড়িয়ে। বই হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো রক্তিম বাঁকা হেসে অধরার পাশে শুয়ে পরলো কম্বলটা নিজ শরীরে জড়িয়ে অধরার পায়ের উপর পা তুলে দিলো ঘটনার আকস্মিকতায় অধরা কী করবে বুঝতে পারছেনা?রক্তিমের ঠান্ডা পা তার পাকে স্পর্শ করতেই অধরা চেঁচিয়ে বললো,
~আপনি পা সরান ঠান্ডা পা আপনার প্লিজ সরে যান।
রক্তিম কাউচে হেলান দিয়ে আরো আয়েশ করে শুয়ে বললো,
~এভাবে শুয়ে থাকো তাহলে দেখবে পা গরম হয়ে যাবে।
অধরা এবার রেগে বললো,
~অসভ্যতামি করবেন না আর আমার রুমে কেন এসেছেন?বড়চাচা বলে দিয়েছে অনুষ্ঠানের দিন পর্যন্ত আপনি আমার পাশে ঘেষবেন না বের হন এখান থেকে।
রক্তিমের এতে হেলদোল হলোনা সে অধরার কোমড় জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো অধরা বললো,
~কী মুসকিল রে বাবা?
রক্তিম মুচকি হেসে আরো নিবিড়ভাবে অধরার কোমড় জড়িয়ে শুয়ে থাকে।

অনুষ্ঠানের দিন চলে আসলো সবাই কাজে ব্যস্ত প্রিয়ারাও চলে আসে অধরার হাতে মেহেদী দেওয়া হচ্ছে।প্রিয়া অধরার পাশে বসে বললো,
~আমার তো অনেক খুশি লাগছে মা যখন ফোন করে বললো ঘটনা আমি তো পুরো হা হয়েছিলাম।
ইরা বললো,
~আমি তো পুরো শকড ছিলাম আমার সামনেই রক্তিম
ভাইয়া
ইরার পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় পৃথুলা সে হাসিহাসি মুখ করে বললো,
~অধরা,তোমার সবকিছু গুছিয়ে আমি রক্তিমের রুমে দিয়ে এসেছি আজ থেকে তো সেখানেই থাকবে।
অধরা মুচকি হেসে বললো,
~ধন্যবাদ আপু।
পৃথুলা বললো,
~তোমার শাড়িটা কিন্তু বেশ সুন্দর রক্তিমের চয়েজ আছে বলতে হবে।
ইরা বললো,
~তাই তো অধরা আপুকে পছন্দ করেছে।

ইরার কথা শুনে প্রিয়া হো হো করে হেসে উঠলো।পৃথুলা সেসময়ই রুম থেকে বের হয়ে চলে যায় নিজ কাজে।
রক্তিম,শাওন ডেকোরেশনের কাজ দেখছে হঠাৎ রক্তিমের নজর গেইটের দিকে পরলো রক্তিম ছাদ থেকে গটগট করে নিচে নেমে সেই ব্যক্তিটির সামনে দাড়ালো। রক্তিমের আগমনে সেই ব্যক্তিটি একটু হকচকিয়ে গেলো রক্তিম বললো,
~ইফতি সাহেব আপনি এখানে?
ইফতি বললো,
~আসলে তৈয়ব আঙ্কেলের সাথে কথা বলতে এসেছিলাম।
রক্তিম পা থেকে মাথা পর্যন্ত ইফতিকে দেখে নিয়ে বললো,
~দেখা করার কারণটা কী?
ইফতি আমতা আমতা করে বললো,
~আমার মনে হচ্ছে আপনাদের বাসায় কোনো অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে আমি পরে আসবো।
ইফতি চলে যেতে নিবে তখনই রক্তিম ইফতিকে বললো,
~অনুষ্ঠান তো অবশ্যই আমার আর অধরার বিয়ের অনুষ্ঠান। আজকে রাতে আপনিও চলে আসবেন
ইফতি অবাক নয়নে রক্তিমের দিকে তাকালো রক্তিম হালকা হেসে বললো,
~ইফতি সাহেব,আপনি কী খুশি হননি?
ইফতি বললো,
~খুশি হওয়ার কথা তো আমার না রক্তিম সাহেব তবুও বলবো সুখে থাকুন অধরাকে আগলে রাখুন।
বলেই সে এক সেকেন্ডও সেখানে দাড়ালোনা গটগট করে চলে গেলো।রক্তিম তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে বললো,
~জীবনের মোড় ঘুরতে সময় লাগেনা আমি দোয়া করলাম যাতে আপনিও সুখে থাকুন।

অধরা রক্তিমের দেওয়া লাল শাড়ি সকল গহনা পরে তৈরি হয়েছে বউসাজে অধরাকে অনন্যময়ী লাগছে। তাহিদা ইসলাম অধরাকে দেখে বললো,
~মাশআল্লাহ আমার মেয়েকে তো অনেক সুন্দর লাগছে কারো খারাপ নজর যাতে তোর উপর না পরে।
অধরা মুচকি হাসলো প্রিয়া বললো,
~ছোটচাচী সব মেহমান চলে এসেছে রক্তিম ভাইয়া স্টেজে চলে এসেছে অধরাকে নিয়ে যেতে হবে।
তাহিদা ইসলাম বললেন,
~অবশ্যই নিয়ে যাও।
প্রিয়া আর ইরা দুজন অধরাকে নিয়ে ছাদে চলে আসলো অনেক সুন্দর করে পুরো ছাদটা সাজানো হয়েছে।রক্তিম অধরাকে দেখে স্টেজ থেকে নিচে নেমে পরলো অধরা রক্তিমের সামনে এসে দাড়াতেই রক্তিম হাত বারিয়ে দিলো অধরা কাঁপা হাতটা রক্তিমের হাতে
রাখলো।রক্তিম খুব শক্ত করে অধরার হাতটা ধরলো তারপর দুজনই একসাথে স্টেজে উঠে পরলো। সবাই তাদের দেখতে ব্যস্ত সবাই খুশি থাকলেও একজন সহ্য করতে পারছেনা তাদের একসাথে। সে হচ্ছে পৃথুলা রক্তচক্ষু নিয়ে সে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে রক্তিম আর অধরা নানান পোজে ছবি তুলছে।পৃথুলা সবার পিছে দাড়িয়ে ক্ষোভে ফেটে পরছে বুকে চিনচিন ব্যাথা করছে।পৃথুলা দ্রুত পায়ে ছাদ থেকে নেমে নিজ রুমে চলে গেলো দরজা ধপাস করে বন্ধ করে কার্বাড থেকে মদের বোতল বের করে গটগট করে তা খেতে লাগলো।লেহেঙ্গার ওড়নাটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বললো,

~অনেক হয়েছে ভালোগিরি এখন সবাই দেখবে পৃথুলার খারাপ রূপ।অধরাকে মরতে হবে রক্তিমকে একা বাঁচতে হবে আমি যে কষ্ট অনুভব করছি তা ওকেও পেতে হবে।
ছাদে সবাই ব্যস্ত ইরা অধরার সাথে দাড়িয়ে ছবি তুলেই যাচ্ছে। শওকত তাদের পাশে দাড়িয়ে আছে শাওন তা লক্ষ্য করে শওকতের কানে কানে বললো,
~আমার বোনের সাথে তো অনেক ছবি তুললে এখন আমার সাথেও ছবি তুলো।
শওকত বললো,
~তুমি কী বলছো এসব?
শাওন বললো,
~চোখে যা দেখছি তাই বলছি।
শওকত মাথা চুলকে বললো,
~শাওন,আমার তো এখন চাকরিও হয়ে গেছে ভালো বেতনও পাই। মা আর আমি ছাড়া তো পরিবারে কেউ নেই তুমি যদি ব্যাপারটা একটু দেখতে
শাওন বুকে হাত গুজে বললো,
~তো এখন কী করবো?
শওকত বললো,
~আন্টি আর আঙ্কেলের সাথে একটু কথা বলো আমার ব্যাপারে।
শাওন বললো,
~দেখছি আমি কিন্তু শর্ত একটাই আমার বোনের সাথে কোনো প্রেম করতে পারবেনা।
শওকত বললো,
~তোমার হুকুম মাথার উপরে রাখবো।

রক্তিমের রুমে বসে আছে অধরা বিছানায় গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বুকটা ধুকধুক করছে।একটু আগে প্রিয়া এসে তাকে বিছানার মাঝে বসিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো।অধরার কেমন জানি অদ্ভুত ফিলিং আসছে ভয়,ভালো লাগা সব একসাথে কাজ করছে।হঠাৎ বাহিরে অনেক চেঁচামেচির আওয়াজ আসতেই অধরা অনেক ঘাবড়ে যায় কিন্তু পরক্ষণেই তাদের কথা শুনতে পেয়ে অধরা লজ্জা পেয়ে লাল হয়ে যায়।সবাই রক্তিমের ঘরের দরজায় দাড়িয়ে আছে রক্তিম কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে প্রিয়া বললো,
~এভাবে দাড়িয়ে না থেকে পকেটটা হালকা করো তোমার জন্যই ভালো হবে।
রক্তিম বললো,
~চেহারা দেখ আয়নায় তারপর টাকা চাইতে আসিস।
ইরা বললো,
~ভাইয়া ভুলে যেওনা রুমের ভিতরে যেতে দিবো না দরকার পরলে আমি অধরা আপুর সাথে থাকবো।
শাওন বললো,
~ভাইয়া চিপায় পরে কেমন লাগছে?
রক্তিম শাওনের দিকে তাকিয়ে বললো,
~তোর বউ যখন আসবে তখন দেখিস কী করি?
শাওন বললো,
~বিয়ের রাতে চলে যাবো কক্সবাজার একদম নেটওয়ার্কের বাহিরে।
রক্তিম পকেট থেকে ৫ হাজার টাকা বের করে প্রিয়ার হাতে দিয়ে বললো,
~এতে চালিয়ে নে আর যদি প্যাকপ্যাক করেছিস ঠাটিয়ে চড় দিবো।
প্রিয়া টাকা নিয়ে বললো,
~আমাকে রায়হান ডাকছে এই ইরা চল।
শাওন বললো,
~All the best bro.
রক্তিম বললো,
~get out.
শাওন শিস বাজাতে বাজাতে সেখান থেকে চলে গেলো রক্তিম দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করতেই তার চোখ আটকে গেলো বিছানায় বসে থাকা নতুন বধুর উপর।চোখ যেন পলক ফেলতে চাইছেনা রক্তিম ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো অধরার দিকে। অধরা খামচে ধরলল শাড়ি তার কেনজানি মনে হচ্ছে এখনই সে জ্ঞান হারাবে
রক্তিম বিছানার কাছে এসে অধরার ঘোমটা

অধরার ঘোমটা সরাতে গিয়েও সে হাত গুটিয়ে নিয়ে বললো,
~এক হাত ঘোমটা দিয়ে বসে থাকার কোনো মানে নেই সেই ছোটবেলা থেকেই তোমাকে দেখে আসছি। নিজ দায়িত্বে ঘোমটা সরিয়ে নেও
এতটুকু কথা বলে সে অধরার পাশে শুয়ে পরলো রক্তিমের চোখ এখন সিলিংফ্যানের ওপর।অধরা রক্তিমের কথা শুনে রেগে গিয়ে ঘোমট সরিয়ে পাশে শুয়ে থাকা রক্তিমের পাঞ্জাবির কলার ধরে তার উপর একটু ঝুঁকে বললো,
~তাহলে এতো পরিচিত মেয়েকে বিয়ে করেছেন কেন?আপনার শখ আহ্লাদ নেই বলে কী আমারও নেই ভেবেছিলাম বাসর ঘরে আমার বর ঘোমটা উঠিয়ে নিষ্পলক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।কিন্তু হলো কী? এক হাদারামের গলায় আমাকে ঝুলতে হলো।
অধরা এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে রক্তিমের কলার ছেড়ে দিয়ে অন্যপাশে মুখ করে বসে রইলো।অধরার কথা শুনে রক্তিম মুখ টিপে কিছুক্ষণ হেসে বললো,
~আমি জানতাম না তোমার এতো শখ ছিল।আর আমাকে হাদারাম বলছো কেন?আমাকে বললেই হতো তুমি চাও আমি একটু রোমান্টিকতা দেখাই।
অধরা কিছুই বললো না সে বুঝতে পেরেছে নিজের কাজে সে নিজেই ফেসেছে।অধরা রক্তিমের কথা না শোনার ভান করে শাড়ি গুছিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বললো,

~আপনার এসব নাটকীয় আর অসভ্য কথা শোনার সময় নেই আমার যত্তসব।
অধরা কার্বাড খুলে একটা থ্রী পিজ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। রক্তিম বিছানায় আবার গা এলিয়ে দিয়ে পাঞ্জাবীর পকেট হাতড়ে একটা ছোট্ট বক্স বের করলো সেটাকে সাইড টেবিলে রেখে সে উঠে দাড়ালো।
অধরা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো রক্তিম ঘরের কোথাও নেই সে চুল আছরিয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখলো রক্তিম খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।অধরা খেয়াল করলো রক্তিমের পরণে কালো টির্শাট আর টাউজার অধরা বললো,
~এখানে কী করছেন?
অধরার কথায় কোনো জবাব রক্তিম দিলো না অধরা আরেকটু কাছে গিয়ে বললো,
~এতো রাতে আর এরকম শীতে বারান্দায় কেন দাড়িয়ে আছেন?
অধরার কথা শেষ হতেই রক্তিম অধরার হাত ধরে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।অধরা ঘাবড়ে গিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো তা দেখে রক্তিম মুচকি হেসে অধরার কপালের এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে তার ওষ্ঠজোড়া কপালে ছুঁইয়ে দিলো।অধরা রক্তিমের শার্ট খামচে ধরলো রক্তিম অধরার কানে ফিসফিস করে বললো,
~এখানো তোমার সাথে রোমান্স করবো তাই দাড়িয়ে আছি।

অধরা চোখ খুলে রক্তিমের দিকে তাকালো রক্তিম বাঁকা হেসে অধরাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের ভিতরে চলে গেলো।অধরাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে সাইড টেবিল থেকে বক্স টা নিয়ে তা খুলে সেখান থেকে একটা আংটি বের করে অধরার আঙ্গুলে পরিয়ে দিলো।
অধরা আংটির দিকে তাকাতেই রক্তিম বললো,
~কেমন হয়েছে আংটিটা?
অধরা বললো,
~অনেক সুন্দর।
রক্তিম অধরার গাল ধরে বললো,
~আমাকে অনুমতি দিবে তোমাকে নিয়ে ভালোবাসার জগতে পাড়ি দিতে?তোমাকে আমার সাথে মিশিয়ে নিতে চাই অধরাকে আমি নিজের করে পেতে চাই আমাকে কী দিবে সেই অনুমতি?বলো না প্রেয়সী নিবে কী আমাকে নিজের করে?
অধরা চোখ বন্ধ করে সবটি কথা শুনলো অধরা রক্তিমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
~দিয়েছি আপনাকে অনুমতি।
রক্তিম আর একমুহূর্ত দেরি না করে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো অধরাকে। ভালোবাসার জগতে পাড়ি দিলো তারা এই অন্ধকার রাত আজ তাদের ভালোবাসার সাক্ষী শীতের রাতে হিমেল হাওয়ায় তাদের ভালোবাসার হাওয়া বইছে।

রোদের রশ্নি রক্তিমের মুখে পরতেই সে চোখ কুচকে ফেললো ধীরে ধীরে চোখ খুলে উঠে বসলো।এদিক-সেদিক চোখ বুলিয়ে অধরাকে খোজার চেষ্টা করলো। তখনই ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলো অধরা হালকা কলাপাতা রঙ্গের শাড়ি পরেছে চুল টাওয়াল দিয়ে মোড়ানো।রক্তিম তাকিয়ে আছে অধরার সেই চেহারার দিকে অধরা আয়নার সামনে দাড়িয়ে টাওয়ালটা খুলে ফেললো ভেজা চুল থেকে টুপটুপ করে পানি পরছে। অধরা চোখ তুলে আয়নার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো রক্তিমকে অধরা রক্তিমের চাহনি দেখে লজ্জা পেয়ে হালকা হেসে টাওয়ালটা দিয়ে মাথা মুছতে লাগলো।রক্তিম বিছানা থেকে উঠে ধীর পায়ে অধরার পিছে দাড়িয়ে পরলো অধরা রক্তিমের উপস্থিতি টের পেয়েও কিছু বললো না।রক্তিম অধরাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো রক্তিমের স্পর্শ পেয়ে অধরা কেঁপে কেঁপে উঠলো রক্তিম অধরার ভেজা চুলে মুখ গুজে বললো,

~আমাকে কেন ডাকোনি?
অধরা বললো,
~আপনি নাক টেনে ঘুমাচ্ছিলেন তাই ডাকিনি।
বলেই সে নিজেকে রক্তিম থেকে ছাড়িয়ে বললো,
~আমি এখন রান্নাঘরে যাবো এভাবেই দেরি হয়ে গেছে।
রক্তিম আবারো অধরাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~এখন বাহিরে যেতে হবে না।
তখনই দরজায় টোকা পরলো ইরা উঁচু গলায় বললো,
~অধরা আপু,বড়চাচী ডাকছে তোমাকে।
অধরা রক্তিমকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বললো,
~অসভ্য কোথাকার
বলেই সে নিজেকে ঠিক করে দরজা খুলে ইরার সাথে চলে গেলো রক্তিম আবারো বিছানায় গিয়ে উপুর হয়ে শুয়ে পরলো।
অধরা রান্নাঘরে গিয়ে দাড়াতেই জোহোরা খাতুন বললেন,
~সবার জন্য আজ তুমি নাস্তা বানাবে।
অধরা বললো,

~ঠিক আছে বড়চাচী।
জোহোরা খাতুন চলে গেলেন সেখান থেকে অধরা শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজে কাজে লেগে পরলো।নাস্তা তৈরি করে টেবিলে সাজিয়ে সবাইকে সে নিজ হাতে নাস্তা সার্ভ করলো আইয়ুব হোসেন বললেন,
~রক্তিম কোথায়?
অধরা বললো,
~আসলে উনি এখনো ঘুমিয়ে আছেন হয়তো বড় চাচা।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~বড়চাচা না বাবা বলবে বুঝতে পেরেছো।
অধরা হেসে বললো,
~ঠিক আছে বাবা।
সবার নাস্তা শেষে শাওন রক্তিমের ঘরে চলে গেলো শাওন রক্তিমকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো।
শাওন রক্তিমের কাছে গিয়ে ঠেলে উঠিয়ে দিয়ে বললো,
~ভাইয়া ঘুমিয়ে আছো কেন এখন পর্যন্ত জানো অধরা কতো টেস্টি নাস্তা বানিয়েছে।
রক্তিম বললো,
~ভালো লাগছেনা আমার।
তখনই অধরা নাস্তার ট্রে নিয়ে হাজির হলো অধরা ট্রে টা টেবিলে রেখে বললো,
~আপনি কখন উঠবেন বলেন তো?আমি ঘর গুছাবো।
রক্তিম বললো,
~কার্বাড থেকে সব বের করে দেও।
শাওন বললো,
~তুমি আমার সামনে আমার বোনকে কাজের অর্ডার দিচ্ছো কতবড় সাহস?
রক্তিম বললো,
~দুটো থাপ্পড় পরলে সব ভাইগিরি বের হয়ে যাবে।
রক্তিম ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসের জন্য বের হয়ে গেলো।অধরা রক্তিমকে বিদায় দিয়ে নিজ পড়া নিয়ে বসে পরলো

 তোমাকে চাই পর্ব ৯+১০

দিনগুলো ভালো চলছিল জোহোরা খাতুনও অধরাকে আসতে আসতে মেনে নিচ্ছে। কিন্তু সুখের দিন বেশিদিন স্থায়ী হয়না অধরার জীবনে এমন একটা ঝড় আসতে যাচ্ছে যার খবর হয়তো কারো নেই।অধরা রক্তিমের সামনে বসে আছে বই নিয়ে ফাইনাল পরীক্ষা অধরার তাই রক্তিম নিজে ওকে পড়াতে বসেছে।অধরা বললো,
~কালকে লাস্ট পরীক্ষা আমি কিন্তু নানুদের কাছে যাবো থাকতে আপনি মানা করবেন না।
রক্তিম হাতের স্কেলটা ঠাস করে টেবিলে বারি দিয়ে বললো,
~পড়তে বসেছো নাকি ছুটি প্ল্যান করতে?
অধরা মুখ ফুলিয়ে বললো,
~আপনার কাছে পড়বো না আমি রাশেদ স্যারের সাহায্য নিয়ে নিবো।
রক্তিম বললো,
~রাশেদ স্যার আর আসবেনা ওই ব্যাটার স্বভাব ভালোনা।
অধরা চেয়ার থেকে উঠে ধপাস করে রক্তিমের কোলে বসে পরলো তার গলা জড়িয়ে বললো,
~প্লিজ আমাকে যেতে দিন বিয়ের ৩ মাস হয়ে গেছে একবারও নানুদের বাড়ি যাওয়া হয়নি।
রক্তিম অধরার কোমড় জড়িয়ে বললো,
~ঠিক আছে শুধুমাত্র ৩দিনের জন্য বুঝেছো।
অধরা খুশি হয়ে বললো,
~ঠিক আছে।

সকালবেলা রক্তিম অধরাকে কলেজ ড্রপ করে চলে গেলো।অধরা রক্তিমকে বিদায় জানিয়ে কলেজের ভিতরে চলে গেলো পরীক্ষা ভালোমতো দিয়ে ৩ঘন্টা পর কলেজের বাহিরে দাড়িয়ে পরলো শাওনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।তখনই তার বান্ধবীরা এসে জোর করে ফুচকার স্টলে নিয়ে গেলো তারা ফুচকে খেয়ে অনেকক্ষন আড্ডা দিলো শাওনের আসার কোনো খোজ না পেয়ে অধরা হাঁটা শুরু করলো।নির্জন রাস্তায় আসতেই একটা মাইক্রো এসে অধরার হাত ধরে তাকে ভিতরে নিয়ে মুখে রোমাল চেপে ধরে অধরা চিৎকার করতে যাবে তার আগেই সে অজ্ঞান হয়ে যায়।
সেই লোকগুলো কাকে যেন ফোন করে বললো,
~আমরা মেয়ে পেয়েগেছি এখন ওকে আপনার দেওয়া ঠিকানায় নিয়ে আসছি।
বলেই সে ফোন রেখে দিলো কিছুক্ষন পর অধরাকে নিয়ে তারা এক বন্ধ বাড়িতে নিয়ে আসে।অধরাকে চেয়ার সাথে বেঁধে বসিয়ে দিলো লোকগুলো অধরার মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই সে জ্ঞান ফিরে পেলো।

 তোমাকে চাই পর্ব ১৩+১৪